বেপরোয়া ভালোবাসা পর্ব -১৮+১৯

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১৮
#লিখনীঃ Mona hossain

আদি নিচে বলে এসেছে আদিবাকে হাসপাতালে পাঠাবে কিন্তু এখন তা না করে আদিবার সাথে এত ভাল করে কথা বলার কারন টা আদিবার মাথায় ঢুকল না। আদিবা উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।তাকে চুপ থাকতে দেখে আদি আবার প্রশ্ন করল

-“কিরে উত্তর দিছিস না কেন? কি করে বাসায় ফিরলি বল…

আদি কথা বলছে আর প্যান্টের নিচের দিকে ভাঁজ করতে করতে উপড়ে তুলছে। আদিবা এবারেও উত্তর দিল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু আদি প্যান্টের ভাঁজ একটু উপড়ে তুলতেই আদিবা আঁতকে উঠল। আদির পা থেকে রক্ত পড়ছে। আদিবা তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে আদির পায়ের কাছে বসে আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল,

-“ভ ভ ভাইয়া …?

আদি হয়ত বুঝতে পেরেছে আদিবা রক্ত দেখে ভয় পেয়েছে কিন্তু সে আদিবার অবস্থাকে গুরুত্ব না দিয়ে সহসা জবাব দিল,
“” বেন্ডেজ টা করে দে তো আদিবা, করার মত এনার্জি পাচ্ছি না।

আদি কথাটা এত স্বাভাবিকভাবে বলল যেন কিছুই হয় নি। অথচ হাঁটুর নিচে দগদগে ক্ষত। এখনো রক্ত ঝড়ছে মনে হচ্ছে। এই অবস্থাতেও এত শান্ত থাকা যায়.?আদি কথাটা বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। পা ২টি বাইরের দিকে ঝুলিছে ।এবার হাঁটুর নিচে দগদগে ক্ষত টা আরও স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে। পুরো জায়গা টা রক্তে লাল হয়ে আছে দেখে চোখ কপালে উঠে গেল আদিবার । এত টা ব্যাথা পেলে সে হয়ত এতক্ষনে হাসপাতালে থাকত আদি কি করে সহ্য করছে তার মাথায় ঢুকছে না। কেন যেন আদিবার খুব কান্না পাচ্ছে। যদিও কান্নাটা করার কথা আদির কিন্তু সে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে উল্টে আদিবা কান্না জুড়েছে। আদিবা কান্না চাপার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না সে নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না হাওমাও করে কাঁদছে।

আদিবার কান্নার শব্দ শুনে আদি পুরো বোকা বনে গেল কারন সে আদিবার কান্নার কারন বুঝতে পারছে না তাই তাড়াতাড়ি উঠে বসল। তীক্ষ্ণ চোখে আদিবার দিকে তাকিয়ে বলল,

“” সমস্যা কি? কান্না জুরেছিস কেন? আমি ত তোকে মারি নি এমনকি বকাও দেই নি…তাহলে কাঁদছিস কেন?

আদিবা উত্তর দিল না সে একমনে কেঁদে চলেছে।

-“আরে যন্ত্রনা বলবি তো কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?

-“ভ ভ ভাইয়া

-“আগে কান্না থামা তারপর বল কি হয়েছে..

-“এ্যা এ্যা…

-“কান্না থামাতে বললাম না?

“” ভাইয়া এতটা কি করে কাটল?

চোখ মুছতে মুছতে প্রশ্ন করল আদিবা।

“” ঢং করিস আমার সাথে? জানিস না কিভাবে কেটেছে?

-“আমার জন্যই এত কিছু হয়েছে তাই না…?

-“এনেছিলাম বেন্ডেজ টা করে দিতে তা না করে ঢং শুরু করেছিস? চোখের সামনে থেকে দূর হ ইডিয়েট লাগবে না তোর বেন্ডেজ করা।

“” এটা বাসায় বেন্ডেজ করার মত ব্যাথা? এখনি হাসপাতালে চলো।

“”” আমাকে ত পাগলা কুকুরে কামড়েছে হাসপাতালে যাব. বক্স টা দে বলে আদি নিজেই বেন্ডেজ করতে শুরু করল আদিবা বসে বসে দেখছে আর কাঁদছে।

“” আজব তো ইডিয়েটের মত আর কত কাঁদবি? এবার তো পানি শুন্যতা দেখা দিবে চুপ কর।

-“আপনি কি পাথায় দিয়ে তৈরি? আপনার ব্যাথা লাগছে না?

