বৈবাহিক চুক্তি পর্ব -৩৭+৩৮

Part 37+38
#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ৩৭

দেখতে দেখতে চোখের পলকেই যেনো তিনটা দিন কেটে গেলো।সময় হচ্ছে বহমান। মানুষের ইচ্ছে আর সময় যেনো পরস্পর বিপরীতেই কাজ করে, মানুষের যখন ইচ্ছে হয় সময়টা থেমে থাকুক তখন সেটা যেনো খুব দ্রুত চলে যায়। চোখের পলকেই গায়েব। আবার মানুষ যদি যায় এই সময়টা শেষ হয়ে যাক তবে সেটা যেনো কচ্ছপের ন্যায় চলে। টিক টিক করা ঘড়ি বেজে বেজে থেমে গেছে সেই কখন তবে কেউ একজন বিছানায় ঘুমোচ্ছে,বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে যে দশটা বেজে গেছে, সায়রা সেই কখন থেকে নিজের ভাইকে ধাক্কিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভাইয়ের কোন হুশ নেই। উপায়ন্তর না দেখে সায়রা পাশে থাকা মগ থেকে কয়েকফোটা পানি নিয়ে রুহানের চোখে মুখে ছিটা দিলো কিন্তু ভাইয়ের ঘুমের কোন হেরফের দেখলো না তাই আবারও একই কাজ করলো।
এবার রুহান পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো, সামনে সায়রাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একরাশ বিরক্তি প্রকাশ পেলো, ভেবেছিলো চোখ মেলে নিজের প্রেয়সীকে দেখতে পাবে পরনে লাল শাড়ি, হাতে রিনিঝিনি করা চুড়ি আর চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়তে থাকবে। আহা!কি মোহনীয় দৃশ্য হতো কিন্তু সেই স্বপ্নের দফারফা করে দিলো এই মেয়ে। কিছুটা বিরক্তি মুখে ফুটিয়ে তুলে বললো

“সকাল এমন পানি ছিটাছিটি করছিস কেনো? তুই বেকার থাকতেই পারিস তাই বলে অন্যের ঘুমের বারোটা বাজাবি!”

রুহানের কথা শুনে সায়রা ভেংচি কাটলো তারপর কিছুটা রুহানকে কপি করে বললো

“সকাল সকাল এমন পানি ছিটাছিটি কেনো! হুহ
কোন দিক থেকে তোর সকাল মনে হয়রে ভাইয়া?দশটা বাজে আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস!”

“আমি কাল অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেছি তাই সকালে ঘুম থেকে না উঠা অতি স্বাভাবিক ঘটনা। যা বলতে এসেছিস তা বল তারপর দাফা হয়ে যা”

রুহান হাই তুলে বললো, তিনদিন ধরে খুব ব্যাস্ত সময় কেটেছে। অনেক কিছু নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো আর নতুন অনেক কিছু জানতেও পেরেছে। এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।ভাইকে কিছু একটা ভাবতে দেখে সায়রা গলা পরিষ্কার করলো তারপর গলার স্বর কিছুটা নরম করে বললো

“ভাইয়া শুন না, আসলে বলছিলাম কি…”

সায়রার কন্ঠের চেঞ্জ দেখে রুহান কিছুটা ভ্রু কুচকে তাকালো তারপর সন্দেহ নিয়ে বললো

“কি মতলব বলতো? কাক হঠাৎ কোকিলের স্বরে কথা বলছে কেনো?”

“ভাইয়া ভালো হচ্ছেনা কিন্তু!”

আংগুল তুলে শাসনের স্বরে বললো সায়রা, তারপর ভাবলো যা করছে তাতে ওরই লস তাই নিজের অপমান গিলে ফেললো। কিছুটা মেকি হেসে বললো

“শুননা ভাইয়া! হয়েছি কি আমি একটা ছেলেকে…মানে একটা ছেলে আমাকে পছন্দ করে আরকি। তো এখন সে বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে আসছে। তুই প্লিজ সামলে নেনা!”

