ভালবাসার প্রহর পর্ব ২+৩

#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২

শাওন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাছে পা বাড়ায়।জেরিনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাই ছাদের চারপাশ এবং পুরো বাড়ি হাজার আলোয় আলোকিত আর রঙে রঙে ফুল আর রঙিন কাপড়ে সাজানো। ছাদের ঠিক মাঝে বড় ঝাড় বাতি লাগানো অনেক রং এর।ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে নাজমুল।রাতের এই অন্ধকার শহরে এমন আলোকিত ছাদ তাও নিশ্চুপ বেশ ভালোই লাগছে দেখতে।শাওনের কথায় হাল্কা কেপে উঠে নাজমুল।পিছনে ফিরে একবার শাওনকে দেখে আবার ও দূর আকাশে তাকায়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হেসে বলে,

–“এই শহর বড়ই অদ্ভুত । কেও রাতের অন্ধকারে কাঁদছে তো কেও বন্ধুর ভরসায় ঘর ছেড়ে পালিয়ে নিজের সুখ খুঁজছে। ”

কথাটা শাওনকে বেশ চমকে দেয়।শাওনের মুখে বিষ্ময় আর ভয় দুটোই জেনো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।নাজমুল আবার বলে,

–“আজ জেরিনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।ঠিক বিয়ে না বলতে পারো নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া।”

শাওন কি বলবে বুঝতে পারছে না।হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।ভাবছে নাজমুল কি তাহলে কিছু জেনে গেলো?শাওন স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে হাল্কা হেসে বলে,

–“আপনি নিচে বললেন আমার সাথে কথা ছিল।”

নাজমুল আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসেন।হেসে বলে,

–“হ্যা!দূরে কেনো কাছে এসে দাঁড়াও?”

শাওন এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।লম্বাশ্বাস নিয়ে ধির পায়ে নাজমুলের পাশে দাঁড়ায়। হাল্কা হাসার চেষ্টা করে বলে,

–“জ্বি বলুন!”

নাজমুল শাওনের দিকে ফিরে এবার।কাধে হাত রেখে বলে,

–“ওপর ওয়ালা যা করে ভালোর জন্যই করে।আজ তোমার মত বন্ধু আছে বলেই শান্তিতে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া থেকে বেচে যায় কিছু বন্ধু।”

শাওন অসস্থিতে পরে যায় এবার।ভয়টা জেনো বেশি বেড়ে যায়।শাওন তোতলে বলে,

–“মানে ঠিক বুঝলাম না মামা।”

নাজমুল মৃদু হেসে বলে,

–“জেরিনকে যে তুমি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছো সেটা আমি জানি।এটাও জানি জেরিন কোথায় কিভাবে আছে সেটাও তুমি জানো।”

শাওন জেনো অবাক হয়ে যায়।বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না।শুধু মাথায় একটাই চিন্তা জেরিনের খোজ কাওকে জানানো যাবে না।ব্যস্ত হয়ে বলে,

–“মামা আপনি ভুল বুঝছেন।তেমন কিছুই না সত্যি।আমি আসলে….”

নাজমুল শাওনকে থামিয়ে দেয়।শান্ত গলায় বলে,

–“তোমার জায়গায় আমি থাকলে ও এই কাজটাই করতাম।আমি সত্যি মন থেকে ধন্যবাদ দিচ্ছি তোমাকে।জেরিন খুব নরম মনের মেয়ে।অল্পতেই খুশি আবার অল্পতেই আঘাত পায়। আবার অল্পতেই ভেঙে পরে।তুমি যদি ওর পাশে না থাকতে এই বিপদ থেকে বাচা ওর জন্য সম্ভব ছিল না।আমি শুরু থেকে এই পর্যন্ত সব জানি।জেরিন সবই আমাকে বলতো কিন্তু আমার পক্ষে কিছুই সম্ভব ছিল না।তুমি ওর বন্ধু তাই বাঁচাতে পেরেছো কিন্তু আমি ওর মামা তাই পারতাম না।জেরিন খুব নিষ্পাপ একটা মেয়ে। খুব স্বপ্ন নিজের জীবন নিয়ে ওর।প্লিজ কেও জেনো খুঁজে না পায়। ”

শাওন এখন সস্থির নিশ্বাস নিচ্ছে।বুক থেকে একটা পাথর নেমে যায়।শাওন নাজমুলের হাত ধরে বলে,