-“না লাগছে না, আমার কিসে ব্যাথা লাগে সেটা যদি তুই বুঝতি তাহলে তো কাজেই হত।যাই হোক জীবনে ত কোন কাজ করতে পারলি না এখন যা বাইরে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা কর। শরীর ভাল লাগছে না ঘুমাব

আদিবা আর কিছু বলল না চুপচাপ বাইরে এসেই খাবারের জোগার করতে লাগল। আদির মা দেখছেন কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না কারন আদি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে এখানে থাকবে না এখন কিছু বললে হয়ত এখনী চলে যাবে।

আদিবা খাবার নিয়ে ঘরে গিয়ে দেখল ঘর ফাঁকা আদি সেখানে নেই…

-“ভাইয়া ভাইয়া….

আদিবা দুবার ডাকতে আদি ওয়াশ রুম থেকে জবাব দিল।

-“শাওয়ার নিচ্ছি, একটু অপেক্ষা কর,আসছি।

আদিবা টেবিলে খাবার রেখে বিছানায় বসল। কিছুক্ষনের মধ্যেই আদি আসল। খালি গা পরনে হালকা ব্রাউন কালারের থ্রী কোয়ার্টার গলায় ঝুলছে সাদা টাওয়াল। কপালের উপড় ছড়িয়ে থাকা এলোমেলো চুল থেকে টুপটাপ পানি ঝরছে।

আদিবা নিজের অজান্তেই হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।আদি ব্যাপারটা বুঝেও আদিবাকে বিব্রত করার জন্য বলল,

-“হা করে কি দেখছিস
? বড় ভাইকে দেখতে লজ্জা করে না?

আদিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করল কারন সে লজ্জা পেয়েছে ভিষন রকমের লজ্জা।মুখটা ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে আদিবার অবস্থা দেখে আদির খুব হাসি পেল সে উচ্চস্বরেই হেসে ফেলল।আদিবা এবার এদিক ওদিক না থাকিয়ে এক দৌড়ে সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।



রাত বাড়ছে কিন্তু আজ ঘুমকে কিছুতেই বসে আনতে পারছে না আদিবা। বার বার আদির জন্য দুচিন্তা হচ্ছে।

-“ভাইয়া কী ঘুমিয়েছে? ওর পায়ে ব্যাথা করছে না তো..?একবার কী গিয়ে দেখে আসব?

যেই ভাবনা সেই কাজ আদিবা উঠে বসল কিন্তু চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল রুম পুরো অন্ধকার!
বিদ্যুৎ নেই তাই কোথাও কোন আলোর রেখা নেই কিন্তু তাতে কী আদিবার এখন আদির কাছে যেতে ইচ্ছে করছে. অন্ধকারে হাতরে হাতরে গিয়ে দাঁড়াল আদির ঘরের সামনে আর দরজাটা শব্দহীনভাবেই খুলার চেষ্টা করলো। পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকল।

আদি মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। গভীর ঘুমে আছন্ন সত্যিই কি উনি ঘুমাচ্ছে নাকি শরীর বেশি খারাপ লাগছে? জ্বর আসে নি তো ? আদিবার ইচ্ছে হলো একবার ছুঁয়ে পরখ করতে। আদিকে এমন নিতর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে আদিবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সুস্থ্য অবস্থায় তো সারাদিন আদিবাকে শাস্তি দিয়েই কুল পায়না তবুও আদিবার খারাপ লাগছে।

-“আচ্ছা আপনার শাস্তির ঝুড়ি কি কোনোদিন শেষ হবেনা? এ কেমন ভালবাসা?

