ভালোবাসায় পাগলামী পর্ব -১০+১১

###__ভালোবাসায়_পাগলামি__###
part:10+11
#writer:Maliha Islam Tafsi

আয়েশার চিকিৎসার জনের সিঙ্গাপুর ডক্টর দের সাথে যোগাযোগ করলাম। ওনারা বলল আয়েশা নিয়ে চেক আপ করাবে তারপর রিপোর্ট চেক করে বলবে যে আয়েশা কে বাঁচানো যাবে কিনা।আমি আর সময় নষ্ট করতে চায় নি ডক্টর এর সাথে এপয়েন্টমেন্ট ফিক্সড করে পরের দিনই প্লেনের টিকেট বুক করে ফেললাম ।

আয়েশার শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল।বিছানা থেকে উঠতে পারত না। রাতে আয়েশা কে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে ওর পাশে বসলাম আর ওর হাত টা ধরে বললাম-

-আয়েশা কাল সকালে আমরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছি । তোমার ট্রিটমেন্ট এর জন্য ।
-আমি যাবো না। আমি চাই বিদেশের মাটি তে আমার মৃত্যু হোক।
-আয়েশা,,,,,,প্লিজ এইসব কথা আর কখনও বলবা না। আমি তোমাকে ছাড়া বেঁচে থেকেও জ্যান্ত লাশ হয়ে যাবো। আর তুমি বাঁচবে কিছু হবে না তোমার।
-একটা কথা বলি?
-বলো,,,,
-আমি মরে গেলে মিষ্টি দেখে একটা মেয়ে কে বিয়ে করে নিও। আমি চাই না বাকি জীবন টা তুমি আমার মৃত্যুর শোকে একা কাটাও। প্লিজ তুমি আমার কাছে ওয়াদা করো নিজের খেয়াল রাখবা আর ভালো দেখে একটা মেয়ে কে বিয়ে করবা । ওয়াদা করো।
-চুপ করো তুমিই থাকবা আমার সাথে সারাজীবন। আর শোনো না তুমি না বললা আমাদের মেয়ে হলে তুমি নাম রাখবা আয়ানা। আমাদের সব স্বপ্ন পূরণ হবে তুমি ভালো হয়ে যাবে।

কথা গুলো বলে আয়েশাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে মার থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে বের হলাম। চেক আউট শেষ করে প্লেনের উঠলাম । আয়েশা আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। সিঙ্গাপুর এসে আয়েশা কে নিয়ে একটা হোটেলে উঠলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে আয়েশা কে খাইয়ে দিলাম। তারপর আমি খেয়ে ওকে নিয়ে গেলাম ডক্টর এর কাছে।




ডক্টর আয়েশা কে চেক করলেন আর অনেক গুলো টেষ্টা দিলেন। নার্স আয়েশা কে নিয়ে গিয়ে সব টেষ্ট করিয়ে আনলেন। আমি বাংলাদেশের রিপোর্ট গুলো ডাক্তার কে দেখালাম। আর টেষ্ট করা নতুন রিপোর্ট গুলো নার্স দিয়ে গেলেন। ডাক্তার রিপোর্ট গুলো দেখে বললেন আয়েশা আর বাঁচবে না। ক্যানসার লাস্ট স্টেজে এখন আর কোনো ভাবেই ট্রিটমেন্ট করে আয়েশা কে বাঁচানো সম্ভব না বড়জোর আর এক সপ্তাহ বাঁচবে আয়েশা। ডাক্তার এর কথা গুলো শুনে আমার বুক টা ফেটে যাচ্ছিল । সত্যিই কি হারিয়ে ফেলব আমার আয়েশা কে বিশ্বাস হচ্ছিল না ডাক্তার এর কথা গুলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আয়েশা নিশ্চুপ হয়ে চোখের জল ফেলছে।আমি আয়েশা কে কিছু বলতে যাবো তখন আয়েশা আমার হাত ধরে বলল-

-চলো আফরান হোটেলে চলো। এইখানে আমার দম টা বন্ধ হয়ে আসছে।




হোটেলে এসে আয়েশা বিছানায় চুপ করে বসে রইল। আমি ওর পাশে গিয়ে ওর হাতের ওপর হাত রেখে বললাম –

