বৈবাহিক চুক্তি পর্ব -৪১+৪২

Part 41+42
#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ৪১

অন্ধকার রুমে পড়ে আছে রুশি,চারপাশে বিদঘুটে অন্ধকার ছাড়া আর কিছু ঠাউরে উঠতে পারছে না। হাত উল্টো করে বাঁধা, পা বাঁধা এমনকি মুখেও কস্টিপ লাগানো তাই মুখ দিয়ে ‘উমমম’ শব্দ ব্যতীত অন্য কিছু বলতে পারছে না। তার পাশে একজন চেয়ারে বসা যার গভীর দৃষ্টি রুশির দিকে,ঘৃণায় ক্ষিপ্ত নয়নদ্বয় চাইছে হয়তো এখনি সামনে থাকা মানুষটিকে শেষ করে দিতে কিন্তু পারছেনা। কারণ একে এখনি শেষ করে দিলে বিশেষ মজা পাবে না, আসল মজাতো এখনো বাকি!

ভেবেই তামাটে দাঁতে বিদঘুটে হাসি হাসলো,উফফ এতোকালের জমানো সব প্রতিশোধ নেয়ার পালা এখন এসেছে। এই দিনটির জন্য কতকিছু না করতে হয়েছে তাকে এমনকি নিজের বাবাকেও মেরে ফেলতে হাত কাঁপেনি তার সেখানে সামনে থাকা মানুষটিকে মারাতো বায়ে হাতের খেল!
ইশশশ ভেবেই শান্তি পাচ্ছে আজ ওর সব প্রতিশোধের সমাপ্তি ঘটবে তারপর ও মরে গিয়েও শান্তি পাবে,আজ একই ঢিলে দুটো পাখি মারবে ও। প্রথমজন রুহান আর দ্বিতীয়জন সায়ান, বাপ ছেলের মুখটা দেখতে সেই লাগবে!

সামনে থাকা লোকটির সামনে দাবা কোর্ড বসানো যাতে ও খেলছে আর প্রতিপক্ষের চালও নিজেই চালছে। অর্থাৎ এটাই বুঝানোর চেষ্টা করছে যে পুরো বাজিটা ও একা হাতেই খেলছে যেখানে অন্যকারো চাল দেয়ার সুযোগ নেই। হঠাৎ করেই প্রতিপক্ষের শেষ গুটিটা সরিয়ে দিয়ে বিজয়ের হাসি হাসলো সে,কিছুটা দুঃখ নিয়ে অস্ফুট কন্ঠে বললো

“শি ইজ ইউর মম রুহান জামিল খান,যে আজ রাতে বুমমমম”

বলেই ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো যার আওয়াজ রুশির কানে যেতেই শিরদাঁড়া কেঁপে উঠলো ওর। অন্ধকারে কিছু ঠাউরে উঠতে না পারলেও কেউ একজন এখানে উপস্থিত তা বেশ বুঝতে পারছে। হঠাৎ করে কারো পায়ের আওয়াজ খুব কাছ থেকে বুঝতে পারলো মনে হচ্ছে কেউ একজন ওর পাশেই বসে আছে,উপলব্ধি করতে পারলো কেউ তার মুখের কস্টিপ খুলে দিচ্ছে এবং চোখের উপর থাকা কাপড় সরিয়ে নিচ্ছে,এই জন্যই হয়তো সবকিছু অন্ধকার লাগছিলো। অনেকক্ষণ ধরে কাপড় বাধা থাকায় প্রথমে ঝাপসা প্রতিবিম্ব ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না, ধীরেধীরে সবকিছু স্পষ্ট হতেই রুশি তার ঠিক সামনে একজন পুরুষালি অবয়ব দেখতে পেলো, রুশি এই মানুষটিকে চিনে খুব ভালো করে চিনে কিন্তু ওকে এখানে নিয়ে আসার কারণ বুঝতে পারছে না আর তাছাড়া…
রুশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো

“আপনি মানে তুমি! বেঁচে আছো?কিন্তু এ কি করে সম্ভব?”

“চাইলেই সম্ভব! তোমার ছেলে আর হাজবেন্ড ভাবছে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু তাদের পথের কাটাকে তারা সরিয়ে ফেলেছে কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মানে আমিতো বেঁচে আছি তাইনা?”