আদিবা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে উল্টো ঘুরে হাটা ধরতেই আদি খপ করে আদিবার হাত ধরল অন্ধকারে হটাৎ এমন কান্ডে ভয়ে চমকে উঠল আদিবা চিৎকার দিতে চেয়েছিল কিন্তু সে সুযোগ পায় নি তার আগেই আদি তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।
এটা আদি বুঝতে পেরে দেহে প্রাণ পেল। আদির বুকে মুখ গুঁজে নিজেকে সামলাতে চাইল সাথে সাথে আদি বলে উঠল,

-“দুদিনেই অভ্যস্থ হয়ে গেলি?

আদিবা প্রেশ্নের মানেটা বুঝল না তাই মুখ তুলে প্রশ্ন করল,

-“মানে…?

এবার আদিও উঠে বসল,
-“মানে দুদিন আমার সাথে ঘুমিয়েই অভ্যস্থ হয়ে গেছিস তাই নিজেই ছুটেই এসেছিস। এতটাই অভ্যস্থ হয়েছিস যে একটা ছেলে গায়ে হাত দিলেও অস্বস্তি হয় না কি সুন্দর বুকের উপড় শুয়ে থাকতে পারিস।

-“আপনি এসব কি বলছেন?

-“যা সত্যি তাই তো বলছি।

আদিবার এখন কী উত্তর দেয়া উচিত সে জানেনা। আদি কী তাকে অপমান করছে কিনা সেটাও বুঝতে পারছে না শুধু জানে এই পরিস্থিতিটা তার খারাপ লাগছে। আমতা আমতা করে জবাব দিল

-“আপনি ভুল বুঝছেন আপনার শরীর খারাপ তাই দেখতে এসেছিলাম।

-“আদিবা তুই কী জানিস তুই আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস?

“আ আ আপনি এসব কী বলছেন?

আদি আবারও শান্ত গলায় জবাব দিল,

-” এই ভুল টা করিস না…নিজেকে সামলা।এভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিস না। আমি ছেলে মানুষ মেয়েদের সাথে ফুর্তি করতে আমার ইচ্ছে হতেই পারে কিন্তু তোকে সেটা মানায় না..

।#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পার্টঃ১৯
#লিখনীঃ mona hossain

যদিও আদি আদিবাকে অপমানের উদ্দেশ্যে কথা গুলো বলেছিল কিন্তু কথাগুলো আদিবার মাথা কিংবা মন কোন জায়গাতেই স্থান নিতে পারল না পারবেই বা কী করে?

-“আমি নতুন করে আপনার প্রেমে পড়ব কী করে ভাইয়া! কথায় আছে দৃষ্টি সীমার বাইরে থেকেও যদি কোন ছেলে একটা মেয়ের কথা ভাবে সেই মেয়ে তা বুঝতে পারে আর আপনাকে এত কাছে রেখে আমি বুঝব না? আপনি আমার জীবনের প্রথম ছেলে যে আমার সবটা কেড়ে নিয়েছিলেন। যার কাছ থেকে নিজেকে আর ফিরিয়ে আনতে পারিনি। যাকে ছোটকালেই জয় করে নিয়েছিলেন সে এখন নতুন করে প্রেমে পড়বে কী করে? আপনি যেমন ছোট থেকেই আমাকে ভালবাসেন,ইচ্ছে করে হোক বা অনিচ্ছায় আপনার ভালবাসার প্রেমে পড়েছিলাম আমিও।যে ভালবাসার বেড়াজাল থেকে আজও বের হতে পারি নি।কিন্তু আপনার ভালবাসা যে বড্ড বেপরোয়া। এমন বেপরোয়া ভালবাসা কে চায়? আমি কি এতই খারাপ আমাকে কী একটু ভালভাবে ভালবাসা যায় না? আপনাকে ভালবাসার কথা বলার সাহস আমার নেই, কোনদিন হবেও না কিন্তু আপনার প্রতি আমার অনুরাগের পরিমান যদি আপনি জানতেন তবে হয়ত ৬ টা বছর এভাবে আমাকে কষ্ট দিতে পারতেন না।এই ছয় বছরের প্রতিটা মূহুর্ত আমি কিভাবে পার করেছি যদি জানতেন…. (মনে মনে)

বসে বসে নিজমনে কথা বলছিল আদিবা। আদি আগেই উঠে গিয়েছিল সে চোখ মুখে পানি দিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা লাগানোর শব্দে ঘোর কাটল তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।

-“আ আ আমি এখন যাই ভাইয়া..

