বৌপ্রিয়া পর্ব -১২+১৩

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১২|

কুসুমের সে রাতে এক ফোঁটাও ঘুম হল না। সম্পূর্ন রাত বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে বন্ধ ফোনের দিকে চেয়ে ছিল। ঘুম ধরা দিল একদম শেষ রাতে। সকালে সাহেদা মেয়েকে জেগে তোলার চেষ্টা করলেন। বাড়িঘর পরিষ্কার করছেন, ধোয়ামোছা করছেন, কত কাজ তার। অথচ কুসুম কি না বাড়ির মেয়ে হয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। সাহেদা শেষবারের মত কুসুমকে ডেকে গেলেন। জানালার পর্দা মেলে দিতে দিতে বললেন,

‘ উঠে পর কুসুম। ওরা এই আসলো বলে। এসে তোকে ঘুমাতে দেখল বিশ্রী লাগবে ব্যাপারটা। জলদি জলদি বিছানা ছাড়। ‘

সারারাত না ঘুমানোর কারণে কুসুমের চোখ লালচে হয়ে আছ। তীব্র মাথা ব্যথায় সে কাহিল। কুসুম গায়ের কাথা খামচে ধরে পাশ ফেরে। বিড়বিড় করে ঘুমন্ত কণ্ঠে আওড়ায়,

‘ এ-এ-এখন না। আ-আরেকটু ঘ-ঘুমাই না? ‘

সাহেদা শুনতে পান না কুসুমের কথা। দরজার পাশে থেকে উষা তাড়া দিচ্ছে, ওরা এসে গেছে। সাহেদা হাতে থাকা কুসুমের ওড়না ভাঁজ করে আলমারিতে তুলে দ্রুত মাথায় আঁচল তুলে বেরিয়ে যান বসার ঘরের দিকে এগিয়ে যান। কুসুম এখনো গভীর ঘুমে মগ্ন।

দরজার ওপাশে উচ্ছ্বাস ও তার পুরো পরিবার দাড়িয়ে আছে। উচ্ছ্বাস সাহেদাকে দেখেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। মৃদু হেসে বলল,

‘ খালামনি, কেমন আছো? ‘

সঙ্গেসঙ্গে উচ্ছ্বাসের মা পারুল ছেলের পিঠে থা/প্পড় বসান। চমকে উঠে উচ্ছ্বাস। সাহেদাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় মায়ের দিকে প্রশ্নবোধক চোখে চায়। পারুল মুখ কুঁচকে বলেন,

‘ খালামনি কি? আম্মা বলবি। ‘

সাহেদা হেসে উঠেন। উচ্ছ্বাস অসহায় চোখে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,

‘ সদ্য বিয়ে হয়েছে, আম্মা। কিছু সময় তো দাও। খালামনিকে আম্মা বলতে লজ্জা লাগছে আমার। ‘

পারুল ভ্রু কুচকান। সাহেদা পারুলের কাঁধে হাত রেখে বলেন,

‘ ধুর। তোমার এসব ঢং বন্ধ করো তো আপা। খালামণিই ঠিক আছে। ‘

তারপর উচ্ছ্বাসের ঘন চুলে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘ কতদিন পর দেখলাম। বড় ছেলে হয়ে গেছিস। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু হাসে। মাথা চুলকে সরে আসে সাহেদার থেকে। সাহেদা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলেন, ‘ ভেতরে আয়। এই ভেতরে আসো সবাই। ‘

একে একে সবাই ঘরে প্রবেশ করে। সাহেদা দরজা বন্ধ করে এগিয়ে যান সবার দিকে। সবাই সোফায় বসে। উচ্ছ্বাস সোফায় বসে এদিক ওদিক চায়। তারপর গলা কেশে আবারও সাহেদার দিকে তাকায়। একটু পর উষা আসে সবার জন্যে শরবত নিয়ে। সবাইকে শরবত দিয়ে উচ্ছ্বাসের দিকে শরবত এগিয়ে দেয়। উচ্ছ্বাস শরবতের গ্লাস নিতে গেলে উষা ফিসফিস করে বলে,

