বুনোভাই,পর্ব:৮+৯

#বুনোভাই
#পর্ব_৮(বোনাস পার্ট)
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার


আমার মেয়েটা যখন আটারোতে পা দিলো তখন সে আমার কাছে একটা স্মার্ট ফোনের আবদার করলো।ছেলেমেয়েদের কোনো ইচ্ছেই কোনোদিন অপূর্ণ রাখিনি। আমারা ভাই বোনেরা অনেক অবাবে বড় হয়েছি তাই আমি নিজের ছেলেমেয়েদের সেই কষ্ট অনুভব করাতে চাই নি।সেদিনও তার সেই আবদারটা রেখেছিলাম আর সেটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
আমার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে এই মেয়েটাই ছিলো সবার থেকে আলাদা।তুখোড় বুদ্ধিদৃপ্ত,সুন্দরী, আর মার্জিত। তার সঙ্গ সাবাই পছন্দ করতো।ওর সবচেয়ে বড় ক্ষমতা যেটা ছিলো সেটা হলো সে ভবিষ্যতের ঘটা কার্যক্রম পূর্বেই অনুমান করতে পারে।প্রথম প্রথম এটা আমলে না নিলেও পরবর্তীতে একেরপর এক ঘটনায় তার এই ক্ষমতাকে মানতে আমি বাধ্য হলাম।এ মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো।কিন্তুু সেসব আজ শেষ হয়ে গেছে শুধুমাত্র আমার করা একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য।
হঠাৎই একদিন তার কলেজের প্রিন্সিপাল আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে আমার মেয়ের ব্যাগে নাকি ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। বিশ্বাস করো অনুজ সেদিন আমি আমার দু কানকেও যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
এরপর অনেক টাকা খরচ করে বিভিন্ন লোক মারফতে মেয়েটাকে রক্ষা করেছিলাম সেদিন।আমার সেই বুদ্ধিদৃপ্ত ফুটফুটে ফুলের মতন মেয়েটা যেনো অন্ধকার অতলে তলিয়ে গিয়েছিল সেদিন।অনেক ক্রাউন্সিলিং এর পর আজ সে কিছুটা সুস্থ। মেয়ের এমন করুণ পরিনতি দেখার পর থেকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে একটা সন্তান কে তার চাহিদার তুলনায় বেশি বা কম দিলেই সে বিপদগামী হয়ে যায়।কথায় আছেনা অর্থই সকল অনর্থের মূল।আমি আমার মেয়েকে দিয়ে সে কথা বুঝেছি।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখের কার্ণিশ বেয়ে দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পরলো মঈনুল আহমেদ এর।
অনুজ নিজের শশুরের এমন রুপ দেখে যেনো অনেকটা থমকে গেছে।বাহির থেকে মানুষ টাকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে এই মানুষ টা ভিতর ভিতর এমন নরম মনের একজন মানুষ।অন্যদিকে মনে মনে নিজের স্কুল শিক্ষক বাবাকে সে অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছে। কারণ তার বাবা ছোট থেকেই তাদের দুই ভাইকে সঞ্চয় করার শিক্ষা দিয়েছেন।কখনো অতিরিক্ত আল্লাদ দিয়ে তাদের দুটো লজেন্স ও তিনি কিনে দেননি।যখন যতটুকু প্রয়োজন ছিলো ততটুকুই তাদের বাবা তাদের দিয়েছে।তখন তাদের বাবার প্রতি রাগ হতো কিন্তুু আজ সে মঈনুল আহমেদ এর কথায় উপলব্ধি করতে পারছে যে টাকাই সব নয়,তার বাবা তাদের অতিরিক্ত টাকা হয়তো দেয়নি কিন্তুু ভালোবাসা, শাসনে কোনো কমতি কখনোই রাখেনি। তাই হয়তো আজ তারা দুইভাই প্রতিষ্ঠিত।