-“কোথায়?

-“কোথায় মানে, নিজের রুমে যাব।

-“তাহলে এসেছিলি কেন..?

-“ম ম ম মানে আসলে আপনার শরীর ঠিক আছে কিনা তাই দেখতে এসেছিলাম।

-“এত দেখি ভুতের মুখে রাম নাম হয়ে গেল। তুই আমার কথা ভাবছিস বিষয়টা অবিশ্বাস্য।

-“এমনভাবে বলছেন যেন আমি কোনদিন আপনার কথা ভাবি নি।

-“ভাবতি নাকি?

-“আপনি এত বেইমান হয়েছেন জানাই ছিল না ছোট বেলায় আপনার জ্বর হলে সারারাত বসে জলপট্টি দিতাম,আপনার সব কাজ করে দিতাম, খায়িয়ে দিতাম সব ভুলে গেছেন?

-“ওরে কি গুনবতী লক্ষী মেয়েটা,এমনভাবে বলছে যেন নিজের ইচ্ছেয় আমার সেবা করত। থাপ্পড়াইতে থাপ্পাড়াইতে রাজি করাতাম ভুলে গেছিস?

-“সে যাইহোক,যেকারনেই হোক সেবা তো করতাম।

-“ইচ্ছে করে কোনদিন করিস নি। মার খাওয়ার ভয়ে করতি তাছাড়া না করে যাবি কোথায়?আমার যখন যা দরকার সেটা কিভাবে আদায় করতে হয় আমি ভাল করেই জানি।

বলতে বলতে আদি এসে বিছানায় এসে গা ছুঁয়াল।আদিবাও সাথে সাথে উঠে উল্টো ঘুরে হাঁটা দিল কিন্তু সফল হতে পারল না আদি তাকে হ্যাঁচকা টানে নিজের কাছে বসিয়ে দিল।

-“কী করছেন ছাড়ুন…

-“ছাড়ার জন্য ধরেছি বলে মনে হচ্ছে?

-“হেয়ালি করবেন না প্লিজ। নিজে উল্টা পাল্টা কাজ কর্ম করবেন তারপর বলবেন আমার চরিত্র খারাপ।

-“যা খারাপ তা ভাল বলতে যাব কেন?

-“ঠিকআছে আমার চরিত্র ভাল না কিন্তু আপনার চরিত্র তো ভাল তাহলে বিয়ের আগে একটা মেয়ের সাথে এমন করেন কী করে?

-“আমি কখন বল্লাম আমার চরিত্র ভাল? আমি ছোট থেকেই তোকে অন্যচোখে দেখি এখন তো আর কথায় নেই । তোর প্রতি আমার গভীর আসক্তি রয়েছে।

-“আপনার কী মুখে কিছুই আটকায় না? লজ্জা বলতে কিছু নেই? নিজেই নিজেকে কী করে এত নিচে নামাচ্ছেন?

-“সত্যি বলতে মুখে আটকানো উচিত না। সত্যি,অপ্রিয় হলেও সত্যি। তোর দিকে তাকালাম এক দৃষ্টিতে আর বল্লাম দেখি বোনের চোখে তাহলে বোন নামক পবিত্র সম্পর্কটাকে অপমান করা হল না?

-“বুঝতেই যখন পারছেন আপনি যে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন সেটা অপবিত্র তাহলে তাকান কেন?

-“অন্ধ হয়ে যেতে বলছিস?

-“একটু ভাল হতে বলছি।

-“ভাল হলে এওয়ার্ড দিবি?

-“আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই হাতটা ছাড়ুন তানাহলে আমি কিন্তু চেঁচাব।

-“গতকাল দাগটা গলায় না করে ঠোঁটে করা উচিত ছিল তাই না?তাহলে আমাকে হুমকি দেওয়ার আগে ঠোঁট দুটি কাঁপত।

-“মানে কী..?

