ভালোবাসার রাত ২ পর্ব ১৯+২০

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১৯+২০)

সন্ধ্যার কোনো কথার উত্তরই দিচ্ছেনা রাত। দেওয়ার কোনো অঙ্গভঙ্গিও নেই। সে আপনমনে হেঁটেই চলেছে। বরং পায়ের গতি বেড়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা দৌড়ে এসে রাতের পথ আটকে দাড়িয়ে হাঁপাচ্ছে।

“” তুমি দেখতে পারছোনা,হাঁটতে পারছিনা? উফ! আবার মুখেও কুলু পেতেছো। সমস্যা কি?””

রাত সন্ধ্যাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই সন্ধ্যা একদমে বললো,,

“” আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমাকে বিয়ে করবো,কবুল কবুল কবুল!””

যে কথাটি শোনার জন্য অপেক্ষার প্রহন গুনে এসেছে রাত আজ তাই তার কানে বীণের সুরে বাজছে,তার স্বপ্নবধুটি তার চোখের সামনেই দাড়িয়ে আছে। মাথাটা নিচু করে,হা করে বাতাস খাচ্ছে,বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে এখনো হাপাচ্ছে,চোখদুটো কি বন্ধ করে আছে??

সন্ধ্যা মন ভরে নিশ্বাস খাচ্ছে,বুকটা হালকা লাগছে,মনে হচ্ছে কত বছর ধরে এক বিশাল আকারের পাথর চাপা রেখেছিলো। উফ! মনের কথা মনের মানুষটিকে জানাতে পারলে বুঝি এমনি লাগে?? এতো হালকা লাগছে মনে হচ্ছে হাতদুটো দুদিকে মেলে ধরলেই আকাশে উড়ে যাবে! সুখের পাখায় ভর করে অনুভূতির আকাশে মনের সুখে উড়ে উড়ে গান গায়বে। কিন্তু কোন গানটা গায়বে সে??

প্রাকৃতিক নিরবতার সাথে সন্ধ্যা রাত দুজনেই মিশে গিয়েছে। যেন দুজনেই আজ এই নিরবতাকে আপন করেই কাটিয়ে দিবে। রাস্তায় শো করে পলক ফেলার মতো দু একটা গাড়ী চলে যাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই,ওদের নিশ্বাসের শব্দটাও নেই। তাহলে কি দুজন নিশ্বাস বন্ধ করে আছে??

“” এমন থমকে গেলে যে? যা শুনতে চাইছিলে তাই তো বললাম। এখনো চুপ কেন? এবার তো মুখের তালা খুলো!””

রাত তখনো চুপচাপ। সত্যিই তো আমিতো এই কথাটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে ছিলাম তাহলে এখনও কেন আমি চুপ?

“” রাত ভাইয়া?””

সন্ধ্যার ডাকে রাত নিরবতা ভেঙেছে,তবে মুখে নয়,পায়ের শব্দে।

“” আরে এখন আবার কোথায় যাচ্ছো??””

সন্ধ্যার ডাকের কোনো পরোয়া করছেনা রাত। সে হেঁটেই চলেছে। চোখের দৃষ্টি সোজা গাড়ীর দিকে। সন্ধ্যা দু কদম এগিয়ে এলেও আর এগুলো না। ঠাঁই দাড়িয়ে থেকে চিৎকার করে বললো,,

“” আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছো তো যাও। আমি কোথাও যাবোনা। এখানেই থাকবো,এই এখানটাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে মশার কামড় গুনবো। ভালোবাসি বলতে না বলতেই অবহেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। হুহ!””

সন্ধ্যা নিজের জায়গায় দাড়িয়ে একমনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা বাক্যেই সে রাতকে বকে যাচ্ছে,কিছুটা বকা নিজেকেও দিলো। বকাবকির পর্ব শেষ হওয়ার আগেই ইঞ্চিনের শব্দ। সন্ধ্যা সামনে তাকাতেই বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে গিয়ে বাড়ি খেলো। মুখটা হা’হওয়ার সাথে সাথে চোখদুটোও বড় হয়ে গিয়েছে। যে মানুষটা তার অতি ছোটছোট কথাগুলোও মাটিতে ফেলতে পারতোনা,সেই মানুষটা তাকে এই জঙ্গলে রেখে চলে যাচ্ছে! সত্যিই কি এটা তার রাত ভাইয়া?? স্বপ্ন দেখছেনা তো??

সন্ধ্যা নিজের বিস্ময় চাপিয়ে চারপাশটা আরেকবার দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিলো। অন্ধকারটা কি হঠাৎ করেই কুটকুটে কালো হয়ে গেলো? চোখ বন্ধ করে দুহাতে শাড়ী গুটিয়ে আরেকদফা দৌড় লাগায় রাতের দিকে।

সামনের সিটের দরজায় হাত লাগাতেই রাত ওর দিকে শক্ত চাহনি দেয়,যার মানে হলো পেছনে গিয়ে বোস!সন্ধ্যা মুখ বাকিয়ে পেছনে গিয়ে বসে পড়লো।