–“আমি দুক্ষিত মামা!আমার যেটা ঠিক লেগেছে সেটাই করেছি।পারছিলাম আর জেরিনকে এইভাবে অসহায়ের মত দেখতে।আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না এটা দেখা।তাই জেরিনকে দূরে সরিয়ে দেই।হাসান ওর চাইতে দিগুণ বয়সের। এমন বদ আর লুইচ্চা লোকের সাথে জেরিন আমি এখনো ভাবতেও পারি না।তবে মন বলছে জেরিন এবার একা ফিরবে না। কেও নিশ্চয়ই আমার বেস্ট বাডিকে নতুন পথ দেখাবে।”

নাজমুল শাওনকে জড়িয়ে ধরে।দুজনেই হেসে সস্থির নিশ্বাস নেয়।জেরিনকে এভাবে দেখা সম্ভব ছিল না ওদের জন্য।জেরিনের হাসি মুখটাই ওদের জন্য দামি।

____________

রাত প্রায় ৯টা বাজে। বিষ্ময় আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেরিন।গালে হাত দিয়ে বিছানায় পা তুলে বসে আছে।একটা মানুষ এমন ও হতে পারে জানা ছিল না তার।রহস্যময় লাগছে সব কিছু জেরিনের।ওপরওয়ালা কি করতে চাইছে জানা নেই।তবে খুব বড়সড় রহস্যের মায়া জালে বাধতে চলেছে। জেরিন ভেবে যাচ্ছে সন্ধ্যা থেকে ঘোটে যাওয়া কাহিনি।

সন্ধ্যায় দরজার ঠক ঠক শব্দে ঘুম থেকে উঠে যায় জেরিন।আলতো করে চোখ খুলে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের মাথার পাশে থাকা ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখলোঃ-৬:২০।আবাব ও দরজায় শব্দ হলো।জেরিন উঠে বসে লম্বাশ্বাস নেয়।ধির পায়ে এগিয়ে যায় দরজার কাছে।নিজের চুল ঠিক করে দরজা খুলে চমকে যায় জেরিন।ব্লু কোট-ব্লু প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরা এক অসম্ভব সুন্দর সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে সামনের রুমের দরজায়।স্পর্শ জেরিনকে এভাবে দেখে আরেক বার শকড হলো।কালো প্লাজো আর সাদা শার্ট সাথে হাল্কা এলোমেলো চুল।স্পর্শ অতি নম্র ভাবে মৃদু হেসে বলে,

–“এই যে মিস?আপনার মতলবটা কি বলুন তো?তখন হলুদের সাজে আর এখন এভাবে?কেও কে জ্ঞান হারিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?”

জেরিন এত সময় স্পর্শকে দেখছিল।কিন্তু এখন স্পর্শের কথায় বেশ লজ্জায় আর অসস্থিতে পরে যায়।স্পর্শের থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে বলে,

–“দরজায় কেও নক করেছিল। ”

স্পর্শ আবার ও অতি নম্র ভাবে বলে,

–“আজ রিসোর্ট প্রোগ্রাম আছে।সবাইকে এট্যান্ড করতে হবে।ম্যানেজার এসে ছিল কিন্তু আপনি যেভাবে ঘুমিয়ে ছিলেন তাই আমি বললাম আমি ডেকে দিবো আপনাকে।আর আপনি খুব ক্লান্ত ছিলেন তাই আর ডাকতে দেইনি।সো মিস আপনি যদি রেডি হয়ে জয়েন করতেন।”

জেরিন হাল্কা হেসে ভাবনায় পরে যায়।ওর কি করা উচিত? যাবে নাকি যাবে না?চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সবাই যাচ্ছে।সে কি একা রুমে বসে থাকবে নাকি সবার সাথে যাবে?জেরিন এই ভাবনা হয়তো স্পর্শ বুঝতে পারে তাই হাল্কা কেশে বলে,

–“রুমে একা থাকা হয়তো আপনার জন্য ঠিক হবে না।রুমে বসেই না কি করবেন?গেলে আপনার ও হয়তো ভালো লাগবে। আমিও যাচ্ছি আপনি যদি বলেন আমি কিন্তু অপেক্ষা করতে পারি আপনার জন্য।”

জেরিন কিছু না ভেবে হাল্কা হেসে বলে,

–“ধন্যবাদ! আমি আসছি…!”

