বৈবাহিক চুক্তি পর্ব -৩৯+৪০

Part 39+40
#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ৩৯

ইনায়া কাঁপা কাঁপা হাতে কলম নিয়ে বসে আছে, কিছুক্ষণ পর পর দরজার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।এরই মধ্যে কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও যখন ইনায়া সাইন করলো না তখন জেইন শেখ সামনে থাকা টেবিলে খুব জোরে হাত রাখলো যার শব্দে ইনায়া কেঁপে উঠলো। ইনায়ার এই মুহুর্তের ফেস দেখলে হয়তো ভুল করে ভাবতে পারে যে ইনায়ার চোখে মুখে কষ্টের কোন ছোয়া নেই বরং ও বড্ড রেগে আছে। জেইন হাত মুঠ করে কিছুটা শক্ত কন্ঠে বললো

“ডোন্ট টেস্ট মাই পেইশেন্স,তাড়াতাড়ি ডিভোর্স পেপারে সাইন করো। তুমি এখনো অন্যের বউ হিসেবে আছো এই জিনিস মানতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। সো হারি আপ এন্ড সাইন ইট”

ইনায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো, রাগে চোখ লাল হয়ে আছে। শরীর থরথর করে কাঁপছে,এই মুহুর্তে চাইলেই হয়তো কাউকে খুন করে ফেলতে পারবে। রাগের বশে কলম নিয়ে সাইন করার জায়গা রাখতেই কলমটি কেউ কেড়ে নিলো। ইনায়া না তাকিয়েও বুঝতে পারলো মানুষটি কে!ঠোঁটের কোনে হাল্কা হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবে দুঃখী দুঃখী ফেস নিয়ে বসে রইলো।

ইনায়ার ঠিক পাশ ঘেষেই সোফায় আরাম করে বসলো রুহান, হাতে থাকা কলমটি দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো। সামনের টেবিলে সাজিয়ে রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল হাতে নিয়ে সেটা কামড়ে খাওয়া শুরু করলো যেনো এই আপেল খাওয়ায় এই মুহুর্তে দুনিয়ায় অবশিষ্ট একমাত্র কাজ। ইনায়ার চোখ লাল হয়ে আছে রুহানকে এই অবস্থায় দেখে, কান্নার ফাঁকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুহানের দিকে আর রুহান খাওয়ার ফাঁকে তাই লক্ষ্য করে ছোটখাটো ঢোক গিললো। তারপর আপেলটি জায়াগায় রেখে বেশ আয়েশ করে বসলো সোফায়। ইনায়ার সামনে থাকা কাগজগুলো নজরে পড়তেই তা হাতে তুলে নিলো তারপর জেইনের দিকে তাকিয়ে বললো

“আমার ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে অথচ আমিই জানিনা! ব্রো নট ফেয়ার। আই মিন আমাকে ডাকলেই হতো আমি চলে আসতাম, এমনিতেও আমার সাইন ছাড়া কি আর ডিভোর্স হবে বলো?কিন্তু এই পেপারগুলো দেখতে একটুও সুন্দর না তাই স্যরি”

বলেই পেপারগুলো ঠিক মাঝবরাবর থেকে ছিড়ে ফেললো, রুহানের এই সামান্য কাজ দেখে হয়তো জেইন শেখের মাথার রক্ত পায়ে উঠে গেছে। হাত মুঠো থাকা অবস্থায় মুখে হাসি বজায় রেখে বললো

“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি জাস্ট! আমার লোকের চোখকে ফাকি দিয়ে তুমি আমার সামনে বসে আছো তাও জীবিত?আসলে নিজের টক্করের কাউকে পেলে খেলার মজাটাই বেড়ে যায়। নাউ দ্যা গেম উইল বি ফান”

বলেই বাঁকা হেসে ইনায়ার দিকে তাকালো তারপর পায়ের উপর পা তুলে বসলো তারপর নিজের পায়ের দিকে ইশারা করে বললো

“ইনায়া কাম এন্ড সিট হেয়ার”

কিন্তু ইনায়ার কোন ভাবান্তর হলো না, ও পুর্বের ন্যায় বসে আছে আর কতক্ষণ রুহানের দিকে তাকাচ্ছে। রুহান ওর দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললো

“যাও ইনু বেবি!তোমাকে ডাকছে তো?”

