বেপরোয়া ভালোবাসা পর্ব -১৬+১৭

গল্পঃ বেপরোয়া ভালোবাসা ( #বেপরোয়া_ভালোবাসা )
পার্ট ১৬
লেখকঃ মনা হোসাইন।

Part 16

কান্নার আওয়াজ কানে আসলেও আদি ঘুরে তাকাল না হন হন করে এগিয়ে গেল কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরেই আদিবা দৌড়ে এসে আদিকে জড়িয়ে ধরল। আদিবা ভিষন রকমের ভয় পেয়েছে বুঝে মনে মনে আনন্দ পেল আদি।
কিন্তু পরক্ষনেই অবাক হল কারন আদিবা আদিকে আঁশটে পিশটে জড়িয়ে আছে ছাড়ার নামেই নিচ্ছে না। আদি যতটুকু জানে কোন ছেলেকে এতক্ষন জড়িয়ে রাখার মেয়ে আদিবা না তাই আদির কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক লাগল।

-“কি হয়েছে এত ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি কী সত্যি সত্যি তোকে রেখে চলে যেতাম নাকি?

আদিবা জবাব দিল না বরং আদিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আদিত্য ব্যাপারটা পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারল কেউ আদিবার পিছু নিয়েছে।
কয়েকটা লোক এগিয়ে আসছে। দেখার সাথে সাথে আদিবাকে আঁড়াল করে নিজে সামনে দাঁড়াল,
লোকগুলোর মধ্যে একজন এগিয়ে এসে বলল,

“”” ও তাহলে এই ব্যাপার,ফুলটুসি একা আসে নি?

লোকটার কথায় আদি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে শান্ত গলায় বলল,

-“কি সমস্যা..? কিসব বলছেন উল্টা পাল্টা..?

“”” উল্টাপাল্টা কি বললাম হ্যা..?? এই বিকালে জংগলের মাঝখানে মেয়ে নিয়ে কি করছিস?

“”” তার কইফত আপনাকে দিতে হবে?

“” আলবাত দিতে হবে চিনিস আমরা কে? মেয়ে নিয়ে নস্টামি করিস আবার গলা উঁচিয়ে কথা বলিস?

“” ওহ আমরা নষ্টামি করছি আর আপনারা এখানে মহাভারত শুদ্ধ করতে এসেছিলেন তাই তো..?

-“তোর সাহস তো কম না বলেই ছেলেটি এগিয়ে আসল।

আদিত্য আদিবাকে ধ্বাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে লোকটাকে আটকানোর চেষ্টা করল। আদি লোকটাকে এত জোরে মেরেছে যে ছেলেটার নাক মুখ থেকে র*ক্ত পড়ছে।

সাথে থাকা অন্য লোক গুলো তাতে ক্ষেপে গিয়েছে। তারা যেই এগিয়ে আসতে চাইল আদি বলে উঠল,
-“আমি জানি ভুল করে ফেলেছি। তোরা আমাকে ছাড়বি না সেটাও জানি কিন্তু আমাকে একটু সময় দে কথা দিচ্ছি আমি তোদের, আমাকে মারার সুযোগ দিব। বলেই আদি নিজের মানিব্যাগ থেকে মোটা অংকের টাকা বের করে আদিবাকে ইশারা করে বলল যদি ওকে যেতে দিস যত টাকা আছে সব দিয়ে দিব। বিনিময়ে শুধু ওকে যেতে দে।

সাথে সাথে পড়ে থাকা লোকটা চেঁচিয়ে উঠল
-“আজ তোর সামনেই তোর প্রেমিকাকে সবাই ছিঁড়ে খাবে বুঝেছিস? তোর এত সাহস আমার গায়ে হাত দিস এই দাঁড়িয়ে কি দেখিছিস মার সালা*কে…