স্পর্শ মৃদু হেসে অপেক্ষা করতে লাগলো।জেরিন ফ্রেশ হয়ে ব্লু সিল্কের লং গাউন পরে চুলে খোপা করে নেয়।হাল্কা পিংক লিপস্টিক লাগিয়ে চোখে কাজল দিয়ে হাল্কা হিল পরে ফোন হাতে বেড়িয়ে আসে।স্পর্শ অন্য দিক মুখ করে ফিরে আছে। জেরিন হাল্কা কাশি দিতেই স্পর্শ ফিরে তাকায়।পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে পাশ ফিরে হেসে দেয়।হাত সামনে বাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইশারা করে জেরিনকে।জেরিন একটু লজ্জা আর ভয় মিশ্রিত চাহনিতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে হাটছে।

স্পর্শ আড়চোখে বার কয়েকবার জেরিনকে দেখে মৃদু হাসছে।এই প্রথম কোনো মেয়ে দেখে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে মনে।পাশে থাকা মেয়েটা একদম সিম্পল করে সেজেছে।হাল্কা পাওডার আর হাল্কা লিপস্টিক আর চোখে কাজল।এতেই যে এত গোর্জিয়েস লাগতে পারে কাওকে জানে ছিল না স্পর্শের।একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে মাথায় আসছে না তার।

রিসোর্টের সবাই তাকিয়ে আছে স্পর্শ-জেরিনের দিকে।পাশাপাশি দুজন এগিয়ে আসছে প্রোগ্রামের ফ্লোরে।দেখতে একদম পার্ফেক্ট হাসব্যান্ড -ওয়াইফ লাগছে।শুধু রিসোর্টের লোক না যে কেও ওদের এইভাবে এক সাথে দেখে দ্বিধাহীন ভাবে বলে দিতে পারবে ওরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ। সবাই এইভাবে তাকিয়ে থাকা বেশ গুরুত্ব দিলো না জেরিন -স্পর্শ।

চারপাশে অনেক লোকজন! জেরিন চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।একজন নাম করা বিজনেসম্যান হওয়াতে সবাই স্পর্শকে চিনে আর বিশেষ করে মেয়েদের লাফিয়ে পরা।

চারপাশে অনেক লোকজন! জেরিন চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।একজন নাম করা বিজনেসম্যান হওয়াতে সবাই স্পর্শকে চিনে আর বিশেষ করে মেয়েদের লাফিয়ে পরা।কিন্তু স্পর্শ সেদিকে নজর দিলো না।রিসোর্টের ওনারের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

.

,

চারপাশটা খুব সুন্দর করে ফুল আর লাইটিং করে সাজানো হয়েছে।হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় জেরিন।হঠাৎ চোখটা আটকে যায় কিছুটা দূরে স্পর্শের দিকে।হেসে হেসে কথা বলছে কোনো এক ভদ্র লোকের সাথে।ছেলেটা দেখতে যতটা সুদর্শন ঠিক তেমনি ভদ্র।বলতে গেলে একটু অতি ভদ্র।কথায় আছে অতি জিনিশটাই ভালো না।এখন দেখার বিষয় স্পর্শের ক্ষেত্রে এই অতি জিনিশটা কতটা প্রযোজ্য।

জেরিন ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে শাওনের ১৫+ মিসকলড।নিমিষেই মুখে চিন্তা আর ভয়ের ছাপ ফুটে উঠে।বাড়িতে আবার কি কিছু হয়েছে?সবাই কি জেনে গেছে জেরিন কক্সবাজার? না আর ভাবতে পারছে না জেরিন।বাম হাতের উলটা পিঠ দিয়ে কপালে জমে যাওয়া বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে কাপা কাপা শাওনকে কল দেয়।বেশ কিছুক্ষণ পর শাওন রিসিভ করে।জেরিন কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে অস্থির হয়ে বলে,

–“কি রে তুই ঠিক আছিস তো?সেই তখন থেকে কল করে যাচ্ছি তুলছিস না কেনো?তুই জানিস কি হয়েছে আজকে? ”

জেরিনের ভয়ের মাত্রা এবার আর ও গাঢ় হয়।ব্যস্ত হয়ে বলে,

–“কি হয়েছে? বাড়িতে সব ঠিক আছে তো?আম্মু কি জেনে গেছে সব?সবাই জেনে গেছে আমি এখানে?”

শাওন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

–“রিলাক্স ভাই রিলাক্স! কিছু হয়নি ভাই তুই শুধু শুধু চিন্তা করছিস।”

জেরিন এবার কিছুটা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে বলে,

–“তুই যে বললি কিছু হয়েছে?”

শাওন জোরে শ্বাস ফেলে বলে,

–“তুই আসলেই একটা গাদা।আমি থাকতে কেও জানবে আমার বেস্টু কই?”

জেরিন অস্থির হয়ে বলে,

–“তাহলে কি হয়েছে বল না? আমার খুব ভয় করছে। ”

শাওন কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে,

–“এত ভয় পেলে তুই চলবি কি করে? সাহস নিয়ে চলতে হবে তোকে।”

জেরিন বাচ্চাদের মত মুখ করে বলে,

–“ঠিক আছে! এবার তো বল কি হয়েছে?”

