#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ৭
“হাহাহা, তুমি অনেক ফানি তা কি তুমি জানো?”
আচমকা এমন হাসিতে ভাব নিয়ে থাকা ইনায়া কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো, এই লোক কি কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে যাওয়াতে পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? তবে হাসলে কিছু কিছু মানুষকে অদ্ভুতভাবে খুব সুন্দর লাগে, ঠোটের কোনে কিছুটা ডেবে যাওয়া যাকে বলে মাইনর টোল কার সাথে যেন মিলে যায়, ইনায়া ভ্রু কুচকে সেই মিল খুজছে, আর তখনি আরেকটা পেপার রোয়েন কোর্টের ভেতর থেকে বের করলো আর সামনের টেবিলে রাখলো, ইনায়ার ছিঁড়ে ফেলা পেপার আর এটা প্রায় একি, নাহ প্রায় নয় এটা আসলে ওই পেপারই! ইনায়া চোখ বড় করে তাকালো রোয়েনের দিকে
“চাইলে এটাও ছিঁড়তে পারো, আমার কাছে এই রকম অনেক কপি আছে, গেস হোয়াট? অরিজিনাল কপি আমার কাবার্ডে সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। ছিড় তোমার যতগুলো মনে চায় বসে বসে আরাম করে ছিঁড় ” পায়ের উপর পা তুলে আয়েশি ভাবে বসে বললো,,
ইনায়ার রাগে গা ফেটে যাচ্ছে,এমন ছেচড়া ছেলে জিন্দেগীতে দেখেনি ও। একটা মেয়ের সাথে কি করে কথা বলতে হয় তা জানা নেই তারউপর সামান্য টাকার জন্য ছেচড়ামি করছে।এই ব্যাটা জীবনে বউ পাবে না আর পেলেও দেখা যাবে রাগ উঠলে বউকে বলবে “শপিং যে করছো এখন আমার টাকা ফেরত দেও” মানে নুন্যতম ভদ্রতা নেই। ওর মতো কিউট একটা মেয়ের কাছে টাকা চাইতে একটুও বাজছে না? মন চাচ্ছে মাথার উপর তুলে আছাড় মারি নাহয় ফুচকার মত কটকট করে ভেঙে ফেলি। নো ওন্ডার কোন মেয়ে একে বিয়ে করবে না।
“কি এমন রাগি চোখে তাকাচ্ছ কেন? চোখ দিয়েই মার্ডার করবে?”
“চোখ দিয়ে মার্ডার করা যায়?” রেগে কটমট করে বললো ইনায়া,
“বলা তো যায় না, এই ডাগর ডাগর চোখগুলো আরো বড় করে তাকালে হার্ট এটাকও করতে পারি। এমনিতেই বুকে চিনচিন ব্যথা করছে মনে হচ্ছে মিনি হার্ট এটাক হয়ে গেছে”
বুকের পা পাশে হাত রেখে দুঃখি ভাব নিয়ে বললো রোয়েন, ইনায়া যেনো থ বনে গেলো, মানে এই গম্ভীর চেহারার লোকের মুখে এই রকম উদ্ভট কথা মানায়? ওয়েট বাই এনি চান্স একি আমার সাথে ফ্লার্ট করছে?
ইনায়া চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে আছে, কথায় আছে না “ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান বোনে” তেমনি ছেলেরা মুমুর্ষ্য অবস্থায়ও ফ্লার্ট করা ছাড়েনা, কি করে যে পারে এরা!
“আচ্ছা আপনার কি কোন কাজ নেই?”
“এখন এটার থেকে আর বেশি ইম্পর্টেন্ট খুজে পাচ্ছিনা, সময় যেহেতু নষ্ট হয়েছে তাই তোমার উপর আরেকটু সময় নষ্ট করতে আমি মাইন্ড করবো না ”
“এই আপনাকে আমার ঠিকানা কে দিয়েছে বলেন তো?”
“শুধু ঠিকানা না আমি তোমার সেলফোন নাম্বারও জানি, তাছাড়া এমপ্লয়ির খোঁজখবর রাখা বসের কর্তব্য আমি আবার একটু বেশিই কাইন্ড বস আরকি”
রোয়েন মুচকি হাসি দিয়ে বললো, লাইফের প্রথম কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে ও এভাবে কথা বলছে যাকে বলে রিতিমতো ফ্লার্ট করা কিন্তু ওর একটুও বিরক্ত লাগছে না বরং ইনায়ার রাগি চেহারা দেখে ভালোই লাগছে।
“আপনি একটা অসহ্য লোক তা কি আপনি জানেন?”
“হুম জানি, এই যে মাত্র বললে।”
ইনায়া বুঝতে পারলো এর সাথে তর্ক করে বেশি লাভ করতে পারবে না তাই সোজা পয়েন্টে চলে আসলো
“কি করতে হবে আমাকে?”