বলতে বলতেই ব্যাপারটা হাতাহাতি থেকে মারামারিতে রুপ নিল। লোকগুলো যেমন প্রাণপন চেষ্টা করছে আদিকে মারার আদিও তেমন নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছে। মারামারির এক পর্যায়ে লোকটার সাথে থাকা অন্য লোক গুলি পালিয়ে গেল। আদি যে ব্যাথা পায়নি ব্যাপারটা তা নয় সেও ব্যাথা পেয়েছে তবে তুলনামূক কম পেয়েছে। অন্যরা বেশি পেয়েছে তাই পালিয়েছে। সুযোগ থাকলে এই লোকটিও পালাত সন্দেহ নেই কিন্তু আদি সে সুযোগ দেয়নি। সে লোকটাকে সমানে মেরে চলেছে। অবস্থা খারাপ দেখে আদিবা এগিয়ে গিয়ে আদিকে থামানোর চেষ্টা করল,

-“ভাইয়া কী করছেন ছেড়ে দিন ম*রে যাবে তো…

আদি অনেক আগেই নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে তাই আদিবা বাঁধা দিতে যাওয়ায় রাগে আদিবাকেও আঘাত করে বসল। সে আদিবাকে খেয়াল করেনি আদিবা ছিটকে পড়ে গেল বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে।আদিবা আহ বলে চিৎকার করতেই আদির হুঁশ ফিরল।

সে লোকটাকে ছেড়ে দিয়ে আদিবাকে টেনে তুলল কিন্তু অনুশোচনা মূলক কিছু বলল না। নিজের মানিব্যাগ থেকে সব টাকা বের করে লোকটার উপড় ছুঁড়ে দিয়ে বলল,

-“আমি ভাল করেই জানি যেখানে সেখানে মেয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। আমি আসতাম না বাধ্য হয়েই এসেছিলাম যাইহোক আমি সহজে কাউকে মারি না বাড়াবাড়ি না করলে মার*তাম না. চিকিৎসা করে নিস।

বলে আদিবার হাত শক্ত করে চেপে ধরে হাঁটতে লাগল আদি।আদিবা পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তাই হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তারউপড় আদি বেশ শক্ত করে হাত ধরে রেখেছে হাতেও ব্যাথা লাগছে তাই আদিবা আস্তে করে বলল,

-“ভাইয়া একটু আস্তে ধরুন আমার লাগছে।

বলতেই আদিত্য আদিবার হাতটা ছেড়ে দিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল আদিবার গালে। আদিবা কারন টা বুঝতে পারল না। তবে প্রশ্ন করার আগেই আদি উত্তর দিল,

-“কোন সাহসে এত ভিতরে এসেছিলি..? আমি তোকে রাস্তার পাশে থাকতে বলেছিলাম তা না করে তুই কি করলি..? তোকে যেখানে নিয়ে এসেছিলাম তুই যদি সেখানে থাকতি তাহলে এত সমস্যা হত না।চাইলেই যেখানে সেখানে যাওয়া যায় না জানতি না? আচ্ছা তুই যে বনের ভিতরে চলে গেলি যদি আমি তোকে খুঁজে না পেতাম তোর কি অবস্থা হত?কিংবা ওরা যদি আমার চেয়ে বেশি মা রা মা রি পারত? চোখের সামনে তোকে ছি*ড়ে খেত আর আমার সেটা দেখতে হত এটাই চেয়েছিলি..?
আদিবা বুঝতে পারল ভুল করে ফেলেছে তাই কোন উত্তর দিল না। আদি আবার বলল,

-” আজ একবার বাসায় যাই তারপর তোর হবে..
বলে আবারো হাত ধরে হাঁটতে লাগল।

-“যা বলার বাসায় গিয়ে বলবেন এখন একটু আস্তে হাঁটুন প্লিজ আমি আপনার সাথে তাল মিলাতে পারছি না।

-“তোর জন্যে অপেক্ষা করতে থাকি সে ফাঁকে ছেলেগুলো এসে আবার ঝামেলা করুক তাই না?

আদিবা আর কিছু বলল না চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসল। আদি ড্রাইভ করছে আদিবা পাশে বসে আছে কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই। আদি রাগ করেছে সন্দেহ নেই বাসায় গেলে আদিবাকে মার খেতে হবে সেটাও জানে তাই আদিবা মনে মনে সেটারেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম হটাৎ আদি ব্রেক চাপল।

“”” গাড়ি থেকে নাম।

“”” এখানে নামব…???