শাওন মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

–“সন্ধ্যায় হাসন আর ওর ভাইয়েরা বাসায় এসেছিল।আংকেল ওদের বলে দিয়েছে এই বিষয় নিয়ে জেনো কেও কথা না বলে।কিন্তু…

শাওন থেমে যায়! জেরিন বিষ্মিত কন্ঠে বলস,

–“কিন্তু কি? ”

–“কিন্তু আন্টি বলেছে তোকে খুঁজে আনলে হাসানের সাথেই বিয়ে দিবে।সবাই বেশ অবাক হয়েছে এটা শুনে।আংকেল ওদের বাসা থেকে চলে যেতে বলে নিজের রুমে চলে যায়।ওরা যাওয়ার পর আন্টি আমাকে আর নাজমুল মামাকে ৯টায় তোর রুমে যেতে বলেছে।”

জেরিন চিন্তিত হয়ে যায়।অস্থির হয়ে বলে,

–“আমার রুমে?কিন্তু কেনো? কিছু বলেছে তোকে?”

শাওন জেরিনকে শান্ত ভাবে বলে,

–“কিছু বলেনি কিন্তু নাজমুল মামা জেনে গেছে আমি জানি তুই কোথায়।বেশ খুশি হয়েছিল মামা।তবে আমার মনে হয় আন্টি কিছুটা বুঝতে পেরেছে।”

জেরিন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,

–“প্লিজ দোস্ত আমি আর পারবো না এগুলো নিতে।তুই পাশে থাকায় আমি বাড়ি থেকে চলে এসেছি। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয় তো আমি শেষ হয়ে যেতাম।”

শাওন অস্থির হয়ে বলে,

–“প্লিজ তুই শান্ত হো। আমি আছি তো নাকি?আর তুই বা আমি কেও তো শিওর না আন্টি কেনো দেখা করতে বলেছে।তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন বল কেনো কল ধরিসনি?”

জেরিন স্বাভাবিক হয়ে বলে,

–“সরি ইয়ার আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রিসোর্টের একটা পার্টিতে এসেছি।”

শাওন দুষ্টুমির ছলে বলে,

–” একা নাকি সাথে কেও আছে?”

জেরিন রাগ দেখিয়ে বলে,

–“তুই কখনোই ভালো হবি না।”

শাওন হেসে ফেলে।হেসে বলে,

–“না হবো না! তবে দেখিস আমি বললাম এবার সত্যি কেও আসবে তোর লাইফে।”

জেরিন হাল্কা হেসে বলে,

–“দেখা যাবে যা রাখ এখন।”

শাওন হেসে কেটে দেয়।জেরিন কান থেকে ফোন সরিয়ে লম্বাশ্বাস ছাড়ে।খুব ভয় করছে যদি জেনে যায় এখানে আছে জেরিন।চারপাশে তাকিয়ে দেখে প্রায় সব ছেলেরাই কেমন করে জেনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।খুব অসস্থি লাগছে জেরিনের।দূর থেকে স্পর্শের চোখ এড়ায়নি সেটা।ধির পাশে জেরিনের পাশে এসে দাঁড়ায়।জেরিন স্পর্শের দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়।স্পর্শ হাল্কা কেশে বলে,

–“অসস্থি হচ্ছে খুব? ”

জেরিন অবাক চোখে স্পর্শের দিকে তাকায়।স্পর্শ হাল্কা হেসে বলে,

–“অবাক কিছু নেই! আমার মনে হলো আপনার অসস্থি অনুভব হচ্ছে তাই জিজ্ঞাস করলাম।”

জেরিন মাথা নিচু করে নেয়।খুব অসস্থি আর লজ্জায় বলে,

–“আসলে একটু! ”

স্পর্শ নম্র ভাবে বলে,

–“আপনি চাইলে বাইরে থেকে ঘুরে আসতে পারেন।”

জেরিন কিছু বললো না শুধু হাসলো।স্পর্শের পিএ এসে ডেকে নিয়ে যায়। জেরিন কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলে,

–“ওনি যতটা ভদ্রতা দেখাচ্ছে আসলেই ওতোটাও ভদ্র ওনি?কথায় আছে অতি ভালো চোরের লক্ষণ কিন্তু ওনার ক্ষেত্রে কোনটা সঠিক? সুন্দর ছেলেদের চরিত্র ও কিন্তু সব সময় সুন্দর হয় না।ধুর কি ভাবছি এসব আমি?ওনি এতো খারাপ না নিশ্চয়ই। ”