-“গতরাতের কথা মনে করার চেষ্টা কর তাহলেই বুঝতে পারবি।

বলতে বলতে আদিবার হাত আগলা করে দিয়ে মুচকি হাসল আদি। আদি কি বুঝাতে চেয়েছে আদিবা বুঝতে পেরেছে তাই আদির বাঁকা হাসিতে তার গা জ্বলে উঠল আদিবার।

-“আর একবার যদি আমার দিকে খারাপ নজরে তাকান একেবারে চো*খ গে*লে দি*ব বলে দিলাম।

বলেই আদিবা এক ছুটে চলে। আদিবার কান্ডে আদি উচ্চস্বরে হেসে উঠল।



সকালে আদিবা রান্নাবান্নার যোগাড় করে টেবিলে খাবার দিচ্ছিল তখন আদিবার মা সেখানে আসলেন।বেশ ইতস্ততা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি দেখে আদিবা বলল,

-কিছু বলবে…

-“আদিবা তোর সাথে কিছু কথা ছিল..

-“বলো,দরকার ছাড়া আমার পাশে এসে দাঁড়ানোর কথা না সেটা তো আমি আগে থেকেই জানি।

-“তুই সবসময় এভাবে কথা বলিস কেন?

-“গত ছয় বছরে তুমি কখনো আমার সাথে ভাল করে কথা বলেছো বলে আমার মনে পড়ছে না তাই আজ একটু অবাক হয়েছি। আসলে আমি মানুষ তাই গিরগিটির মত রং পাল্টাতে পারিনি।

-“বুঝেছি তুই আমার সাথে কথা বলতে চাস না তাই এমন ত্যাড়া ব্যাকা কথা বলছিস।

বলে রাগে গজগজ করে চলে যেতে চাইলেন শাহানা বেগম পিছন থেকে আদিবা শান্ত কন্ঠে বলল

-“ভাইয়ার ব্যাপারে কিছু বলতে চেয়েছিলে তাই না?

-‘তুই কী করে জানলি?

-“স্বার্থ ছাড়া আমার সাথে কথা বলবে না জানি।আর আমার কাছে স্বার্থরক্ষার মত কিছু নেই তাই কথাটা ভাইয়াকে নিয়েই সিম্পল হিসেব। যাইহোক কি বলতে চেয়েছিলে বলো।

-“তুই তো জানিস তোর চাচা চাচী তোকে পছন্দ করেন না তাই…

-“নিজের মায় পছন্দ করে চাচা চাচী তো পরের বিষয়। এটা বলার মত কোন বিষয় না এটা আমি ছয় বছর আগে থেকেই জানি বনিতা না করে যা বলার সরাসরি বলো-

-“ওরা আদির বিয়ে দিতে চায়।

-“অসুবিধে কোথায় দিক।

-“আদিত্য বড় হয়েছে ঠিকি কিন্তু ওর পাগলামী এখনো যায় নি। তোর সাথে যা করে তা দেখলে কোন মেয়ে বিয়েতে রাজি হবে?

-“উনি যা করেন তাতে আমার কোন হাত আছে? আমি সারাদিন পায়ে ধরে বসে থাকলেও উনি নিজের জায়গা থেকে একচুল নড়বেন না।

-“সমস্যাটা সেখানেই কিন্তু তোর কাকিমনি ভাবছে তুই আদিকে হাত করতে চাইছিস।

-“তো এখন আমার কী করনীয়?

-“তুই মানে..

-“আমতা আমতা করছো কেন? মনে হচ্ছে যেন তুমি আমাকে নিয়ে কত ভাবো আমি কষ্ট পাব জন্যে বলতে পারছ না।

-“আদিবা চল আমরা গ্রামে চলে যাই।আমাদের নিজেদের বাড়িতে। অন্যের সংসারে আগুন লাগিয়ে লাভ কী বল?

