ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব -২১+২২

#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ২১
#মাহিয়া_মুন

“তু….. তুই নিজের হাতে মেরেছিস?”
“হ্যা…..”
মেঘা আর কিছু বললো না। তাকিয়ে রইলো নিহার দিকে। তার ভাবতেও ভয় লাগছে তার বেস্টু নিজের হাতে এতো জনকে মেরেছে। তার থেকেও অবাক হচ্ছে মেয়েটা প্রতিশোধ নিতে কতটা ঊঠে পড়ে লেগেছে।
“এই সব কবে থেকে শুরু করলি?”
“বছর খানেক আগে থেকে। তখনই সবটা জানতে পেরেছি।”
“কিভাবে?”
“মনে আছে তোর বছর খানেক আগে একজন তরুণ সিঙ্গার কে হায়ার করে আনা হয়েছিল। আমাদের এখান থেকে কিছুটা দূরে গান করেছিলো। নাম ছিল মিস্টার নিহান খান।”
“হ্যা মনে থাকবেনা কেন। তার গান তো আমার খুব পছন্দ।”
“আমার লকেটে দেওয়া নামটা কী ছিলো।”
“নিহ ……….. হোয়াট…… ওইটা সেই নিহান ছিলো মানে সে তোর ভাই।”
“হ্যা….”
মেঘার যেন এই সকালটা অবাক হওয়া দিয়েই শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে অবাক হওয়া ছাড়া আর কোনো ভাববঙ্গী খুঁজে পাচ্ছে না।
“নিহান নামটা শুনে আমার সন্দেহ হয়েছিল। যেদিন তার গানের কনসার্ট হচ্ছিল সেদিন তুই সেখানে যেতে চেয়েছিলি। এটাই ছিল আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট। সেখানে যাওয়ার পর শো শেষ হওয়ার পর মনে আছে তোর আমি তোকে বলেছিলাম ওয়াশ রুমে যাবো। আর একাই গিয়েছিলাম। তখন ওয়াশ রূমে না গিয়ে আমি অনেক কষ্টে সেই সিঙ্গার এর সাথে দেখা করেছিলাম। সেদিন প্রথমে ভেবেছিলাম যে আমি হয়তো ভুল ভাবছি। কারণ তাঁর সাথে আমার চেহারার কোনো মিল নেই। সে অনেক ফর্সা। আর আমি শ্যাম বর্ণের। এভাবে একজন অপরিচিত সিঙ্গার কে কিভাবে কি জিজ্ঞেস করবো সবটাই গুলিয়ে ফেলছিলাম। পরবর্তিতে সে আমায় জিজ্ঞেস করে যে কোনো সমস্যা কিনা। আর আমি তখন লকেট টা বের করে তার সামনে ধরেছিলাম। সে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে লকেট টা নিয়ে বলছিলো,
“ধন্যবাদ বললেও কম হয়ে যাবে। এই লকেট টা আমার জান। ইস কখন যে গলা থেকে ছুটে পড়ে গেল।”
এই বলে সে যখন গলায় লাগাতে গেল তখন নিজের গলায় নিজের লকেট দেখে ভ্রু কুচকে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। পরবর্তীতে যখন সবটা বুঝতে পারলো অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। পরবর্তিতে ভাই আমায় নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আগে সবটা জানতে যে কিভাবে আমি আলাদা হয়ে গেলাম। আর আমাকে যে সে পেয়ে গেছে এইটা আমি কাউকে জানাতে বারন করলাম এমনকি মাকে ও না। ভাই প্রথমে মানতে না চাইলেও পরে মেনে নেয় আর আমার কাছে রেখে যায় তার একজন বিশ্বস্ত মেয়ে বন্ধুকে। যে এখনো আমার সাথে কাজ করে। আর হ্যা প্রায় মাস ছয়েক আগে খান ফ্যাশন হাউজ ওপেন হয়েছে নিউজ এ দেখিয়েছিল। সেটা আমি ওপেন করেছি। আজ পর্যন্ত আমি আর আমার ভাই ছাড়া কেউ জানে না। সবাই জানে খান পরিবারের কেউ একজন এই ফ্যাশন হাউজের ওনার। আমায় আজ পর্যন্ত কেউ দেখে নি।
এ সকল কাজ করতাম রাতের আঁধারে যখন তুই ঘুমিয়ে যেতি।”
এই বলে নিহা মেঘার দিকে তাকালো।
মেঘা নিহার দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা তার অজান্তে গত 1 বছর ধরে কত কি করে যাচ্ছে আর তাকে কিছু জানানো তো দূর কিছু বুঝতে পর্যন্ত দিলো না।
“কিরে কিছু বলছিস না কেন?”
“কী বলবো তুই তো আর আমাকে আগে কিছু জানালি নাহ। তোর সাথে ভীষণ অভিমান হয়েছে। তবে আগে একটা কথা বলে নেই আমিও এখন থেকে তোকে সাহায্যে করবো , আবার ভাবিস না তোর কথা ভেবে করছি। আমি আংকেল আর দাদার কথা ভেবেই করবো সব। আর হ্যা সব সমস্যা ইনশা আল্লাহ্ সমাধান হয়ে গেলে যেন আবার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া না হয়।”
“ওকে প্রিয় ছোট জা। আর হ্যা আর একটা কথা কেউ যেন আমার সম্পর্কে না জানতে পারে। স্পেশালি
চৌধুরী পরিবারের কেউ।”