____________

স্পর্শে কথার মাঝে বার কয়েকবার জেরিনকে দেখে।মেয়েটা খুব অসস্থিতে আছে সেটা মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।হলুদের সাজে দেখেই স্পর্শ বুঝতে পারে জেরিন নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। আমাদের সমাজে এটা এখন খুবই কমন বিষয়।এমন অনেক মেয়েই নিজের স্বপ্ন বা মন বাঁচাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।বাবা – মায়ের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বিয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পারায় অনেকেই আবার সুইসাইড করার মত সিদ্ধান্ত নেয়।কেও বা মনে সাহস যুগিয়ে বাড়ি ছাড়ে।সুইসাইড কোনো কিছুই সমাধান হতে পারে না কিন্তু তবুও অনেকেই জেনে শুনে বাধ্য হয়েই এই কাজ করে।বাবা -মা হয়তো ভুলে যায় সারাটা জীবন ওনারা না আমরা সংসার করবো, আমারা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত থাকবো।তাদের পছন্দের পাত্র জোর করে চাপিয়ে দিয়ে বলে আমরা যা করছি তোমাদের ভালোর জন্য করছি।কিন্তু যেই ভালো আমাদের সারা জীবনের সুখ শান্তি কেড়ে নেয়, যেই ভালো সারা জীবন অন্ধকারে ঠেলে দেয় নিজের ভালবাসার কে হারিয়ে, নিজের স্বপ্ন,ইচ্ছে কে হারিয়ে সেটা কি আদৌ ভালো?সব মা-বাবাদের উচিত সন্তানের মনের কথা, ভালো লাগা,পছন্দ এইসব জানা,এগুলো বুঝার।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্পর্শ! হঠাৎ বন্ধু রাফাতের আগমনে চমকে উঠে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে জড়িয়ে ধরে স্পর্শ। ছোট বেলার বন্ধু রাফাত। প্রায় অনেক দিন পর দেখা তাদের।কাজের চাপে তেমন কথাই বলা হয়ে উঠেনি।রাফাত স্পর্শকে নিয়ে একপাশে টেবিলে বসে আর হেসে বলে,

—“তো কি খবর তোর?কত দিন পর দেখা ভাই?”

স্পর্শ মৃদু হাসে!হাসি মুখে বলে,

—“প্রায় ১মাস পর দেখা।তুই তো সেই লন্ড চলে গেলি কাজে আর আমি ও এখানে ।”

রাফাত লম্বাশ্বাস ফেলে বলে,

—“আর বলিস না ভাই কাজের এত চাপ। যাই হোক তোর কি খবর?”

—“আমি সব সময় ভালো।আমার সব খবরই ভালো বন্ধু।”

রাফাত শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,

—“তাই নাকি?তাহলে বল তোর বউ এর খবর কি?”

রাফাতের এমন কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না স্পর্শ। এই ছেলে যে এমন কিছু বলবে ভাবেনি সে।একটু গম্ভীর গলাত বলে,

—“সাট-আপ! তুই জানিস আমি সিংগেল আর এখন এই সব বিয়ে টিয়েরে পরতে চাই না।”

রাফাত হেসে বলে,

—“কেনো?পছন্দের কেও থাকলে বলতে পারিস?”

স্পর্শ হঠাৎ কি মনে করে জেরিনের দিকে তাকায়।মুচকি হেসে চোখ সরিয়ে নেয়।কি মনে করে বলে উঠে,

—“হয়তো কেও আছে!”

রাফাত বেশ কৌতুহল নিয়ে বলে,

—“হয়তো?সিরিয়াসলি পছন্দ করিস তুই?”

স্পর্শ মাথা নিচু করে মৃদু হেসে বলে,

—“জানি না! ”

রাফাত এমন কথার কিছুই বুঝলো না।মুখটা গোমরা করে ফেলে।স্পর্শ হাল্কা হেসে উঠে যায়।
#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব৩

চাঁদের আলোয় সুইমিং পুলের নীল পানি ঝলঝল করছে।চারপাশে নিরবতা চলছে। উপর থেকে মৃদু কোলাহল পাচ্ছে। ডান হাতে অন্য হাতের বাহু ঘোষছে জেরিন।আলতো পায়ে হাটছে পুলের পাশে।হাল্কা শিতল বাতাস ও পাচ্ছে সে।এতো শব্দ আর লোকজনের মাঝে বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল তার।এখন বেশ ভালো লাগছে।তবে, বাড়ির ঝামেলা মিটবে কী ভাবে?চিন্তায় অস্থির মন।রাতে কেনো ডেকেছে ওদের,তাও ভয়ংকর অবস্থা।পুলের পাশে বসার খুব ইচ্ছে হলো জেরিনের।আশে পাশে কেউ নেই এখানে।হাল্কা হেসে সেদিকে পা বাড়ালো। পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে একটু ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু ভয়টা সরে যেয়ে বিস্ময় এলো।জেরিনের পাশে কোট হাতে স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছে।নম্রভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

—-“পরিবেশটা সুন্দর।ভিতরে এত লোকজন যে, ঠিক ভালো লাগছিল না।”

জেরিন হাসার চেষ্টা করে বলে,

—-“জ্বি! ”

স্পর্শ নম্র গলায় হেসে বলে,

—-“বিরক্ত করলাম আপনাকে?”

