বৈবাহিক চুক্তি পর্ব -৪৩+৪৪ ও শেষ

পর্ব ৪৩+৪৪
#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ৪৩

“তোর জানতে ইচ্ছে করেনা আমি এমনটা কেনো করেছি?”

কথাটা বলতে বলতেই এরেন হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লো,চোখ দিয়ে দুফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। এরেনের এমন কাজে সায়ান-রুশি দুজনেই হচকিয়ে উঠলো। ওদের কাছে এরেনের ব্যাবহার মৌসুমি আবহাওয়ার মতো, কখনো হাস্যজ্জল রৌদ্রমাখা সকাল তো কখনো মেঘে ঢাকা সন্ধ্যা। কিছুটা বর্ষার দিনের মতো এই ভালো তো এই বৃষ্টি যার আভাস পুর্বে পাওয়া দুষ্কর। এই কিছুক্ষণ পুর্বেও এই দুটি চোখে ক্রোধ আর ঘৃণায় পরিপুর্ণ ছিলো কিন্তু এখন এই দৃষ্টিতে কিছু হারানোর খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে!

এরেন গভীর ভাবে কিছু একটা দেখছে যেনো কতোকালের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। সায়ান দৃষ্টি অনুসরণ করে পাশে তাকাতেই দেখলো পুরো ঘর জুড়ে পেইন্টিং আর ছবি তাও একই ব্যাক্তির। ঠিক ব্যাক্তি নয় একটা মেয়ের, যার বয়স বড়োজোর একুশ-বাইশ হবে তবে চেহারা দেখে পরিপুর্ণ একজন নারী মনে হয়।গোলগাল চেহারা, বড়বড় চোখ আর খাড়া নাক সবমিলিয়ে একজন শ্বেতাঙ্গ মেয়ে। মেয়েটিকে খুব পরিচিত মনে হলো ওর কিন্তু মনে করতে পারছেনা, খুব চেনা চেনা লাগছে। কে এই মেয়ে!সায়ান পুরো ঘর জুড়ে চোখ বুলাতে শুরু করলো হয়তো কোন ক্লু পাওয়া যেতে পারে আর ঠিক পেয়েও গেলো। দেয়ালে হার্টশেপের মাঝে খুব সুন্দর করে লিখা ‘জেনিফার’। জেনিফার!! সায়ান মাথা চেপে ধরলো আর বিড়বিড় করতে লাগলো জেনিফার? জেনিফার? আর ফাইনালি ও চোখ খুললো আর এরেনের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে হাল্কা শব্দ করে বললো

“জেনিফার ডিউক! জেনি দ্য ডিপার্টমেন্ট বিউটি?”

“ওহ চিনতে পারলি তাহলে?”

অবশ্যই চিনতে পেরেছে সায়ান, ওই মেয়েকে কি করে ভুলতে পারে?পুরো ভার্সিটি লাইফের প্রায় মেক্সিমাম সময় মেয়েটা সায়ানের পেছনে ঘুরে বেড়িয়েছে আর ওকে পাওয়ার জন্য এমন কিছু নেই যা করেনি কিন্তু সায়ান বরাবরি সতর্ক ছিলো তাই সফল হয়নি। মেয়েটির অগণিত বয়ফ্রেন্ড ছিলো যারা একমাসও টিকেছে কিনা সন্দেহ। মেয়েটি দেখতে অসম্ভব সুন্দরি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা তবে ওর চরিত্র ভালো নয় আর সায়ান যেহেতু ভার্সিটিতে ফেমাস ছিলো তাই ওকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বানাতে চেয়েছিলো।কথাটা ভাবতেই সায়ানের চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ পেলো। এই ধরনের মেয়েকে ও কখনোই সহ্য করতে পারেনা কিন্তু এরেন!শেষমেশ এমন একজনকে ভালো বাসলো?
এরেনের গলার স্বরে বাস্তবে ফিরে আসলো সায়ান