আদিবা ঘাড় ঘুরিয়ে শান্ত চোখে মায়ের দিকে একবার দেখল তারপর লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

-” ঠিক আছে এই নিয়ে এত ভাবার কিছু নেই আমি আজকেই চলে যাব তবে তোমার আর সাদিয়ার যাওয়ার দরকার নেই।তোমার চিকিৎসা চলছে সাদিয়ারো ভার্সিটি আছে সমস্যা যেহেতু আমাকে নিয়ে আমি চলে গেলেই সমাধান হয়ে যাবে।

আদিবা আর কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। সবার অবহেলা পেতে পেতে এখন আর কোন কষ্টই তাকে ছুঁতে পারে না শাহানা বেগম অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলেন মেয়ের দিকে তার হাত পাও বাঁধা কিছু করার নেই।আদিবাকে তার চাচী একদম মানতে পারছেন না তাই এটাই ভাল সিধান্ত বলে মনে করেছেন।

সকাল ১০ টা টেবিলে খাবার দেয়া হল আদিবা বাদে সবাই খেতে বসেছে আদিও এসেছে। আদিবা রান্না ঘরে দুপুরের রান্না করছে পাশাপাশি খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। রান্নাঘর খাবার টেবিল পাশা পাশি হওয়ায় সে একবার রান্নাঘরে যাচ্ছে আবার ফিরে এসে সবাইকে খাবার দিচ্ছে দেখছে কার কী লাগবে। আদি টেবিলে বসেছে ঠিকি কিন্তু এখনো খাওয়া শুরু করে নি। সে আদিবার কার্যকলাপ দেখছে। আদিবা এগিয়ে এসে আদির প্লেটে দুটো রুটি আর ভাজি দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইল সাথে সাথে আদি বলে উঠল,

-“এই দাঁড়া…

আদিবা ব্যাস্ত গলায় বলল
-“কিছু লাগবে ভাইয়া? মাংস দিব?

-“নাহ,তুই এখন পর্যন্ত ঠিক কতবার রান্না ঘরে গিয়েছিস আর এসেছিস?

-“ম মানে?

-“আমি টেবিলে এসেছি ৫ মিনিটো হয় নি তার মধ্যে ৬ বার রান্না ঘরে গিয়েছিস আবার এসেছিস এর কারন কী ।

-“ভাইয়া দুপুরের রান্না বসিয়েছি তাই…

-“তাই তোর খাওয়ার দরকার নেই তাই তো..?

-“মানে বুঝলাম না।

-“সবাই খেতে বসেছে তুই বসিস নি কেন?

-“আমি সবাইকে খাইয়ে তারপর খাই।

-“ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম এটা আমাদের দেশের কালচার তাই না? ঠিক আছে যা।তবে মৌমাছির মত ছুটাছুটি করবি না দেখতে বিরক্ত লাগছে। তোর দৌড়াদৌড়ি দেখে নিজেই হাঁফিয়ে উঠেছি।

আদির কথা আদিবা বুঝেনি তাই চুপচাপ রান্না ঘরে চলে গেল। তবে এবার আর ফিরে আসে নি রান্নাঘরেই রয়ে গেল আদিও খাওয়া শুরু করেছে।খেতে খেতে আদি বলল,

-‘মা কি যেন বলবে বলছিলে..

-“না কিছু না বাবা…

-“আমি বাঘ কিংবা ভাল্লুক নই মা,তোমার গর্ভের সন্তান তাই আমাকে ভয় পাওয়াটা হাস্যকর। যা বলার আছে বলে ফেলো

-“নাহ আসলে আদি বলছিলাম কী

-“কি বলছিলে সরাসরি বলো

-“ঘ ঘ ঘটক কয়েকটা ছবি দিয়ে গিয়েছিল।

-“আমার বিয়ের জন্য পাত্রী?