এই নিশীরাতটা কেন অভিমানি রাতে ছেয়ে আছে? কেন হলোনা তোর আর আমার ভালোবাসায়মাখা ভালোবাসার রাত?? কেন একটি মধুরস্মৃতিতে মধুরতায় ভাসলোনা?? তুই কি খুব দেরি করে ফেলেছিস? কিন্তু দেরি কেন হবে? আমারতো কোনো তাড়া ছিলোনা! তাহলে?? তবুও কেন আমি তোকে আমার মাঝে জড়িয়ে নিতে পারলাম না? কেন প্রাপ্তির হাসিতে মন ছুয়াতে পারলামনা?? তবে কি আজ ভালোবাসির থেকে অভিমানটা বেশি হয়ে গিয়েছে?? অভিমানের মোটা পর্দায় আমার সুপ্ত ভালোবাসাটা চাপা পড়ে গিয়েছে?? কিন্তু আমার মনটা যে খুব করে চাচ্ছে তোকে ভালোবাসার চাদরে মুড়ে নিতে! কিন্তু অভিমানের মোটা পর্দাটা ছিড়তে পারছিনা কেন??

রাত প্রশ্ন আর না পাওয়া উত্তরের মাঝে ডুবে থেকেই ড্রাইভ করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে সন্ধ্যাকে দেখছে। রাগে মুখ ফিরিয়ে আছে,কপালের টিকলি একপাশে পড়ে,কাজল ল্যাপ্টে বধুসাজ ঘেটে আছে।

সন্ধ্যা রাগে ফুসতে ফুসতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ কানের কাছে নানান কথা বাজতে ঘুম ভেঙে গেলো।

“” এখানে সই করুন!””

চোখের সামনে টুপিপড়া এক মাঝবয়সী লোকের এমন কথাতে সন্ধ্যা হতভম্ভ। বলা নেই কওয়া নেই সই চাচ্ছে? আমার বাবার সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করার মতলব নাকি?? সন্ধ্যা সরু নয়নে লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনোযোগ ক্ষুন্ন হলো দীর্ঘ হামিতে। হামির সাথে দুহাত উপরে তুলে একটু মোচড় দিতে আরো চারজোড়া পুরুষ চোখ দেখতে পেলো। যাদের মুখে স্পষ্ট বিরক্ত! সন্ধ্যা ছাড়া ছাড়া হামিটা শেষ করে চারপাশটা চোখ বুলাচ্ছে,সবকিছু কেমন সন্দেহজনক,কিডন্যাপ হয়ে গেলাম নাকি??

ধীরতারণায় চোখ বুলিয়ে তার পেছনের দরজায় চোখ পড়লো,রাত দাড়িয়ে আছে,কানে ফোন,ঠোঁট অনরবর নড়ছে। সন্ধ্যার সন্দেহমনে বেজে উঠলো,হচ্ছেটা কি?

“” ম্যাম,আপনি কি সইটা করবেন? বাড়িতে আমার বউ খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে,এভাবে আর কতক্ষণ অভুক্ত থাকবো?””
“” আমার সইয়ের এতো জোর? আপনাকে অভুক্ত রাখতে পারে? বাহ! বেশ ইন্টারেস্টিং তো! আমি তো জানতাম যে কিডন্যাপ হয় তাকে অভুক্ত রাখে এখানে তো উল্টো!””

সন্ধ্যার কথায় লোকটি চমকালো সাথে আহতও হয়েছে।

“”তোমাকে কেউ কিডন্যাপ করেনি,সন্ধ্যা। তোমার বিয়ে হচ্ছে। উনি তোমাকে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করতে বলছেন।””

সন্ধ্যা চট করে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পড়লো। পেছনে সায়ন দাড়িয়ে। সায়নকে ছেড়ে রাতের দিকে কাঠিন্যচেহারায় নিয়ে তেড়ে এসে বললো,,

“” কবুল বললাম তোমাকে,আর রেজিস্ট্রি করবো অন্য কাউকে? তুমি কি আমাকে ছ্যাকা দিতে চাচ্ছো রাত ভাইয়া??””

রাত কান থেকে ফোনটা সরালো। সন্ধ্যাকে টেনে আগের জায়গায় বসিয়ে দিয়ে কাজী সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো,,

“” আমি কোথায় সাইন করবো?””

কাজীসাহেব হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো বিশাল হাঁসি নিয়ে রাতকে সই করার জায়গাটা দেখিয়ে দিলো। সন্ধ্যা রাতের দিকে অসহায়গলায় বললো,,

“” আমি তোমাকে উকিলবাপ বলতে পারবোনা!””

সাথে সাথে চারপাশ থেকে কৌতুক শোনার মতো হাঁসি। বিরক্ত চোখগুলো হাঁসিতে চোখ চিকচিক করছে। পেছন থেকে সায়ন বললো,,

“” রাত নয়,তুমি আমাকে উকিলবাপ ডাকবে!””
“” তাহলে আমি বিয়ে করছি কাকে?””
“” তুমি যাকে কবুল বলেছো তাকে!””

রাতের সাইনের পাশে সন্ধ্যা সাইন করবে। কলম হাতে নিয়ে চিৎকার করে উঠলো,,,

“” আমি প্রেম করলাম না তবুও পালিয়ে কেন বিয়ে করবো? আমার আম্মু,আব্বু কষ্ট পাবে। উনাদের ডাকা হোক!””

