ভালোবাসার নেশা তুই পর্ব ২

#ভালোবাসার নেশা তুই
পর্ব:২
লেখিকা:মিহিয়া মিহি

শরীর বিক্রি করে টাকা রোজগার করার জন্য শেষ মেশ তোকে রাস্তায় কাস্টমার দেখতে হচ্ছে। এটা কিন্তু ঠিক না নিলাশা,জান আজ রাতটা আমার সাথে চলো।তোমাকে অনেক টাকা দিব, এটা বলে গাড়ি থেকে নেমে জঘন্যভাবে হাসতে লাগলো।
আমি তার কন্ঠশুনে ভয়ে বার বার কেপে উঠছি, এইমানুষ এইখানে কি করে এলো।
ভয়ে পুরো জ্ঞান হারাবার অবস্থা তবুও কিছুটা সাহস জোগাড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো ফাহাদদদ ভাইইই,,,,
~ফাহাদ-যাক চিনতে পেরেছিস তাহলে,চল চল আমার আর তর সইছেনা,আজকের রাতটা শুধু তোর আর আমার।
ফাহাদ আমার হাত ধরতে যাবে এমন সময় আমি পিছিয়ে গিয়ে বলতে লাগলাম,,,,
~আমি-আপনি যা ভাবছেন তা একদম ভুল ধারনা।ফাহাদ ভাই আসলে আমি এখানে বেড়াতে এসে হারিয়ে গিয়েছি।আর আপনি দয়া করে এখান থেকে চলে যান,আমি প্রায় কান্না করে দিয়েছি,,,
আমার কথাশুনে ফাহাদ আরো খেপে গিয়ে আমার হাত নিজের হাত দিয়ে জোরে চেপে ধরলো,,,
~ফাহাদ-কি বললি তুই আমার সাথে যাবি না,তোকে তো আমার সাথে যেতেই হবে। হয়তো সেটা নিজের ইচ্ছায় নাহলে অনিচ্ছায় শা* ,,
তুই আমাকে অনেক ঘুরিয়েছিস,আর রাস্তার ব্যাবসা করে এখন আমার সামনে ভাব মারতেছিস।আজকে তোর এমন হাল করবো যে,তোর বাপ মা তোকে ভয় পাবে।


আমার হাত টেনে নিয়ে যাবে এমন সময় আমি তার হাতে কামড় দিয়ে ফাকা অন্ধকার রাস্তায় দৌড়াতে লাগলাম।
আমার পিছনে ফাহাদ ও দৌড়াচ্ছে আমাকে ধরার জন্য, আর আমাকে বিভিন্ন খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছে।
আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্য নিরুদেশ হয়ে দৌড়াচ্ছি, কারো কাছে যে সাহায্য চাইবো সেটার উপায় ও নেই।কারন সারা রাস্তাজুড়ে একটা মানুষের চিহ্ন ও খূজে পাচ্ছিনা।
পুরোটা রাস্তা গাছপালায় ভর্তি,মনে হচ্ছে বনজঙ্গল দিয়ে ঘেরা।
এখন নিজের গালে এখন থাপ্পর মারার ইচ্ছা করছে, কেন যে ওই বনবিড়ালদের সাথে ঘুরতে আসছিলাম।
না আসলে এই চরিত্রহীন ফাহাদ ভাইয়ের পাল্লায় পড়তে হতো না।আল্লাহ এবারের মতো বাচিয়ে নাও বলে,বাতাসের গতিতে দৌড়াতে লাগলাম।
পিছন থেকে ফাহাদ ভাই বলছে,,,,
~ফাহাদ-এই থাম বলছি,কোথায় যাবি তুই,এই ফাকা জঙ্গলে কেউ তোকে সাহায্য করতে আসবেনা।
ধরা দে বলছি,আমি দৌড়াচ্ছিলাম এমন সময় দ্রুত গতিতে আসা একটি গাড়ি আমার চোখের সামনে চলে এলো।
আমি নাহহ বলে জোরে চিৎকার দিয়ে সেইখানেই চোখমুখ বন্ধ করে থাকলাম।
কিন্তু কিছুক্ষন পর শরিরে কিছু অনুভব না করার কারণে পিটপিট করে সামনের ব্যাক্তিটাকে দেখে জান ফিরে পেলাম।