-আয়েশা আমরা অন্য দেশে যাবো। যেইখানে পারি তোমাল ট্রিটমেন্ট করাবো। এইখানের ডাক্তার ভালো না আমি তোমাকে লন্ডন নিয়ে যাবো। এখুনি সব ব্যবস্থা করছি।
কথা গুলো বলে উঠতে যাবো তখনি আয়েশা আমাথ হাত টা ধরে আমাকে বিছানায় বসিয়ে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল-

-আফরান বাংলাদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করো প্লিজ। আর কোনো ট্রিটমেন্ট এর দরকার নেই। আমি জানি আমি আর বাচবো না। প্লিজ যেই কয়টা দিন আছে আমি তোমাদের সাথে আনন্দে কাটাতে চাই । আমি একটুর জন্য ও মনে করতে চাই না যে আমি আর বাচবো না। প্লিজ আফরান দেবে তো এই কয়েকটা দিন আমাকে তোমার সাথে আনন্দে কাটাতে? (কান্না করতে করতে বলল আয়েশা )

-দিবো। আমরা কালকেই বাংলাদেশ ব্যাক করবো। খুব আনন্দে থাকবো আমি তুমি মা মিলে।




পরেরদিন বাংলাদেশ ব্যাক করলাম। মাকে আগে সব বলে রেখেছিলাম ফোনে মা ও আয়েশার সাথে হাসি খুশি কথা বলতে লাগল।

পরেরদিন বিকালে আয়েশা কে নিয়ে এই নদীর ধারে ঘুরতে এলাম। ও আমার কাঁধে মাথা রেখে বসেছিল । তারপর ফুচকা খেলাম ওর সাথে। আমি ওর এলোমেলো চুল গুলো খুব মিস করতাম।
ও একদিন রাতে আমার বুকে মাথা রেখে বলতে লাগল-

-আচ্ছা তুমি এখন আমার মাথায় আর আগের মতো হাত বুলিয়ে দাও না কেন?আমার মাথায় এখন আর চুল নেই বলে?

-নারে পাগলি। এখন তোকে চুল ছাড়া আরও সুন্দর লাগে । এখন তো লোভই সামলাইতে পারি না তোর প্রতি ।

-তাই নাকি?তাহলে আদর করো না কেন?

সেদিন রাতে আদরে ভরিয়ে দিলাম আয়েশা কে। খুব আদর করলাম আমার জান টা কে। আমি তো জানতাম না এটাই ছিল আমার জান কে করা আমার শেষ আদর তাহলে তো ওকে আরও বেশি করে আদর করে দিতাম(কথাগুলো বলে আফরান কেঁদে সাবিহার হাত টা খুব শক্ত করে ধরল)




এতো কঠোর মানুষ টা এইভাবে কাঁদছে আজকে আমার সামনে?সত্যি ভালোবাসা খুবই অদ্ভুত এক ধরনের অনুভূতি । যেই ভালোবাসার মায়ায় একবার পড়লে সেই মায়া কাটানো খুবই কষ্টকর (মনে মনে বলল সাবিহা )

-আচ্ছা তারপর কি হলো? (সাবিহা)

আফরান চোখের জল মুছে আবার বলতে শুরু করল,,,,,,,

চলবে,,,,,

#ভালোবাসায় পাগলামি
#part:11
#Writer:Maliha Islam Tafsi

আফরান চোখের জল মুছে আবার বলতে শুরু করল-
-পরের দিন সকালে আমি দশ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ নিজের বুকের মধ্যে খুব ঠান্ডা অনুভব হতে লাগল। রাতে তো আমি আয়েশা কে বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার বুকে এতো ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে কেন?তাকিয়ে দেখলাম আয়েশা আমাথ বুকের মধ্যে একদম সোজা হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওর দেহটা পাথর এর মতো শক্ত হয়ে আছে আর বরফ এর মতো ঠান্ডা । হঠাৎ মাথায় এলো আয়েশা তো কখনও ভোর পাঁচ টার পর আর ঘুমিয়ে থাকে না। আমি আয়েশা কে খুব জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলাম কিন্তু ও একটু ও নড়ছে না। আমার মনের মধ্যে কেমন যেন অস্বস্তিকর বোধ হতে লাগল। মন বার বার বলছে আয়েশার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা দেখার জন্য ।কিন্তু নিজেকে কেমন যেন নিঃশ্ব মনে হচ্ছিল বার বার তবুও সাহস নিয়ে হাত টা আয়েশার নাকের কাছে নিলাম। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে আমার আয়েশা আমার বুকে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।