রাত সন্ধ্যার দিকে তাকালো এমনভাব যে,না করলে নাই,আমি তাহলে যাই!

রাত দরজার দিকে পা বাড়াতেই সন্ধ্যা দ্বিতীয় দফায় চিৎকার করে বললো,,

“” সই করা শেষ!””

বিয়ের পার্ট চুকে গেলোও কাজী সাহেবের সমস্যা সমাধান হয়নি। সে অভুক্ত পেট হাতরিয়ে বললো,,

“” আম্মাজান,আপনার স্বামী গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছেন,আপনি এই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গাড়ীতে গিয়ে বসুন! আমি অফিস বন্ধ করে বউয়ের কাছে যাবো।””

সন্ধ্যা কাঠের চেয়ারটায় শক্ত আসনে বসে সহজগলায় বললো,,

“” এই যে আপনি বউয়ের কাছে যাওয়ার জন্য এতোটা কাতর আমার স্বামী কেন নয়? এমন কাতরহীন স্বামীর অপেক্ষা আমি ভাঙবনা। আজ থেকে এটাই আমার বাড়ি,আমার নাওয়া,খাওয়া,শোয়া সব এখানেই হবে। আপনার মোবাইলটা দিন তো একটা জরুরী কল করবো।””

কাজী সাহেব হতাশমনে ফোনটা সন্ধ্যার দিকে ধরলো। সন্ধ্যা ফোনের মধ্যে একটা করে ডিজিট উঠাচ্ছে আর ভাবনায় ডুব দিচ্ছে। যেন সে পরীক্ষার হলে চুড়ান্ত পর্যায়ের প্রশ্নের উত্তর ভুলে গিয়েছে!

ভাবনা থেকে পাওয়া নাম্বারটাই ডায়াল করে হ্যালো বলতেই ফোন হাওয়া! হুট করে নিরুদ্দেশ হওয়া ফোনের খোজ করার আগেই সন্ধ্যাও হওয়াতে ভাসছে। সন্ধ্যা কিছু বুঝার আগেই ওকে মাটিতে দাড় করিয়ে দিলো রাত। পেছনের দরজাটা খুলে অনেকটা ধাক্কা দিয়ে ওকে বসিয়ে দিলো।

সন্ধ্যা চুপচাপ বসে নিভু গলায় বললো,,

“” বাহ! বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে অবজ্ঞাও শুরু!””

~~

শোশো হাওয়ার তালের সাথে গাড়ী চলছে নিজ গতিতে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের রোদের তীর্যক রশ্মি এসে পড়ছে সন্ধ্যার মুখে। কেমন এক গরমে ভাপসা অনুভূতি,বাইরের বাতাসটাও এখন আর গায়ে লাগছেনা। শাড়ী আর গয়নাতে এবার বিরক্ত চলে এসেছে,কেমন চুলকোনি উঠছে। কিন্তু খুলতেও পারছেনা,যার বউ হলাম সে কি আমার বউ সাজটা দেখেছে?? কি যে হয়েছে আল্লাহ জানে,মুখের সাথেতো চোখেও তালা লাগিয়েছে,তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত। সমস্যা কি?? আমি যা চাইলাম তা না পেয়েও তোমারটা দিলাম তাও মন ভরছেনা??? এবার কি বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?? তোমার আর কি চাই?

“” তোমার গাড়ীর কি তেল ফুরায়না?””

রাতের দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সন্ধ্যা নিজ থেকেই আবার বললো,,,

“” আমরা যাচ্ছি কোথায়?””
“”…..””
“” উফ! কিছু বলছোনা কেন? তোমার আর কি চায়?””

সন্ধ্যা একা একা প্রশ্ন করতে করতে হাপিয়ে উঠলো। এভাবে একা একা কত বকবক করা যায়?? সন্ধ্যা বিরক্ত মুখ করে জানালার কাঁচের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।

~~
ধরাম করে দরজা লাগানোর শব্দে সন্ধ্যা ধরফরিয়ে উঠলো। সে কি আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো?? সন্ধ্যা চোখ ঢলে নিয়ে ভালো করে তাকাতেই বুঝতে পারলো নিজের বাসায় চলে এসেছে। রাত তখনো নিজের সিটেই বসে আছে তাহলে শব্দটা কোথা থেকে আসলো?? সন্ধ্যা রাতের দিকে একপলক তাকিয়ে নিয়ে গাড়ী থেকে নামতে গিয়েও নামলোনা। আবার আগের জায়গায় বসে থেকে ভাবছে,তুমি যেহেতু মুখ ফুটে নামতে বলছোইনা তাহলে আমিও নামবোনা,হুহ!