“আমি ওকে খুব পছন্দ করতাম কিন্তু ও তোকে পছন্দ করতো। আমি চেয়েছি ও ভালো থাকুক তাই মুখফুটে নিজের পছন্দের কথা বলিনি। ও তোকে প্রপোজ করলো আর তুই রিজেক্ট করে দিলি। আমি ভাবলাম এবার হয়তো আমার চান্স আছে তাই ওকে নিজের ভালোবাসার কথা জানালাম কিন্তু তখন ও আমাকে কি বলেছে জানিস?যে তুই ওর সাথে যা করেছিস তারপর ও কোথাও মুখ দেখানোর পরিস্থিতে নেই, এখন যদি তুই ওকে এক্সেপ্ট না করিস তাহলে ওর কাছে মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় নেই। সেদিন খুব রাগ উঠেছিলো তোর উপর কিন্তু বন্ধু তাই কিছু বলতে পারিনি।কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এসেছি আর ভেবেছি নিজের ফেমিলি ওদের ফেমিলিতে পাঠাবো কিন্তু পরেরদিন থেকে ও আর ভার্সিটি আসলো না। তিনদিন পর খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ও সত্যিই সুইসাইড করেছে আর ওর ফেমিলি এখান থেকে চলে গেছে।আর আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি!”

এরেন শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছবি গুলোর দিকে, কিছুটা ক্রোধ নিয়ে বললো

“ভেবেছিলাম তোকে মেরে ফেলি কিন্তু তুই ততোদিনে মাফিয়া হয়ে গিয়েছিস তাই তোকে মারা এতো সহজ হবে না। তাই প্লেন করে ইনানকে তোর পেছনে লেলিয়ে দিলাম। যেদিন জানতে পেরেছি তুই তোর বউকে হারিয়ে ফেলেছিস সেদিন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম মনে হচ্ছিলো আমি যে কষ্ট পেয়েছি তা তুইও পাবি কিন্তু তুই ওকে খুজে পেয়ে গেলি। আমার রাগ চেপে গেলো, চেয়েছি তোর বউকে মেরে ফেলতে কিন্তু প্লেন চেঞ্জ করে সেটা তোর ছেলেতে গেলো কিন্তু তোর লাক এতো ভালো যে সবকিছু বারবার ঠিক হয়ে যায়।তাই এবার ভেবেছি তোকে আর তোর বউকে একসাথে উপরে পাঠাবো যাতে আমার সকল প্রতিশোধ পুর্ণ হবে”

সায়ান যেনো খুবই আশাহত হলো, ও জানে এরেন যা ভাবছে তা সম্পুর্ণ ভুল।তাই এরেনকে জেনির কেরেক্টার সম্পর্কে বলার সিদ্ধান্ত নিলো।

“এরেন আমি জানিনা কে তোকে কি বলছে কিন্তু তুই যা জানিস তা সম্পুর্ণ ভুল। আমি যখন জেনিকে রিজেক্ট করে দেই তখন জেনি অলরেডি প্রেগন্যান্ট ছিলো। ওর বয়ফ্রেন্ড এই বাচ্চাকে মেনে নিচ্ছিলো না তাই ও সুইসাইড করতে যায় কিন্তু বেঁচে যায়।জেনির বাবা এই কথা লুকাতে জেনিকে নিয়ে লন্ডনে চলে যায় আর সেখানে জেনির একটি মেয়ে হয় নাম ‘এনাবেল ডিউক’।কিন্তু ওকে জন্ম দিতে গিয়ে জেনি মারা যায়। তুই মেয়েটিকে দেখেছিস হয়তো, ইনায়ার ফ্রেন্ড হয়।এখন হয়তো ভাবছিস আমি কি করে জানি। কয়েক বছর আগে যখন তারা ক্যালিফোর্নিয়ায় শিফট হয় তখন ইনায়ার সাথে এনার পরিচয় হয় আর আমার সাথে জেনির বাবার দেখা হয়। তখন উনিই সব খুলে বলেন। জেনির সাথে যা হয়েছে তার জন্য ও নিজে দায়ি আমি না”

সায়ানের কথা শুনে এরেন কেমন সাইকোদের মত আচরণ করতে লাগলো,কিছুটা রাগ নিয়ে বললো

“কিন্তু ও তোকে ভালোবাসতো আর আমি তাই ওকে পাইনি। এর শাস্তিতো তোকে পেতে হবে তাইনা?আমি শান্তিতে থাকতে পারিনি তাই তুইও থাকতে পারবি না”