“”” অন্য কোথাও নামার হলে অন্য কোথাও এই বলতাম তাই না.?

আদি রেগে আছে তাই কথা বাড়াল না আদিবা নেমে দাঁড়াল। নামার সাথে সাথেই আদি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

আদির কান্ডে অবাক হল আদিবা। শাস্তি পাওয়ার কথা ছিল ঠিকি কিন্তু এভাবে..?? এখন সে কোথায় যাবে? এই রাস্তাটা তার চিনা নয়। তাছাড়া আসার সময় আদি তাকে জোর করে নিয়ে এসেছিল তার কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। একে তো অচেনা জায়গা তার উপড় হাতে টাকাও নেই। টাকা থাকলে হয়ত রিক্সা নিয়ে বাসায় যেতে পারত কিন্তু এখন কি করে যাবে? কিছু ভাবতে পাচ্ছি না শুধু কান্না পাচ্ছে কিন্তু তাতে কার কি যায় আসে আদি যে পরিমান রেগে আছে আদিবার দিকে একবার ঘুরেও তাকায় নি চলে গিয়েছে।



আদিবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল হটাৎ পরিচিত মুখের দেখা মিলল,

-“আদিবা তুমি এই রাস্তায়..? কোথায় গিয়েছিলে..?

আদিবা তাকিয়ে অবাক হল,
-“নীলয় ভাইয়া আপনি..?

-“একটা কাজে গ্রামে গিয়েছিলাম সেখান থেকেই ফিরছি কিন্তু তুমি এই রাস্তায় কি করছো..?

-“না মানে আমি..?

-“যাই হোক বাসায় যাবে তো নাকি? এসো আমি ছেড়ে দিচ্ছি।

-“না ভাইয়া লাগবে না আমি একাই যেতে পারব।

-“এখানে কোন যানবাহন পাবে না সন্ধ্যা হয়ে আসছে জায়গাটা ভাল না তাছাড়া তোমার বাসা এখান থেকে অনেক দূরে যেতে সময় লাগবে চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

আদিবা উপায় না পেয়ে গাড়িতে উঠল। তবে তার বুক ধুঁকপুক করছে এই মানুষটার জন্য তাকে ছয় বছর ধরে শাস্তি পেতে হচ্ছে। আজ এতদিন পর কাকতালীয় ভাবে দেখা হবে কে জানত কিন্তু আদি যদি কোনভাবে এই ব্যাপারটা জানতে পারে আদিবাকে জ্যান্ত ক ব র দিবে এতে কোনরকম সন্দেহ নেই। আদিবা যখন নিজের ভাবনায় ব্যাস্ত তখন নীলয়ের প্রশ্নে ভাবনায় ছেদ পড়ল,

-“তারপর বলো কেমন আছো…?

-“ভালই আছি ভাইয়া আপনি.?

-“যেমন দেখতে পাচ্ছো শুনলাম অরিনের এনগেইজমেন্ট হয়েছে?

-“ভাইয়া আসলে..

-“আরে তুমি বিব্রত হচ্ছো কেন? আসলে অরিন কোনদিনি আমায় ভালবাসে নি.অনেক তো বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ও বুঝে নি তাই আর বিরক্ত করিনি। ওকে পাওয়ার আশা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি।

-“তারপরেও খোঁজ তো রেখেছেন এতবছর পরেও..

-“কি করব বলো আমার ভালবাসা তো মিথ্যা ছিল না। অরিনকে আমি ছোটবেলা থেকে ভালবাসি।

-“ভাইয়া আপনি যদি আপুর সাথে একবার কথা বলতেন?

-“এখন আর কথা বলে কী হবে যা হওয়ার তাত হয়ে গেছে। বিয়ে করছে সুখী হোক সেটাই চাই। যাইহক ছাড়ো এসব তোমার কথা বলো..?কী করছো এখন? অনার্স কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে তাইনা?