—-“আরে না, ঠিক আছে। ”

পুল দেখিয়ে মৃদু গলায় স্পর্শ বলে,

—-“চলুন, ওখানে বসি।”

জেরিন মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।জুতো খুলে দুই পা পানিতে চুবিয়ে বসে আছে দুজন।জেরিনের এখন বেশ রিলাক্স লাগছে।স্পর্শ বার কয়ের জেরিনকে দেখে মৃদু হএসে বলে,

—-“আপনি মনে হচ্ছে এখন রিলাক্স আছেন।আমি কী একটা প্রশ্ন করতে পারি?”

জেরিন হাল্কা হেসে বলে,

—-“জ্বি পারেন।”

স্পর্শ গাল ফুলিয়ে নিশ্বাস নিলো।বেশ আগ্রহ নিয়ে জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,

—-“দেখুন,আপনাকে তখন হলুদের সাজে দেখেই আমি বুঝেছি, আপনি নিশ্চয় পালিয়ে এসেছেন।কিছু মনে না করলে আমার সাথে কী সেয়ার করা যায় বিষয়টা?কিছু তো একটা হয়েছে তাই না?”

জেরিন গম্ভীর হয়ে যায়।বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরে যায়,বলা কী ঠিক হবে?স্পর্শকে দেখে খারাপ মনে হচ্ছে না।জেরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

—-“আমি পালিয়ে এসেছি।কাল আমার হলুদ ছিল কিন্তু আমি না বলে চলে আসি।১৮ বছরের আগে কোনো বিয়েই হয় না।আর আমার ১৮ বছর হতে এখনো সময় আছে।ছোট বেলায় আমার থেকেও বেশি বয়সের একটা লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করে মানে হয়ে যায়।কিন্তু কাবিন নেই, প্রমাণ সো আমি বিশ্বাস করিনা এটা।কথা ছিল ১৮ বছর হলে পুরো বিয়ে সম্পূর্ণ হবে
কিন্তু আমি রাজি না বুঝতে পেরে বিয়ের তোরজোড় লাগিয়ে দেয়।সবাই যেনেও জোর করছিল আমায়।তাই শাওন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর সাথে আগেই প্লেন করেছিলাম পালাবো।শাওন টিকেট রিসোর্ট সব ম্যানেজ করে দেয়।বাড়িতে এখনো আমাকে খুজে পেলে তার সাথে বিয়ে দিবে।আমি বাড়ি আর ফিরতেই চাই না।”

জেরিন দম নিলো। স্পর্শ সবটা শুনে অবাক হলো।এই টুকু মেয়ে এতো কাহিনী?স্পর্শ বেশ কৌতুহল নিয়ে বলে,

—-“কোনো উপায় নেই বাচার?অবশ্যই রাস্তা আছে।আপনি চাইলে আইনের সাহায্য নিতে পারেন।”

জেরিন হতাশ মুখে হাসলো।হেসে বলে,

—-“আমার একটা মামা পুলিশ। সাহায্য পাবার আশা তাই করছি না।আম্মুকে সে সাহায্য করবে। আর একটা অপশন আছে তবে,সম্ভব না।বলেছিল আমি কাউকে পছন্দ করে বিয়ে করলে মানতে বাধ্য হবে।”

স্পর্শ হঠাৎ আনন্দময় কন্ঠে বলে,

—-“তার মানে আপনি এখনো সিংগেল।চিন্তা করবেন না।আশেপাশে দেখলেই পেয়ে যাবেন একজন কে।”

জেরিন কিছু বলল না শুধু হাসলো।অনেকটা সময় পর স্পর্শকে শান্ত ভাবে প্রশ্ন করে জেরিন,

—-“মেয়েদের জীবন তেমন সহজ হয় না।জটিলতা হয়তো আমার জীবনেই একটু বেশি মনে হচ্ছে।একটা ছেলে চাইলে যা ইচ্ছে করতে পারে। কিন্তু একটা মেয়েকে ভাবতে হয় পরিবারের কথা।আমি একটা সময় সুইসাইড করতেও চলে যাই।আপনার কী মনে হয়, ঝামেলা মিটে যাবে সহজে?”