বলেই একটা বাঁকা হাসি দিলো কিন্তু কিছু করার আগেই ওর ঘাড়ে এসে একটা গান ঠেকলো ঠিক গলায় থাকা ট্যাটুর অংশে।

হ্যা রুহান ঠিক এই জিনিসটাই লক্ষ্য করেছিলো নেকে থাকা ট্যাটু যেটা শুধু মাত্র “ইয়াকুযা” কিংদের সিম্বল, রুহান এতোকাল ধরে যাকে খুজছিলো সে আর কেউ নয় বরং এরেন লিউস!এজন্যই রুহানের সকল প্লেন ফ্লপ হচ্ছিলো কারণ এতোকাল তার বাড়ির পাশেই এরেনের বাস ছিলো তাই রুহানের সকল খবর পাওয়া জাস্ট কয়েক সেকেন্ডের কাজ ছিলো ওর কাছে। রুহানকে দেখে সায়ান আর রুশি চমকে গেলো কিন্তু এরেন বাঁকা হাসলো

“আরে রোয়েন বাবা,আসতে এতো দেরি করলে?আমিতো ভেবেছিলাম তুমি আসবেই না, তা এতোক্ষনে নিশ্চই জেনে গেছো আমি কে?তাই এসব করে কোন লাভ হবে না”

“তোকে তো আমার আগে থেকেই সুবিধার মনে হতো না আর এখন তুইতো ইয়াকুযা কিং। এতোসহজে কি করে ছেড়ে দেই?পুলিশকে তোর সব কীর্তি জানাতে হবে না!”

এরেন এবার হেসে উঠলো যাকে বলে ঘরকাঁপানো হাসি, যাতে রুহান কিছুটা চমকে গেলো।এরেন হাসি থামিয়ে বললো

“আমাকে তুই জেলে পাঠাবি!তার আগে নিজেকে তো বাঁচা!কিছু বুঝছিস নাতো?তুই যে মাফিয়া তা আমি অলরেডি পুলিশকে বলে দিয়েছি তাই আগে নিজেকে বাঁচা। আমি মরে গেলেও আমার জন্য কাঁদার কেউ নেই কিন্তু তুই মরে গেলে তোর পরিবার বড্ড কষ্ট পাবে”

বলেই সেই বিদঘুটে হাসি হাসতে শুরু করলো, এটা নিশ্চিত যে এই মুহুর্তে এরেনকে সাইকো থেকে কম লাগছে না।

রুহান কিঞ্চিৎ ভাবলো এই ব্যাপারে, যদিও ও কোন অন্যায় কাজ করেনি কিন্তু ও আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে তাছাড়া জেইন শেখকে মারার জন্য!
রুহানের ভাবনার মাঝেই পুরো বাড়িতে হনহন করে পুলিশ ঢুকে পড়লো আর রুহানকে গান হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর হাত থেকে গান নিয়ে নিলো আর হ্যান্ডকার্ফ নিয়ে ওর দিতে এগিয়ে ওর হাতে পরিয়ে দিলো তারপর ওকে নিয়ে যেতে লাগলো।

সায়ান মুহুর্তেই থমকে গেলো, রুশি পুলিশকে বাঁধা দিতে গেলে সায়ান ওকে নিজের পাশে দাড় করায় কারণ পুলিশের সাথে কিছু করা সম্ভব নয়।কি থেকে কি হয়ে গেলো তাই ভেবে পাচ্ছেনা সায়ান-রুশি!