‘ ঘরে ঢুকেই কাকে খুঁজছিলে? ‘

উচ্ছ্বাস হেসে বলে, ‘ কাউকে খুঁজছিলাম নাকি? ‘

‘ অভিনয় করছ? লাভ নেই। যাকে খুঁজছ সে ঘুম দিচ্ছে। নিজে গিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে আসলে তবেই উঠবে বলে মনে হচ্ছে। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু হেসে গ্লাসে চুমুক দেয়। মুখ তুলে বলে, ‘ নাইস জুস। ‘

উষা প্রতিউত্তরে হেসে রান্নাঘরে চলে যায়। কুসুম ঘুমে শুনে উচ্ছ্বাসের মনে কোনো ভাবাবেগ হল বলে মনে হচ্ছে না উষার। উচ্ছ্বাস আগের মতোই সবার সঙ্গে কথা বলছে। উষা বিভ্রান্ত হল। কুসুম-উচ্ছ্বাসের সম্পর্ক কি এখনো স্বাভাবিক হয়নি? আশেপাশে পারুল কুসুমকে না দেখে সাহেদাকে প্রশ্ন করেন,

‘ হ্যা রে! কুসুম কই? ‘

সাহেদা অপ্রস্তুত হয়ে যান। বলেন, ‘ ঘুমাচ্ছে। দাঁড়াও, ডেকে আনছি।’

সাহেদা সোফা থেকে উঠে যেতে যান। তবে পেছন থেকে পারুল সাহেদার হাত টেনে ধরেন। বললেন,

‘ তুই যাচ্ছিস কেন? তুই আমার সঙ্গে গল্প কর। উচ্ছ্বাসের তো এখানে বসে কোনো কাজ নেই। ও গিয়ে ডেকে আনুক না? ‘

পারুল কথা বলে উচ্ছ্বাসের দিকে চান। উচ্ছ্বাসকে ইশারা করে বললেন,

‘ যা তো, কুসুমকে ডেকে নিয়ে আয়। ঘুমাচ্ছে ও। ‘

উচ্ছ্বাস অপ্রস্তুত হয়। গলা কেশে বলে, ‘ আমি যাব? ‘

পারুল চোখ রাঙান। বললেন,’ না, তোর বাপ যাবে। যা ডেকে নিয়ে আয় কুসুমকে। ‘

মায়ের রাগী কণ্ঠ শুনে উচ্ছ্বাস থতমত হয়ে যায়। গায়ে গতরে এবং বয়সে সে যতই বড় হয়ে যাক না কেন! মা’কে এখনো উচ্ছ্বাস অনেক ভয় পায়। মায়ের কথা সহজেই ফেলে দিতে পারে না। অতিরিক্ত সম্মান করে নিজের মাকে। তাই সে দ্রুত সোফা থেকে উঠে টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে বলে, ‘ খালামনি, আমি যাচ্ছি। তুমি গল্প করো। ‘

