বেদনার রঙ নীল পর্ব -০১

বিয়ের আসর থেকে পালানোর পায়তারা করছে তুলি।

ওইযে দূরে বসে শরবত খাচ্ছে, ওই পেটমোটা, অগোছালো, অসহ্য যুবকটির সাথে আজ তার বিয়ে। বিয়ের কথা সে জেনেছে সাতদিন আগে। এই সাতদিনে সে বহু চেষ্টা করেছে লোকটিকে মেনে নেওয়ার। কিন্তু এই লোক এমন সব কাজ করে যে তুলির চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়,” আমার চোখের সামনে থেকে দূর হোন প্লিজ। আর কখনও আসবেন না।”

হেলাল সাহেব তুলির মামা। ছোটবেলা থেকে তিনিই তুলিকে লালন-পালন করেছেন। তাই বিনিময় হিসেবে তুলির কাছে একটা দাবী রেখেছেন। সামির নামক আপদটাকে বিয়ে করতে হবে। আপদ বলার কারণ লোকটা প্রচন্ড বিরক্তিকর। তার তাকানোর ধরণও বিরক্তিকর। কথা বললে মুখ থেকে থুতু বের হয়। তুলির মুখে সেই থুতু লেপ্টে যায়, ছিঃ! তাছাড়া এই লোক তিনবার ম্যাট্রিক ফেইল করেছে। এখন আর সে লেখাপড়া করে না, কিছুই করে না। বলতে গেলে লাফাঙ্গার। তুলির মতো উচ্চভিলাষী মেয়ে এমন একটি অজপাড়াগাঁয়ের লাফাঙ্গারকে কিভাবে বিয়ে করবে? তুলি দ্বিমত জানাতেই মামা রূপ বদলে ফেললেন। এতোদিন তুলিকে ঘরবন্দী রাখা হয়েছে। মোবাইল ফোন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বিয়ের আগ পর্যন্ত তুলির দিকে নজর রাখবে গাড্ডা-গাড্ডা সব পালোয়ান৷ যাতে কোনো ভাবেই তুলি পালাতে না পারে। এদের নজর এড়ানো অসম্ভব!

মামা-মামী সামিরকে খুব পছন্দ করে এর কারণ সামিরের বিখ্যাত বাবা। তিনি গ্রামের চেয়ারম্যান। তার দাপটে সবাই মাথা নুইয়ে চলে। চেয়ারম্যানের ছেলে এতো আবুল হতে পারে এটা তুলি কখনও ভাবেনি। মামা যখন তুলিকে ফোনে বললেন চেয়ারম্যানের ছেলে সামিরকে বিয়ে করতে হবে তখন তুলি নিজের মনে একটা রাজপুত্রের ছবি এঁকেছিল৷ সামির নামটাও কত সুন্দর! সে ভেবেছিল উচ্চ শিক্ষিত, ম্যাচিউর্ড আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনো মানুষ হবে। কিন্তু সামনা-সামনি দেখা হওয়ার পর তুলির হৃদয় ভেঙে দু- টুকরো হয়ে গেছে। তার হয়তো মরে যেতেও এতো খারাপ লাগবে না, যতটা খারাপ সামিরকে বিয়ে করতে লাগছে। তাছাড়া এই বিয়ে হয়ে গেলে তুলি আর কখনও ঢাকা যেতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা তার জন্য স্বপ্ন হয়ে যাবে। তুলির মতো মেধাবী একটা মেয়ে, যার স্বপ্ন আকাশছোঁয়া! সে কি-না অজপাড়াগাঁয়ের একটা ছেলেকে বিয়ে করে সারাজীবন বাসন মেজে কাটিয়ে দিবে? অসম্ভব! তার জীবনটা তো অন্যরকমও হতে পারে। তার স্বপ্নগুলো যে অনেক বড়!

