বুকের বাঁ পাশে পর্ব ১

বিয়ে বাড়িতে প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট হাতে দাড়িয়ে আছে অনু৷ ওর সামনেই ওর অনাগত বাচ্চার বাবার বিয়ে হতে যাচ্ছে৷
আবির আপনি এই বিয়ে করবেন না৷আপনি কী ভুলে গেছেন যে আপনি আমার অনাগত বাচ্চার বাবা হতে যাচ্ছেন৷ আর এই দেখুন তার রিপোর্ট৷ আমার সাথে আর আমার সন্তানের সাথে এত বড় অন্যায় করবেন না প্লিজ৷ বন্ধ করুন এই বিয়ে৷ আমাকে আপনি এত বড় ধোকা কিছুতেই দিতে পারেননা৷ এতই যখন বিয়ে করার শখ তাহলে আমায় কেন সন্তানের মা বানালেন বলুন কেন বানালেন৷
প্রেগন্যান্টের রিপোর্ট হাতে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বললো অনু৷।

আবির এখনো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এরকম পরিস্থিতিতে শিকার হবে কখনো ভাবেনি সে৷ বিয়ে বাড়ির সবাই স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে৷ আর ও কী বলছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে৷

অনু আবারো চিৎকার করে বললো,,,কী হলো বলছেন না কেনো? আপনি কেনো এই বিয়ে করছেন?

আবির এগিয়ে আসলো অনুর দিকে৷
“এই মেয়ে কী বলছো তুমি এসব ?পাগল হয়ে গেছো৷ আজ আমার বিয়ে আর তুমি এমন সিন ক্রিয়েট করছো৷ বেড়িয়ে যাও এখান থেকে আর আমাকে শান্তিতে বিয়ে করতে দাও৷
.
আবির আপনি ঠিক আছেন??আপনি আমার বাচ্চার বাবা হতে যাচ্ছেন৷ আর আপনি এখন বিয়ে করার জন্য উতলা হয়ে পরছেন৷ নাহলে এই শুভ মুহুর্তে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতেন৷
.
আমি ঠিকাছি বাট তুমি ঠিক নেই৷ এই মেয়ে এখান থেকে চলে যাও৷ শুভ মুহুর্তে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে না বলে দিলাম৷
.
আমি নাহয় মিথ্যা বলছি কিন্তু এই রিপোর্ট এটা ও কী মিথ্যা বলছে৷ এখন যদি আপনি আমায় স্বীকৃতি না দেন তাহলে কোথায় যাবো আমি৷ আমার যে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা৷ আমার সন্তান বাবার পরিচয় পাবেনা এটা কী করে মেনে নিবো আমি৷ প্লিজ আবির এই বিয়ে করবেননা৷
কথাটা বলে মাটিতে বসে পরলো অনু৷ কনের বাবা এগিয়ে আসলেন আবিরের দিকে৷

আবির এই মেয়ে কী বলছে৷ আর মেয়েটির হাতের রিপোর্ট অনুযায়ী তো মেয়েটি সত্যি বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে৷ তুমি আমাদের এত বড় ধোকা দিলে৷ খুব না আমার মেয়েকে ভালোবাসতে৷ এটাই তোমার ভালোবাসার নমুনা৷ তোমার কাছে আমি আমার মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে দিবোনা৷ নেত্রা (কনে) তুমি কী ওকে বিয়ে করবে এরপরও৷
.
না বাবা একে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না৷ খুব বড় ধোকা দিয়েছে আমায় চলো এখান থেকে এই বিয়ে হবেনা৷ একটা মেয়ের বাচ্চা বাবার পরিচয় পাবেনা এটা আমি কিছুতেই হতে দিবোনা৷
নেত্রা আবিরের কলারে ধরে বললো,, ইউ চিপ,এভাবে ঠকালে আমায়৷ যাইহোক ভালো থেকো৷আর এই নিরুপায় মেয়েটাকেও ভালো রেখো ওর বাচ্চাকেও ভালো রেখো, তোমার পরিচয় দিও৷
কথাটা বলে নেত্রা সবাইকে নিয়ে সেন্টার ছেড়ে চলে গেলো৷ অনু উঠে দাঁড়ালো আর আবিরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো৷ আবির এখনো রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
আবিরের মা এসে আবিরের গালে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলেন৷ আর চিৎকার করে বলছেন,,,,