বলেই পুর্বের সেই বিদঘুটে হাসি যা দেখে রুশির আত্মা কেঁপে উঠলো।সায়ান বা রুহান কেউ হয়তো ভাবতেই পারবে না এই লোকটি বেঁচে আছে।রুশির মনে প্রাণে সায়ানকে স্মরণ করছে, ও জানে সায়ান আসবে ওকে বাঁচাতে। প্লিজ সায়ান হারি আপ!

রুশির সামনে হাটু গেড়ে থাকা লোকটি এবার উঠে দাঁড়ালো, পুরো রুমটিতে চোখ বুলাতে শুরু করলো। এই পুরো রুমটি জুড়ে রয়েছে ওর প্রেয়সীর হাজারো ছবি! কোনটিতে হাসি মাখা মুখ কিংবা কোনটিতে হাল্কা রাগ দেখিয়ে বসে আছে, কোনটিতে আবার অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে। এই প্রেমে ও বারবার পড়েছে, হাজার বার পড়েছে, রোজ রোজ নতুন করে প্রেমে পড়ে। এই জীবনে কম মেয়ে আসেনি তবে ঠিক ওর মতো কাউকে খুজে পায়নি, প্রতিরাত কাটে নতুন মেয়ের নেশায় কিন্তু দিনশেষে সামনের মানুষটির এক মুঠো ভালোবাসা খুজে বেড়ায় কিন্তু ওকে পায়না, সকালে ঘুম থেকে উঠে ওর মুখখানি দেখতে ইচ্ছে হলেও ওকে আশেপাশে খুজে পায়না কিছুতেই পায়না। লোকটি বিড়বিড় করে বললো

“আই লাভ ইউ মোর দেন ইয়েস্টারডে বাট লেস দেন টুমোরো”

তারপর রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো,এ রুমে আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো শ্বাস আটকে মরে যাবে ও।

______________

সায়ান দ্রুত ড্রাইভ করছে,হয়তো ট্রাফিক পুলিশের নজরে পড়লে নির্ঘাত জেল হবে কিন্তু সেদিকে ওর কোন খেয়াল নেই। পারলে হয়তো উড়ে চলে যেতো রুশির কাছে,ও জানে রুশি কি অবস্থায় আছে আর কার কাছে আছে তবে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সামনে পেলে মাটিতে পুতে রেখে দিবে। ও যতোই ভালোমানুষ হতে চাইলো কিন্তু এ দুনিয়া ওকে হতে দিলো। আন্ডারওয়ার্ল্ড ছেড়েছে প্রায় আঠাশ বছর কিন্তু সে অতীত আজও ওর পিছু ছাড়ছে না, তবে তারা ভুলে যাচ্ছে সায়ান জামিল খান হয়তো এখন আর মাফিয়া নয় কিন্তু তাই বলে কি তার কেরেক্টারও বদলে গিয়েছে!স্টিয়ারিংয়ে খুব জোরে বারি মেরে বললো

“আই স্যয়ার আমি কাউকে ছাড়বো না যদি ওর কিছু হয়”

কিছুক্ষণ পুর্বে যখন এলেক্স এসে বললো রুশিকে পাওয়া যাচ্ছে না তখন সায়ানের হার্টবিট যেনো কিছু সময়ের জন্য মিস হয়ে যাচ্ছিলো, ও সারা বাড়ি তন্নতন্ন করেও রুশিকে খুজে পেলো না। প্রথমে ভেবেছিলো রুশি হয়তো মজা করছে কারণ আজ রাত বারোটার পর ওদের বিবাহ বার্ষিকী তাই হয়তো প্লেন করছে কিন্তু পুরো বাড়ি খুজে বুঝলো রুশি বাড়িতে নেই তাই ওর ফোনে ফোন করলো কিন্তু রিং হলেও কেউ তুলছে না। হঠাৎ বাড়ির সামনের বাগানে রুশির ফোন পড়ে থাকতে দেখলো, ফোন তুলে লক খুলতেই একটা ভিডিও প্লে হলো যা অটো সেট করা ছিলো।
সায়ান ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো অন্ধকারে একজন লোক বসে আছে, গাড়িতে হয়তো তার পাশেই মেয়েলি কন্ঠে হাল্কা আওয়াজ আসছে হয়তো মুখ বেধে রেখেছো কিন্তু ওর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটা রুশি। তার ঠিক পর মুহুর্তেই সেই পুরুষালি কন্ঠ বললো