তুলি খুব সহজ-সরল মেয়ে৷ তার এই সরলতাই তার কাল হয়েছে। পরীক্ষা শেষে যখন মামা তাকে গ্রামে আসতে বললেন তখনি রাইফা নিষেধ করেছিল,” যাস না তুলি, যাস না। তোর মামাকে আমার একদম বিশ্বাস নেই। যদি তোকে ঘরবন্দী করে রাখে? জবরদস্তি বিয়ে দিয়ে দেয়?”

রাইফার কথাটা তুলি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। মামা এতো জঘন্য কাজ করবে এটা তুলির বিশ্বাসই হয়নি। কিন্তু তুলি নিজের আপন মানুষদের আসল রূপ চিনতে ভুল করেছে। মামা চেয়ারম্যানের থেকে নিজের দোকানের জন্য বিশ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সামান্য টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় এবং চেয়ারম্যানের সাথে সম্পর্ক যেন মজবুত থাকে তাই তুলিকে বলি চড়ানো হচ্ছে। সামির নাকি তুলিকে পছন্দ করতো ছোট থেকে। কখনও ভয়ে বলতে পারেনি। তুলির মামা হেলাল সাহেব সেটা বুঝতেন। তাই নিজেই প্রস্তাব দিলেন,” বাবা সামির, তুলিকে বিয়ে করবে তুমি?”

সামীরের খুশি তখন আর দেখে কে! নাচতে নাচতে রাজি হয়েছে। আচ্ছা, যাকে দেখলেই তুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাকে বিয়ে কিভাবে করবে? রোজরাতে তার সঙ্গে এক বিছানায় থাকবে কি করে? লোকটি যদি তুলির গায়ে হাত দেয়… না, না, তুলি আর চিন্তা করতে পারছে না। কিন্তু যেটা সে চিন্তাও করছে পারছে না আর কয়েক ঘণ্টা পর তার সাথে সেটাই হবে। তুলি নিজের দূর্ভাগ্য মানতে রাজি নয়, কিন্তু সেটা বদলানোরও উপায় নেই।

অবশ্য তুলি ভুলে গিয়েছিল, তার মতো পরগাছার তো স্বপ্ন দেখাই বারণ৷ জন্মের পর থেকেই সে মামা-মামীর সঙ্গে থাকে। তারা তুলিকে মানুষ করেছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে। মামাতো বোন তন্বী যতটা আদর-যত্নে বড় হয়েছে, তুলিকেও তারা ঠিক সমান আদর-যত্ন করেছে। তাদের কল্যাণেই আজ তুলি স্বনামধন্য কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করতে পেরেছে। শুধু কি পাশ? সে একদম বোর্ড স্ট্যান্ড করেছে! লেখাপড়ায় তুলির জুড়ি নেই। কত স্বপ্ন ছিল নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিন্তু তার পায়ের মাটিটাই যে শক্ত নয়! তুলিকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে কেউ যদি আসতো! অনুষ্ঠানে এতো মানুষ, কারো মনে কি একটু দয়া নেই যে তুলিকে সাহায্য করবে?

সুন্দর দেখতে একটি ছেলে তুলির সামনে এসে দাঁড়ালো। গায়ের রঙ ফরসা এবং বেশ লম্বা। লাল শার্ট পরিহিত হাসি-খুশি মুখ। আন্তরিক ভঙ্গিতে বলল,” আমি কি একটু এখানে বসতে পারি?”

তুলি চমকে উঠল। ছেলেটা তার কাছে কেন বসতে চাইছে? তুলি অনুমতি দেওয়ার আগেই প্রণয় বসে পড়ল। বিনয়ের সাথে বলল,” আশেপাশে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে পাওয়া যাচ্ছে। ভীড়ও কম। একটু কথা বলেই চলে যাবো।”

তুলি জবাব দিল না। নিজের ঝামেলায় সে বাঁচে না। একটা ঝাঁকড়া চুলের মোটাতাজা লোক এগিয়ে এলো। এরা তুলির পাহারাদার। তুলির কাছে কেউ ঘেঁষলে অথবা তুলি জায়গা থেকে একটু নড়লেও এরা এসে হাজির হয়। পাহারা দেয়। লোকটি প্রণয়কে জিজ্ঞেস করল,” কি সমস্যা? এখানে কেন বসছেন?”

