#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_১৫
#Saji_Afroz
.
.
.
মায়েদের হাসি মুখটা দেখেই যেনো আরাফের পেট, মন সব ভরে গেলো।
সে সোজা এগিয়ে গেলো নিজের রুমের দিকে।
এদিকে আরাফের পছন্দের ভুনাখিচুড়ি রান্না হয়েছে।
অন্যান্য কাজে সায়নীরা সাহায্য করলেও রান্না সম্পূর্ণ মেহেনুবায় করেছে।
মুনিরা একটা চামচ নিয়ে এক চামচ খিচুড়ি খেলো।
সায়নীর দিকে তাকিয়ে সে বললো-
আমাদের মেহেনুবা আমেরিকায় থেকেও এতো ভালো বাঙালী রান্না পারে!
.
মুচকি হেসে সায়নী বললো-
মিশিকার মেয়ে বলে কথা। মিশিকা ডাক্তার হলে কি হবে! সেও সব দিকে পাক্কা।
-হুম মায়ের মতো হয়েছে সে।
.
মেহেনুবার দিকে তাকিয়ে মুনিরা বললো-
এবার এক প্লেট খিচুড়ি নিয়ে আরাফের কাছে যাবে।
-আমি?
-হু তুমি। তার কাছে যাও। আমাদের যেভাবে হাসিয়েছো সেভাবে হাসাবে।
.
মেহেনুবা বুঝতে পারলো মুনিরা কেনো এসব বলছে। তারা গেলেই যে আরাফ হীনমন্যতায় ভুগে। ভাবে তার জন্যই মায়েদের কথা শুনতে হয়েছে। আজ আবার তারা উপমার বাসায় গিয়েছিলো। হয়তো এসব নিয়ে জিজ্ঞাসা করবে বলেই যেতে চাইছেন না তারা।
তাদের উদ্দেশ্যে মেহেনুবা বললো-
ঠিক আছে৷ আমি নিয়ে যাচ্ছি।
.
.
.
মেহেনুবা রুমে আসতেই আরাফ বললো-
আম্মুদের কি বলছিলে যে তারা হাসিতে মেতে উঠেছে?
-তুমি দেখেছো! যাক ওসব মেয়েদের কথা। তোমাকে বলা যাবেনা।
-আচ্ছা!
-হু। দেখি খেয়ে নাও।
.
প্লেটে ভুনাখিচুড়ি দেখেই মেহেনুবার হাত থেকে আরাফ তা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
কয়েকচামচ খাবার পর আরাফ বললো-
এটা বড় বা ছোট আম্মুর হাতের রান্নার মতো লাগছেনা।
.
মুখটা ফ্যাকাসে করে মেহেনুবা জিজ্ঞাসা করলো-
কেনো? ভালো হয়নি?
-অনেক ভালো হয়েছে। আমি জাস্ট বললাম স্বাদ টা ভিন্ন। মজার মাঝেও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ আছেনা?
.
মুখে হাসি ফুটিয়ে মেহেনুবা বললো-
তার মানে ভালো হয়েছে!
আমি করেছি।
আন্টিরাও সাহায্য করেছে তবে। উনাদের জন্যই ভালো হয়েছে।
.
আরাফ মৃদু হেসে বললো-
আসলেই ভালো হয়েছে।
.
.
.
আরাফ তার ফোন নাম্বার ব্লক করেছে!
এই ভালোবাসা আরাফের! বড়ই তো মুখে ভালোবাসি ভালোবাসি করতো এই ছেলে, আজ কি হলো!
আপনমনে এসব ভেবে নিজের রুমে হেটে চলেছে উপমা।
দরজার আড়াল থেকে মেয়েকে একবার দেখে নিয়ে, নিজের রুমে এসে স্বামীর উদ্দেশ্যে রুপা আক্তার বললেন-
উপমার মাথা থেকে ওই ফালতু পরিবারের ছেলের নামটা বোধহয় নেমেছে।
.
ফখরুল মোবারক ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে বললেন-
আসলেই।
-সকালের কান্ড তো তুমি দেখলেনা। কি অপমান টাই না করলো ওই ছেলের মায়েদের উপমা।
-দেখেছি আমি আড়াল থেকে। উপমা সবটা সামলে নিয়েছে বলেই সামনে যাইনি।
-এই সুযোগে মেয়েটার জন্য একটা ভালো ছেলে দেখো।
-হু।
.
.
.
ড্রয়িং রুমে বসে সকলে মেহেনুবার হাতে তৈরী খিচুড়ি খেয়েছে।
আফরান, সায়নী ও মুনিরা তার প্রশংসায় মেতে উঠেছে।
মিশিকা তাদের বললো-
শ্বশুর বাড়ির সকলেই মেয়েটাকে এভাবে ভালোবাসলেই হয়।
.
মিশিকার কথা শুনে সায়নী বললো-
আতিকের মায়ের সাথে একই সাথে আমি শিক্ষকতা করেছি এতো বছর। তাকে আমি চিনি।।মেহেনুবা কে ভালো রাখবে অনেক।
.
সায়নীর দিকে তাকিয়ে পাবেল জিজ্ঞাসা করলো-
আর আতিক?
-আতিক যে পেশায় ডাক্তার সেটা তো সবাই জানি। তার সাথে আমার কয়েকবার দেখাও হয়েছে। ভদ্র, সুন্দর ছেলেটা। সেও মেহেনুবাকে ভালো রাখবে, আমার বিশ্বাস।
-তাহলে কালই তাদের আসতে বলা হোক। আর দেরী কেনো! আতিকসহ তার পরিবারের সকলের সাথে দেখা করে বিয়ের ডেইট ফাইনাল করি?
.