আহ্লাদী স্বরে বলে উঠলো সায়রা, বোনের এমন কান্ড দেখে হেসে উঠলো রুহান। ওর জানামতে সায়রাই প্রপোজ করেছে আরাভকে কিন্তু কি সুন্দর বিষয়টি চেপে গেলো।তাই মুচকি হেসে বললো

“তা ছেলেটা পছন্দ করে তাতে কি?তুইতো আর করিস না তাহলে মেনেজ করতে হবে কেনো?”

“না না মানে আমিও করি আরকি…”

“ওহ তাই বল! তা আমি তোকে হেল্প করতে যাবো কেনো? আমার কি কোন ফায়দা আছে?”

সায়রা এবার দাঁত কেলিয়ে হাসলো তারপর নিজের হাতে থাকা ফোন নাচাতে নাচাতে বললো

“আমি ভাবছিলাম ইনু বেবিকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলবো আরকি!তুই যদি আমার হেল্প করতে রাজি হোস তবে…”

“ভালোই চালাক হয়েছিস দেখি!তা এতো বুদ্ধি আপনার ঘটে আসলো কোথা থেকে?”

“আমি সায়রা জামিল খান ভাইয়া,ডটার অফ দ্যি গ্রেট সায়ান জামিল খান। আমিতো জন্ম থেকে ইন্টেলিজেন্ট।”

বলেই হন হন করে বেরিয়ে পড়লো, ঝড়ের ন্যায় এসে তুফান হয়ে বেরিয়ে গেলো মাঝখান দিয়ে আমার বেচারা ঘুম! রুহান দ্রুত খাট থেকে লাফিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলো। আজ প্রায় তিনদিন পর ইনায়াকে দেখবে ভাবতেই মনের মধ্যে খুশি খুশি ফিল হলো। গুনগুনিয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে ও

“Where do you go?
Where do you hide?
Baby girl, i am ur mr. right…

___________________

সায়রা মাথা নিচু করে বসে আছে, সামনে আরাভের বাবা, মা আর আরাভ বসা। তার পাশের সোফায় বাবা-মা বসা আর ওর ভাই ঠিক আরাভের সামনেই বসা সবার মুখে গম্ভীর একটা ভাব। সায়রার এই মুহুর্তে কান্না পাচ্ছে, মনের ভেতর হাজার প্রশ্ন জটলা বেধে যাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে তাহলে কি আরাভের বাবা মায়ের ওকে পছন্দ হয়নি!আবার মনে হচ্ছে বাবা কি তাহলে এখানে বিয়ে দিবে না!
ওর ভাই হচ্ছে আস্তো একটা শয়তান, কি সুন্দর কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও সব সামলে নেবে বলেছে কিন্তু এখন কি করে বসে আছে দেখো!ইনায়াকে ফোন না দেয়াই উচিৎ ছিলো। কত কাট খড় পুড়িয়ে রাজি করালো এখানে আসার জন্য কিন্তু ওর ভাই কিছুই করলো না। মিরজাফর একটা!

সায়রার এই কান্না কান্না ফেস দেখে আরাভের বাবা-মা আর না পেরে হেসে দিলো, মেয়েটিকে বড্ড অসহায় লাগছে এই মুহুর্তে তাই আর টিজ না করাই বেটার। তাদের হাসি দেখে রুহান চেঁচিয়ে উঠলো

“আংকেল কি করলেন এটা? কতো ভালো এক্টিং করছিলাম আমরা আর আপনারা ভেস্তে দিলেন?”

রুহানের কথার রুহানের বাবাও সায় দিলো, তা দেখে আরাভের মা বললো

“বেয়াই সাহেব, মেয়েটাকে আর না চেতানোই ভালো। এমনিতেই মুখখানি এটুকুন করে বসে আছে, যেকোন সময় মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে পারে।আমাদের পুত্রবধূর চোখের পানি দেখতে চাইনা আমরা”

সায়রা মুখ তুলে সবার দিকে হেবলার মতো চেয়ে আছে।মানে এতোক্ষন ওকে সফল ভাবে বোকা বানানো হয়েছে কি ভাগ্য ওর!পরক্ষনেই আরাভের মায়ের বলা “পুত্রবধূ” শব্দটি মনে পড়লো। তবে কি সবাই রাজি!লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো। আরাভ সেই মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে, সায়রার পরনে একটা পিংক কালার শাড়ি। ও ভাবতেই পারছেনা ওর সামনে বসে থাকা নারীকে দেখে প্রথমে মনে হয়েছিলো তার মধ্যে বাঙালিয়ানা নেই, কি অপরুপ লাগছে শাড়িতে দেখতে!