পারুল লুকিয়ে হাসেন। উচ্ছ্বাস এগিয়ে যায় কুসুমের ঘরের দিকে। ঘরের দরজা হালকা ভিড়িয়ে রাখা। উচ্ছ্বাসের মনে পরে যায় তিন বছর আগের কথা। ঘরের দরজা এমন করে সেদিনও ভিড়িয়ে রাখা ছিল। তারপর সেদিন দরজা খুলে ভীষন অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পরে যায় উচ্ছ্বাস-কুসুম দুইজনেই। আজকে এই ভুল করবে না উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বাস দরজার টোকা দেয়। একবার দুইবার, তিনবার। ভেতর থেকে সাড়া আসে না। কুসুম কি ঘুমাচ্ছে এখনো? অগ্যতা উচ্ছ্বাস দরজা খুলে দেয়। ভেতরে প্রবেশ করে। সহসা চোখ যায় বিছানার উপর লম্বা করে শুয়ে থাকা কুসুমের দিকে। যার চোখ বন্ধ, দুই চোখের পাতায় রাজ্যের ঘুম ভর করে আছে, শরীরে ওড়না নেই, কামিজের অবস্থা খারাপ। উচ্ছ্বাস আবারও অপ্রস্তুত হয়। তারা কাগজের দিক থেকে স্বামি স্ত্রী হলেও মনের দিক থেকে এখনো দুজন একে ওপরের কাজে অজানা, অচেনা। দুজনের মধ্যে বিস্তর ফারাক এখনো রয়ে গেছে। তিন বছর অগণিত বার মোবাইলে কথা বলার পরও এই দূরত্ব ঘুচে যায়নি। কুসুমকে এমন ছন্নছাড়া ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে উচ্ছ্বাসের বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টি নরম হয়ে আসে। উচ্ছ্বাস অন্যদিকে মাথা নিয়ে ঢোক গিলে। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে আসে কুসুমের দিকে। কুসুমের পাশে চেয়ার টেনে বসে। আশেপাশে চোখ রেখে খুঁজে কিছু একটা। বিছানার এক কোণে পরে থাকা ওড়না পেয়েও যায়। উচ্ছ্বাস সেটা হাতে নিয়ে কুসুমের গায়ে জড়িয়ে দেয়। হাত বাড়িয়ে কামিজ ঠিক করে দেয়। এসব করেছে তার পেছনে একটা কারণও আছে। উচ্ছ্বাস এখন কুসুমকে ডেকে তুলবে। উচ্ছ্বাসকে দেখে প্রথমে কুসুম চমকাবে ভীষনভাবে। তারপর সহসা নিজের শরীরের দিকে তাকাবে। তখন যদি শরীরের জামা কাপড় ঠিক না দেখে, নিজেও যেমন অপ্রস্তুত হবে। সেই পরিস্থিতি উচ্ছ্বাসকেও বিভ্রান্ত করবে। তাই উচ্ছ্বাস আগেভাগেই সতর্ক করে রাখল সবকিছু।
উচ্ছ্বাস এগিয়ে আসে। কুসুমের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে মৃদু স্বরে ডাকে, ‘ কুসুম, উঠো। এই কুসুম? কুসুম? ‘

পুরুষালি চেনা কণ্ঠ শুনে ঘুমের মধ্যেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে। কে এসেছে? কুসুম যাকে ভাবছে সেই কি? কুসুমের তর সয় না। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। চোখের সামনে কাঙ্ক্ষিত পুরুষ ঝুঁকে আছে। যার পুরুষালি হাত কুসুমের চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টি কুসুমের চোখেমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কুসুম চমকে উঠে।
‘ও আল্লাহ! ‘ বলে চেঁচিয়ে উঠে দ্রুত শোয়া থেকে বসে যায়। কুসুমের আচমকা চেঁচানোতে ঘাবড়ে যায় উচ্ছ্বাস। মুখ সরিয়ে এনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় কুসুমের দিকে।
#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৩|

কুসুমের চোখ ছানাবড়া। উচ্ছ্বাসের কুচকানো ভ্রু আপাতত সোজা হয়ে আছে। কুসুমের মুখের অভিব্যক্তি আপাতত তার বড্ড মজা লাগছে। উচ্ছ্বাস নড়েচড়ে বসে। বিস্মিত কুসুমের বাকি আচরণটুকু দেখার জন্যে সে বেশ আরাম করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। পা দুটো মেঝেতে ছড়িয়ে রেখে মৃদু হেসে কুসুমের দিকে চেয়ে রয়। কুসুম এখনো মুখে হাত চেপে বসে আছে। একবার এগিয়ে এসে উচ্ছ্বাসের গায়ের সঙ্গে লেগে বসে। উচ্ছ্বাসের পেশীবহুল বাহুতে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে। মৃদু স্বরে বলে, ‘ এটা সত্যি আপনি? ‘