“অপেক্ষায় রইলাম, ঠিকানা তোর ফোনে অলরেডি মেসেজ করে দিয়েছি। সময়মত আশিস নাহয় যেকোন কিছু ঘটতে পারে আর হ্যা একা আশিস নাহয়…”

পরক্ষনেই সেই বিদঘুটে হাসি, সায়ান কন্ঠটা ঠিক চিনতে পারছেনা, মনে হচ্ছে পরিচিত কেউ কিন্তু ঠিক কে তা বুঝতে পারছেনা। ও বেশি কিছু না ভেবে বেরিয়ে পড়লো,ফাকে একবার ফোন করে ইনানকে বললো ওইদিকটা সামলে নিতে আর রুহানকে কিছু না বলতে। ও খুব শিগ্রই ফিরে আসবে।

সায়ানের গাড়ির ঠিক হয়েক ফিট দূরেই আরেকটা গাড়ি ওকে ফলো করছে, অতিরিক্ত টেনশনে হয়তো সায়ান তা ঠাওর করতে পারছে না। হ্যা এটা আর কেউ নয় রুহান, বাবাকে গাড়ি নিয়ে বের হতে দেখেই ও তাকে ফলো করা শুরু করলো আর ওর গার্ডদের বাড়ির সবার খেয়াল রাখতে বললো। বাবার চিন্তিত ভংগি দেখে বেশ বুঝতে পারছে বড়সড় কিছু একটা হয়েছে, তাছাড়া মাম্মার হঠাৎ কি হলো তাও বুঝতে পারছে না। বাবাকে ইউটার্ন নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ভিলেজ এলাকায় ঢুকতে দেখে বুঝতে পারলো এখানেই হয়তো ওর মাম্মাকে রাখা হয়েছে। নিজের দলকে দ্রুত এখানে আসতে বলে বাবার গাড়িকে ফলো করতে থাকলো ও। ওর মাথায় এটা ঢুকছে না, জেইন শেখকে ও নিজে হাতে মেরেছে তাহলে আদোও কি তার এখানে থাকা সম্ভব? নাকি যাকে মেরেছে সে জেইন শেইখ ছিলোই না! তাছাড়া বাবার সবচেয়ে বড় শত্রু লরেন লিউসও মারা গিয়েছে নাকি সে বেঁচে আছে!ওর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। যদি এদের একজনও না হয়ে থাকে তবে ওদের নতুন শত্রু কে?যদি ওর শত্রু হতো তবে ওকে এটাক করতো ওর বাবাকে নয়, নাকি সে দুজনেরই শত্রু! কে হতে পারে সে??

সায়ান গাড়ি থামিয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লো, বাড়ির দরজায় দিয়ে বুঝতে পারলো দরজা খোলা তাই দেরি না করে ভেতরে ঢুকে পড়লো। সবগুলো রুমে খুজতে লাগলো কিন্তু রুশিকে পেলো না। দোতালার একটা রুমে ঢুকতেই রুশিকে নিচে পড়ে থাকতে দেখলো, ও দ্রুত গিয়ে রুশির মাথা নিজের পায়ের উপর রাখলো। ওর হাত খুলে দিতেই একজনের গলা শুনতে পেলো যে বলছে

“বাহ রাইট ওন টাইম?চিন্তার কিছু নেই, কিছুই করা হয়নি তার সাথে কারণ ডেকে এনেছিই তো যাতে মারতে পারি ইনফ্রন্ট অফ ইউ”

সায়ান থমকে গেলো, সামনে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো ভুত দেখছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো

“এ্ একি করে স্ সম্ভব! তুই বে্ বেঁচে আছিস?”