দৌড়ে তার পিছনে গিয়ে হাপাতে লাগলাম,,,
~আরিয়ান-নিলাশা কি হয়েছে তুমি এতো রাতে এই রাস্তায় এইভাবে দৌড়াচ্ছে কেন?আর এখানে তুমি কি করে এলে,জিগাসা দৃষ্টিতে,,,,
আর অন্যদিকে আমি ভয়ের চোটে কিছুই বলতে পারছিনা,শুধু একহাত উঠিয়ে সামনের দিকে দেখিয়ে দিলাম।
ফাহাদ আমাদের সামনে এসে বলতে লাগলো,,,
~ফাহাদ-এই যে হিরো,যদি নিজের ভালো চাও তো চুপচাপ এখান থেকে কেটে পড়ো। না হলে মেরে এমন হাল করবো যে,আর কোথাও হিরোগিরি দেখাতে পারবেনা।এই মেয়েটা আজকে রাতে আমার শিকার। আরিয়ান এতোক্ষনে সব কিছু বুঝে মুচকি হেসে গাড়ির দরজাটা খুলে হাতে একটা বন্দুক বের করে ফাহাদের দিকে তাক করলো।
~আরিয়ান-যা নিয়ে যা, তোর যদি সাহস থাকে একটা চুল ছুয়ে দেখা আমার সামনে,চিৎকার দিয়ে,,
ফাহাদ পুরো ঘাবড়ে গেল,আরিয়ানের হাতে গান দেখে তাই সে উলটো দৌড় দিল।কিন্তু যাবার সময় বলে গেল,,,
~ফাহাদ-আজকে পার পেয়ে গেলি নিলাশা,কিন্তু মনে রাখস আমি আবার ফিরে আসবো,বলে সে দ্রুত চোখের আড়াল হলে গেল।
আরিয়ান গানটা গাড়িতে রেখে আমার দিকে ঘুরে বলতে লাগলো,,,,
~আরিয়ান-ভয়ের কিছু নেই, ছেলেটা চল গেছে,কিন্তু সত্যি করে বলোতো তুমি এখানে কি করছো।আর ছেলেটা তোমার নাম জানলো কিভাবে?
~আমি-জ্বি ভাইয়া ওই ছেলেটা আমাদের এলাকার একটা বড়লোক বাবার বখাটে ছেলে।এর আগে অলনেক মেয়ের জিবন নষ্ট করছে,আমাকে লাভ লেটারও দিয়েছিলো কিন্তু আমি তাকে পাত্তা দি নাই। ~আরিয়ান-আজকে আমি ঠিক টাইমে না আসলে কি হতো।কিন্তু তুমি এখানে কেন?
~আমি-নিশান ভাইয়া দিশার সাথে ঘুরতে এসেছিলাম, তারপর রেস্টুরেন্টের সব কথা তাকে খুলে বললাম।


এটা শুনার পর আরিয়ান ভাইয়া অনেক রেগে
গেলেন,,,
~আরিয়ান-নিশান এতোটা দায়িত্বহীন কেন,আমি না এলে কি হয়ে যেত তোমার সাথে এইটুকু কোন সেন্স নেই।
একটা অচেনা মেয়েকে হোটেলে একাই বসিয়ে রেখে, নিজে গালফেন্ডের সাথে ঘুরতে গিয়েছে। আজকে কোনো দূর্ঘটনা হয়ে গেলে এটার ক্ষতি পূরন দিতে পারতো।
আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি,আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আর মনে একটা ঘৃনার বিশাদ জমাট বাধছে নিশান ভাইয়ের উপর, হয়তো এই বিশাদে একদিন নিশান ভাইকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে কাঠ করে দেব।
~আরিয়ান-অনেক রাত হয়ে গেছে, চলো আমার সাথে, আজকের রাতটা আমাদের বাড়িতে থাকিও। আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো ভাবতে পারো,
আর ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই আমার বাড়িতে বাবা মা ছোট বোন আছে।
আমি অবাক চোখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি, একটা মানুষ কি করে এতো ভালো হতে পারে।
তাই কথা না বাড়িয়ে তার সাথে চলে গেলাম।