প্রণয় তুলিকে যেই কথা বলেছিল এই লোকটিকেও তাই বলল। লোকটি সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে প্রণয়ের পাশেই দাঁড়িয়ে রইল। ভাবটা এমন যেন প্রণয় এখানে যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ সেও থাকবে। তুলির রাগ লাগল। অসভ্য লোকটা হয়তো ভাবছে ছেলেটা বুঝি তুলির বয়ফ্রেন্ড। তুলিকে ভাগিয়ে নিতে এসেছে! ইশ, যদি এটা সত্যি হতো!

পরক্ষণেই তার মনে হলো, এই ছেলেটির কাছে সাহায্য চাইলে কেমন হয়?

প্রণয় মোবাইলে কাউকে বলল,” হ্যাঁ,প্রিয়ু শুনছে পাচ্ছিস? কোথায় তুই? তোকে খুঁজে পাচ্ছি না কেন?

ফোনের ওইপাশে একটা মেয়েলী কণ্ঠ শোনা গেল।কিন্তু মেয়েটি কি বলছে তা স্পষ্ট বোঝা গেল না। প্রণয় বলল,” উত্তর দিক চিনিস না? পেছনের সাইডে আয়। আমার গাড়ি ওখানেই আছে। তুই চুপ করে গাড়িতে গিয়ে বসে থাক। আমি একটু পরে আসছি। তারপর ডিরেক্ট ঢাকা চলে যাবো।”

ওই মেয়েটি এবার কিছু বলল। প্রণয় উত্তরে বলল,” আমার এখান থেকে বের হতে একটু দেরি হবে। তুই চাইলে গাড়িতে শুয়েও থাকতে পারিস। ব্ল্যাংকেটও আছে। গায়ে ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে আরামে শুয়ে থাক। কেউ দেখবে না তোকে। রাখছি।”

প্রণয় মোবাইল পকেটে রেখে তার সামনে দাঁড়ানো লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসল। লোকটি গমগমে গম্ভীর গলায় বলল,” কথা বলা হইছে?”

” জ্বী, থ্যাংকস।”

” যান।”

প্রণয় চলে গেল। কিন্তু তুলির মাথায় কথাগুলো ঢুকে গেল। সে একটু পরেই উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি কি বাথরুমে যেতে পারি? নাকি সেটাও নিষেধ? ”

লোকটি তুলির কথার উত্তর না দিয়ে বড় গলায় ডাকল,” ওই শেফালী, এদিকে আয়।”

” কি হইছে ভাইজান?”

” আপামণি বাথরুমে যাইবো। পাহারা দিয়া নিয়া যা।”

শেফালী চোখ কুচকে তুলির দিকে চাইল,” চলেন।”

তুলি রাগে গজগজ করে শেফালীর পেছনে গেল। হঠাৎ সে বলল,” এদিকে আসুন।”

শেফালী কর্কশ গলায় বলল,” বাথরুম তো এদিকে। ওইদিকে কই যাইবেন?”

তুলি ফিসফিস করে বলল,” আমার কাছে দেড়হাজার টাকা আছে। তোমাকে দিয়ে দিবো। প্লিজ একটু সাহায্য করো। তুমিও তো একটা মেয়ে। আমার কষ্ট বোঝার চেষ্টা করো শেফালী আপু।”

তুলি মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। শেফালী মুচকি হেসে বলল,” আমারে এইসব লোভ দেখায়েন না। আমি কোনো বিপদে পড়তে চাই না। বাথরুমে যাইতে হইলে চলেন নাইলে গিয়া বইসা থাকেন। হেলাল চাচারে কিন্তু আমি ডাক দিবো।”