#পর্বঃ৪২

সায়ান নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না,যাকে ও ভেবেছিলো হারিয়ে ফেলেছে সেই আজ প্রায় অনেকবছর পর সামনে দাঁড়িয়ে।’এরেন’ ওর ভার্সিটি লাইফের বেস্টফ্রেন্ড। ইনান, এরেন আর ও তিনজন বেস্টফ্রেন্ড ছিলো কিন্তু হঠাৎ ইনানের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এরেন সবসময় ওর সাথে ছিলো এমনকি যখন ওরা ভেবেছিলো রুহান মরে গিয়েছে এর পরও এরেনের সাথে যোগাযোগ ছিলো কিন্তু এরপর আর কোন খোজ পায়নি।

সায়রা হওয়ার পর যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে এসেছে তখন এরেনের খোজ নিয়ে জানতে পারে ও একটি কার এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। সেদিন ও এবং ইনান দুজনেই খুব কষ্ট পেয়েছিলো। কিন্তু একজনের জন্য অন্যের জীবন থেমে থাকে না, সময়ের সাথে সাথে মানুষ মুভ অন করতে শিখে যায় আর বিশেষ দিন ছাড়া কখনো হয়তো মনেই পড়ে না সেই মানুষটিকে।

সত্যি বলতে এতোগুলো বছর ও এরেনকে প্রায় ভুলতেই বসেছিলো কিন্তু ওকে সশরীরে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বড্ড খুশি হয়েছে সায়ান, তাই কি ঘটছে তা যেনো মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে ওর। দ্রুত পায়ে এগিয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরলো, সায়ানের এমন কাজে এরেন বড্ড অবাক হয় এবং দু পা পিছিয়ে যায়। এই মুহুর্তে এমন কিছু হবে ভাবতে পারেনি সে।মুহুর্তেই মাথায় খেলে যায় এটা সায়ানের কোন ট্রিক নয়তো?কিন্তু কয়েকমিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন কোন কিছুর আবাস পেলো না তখন বুঝতে পারলো যা ভাবছে তেমন কিছু নয়।

সায়ান এরেনকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় বললো

“হাউ ইউ হ্যাভ বিন ডুইং দিস ডেইজ?হোয়াই…”

সায়ানের কথা মাঝপথেই থামিয়ে দিলো এরেন তারপর সায়ানের বন্ধনী থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়াল। চোখমুখ শক্ত করে বললো

“সেটা তোর না জানলেও হবে”

“তুই বাংলায় কথা বলতে পারিস?”

“শিখতেই হতো, খুব দরকার ছিলো শিখার আর তা এখন থেকে না অনেক আগে থেকে বাংলায় কথা বলতে জানি”

“তুই বেঁচে থেকেও আমাদের সাথে যোগাযোগ করিসনি কেনো?আমি আর ইনান কতোটা আপসেট ছিলাম জানিস যখন জানতে পেরেছি তুই আর নেই!”

বলেই সায়ান এগিয়ে আসতে নিলেও এরেন ওকে ধাক্কা দেয়, ধাক্কাটা বেশ জোরেই ছিলো তাই সায়ান কয়েককদম পিছিয়ে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু রুশি ধরার কারণে পড়ে যায়নি। সায়ান খুব অবাক চাহনিতে তাকালেও তা কিছুক্ষণ বাদেই আহত দৃষ্টিতে পরিণত হয় কারণ সামনের মানুষটি চোখে একরাশ ক্রোধ নিয়ে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে।
এরেন কিছু উচ্চস্বরেই বলে উঠে

“এতো আদিক্ষেতা আমার সাথে না করলেও চলবে, তোর সামনে তোর বন্ধু এরেন নয় বরং এরেন লিউস দাঁড়িয়ে আছে। তোর সবচেয়ে বড় শত্রু!”

সায়ানের দৃষ্টি কিছুটা কঠোর হয়ে যায় যখন ও বুঝতে পারে রুশিকে আর কেউ নয় ওর বেস্টফ্রেন্ড এরেন কিডন্যাপ করেছে। এরেন কিছুটা ভাব নিয়ে ওদের সামনে থাকা চেয়ারে বসে আর সেই দাবাখেলা পুনরায় খেলতে শুরু করে,গুটি সরাতে সরাতেই বলে