সায়রা একবার আড়চোখে আরাভের দিকে তাকালো তারপর মুহুর্তেই চোখ সরিয়ে নিলো। এতোক্ষন ভয়ে ওর দিকে তাকাতে না পারলেও এখন কেনো জানি মনে হচ্ছে সামনের থাকা মানুষটি ওর শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা। সায়রার ভাবনার মাঝেই কেউ একজন ওর পাশ ঘিরে বসলো, পাশে ফিরে দেখে ইনায়া। ইনায়া ওর মামা মামির দিকে তাকিয়ে বললো

“স্যরি লেট করে এসেছি হয়তো আমি। আসলে রাস্তায় একটা এক্সিডেন্টে হয়েছিলো তাই আসতে লেট হয়ে গিয়ে…”

ইনায়ার কথা শেষ হওয়ার পুর্বেই কেউ একজন ওকে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে নিলো, তারপর ব্যাস্ত ভংগিতে ওকে চেক করতে করতে বললো

“তুমি ঠিক আছো? কোথাও লাগেনি তো! দেখি ওই হাত দেখাও”

ইনায়া অবাক হয়ে বসে আছে, ওকে দেখে নিশ্চই আহত মনে হচ্ছেনা তবুও রুহানের কন্সার্ন দেখে হাল্কা মুচকি হাসলো তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কতোগুলো উৎসুক চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই ইনায়া দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো রুহান থেকে, রুহানও বিষয়টি বুঝতে পেরে ইনায়ার থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসলো। আরাভের মা কিউরিসিটি দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো

“কে এই মেয়েটি? সায়রার কি হয়?”

ইনায়া মুখ খুলে কিছু বলবে তার পুর্বেই রুহান বলে উঠলো

“ও আমার বউ হয় আন্টি সেই সুবাদে সায়রার ভাবি হয় আরকি”

রুহানের মুখে “বউ” শব্দ শুনে ইনায়ার ভিতর এক ভালোলাগার শিহরণ বয়ে গেলো। আসলেই এখন পর্যন্ত ও রুহানের বউ কিন্তু দুদিন পর হয়তো সেটা আর থাকবে না। তাই এই মুহুর্তকে উপভোগ করতে চায় ও। কোন একদিন হয়তো নিজেকে বুঝাতে পারবে ‘আমি একদিনের জন্য হলেও তার স্বীকৃত বউ ছিলাম’।এদিকে আরাভের মা বিস্ময় নিয়ে বললো
“তুমি বিয়ে করেছো অথচ আমাদের বললে না রুহান?”

“আসলে আন্টি খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে তাই কাউকে জানানো হয়নি।খুব ঘরোয়া হয়েছে বইকি।কিন্তু রিসেপশন হলে সবাইকে জানাবো আরকি”

“তাহলে আরাভ-সায়রার সাথেই তো হয়ে যেতে পারে। এতে সময়ও বাঁঁচবে আর সবাইকে জানানোও হবে”

“আইডিয়া খুব একটা খারাপ না আন্টি।আমিও যথাসম্ভব সবাইকে জানাতে চাই”

