ব্লাক ডায়মন্ড পর্ব ৭

#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-০৭

____________________

” রুদ্র ইরার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে এনগেজমেন্ট রিং টা পরিয়ে দিলো। ইরার হাতে এনগেজমেন্ট রিং টা জ্বলজ্বল করে জ্বলছিলো আর মীরার বুকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিলো।

এ দৃশ্য দেখবার পর থেকে মীরার মাথা ঘুরছে, শরীরটা ভীষণ কাঁপছে।
পরে যেতে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সিঁড়ির রেলিংটাকে কোনোমতে ধরে ফেললো মীরা।

মীরা কি দেখছে এসব যেনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
রুদ্র ভাই তাহলে ইরা আপু কে ভালোবাসে সে জন্যই বুঝি আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে ।
সেজন্যই বুঝি প্রতি কদমে কদমে দোষ খুঁজে বেড়াতো।
মীরার মাথাটায় প্রচন্ড চাপ অনুভব করছে, বুকের ভেতর এক অদ্ভুত ব্যাথা এসে জানান দিচ্ছে।
মীরা ইরার দিকে তাকালো। ইরাও রুদ্রের হাতে রিং পরিয়ে রুদ্র ভাইয়ের হাতটাকে নিজের হাতে নিয়ে চোখে চোখে অনেক কথা বুঝিয়ে দিলো, যা মীরার চোখ এড়ালো না।

– মীরা সিঁড়ি বেয়ে যে-ই উপরে চলে যেতে নিলো, পেছন থেকে কেউ মীরা বলে ডেকে উঠলো।
মীরা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলো রুদ্র ভাইয়ের আম্মা।

এই একজন মানুষের আবদার মীরা কখনো ফেলতে পারেনা, যে কোন কিছু কে অগ্রাহ্য করে হলেও তাঁর ডাকে সাড়া দিতে হয় মীরাকে।

মীরা নিচে নেমে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এগিয়ে আসতে লাগলো আন্টির দিকে।

-ইরা মীরা কে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বললো, মীরা তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এতো কিছু করা, এখন বল কেমন লাগলো?

– মীরা মনে মনে খুব হাসলো, আর বললো, আপু আমি যে কখনো এতোটা সারপ্রাইজড হবো কখনো ভাবিনি।
জীবনে এই প্রথম এতো বড় সারপ্রাইজ পেলাম তা-ও রুদ্র ভাই থেকে।

মীরা এক নজর রুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো রুদ্র ভাইকে আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে।
খুশির আমেজে আজ উনি আপ্লুত।
ছলছল চোখে মীরা সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

রুদ্র ভাই মীরার দিকে তাকিয়ে মীরা বলে ডেকে উঠলো।

মীরা পেছন ফিরে রুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালো।

মীরা তুই বলতো আজ ইরাকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে না?
আমি বার-বার করে বলছি কিন্তু ইরা বিশ্বাস ই করতে চাইছে না।

মীরা মনে মনে বললো, আপু বিশ্বাস করতে হবে না রুদ্র ভাই, আপনি সুন্দর বলেছেন এটাই বা কম কিসে?

কিরে তুই কি চাঁদের দেশে হারিয়ে গেলি?

রুদ্রের কথায় মীরার ধ্যান ভাঙে।
রুদ্র ভাই আমিও যে চাই হারিয়ে যেতে, হারাতে পারলে খুবি ভালো হতো, আমিও চাই আজকের পর থেকে হারিয়ে যেতে, দূরে বহুদূরে। কথাগুলো মনে মনে আওড়ানোর সময় মীরার বুক ফেটে আর্তনাদ আসছে, যে আর্তনাদ কেউ শুনতে পাচ্ছে না।

মীরা রুদ্রের দিকে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে বললো, আপু সত্যি তোমাকে একদম পরী লাগছে শুধু দু’টি ডানা লাগিয়ে দিলেই পরীর পূর্ণতা পেয়ে যাবে।

” ইরা মীরার গালে আলতো করে হাত রেখে বললো, মীরা আমার দিকে তাকা?