নিজের ভাবনায় নেওয়া সিদ্ধান্তের সাথে সন্ধ্যা হাটু উচু করে বসে রইলো। দুহাতে হাটু জড়িয়ে রাতের মুখের বুলির জন্য অপেক্ষা করছে। সময় গড়াচ্ছে,দুজনেই চুপ! সন্ধ্যার নিরব আলোতে দুজন আবার মিশে যাচ্ছে। পুরোপুরি মিশে যাওয়াটা হলোনা তার আগেই রাত এসে সন্ধ্যাকে টেনে নামিয়ে দিলো।

“” বউ শ্বশুড়বাড়ি এলেতো বর কোলে করে ভেতরে ঢুকায় আর তুমি আমাকে আসামীর মতো টেনে ছিচড়ে জেলে ঢুকাচ্ছো? তোমার কি মায়া দয়া নেই?? মানছি এটা আমার বাপের বাড়ি আবার শ্বশুড়বাড়িও,তাই বলে কি আমি বউআদর পাবোনা? আমি কি পোড়াকপালি?””

সন্ধ্যার আফসোসের সুর রাত গায়ে মাখেনি,পুনরায় ইঞ্চিন সচল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

~~

সন্ধ্যার খাওয়ার দিকে তাকিয়ে তিয়ামতী বললো,,

“” আরে আসতে খা,গলায় আটকাবে তো। নাকের নোলকটা তো খুলে নে!””
“” উফ! খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করো নাতো। তোমার ছেলে আমাকে তিনদিন না খায়িয়ে রেখেছে।””
“” তিনদিন না খেয়ে রেখেছে মানে? আমি তো কাল কে বরপক্ষ আসার আগেই তোকে ঠান্ডা সরবত খাওয়ালাম!””

সন্ধ্যা খাবার খাওয়া বন্ধ করে বললো,,

“” তাহলে আমি একদিনে দুরাত কিভাবে ঘুমালাম,মামি?””

তিয়ামতী সন্ধ্যার মাথায় হালকা বারি দিয়ে বললো,,

“” গাধী একটা!””
“” তুমি আমার ঘোমটা নষ্ট করছো কেন? আমার তো এখনো বাসর বাকি।””
“”শ্বাশুড়ির সামনে এসব কি কথা লজ্জা কি সব খেয়ে ফেলেছিস?””
“” আমি খাইনি,তোমার ছেলে খেয়ে ফেলেছে!””
“” পাজি হয়েছিস অনেক। খাওয়া শেষ কর আমি তোকে আবার সাজিয়ে দিবো। এখন তোকে ভূতের মতো লাগছে!””
“” তুমি সাজিয়ে দিবে?””
“” কেন? আমি দিলে সমস্যা?””
“” আমার লজ্জা লাগবে।””

তিয়ামতী চোখ সরু করে বললো,,

“” লজ্জা লাগবে কেন?””

সন্ধ্যা দুহাতে মুখ ঢেকে বললো,,,

“” সাজতে লজ্জা লাগবেনা তো,শ্বাশুড়ির সাজে ছেলে ছুবে তাই লজ্জা লাগবে।””

সন্ধ্যার উত্তরে তিয়ামতী বিব্রতবোধ করছে। ডাইনিং ছেড়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করছে,কি সুক্ষ চিন্তা-ভাবনা!

~~

রাতের ড্রেসিংটেবিলটার সামনে দাড়িয়ে আছে সন্ধ্যা। আগের বউ সাজ গোসলের সাথে ধুয়ে ফেলেছে। নতুন করে সেজেছে,তিয়ামতীর হাতেই। শ্বাশুড়ি ছেলের বউকে সাজিয়ে দিবে এমন সুযোগ সে কেন মিস করবে?? সন্ধ্যা আয়নার সামনে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আগেরবারের মতো ভারী মেকাপ নেই,কিন্তু এই সাজটাতেই বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। পুরো সাজ ঠিকঠাক মতো দেখে নিয়ে হাতে চুড়ি পড়ে নিলো। ঠোঁটের লিপস্টিকটা আরেকটু গাঢ় করতে যাবে তখনি রাতের কন্ঠ। বাবার সাথে কথা বলছে মনে হয়। সন্ধ্যা চটপটে লিপস্টিকটা ঠোঁটে লেপে নিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। মাঝ বরাবর বসে মাথার ঘোমটাটা টেনে দিলো!

চলবে

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (২০)

রাতের ড্রেসিংটেবিলটার সামনে দাড়িয়ে আছে সন্ধ্যা। আগের বউ সাজ গোসলের সাথে ধুয়ে ফেলেছে। নতুন করে সেজেছে,তিয়ামতীর হাতেই। শ্বাশুড়ি ছেলের বউকে সাজিয়ে দিবে এমন সুযোগ সে কেন মিস করবে?? সন্ধ্যা আয়নার সামনে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আগেরবারের মতো ভারী মেকাপ নেই,কিন্তু এই সাজটাতেই বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। পুরো সাজ ঠিকঠাক মতো দেখে নিয়ে হাতে চুড়ি পড়ে নিলো। ঠোঁটের লিপস্টিকটা আরেকটু গাঢ় করতে যাবে তখনি রাতের কন্ঠ। বাবার সাথে কথা বলছে মনে হয়। সন্ধ্যা চটপটে লিপস্টিকটা ঠোঁটে লেপে নিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। মাঝ বরাবর বসে মাথার ঘোমটাটা টেনে দিলো!