“সায়ান তুই বড্ড ইমোশনাল তাই তুই মানুষকে খুব সহজে বিশ্বাস করে নিস আর তারাই তোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। তুই তোর সঠিক শত্রুকেই চিনতে পারলি না এখন পর্যন্ত। এতোগুলো বছর কেটে গেছে প্রায় বাইশ বছর কিন্তু তুই হয়তো ভাবতেই পারিস নি তাইনা যে কেউ এখানে বসে তোদের লাইফের গুটি খেলছে। প্রথমে তুই ভাবলি ইনান তোর শত্রু বাট হি ওয়াজ ইউর ট্রু ফ্রেন্ড। তারপর তোর শত্রু বের হলো কে? লরেন লিউস!মানে টেকনিকালি আমার বাবা, ঠিক বাবা না সৎ বাবা। ডিডেন্ট এক্সপেক্টেড তাইনা?এক্সপেক্ট করবিও কি করে?ইউ আর এন ইমোশনাল ফুল না!তুই জানিস ওইযে তোর ইনানের বাবাকে মারার ছবিগুলো ইনানকে কে দিয়েছে জানিস? আমি দিয়েছে! কারণ লরেন লিউসের এতোটাও ক্ষমতাও নেই যে সে তোর ভিতরকার ছবি কালেক্ট করতে পারবে। তারপর লরেন লিউস তোর ছেলেকে তোর থেকে আলাদা করে দিলো বাট গেস হোয়াট এটাও আমার প্লেন ছিলো আর লরেন লিউস ছিলো আমার গুটি মাত্র। কিন্তু লরেন লিউস বিশাল ভুল করে ফেললো!”

এতোটুকু বলে দাবাকোর্ডে থাকা একটা গুটি ছুড়ে ফেলে দিলো, সায়ান পুরোটা সময় নিশ্চুপ হয়ে শুনছে কারণ ওর খুব জানার দরকার এসব কেনো করেছে এরেন? এরেন কিছুটা বাঁকা হেসে বললো

“ওর তোর ছেলের প্রতি মায়া জমে গেলো আর যেখানে ওই বম্ব ব্লাস্টে তোর ছেলের মরে যাওয়ার কথা সেখানে ও তোর ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে এলো আর বড়ো করতে লাগলো। এমনকি ওইযে ড্রাগস সেটাও তোর ছেলেকে দিতে চাইছিলো না বাট আমি বাধ্য করেছি দিতে। আমার মনে হলো ফাইনালি তোর উপর প্রতিশোধ কম্পলিট কিন্তু এই আমি লরেন লিউসের প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করলাম অথচ কি করলো? নিজের সকল সম্পদ তোর ছেলের নামে করে দিলো! সেদিন তোর সাথে সাথে তোর ছেলেকেও ঘৃণা করা শুরু করলাম। তোর ছেলেকে বেশ কয়েকবার মারতে চেয়েছি কিন্তু ওই লরেন লিউস আমাকে তা করতে দেয়নি তাই তাকেই মেরে দিয়েছি। কিন্তু ততদিনে তোর ছেলে বেশ বলিয়ান আফটার হি ইজ রুহান জামিল খান!বাট প্রতিশোধের নেশা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাই চাইছিলাম তোর ছেলের হাতেই তোকে শেষ করতে আর সেই কারণে তোর ছেলে হয়ে উঠলো ‘দ্যা মাফিয়া লর্ড’।হাহাহা সাচ আ ফুল, যেমন বাবা তেমন ছেলে, একটা দেখেই বিশ্বাস করে নিলো এটা তার বড় আব্বু লিখেছে আর তোর পিছনে লেগে পড়লো”

সায়ান এবার বুঝতে পারলো লরেন লিউস কিভাবে মরলো আর রুহানই বা কিভাবে মাফিয়া হলো আর ওকে এতো ঘৃণা করতো কেনো?সায়ানের ক্রোধ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করলো কিন্তু ওর সবটা শুনা উচিৎ তাই নিজেকে শান্ত রাখলো। দেখলো এরেন সাইকোদের মতো প্রতিপক্ষের একের পর এক দাবার গুটি সরিয়ে ফেলছে। ফাইনাল গুটি সরিয়ে বললো

“তোর ছেলের কি মনে হলো জেইন শেইখকে সরিয়ে ফেললেই সব শেষ!হাহাহা জেইন শেইখও আমার আরেকটা গুটি ছিলো যাকে আমি শুধু ইউজ করেছি। ওকে বলেছি আমি ওকে প্রটেক্ট করবো বিনিময়ে ও আমার কথামত চলবে কারণ ইনায়ার উপর নজর ওর আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু ইনানকে ওদের সম্পর্কে জানানো, রুহান মাফিয়া সেটার খবর দেয়া,ইনায়াকে ওর বিয়ের দিন যাতে তোমার ছেলে বেঁচে আছে এটা তোমাদের না বলে সেটা নিয়ে ব্লেকমেইল করা এমনকি জেইনের সাথে তোর মেয়ের বিয়ের ছবি আমিই পাঠয়েছি যদিও সেটা এংগেজমেন্ট ছিলো কিন্তু ইনানের মেয়ে জানতো সেটা বিয়ের ছবি। উফফ কতোকিছু করতে হয়েছে আমাকে”