ইরার কথা শুনে মীরার ভয় হতে লাগলো, যদি ইরা কিছু বুঝে পেলে সেই ভয়ে।
মীরা মনের সব ব্যাথা লুকিয়ে ইরাকে জড়িয়ে ধরে বললো, সত্যি আপু আমার খুবি ভালো লাগছে রুদ্র ভাইয়ের সাথে তোমায় বিয়ে হবে বলে।

ইরাও মীরাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো।

-ইরার খুশি ভেবে মীরা নিজেকে সংযত রেখে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বললো।

” সব ব্যাথা দেখাতে হয়না, কিছু ব্যাথা মনের গভীরে লুকায়িত থাকে যা শুধু ক্ষণেক্ষণে মনে পরে আর দু’চোখ ভিজে উঠে।
মীরারও হয়েছে সেই কঠিন দশা চাইলেও
দেখাতে পারছেনা কঠিন ব্যাথা, যে ব্যাথায় নিজেই জ্বলেপুরে শেষ হচ্ছে মীরা ।
মীরা মায়ের সাথে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে এমন সময় মীরা রুদ্র ভাইকে দেখে চমকে গেলো।

– রুদ্র ভাই মীরাকে বললো, কিরে আজ-কাল কি তোর কাছে আমাকে ভূতও মনে হয় দেখছি, দেখলেই চমকে উঠিস?
ক’দিন পর না জানি আর কি কি মনে হয়।

” মীরা রুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনাকে তো আমার অনেক কিছুই মনে হয় রুদ্র ভাই, কিন্তু আমাকেই তো আপনার কাছে কিছুই মনে হয় না।
মীরা রুদ্র ভাইয়ের দিকে অভিমানী চোখে তাকিয়ে কোনো কথার জবাব দিলো না ।

রুদ্র ভাই আবারও মীরা কে বললো কিরে তুই কি কোনো কথা শুনতে পাসনা, না-কি না শুনবার অভিনয় করছিস?
না-কি নিজেকে মহারাণী এলিজাবেথ মনে করছিস।

” মীরা রুদ্রের কোনো কথার জবাব না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।”

“মীরার এমন কর্মকাণ্ডে রুদ্র ভাই মেজাজ খারাপ করে মীরার হাত মুচড়ে ধরলো।

-রুদ্র এতোটাই জোরে চেপে ধরলো যে, মীরার চোখ দিয়ে পানির ফোয়ারা নামতে লাগলো।

রুদ্র দাঁত কটমট করে বলতে লাগলো, মনে তো হচ্ছে তুই অনেক বাড় বেড়ে গেছিস,কেটে তোকে ছাঁটাই করতে হবে দেখছি।
দিন দিন দেখি তুই মহা রানীর ভাব নিচ্ছিস?

-মীরা রুদ্রের দেওয়া ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো, রুদ্র হাত ছাড়েন লাগছে আমার?

-রুদ্র চোখ-মুখ লাল বর্ন ধারণ করে বলতে লাগলো, লাগবার জন্যই তো দিয়েছি, আদর করবার জন্য তো নয়। তুই ভেবেছিস কি, নিজে নিজে মহারাণী ভাবলেই তুই মহারাণী হয়ে বসে থাকবি?
কিসের এতো দেমাগ দেখাচ্ছিস বলতো?
আসবার পর থেকে তোর সাথে কথা বলেই যাচ্ছি কিন্তু তুই একটা কথারও ঠিকভাবে জবাব দিচ্ছিস না?
কারণ টা কি বলতো, কারো সাথে ভেগে যাওয়ার প্ল্যান করছিসনা নাতো আবার?

– রুদ্রের কথা শুনে মীরার কলিজা ধক করে উঠলো।
শেষ পর্যন্ত রুদ্র ভাই অপবাদ দিতেও কুণ্ঠিত হলো না।
রুদ্র ভাই কারো সাথে ভাগবার ইচ্ছে থাকলে অনেক আগেই ভেগে যেতাম আমি কিন্তু মীরার ভাগবার কোনো দরকার নেই, মীরার মা-বাবার উপর মীরার অনেক বিশ্বাস ও ভালোবাসা আছে।
তাঁরা কখনো তাদের মেয়ের ভালোবাসা না করবে না, তাই ভাগবারও দরকার নেই।
মীরা রুদ্র ভাইয়ের দিকে শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে বললো, রুদ্র ভাই কারো সাথে আমার রিলেশন নেই।

– রুদ্র ভাই মীরার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, তোর রিলেশন নেই, তাও তুই আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিস?
আমি বিশ্বাস করিনা,করবোনা কখনো, তুই চিৎকার করে গলা ফাটালেও না।

” মীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনকে বললো, রুদ্র ভাই আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন আমি যে শুধু আপনাকেই ভালোবেসে মরেছি একবার দু’বার নয়, হাজার বার,লক্ষ কোটি বার। আর আমি এটাও জানি আপনি যে কখনো আমার কোনো কথা বিশ্বাস করেন না।