চোখের পলকের সাথে সাথে সে রাতের জন্য অপেক্ষা করছে। কান তার কার্যক্রমে দুর্বল! রাত আর সিকান্দার সাহেবের মাঝে কি কথোপকথন হচ্ছে তা পুর্ণরূপে বুঝতে পারছেনা। তবে,অনেক চেষ্টায় আছে শোনার,ফ্যানটাও অফ! তারপরও কোনো কথায় সঠিকভাবে বুঝতে পারলোনা। শব্দটা আসতে আসতে যেন আরো বেশি মিশে যাচ্ছে নাকি সন্ধ্যার সেদিক থেকে মনোযোগটা কমে এসেছে?? এদিকে ঘোমটার নিচে সাজুগুজু মুখটাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যাচ্ছে। হাতের তালুটাও কেমন একটা স্যাতস্যাতে ভাব চলে এসেছে,ফ্যানটা ছেড়ে আসা উচিত ছিলো,এখন কি উঠে গিয়ে ছাড়বে?? কিন্তু ছাড়তে গিয়ে যদি রাত চলে আসে?? তাহলে তার ঘোমটা টা কে খুলবে?? সন্ধ্যা দোটানায় ভুগছে,তবে তা আর বেশিক্ষণ রইলোনা। মুহুর্তেই মনের ভেতর চলছে হাজারও কল্পনার ফুলঝুরি। কল্পনার মাঝে রাতকে নিয়ে চলছে নানা রোমাঞ্চকর ভাবনা। প্রত্যেকটা ভাবনাতেই সন্ধ্যার মনে শিহরনের অদৃশ্য কামড় দিয়ে যাচ্ছে!

বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হওয়ার পরও যখন রাত এলোনা তখন সন্ধ্যার রোমাঞ্চকর ভাবনাতে বিরক্ত বাসা বাধলো। দরজার দিকে উৎসুক চাহনি দিতেই মনের ভেতর গানের সুর বেজে উঠতে চাইছে। কিন্তু কোন গানটা গায়বে সে?? গানের ভান্ডার থেকে একটি গান সংগ্রহ করলো সন্ধ্যার গানমন। ঘোমটাটা নিজেই সরিয়ে নিলো। হাতভর্তি চুড়ির রিনঝিন শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে সন্ধ্যা গান ধরেছে,,,

তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাতি নিভাইয়া,,,
আমি অন্ধকারে, বন্ধ ঘরে যাবো মরিয়া….

ছি!ছি!!ছি!!! এটা আমি কি গান গাইছি?? আমার স্বামী তো এখনো আসেইনি তাহলে বাতি কেন নিভাবে?? না এটা সময়ক্ষণের সাথে মিলেনি অন্য গান গাইতে হবে,কি গান গাইবো??

সন্ধ্যা ছোট্ট ভাবনাতে ডুব দিলো। ডানহাতের শাহাদাৎ আঙুলটা গালে তাল মিলিয়ে সে ভাবছে,গভীর ভাবনাতে গান আসছে আর যাচ্ছে,সাথে সাথে মাথা হ্যা’তে,না’তে দুলছে,চোখের মনিটা চঞ্চলতায় ঘুরছে। এতোশতো ভাবনাতেও সে তার সময় উপযোগী কোনো গান না পেয়ে হতাশ হলো। হাতটা গাল থেকে হাটুতে পড়ে চুড়ির শব্দ। মুখে বিরস সুর এনে নিচু গলায় গান ধরলো,,,

বাসর ঘরে বউ অপেক্ষায়,,,,
স্বামী আসার নাম নাই নাই নাইইইইই….

সাথে সাথে রুম অন্ধকার হয়ে গেলো। সন্ধ্যা থমকে গিয়ে ঘোমটা টেনে নিলো। রুমের মধ্যে পা চলনের শব্দ। তাহলে কি রাত ভেতরে এসেছে?? কিন্তু ঘোমটা না খুলে লাইট বন্ধ করলো কেন?? বউ সাজ দেখবে না?? সন্ধ্যার ইচ্ছে হলো বলতে,

আলোকসজ্জায় দেখবে মুখ,,
লজ্জাতে লাল হবে চিকুব!!

সন্ধ্যার ইচ্ছে ঘোমটার তলেই আটকে রইলো। তার আর কিছু বলা হয়নি,অন্ধকার ঘরে আলোও জ্বালা হয়নি। সময় গড়াচ্ছে,পায়ের চলনের শব্দটাও একসময় মিলিয়ে যাচ্ছে। আর সন্ধ্যার উৎকন্ঠা উত্তেজনাতে অভিমান ভর করছে। কিন্তু সে এখন অভিমানকে পাত্তা দিবেনা৷ অভিমানটা একদিকে বহমান হওয়াই শ্রেয়। দুদিকে হলে দুরত্ব বেড়ে যাবে। সন্ধ্যা নিজেই নিজের ঘোমটা তুললো। অন্ধকার রুমে কোথাও রাতকে খুজে পেলোনা। খাট ছেড়ে মেঝেতে নেমে লাইটের সুইচে হাত দিয়েছে। পুরো রুম ফাঁকা। একটু আগেও তো ছিলো তাহলে গেলো কই??