বলেই ঘর কাঁপিয়ে হাসলো তারপর আবার বলে উঠলো

“তোর মেয়েকে সেদিন কে কিডন্যাপ করেছে জানিস?আমি করেছি যাতে তুই আসিস কারণ আমি জানতাম তোর ছেলেতো আসবেই সেখানে বন্ধুর প্রেমিকার জন্য। আর ব্যস সেখানে তোর ছেলে তোকে খতম করে দিবে। কিন্তু সব ভেস্তে দিলো তোর বউ, সেই ওইসময় না আসলেই হয়তো তুই এতোক্ষনে…কিন্তু আমার প্লেন ভেস্তে গেলো তাই ভাবলাম ইনায়াকে দিয়ে প্রতিশোধ নিবো কিন্তু পরে ভাবলাম তাতে রুহান সাফার করবে কিন্তু রুশিকে দিয়ে প্রতিশোধ নিলে তোরা বাপ ছেলে দুজনেই সাফার করবি তাই এতোকিছু করা আর ফাইনালি তুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আর তোর ছেলেও মেইবি এতোক্ষনে হাজির হয়ে গিয়েছে”

এরেন এবার উঠে দাঁড়ালো আর সায়ানের কিছুটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো

“সো…হাউ ওয়াজ মাই প্লেন?জানতে ইচ্ছে করছেনা আমি এতোকিছু কেনো করলাম?যা তোকে এটাও বলে দেই”

রুহান এতোক্ষন দরজার বাইরে থেকে সবটাই শুনেছে আর এখন মনে হচ্ছে ওর হিসাব মিললো। কারণ রুহান যখন জেইন শেইখের সম্পর্কে খোজ নিয়েছিলো তখন তার সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কোন সম্পর্ক খুজে পায়নি অথচ বাড়িতে যে গার্ডগুলো ছিলো গ্রাহাম ব্যতীত বাকি সবার হাতে যে ট্যাটু ছিলো তাতে বুঝা যাচ্ছিলো তারা আন্ডারওয়ার্ল্ডের আর তারা ওর থেকেও পাওয়ারফুল দলের যাদের জাপানিজে “ইয়াকুযা” বলা হয়। ওরা মুলত আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি ইন্ডিভিজুয়াল গেংস্টার দল যারা খুব পাওয়ারফুল ইভেন মাফিয়াদের থেকেও।এরা এতোটাই ডেঞ্জারাস যে এরা মাঝেমাঝে নিজেদের শাস্তি দেয়ার জন্য নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলে,এদের সাইকো টু এনাদার লেভেল বলা চলে।

আর রুহান এতোকাল তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলো কিন্তু তাদের কিং পর্যন্ত কখনো পৌঁছাতে পারেনি। যেদিন রাতে ও ইনায়ার কাছে আহত অবস্থায় গিয়েছিলো সেদিন ও এই মিশনে ছিলো কিন্তু তাদের শক্তি বেশি হওয়ায় রুহান তাদের সাথে পেরে উঠেনি তাই মাঝপথেই ফিরে আসতে হয়েছে। রুহান খুব গভীরভাবে এরেনের দিকে তাকালো, এই লোকটিকে কখনোই রুহানের ভালো লাগতো না। ইভেন বড় আব্বু বলেছিল তার থেকে দূরে থাকতে, আর যা বললো তাতে এটাই বুঝা যাচ্ছে আর যাইহোক বড় আব্বু ওকে ঘৃণা করতো না বরং ভালোবাসতো আর সেই ওকে বাচিয়েছে। কিন্তু এই লোক…হঠাৎ রুহান খুব গভীরভাবে কিছু একটা দেখলো আর ও থমকে গেলো।

#চলবে
(today’s lesson:
________________
never trust someone blindly cause the most dangerous thing is to have a fake friend.A wrong friend can ruin your entire life.So choose your friends rightly💜)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here