-“ভাইয়া আমি মানে..আমি মাধ্যমিকের পরে আর পড়াশোনা করিনি.

-“মানে কী? কি বলছো এসব?(খুব অবাক হয়ে)

প্রশ্নটায় আদিবা বিব্রত হচ্ছে বুঝতে পেরে নীলয় প্রসঙ্গ বদলে বলল,

-“তা বিয়ে কবে করছো..? অরিনের পর এবার তো তোমার পালা.. দিন কিভাবে চলে যায় তাই না? দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলে।

নীলয়ের কথায় আদিবা হাসল।গাড়ি এসে থামল রাস্তার মোড়ে..

নীলয় রিক্সা ডেকে দিয়ে বলল,
-“বাসা পর্যন্ত গেলে সবাই হয়ত মাইন্ড করবে তোমার সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া আমি আর অরিনের সামনে যেতে চাই না।

-“আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাব ভাইয়া? আপনি না থাকলে আজ বিপদে পড়ে যেতাম।

-“আরে এটা কোন ব্যাপার হল নাকি বোকা মেয়ে.. আচ্ছা যাও এখন,সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।

-“ভাইয়া, আসি তাহলে..?

আদিবা ফিরে আসবে তখন নীলয় এগিয়ে এসে বেশ ইতস্ততা নিয়ে বলল,

-“আদিবা যদি কিছু মনে না করো তোমার ফোন নাম্বার টা পেতে পারি? আসলে…থাক সমস্যা হলে দিতে হবেনা।

নীলয় নিজেই বিব্রত হচ্ছে দেখে আদিবা মানা করতে পারল না দ্বিধাবোধ হলেও শেষ পর্যন্ত নাম্বারটা দিল তারপর বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা হল।
।#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১৭
#লেখনীঃ Gazi pingke-All story

আদিবা বাসায় ঢুকতেই সবাই হুমরি খেয়ে পড়ল,আদির মা রাগে গজ গজ করতে করতে বললেন,

-“কী এমন যাদু করেছিস বলতো আদিবা যে, আদি তোকে ছাড়া দুচোখে অন্ধকার দেখে অন্য কিছু যেন চোখে পড়ে না তার।

আদির মায়ের কথায় অবাক হল আদিবা। আদি যে সবার সামনে থেকে আদিবাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো এটা কী তার চোখে পড়ে নি? তারপরেও কী করে আদিবাকেই দোষ দিচ্ছে? শুধু যে আদির মা তা নয় বাসার সবাই আদিবাকে কথা শুনাচ্ছে। এরা কী সত্যিই মানুষ নাকি অন্য কিছু বুঝবার চেষ্টা করল আদিবা।

একে তো আদি তাকে জোর নিয়ে গিয়েছিল তারপর আবার মেরেছেও সবচেয়ে বড় কথা রাস্তায় ফেলে চলে এসেছে এতকিছুর পর কারো যদি রাগ করার কথা থাকে সেটা একমাত্র আদিবার। কোথায় সে রাগ দেখাবে তা না সবাই তার উপর রাগ দেখাচ্ছে।বিয়ে ভেঙেছে বলে আদিবাকে দায়ি করছে। আদিবার জন্য নাকি পাত্রপক্ষের কাছে লজ্জিত হতে হয়েছে। সবার কথা শুনে আদিবার ভীষন রকমের রাগ হচ্ছে,ইচ্ছে করছে মুখের উপড় দু চারটা কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু পারল না।

আদির মা রাগী গলায় প্রশ্ন করলেন,

-“তা গিয়েছিলি তো দুজন ফিরার সময় একা কেন? আদি কোথায়?

-“কোথায় মানে? উনি বাসায় আসেন নি..?