“আমাকে পাগল কুকুরে কামড় দিয়েছে?শুনো এর থেকে বেশি এক্টিং আমার দ্বারা সম্ভব নয়। এমনিতেও কান্না করতে করতে আমার চোখ ব্যাথা হয়ে গেছে,গ্লিসারিন ইজ সাচ আ টাফ থিং”

বলেই রুহানের গা ঘেষে বসে পড়লো, তারপর যে আপেলটি রুহান অর্ধেক খেয়ে রেখে দিয়েছিলো সেটা তুলে খাওয়া শুরু করলো। রুহান তা দেখে নিঃশব্দে হাসলো তারপর জেইনের দিকে তাকিয়ে দুঃখ দুঃখ ফেস নিয়ে বললো

“স্যরি মিস্টার শেইখ, মাই ওয়াইফ ইজ নট ইন আ মুড”

এদিকে সবকিছু যেনো জেইনের উপর দিয়ে যাচ্ছে, এক্টিং,গ্লিসারিন শব্দগুলো যেন মাথার চারপাশে গোল গোল ঘুরতে লাগলো। কিছু না ভেবেই নিজের পার্সোনাল বডিগার্ডকে ডাক দিলো

“গ্রাহাম!কাম হেয়ার”

“ইয়েস বস”

প্রায় সাথে সাথেই একজন মোটা লোক প্রবেশ করলো, পুরো ব্লাক স্যুট পরিহিত, কানে ব্লুটুথ আর হাতে গান। যদি আরেকটু চিকন হতো তবে ‘বডিগার্ড’ মুভির সালমান খান থেকে কম লাগতো না। গ্রাহামকে ঢুকতে দেখেই রুহান মুচকি হাসলো, তারপর তর্জনী আঙুল কপালে ঘষতে ঘষতে বললো

“গ্রাহাম!”

পাশ থেকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আওয়াজ আসলো

“ই্ ইয়েস বস”

শব্দটি শুনেই জেইন শেইখ উঠে দাঁড়ালো, পুরো বিষয়টি বুঝতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না ওর। কথায় আছে না “সামাজদার কো ইশারাহি কাফি হেয়” তাই দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে গ্রাহাম এসে সামনে দাড়ালো আর মাথা নিচু করে বললো

“স্যরি বাট ইউ কান্ট গো”

জেইন শেইখ কিছু না বলে গ্রাহামের দিকে তাকালো, আজ প্রায় দশ বছর থেকে গ্রাহাম ওর বডিগার্ড। সেই চব্বিশ বছর থেকে ওর বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে যদি কেউ থেকে থাকে সেটা হচ্ছে গ্রাহাম। কিন্তু সেই গ্রাহাম এইভাবে শত্রু পক্ষের সাথে হাত মিলাবে ভাবতে পারেনি। তাই গ্রাহামের দিকে তাকিয়ে বললো

“গ্রাহাম কেনো ধোকা দিলে আমায়?আমার নুন খেয়ে আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে তোমার বিবেকে বাধেনি?”

গ্রাহাম কিছু না বলে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে,রুহান সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর জেইনের পাশে দাঁড়িয়ে বললো

“না বাধে নি! কারণ হি ইজ আ ইন্টেলিজেন্ট গায়।ও বুঝতে পেরেছে যে স্বার্থের জন্য যে নিজের বাবাকে খুন করতে পারে সে যেকোন কিছু করতে পারে।তাছাড়া আমি ওকে অফার দিয়েছি হয়তো আমার সাথে হাত মিলিয়ে নিজে সহ পরিবারকে রক্ষা করুক না হয় পুরো পরিবার সহ মরে যাক। এজ আই সেইড ও বুদ্ধিমান তাই সেকেন্ড অপশন বেছে নিয়েছে ”