“আপাদত বেশি কিছু না খুব ক্ষুদা লাগছে কিছু রান্না করে খাওয়াও”
“আপনি এতো দূর থেকে খেতে আসছেন? ”
“নাহ, তবে তোমার প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ক্ষুদা লেগে গেছে। যাও কিছু বানিয়ে নিয়ে আসো ”
“পারবো না আমি, নিজে বানান গিয়ে ”
রোয়েন কন্ট্রাক্ট হাতে নিতেই ইনায়া চিল্লিয়ে বলে উঠলো “যাচ্ছি যাচ্ছি, ধ্যাত ভাল্লাগেনা অসহ্যকর লোক একটা ”
ইনায়া সেই কখন থেকে রান্নাঘরের কাবার্ড থেকে কৌটা নামানোর ট্রাই করছে কিন্তু পারছে না। উফফ এনা এটা ওইখানে রাখলো কেন?
তখনি একজোড়া হাত ওর গা ঘেষে দাঁড়াল তারপর ওর কোমর চেপে ধরে ওকে কিছুটা শুন্যে উঠালো যাতে ও কেপে উঠলো আর কাপা হাতে কৌটাটা ধরে নিজের হাতে নিলো। তারপরই ওকে নিচে নামিয়ে দিলো আর মুখটা ওর কানের কাছে আনলো যাতে ইনায়া কিছুটা কেপে উঠলো,কানের কাছে অস্ফুট স্বরে বললো “শর্টি ”
এই সামান্য কথাটি ইনায়ার অনুভুতির বারোটা বাজানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো
“আপনি কি এখানে আমাকে অপমান করতে এসেছেন? ”
” নাহ বলতে এসেছি খাওয়ার পর তুমি রেডি হবে তারপর আমার সাথে যাবে”কিছুটা হেসে হেসেই বললো,,
“ঠেকা পড়ছে আমার ” কথাটা মনে মনে বললেও মুখে কিছু বললো না শুধু মাথা নাড়ালো, কারণ লন্ডনের আইন খুব স্ট্রিক্ট তাই এই কন্ট্রাক্ট ওর বারোটা বাজানোর জন্য যথেষ্ট, তাছাড়া পাপাকে কি বলবে ও তারচেয়ে ভালো নিজে নিজে এটার সমাধান করা,না জানি এই অসহ্যকর লোককে কতদিন সহ্য করতে হবে!
🌸🌸🌸
তোমার ইচ্ছে গুলো , ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পারো ,
আমার ভালো লাগা , ভালোবাসা ,
তোমায় দেবো আরো ।
তুমি হাতটা শুধু ধরো , আমি হবো না আর কারো ,
তুমি হাতটা শুধু ধরো , আমি হবো না আর কারো ।
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়সড় ।
“এই আর কার হবে হুম?তুমি আমারি আছো আর আমারি থাকবে ওকে?”
বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছিল আর গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছিলো সামু তখনি পেছন থেকে ইনান জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বললো, এই লোকটির বয়স এতো হয়েছে কিন্তু সেই আগের মতোই রোমান্টিক রয়ে গিয়েছে। তার জন্য শান্তিতে গান গাওয়াও এখন দুষ্কর, সামু কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো
“ছাড়োতো গান গাইতে দাও আমায়, আর বুড়ো হয়েছো এখন রোমান্টিকতা একটু কমাও। দুদিন পর মেয়ে বিয়ে দিবে ”
“মেয়ে দিবো বলে কি আমি চেঞ্জ হয়ে যাবো?ভাগ্য করে এমন জামাই পেয়েছো বুঝেছ”
“হ্যা হ্যা সেই তোমার বাবা মেয়েতো পেয়েছো আমাকেই জ্বালানোর জন্য, কতো করে বলেছি আরেকটা বেবি নেই তাহলে অন্তত ছেলেটি আমার মতো হতো ”
“তুমি জানো ইনায়া হওয়ার সময় আমি কতো ভয় পেয়েছি? যদি কিছু হতো তোমার? সেম রিস্ক আমি দ্বিতীয়বার কোন ভাবেই নিতে চাইনা। তোমাকে সবসময় আমার এই হৃদ মাঝারে রাখবো সবসময় বুঝেছো?”
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো ইনান, এই মানুষটি সবসময় এইরকম, সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একটুও বদলায় নি বরং দিনদিন ভালোবাসা আরো বাড়ছে। একটা মানুষ ঠিক কতোটা ভালোবাসলে তার ওয়াইফের ডেলিভারির সময় টেনশনে অজ্ঞান হয়ে যায় তাকে দেখে বুঝেছিলাম। আর এই মানুষটাকেই ও অনেক ভালোবাসে, অনেক বেশি…
#চলবে
(নিন সামু আর ইনানকে নিয়ে এসেছি নাও হ্যাপি?)