মেঘাচ্ছন্ন নীলচে আকাশ পানে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে রুপা।তার বৃষ্টি একদমই ভালো লাগে না।বৃষ্টি হওয়ার আগে আকাশে মেঘের তৈরি করা যে গুমোট ভাব সেটা তার ভিষণ প্রিয়।আজ অনেক গুলো দিন পর সে বাসা থেকে বের হয়েছে। আজকাল তো সে নিজের রুম থেকেও বের হতে চায় না তেমন কিন্তুু আজ বাবা এমন করে বলল যে সে মৃন্ময়ীর শশুর বাড়িতে আসতে বাধ্যই হলো একপ্রকার।
ঘরের ভিতরে সবার মাঝে তার কেমন যেনো একটা দম বন্ধ অবস্থা হচ্ছিল তাই সে এই বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আজ কেনো যেনো বারবার তার অতিতের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে।কত সুন্দরই না ছিলো তার সেসব দিনগুলো। হঠাৎ করে একটা মানুষের জন্য সব কিছু শেষ হয়ে গেলো নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছে সব কিছুই শেষ করে দিয়েছে সে শুধু মাএ ওই একটা মানুষের জন্য। সেদিন যদি ওই মানুষটা তাকে ফিরিয়ে না দিতো তাহলে হয়তো তার জীবনে এই মরনাশক মাদক আসতো না আর তার স্বপ্ন গুলোও এভাবে ধ্বংস হতো।তার বাবার তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন কত আশা ছিলো,সেসব কিছুর কোনো মূল্যই সে কোনোদিন দিতে পারলো না সে আজ ব্যর্থ পুরোপুরি ভাবে ব্যর্থ। না পেরেছে সে তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে না পেরেছে নিজের প্রিয়জনকে আপন করে পেতে।
এসব নানা ভাবনায় বিভর রুপা।এদিকে নিজের রুমের বারান্দায় একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেকটা অবাক হিমেল, পরক্ষনেই তার মনে পরে আজ ভাবীর বাড়ির লোকজনের আসার কথা। এ মেয়েটা হয়তো ভাবীর ছোট বোন হবে।মেয়েটা অসুস্থ থাকায় নাকি বিয়েতে এটেন্ড করতে পারেনি তেমনটাই শিনেছিলো সে অনুজের মুখে। মেয়েটাকে পিছন থেকে দেখেই কেমন যেনো একটা হাহাকার কাজ করছে তার বুকের ভিতর।তার কেনো যেনো বারবার মনে হচ্ছে সে এই মেয়েটাকে চিনে খুব ভালো করে চিনে।কিন্তুু কিভাবে চিনে তাই বুঝতে পারছেনা হিমেল।নিজের মনের কৌতুহল মিটাতে ধীর পায়ে হেঁটে বারান্দায় পা বাড়ায় হিমেল।।

-আপনি কি বউরানীর ছোট বোন।
গলায় হালকা শব্দ করে কথাটা বলে হিমেল।
এদিকে এতোগুলো বছরপর পরিচিত সেই গলার স্বর শুনে চমকে উঠে রুপা। হিমেলের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দে তার শরীরের একেকটি লোমকূপ যেনো দাঁড়িয়ে যায়।কিন্তুু সে পিছন ফিরে তাকায় না।শুধু মাথা টা একবার উপরনিচ করে হিমেলের কথার উওর দেয় সে।
এদিকে রুপার এমন অদ্ভুত আচরণে অনেকটা বিরক্ত হয় হিমেল।তবুও মুখে সে মুখে তেমন কিছু প্রকাশ করে না।পরমূহুর্তেই সে রুপাকে আরেকটি কথা বলতে যাবে তার আগেই রুপা তাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায় সে রুম থেকে।একবারো পিছন ফিরে তাকায় নি সে।কারন সে এই মানুষ টাকে খুব ভালো করে চিনে তাইতো না দেখেও সে ঠিক জানে এটা তারই প্রিয়জন!!!!

এদিকে রুপার এইরকম আচরণের কোনো মানেই খুঁজে পাচ্ছে না হিমেল।তার কাছে রুপা দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অভদ্র,অসভ্য মেয়ে মনে হচ্ছে। কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো সে এখনো মেয়েটার মুখ দেখার জন্য বিচলিত হয়ে আছে।তার বারবার মনে হচ্ছে মেয়েটার চেহারা দেখা তার বড্ড প্রয়োজন!!!