ইনায়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, ইনায়া দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। ওই মায়ামাখা চোখে তাকিয়ে থাকলে হয়তো নিজেকে সামলানো দুষ্কর হয়ে পড়বে।একজন দৃষ্টি এড়িয়ে চলার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত তো আরেকজন দৃষ্টি মেলানোর। আর লুকোচুরি খেলাই চলতে থাকলো পুরোটা সময় জুড়ে। বিয়ের তারিখ ফিক্স করে আরাভের বাবা মা তাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলেন। ইনায়াও এখান থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক তখনি কেউ একজন হাত টেনে একটা রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। কিছু বুঝে উঠার পুর্বেই কারো অধর যুগলের নিজের কপালে পেলো। ইনায়া পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো, হয়তো এই মুহুর্ত আর পাওয়ার নয়। রুহান ইনায়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো

“গেট রেডি টু বি মাইন মিসেস ইনায়া খান”

#পর্বঃ৩৮

রুহানের স্পর্শ এতোটা কাছ থেকে পেয়ে ইনায়া হচকিয়ে উঠলো, মন আনাচে কানাচে ভালোবাসার শিহরণ বইতে লাগলো। আজকাল রুহানের সমস্ত কিছু খুব ভালোলাগে এমনকি যখন জোর গলায় নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলে “তুমি শুধু আমার”।রুহানের হাসি, কথাবলা এমনকি রাগ আর বিরক্তিতেও কেমন প্রেম প্রেম পায় ওর। হয়তো ও বুঝতেই পারেনি কখন রুহানের মায়ার গভীর জালে আটকা পড়েছে যা থেকে চেয়েও বেরুতে পারছেনা কিন্তু ওকে যেতে হবে, এখন সবটা ছেড়ে যেতে হবে।

ইনায়ার ভাবনার মাঝেই হাতের ফোনটা কাঁপতে শুরু করলো, তাকিয়ে দেখে মেসেজ এসেছে। রুহানের বাহুডোরে থাকা অবস্থাই ফোনটা খুলে মেসেজ অপশন অন করলো যাতে মুহুর্তেই একরাশ বিরক্তি চেপে বসলো ওর চোখে মুখে। এখানে থেকেও ফোনের অপরপাশের মানুষটির মুখভঙ্গি বেশ উপলব্ধি করতে পারছে। নিশ্চিত ফোনের অপর পাশ থেকে বিড়বিড় করে বলছে

“উইদিন ফিফটিন মিনিটস আই ওয়ানা ইনফ্রন্ট অফ মাই আইস”

যা মেসেজে খুব সুন্দর করে লিখা আছে। ইনায়া চোখবন্ধ করে নিজের ভেতর চেপে থাকা রাগ দমন করলো তারপর রুহানের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাটা শুরু করলো তবে বেশি দূর পর্যন্ত এগুতে পারেনি তার পুর্বেই কেউ হেচকা টানে ওকে তার সাথে মিশিয়ে ফেললো তারপর কপালের সাথে কপাল মিশিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, কিছু সময়ের নিস্তব্ধতার পর সেই মানুষটি বলে উঠলো

“ইনু! আরেকটু থাকোনা এখানে। এই কয়দিন তোমাকে বড্ড মিস করেছি।একেবারে চলে আসোনা আমার কাছে!”

প্রত্যুত্তরে ইনায়ার কিছু বলার নেই,ও নিজেও খুব মিস করেছে এই মানুষটিকে কিন্তু বলতে পারছে না। এটাও জানা নেই আদোও কোনদিন বলার সুযোগ হয়ে উঠবে কিনা। তাই মিথ্যে আশা বাড়িয়ে কি লাভ?ইনায়া একটা ছোট্ট দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো তারপর ‘আসছি’ বলে হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো, পিছনে ফিরে তাকানোর বড্ড ইচ্ছে থাকলেও তাকায়নি যেখানে সম্পর্কটাই কিছুদিনের অতিথি সেখানে অযথা মায়া বাড়িয়ে কি লাভ!