রুহানের কথায় জেইন শেইখ যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ও যে ক্ষমতার জন্য নিজের বাবাকে খুন করেছে এটা রুহান কি করে জানলো?এটাতো ও ছাড়া অন্যকারো জানান কথা না। আর তাছাড়া রুহান মুহুর্তেই বাজি পাল্টে দিলো কি করে?রুহানের কাছে এতো শক্তি কোথা থেকে আসলো? ও চিৎকার করে বললো

“না না একি করে সম্ভব? আমার প্লেন এতো সহজে কি করে ভেস্তে যেতে পারে?তোমার এতো শক্তি আসলো কি করে যে তুমি জেইন শেখকে হারাতে আসো?”

“এই ঠিক এখানেই তুমি হেরে গেছো, তুমি আমার ব্যাপারে সঠিক খোজ না নিয়েই মাঠে নেমেছো। ডু ইউ নো হু আই এম?দ্যা মাফিয়া লর্ড ‘রোয়েন লিউস’
হ্যা বর্তমানে আমি রুহান জামিল খান বাট এর মানে এই না আমার নামের সাথে সাথে কেরেক্টারও বদলে গিয়েছে। তুমি নিজেকে অনেক চালাক মনে করো আর বাকিদের বোকা তাই শত্রুপক্ষ ঠিক কতোটা শক্তিশালী তা তুমি জানার প্রয়োজন বোধ করোনি।”

রুহানের কথায় জেইন শেইখ রাগে ফেটে পড়লো, রুহানকে মারতে এগিয়ে আসতেই রুহান ঠিক ওর নাক বরাবর ঘুষি মারলো যাতে জেইন ছিটকে পড়লো। রুহান এগিয়ে গিয়ে জেইনের সামনে বসে পড়লো তারপর নিজের হাত ঝাড়া দিয়ে বললো

“কি ভেবেছিস সবখানে সিসিটিভি ফুটেজ লাগালেই সব খবর পৌঁছে যাবে তোর কাছে?এটা ঠিক প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি কিছুই কিন্তু এটা ঠিক বুঝতে পেরেছি কিছু একটা সমস্যা চলছে এখানে তাই সেদিন ফুফা বাসায় যাওয়ার সুযোগে ইনায়াকে নিতে আসি আর সেখানে এসে দেখি ফুফাদের বাড়িতে অনেকগুলো গার্ড।ওটাই ছিলো ইউর বিগেস্ট মিস্টেক! ফুফাদের অবস্থা এতোটাও ভালো নয় যে এতোগুলা গার্ড সে এফোর্ড করতে পারবে তাই সন্দেহটা আরো গাঢ় হয়ে যায়। এজন্য ইনায়ার ওদের বাসায় কথা না বলে ওকে নিয়ে হোটেলে গেলাম। আমি জানতাম কেউ আমাদের ফলো করছে তাই ইনায়াকে গাড়িতে কিছুই জিজ্ঞেস করিনি। রুমের যাওয়ার পুর্বে বেশ বুঝতে পেরেছি কেউ একজন নজর রাখছে আমাদের উপর কিন্তু তার রুমের ঢুকার সুযোগ নেই।তাই রুমে ঢুকে ইনায়াকে আগে আশ্বস্ত করেছি যে এখানে কেউ কিছু শুনতে পাবেনা। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে সবটা খুলে বলে আমাকে আর ঠিক আমার মাথায় একটা আইডিয়া খেলে যায় ‘তোর গেমে তোকে হারালে কেমন হবে?’ পুরোটা সময় ধরে তোর মনে হবে তুই জিতছিস কিন্তু হঠাৎ করে বুঝতে পারবি সব ট্র‍্যাপ! আর সেখান থেকেই শুরু হয় ইনু মানে আমার ওয়াইফের দুর্দান্ত এক্টিং!”