স্পর্শ বিস্ময় চাহনি নিক্ষেপ করে হঠাৎ ব্যস্ত গলায় বলে,

—-“আপনি এমন কাজ আর কোনো দিন করবেন না।আপনার কাছে না হোক, অন্য কারো কাছে অনেক দামি আপনি। ঝামেলা মিটবে কী না জানি না। তবে আপনাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে।”

জেরিন পা তুলে নিলো পানি থেকে।স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে তা দেখে বলে,

—-“কোথায় যাচ্ছেন?”

—-“পায়ে ঝিম ধরেছে তাই একটু হাটবো।”

স্পর্শ দ্রুত উঠে দাঁড়াল। জেরিন কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকালো। ভাজ করা প্যান্ট আর দু একটা খোলা বোতামে সাদা শার্ট পরিহিত স্পর্শ কে হঠাৎ আবার রহস্যময় মনে হলো।মৃদু হেসে সে বলে,

—-“একা একা হাটলে ভালো লাগবে না আপনার।আপনি চাইলে আমি কী যেতে পারি সাথে?”

জেরিন কয়েক সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে রইল।তাৎক্ষণিক মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে মৃদু গলায় বলে,

—-“জ্বি, চলুন।”

পাশাপাশি অনেকটা সময় দুজন হাটলো।একটা সময় স্পর্শ কিছুটা জোর করেই খেতে নিয়ে গেলো।গত কাল থেকে তেমন কিছুই তো খাওয়া হয়নি তার।খাওয়া শেষ করে চুপ করে বসে আছে জেরিন।স্পর্শ মৃদু হেসে সেদিকে তাকালো।জেরিন অনেক সময় ধরে মনে একটা প্রশ্ন নিয়ে ঘুরলো,সে না খেয়ে আছে কিভাবে জানে স্পর্শ? জেরিন কে অবাক করে স্পর্শ বলে,

—-“আপনার চোখ মুখ বলছিল আপনি না খেয়ে আছেন।এমন কি এখনো না খেয়েই ঘুমিয়ে পরতেন আপনি।”

জেরিন হাল্কা কেশে উঠে।কী বলা উচিত বুঝতে পারছে মা সে।এই মানুষটা এতো কিছু বুঝছে কিভাবে? এতো খেয়াল ও রাখতে চায় কেনো?

.

.

.

.

জেরিনের রুমে বিছানায় বসে আছেন নাজমুন বেগম।হাতে জেরিনের আজকের জন্য বিয়ের ওড়না।নাজমুল এবং শাওন দরজায় দাঁড়িয়ে একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।গলা ঝেরে নাজমুল বলেন,

—-“আপু,আসবো আমরা?”

নাজমুন বেগম দরজায় না তাকিয়েই বলেন,

—-“আসো! ”

শাওন গাল ফুলিয়ে নিশ্বাস নিয়ে ভিতরে পা দিলো।শাওন একটু ভিত কন্ঠে বলে,

—-“আন্টি আমাদের কেনো ডেকেছেন?আসলে রাত হয়েছে আমি বাড়ি ফিরবো।”

নাজমুন বেগম এবার ওদের দিকে তাকালো।চোখের ইশারা করে বলেন,

—-“এখানে বসো তোমরা।আমার কিছু কথা আছে। ”

নাজমুল শাওনের কাধে হাত রেখে সাহস দিলো।দুজনে বিছানায় বসে অপেক্ষা করে কথা শুনতে।নাজমুন বেগম হাতের ওড়না দেখিয়ে বলেন,

—-“আজ এটা পরে জেরিনের বিয়ে হবার কথা ছিল।কিন্তু হলো না, কেনো?”

শাওন এমন কথায় বেশ অপ্রস্তুত হওয়ার চেষ্টা করে বলে,

—-“কীভাবে বলবো আন্টি?আমরা নিজেরা ও তো জানি না।”

নাজমুন বেগম শাওনের দিকে ক্ষীণ চোখে তাকালো।নাজমুল খুব শান্ত গলায় বলেন,

—-“আপু,আমরা কিন্তু অবুঝ না।আমার মনে হচ্ছে আপনি ভালো করেই জানেন কেনো হলো না বিয়ে।আপনি ওর মা হয়ে যদি কারণ না বুঝেন তাহলে আমরা কীভাবে বুঝি বলুন?”