পায়ে সোনালী রঙের মোটা নুপুরের রুমঝুম শব্দে সুর তুলে হাঁটছে সন্ধ্যা। এটা তার শ্বাশুড়ি দিয়েছে। দেখতে যেমন সুন্দর,আওয়াজটাও শ্রীতিকর। সন্ধ্যা বারান্দাতে ছুটে যেতেই রাতকে দেখতে পেলো। মেঝেতে আধশোয়া,সবুজ গ্রিলে পিঠ ঠেকানো,চোখদুটো বন্ধ।

“” তুমি এখানে কি করছো? না আমার কোনো পুরোনো প্রেমিক আছে,না তোমার কোনো প্রেমিকা আছে,ফ্যামিলির চাপেও বিয়ে হয়নি,দুজনের সম্মতিতে হয়েছে,তারপরও এমন দেবদাশ রুপ কেন? বাসর ঘরে বউ অপেক্ষারত,স্বামী বারান্দায় দেবদাস সাজে মত্ত!””

সন্ধ্যার কন্ঠধ্বনিতে রাত চুল পরিমানও নড়ে উঠেনি। যেন সে জড়পদার্থ,প্রাণীর স্পর্শ ছাড়া সে নড়তে পারেনা। তার কোনো অনুভূতি নেই!

সন্ধ্যা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নাক দিয়ে থমকা নিশ্বাস ছাড়লো। মেঝেতে মেলে থাকা পায়ের উপর থেকে ডান হাতটা টেনে বললো,,

“” আসোনা,আমরা বাসর করবো।””

সন্ধ্যার টানাটানিতে রাত চোখ মেলেছে। নরম চোখে চেয়ে আছে ওর মুখ পানে। এমন বউসাজে সে তার স্বপনবধুটিকে সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখে এসেছে,তবে স্বপ্নে। আজ সে সামনাসামনি দেখছে,এক নতুন সূচনা তাকে ডাকছে। যে সূচনা সবটা বাধা পেরিয়ে এসেছে। চাইলে দুজন দুজনকে কাছে টেনে নিতে পারে। কোনো বাধা নেই। আগেও ছিলোনা, শুধু সন্ধ্যার কথা ভেবেই তো এতোটা চুপ ছিলো সে। আজ সেই সন্ধ্যাই তো তাকে ডাকছে। কিন্তু কেন ইচ্ছে করছেনা এই ডাকের সাড়া নিতে?? কেমন অভিমান ভরে আছে তার মনের গভীরে?? যে অভিমানের নেই কোনো স্থিরীকৃত কারণ।

সন্ধ্যার শক্তটানে রাত উঠে দাড়ালো।

“” বাব্বাহ গো,তোমাকে বসা থেকে তুলতেই আমার সব এনার্জি শেষ!””

সন্ধ্যা সাহস যোগাতে বড় নিশ্বাস টানতেই রাত ওর হাতটা চেপে ধরলো,কনুই বরাবর শক্ত হাতের চাপ। সন্ধ্যা প্রশ্নচক্ষুতে তাকালো রাতের দিকে। তার প্রশ্ন ইশারার কোনো উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলোনা রাত। সোজা ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দরজার দিকে। টানের সাথে পায়ের তাল বেশামাল হয়ে শাড়ীর কুচিতে আটকে গেলো সন্ধ্যার পা। হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই রাত ওর কোমড় চেপে ধরেছে।

“” এখনি তো আমার কপালটা ফেঁটে যেত। বাসর রাতে শাড়ী পেচিয়ে বউ চিৎপটাং,কেমন শোনাতো বলো তো। এমন টানাটানি করছো কেন? কি লাগবে বলা যায় না? কথা বললে কি তোমার কন্ঠনালী পচে যাবে? আমি কি পচার বিষ যে তোমাকে ছুয়ে দিবো?””

সন্ধ্যাকে ঠিকভাবে দাড় করালো রাত। যার সাথে একটা সেকেন্ডও কথা না বলে সে থাকতে পারবেনা আজ সে তার সাথেই কথা বলছেনা। ব্যথায় তো তার কন্ঠ ফুলে ফেপে আছে। তবে সেটা কারো চোখস্পর্শ করতে পারবেনা। শুধু অনুভব করতে পারবে। অন্যকেউ নয়,যার কন্ঠ সে।

সন্ধ্যা আদুরী হাতে রাতের গাল ছুয়ে বললো,,

“” কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে কেন কথা বলছোনা? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।””

সন্ধ্যার চোখে চোখ রাখতে পারছেনা রাত। চোখটা কেমন চিকচিক করছে। চিকচিকের উৎসের সন্ধানে সে নামতে চায়না। রাত আর একদন্ডও দেরি করলোনা। সন্ধ্যাকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিলো। সজোরে দরজায় খিল টানের শব্দে সন্ধ্যা হালকা কেঁপে উঠেছে।

~~

“”এভাবে ঝনঝন শব্দে বাড়ি মাথায় করে রেখেছিস কেন? বিয়ে কি তোর একাই হয়েছে? সারা পৃথিবীকে তোর বউ সাজ দেখাতে হবে?””

সন্ধ্যা মায়ের কথার পাত্তা না দিয়ে মুখটা হা’করে দীর্ঘ হামি টেনে ঘুম তাড়াচ্ছে।

সন্ধ্যার মা রিমা টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। সন্ধ্যা চেয়ার টেনে বসতে নিলেই উনি হাঁকিয়ে উঠলেন,,,

“”গোসল করেছিস?””
“” না।””
“” যা এখুনি গোসল করে আয়। তারপর খাবি।””
“” আমি কেন গোসল করবো?””