তাসু তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললো-
আগে পাত্র তো দেখো।
-মেহেনুবা যেহেতু ভালো লেগেছে বলেছে সেহেতু কথা আগানো ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। সায়নী? তারা কাল আসতে চায় কিনা ওটা জানলে ভালো হয়।
.
পাবেলের কথা শুনে সায়নী ডায়েল করলো আতিকের মায়ের নাম্বারে।
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ভালো আছেন?
-জ্বী, আপনি?
-ভালো আছি।
-আসলে আমরা চাচ্ছিলাম কাল আপনারা যদি বাসায় আসতেন তাহলে বিয়ের কথা নিয়ে এগুতাম।
-আমার কোনো অসুবিধে নেই। মেহেনুবাকে আতিকের অনেক পছন্দ হয়েছে।
-আলহামদুলিল্লাহ।
-কোথায় আসবো বলেন?
-আমার বাসায়।
-ঠিক আছে। সন্ধ্যে বেলায় আসবো কাল।
.
.
ফোন রাখার পর সায়নীর উদ্দেশ্যে মিশিকা বললো-
এখানে কেনো ঝামেলা করছিস! আমাদের বাসায় করতে পারতাম।
-আরে কিসের ঝামেলা! তোরা দেশে এসেছিস বেড়াবি শুধু।
-হুম বাবার বাড়ির সকলের সাথেও একবার দেখা হয়েছে এখনো। যদিও মা বাবা বেঁচে নেই। তবে ভাই তো আছে। কাল ভাইয়া ভাবীকেও ডাকতে হবে। তাই বলছিলাম…
-কিছু বলতে হবেনা। সব এখানে কর।
.
.
সকলের কথা শুনে তাসু এগিয়ে গেলো উপরের দিকে।
.
উপরে উঠতেই দেখা পেলো আরাফের।
সাদা রঙের একটা টি-শার্ট পরেছে সে।
তাসু দেখেই বললো-
হায়….! এখানে থাকলে ক্রাশ খেতে খেতে মরেই যাবো।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে আরাফ বললো-
সরি?
-কিছুনা।
.
বলেই তাসু এগিয়ে গেলো মেহেনুবার কাছে।
.
.
.
তাসুর কাছে সবটা শুনে মেহেনুবা বললো-
বড়রা যেটা ভালো বুঝেছে করছেন।
-তোর কিছু বলার নেই?
-না তাসু। কি বলার থাকবে বল! আতিক ডাক্তার, ভালো ছেলে, দেখতেও সুন্দর। কি বলার থাকবে!
-পারফেক্ট হলেই যে সবার পছন্দ হতে হবে তো কথা নেই তাইনা?
-এসব কেনো বলছিস তুই?
-কারণ আমার মনে হচ্ছে তুই খুশি না।
.
মেহেনুবা কে চুপচাপ দেখে তাসু বললো-
এখানে থাকলে ক্রাশ খেতে খেতে মরেই যাবো বোধহয় আমি।
-কেনো?
-আরাফ কে দেখে দেখে। সামনে পড়লেই ক্রাশ খাই।
-তুই না বলেছিলি ওর জন্য তোর কোনো ফিলিংস নেই?
-নেই তো। ওহ আপু! এটা ক্রাশ ক্রাশ, নট লাভ! কয়বার বলবো!
.
মেহেনুবা বিড়বিড় করে বললো-
বুঝিনা বাপু এতো কিছু।
.
.
.
সায়নী ও মুনিরা আরাফের রুমে আসতেই আরাফ তাদের উদ্দেশ্যে হাসিভরা মুখ নিয়ে বললো-
খিচুড়ি টা সেই হয়েছে। মেহেনুবা দেখছি ভালোই রান্না পারে।
.
আরাফকে হাসিমুখে দেখে সায়নী ও মুনিরার ও যেনো শান্তি লাগছে মনে। তারা আর উপমার বিষয়ে কথা তুললো না। ছেলের সাথে গল্প করতে লাগলো অন্য বিষয় নিয়ে।
.
.
.
খান বাড়ির সদস্যদের যেখানে হতাশায় থাকার কথা, মেহেনুবাদের আগমনে পুরো বাড়ি গমগম করছে।
আরাফও হাসিখুশি রয়েছে। কাল আতিকের পরিবার আসবে বলে নানাকাজে সায়নীদের সাহায্য করছে সে।
মানুষের ভীড়ে ও কাজের ফাঁকে সে নিজের কষ্টটা আড়াল করতে চাইছে।
এদিকে সায়নী ও মুনিরা বিশাল আয়োজন করছে।
এই আয়োজনের মাঝে নিজেদেরও মনটা হালকা হবে।
সব কিছু দেখে মেহেনুবার মনে হচ্ছে কাল তার বিয়ের তারিখ ঠিক হবেনা। বরং কাল তার বিয়েই।
সকলেই মহাখুশি।
তবে তার কেনো এমন অস্থির লাগছে!
আতিক তো সবদিক থেকেই পারফেক্ট। তারপরেও তার মনে কিসের এতো অস্থিরতা কাজ করছে!
ভাগ্য বিশ্বাস করে কি ভুল করতে যাচ্ছে সে!
.
.
.
আরেকটা রাত কেটে গেলো….
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে ড্রয়িং রুমে বসলো আফরান।
টেবিলের উপর থেকে পত্রিকাটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে সে।
হঠাৎ চোখ পড়লো একটা শিরোনামে।
শিরোনামের নিচে আতিকের ছবিটি দেখে চিনতে কষ্ট হলোনা আফরানের। আফরান তাকে আগেও দেখেছে।
তবে এখন এটা কি দেখছে সে! এটা তো হবার ছিলোনা!
সায়নীর উদ্দেশ্যে আফরান চেঁচিয়ে বলে উঠলো-
সায়নী এদিকে এসো।
.
(চলবে)