#পর্বঃ৪৪(শেষ)

সময় চিরবহমান!দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর গড়ায়। সময়ের সাথে সাথে মানুষ তাল মিলিয়ে চলে, কেউ পুরাতনকে ভেবে দিন পার করে তো নতুনকে বরণ করে নেয়।মানুষ খুবই আবেগি প্রানী, তারা নিজেদের দুঃখী ভাবতে বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু দিনশেষে অতীতের পাতাগুলো নেড়ে দেখলে বুঝতে পারে সে সুখি বড্ড সুখি।ইনায়া জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কেটে যাওয়া সময়গুলোর স্মৃতিচারণ করেছিলো। দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর কেটে গেলো,ভাবতেই পারেনি এতোদ্রুত সবটা সময় কেটে যাবে। সবকিছু এখনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ও এখন একজন ডাক্তার, ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি হসপিটালের প্রফেসর ও। ব্যাক্তিগত জীবন আর চাকরি জীবন দুটোই খুব ভালো যাচ্ছে,খুব ভালো!

বাইরে আজোও খুব বৃষ্টি হচ্ছে, ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে লাফিয়ে ভিজতে কিন্তু ও এখন আর সেই ছোট্ট ইনু নেই এখন সে মিসেস ইনায়া খান,খান বাড়ির বউ। পরিবারের সবটা এখন ওকেই সামলাতে হয়। জানালার পাশের দাঁড়িয়ে থাকাতে বৃষ্টির ফোটা ওর মুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে কিন্তু ওর সেখান থেকে সরতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বরং দুহাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করেছিলো কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারলো কেউ একজন তা খুব জোরে বন্ধ করে দিলো। ইনায়া ভ্রু কুচকে আলতো করে করে চোখ খুললো তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না। কারো হাতের স্পর্শ নিজের কোমরের পেতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো,কেউ ওকে পেছন থেকে খুব শক্ত করর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়া নিজের সমস্ত ভার সেই মানুষটির উপর ছেড়ে। কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর কানে কারো গলার আওয়াজ ভেসে উঠলো

“এই ডাক্তারনি!এই অবেলায় বৃষ্টি বিলাশ করছো কেনো? ঠান্ডা লেগে যাবে তো!”

রুহানের আদুরে গলা শুনে ইনায়া আলতো হাসলো, এই আদুরে গলায় প্রায় ইনায়াকে ডাকে ও। এখন আর আগের মতো ইনু বলে ডাকে না বরং ডাক্তারনি বলে ডাকে। ইনায়া তাতে রাগ প্রকাশ করলেও মনে মনে বড্ড খুশি হয়। ভালোবাসার মানুষের মুখে যেকোন ডাকই ভালো লাগে শুনতে। ইনায়া মৃদু স্বরে বললো

“সায়রুর কি অবস্থা এখন?আর বাবুরাকেমন আছে?তুমি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছো কেনো?”

“মা আর বাচ্চারা দুজনেই ভালো আছে। আরাভ ওইখানে আছে, যদিও আসতে চাইনি কিন্তু আরাভ বললো সবটা সামলে নিবে তাই বাধ্য হয়ে ফিরে আসলাম”

“আমি কতো করে বললাম সায়রুর কাছে থাকি কিন্তু তুমি পাঠিয়ে দিলে। এখন দুটো বাচ্চাকে একা ওই হাসপাতালে আরাভ ভাইয়া সামলাবে কি করে?”

“আরাভের মা ওইখানে থেকে গেছেন আর তাছাড়া নার্সতো আছেই। তুমি ওইখানে থেকে কি করবে?ইহান এখনো ছোট না!হাসপাতালের পরিবেশ ওর জন্য সুইটেবল না তাই তোমাকে চলে আসতে বলেছি”

“সেই তোমার বিচ্ছু ছেলে!ওর জন্য কোথাও গিয়ে শান্তি পাইনা”

ইনায়া মুখ ফুলিয়ে বললো যাতে রুহান কিঞ্চিত ভ্রু কুচকালো,ইনায়াকে ছেড়ে কিছুটা সরে গিয়ে দাঁড়াল তারপর কিছুটা ধমকের স্বরে বললো

“খবরদার ডাক্তারনি! আমার ছেলেকে নিয়ে একটা কথাও বলবে না।”

“ও কি তোমার একার…”

ইনায়া কিছু বলবে তার পুর্বেই ওড়নায় টান পড়লো, ইনায়া তাকিয়ে দেখে আলতো করে ছোট হাত দুটো ওর ওড়না খামচে ধরে আছে। চোখে পানি টলমল করছে, যেকোন সময় ভারী বর্ষণ হতে পারে। হাত দুটো প্রসারিত করে ইহান ইনায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