বলেই ইনায়ার দিকে তাকালো আর ইনায়া দুঃখ দুঃখ ফেস করে বললো

“তুমি আর আমি হয়তো আমরা হতে পারলাম না রুহান কিন্তু আমরা থাকবো অন্য কোন গল্পে অন্য কারো তুমি হয়ে”

বলেই খিলখিল করে হেসে দিলো, ইনায়ার হাসি দেখে রুহান না হেসে পারলো না। তারপর জেইনের দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে শুরু করলো

“আমরা ইচ্ছে করেই সবকিছু দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব কথা বলেছি যাতে যে নজর রাখছে সে সব শুনতে পায়। আর যেহেতু প্রমাণ লাগতো তাই আরকি…যাইহোক তোর লোক সকালে রুম সার্ভিসিং এর নাম করে রুমে ঢুকে বুঝতে পারে সবটা সত্যি। তারপর ইনুকে বাসায় পৌঁছে দেই আর আমি বাসায় যাই ”

“তাহলে তোর বাসায় যে কথা বলেছিস তোর বাবার সাথে ওইগুলো কি ছিলো?”

“গুড পয়েন্ট! তুই আসলেই জিনিয়াস কিন্তু অন্যকে বোকা ভেবে ঠিক করিস নি।তুই আমার বাসা জুড়ে সিসিটিভির মেলা বসিয়ে দিবি আর আমি বুঝতেও পারবো না?আমি এমনকি আমার পরিবারের সবাই জানতো যে বাড়িতে সিসিটিভি ফুটেজ আছে।যেহেতু তুই আমাদের ফোনের সাথে কিছু করিসনি তাই আমরা বাকি কথা ফোনে মেসেজ করে বলতাম যাতে তুই টের না পাস।তবে ফুফা বা ফুফিকে এই বিষয়ে জানানো সম্ভব হয়নি। আজ সকালে তাদের ব্যাংক এর নাম করে ফোন করে সেখানে বাবা তাদের সব বলেছে আর তারা অলরেডি আমাদের বাড়িতে সেফ আছে। সো মোরাল অফ দ্যা স্টোরি হচ্ছে তোকে আমরা যেভাবে নাচিয়েছি তুই ঠিক সেভাবে নেচেছিস”

রুহান কিছুক্ষণ থামলো তারপর নিজের পকেট থেকে গান বের করে বললো

“এবার তোর শাস্তির পালা। প্রথমত তুই আমার স্ত্রী আর আমার বোন দুজনের দিকে বাজে নজর দিয়েছিস। দ্বিতীয়ত তুই আমার ওয়াফকে বিয়ে করতে চেয়েছিস আর না পেরে আমার বোনের সাথে এংগেজমেন্ট করেছিস। এন্ড লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট তুই আমার স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করেছিস। তাই তোকে যদি একশোবারও খুন করি কম হবে। তোর মতো জানোয়ারের বেচে থাকার কোন অধিকার নেই”

বলেই বাঁকা হাসি দিয়ে একেরপর এক গুলি করতে লাগলো জেইন শেখের বুকে, যতক্ষণ না নিজের তৃপ্তি হলো ততক্ষণ গুলি করতে থাকলো তারপর গান পকেটে ঢুকিয়ে বডিগার্ডদের ইশারা করলো লাশ সরিয়ে ফেলতে। কিন্তু হঠাৎ ওর মনে ভয় ঝেকে বসলো, ইনায়া ঠিক ওর পাশেই ছিলো! ও এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়েছে নিশ্চয়! ইশশশ মাথা থেকে ওর কথা একদম বেরিয়ে গিয়েছিলো। রুহান ভয়ে ভয়ে ইনায়ার দিকে তাকালো,,,

#পর্বঃ৪০

রুহান পাশে তাকিয়ে যা দেখলো তাতে ওর চোখ কপালে, ও ভাবতেই পারেনি এমন কিছু ওর দৃষ্টিগোচর হবে। ইনায়া সোফার উপর শরীর এলিয়ে দিয়ে বসে আছে আর পাশের ঝুড়ি থেকে নেয়া কমলা ছিলে খাচ্ছে যেনো আশেপাশে যা হয়েছে তাতে বিন্দুমাত্র খেয়াল ওর নেই। ও খুব তৃপ্তি নিয়ে কমলা খাচ্ছে, হয়তো এই মুহুর্তে কমলা খাওয়া ছাড়া আর সবকিছুই মুল্যহীন ওর কাছে। রুহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ইনায়ার দিকে, ওর সামনে একটা মানুষ খুন হয়ে গেলো অথচ কোন ভাবান্তর নেই ওর?ও ভেবেছিলো পিছনে ঘুরে হয়তো ইনায়াকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখবে নাহয় ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় কিন্তু তার একটি লক্ষণও না দেখে বেশ হতাশ হলো ও। এই মেয়ে কি শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে?ধুর কি বলছি শোকে কেনো পাথর হবে! নিশ্চিত ভয়ে পাথর হয়ে গিয়েছে।