রিমা বিরক্তভর্তি মুখ বানিয়ে সন্ধ্যাকে টেনে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলেন।

“” আমি এখন গোসল করবোনা,আম্মু!””
“” কেন করবি না?””
“” কেন করবো?””

সন্ধ্যার পাল্টা প্রশ্নে মাকে কিছু বলতে না দিয়েই আবার ডাইনিংয়ে ছুটলো সে

খাবার মুখে পুরছে আর রাতের রুমের দিকে চেয়ে আছে। খাবার গলায় ঠেকে হিঁচকি উঠে গিয়েছে কিন্তু সে পানি খাচ্ছেনা৷ এমন নয় যে পানি তার সামনে নেই! পানি আছে সাদা চকচকে কাঁচের গ্লাসটাতে পানি টয়টুম্বুর। কিন্তু সে খাবেনা।

তিয়ামতী সন্ধ্যার হিঁচকির শব্দ পেয়ে বললেন,,

“” পানি খাচ্ছিস না কেন?””

তিয়ামতীর কন্ঠধ্বনি যেন সন্ধ্যার কানে পড়লোইনা। সে তখনো ঘাড় বাকিয়ে রাতের রুমের দিকেই চেয়ে আছে। একমনে খাবার মুখে পুরছে,আর একটু পরপর শব্দ তুলে কেঁপে উঠছে।

হঠাৎ মাথায় পানি পড়তেই সন্ধ্যা উপরে তাকালো। এবার পানি মাথায় না পড়ে মুখে পড়ছে। সন্ধ্যা চেয়ার ছেড়ে দ্রুততর সাথে বললো,,

“” এটা কি করলে,রাত ভাইয়া? আমার শাড়ীতো ভিজিয়ে দিলে,এখন এই ভেজা শাড়ী পরে থাকবো?””

রাত ভ্রূ উচিয়ে তাকাতেই সন্ধ্যা আবার বললো,,

“” ইচ্ছে করে ভেজালে তো? খুলবোনা আমি এই শাড়ী। আগে আমার বাসর হবে তারপর শাড়ী খুলা হবে। হুহ!””

রাত সন্ধ্যার দিকে তিক্ষ্ণ চাহনি নিয়ে ফুপির উদ্দেশ্যে বললো,,

“” ফুপি,আমার খাবারটা ঘরে পাঠিয়ে দিও।””

রাত হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে যাচ্ছে। সন্ধ্যা সেদিকে তাকিয়েই চিন্তার রাজ্যে ডুব দিলো, আমি এতো সুক্ষভাবে রুমের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার এই তাকানোকে লুকিয়ে কি করে আমার পেছনে আসলো? তাহলে কি সে রুমে ছিলোনা? রুমে না থাকলে ছিলোটা কোথায়??

~~
তিয়ামতী বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছেন। রাতের ঘড়ির কাঁটায় ১১ টা বেজে ৩০। এতোবেলা করে সে ঘুমায়না। দশটা বাজতেই ঘুম নেমে আসে তার চোখে। কিন্তু আজ সে ইচ্ছে করেই জেগে আছে। তার দরজার সামনে রাত দাড়িয়ে আছে। অনেক্ষণ ধরেই দাড়িয়ে আছে,যেটা তিয়ামতী আন্দাজ করতে পেরেছে। ছেলের ভেতরে আসার অপেক্ষাতেই জেগে থাকা। কিন্তু ঘন্টা পেরিয়ে যেতেও যখন রাতের দেখা পেলোনা তখন বুঝতে সক্ষম হলো তার এখন অভিনয় করতে হবে। ঘুমের অভিনয়। সে অভিনয় নিয়েই চোখ বন্ধ করা। মিনিট পনেরো পার হতেই রাত ভেতরে এসেছে। তিয়ামতীর শরীরে কম্বলটা মুড়িয়ে দিয়ে পাশে বসলো। কিছুক্ষণ মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বুকে আটকে থাকা এই দীর্ঘশ্বাসটা ছাড়তেই কি এখানে আসা? নিজের প্রশ্নের উত্তর না খুজে রাত উঠে পড়েছে। পা চালাতেই তিয়ামতী বললেন,,

“” রাগ নেই তবুও রাগ দেখাচ্ছিস কেন? শুধু শুধু নিজে কষ্ট পাচ্ছিস। আমার ছেলে তুই,তোর থেকে তোকে আমি বেশি চিনি। এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে যে দহনে ভুগছিস সেটার জ্বলনটা কিন্তু আমি অনুভব করতে পারছি।””

তিয়ামতীর কথায় রাত থমকে দাড়ালো। মায়ের দিকে করুনভাবে তাকিয়ে আছে।

“” আমার সাথে কথা না বলার কারনটা আমি জানি। কিন্তু সন্ধ্যার সাথে কি হয়েছে? ঐ পাগলিটাকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন?””
“” ও দিতে পারলে আমি দিতে পারবোনা?””