“কি না জানার কথা হচ্ছে প্রিয় বড় ভাবী……”
মেঘের গলার স্বর শুনে দুজনেই পিছনে তাকালো। দুজনেই অবাক হয়েছে অনেকটাই।
আদ্রিজ তাকিয়ে আছে নিহার দিকে। কাল সন্ধ্যা থেকে এই মেয়েটা একবারও কল ধরে নি। যাও একবার মেঘা ধরেছে তাও ঠিক মত কোন কথাই বললো না।
নিহা মেঘাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে মেঘের দিকে তাঁকিয়ে হালকা হেসে বলে উঠলো,
“আরেহ ভাইয়া আপনারা অসময়ে না মানে আপনাদের তো এখন আপনার বড় ভাই এর নানু বাড়ি থাকার কথা ছিল।”
“হ্যা ছিলো কিন্তু আমরা চলে আসলাম। কেন এসে মনে হয় সমস্যা করলাম।”
আদ্রিজ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
নিহা আর কিছু বললো না। বুঝতে পারলো আদ্রিজ বাবু রেগে আছে। আর কারণটাও নিহার বুঝতে অসুবিধা হল না।
মেঘা হেসে বললো,
“আরেহ ভাইয়া কি বলছেন, আমাদের অসুবিধা হবে কেন।”
“কৈফিয়ত নেওয়া শুরু করে দিয়েছে যে তোমার বোনে।”
নিহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো আদ্রিজের দিকে। লোকটা ঠান্ডা মাথায় তাকে অপমান করছে।

বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে নিহা এবং আদ্রিজ।
অনেক্ষন ধরেই নীরবে দাঁড়িয়ে আছে দুজন। কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বলছে না।
পরিশেষে নিহা বলে উঠলো,
“এইভাবে চুপ করে আছেন কেনো?”
আদ্রিজ কিছুই বললো না।
“কি হলো কিছু বলছেন না কেন?”
আদ্রিজ পুনরায় নীরব রইলো।
“আচ্ছা আপনি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন, আমি আসছি।”
এই বলে নিহা রুমের ভিতর পা রাখতেই আদ্রিজ হাত ধরে টান দিল।
নিহা হটাৎ টান পড়ায় নিজেকে সামলে নিতে পারলো না, হুড়মুড়িয়ে গিয়ে আদ্রিজের গাঁয়ের উপর পড়লো।
আদ্রিজ নিহার কোমড় জড়িয়ে ধরে পলকহীন তাকিয়ে রইলো নিহার দিকে।
*
*#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ২২
#মাহিয়া_মুন