রুহান ধপ করে ইনায়ার পাশে বসলো, তারপর ইনায়ার গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকলো। ইনায়া খুব স্বাভাবিক ভাবেই খাচ্ছে কিন্তু এই স্বাভাবিকতাই কেমন যেনো অস্বাভাবিক লাগছে রুহানের কাছে। কৌতুহল সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললো

“ইনু! আর ইউ ওকে?”

“হুম আমার আবার কি হবে?”

ইনায়া নিজের কমলার দিকে তাকিয়েই জবাব দিলো, রুহান ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চিবুক ধরে মুখ উঁচু করে বললো

“তোমার ভয় লাগেনি মাত্র? এই জেইন শেখের লাশ পরে ছিলো?”

“ভয় লাগবে কেনো?আমি দ্যি গ্রেট মাফিয়া লর্ড রোয়েন লিউসের ওয়াইফ। এসব ভয় টয় পাওয়া কি আদোও মানায় আমায়? তাছাড়া এতো দিনে মি.মাফিয়া লর্ড এর সাথে থাকতে থাকতে এসব আমার অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা”

ইনায়ার এরুপ ব্যঙ্গাত্মক কথা রুহানের হজম হলো না, তাই ইনায়াকে ছেড়ে দিয়ে ওর পাশ ঘেষে বসলো। তারপর শান্ত স্বরে বললো

“তোমার খারাপ লাগছে না?আই মিন একটা মানুষকে আমি মেরে ফেলেছি…”

“বালাইষাট! খারাপ লাগতে যাবে কোন দুঃখে?আমার খারাপ লাগবে তাও ওই পেঁচামুখি লোকের জন্য?আর ইউ কিডিং মি! আর তাছাড়া এই ধরনের লোকের সাথে এমনটাই হওয়া উচিৎ। এরা বেঁচে থাকা ডিসার্ভ করে না, যাদের জন্য অন্য মানুষরা সেফ নয়। ইটস বেটার দেট হি ইজ ডেড, উফফফ সাচ আ রিলিফ!”

ইনায়ার মুখভঙ্গি দেখে রুহান হাসলো, পুরোটা সময় জুড়ে ইনায়ার পাউটি লিপ্স দেখে খুব হাসি পাচ্ছিলো। ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো কোন বাচ্চা চকলেট খেতে না পারায় মুখ ফুলিয়ে অভিযোগ করেছিলো। হঠাৎ কিছু মনে পরতেই রুহান চোখ ছোট করে ইনায়াকে বললো

“আমি ভেবেছিলাম তুমি আর কিছু করো আর না করো আমাকে হয়তো কষে থাপ্পড় মারতে পারো”

ইনায়া খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুচকে রুহানের দিকে তাকালো তারপর আবারো খাবারে মনোযোগ দিয়ে বললো

“হঠাৎ এমনটা মনে হওয়ার কারণ?”

“না মানে তুমি একজন ডাক্তার যার কাজ হচ্ছে মানুষ বাচানো আর তারই সামনে আমি একজন সোজা উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই রাগ করবে এটাই স্বাভাবিক ছিলো না?তুমিতো আবার মাফিয়াদের পছন্দ করোনা। আর আমাকে বিয়ে না করার কারণ হিসেবে এমনটাই বলেছিলে তাইনা?যে মানুষ বাঁচায় সে কি করে একজন খুনিকে বিয়ে করতে পারে!”