তুলি মনে মনে শেফালীকে ভয়ংকর গালি দিল। তারপর বাথরুমের পথেই যেতে লাগল। কিন্তু তার মন পড়ে আছে বাড়ির পেছন দিকে। সেখানে একটা গাড়ি আছে। গাড়িতে ব্ল্যাংকেটও আছে। পালানোর চমৎকার উপায়।

বাথরুমে বসে তুলি চিন্তা করতে লাগল। প্রণয় নামের ছেলেটিকে দেখে তো ভদ্রলোকই মনে হয়। সে যদি তুলির ঘটনা শোনে তাহলে কি তুলিকে সাহায্য করবে না? তুলির ব্যাকুল মন নিজেকে বোঝালো, মানবতাবোধের এতোটা অধঃপতন এখনও হয়নি। সবাই তার মামার মতো জানোয়ার না। ওই ছেলে নিশ্চয়ই তুলিকে সাহায্য করবে। কিন্তু এর আগে ছেলেটার সঙ্গে কথা বলা জরুরী। সেই সুযোগটাই তো পাচ্ছে না তুলি। শেফালী মেয়েটা আস্তো ডাইনি।

তুলি বাথরুমের দরজা হালকা ফাঁক করে বাইরে তাকালো। শেফালী দাঁড়িয়ে আছে পিঠ দেখিয়ে। জায়গাটা নীরব, সুনসান। বাঁচতে হলে একটু রিস্ক তো নিতেই হবে। তুলি আর কিছু না ভেবে দুম করে শেফালীর পাছায় একটা লাথি মারল। পিচ্ছিল, কর্দমাক্ত ভূমিতে গড়িয়ে পড়ল শেফালী। ‘ ও আল্লাহ গো’ বলে সে চিৎকার দেওয়ার আগেই তুলি তার মুখটা বেঁধে ফেলল৷ তুলির মাথায় ফিনফিনে কাপড়ের যে ঘোমটা ছিল সেখান থেকে টুকরো ছিঁড়ে নিয়েছিল শেফালীর মুখ বাঁধার জন্য। শেফালী ছটফট করছিল। তুলি মাথার পুরো ওরনা একটানে খুলে শেফালীর হাত দু’টোও বাঁধল। তারপর বিড়বিড় করে বলল,” আগে রাজি হলে দেড়হাজার টাকাও পেতে আর লাথিটাও খেতে হতো না৷ এখন বাথরুমে বন্দি হয়ে থাকো।”

তুলি দরজা আটকে একদৌড়ে গাছের পেছনে লুকিয়ে পড়ল। পেছনদিকেও অনেক মানুষ। তুলি যদি মুখ লুকিয়ে বের হয় তাহলে তাকে কেউ চিনবে না।সে চুলের খোপা খুলে ফেলল। এখন তাকে আর বউয়ের মতো লাগছে না। পেছনের দরজায় একটাই গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তুলি ধীরপায়ে সেই গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। হাত দিয়ে এমনভাবে মুখ ঢাকল যেন তার মাথাব্যথা করছে। কেউ তুলির দিকে নজর দিল না। সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। তুলি সহজেই গাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল। এখনও কেউ আসেনি গাড়িতে। অর্থাৎ প্রণয় যে মেয়েটার সাথে ফোনে কথা বলছিল সেই মেয়ে আসেনি। তুলি বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে মাথা ঠেকালো। বুকটা এখন ধুকপুক করছে। এতোবড় কাজ সে কিভাবে করল? নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না।

গাড়ির জানালার কাঁচ দিয়ে তুলি দেখল নিজের মামাকে। হেলাল সাহেব হাসতে হাসতে কারো সঙ্গে কথা বলছেন। তুলি নিজেকে লুকিয়ে ফেলল।