চলবে,,,,

#বুনোভাই
#পর্ব_৯
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার


বিকলের দিকে রুপা একা একা বাড়ি ফিরে আসে এসেই যথারীতি নিজের রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করে দেয়। হঠাৎ কেনো রুপা বাসায় ফিরে এলো তা বোধগম্য হলো না মৃণালের।তবে রুপাদিকে দেখে ঠিক মনে হচ্ছে না তার। তবুও সে কিছুই করতে পারছেনা কারন রুপা ভিতর থেকে দরজা লক করে রেখেছে। রুপা আসার কিছুক্ষণ পর বিশান আসে। বিশানের সাথে মতবিনিময় করে তাকে নিজ হাতে চা করে এনে দিলো মৃণাল।।



অনবরত বাহিরে দাঁড়িয়ে কেউ কলিং বেল চাপছে। মনে হচ্ছে দরজা খুলতে একটু দেরি করলেই পুরো বেল টাই চেপে ভেঙে ফেলবে। মৃণাল একপ্রকার কানে হাত দিয়ে দরজা খোলার জন্য উঠে দাঁড়ালো। বিশান তখন আয়েস করে সবে মাত্র চায়ে প্রথম চুমুক দিচ্ছিলো হঠাৎ কলিংএর শব্দে তারও মেজাজটা গরম হয়ে গেছে।সেই যেতে চেয়েছিলো দরজা খুলতে মৃণালই তাকে বাঁধা দিয়ে নিজে গিয়েছে।
মৃণাল এক প্রকার রেগে দরজা খুলল,খুলেই সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সময় এমন ভাবে বুনোভাইকে সে দেখতে পারবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি।এই দু-মাসে এভাবে মুখোমুখি হয়নি ওরা দুজন।আজকে হঠাৎ মৃদূলকে দেখে এক প্রকার ভয় পাচ্ছে মৃণাল। কারণ বুনোভাইয়ের চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে সে অনেক রেগে আছে।
দরজা খোলার পরই মৃদূল মৃনালকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ঘরে ঢুকে।সোফায় বসা বিশানের দিকে একবার কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে পূনরায় আবার হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
এদিকে মৃদুলের এমন রুপ দেখে রীতিমতো মৃণাল ভয় পেয়ে আছে।দরজা লাগিয়ে সে ড্রয়িংয়ে বসা বিশানের কাছে এসে একটা প্লাস্টিকের হাসি দিয়ে বলে,

-শান আগামীকাল কোচিং-এ আমার একটা স্পেশাস এক্সাম আছে।সেটার প্রস্তুতি নিতে হবে।তাই আজ আপনাকে বেশি সময় দিতে পারছিনা।দুঃখীত।

(ভাইয়া ডাকে বিশানের সমস্যা হয় বলে সে নিজেই মৃণালকে শান বলে ডাকতে বলেছে।শান বলে ডাকলেও আপনি সম্মোধন টা মৃণালকে দিয়ে আর বদলাতে পারেনি বিশান।তবুও সে এই শান ডাকে অনেকটা সন্তুষ্ট। নাই মামার চেয়ে তার কানা মামাই ভালো)

-আরে না না। এতে তোমার দুঃখীত হওয়ার কিছু নেই। তাহলে আমি এখন বরং উঠি।

-আপনাকে তো চলে যেতে বলি নি শান।যাস্ট বললাম আমি সময় দিতে পারবো না আজকে।কিন্তুু বুনোভাই তো আজ বাসায় আছে আপনি বরং তার সাথেই গল্প করুন।

-মৃদুল হয়তো কোনো কারণে রেগে আছে। তাই এখন ওর সামনে গেলেও ও কথা বলবেনা।আমি পরে ওর সাথে কথা বলে নিবো।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