ইনায়া খাওয়া বিরক্ত হয়ে হাতে থাকা তিনপিস কমলা টেবিলে রাখলো, তারপর খুবই বিরস স্বরে রুহানকে বললো

“হ্যা ভাবতাম! একটা সময় ভাবতাম আপনি একটা খুনি আর আমি একজন খুনিকে ভালোবাসি কারণ মাফিয়া মানে আমার কাছে একজন খুনি ছাড়া আর কিছু নয়।কিন্তু আপনার সাথে থাকার পর আমি বুঝতে পেরেছি সব মাফিয়া এক নয়। সবাই নির্দোষ মানুষকে মারেনা। এমন কিছু জানোয়ার আর খুনি এই সমাজে আছে যারা ক্ষমতার জোরে শাস্তি থেকে বেঁচে গিয়েছে যেমন জেইন শেইখ আর তাদের শেষ করার জন্য আপনার মতো একজন মাফিয়া দরকার। আর তাছাড়া আপনি তো আর রিয়েল লাইফ ভিলেন নন!”

“আচ্ছা তাহলে কেমন ভিলেন আমি?”

“ইউ লাইক ভিলেন ইন দ্যি ফিল্ম! যেমন এক ভিলেন এর হিরো। যে মুলত ভিলেন ছিলো বাট একচুয়ালি হিরো। এন্ড জানেন আমি প্রতিদিন প্রে করতাম যাতে আমার লাইফেও এমন একজন ভিলেন আসে”

“তাইতো বলি তোমার মতো শর্টি আমার কপালে জুটলো কি করে?তোমার এই প্রে এর কারণে আমি ফেসে গেলাম”

“নিজের হাইট একটু বেশি দেখে কি ভাবেন নিজেকে?আস্তো একটা তালগাছ! খবরদার আমাকে আর শর্টি বলেছেন তো?”

“শর্টিকে শর্টি বললো না তো কি বলবো? আমার হাইট দেখছো ছয়ফুটের উপরে আর তোমারটা পাঁচ ফুটের উপরে। মাঝখানে প্রায় একফুটের গ্যাপ,তাহলে আমার অনুযায়ী তুমি শর্টি না?”

“মেয়ে হিসেবে আমার হাইট ঠিকই আছে। এখন আপনি যদি অতিপুষ্টিকর শিশু হন তাহলে সেটা তো আমার দোষ না তাইনা?আর এতোই যখন আমার হাইট নিয়ে সমস্যা তবে যান এমন কাউকে খুজে নেন যার হাইট ভালো”

রুহান ইনায়ার গাল ফুলানো দেখে মুচকি হাসলো তারপর ইনায়ার কাঁধে মাথা রেখে বললো

“এটাই তো সমস্যা আমি যে এই শর্টিকেই ভালোবাসি, বড্ড ভালোবাসি। আর এই ভালোবাসার অসুখ দিন দিন বেড়েই চলছে, আজকাল তো এমনটা হয়েছে যে তুমি একটু চোখের আড়াল হলেই বুকে চিন চিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।তোমার প্রেম প্রেম অসুখে আমি বড্ড অসুস্থ ইনু,একটু ভালো করে দাওনা আমায়”

“বাহ মশাই আজ এতো এতো প্রেম প্রেম পাচ্ছে আপনার?”

“আমার তো সবসময়ই প্রেম প্রেম পায়, তুমি বুঝোনা আরকি”

“জি জি, কিন্তু আপাদত আমি রেগে আছি”

“কেনো, কি করেছি আমি?”