এই দিন দেখার জন্য তোকে জন্ম দিয়েছিলাম আমি৷ বাইরে ফষ্টিনষ্টি করার জন্য৷ তোকে নিজের ছেলে বলতেও লজ্জা লাগছে আমার ছিঃ ছিঃ ছিঃ৷ কী করে পারলি তুই এসব করতে একবারো আমার কথা মনে হলো না তোর বাবার কথা মনে হলো না যে আমরা কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবো৷
.
মা বিশ্বাস করো আমি কোন ভুল করিনি এই মেয়ে সব মিথ্যা বলছে৷ আমি তোমার ছেলে তুমি আমায় বিশ্বাস না করে বাইরের একটা মেয়েকে বিশ্বাস করছো তাও এই সো কল্ড রিপোর্ট দেখে৷
.
এই মেয়ে মিথ্যা বলবেই বা কেনো মিথ্যা বলে ওরই বা কী লাভ৷
.
আমি জানিনা মা এই মেয়ের কী লাভ কিন্তু ও ডাহা মিথ্যা বলছে বিশ্বাস না হলে একে আস্ক করো দেখবে ফরফর করে সব সত্যি বলে দিবে৷
.
আবিরের মা অনুর দিকে তাকিয়ে ওকে কাছে ডাকলেন৷

আচ্ছা তুমি যা বলেছো সব কী সত্যি??৷
.
আমি আগেও বলেছি আর এখনও বলছি যে সব সত্যি৷ আর এই রিপোর্ট ও সত্যি৷ বিশ্বাস না হলে যে ডক্টরের কাছ থেকে এনেছি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন৷
.
আবিরের মা আবারও আবিরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন৷

তুই না বলেছিলি এই মেয়ে সত্যি কথা বলবে৷ ওতো সত্যি কথাই বলছে বাট তুই মিথ্যা কথা বলছিস কেনো?আবির চলে যা আমার সামন থেকে এই মুহুর্তে তোকে আমার সহ্য হচ্ছে না৷ যে নিজের মা বাবার সম্মানের দিকে তাকায় না সে কেমন ছেলে৷

আবির অনুর হাত ধরে একটা চিপায় নিয়ে গেলো৷

এই মেয়ে তোমার কী মাথা খারাপ৷ কী করছো তুমি এসব তোমার জন্য আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে৷ কী শুরু করেছো তুমি হ্যা৷
.
শুরু তো আমি করিনি৷ হুম শুরু আমি করিনি৷ আপনি শুরু করেছেন আর আমি শেষ করবো৷ আর এই যে আমি আপনার বিয়ে ভেঙেছি বলে যত অপমান করছেননা একদিন আপনিই আমায় ধন্যবাদ দিবেন যে আমি আপনার এত ভালো একটা কাজ করে দিয়েছি৷
কথাটা বলে অনু সেখান থেকে চলে গেলো৷

আবিরের মা আবিরকে ডাকছেন,,,

হ্যা মা বলো
.
এই মেয়েকে তোর বিয়ে করতে হবে??
.
এসব কী বলছো তুমি মা আমি ওকে বিয়ে করবো মানে!!!
.
কেনো মানুষের জীবন নিয়ে চিনিমিনি খেলতে বুঝি তোর বেশ ভালো লাগে এই মেয়েকেই তোর বিয়ে করতে হবে আর এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন৷ নাহলে আজ থেকে তোর মুখও দর্শন করবো না আমি বলে দিলাম৷ আপাতত এখন বাড়ি চল৷ জানিনা তোর বাবার অবস্থা এখন কেমন৷ ছেলের বিয়ে নিয়ে কতই না এক্সাইটেড ছিলেন উনি৷

আবিরের মুখ রাগে লাল নীল হয়ে গেছো৷ থরথর করে শরীরও কাপছে তার৷

এই মেয়ের কতো বড় সাহস আমায় থ্রেট দেয়৷ ও আমার এতো বড় সর্বনাশ করেছে এর জন্যে ওকে শাস্তি পেতেই হবে৷ কিন্তু এটাই বুঝলাম না আমার বিয়ে ভেঙে ওর কী লাভ হলো৷ শুধুই কী একটা চ্যালেঞ্জ না কী অন্যকিছু৷

★★★★
আবির বাড়িতে এসে সবার সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে৷ সবাই ওকে একটা একটা করে প্রশ্ন করে যাচ্ছে বেচারা পেড়েছে এক ফ্যাসাদে৷ চেনা নেই জানা নেই কোথায় থেকে একটা মেয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসলো আর আমার পরিবারও তাকেই বিশ্বাস করছে তাও একটা সো কল্ড রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে৷

#বুকের_বা_পাশে🌺
#পর্ব_১
#Writer_Nusrat

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ প্রথম পার্ট তাই ছোট করে দিলাম৷ রেসপন্স পেলে পরের পার্ট দিবো খুব বড় করে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here