“মাম্মা কুলে”

ইনায়া কোলে নিতে গিয়েও নিলো না কারণ ও সম্পুর্ণ ভিজে গেছে তাই রুহানকে ইশারা করতেই রুহান ইহানকে কোলে তুলে নিলো। ইনায়া দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে এগুলো। ‘ইহান’ ইনায়া আর রুহানের ছোট্ট পৃথিবী, ওদের আড়াইবছর বয়সী ছেলে সন্তান। ইহানকে কোলে নেয়ার স্মৃতি এখনো মনে পড়ে ইনায়ার। রুহান যখন ওর কোলে ইহানকে দিয়েছিলো তখন ইনায়া আলতো করে সেই ছোট ছোট হাত দুটো ধরে চুমো খাচ্ছিলো আর কান্নামাখা কন্ঠে বলছিলো

“রুহান, ও আমাদের ছেলে! আমার সন্তান!”

ইনায়ার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করেছিলো তখন, এই ছোট্ট প্রান এতোদিন ওর মাঝে বড় হচ্ছিলো।ওর অংশ!

ইনায়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ইহান ঘুমিয়ে গেছে আর রুহান ওর পাশে শুয়ে আছে। ও ভেবেছে রুহান ঘুমিয়ে গেছে তাই রুহানের গায়ে ব্লাংকেট পরিয়ে চলে যেতে নিতেই রুহান হাত চেপে ধরলো তারপর জোরে টান দিতেই রুহানের উপর গিয়ে পড়লো।ইনায়া কিছুটা বিরক্ত নিয়েই বললো

“কি হচ্ছেটা কি রুহান?ছাড়ো বলছি!”

ইনায়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে রুহান ইনায়ার সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বললো

“ডাক্তারনি! ফিরে আসতে আসতে একটা কথা ভাবছিলাম। দেখো সায়রার ছেলের একটা বোন আছে কিন্তু ইহানের তো একটা বোন নেই। এটা কি ভারী অন্যায় নয় বলো?তাই ভাবছিলাম আমার ছেলেরও তো একটা বোন দরকার তাইনা?”

“এসব কথা হঠাৎ উঠছে কেনো মি.মাফিয়া!ভুলে গেলে ইহান হওয়ার সময় কি বলেছিলে?”

কথাটা শুনতেই রুহানের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ইহান হওয়ার আগে ইনায়া কি বাচ্চামো টাই না করেছে। মাঝ রাতে হঠাৎ এটা এনে দাও ওটা এনে দাও। তারপর প্রেগন্যান্সির আট-নয়মাসের সময় হঠাৎ বলতো আমাকে কোলে নাও, আর না নিলেই জুড়ে দিতো কান্না। ইভেন ডেলিভারির দিনও ওর সামনে বিশাল একটা টেডিবিয়ার রাখার পর ও অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেছে, আর যাওয়ার আগে একটা কথাই বলছিলো

“রুহানের বাচ্চা রুহান! যদি আমি মরে গেলে যদি বিয়ে করিস তো দেখিস ভুত হয়ে তোর ঘাড় মটকাবো!”

সেদিন বাবা-মা সবাইর সামনে রুহান কি লজ্জাটাই না পেয়েছে, সারাটা সময় লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে ছিলো, চোখ মেলাতেই যেনো লজ্জা পাচ্ছিলো। কি সাংঘাতিক ব্যাপার!তাই রুহান আবেগের চোটে ইনায়াকে বলেই দিয়েছিলো এরপর আর কোন বাচ্চা নেয়ার দরকার নেই।কিন্তু সেই ইনায়া আর এখনকার ইনায়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। ইহানকে সেদিন কোলে নেয়ার পর থেকেই বিশাল চেঞ্জ, এখন আর সেই বাচ্চামো তো নেই বরং পুরো বাড়ি সামলায় ও। মা হলে হয়তো মেয়েরা এভাবেই চেঞ্জ হয়ে যায়,তবে সেই পিচ্ছি ইনুকে মাঝেমাঝে খুব মিস করে!