-“ন্যাকামি করিস? তোকে যে একমিনিট চোখের আড়াল করে না সে তোকে রেখে একা ফিরে আসবে এটা বিশ্বাস করতে বলছিস? সত্যি করে বল কোথায় গিয়েছিলি তোরা? কী অঘটন ঘটিয়েছিস? খোদা জানে ছেলেটাকে একা পেয়ে কিভাবে মাথা চিবিয়েছিস।

আদিবা আর চুপ থাকতে পারল না,
-“কাকিমনি তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমি ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। উনি যে জোর করে আমায় নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা যেন তোমরা কেউ দেখতেই পাওনি। উনি আমাকে যেভাবে নিয়ে গিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই রাস্তায় ফেলে রেখে চলে এসেছেন। তোমরা আমাকে যতটা নীচ ভাবছো আমি এতটা নিচে এখনো নামতে পারি নি তাছাড়া ভাইয়া আমাকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। সেটা যদি এখনো না বুঝে থাকো তাহলে বলব তোমরা ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে থাকতে চাও।

কথাগুলো বলেই নিজের রুমে চলে আসল আদিবা কি ঘটেছিল বাসার কাউকে বলতে ইচ্ছে হল না ।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গিয়েছে ঘড়ির কাঁটা ১১ টার ঘর ছুঁই ছুঁই করছে কিন্তু আদির ফেরার নাম নেই।বাসার সবাই তার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে করছে কারন সবাই তাকে ফোন দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। আদির এতক্ষন বাইরে থাকার কথা না। এবার আদিবার নিজেরো চিন্তা হচ্ছে।আদি তাকে রেখে অনেক আগেই চলে এসেছিল এতক্ষনে তার ফিরে আসার কথা তাহলে ফিরছে না কেন? আবার কোন ঝামেলা হয় নি তো? কি কি ঘটেছে বাসায় বললে তাকে সবাই দোষারোপ করবে সন্দেহ নেই বকাবকি এমনকি গায়েও হাত তুলতে পারে কিন্তু এখন সব না বললে বিপদ হতে পারে।

-“আচ্ছা ভাইয়ার সাথে খারাপ কিছু ঘটেনি তো..?
আমার এমন লাগছে কেন? আমার তো ভাইয়ার উপড় রাগ করার কথা কিন্তু ওর কথা মনে হলেই কান্না পাচ্ছে কেন?

আদিবার হাত পা কাঁপছে। যে মনে প্রাণে দোয়া করছে আদির যেন কিছু না হয়। অজান্তেই চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।

হটাৎ বাসার লেন লাইনে কল আসল।
আদি ফোন করেছে ফোন পেয়েই আদির বাবা বেরিয়ে গেলেন। কাউকে কিছু বললেন না।
আদি ফোন করেছে শুনে আদিবার দেহে প্রাণ ফিরল। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হল। আদিবা এতক্ষন শুয়ে শুয়ে কাঁদছিল এবার উঠে বসল।

উঠে ঘাড় ঘুরাতেই বিছানার পাশের আয়নায় প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল,

নিজের চোখ পানি দেখে হটাৎ করেই আদিবা কেমন যেন কোথায় হারিয়ে গেল।

-“আচ্ছা আমি কাঁদছিলাম কেন? যে আমায় কথায় কথায় ভয় দেখায়, গায়ে হাত তুলতেও ভাবে না যার জন্য আমার জীবনের সব এলোমেলো হয়ে গেল পড়াশোনা ছাড়তে হল তার জন্য আমার খারাপ লাগবে কেন? ভাইয়া তো জানত জায়গাটা ভাল না তবু আমায় ফেলে চলে এসেছিল তার জন্য আমি কাঁদছি কেন?

ভেবেই আদিবার মাথায় জেদ চেপে গেল চোখ মুছে নিল।

রাত ১২ টার দিকে আদি বাসায় ফিরল সাথে তার বাবাও আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা ঘটেছে আদির অবস্থা বিশেষ ভাল মনে হচ্ছে না। বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে গিয়ে জড়ো হল।

আদির বাবা এসেই সোফায় বসে পড়লেন আদির মা এগিয়ে প্রশ্ন করলেন
“”” এতক্ষন কোথায় ছিলি ..? সবার সামনে থেকে আদিবাকে এভাবে নিয়ে গিয়েছিলি কেন জবাব দে।

“” ওকে এখনো জ্যান্ত কবর দেই নি এই তো অনেক (বিড়বিড় করে)

আদি উত্তর দেয়ার আগে রেহানা বেগমকে আহমেদ সাহেব থামিয়ে দিয়ে বললেন
-“আজেবাজে প্রশ্ন করা করো রেহানা।

-“আজেবাজে প্রশ্ন হবে কেন। আমাদের সবার কতটা নিচু হতে হল ওর জন্য..জবাব দে আদি কেন এমন করলি?