অন্যদিকে,ডাইনিং এ বাচ্চার মতো কান্না করছে নিঝুম খান আর শাওন খান ফ্লোরে পায়চারি করছে।সাহারিয়ার খান গম্ভিরভাবে ছোফায় বসে আছে।সবারি মাথায় একটাই চিন্তা নিলাশা কোথায়?
দিশা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,মুখচোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে বেচারি অনেক গালি খেয়েছে।
রাত 1টায় নিশান বাড়ির মধ্য প্রবেশ করলো,,,,
~নিশান-আব্বু তোমরা সবাই এখানে দাড়িয়ে কি করছো? ঘুমোওনি এখনি,,
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাহারিয়ার চৌধুরি ঠাসস করে তার গালে চড় বসিয়ে দিলো।
গালে হাত দিয়ে হতবম্ভাবে তাকিয়ে রইলো নিশান,,,,
অবাক হওয়ারি কথা এই প্রথম তাকে কেউ মারলো,,,,
~সাহারিয়ার-নিশান তুমি কোথায় ছিলে? আর নিলাশা কোথায়,ধমক দিয়ে,,,,
এটা শুনে নিশান যেন আকাশ থেকে পড়লো তার আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে নিলাশা এখনো বাসায় আসেনি।
তাকে ড্রপ করার কথাছিলো তো, কিন্তু তাকে কিয়ারা এতো বিজি করে রাখছিলো যে এটা তার মনেই
ছিলোনা।
অজান্তেই নিশানের বুকটা কেপে উঠলো, কিন্তু কেন এটা হয়তো তার অজানা।
নিশান দৌড়ে গাড়িতে বসে ফুল স্পিডে গাড়িটা চালিয়ে সেই হোটেলের সামলে এলো।
কিন্তু হোটেল বন্ধ ছিলো,তন্ন তন্ন করে আশে পাশের সব জায়গা দেখতে লাগলো।
আজ যেন অদূশ্য এক হারানোর ভয় তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো।
শুধু একটা কথাই তার মাথায় ঘুরছিলো সেটা হলো নিলাশা।হাটতে হটতে সেই স্থানে এলো, যেখানে ফাহাদ নিলাশার হাত ধরেছিলো। যার ফলে কয়েকটা কাচের চুরি ভেঙ্গে পড়ে আছে।
নিশান দ্রুত চুড়িগুলো হাতে নিয়ে ভালো করে পযবেখন করে সিওর হলো এগুলো নিলাশারি চুড়ি।
কিন্তু চুড়ি এখানে পড়ে আছে তাহলে নিলাশা কোথায়?


নিশান মাটিতে হাটু গেড়ে বসে চিৎকার দিতে লাগলো।
~নিশান-নিলাশা কোথায় তুইইই,তার চিৎকারের প্রতিধ্বনি চারপাশে বাজতে লাগলো।
সে রাতে 4টায় অনেক খুজাখুজি করে বাসায় ফিরলো, বাড়ির প্রতিটা মানুষ একটুও ঘুমতে পারেনি।আর নিশান নিজের অবস্থা পুরো পাগলের মতো করে ফেলেছে। চোখদুটি লাল লাল আর চুলগুলো এলোমেলো সাটের বোতাম খোলা, প্যান্টে ধুলা লেগে আোছে। সারা বাড়িতে থমথম নিরবতা বিরাজ করছে।
হঠাৎ নিশানের ফোন বেজে উঠলো,,,
~আরিয়ান-নিলাশা আমাদের বাড়িতে আছে,আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশান ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলে দ্রুত গাড়ি নিয়ে আরিয়ানের বাড়িতে চলে গেল।
কলিং বেল বাজছে,আরিয়ান ফ্রেশ হইতে গেছে আর সবাই হয়তো ঘুমাইছে।এটা দেখে নিলাশা দরজা খুলে দিলো,,সাথে সাথে দ্রুত কেউ একজন ভেতরে এসে তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো……..

to be continue……….

গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন,ভালো লাগলে অতি দ্রুত পরের পর্ব দেওয়া হবে।
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here