কুসুমের আচরণে হাসি পাচ্ছে উচ্ছ্বাসের। উচ্ছ্বাস টিপ্পনী কেটে বলে,

‘ না তো। আমার ভূত। ভয় দেখাতে এসেছে তোমায়। ভয় দেখাই? ‘

কুসুম এবার বুঝতে পারে, তার আকাঙ্ক্ষিত উচ্ছ্বাস ভাই সত্যি সত্যি এসেছেন। কুসুম সোজা হয়ে বসে। খুশিতে সে উন্মাদ! থরথর করে কেঁপে উঠে কুসুম প্রশ্ন করে,

‘ আপনি কখন এসেছেন? কিভাবে এলেন? কালকে কথা হয়েছে। কিছু বললেন না। বাড়ির সবাই বলল আপনি আসবেন না এখন। আজকে কোথা থেকে এলেন? কিভা… ‘

উচ্ছ্বাস হাত বাড়িয়ে কুসুমের গাল ছুঁয়ে দেয়। চোখ পিটপিট করে কুসুম। উচ্ছ্বাস শান্ত স্বরে বুঝায়,

‘ ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট! কুসুম, রিলাক্স। শান্ত হও। আমি উত্তর দিচ্ছি তোমার সব কথার। রিলাক্স। ‘

কুসুম জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর নিজেকে শান্ত করে বলে,

‘ সব খুলে বলুন আমায়। আমি জানার জন্যে খুব এক্সাইটেড। ‘

উচ্ছ্বাস হাসে। বলে,

‘ আমার ফ্লাইট পরশু ছিল। তোমার সঙ্গে যখন কথা বলেছি তখন আমি গাড়ি করে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম। সবাই বলল তোমাকে সারপ্রাইজ দেবার কথা। তাই কিছু জানাই নি তোমাকে। আজকে ঢাকায় নেমে সোজা মা’কে নিয়ে এখানে চলে এসেছি। সারপ্রাইজ হলে? ‘

কুসুমের চোখে নিছক জল জমে। কুসুম হেসে বলে,

‘ খুব। কিন্তু বাড়ির সবাই যে বলল আপনি ডিসেম্বরে আসবেন? ‘

উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে বলে, ‘ বলেছে নাকি? আমি জানিনা সেটা। ওরা তো জানে আমি আজকে আসব। ‘

কুসুমের রাগ হয় বাড়ির লোকদের উপর। ওর সঙ্গে সবাই কি জঘন্য মজাটাই না করল। সবাইকে একটু পর গিয়ে ধরবে কুসুম। সবার আগে গলা চেপে ধরবে উষা আপার। সেই তো কুসুমকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে। রাগে কুসুম উচ্ছ্বাসের মোবাইলে রাগান্বিত মেসেজ পাঠিয়েছিল। মেসেজ কি দেখেছিল উচ্ছ্বাস? কুসুম প্রশ্ন করে,

‘ আপনি গতকাল মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। দেখেছেন? ‘

উচ্ছ্বাস এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠে। কুসুম বোকা বনে যায় সেই হাসি দেখে। উচ্ছ্বাস এগিয়ে এসে কুসুমের গাল টেনে বলে,

‘ বোকা মেয়ে। বড় হয়ে রাগ বেড়ে গেছে। ছোট থাকতেই তো ভালো ছিলে। যা বুঝাতাম তাই বুঝতে। এখন আর এরকম করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। ‘

কুসুম গালে হাত দিয়ে থম হয়ে চেয়ে থাকে তার দুষ্টু উচ্ছ্বাস ভাইয়ের দিকে। তারপর দুঃখ পেয়ে বলে,