নাজমুন বেগম হাল্কা হেসে বলেন,

—-“আমি জানি জেরিন কোথায় তোমরা জানো।আমি জিজ্ঞেস বা জোর করবো না সে কোথায় আছে।শুধু বলবো যা করেছো বা হয়েছে, ভালোই হয়েছে।আমি মা হয়ে যা পারিনি তোমরা তা করেছো।অনেক ইচ্ছে ছিল জেরিন কে বউ সাজে দেখব, শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো।আমার মেয়েটাকে জেনো হাসানরা খুজে না পায়।এটাই তোমাদের কাছে অনুরত করছি।”

শাওন এবং নাজমুল ইসলাম খুবই অবাক হলো।নাজমুন বেগম এই কথা বলছে?একটু আগেও না, বলেছে ফিরে আসলে হাসানের সাথেই বিয়ে দিবে!শাওন ভালো করে নাজমুন বেগমের মুখ ভঙিমা লক্ষ্য করে।হতাশ কন্ঠে বলে,

—-“আন্টি আপনি আপনার কথা গুলো যদি সত্যি হতো খুশি হতাম।কিন্তু আমরা জানিই না জেরিন কোথায় গেছে।আমি অবাক হচ্ছি,আমি তো ওর বন্ধু।কিন্তু আমি কিছুই জানি না।”

নাজমুল সায় দিয়ে বলেন,

—-“আর যাই হোক আপু,জেরিন কারণ ছাড়া যায়নি আবারো বলছি।ফিরে এলে অবশ্যই রহস্য জানবো আমরা।আজ তবে, আসছি আমি।”

নাজমুন বেগম হাসার চেষ্টা করেন।শাওন ও ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে তাড়া দিয়ে বলে,

—-“আন্টি আমিও আসছি।বাড়ি ফিরতে আমাকে।”

আর সময় নষ্ট না করে দুজনেই দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।বাড়ির সামনে রাস্তায় এসে দুজনেই লম্বাশ্বাস ফেলল।নাজমুল কপাল কুঁচকে শাওন কে বলে,

—-“তুমি আপুকে লক্ষ্য করেছো? ”

শাওন চুলে হাত বুলিয়ে বলে,

—-“করেছি মামা।উনি অভিনয় করছিলেন আমাদের সামনে।ভেবেছিল সব বলে দিবো।”

—-“একটা মানুষ কীভাবে নিজের মেয়ের সাথে এমন করতে পারে সত্যি আমার জানা নেই।তবে জেরিন বাড়ি থেকে কয়েক দিন দূরে থাকুক।”

.________________________

পা সোজা করে বিছানায় হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে স্পর্শ। এসির বাতাসে পা জোড়া মৃদু শিতল হয়েছে।ডান হাতে কফির মগে চুমুক দিয়ে কাজে মন দিচ্ছে।কফির মগ সাইড টেবিলে রেখে কিছু মেইল চেক করল সে।এই কাজের মস্তিষ্ক বেশি সময় কাজে রইল না।রিসোর্ট ম্যানেজার আজকের প্রোগ্রামের কিছু ছবি দিলেন।চুপ করে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় জেরিনের সাথে কিছু ছবি দেখে, স্পর্শ গালের নিচে হাত রেখে ফিক করে হাসলো।চোখটা জেনো ঝলঝল করে উঠে।মনোযোগ দিয়ে ছবি গুলো দেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে বিছানায় ঠেস দিয়ে বসে স্পর্শ।মনে মনে খুব ভয়ংকর চিন্তায় বলে,

—-“আচ্ছা,আজ যদি “জেরিন “নামক মেয়েটার বিয়ে হয়ে যেতো?আমি স্পর্শ মেহরাব কী করতাম?দেখা কী হতো আমাদের?উনি নিশ্চয়ই ভালো থাকতেন না। আচ্ছা?জেরিন কী আমাকে খুজে পেতো?যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।সামনে কী হবে উপর ওয়ালাই জানেন।”..

—-“আসবো স্যার?”

দরজায় পি এ সাদ ইসলামের গলা পেয়ে নড়েচড়ে বসে স্পর্শ। কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে,

—-“হ্যা, এসো।”

সাদ মৃদু হেসে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে।বিছানার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গলা ঝেরে আস্তে করে বলে,

—-“স্যার, বড় সাহেব কল করে ছিলেন।কাল একটা মিটিং আছে আর সেটা আপনাকে এটেন্ট করতে হবে।”

স্পর্শ কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে শান্ত গলায় বলে,

—-“মিটিং টা কখন হবে?”

সাদ বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে,

—-“সকালে ১০ টায় মিটিং তার পর বিকালের দিকে একটা কনফারেন্স আছে।কিছু ডিসাইন দেখলেই আমাদের কাজ শেষ।”

চলবে….

.

.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here