“মায়া জিনিসটা খুব খারাপ
যেখানে তোমায় পাবো না জেনেও
সহস্র বছর অপেক্ষা করে বসে থাকা
নিড়ে ফেরা পাখির মতো চেয়ে থাকা
ঘড় ভেঙে যাওয়া পাখির মতো আহাজারি করা
এই সমস্ত কিছুই অর্থহীন!
সেখানে মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?”
(সংগ্রহীত)

নিজের ভালোবাসার এতোটা প্রকাশের পরও ভালোবাসার মানুষের রেস্পন্স না পেলে বড্ড কষ্ট লাগে সাথে হয়তো রাগও হয় কিন্তু রুহানের তার কিছুই কাজ করছে না। বরং রুহান আগের থেকে অনেক শান্ত হয়ে গিয়েছে, এখন কথায় কথায় রেগে যাওয়ার অভ্যাসটা নেই। কারণ ঠান্ডা মাথায় সকল কাজের সমাধান পাওয়া যায়, বাবার কাছ এই জিনিসটা বড্ড রপ্ত করে ফেলেছে। সাথে ধৈর্যধারণ, নিজের বোন বাবা মায়ের সম্পর্কের এতোবছরের অস্বাভাবিকতার কথা শুনেছে। বেশ বুঝতে পেরেছে সমস্যাটা ওকে নিয়েই। কিন্তু বাবার ভালোবাসা আর ধৈর্য দেখে বেশ মোহিত হয়েছে আর তাই মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করলো ভালোবাসলে বাবার মতো বাসবে। কোন কিছুর প্রতিদান ছাড়াই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

এখন আর ইনায়াকে জোর করতে ইচ্ছে করেনা বরং মানাতে ইচ্ছে করে। ওকে এটা বলতে ইচ্ছে হয়না যে ‘তুমি শুধু আমার’ বরং এটা বিশ্বাস করাতে ইচ্ছে হয় যে আমি শুধু তোমার আর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমারি রবো।

“ভালোবাসা মানে কোন জবরদস্তি খেলা নয়
যার নিয়ম কাউকে নিজের করে পাওয়া
বরং ভালোবাসা মানে কারো মায়া পড়া
আর মনে প্রাণে তার হয়ে যাওয়া”(লিজা)

____________

ইনায়া সোফায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে, ওর বাবা মা বাসায় নেই।সেই সকালে ওর সাথে বেরিয়ে কোথাও একটা গিয়েছিলো এখনো ফিরে নি। সেই সুবাদে পুরো বাড়ি জুড়ে ওর একা থাকার কথা কিন্তু ও একা নয় ওর সাথে আছে ছফুট দৈত্য যে পদাচরণ রিতিমতো ওকে শংকিত করে তুলছে। ছোট বেলায় মায়ের কাছে প্রায় রুপকথার গল্প শুনতো যাতে থাকতো একটা প্রিন্সসেস, একটা রাজকুমার আর বিশাল দেহের এক দৈত্য। রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে সেই দৈত্যের হাত থেকে রাজকুমারী বাচাতে আসতো। ওর জীবনটাও ঠিক রুপকথার মতো, ওর জীবনে দৈত্য আছে এমনকি রাজকুমারও আছে কিন্তু সেই রাজকুমারীর মতো ও কোন রাজকুমারী নয় তাই হয়তো দৈত্যের থেকে ছাড়া পাওয়া হলোনা ওর।ভাবনার মাঝে কেউ একজন চেয়ার টেনে ওর সামনে বসলো, চোখে ক্রোধের ছোয়া কিন্তু ঠোঁট জুড়ে হাসির শেষ নেই। হঠাৎ সে ইনায়ার চোয়াল চেপে ধরলো আর হিসহিসিয়ে বললো

“তোমার কলিজা খুব বড়ো তাইতো তুমি তোমার আশিকের বাড়ি পর্যন্ত দেখা করতে গিয়েছো তার সাথে দেখা করার জন্য।এতো সাহস কোথায় পেলে তুমি?”

ইনায়া কিছু না বলে চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ তারপর শান্ত গলায় বললো

“আমার মামাতো বোনকে আজকে দেখতে এসেছিলো তাই আমি গিয়েছিলাম। আমার তার সাথে দেখা হয়নি”

ইনায়ার কথা শুনে জেইন ওর চোয়াল ছেড়ে দিলো, তারপর হাত মুঠো করে বললো

“গুছিয়ে মিথ্যে বলাও শিখে গিয়েছো দেখছি,তোমার কি মনে হয় তুমি আমার নজর এড়িয়ে সেই বাড়িতে যাবে সেখানে কি হয়েছে আমি জানবো না!”