__________________

সন্ধ্যা প্রায় ছুঁই ছুঁই।

অনুষ্ঠানের সবকিছু শেষ হলে মীরা রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে কাঁদতে থাকে।
আজ কাঁদবে খুব করে কাঁদবে মীরা, কেঁদে কেঁদে বুক ফাটিয়ে ফেলবে তবুও যদি এই আর্তনাদ একটু হলেও কমে।
মীরা হাত পা ছুড়ে বারান্দার সেই প্রিয় চেয়ারটায় বসে বসে কাঁদছে।
রুদ্র ভাই কেনো করলেন এমনটা, আপনি যদি ইরা আপু কে-ই ভালোই বাসেন তাহলে কেনো আগে তা প্রকাশ করেননি, আগে কেনো বুঝতে পারি নি আমি, আমি যে একদম নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
আপনার সব লাঞ্চনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি, আমি আমার এই অভ্যাস কিভাবে বলিদান দিতে পারি যদি কেউ একটি বার বলে দিতো।
ছোটবেলা থেকে আপনার সব অপমান সহ্য করে নিতাম আমি, কিন্তু মনের এই অপমান কিভাবে সইবো আমি রুদ্র ভাই বলতে পারেন।

ইরা আপু কে ভালোবাসেন দোষ দিচ্ছি না আমি, আমি তো নিজের ব্যাকুল মনকেই আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করছি আগে কেনো বুঝতে পারিনি আমি।
আমি চাই খুব করেই চাই আমার রুদ্র ভাই আর আপু ভালো থাকুক খুব ভালো থাকুক এই ভালো থাকায় কারো যেনো কুনজর না লাগে।

মীরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি ফুটিয়ে চাঁদের বুড়ি কে বললো, বুড়ি মা জানো, রুদ্র ভাই আজ থেকে আর আমার নয়, রুদ্র ভাই এখন ইরা আপুর, আমার আপুর চোখের মনি, তুমিও আজ মন ভরে দোয়া করো ওদের জন্য।
বুড়ি মা তুমি কি ভাবছো আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি?

নাতো!

মীরা চাঁদের বুড়ির দিকে তাকিয়ে অভিমানী হাসি ফুটিয়ে বললো, দেখো বুড়ি মা আমি হাসছি খুব হাসছি হেসে হেসে আজ বুকের আর্তনাদ সব নিবিয়ে দিচ্ছি।

হাসতে হাসতে একসময় মীরার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে মীরা সে জল আজ আর মুছবেনা, যতো ইচ্ছে জড়তে থাকুক, জড়তে থাকুক হৃদয়ের গহীন লুক্কায়িত ব্যাথাগুলো। রুদ্র ভাইয়ের জন্য যতো আছে হৃদয়ের গহীন ভালোবাসা সব আজ মুছে যাক, ভুলে যাক বেপরোয়া মনের লুকায়িত দীর্ঘশ্বাস।

-কাঁদতে কাঁদতে একসময় মীরা ঘুমিয়ে পরলো, হারিয়ে গেলো ঘুম পুরিতে।

ডানা বিশিষ্ট একটি বাদুর ডানা ঝাপটিয়ে মানুষ রূপে রূপ ধারণ করলো।
অদৃশ্য অবয়ব টা-ই এসেছে, মীরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, প্রিন্সেস আর দেরি নয় খুব শীঘ্রই নিয়ে যাবো আমার কাছে।
সেই পুরনো ভালোবাসা জেগে উঠবে আমাদের কিংডমে।
জানি প্রিন্সেস তুমি খুব কষ্ট পাচ্ছো তোমার কষ্টে যে আমারও কষ্ট হচ্ছে।
খুব শীঘ্রই তোমাকে নিয়ে পাড়ি দেবো আমাদের কিংডম ইংল্যান্ডে।
অদৃশ্য অবয়ব টা মীরার চোখে এলোপাতাড়ি অনেক গুলো চুমু খেয়ে বললো, প্রিন্সেস তোমায় আর কষ্ট পেতে হবেনা, তোমার এ চোখের জল আর পরতে দেবোনা।

অদৃশ্য অবয়বের আদর মাখা জড়ানো মূহুর্ত মীরার সাথে দেখে আরেকজন লাল চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে আর রাগে ফুলছে।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here