আয়েশা বলে চিৎকার করে উঠলাম। বুকের মধ্যে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম ওর নিথর দেহ টা কে। আমার চিৎকারে মা দৌড়ে আমার রুমে এলো সাথে সব সার্ভেন্ট রা।মা আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল কাঁদছিস কেন?

-মা,,,আমার আয়েশা আমাকে রেখে হারিয়ে গেছে মা। প্লিজ তুমি ওকে বলো আমার কাছে ফিরে আসতে। প্লিজ বলো মা।

মা ও আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগল সাথে সব সার্ভেন্ট রা ও। কেউ আয়েশা কে আমার বুক থেকে নিতে পারছিল না। সবাই আমাকে বুঝাইতে লাগল যে আয়েশার কষ্ট হচ্ছে এইভাবে। ওর দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তবুও আমি আমার আয়েশা কে বুক থেকে নিতে দিচ্ছিলাম না।আমি বললাম-তোমরা কেউ আমার আয়েশা কে কেড়ে নিবে না আমার আয়েশা শুধু আমার বুকে থাকবে।



মা ফুফি সোহরাব সবাই আমাকে বুঝিয়ে আমার বুক থেকে আমার আয়েশা কে নিয়ে গোসল করিয়ে খুব সুন্দর করে সাদা কাফন এর কাপড় পড়িয়ে দিল।
তুমি জানো সাবিহা আমার আয়েশার দিকে তাকিয়ে ছিলাম শুধু নিস্তব্ধ হয়ে । আমার সাদা পরীটা আজে সত্যিই কাফনের কাপড়ে আরও সাদা পরী হয়ে গেল।
সবাই মিলে ওর দাফনের কাজ সম্পন্ন করল। আসার সময় সোহরাব আমাকে নিয়ে আসতে চাইলে আমি ওকে বললাম তুই যা আমি পরে আসবো।



আমি আয়েশার কবরের পাশে বসে বললাম –
-কেন আয়েশা কেন?কি দোষ করেছিলাম আমি?কেন আমাকে এইভাবে একা রেখে জ্যান্ত লাশ বানিয়ে চলে গেলে?তুমি তো বলেছিলে আমাকে রেখে কখনও হারিয়ে যাবে না তাইলে কেন হারিয়ে গেলে?আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আয়েশা। কিভাবে বাঁচব আমি?আমার বুক টা যে আজ খুব শূন্য শূন্য লাগছে তোমাকে ছাড়া ।
সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু আমি আয়েশার কবরের পাশে বসে পাগলের মতো ওর সাথে কথা বলতে লাগলাম। সোহরাব এসে সবাই এসে জোর করে আমাকে বাসায় নিয়ে আসল। আমি পাগলের মতো চিৎকার করে বলতে লাগলাম-

-আমি আমার আয়েশার সাথেই থাকবো। আমি যাবো না।



বাসায় এসেও বার বার আয়েশার কাছে ছুটে যেতে চাইলাম তাই সবাই মিলে আমাকে রুমে বন্দি করে দিল। আমি রুমে এসে আয়েশার ছবি ওর প্রত্যেক টা জিনিস ছুঁয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলাম প্লিজ আমাকে আমার আয়েশার কাছে যেতে দাও কিন্তু ও আমার কোনো কথা শুনল না।
আমার পাগলামি দিন দিন বাড়তে থাকল.। আমার সারাক্ষণ শুধু আয়েশার কাছে যাওয়ার জন্য পাগলামি করতাম। বেঁচে থেকেও জ্যান্ত লাশ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। মানসিক রোগীতে পরিনত হয়েছিলাম। মা বাসায় ডক্টর এনে ট্রিটমেন্ট করাতো। তবুও আমার পাগলামি দিন দিন বেড়েই চলছিল।


চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here