রুহানের ভাবনার মাঝেই ইনায়া রুহানের গালে হাত রাখে তারপর মুচকি হেসে বলে

“কিছু মনে পড়েছে মি.মাফিয়া?”

“এই নামটা কি ডাকা বন্ধ করবে না? তুমি ভালো করেই জানো তুমি যা ডাকছো তা আমি নই”

“সেই তুমি যাই হওনা কেনো আমি তোমাকে এটা বলেই ডাকবো। কজ আই লাইক দ্যা নেম মি.মাফিয়া”

রুহান ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেললো, ইনায়াকে আলতো করে পাশে শুইয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ইনায়াকে যেমন ডাক্তারনি বলে খেপায় ও তেমনি ইনায়া ওকে মি.মাফিয়া বলে খেপায়।তবে রুহান সেই নামটি নিয়ে ভাবছে, আদোও কি নিজেকে মাফিয়া বলা চলে। রুহান ভাবছে পাঁচ বছর আগের সেই দিনের কথা যেদিন ও জানতে পেরেছে “ইয়াকুযা” আর কেউ নয় বরং এরেন লিউস।

সেদিন পুলিশ হাতে হাতকড়ি পরিয়ে গাড়িতে উঠায় ঠিক তার কিছুক্ষণ বাদেই আরো কয়েকজন পুলিশ এরেন লিউসকে ধরে বের করে। তার হাতেও হ্যান্ডকাফ ছিলো। এরেন ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তারপর গাড়িতে উঠে চলে যায় আর রুহানদের গাড়িও চলা শুরু করে। কিছুদূর যেতেই পুলিশ ওর হাতের হ্যান্ডকাফ খুলে দেয় আর ওর সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে

“থ্যাংকস মি.রুহান, আপনি না হলে হয়তো এই বিশাল মিস্ট্রির সমাধান আমরা করতে পারতাম না আর না ইয়াকুযা কিংকে ধরতে পারতাম”

এরপর তারা রুহানকে আবার সেই বাড়ির কাছে ফিরিয়ে এনে তারা ব্যাক করে। এদিকে সায়ান রুশিও সেই গাড়িকে ফলো করে এখান পর্যন্ত আসে, আর রুহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে।
রুশি রুহানকে জড়িয়ে ধরে আর সায়ান কৌতুহল চেপে না রাখতে পেরে জিজ্ঞেস করে

“এসব কি হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছিনা”

রুহান বাবার প্রশ্ন বুঝতে পারে আর কিছুটা চুপ থেকে বলে

“বাবা আমি মাফিয়া নই বরং আমি আন্ডারগ্রাউন্ড স্পেশাল ফোর্সের লিডার।এতোদিন আমি একটা মিশনে ছিলাম আর সেটা ছিলো ইয়াকুযা কিংকে ধরা আর আজকে আমার মিশন শেষ হয়েছে”

তারপর রুহান তার বাবাকে সব খুলে বললো।আসলে রুহান প্রথমে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাজের সাথে অজান্তেই জড়িয়ে যায় কিন্তু ও ভাবে যে এখানে থেকে ও অন্যায়গুলো বাধা দিতে পারবে। আর এই রকম একটা মিশনে ও পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে যায় কিন্তু পুলিশ ওর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পায়না বরং বুঝতে পারে ও সাহায্য করেছিলো। তাই তারা অফার করে একটা স্পেশাল ফোর্স তৈরি করার আর তাই হয়। ওর নাম হয় তখন সো কল্ড “মাফিয়া লর্ড”যেখানে ও আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে যদি সেই মানুষটি ওর জন্য লাইফ থ্রেড হয় যেমন জেইন শেইখ। ওদের মিশনের মেইন উদ্দ্যেশ্য ছিলো ইয়াকুযা কিংকে বের করা,তবে এটা সত্যি রুহান ওর বাবাকে ঘৃণা করতো আর সেদিন দেখা হওয়ার সত্যি চেয়েছিলো সায়ানকে মেরে ফেলতে আর তারপর ওর জেলে গেলেও আফসোস থাকবে না। তবে সায়ানের জন্য মাফিয়া হয়েছে সেটা সম্পুর্ণ ভুল ছিলো।