-“হ হ হ্যা মানে আসলে।

-“আমতা আমতা করছো কেন এখানে তো কোন অসুবিধে দেখচ্ছি না। ছবিগুলো কোথায় দেখি।

আদির মা তাড়াতাড়ি অরিনকে বলল ছবিগুলো গিয়ে নিয়ে আসতে। অরিন এক ছুটে গিয়ে ছবি গুলো নিয়ে এসে আদিকে দিল। আদি প্লেটের পাশে সবগুলো ছবি রেখে এক হাতে খাচ্ছে অন্যহাতে উল্টে পাল্টে একটার পর একটা ছবি দেখছে। টেবিলে পিনপতন নীরবতা কেউ খাচ্ছে না সবাই আদির দিকে তাকিয়ে আছে। আদিও খুব মনযোগ দিয়ে ছবি দেখছে। আদি এত সহজে রাজি হবে এটা যেন সবার কাছে অবাক লাগছে।

হটাৎ সকল নীরবতা ভেঙে আদি গলা ছাড়ল।

-“আদিবা এই আদিবা একবার এদিকে আয় তো।

আদিবাও ছুটতে ছুটতে আসল।

-“কিছু লাগবে ভাইয়া?

-“হুম ওদিক টায় গিয়ে দাঁড়াতো…

-“মানে..?

আদি চোখ তুলে তাকাল আদির চেহারা দেখে আদিবা রীতিমতো ভয় পেল। আদির নাক মুখ লাল হয়ে আছে কপালের মাঝ বরাবর ফুলে উঠা রগ প্রমাণ করছে সে রেগে আছে। আদি যখন প্রচন্ড রেগে যায় তার চেহারা বদলে যায় আদিবা আদির এই চেহারার সাথে পরিচিত সে ভাল করেই জানে এখন একটু এদিক থেকে ওদিক হলে ভয়াবহ কান্ড ঘটে যেতে পারে।যদিও সে আদির রাগের কারন জানে না তবুও কথা না বাড়িয়ে আদির দেখানো জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল। সাথে সাথে আদি বলল

-“পিছনে ঘোর তো একবার..

আদিবা বোকা বোকা মুখ করে সবার দিকে তাকাল আর দেখল টেবিলে বসা সবারেই একই দশা সবাই অবাকের সাথে ভয় মিশানো চোখে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। আদিবা ঘুরছে না দেখে আদি ধমকে বলল,

-“একটা কথা কতবার বলতে হবে তোকে? কী বল্লাম কথা কানে যায় নি?মার না খেলে তোর শান্তি হয় না তাই না?

আদির ধমকে আদিবা তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াল
আদি এবার ঠান্ডা গলায় বলল,

-“অরিন গিয়ে আদিবার চুলটা খোলে দে তো..

অরিন ভ্যাবাচেকা মুখ করে তাকাল আদির দিকে আদিবাও এদিকে ফিরে তাকাল সাথে সাথে আদি চেঁচিয়ে উঠল

-“তোকে ঘুরতে বলেছি আমি?

আদির ধমকে আদিবা ভয় পেল সে ঘুরে দাঁড়াল কিন্তু তার মাথায় কিছু ঢুকছে না আদি কী করতে চাইছে?

-“অরিন তোকেও কী এক কথা বার বার বলতে হয়?

অরিন তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে আদিবার চুল খোলে দিল। মুহুর্তেই ঘন কালো চুল তরতর করব কোমড় ছাড়িয়ে পড়ল।আদি একটু দেখে বলল

-“আরও লম্বা হওয়া উচিত ছিল। এটলিস্ট হাঁটু সমান। যাইহোক তুই আমাদের বাসার রান্না করিস মানে সব ধরনের রান্নাই পারিস তাই না?

আদিবা,আদির ব্যবহারে অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় পৌছেছে ইতিমধ্যে বাসার সবার অবস্থাও একই। আদি খাবার ছেড়ে উঠে ঘটকের দেওয়া ছবিগুলো হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

-“আদিবা এককাপ ব্লেককফি নিয়ে আয়তো মাথা ধরেছে খুব…

বলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল। আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সাথে আদির মা সহ অন্যরাও। ছেলে কী করল আর কী বুঝাতে চাইল কারোর মাথাতেই পুরোপুরি ঢুকে নি। সে কী আদিবাকে হবু বউ হিসেবে ইংগিত করল? আর সবাইকে বউ দেখিয়ে গেল যদি তাই হবে তাহলে ঘটকের দেওয়া অন্য মেয়েদের ছবিগুলো সাথে নিয়ে গেল কেন?



চলবে..!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here