-“এই প্রশ্নগুলো না করে প্রশ্ন করো ও এতক্ষন কোথায় ছিল।

-“কোথায় ছিল মানে?

আদুর মুখে কথা নেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

-” কি রে আদি জবাব দে…

-” কি জবাব দিবে? তোমার গুণধর ছেলে সারাদিন থানায় ছিল বুঝেছো..?

আহমেদ সাহেবের কথায় সবাই অবাক হল সবচেয়ে বেশি অবাক হল আদিবা আদির মা এগিয়ে গিয়ে বললেন,

-“থানায় ছিল মানে কী….???

-” কিছু নেশাখোর ছেলের সাথে ঝামেলা করেছিল পুলিশ খবর পেয়ে ধরে এনেছে।

-“দেশে ফিরেছিস দুদিন ও হয় নি নেশাখোর ছেলেদের সাথে তোর কিসের ঝামেলা আদি? কি রে উত্তর দে?

-“আমি ভাবতেও পারছি না এত বছরেও ওর আচারনের কোন পরিবর্তন হয় নি। আমরা ওকে মানুষ করতে পারি নি রেহানা।

আহমেদ সাহেবের কথাটা বলতে দেরি হলেও আদির উত্তর দিতে দেরি হল না।
“”” এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে বাবা..

-“বাড়াবাড়ি তো হবেই তুমি নেশা করবে আর আমি বললে সেটা বাড়াবাড়ি।

-“তোমার মনে হচ্ছে আমি নেশাখোর?

-“তা নাহলে কাশবনে কি করছিলে শুনি?

-“আমি জবাব দিতে বাধ্য নই।তবে এ ঝামেলা আমার জন্য হয় নি যার জন্য হয়েছে তাকে আমি দেখে নিব।

-“কার জন্য হয়েছে শুনি?

-“কার জন্য হয়েছে তার উত্তর তখনী পাবে যখন তাকে হাসপাতেলে পাঠাতে পারব।

বলতে বলতে আদিবার দিকে তাকাল আদি।ভয়ে আদিবার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল তবুও ভাল সবার সামনে তার ব্যাপারে বলেনি।

“”” এখনো বড় মুখ করে বলতে পারছিস তুই ?

“”” যা করেছি তা বলতে আমি যেমন ভয় পাই না তেমনি যা করিনি সেটা মানতেও পারি না।

“”” মানে কি তুই আবার কাউকে মারবি.?

“” তো তোমার কি মনে হয় যার জন্য আমাকে জেলে যেতে হল তাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব..?

“” আদি তুই বাড়াবাড়ি করছিস।

“‘” কেউ যদি ভাল কথা ভালভাবে না বুঝে তাকে আমি আমার মত করেই বুঝাব। যাইহোক আমাকে ছাড়িয়ে এনেছ বলে ভেবো না আমার জীবনের দখলদারি পেয়ে গিয়েছো। আমি এখানে বেশিদিনের জন্য আসিনি তাই আমাকে শাসন করার চেষ্টাও করো না। যদি তোমাদের অসুবিধে হয় কালকেই চলে যাব তাছাড়া পুলিশ আমাকে আটকে রাখত না যদি আমার সাথে টাকা থাকত আশা করছি আমি কি বুঝাতে চাইছি তুমি বুঝেছো। তবুও যদি তোমার আমাকে অপরাধী মনে হয় বাবা হিসেবে শাস্তি দিতে পারো। তবে এখন না পায়ে ব্যাথা পেয়েছি দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছে তাই রুমে যাচ্ছি তুমি মায়ের সাথে কথা বলে সিধান্ত টা আমাকে জানিয়ে দিও আমি কী চলে যাব? তোমরা যদি না চাও আমি এক মূহুর্তও এখানে থাকব না তোমাদের বিরক্ত করার ইচ্ছা আমার নেই।
আমি উপড়ে যাচ্ছি,আদিবা ফাস্ট বক্স টা নিয়ে আমার রুমে আয় তো বলেই হাঁটতে লাগল আদি।