‘ আপনি রেগে গিয়েছিলাম বাড়ির সবার কথায়। তাই এমন মেসেজ পাঠিয়েছি। সরি। ‘

উচ্ছ্বাস প্রশ্ন করে, ‘ এখন রাগ কমেছে? ‘

কুসুম মৃদু স্বরে মাথা নামিয়ে বলে, ‘ হু। ‘

উচ্ছ্বাস আবারও গাল টেনে ধরে কুসুমের। হেসে বলে, ‘ দ্যাটস লাইক অ্যা গুড গার্ল। ‘

কুসুম গাল ঘষে বলে, ‘ বারবার গাল টানছেন কেন? আমি এখনো বাচ্চা নই। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু স্বরে বলে,

‘ সেটা ঠিক। অনেক বড় হয়ে গেছ তুমি। কিন্তু আগের চেয়ে কিছুটা মোটা হওয়ায় তোমার গাল দুটো ফুলে বড্ড কিউট লাগছে। বারবার টানতে মন চাচ্ছে। আ’ম হেল্পল্যাস। ‘

কুসুম হেসে উঠে উচ্ছ্বাসের কথা শুনে। কুসুমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্ছ্বাসও হাসে। কুসুম তার উচ্ছ্বাস ভাইয়ের সুন্দর হাসির দিকে অপলক চেয়ে থাকে। আচ্ছা, উচ্ছ্বাস ভাইকে কি এখনো ভাই বলবে কুসুম। স্বামীকে কেউ বুঝি ভাই ডাকে? কিন্তু ভাই না বললে কি বলে ডাকবে কুসুম তাকে। নাম ধরে? ছিঃ, ছিঃ! কেমন শোনাবে। তাহলে কি বলে ডাকবে তাকে? কুসুম আজকে রাতে বসে উচ্ছ্বাস ভাইয়ের নতুন নাম তৈরি করবে। সুন্দর এবং তার সুদর্শন উচ্ছ্বাস ভাইয়ের সঙ্গে মানানসই নাম।

দুজন বহুদিন পর এক হয়েছে। কুসুমের কথার ফুলঝুরি ছুটেছে উচ্ছ্বাসের সামনে। উচ্ছ্বাসও বেশ ধৈর্য্য সহকারে কুসুমের সব কথা শুনছে এবং উত্তর দিচ্ছে। দরজায় টোকার শব্দে দুজনের ধ্যান ভেঙে যায়। কুসুম সোজা হয়ে বসে। উচ্ছ্বাস বসে থাকা অবস্থায় বলে,

‘ টোকা দিতে হবে না। দরজা খোলা আছে। ভেতরে আসো। ”

দেখা গেল শিউলি ঘরে ঢুকছে। মুখে চোখে দুষ্টুমি নিয়ে একবার কুসুমের দিকে চাইছে তো আরেকবার উচ্ছ্বাসের দিকে চাইছে। কুসুম শিউলির এমন দুষ্টু চাহনি দেখে লজ্জায় ঝিমিয়ে গেল। উচ্ছ্বাস অবশ্য নিরুত্তর। সে সূক্ষ চোখে বাম হাতের নখ দেখতে দেখতে প্রশ্ন করল, ‘ কি রে! আম্মা ডেকেছে? ‘

শিউলি এসে কুসুমের পাশে বসল। উচ্ছ্বাসের গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে তীক্ষ্ম কণ্ঠে বলল, ‘ হ্যাঁ ডেকেছে। প্রথমদিনেই যেভাবে চিপকে আছো। ডাকবে না? আম্মার তো লজ্জা আছে। ‘

উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে চায় শিউলির দিকে। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। গায়ের ফকফকা সফেদ রঙের টিশার্ট টেনে ঠিক করে। এগিয়ে এসে শিউলির মাথায় চপাট করে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,

‘ বেয়াদব মেয়ে। তোর বড় ভাই না আমি? বড় ভাইয়ের সঙ্গে কেউ এমন মজা করে? আরেকবার দেখলে ধরে ঠাটিয়ে চড় বসাব। ‘