যেহেতু রুহান পুলিশকে হেল্প করেছিলো তাই পুলিশও কিছু কিছু বড় বড় ক্রিমিনালদের হত্যা করার ক্ষেত্রে ওকে বাধা দেয়নি। আর আজকে এরেনের সামনে রুহানকে ধরার উদ্দেশ্য ছিলো এরেন যাতে ভাবে রুহান জেলে আছে আর তাই সব সত্যি স্বিকার করে এবং পুলিশকে সকল তথ্য দেয়। আজ পাঁচ বছর পর হয়তো “রোয়েন লিউস” নামে কোন মাফিয়া ছিলো তা সবাই ভুলেই গিয়েছে কারণ পরিবারের কথা ভেবে এই পেশা ও ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে ওর কোম্পানি লন্ডন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় শিফট করে নিয়েছে আর ও আগে থেকেই গ্রেট পেইন্টার ছিলো। সবমিলিয়ে খুব ভালো কাটছে ওদের সংসার,আরাভ-সায়রার বিয়ে সেদিন সময়মত হয়েছিলো আর আরাভদের ফেমিলিও ক্যালিফোর্নিয়ায় শিফট হয়ে গিয়েছে।আর আজকে সকাল দশটা আরাভ-সায়রার দুটো টুইন বেবি হয়েছে,একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।আর ওদের ঘর আলো করে ইহান তো আছেই!

রুহান ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে ইনায়ার দিকে তাকালো, এতোক্ষনে ঘুমিয়ে গেছে ও। রুহান ভাবতেই পারছেনা যদি লন্ডনে ইনায়ার সাথে ওর দেখা না হতো তবে কি ও নিজের পরিবারের দেখা পেতো? হয়তো না।ইনায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো

“থ্যাংকস ফর কামিং ইনটু মাই লাইফ।ভালোবাসি ডাক্তারনি!”

বলেই কপালে আলতো চুমু খেয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো!

______________

মেন্টাল হসপিটালের বদ্ধ রুমে কেউ একজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে, চোখে একরাশ আকুতি নিজের আকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে সে। দেয়ালে আকা ছবিটার পাশে বড় করে লিখা “জেনিফার”। শুধু সেখানে নয় সমস্ত ঘর জুড়েই জেনিফার লিখা, কিছু কিছু নাম রক্ত দিয়ে লিখা যেমন এখন লিখছে রক্ত দিয়ে। ডাক্তাররা সকল জিনিস সরিয়ে ফেললো এক টুকরো কাচ সে লুকিয়ে রেখে দিয়েছে আর সেটি দিয়ে নিজের অজান্তেই নিজের শিরা কেটে ফেলেছে তার থেকে চুয়ে পড়া রক্ত দিয়ে লিখছে জেনিফার।আলতো হেসে বিড়বিড় করে বলছে

“আমি আসছি তোমার কাছে, আসছি আমি”

কিছুক্ষনের মধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, কাল হয়তো খবরের কাগজে বড় অক্ষরে বেরুবে “এরেন লিউস” সুইসাইড করে মারা গেছেন মেন্টাল হসপিটালের কামরায়।ভাবতেই হাসলো এরেন,ধীরে ধীরে চোখ বুঝে এলো তার। এভাবেই অনেক গুলো সম্পর্ক হারিয়ে যায় একটুখানি ভুলে!

~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~

(গল্পটা যেভাবে লিখতে চেয়েছি সেভাবে লিখতে পারিনি। সময়ের অভাবে প্রচণ্ড অগোছালো হয়েছে। অনেকেই বিরক্ত হয়েছেন তাদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি, আমি সত্যিই দুঃখিত। আর যারা এতোকিছুর পরও সাথে ছিলেন তাদের অস্যংখ্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে গুছিয়ে লিখার চেষ্টা করবো আমি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর Marjana Mariaand Najeat Anjum Jasyঅস্যংখ্য ধন্যবাদ গল্পে গঠনমূলক কমেন্ট করার জন্য, এতে সবাই কি ভাবছে আমি তার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। আল্লাহ হাফেজ💜)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here