এতক্ষন ধরে আদিবা সবার কথা শুনছিল কিছু বলি নি। কিন্তু আদির কথা বলার ধরন দেখে তার কেন যেন মনে হচ্ছিল আদি ঠিক নেই। হয়ত শরীর খারাপ তাছাড়া মারামারির সময় ব্যাথাও পেয়েছিল।

আদি পা টানতে টানতে যেতে যেতে আবার পিছন ঘুরল,

“”” আদিবা কিছু বলেছি তোকে কথা কানে যায় নি…??

“”” আ আ আসছি ভ ভ ভাইয়া..!!!

আদি ঘরে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই আদিবা ফাস্ট এড বক্স নিয়ে ঘরে গেল।

“”” আসব…??

আদি ঘুরে একবার আদিবাকে দেখল কিন্তু উত্তর দিল না।

-“আজব রাগ আমার কথা তা না নিজে রাগ দেখাচ্ছে(ফিসফিস করে)

“”” ফিসফিস করা বাদ দিয়ে ভিতরে আয় আর দরজা টা বন্ধ করে দে…

“”” দেখুন আমি যা করেছি তার জন্য যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছেন আর না।

“”” দরজা টা বন্ধ করতে বলেছি মা*রব বলি নি তো।

আদিবা এখন তার কথা না শুনলেও মারবে শুনলেও মারবে তাই বাধ্য হয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে এগিয়ে গেল আদিবা। আদি হাতের ইশারায় আদিবাকে নিজের কাছে ডাকল। কেন জানি আদিবা ভয় পেল,

-“ভ ভ ভাইয়া…

-“বাসায় কী করে ফিরলি?

প্রশ্নটা শুনেই আদিবার গলা শুকিয়ে গেল। তবে কী আদি জেনে গিয়েছে সে নিয়ের সাথে ফিরেছে?আজ আর রক্ষা নেই।

-‘কিরে জবাব দিচ্ছিস না কেন? ও বুঝেছি আমার উপড় রাগ করেছিস তাই না? ওভাবে রাস্তায় নামিয়ে দিলাম তাই…আসলে আমি জানতাম এই ঝামেলা এত সহজে মিটবে না পুলিশ আমাকে তাড়া করবে। তোকে পুলিশি ঝামেলায় ফেলতে চাইনি তাই নিরাপদ দুরুত্বে এসে তোকে নামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। রাগ করিস না প্লিজ।

-“ভাইয়া তুমি..?

-“বাহ কতবছর পর তোর মুখে তুমি ডাক শুনলাম। আমি তোকে রাস্তায় ছেড়ে দিব এটা তুই ভাবলি কি করে?সে যাইহোক আমি তো ফয়সালকে বলেছিলাম তোকে পিক করতে কিন্তু ও বলল তোকে নাকি পায় নি।জানিস এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম না জানি কি হয়েছে তোর সাথে? পরে ভাবলাম হয়ত বাসায় ফিরে এসেছিস।

-“ভাইয়া আমায় পুলিশ কেসে জড়াতে চায় নি জন্যে আমাকে নামিয়ে দিয়েছিল আর আমি ওকে কত কিছু ভেবেছি।সত্যিই ভাইয়া আমার কথা এত ভাবে?তবে কি সবার কথায় ঠিক ও সত্যিই আমায় ভালবাসে?হয়ত সত্যিই বাসে কিন্তু ভাইয়া যদি জানতে পারে আমি আজ নিলয়ের ভাইয়ার সাথে বাসায় ফিরেছি তাহলে কী হবে? ও কি মেনে নিতে পারবে ব্যাপার টা?কেন মনে হচ্ছে আমার জীবনে ঝড় আসতে চলেছে?



চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here