তারপর হুট করে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরলো, ইনায়া ভয়ে জড়োশড় হয়ে গেলো।এর পুর্বে মুখে যাই বলুক পিজিকালি হেরেস করেনি কখনো ওকে কিন্তু এখন! ইনায়া নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারলো না তাই ভয়ে কেঁদে দিলো তা দেখে জেইন ওকে ছেড়ে দিলো তার পুর্বের মতো চোয়াল চেপে ধরে বললো

“ঠিক অতোটাই কাছে ছিলো তোমার তাইনা!হাহ মনে রেখো যা যা করো তার কোন কিছুই আমার দৃষ্টি এড়ায় না”

ইনায়া ভীত শংকিত হয়ে বসে আছে, আজকাল নিজের বাড়িকে নরক থেকে কম মনে হয়না। এই বাড়িতে সারাক্ষণ এই জঘন্য লোকটির আনাগোনা ওকে বড্ড শংকিত করে, মনে হয় দূরে কোথাও ছুটে পালাতে। ইনায়ার চোখ মুখের জেইনকে বড্ড আনন্দ দিচ্ছে ও ইনায়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো

“তোমার এই ভয় ভয় চেহারা বড্ড প্রিয় আমার তাই মনে সবসময় তোমাকে ভয় দেখাই। আচ্ছা কি জেনো বলেছিলে…”

ইনায়ার সামনের সোফায় আরাম করে বসে পড়লো জেইন, তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করার অভিনয় করে বললো

“ইয়াহ তোমার কাজিনকে দেখতে এসেছে, ইশশ বেচারি কি সুন্দর দেখতে! কিন্তু যদি তার শশুর বাড়ির লোক জানতে পারে তার অলরেডি একটা এংগেজমেন্ট ভেংগে গিয়েছে কিংবা ধরো হবু বর জানতে পারলো যে তার ফিয়ন্সি আমার সাথে হোটেলে ছিলো। বিয়েটা হবে তো!ভাবতেই কষ্ট লাগছে আমার”

ইনায়া কান্না বন্ধ করে জেইনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ওর কথাগুলো আপাত দৃষ্টিতে সত্যি হলেও এর মাঝে লুকানো আছে হাজারো মিথ্যে কিন্তু তা উন্মোচন করার ক্ষমতা ওর নেই। আর নিজের জন্য সায়রার ক্ষতি ও কিছুতেই মেনে নিবে না। তাই চোখের পানি মুছে জেইনের দিকে তাকিয়ে বললো

“কি করতে হবে আমায় যাতে আপনি সায়রাকে ছেড়ে দিবেন?”

“দেটস মাই গার্ল!কতো ইন্টেলিজেন্ট তুমি,আমি বলার পুর্বেই সব বুঝে যাও। বেশি কিছু না এই পেপারগুলোতে সাইন করে দাও তাহলেই হবে আমি ভুলে যাবো তোমার কাজিনের মতো হট কোন মেয়ে আমার চোখে পড়েছিলো”

সামনে একগুচ্ছ পেপার রাখলো জেইন, আপাদত তাতেই দৃষ্টি ইনায়ার, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো

“এটা কিসের পেপার?”

“ডিভোর্স পেপার, কাল তুমি আমার ওয়াইফ হতে যাচ্ছো আর এখনো অন্যের ওয়াইফ হয়ে আছো সেটা কি ভালো দেখায় বলো?তাই এটাতে সাইন করে দাও”

ইনায়ার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়ালো, একবছরের সম্পর্ক আর প্রায় একমাসের বিয়ে! সবকিছুর ইতি টানার সময় আজ চলে এসেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে কলম নিয়ে বললো

“রুহান! তবে কি এটাই তোমার আর সম্পর্কের ইতিরেখা?আজকের পর থেকে কি তোমাকে পাওয়ার সকল অধিকার হারিয়ে ফেললাম আমি!”

#চলবে💔
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here