শিউলি মুখ ফুলে তাকায়। উচ্ছ্বাসের দিকে অভিমান নিয়ে চেয়ে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। উচ্ছ্বাস কুসুমের দিকে একপল চেয়েই বেরিয়ে যায় কুসুমের ঘর থেকে।

কুসুম শিউলির গালে হাত রাখল। শিউলির টলমলে চোখে চোখ রেখে মিষ্টি করে বলল, ‘ থাক। দুঃখ পেও না। জন্মের সময় মধু খাওয়ানো হয়নি তাই সবসময় এমন তেতো কথা বলে। এসব ছোটখাটো কথায় রাগ করতে নেই। ‘

শিউলি উত্তর দেয়, ‘ এত বছর পর এসে প্রথমদিনেই থাপ্পড় দিল। বাসায় গিয়ে ওকে আমি দেখো কি করি। আমাকে চেনে না! ‘

কুসুম দীর্ঘশ্বাস চোখে শিউলির দিকে তাকায়। ভাই-বোন কেউ কারোর চেয়ে কম না।
______________________________
রাতে খাবার টেবিলে বসে বড়দের মধ্যে কুসুম-উচ্ছ্বাস এর বিয়ের কথা উঠল। সাহেদার ভাষ্যমতে, এখনি মেয়ে তুলে দেবে না। কুসুমের ভার্সিটি শেষ হলে তবেই উচ্ছ্বাসদের ঘরে তুলে দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু পারুল এই বিষয়টা মানতে নারাজ। তার মতে, উচ্ছ্বাসের বয়সের হয়ে যাচ্ছে। এখনি সংসার করবে না তো কখন করবে? সাহেদা এই কথা শুনে কাচুমাচু করছেন। বিয়ে করে উঠিয়ে দেওয়া মানে, বছর ঘুরতেই কুসুমের গর্ভধারণ। আর সাহেদা এই বিষয়েই ভয় পাচ্ছেন। কুসুম এখনি ফিজিক্যালি অনেক দূর্বল। এই বয়সে বিয়ে করে বাচ্চা নেওয়া ঝুঁকির ব্যাপার তার জন্য। মা হয়ে মেয়ের জীবনে ঝুঁকি তো আর সাহেদা নিতে পারেন না। কিন্তু লজ্জার কারণে সবার সম্মুখে এই কথা তুলতে পারছেন না সাহেদা। এদিকে পারুল এবং তার স্বামী দুজনেই কুসুমকে এই মাসের মধ্যে ঘরে তোলার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছেন। কি করবেন সাহেদা। বুঝতে পারছেন না কিছুই। খাবার টেবিলে দুই বোনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা দেখে উচ্ছ্বাস বিরক্ত হয়ে বলে,

‘ আম্মা, খালামনির সঙ্গে আলাদা করে তুমি কথা বলো। দুজনের মধ্যে সমস্যা মিটমাট হয়ে গেলে তবেই আমি কুসুমকে ঘরে তুলব। একজনের অসন্তুষ্টি নিয়ে আমার বউ আমি ঘরে তুলব না। এবার শান্তিতে সবাইকে খেতে দাও। ‘

উচ্ছ্বাসের কথা শুনে বড়রা চুপ হয়ে গেলেন। সাহেদার মনের মধ্যে তবুও খচখচানি থেকেই গেল। পারুল যেভাবে চেপে ধরে আছে সাহেদাকে। সেভাবে মনে হচ্ছে কুসুমকে ঘরে তুলে তবেই সে নিস্তার দেবে। এদিকে মেয়েকে স্বামীর ঘরে তুলে দেবেন না সাহেদা। হয়ত এই বিষয় নিয়ে দুই বোনের মধ্যে ছোটখাটো মনোমালিন্যও হয়ে যেতে পারে। সাহেদা এই বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু যাই হয়ে যাক না কেন! মেয়ের জীবনের উপর তিনি কোনরূপ ঝুঁকি নেবেন না মানে নেবেন না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here