“ছা….. ছাড়ুন….”
আদ্রিজ কিছু না বলে তাকিয়ে রইলো নিহার দিকে।
“আদ্রিজ বাবু আমি কিছু বলছি।”
“কাল রাতে কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
নিহা চমকে আদ্রিজের দিকে তাকালো। ইনি কীভাবে জানলেন। মেঘা তো বলে নি বললো তাহলে……..
নিহা নিজেকে সংযত করে বললো,
“কো…. কোথাও না। শুধু বিকালে পার্ক এ গিয়েছিলাম। কেন বলুনতো?”
“Seriously তুমি কোথাও যাও নি।”
“আমি মিথ্যে কেন বলতে যাব। আপনার ফোন উঠায় নি বলে এখন উল্টা পাল্টা বলছেন। ”
“তাহলে কাল পার্ক এ যা হল…….”
নিহা নিজেকে যথেষ্ঠ স্বাভাবিক রেখে বললো,
“কি হয়েছে?”
“তোমাকে ওই লোকটা ছুরি কেন মারতে গেলো, আর কয়েকদিন আগেই তুমি কিডন্যাপ হয়েছিলে। বলেছিলে সেই ব্যাক্তিকে তুমি দেখো নি, কিন্তু সেই ব্যক্তির কণ্ঠ অনেকটাই আমার বাবার বয়সী লোকের কণ্ঠ । দেখো তার এক দিন পরেই আমরা আদিল আংকেলের মৃত্যুর খবর পাই। আর তার লাশ দেখে যা মনে হলো যে কেউ প্রতিশোধ নিয়েছে, নাহলে এইভাবে জ্বালিয়ে দেয়া অসম্ভব। আর তার থেকে বড় কথা ……”
এই বলে আদ্রিজ পকেট থেকে কিছু একটা বের করে নিহার সামনে ধরলো।
“এই রিং মেলায় তোমার হাতে আমি দেখেছিলাম।”
নিহা কিছুটা আন্দাজ করেছিল যে এরকম কিছুই হবে। তাই হেসে আদ্রিজের দেয়া রিংটা হাতে নিয়ে বলল,
“আরেহ এই হাতের রিং টাতো একদম আমার হাতের রিং এর মত। আপনি এই জন্য বুঝি এতক্ষন আমায় এসব বলছিলেন? দাড়ান আসছি… ”
এই বলে নিহা রুমে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে আদ্রিজের সামনে আসলো।
“এই দেখুন আমার হাতের রিং। আর তাছাড়া একই রকম রিং অনেক এরই থাকতে পারে। মানুষ যদি একই রকম সাত জন দেখতে হয় তাহলে এইগুলা তো মানুষের হাতেই বানানো বস্তু।””
“হুম তাও ঠিক।”
“হুম ……..”
এই বলে নিহা সামনে তাকাল। আজ আর একটুর জন্য হলেই আদ্রিজ বাবুর সামনে প্রায় ধরা পড়ে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভাল যে তার আর মেঘার একই রকম রিং ছিল।
ঐদিন কিভাবে যে রিংটা রয়ে গেল আরমান এহসানের কাছে বুঝতে পারছে না নিহা।
নিহা পুনরায় আদ্রিজের দিকে তাঁকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,
“আমায় ধরা এতো সহজ নয় আদ্রিজ বাবু। প্রতিশোধ না নেয়া অবধি আমায় কেউ ধরতে পারবে নাহ। ”
অন্যদিকে আদ্রিজও নিহার দিকে তাঁকিয়ে আছে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে নিহা কিছু তো লুকাচ্ছে। সবার অজান্তে কিছু তো করছে। হাতের রিং টাও কেন যেন মনে হচ্ছে নিহার । ভেবে রাখলো আজ থেকে নিহাকে সে নিজে ফলো করবে।

রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে নিহা এবং আদ্রিজ। আদ্রিজ পড়ে যাওয়ার ভয়ে মূলত নিহার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
নিহা চোখ রাঙিয়ে তাকাচ্ছে বারংবার।
আদ্রিজ কিছুটা নার্ভাস কন্ঠে বলে উঠলো,
“আসলে শেষ কবে রিক্সায় চড়েছিলাম মনে পড়ছে না। আর রিক্সা গুলো খুব ছোট, বসাও যাচ্ছে না। যদি পড়ে যাই তাই তোমায় ধরে রাখলাম। তুমি আবার অন্য কিছু ভেবো না। অবশ্য আমার কিন্তু ভালোই লাগছে। অন্তত এইভাবে হলেও……….”
“লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে বসে আছেন নাকি। আমাদের কথাগুলো আমরা বাদেও একজন শুনছে।”
“কে….. ওহহ সরি সরি……”
“হুম আচ্ছা বললেন না তো আপনারা দুজন এতো তাড়াতাড়ি আসলেন কেন?”
“এটাও বলে দিতে হয়। ইস আমার বউটা কতো অবুঝ। নতুন বিয়ে করলাম, সবসময় বউ এর সাথে কাঠালের আঠা হয়ে থাকবো । তা না করে কি ওখানে গিয়ে বসে থাকবো।”
“আবারো ফাজলামো কথা বার্তা শুরু করছেন । দেখুন আমি বলতে চাইছি এতো তাড়াতাড়ি আসতে দিল শাশুড়ি মা। একজন মৃত ব্যাক্তির বাসায় গেলেন, আপনাদের আত্মীয়। অন্তত কিছুদিন তো থাকতেন।”
“আমিও তাই ভেবেছিলাম যে বউ ছাড়া মিনিমাম চার দিন তো থাকাই লাগবে। কিন্তু বাবা হটাৎ বললো চলে আসতে আমাকে আর মেঘ কে। আসলে কি বলতো বাবা তো আমাদের সময়টা পার করে গেছে, আজ বিয়ে করে কাল বউ এর থেকে আলাদা থাকা যে অনেক কষ্টের বিষয়। তাই আমাদের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে চলে আসার জন্য।”
“বাজে কথা না বলে থাকতে পারেন না তাইনা। আংকেল না মানে বাবা পাঠিয়ে দিয়েছে আপনাদের, স্ট্রেঞ্জ।”
“হুম……”
নিহা আর কিছু বললো না। কিছু একটা মিলানোর চেষ্টায় আছে। তার জানামতে আরো একজন আছে যার কাছ থেকে এখনো প্রতিশোধ নেয়া বাকি আছে এই দেশে। কিন্তু সে কে সেটা এখনো জানতে পারে নি সে।
কিছু একটা ভাবতে ভাবতে কখন যে আদ্রিজের কাধে মাথা রেখেছে সেদিকে খেয়াল নেই নিহার।
আদ্রিজ নিহার দিকে তাঁকিয়ে হাসলো। ইসস সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত। কিন্তু তা হয়তো হওয়ার নয়। কারো আর্তনাদ ভরা চিৎকারে দুজনেই সামনে তাকালো।
রিক্সা থেমে গেছে। রিক্সাচালক রাস্তায় পড়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। কেউ গুলি করেছে যা রিক্সাচালকের বুকে লেগেছে।
নিহা এবং আদ্রিজ দ্রুত রিক্সাচালক এর কাছে গেলো। নিহা চারদিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সামনে একটা গাড়ির মধ্যে বসে থাকা একজন তার দিকে আঙুল তাক করে কিছু একটা বুঝাচ্ছে।
নিহা ভালোভাবে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো লোকটির বলা কথাটি। লোকটি বুঝাতে চাইছে যে এই রিক্সাচালক এর মতই তার প্রিয় মানুষটাকে এইভাবে মেরে ফেলবে। নিহার চোখ লাল হয়ে গেছে। সে লোকটির দিকে পুনরায় তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় দিয়ে উঠলো।
দ্রুত আদ্রিজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“রিক্সায় উঠান ওনাকে। হসপিটাল নিতে হবে দ্রুত।”
আদ্রিজ এবং সে লোকটিকে নিয়ে অন্য একটি রিক্সায় উঠে গেল।
*
*
*
#চলবে
*
#চলবে

(রোমান্টিক কথা বার্তা আমার মধ্যে আসে না কেন 🤦🏻‍♀️😤😤😤😤🤦🏻‍♀️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here