-তাহলে আমি আসি।ভালো করে পরিক্ষার প্রস্তুতি নাও।
বলেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিশান অবশিষ্ট চা টা খেয়ে চলে গেলো। মৃণালও নিজের বরাদ্দ কৃত রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো তখনই মৃদুল তাকে ডাক দিলো।মৃদূলের ডাকে অনেকটা রাগ মিশ্রিত ছিলো যা বুঝতে পারলো মৃণাল। সে একটা ফাঁকা ঢোক গিলে মৃদূলের রুমের দিকে গেলো।

——————————————————
আকাশে মেঘের দলেরা ঘুরাঘুরি করছে।যেকোনো সময় তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে পারে মাটির বুকে।মৃদু বাতাসে খোলা চুলে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছে রুপা।আজ চার চারটি বছর পর সে তার প্রিয় মানুষটির দেখা পেয়েছে যদিও তার চেহারা সে দেখেনি কিন্তুু তার গলার স্বরই যথেষ্ট তার জন্য। একটা সময় এই মানুষটার জন্যই সে পাগল ছিলো।পুরো ইউনিভার্সিটির ক্রাশ বয় ছিলো সে আর তার তারতো প্রিয়তম ছিলো।এই মানুষ টাকে ভালোবেসে আজ তার প্রাপ্তি বলে যদি কিছু থাকে তা হলো একদফা বিশ্বাসঘাতকতা, একদফা মানসিক যন্ত্রনা, বুক ভরা আক্ষেপ, না পাওয়ার বেদনা, তাকে কাছে পেয়ে ও মন থেকে তৈরি হওয়া এক বিশাল দূরত্বের দেয়াল, ব্যর্থতা, গ্লানি, ক্লান্তি, চোখের জল, চাঁপা দীর্ঘশ্বাস, প্রতারণা, ঠকে যাওয়া, ভিতরের নিগূঢ় জ্বলন সব মিলিয়ে এ যেনো এক জলন্ত বহ্নিশিখা ছিলো তার কাছে।তবুও এই একটি মানুষকেই সে আজও ভুলতে পারেনি।এই মানুষটির জন্যই আজ তার এই করুন পরিণতি। সবাই যেখানে জানে সে খারপ সঙ্গে পরে ড্রাগস এর নেশায় আসক্ত হয়েছে তা যে ভুল একেবারেই ভুল তা আর কেউ জানুক বা না জানুক সে তো খুব ভালো করেই জানে।তবুও সে মানুষ টাকে বড্ড ভালোবাসে,আর কাউকে একবার ভালোবাসলে যে তাকে আর ঘৃণা করা যায় না কারন তার ঘৃণার চেয়েও ভালোবাসার তিব্রতা যে অনেক।কিন্তুু সে চায় নি নিজের এই বিধ্বস্ত চেহারা সেই মানুষটিকে দেখাতে।তাইতো সে এক প্রকার পালিয়ে এসেছে ওই বাড়ি থেকে।নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে যার সাক্ষী এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।সেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশেরও যেনো আজ রুপার কষ্টে কষ্ট হচ্ছে তাইতো সেও রুপার কান্নার সাথে তাল মিলিয়ে আকাশ থেকে মাটিতে লুটিয়ে পরছে।

“যে নারী অসম্ভব ভাবে ভালোবাসতে পারে; সে নারী ঘৃণাও করতে জানে৷ যে নারী রাগ করে বারবার হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসতে পারে; সে নারী প্রচন্ড অভিমানে চিরতরে হারিয়ে যেতেও পারে৷ যে নারী অল্পতেই কেঁদে ফেলে; সে নারী প্রচন্ড আঘাতেও ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে৷”
নিজেই নিজের মনে মনে কথা গুলো বারকয়েক আওড়ালো রুপা।তারপর নিজের চোখের পানি নিজের ডান হাতের পিঠ দিয়ে মুছে সে বলল,