“তুমি আসতে এতো দেরি করছিলে কেনো?আর একটু দেরি করলে সত্যি সত্যি সাইন করে দিতাম আমি”

“আমি এতো সহজে তোমাকে নিজের থেকে আলাদা হতে দিতাম নাকি?এতো কাঠখড় পুড়িয়ে তোমায় নিজের করলাম, নিজের কাছে বেঁধে রাখবো বুঝলে!চাইলেও কোথায় যেতে পারবে না”

ইনায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো রুহান, আর ইনায়া চুপটি করে বসে আছে। ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসার কথা শুনতে বড্ড ভালোলাগে। ও বিড়বিড় করে বললো “আমি যেতেও চাইনা”
.
.
.
____________________
.
.
.
মাঝখানে কেটে গিয়েছে পনেরো দিন, এই পনেরো দিনে অনেককিছু হয়ে গিয়েছে। ইনান তার ব্যবহারের জন্য সায়ান এবং রুহানের কাছে ক্ষমা চেয়েছে আর রুহান ইনায়ার সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। সবাই আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে ,,,
আজকে সায়রা আর আরাভের বিয়ে, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় সবাই চারহাত এক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। যেহেতু সবাইকে বলা হয়েছে যে ইনায়া রুহানের ওয়াইফ তাই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়নি বরং ইসলামিক পদ্ধতিতে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। আগামীকাল সায়রা আর আরাভের সাথে রিসেপশন হবে ওদের।

ইনায়া আজকে একটা লাল কালার শাড়ি পড়েছে আর তার সাথে মেচিং করে জুয়েলারি পরেছে। খুব বেশি একটা না সাজলেও খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। ঠোঁটের কড়া লাল লিপ্সটিকের কারণে গরজিয়াছ লাগছে। ও সায়রার ঘরে যেতেই দেখে সায়রা বউ সেজে বসে আছে, সায়রা হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা পরেছে যাতে স্টোন বসানো, হেভি ব্রাইডাল লুক, নাকে নোলক আর হাতে থাকা লাল টুকটুকে মেহেদী সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে।ইনায়াতো সায়রার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, মাঝেমাঝে হাল্কা দুষ্টুমি করেও কথা বলছে যাতে সায়রা লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে তাই কপাট রাগ দেখিয়ে বললো

“আমি যে বড়ো তা কি ভুলে গেছিস তুই?”

“তুই কিরে?আপনি করে বল। বয়সে তুই বড়ো হলেও সম্পর্কে কিন্তু আমি বড় তাই…”

ইনায়ার কথার মাঝেই একজন সার্ভেন্ট এসে বললো

“মেম আপনাকে রুহান স্যার যেতে বলেছে”

কথাটি শুনা মাত্রই সায়রা পিঞ্জ মেরে বললো

“যান যান ভাবি, আমার ভাইয়া আপনাকে দেখতে না পেরে বেচেইন হয়ে গিয়েছে”

“সায়রু বড় ভাবির সাথে এ কেমন অসভ্যতা?তোকে আমি পরে এসে দেখছি”

ইনায়া সায়রাকে শাশিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, এই লোকটি এমন কেনো ভেবে পায়না ও। যখন তখন ওকে ডাকতে থাকে আর ওকে সবার সামনে লজ্জায় পরতে হয়।পারলে যেনো নিজের সামনেই সারাক্ষণ বসিয়ে রেখে দেয় ওকে, এতো কি দেখে বুঝতে পারেনা। ইনায়া রুহানের রুমের দরজা খুললো যা বর্তমানে ওর রুমও। ঢুকেই দেখে রুহান কম্পলিট স্যুট পরে আছে, চুলগুলো পেছন দিকে ব্রাশ করা, গালে হাল্কা খোঁচা খোঁচা দাড়ি সবমিলিয়ে খুব ডেসিং লাগছে। ও কাছে যেতেই রুহান ওর হাত ধরলো তারপর বললো

“তোমার জন্যই ওয়েট করছিলাম, চলো নিচে যাই”

ইনায়া আর রুহান একসাথে নিচে নেমে আসলো, বাবার দিকে এগিয়ে যেতেই শুনতে পেলো ওদের বাড়ির সার্ভেন্ট এলেক্স এসে বলছে

“স্যার! বড় মেমকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না”

সাথে সাথে রুহানের বাবা কিছুটা এগিয়ে আসলো সেই সার্ভেন্টের দিকে, তারপর হচকিত কন্ঠে বললো

“রুশিকে পাওয়া যাচ্ছেনা মানে?”

#চলবে

(সবাইর বিয়েতে দাওয়াত রইলো, আসবেন কিন্তু☺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here