কিছুক্ষণের মাঝেই হট্টগোল বেঁধে গেল বিয়ে বাড়িতে। শেফালী অনবরত লাথি মেরে দরজা ভেঙে ফেলল। তারপর সবাইকে সবকিছু জানিয়ে দিল। এবার হন্যি হয়ে তুলিকে খুঁজতে লাগল সবাই। তুলি গাড়ির পেছনের লম্বা আসনে শুয়ে কম্বলের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। তাই অনেকবার এই গাড়ির আশপাশ দিয়ে মানুষ গেলেও অন্ধকারের কারণে দেখেনি। হঠাৎ তুলি অনুভব করল, গাড়ি চলতে শুরু করেছে। হাঁফ ছাড়ল তুলি। গাড়ি না থামুক, অনেকদূর চলে যাক। কেউ তার নাগাল না পাক।

কিছুদূর যেতেই হঠাৎ গাড়িটি খুব জোরে ব্রেক কষল। তুলি কেঁপে উঠল। প্রণয় কি কিছু বুঝে ফেলেছে? তুলির ভয় লাগছে। আরও কিছুটা পথ যাওয়ার পর ধরা পড়লে ভালো হতো। এখনও তো তারা গ্রাম থেকেও বের হয়নি। তুলি বাইরের কিছু দেখছে না, শুধু শব্দ শুনছে। মোটা গলায় কেউ বলল,” পেছনে কে?”

তুলির আত্মাটা ছোট হতে হতে গায়েব হওয়ার অবস্থা হলো। এর মানে সবাই সব বুঝে ফেলেছে। নাহলে প্রণয়ের গাড়ি চেক করতে এলো কেন? প্রণয় আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল,” আমার ফ্রেন্ড। ও একটু অসুস্থ।”

” ওরে উঠতে বলেন।”

” ও মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।”

” আপনার পরিচয় কি?”

” আমি প্রণয় আহসান। ঢাকা থেকে এসেছি। আজমীর আমার বন্ধু হয়।”

সামীরের ছোটভাইয়ের নাম আজমীর। সবাই কিছুক্ষণ গুজুরগুজুর করল। প্রণয়ের কণ্ঠ আর শোনা যাচ্ছে না। একটু পর মোটা গলায় একজন বলল,” আমাদের বিয়ের কনে হারিয়ে গেছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ আপনিও ঠিক সেই সময় গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। তাই একটু সন্দেহ হয়েছিল। কিছু মনে করবেন না।”

” ইটস ওকে।”

সবার চলে যাওয়ার শব্দ পেল তুলি। সবকিছু এখন শান্ত। তুলি বড় করে শ্বাস ছাড়ল। বুক থেকে পাথর নেমে গেছে তার। প্রণয় ফিসফিস করে বলল,” প্রিয়ু, তুই তো আসবি না বলেছিলি। তারপরেও এলি যে? তোকে দেখে তো আমিই ভয় পেয়ে গেছি। কথা-বার্তা নেই, ভূতের মতো শুয়ে আছিস। ঘুমাচ্ছিস নাকি?”

তুলি জবাব দিল না। জবাব দিতে গেলে ধরা খাবে সে। প্রণয় এবার তুলির পায়ে ধাক্কা মারল৷ তুলি তাও শক্ত হয়ে শুয়ে রইল৷ প্রণয় অবাক কণ্ঠে বলল,” এই প্রিয়ু, ওঠ।”

প্রণয় কম্বল ধরে টান দিল। তুলি আরও শক্ত করে কম্বল জড়িয়ে ধরল। প্রণয় জেদ করে আরও জোরে টান দিল। তুলি শক্তিতে পারল না। কম্বল তার গা থেকে সরে গেল। তুলি অসহায় হয়ে দুইহাতে নিজের মুখ ঢেকে নিল। কিন্তু প্রণয়ের চক্ষু ততক্ষণে চড়কগাছ। বিস্ময়ে হোক কিংবা ভয়ে, বিয়ের কনেকে নিজের গাড়িতে দেখে প্রণয় অনেক জোরে চিৎকার করে উঠল। তুলির মন চাইল কেঁদে ফেলে। যারা চলে গিয়েছিল, প্রণয়ের চিৎকার শুনেই তারা আবার ফিরে আসতে লাগল।

#বেদনার_রঙ_নীল
প্রথম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here