-যে নারী বারবার অবহেলিত হচ্ছে,সে নারী অবহেলা করতেও জানে৷ নারীকে এতটা তুচ্ছ, অকিঁচিৎ, নিষ্ফলা ভেবো না মি.হিমেল চৌধুরী। আমি দাঁড়াবো তোমার সামনে তবে আজ নয় যেদিন আমি নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে আবার তৈরি করতে পারবো সেদিন। এর আগে আমি তোমার কাছে ধরা দিবো না।তবে আমি যে মানসিক যন্ত্রণা এতোদিন ভোগ করেছি আজকের পর থেকে সে একই মানসিক যন্ত্রণা তুমি ভোগ করবে।আজ থেকে এই রুপা তোমাকে এক দন্ডের জন্যেও শান্তিতে থাকতে দিবে না।
বলে একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো রুপা।
———————————————-
কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে দরজা ঠেলে মৃদূলের রুমে ঢুকলো মৃণাল।

-বুনোভাই আপনি ডেকেছিলেন।কিছু লাগবে?
নিচু গলায় কথাটা বলল মৃণাল।
মৃদূল খাটের পাশে ইজি চেয়ারে খালি গায়ে বসে ছিলো।তার পরনে কেবল মাএ একটি টাউজার ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।না চাইতেও তার উন্মুক্ত বুকের ঘন কালো পশম গুলোতে বারবার চোখ চলে যাচ্ছে মৃণালের।
মৃণালের কথায় যে কাটা গাঁয়ে নুনের চিটা পড়লো এমন মনে হচ্ছে মৃদূলের।তবুও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে সে বলল,

-এটা আমার বাড়ি,আর তুই আমার বাড়িতেই থাকিস।তাই আমার যেকোনো প্রয়োজনে /অপ্রয়োজনে আমি তোকে ডাকতে পারি। এতে যদি তোর ব্যাক্তিগত কোনো সমস্যা হয় তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।

জবাবে মৃণাল কোনো কিছু বলারই খুঁজে পেলো না।সে শুধু নতুন নিরব,নিথর হয়ে দরজার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।মৃণালের এই নিশ্চুপতাকে মেনে নিতে পারছেনা মৃদূল।তাই সে আগের চেয়েও আরও ভারী গলায় বলা শুরু করল,

-সেদিন আমি বাইক নিয়ে গেলাম তোর কোচিং এর সামনে,তুই আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলি।তারপর ঠিকই বিশানের গাড়ি করে বাড়ি ফিরলি।যখন তখন যেখানে সেখানে চলে যাস বিশানের সাথে।বিশানও আজকাল প্রয়োজনের তুলনায় বেশি যাতায়াত করছে আমার বাসায় তাও তোকে কিছু বলি নি।আর আজ আজতো তুই সব সয্যের সীমা পার করে দিয়েছিস।বাসায় কেউ যেখানে আজ নেই সেখানে তুই ওই বিশানকে নিয়ে এসে আসর সাজিয়ে বসেছিস।
শেষের কথাটা অনেকটা জোরে বলল মৃদূল। যার ফলে অনেকটা কেঁপে উঠলো মৃণাক।
মৃদূলেরও যেনো আজ থামতে ইচ্ছে করছে না।সে আগের চেয়েও আরও জোরে চিৎকার করে বলল,

-দাদুমনি কি এখানে তোকে পড়তে পাঠিয়েছে নাকি নষ্টামি করতে পাঠিয়েছে।কোনটা বলতো।
নষ্টামি শব্দ টা শুনার সাথে সাথে একবার মুখ তুলে মৃণাল তাকালো মৃদূলের দিকে।
এদিকে মৃদুল আবার বলছে,
-আর দ্বিতীয়বার যদি তোকে ওই বিশানের সাথে দেখি তাহলে তোকে মাটিতে পুঁতে ফেলবো জ্যান্ত।মনে রাখিস আমার কথাটা। বলতে বলতে সে মৃণালের সামনে চলে আসে। তারপর সে যে কাজটি করে তার জন্য মৃণাল মোটেও প্রস্তুুুত ছিল না।সে স্বপ্নেও কোন দিন ভাবনি তার বুনোভাই তার সাথে এমনটা করবে।রাগে, দুঃখে,অভিমানে তার দু-চোখ বেয়ে অজর ধারায় পানি ঝরছে শুধু।

কি করলো বুনোভাই মৃণালের সাথে😕?

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here