রাতের প্রশ্নে তিয়ামতী হালকা হেঁসে বললেন,,

“” আসলেই কি তাই?””

রাত গুটিগুটি পায়ে মায়ের পাশে বসলো। মাথা নিচু করে বললো,,

“”তোমাদের দুজনকে আকড়ে, আমি বাঁচতে চাই,আর তোমরা দুজনেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছো। কেন আম্মু? আমি কি একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারিনা??””

ছেলের কথায় তিয়ামতীর চোখ ভরে এলো। মমতার হাত গালে বাড়িয়েই দিতে রাত গভীরভাবে চেপে ধরে বললো,,

“” আম্মু,আমি তোমাদের সবাইকে নিয়ে আমার পৃথিবী সাজাতে চাই! তোমরা কি তা বুঝতে পারছোনা??””
“” সন্ধ্যার উপরে এমন নিবিড় অভিমান কেন? তুই যা চেয়েছিলি ও তো তাই করেছে। তাহলে?””
“” সেটাতো পরে,কিন্তু তার আগে ও কি করেছিলো সেটা দেখনি? ও আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলো।””

তিয়ামতী রাতের কথার বিপরীতে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ও বাধা দিয়ে বললো,,

“” না আম্মু,ওটা ওর ছেলেমানুষি ছিলোনা। কোনো অভিনয়ও ছিলোনা।””
“” যদি সেরকমই হয় তাহলে তোকে কেন বিয়ে করবে? তুই ভুল বুঝছিস রাত!””
“” আমি ভুল বুঝছিনা,আম্মু! ও এখন আমাকে ভুল বুঝাতে চাচ্ছে।””
“”আচ্ছা আমি তোর কথা মেনে নিলাম। এখন এইটা ধরে তো তুই তোদের নতুন জীবনে কাঁটা গেথে দিতে পারিসনা। এইভাবে দুরে না থেকে ওর সাথে কথা বল।””
“” আমি পারবনা। আমি আজ অবধি ওর কাছে ওর কোনো কাজের জন্য জবাবদিহি করিনি,তাহলে আজ কেন করবো?””
“” তাহলে আমি ওর সাথে কথা বলি!””
“” না,আম্মু,তুমি ওকে কিছু বলবেনা।””
“” তুইও বলবিনা,আমাকেও বলতে দিবিনা,তাহলে কি করে হবে? তুই কি চাচ্ছিস? পরিষ্কার করে বলবি?””
“” আমি চাই ও নিজ থেকে বলুক।””
“” তুই কি চাস সেটা ও কি করে বুঝবে?””

রাত মায়ের কাছ থেকে সরে এসে বললো,,

“” ও কে বুঝতে হবে। আর যতদিননা বুঝছে ততদিন ওর সাথে আমি কোনো কথা বলবোনা।””

রাত নিজের কথার রেশ কাটিয়ে মায়ের রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। কেন বুঝবেনা ও? আমি যদি ওকে বুঝতে পারি ও কেন পারবেনা? ও যদি আমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে ওকে বুঝতে হবে। একটা সহজ সরল ভালোবাসার গল্পটাকে ও কঠিন করে দিয়েছে। আর এই কঠিন রুপ থেকে সহজে আনতে হলে ওকেই দায়ভার নিতে হবে। আমি পারবোনা। আমি আর কোনো দায়ভার নিতে পারবোনা!

রাত আপনমনে দায়অন্যায়ের কথোপকথনের সহিত নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। রুমে প্রবেশ করতেই সন্ধ্যা বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে গেলো। কাচুমুচু হয়ে রাতের দিকে এগিয়ে এসে বললো,,

“” আমি আজকে এখানেই ঘুমাবো। আমি তোমার বউ হই। তোমার রুমে ঘুমাবোনা তো কোথায় ঘুমাবো?””

সন্ধ্যা রাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রাখতে পারছেনা। একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার নিচের দিকে। কিন্তু রাত ঠিকই স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এখনো বেনারশী জড়ানো। মুখটা কেমন কালোবর্ণে ছেয়ে আছে। এতো শুকনো লাগছে কেন??

রাত পা বাকিয়ে চলে যেতে নিলে সন্ধ্যা কাঁপাকন্ঠে বললো,,

“” আমি তোমার থেকে দুরে চলে যেতে চেয়েছিলাম,তাই সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছি।””

রাত সন্ধ্যার দিকে অবিশ্বাস্য চাহনিতে চেয়ে আছে। সন্ধ্যা অপরাধীর মতো মুখ করে বললো,,

“” আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,রাত ভাইয়া। আমি ছোটবেলা থেকে মামিকে দেখে এসেছি। কিন্তু কখনো উনার ভেতরের কষ্টটা পড়তে পারিনি। তবে সেদিন তোমার আর মামির ঝগড়াতে আমি সব পড়তে পেরেছি। মামির মতো আমিও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমি উনার মতো এতোটা ধৈর্যশীল নয়,সহনশীলও নই। আমি এখনি তোমাকে ছাড়া নিজেকে চিন্তা করতে পারিনা তাহলে একটা গভীর সম্পর্কে গিয়ে তোমাকে ছাড়া থাকার কথা আমি কিভাবে ভাববো? আমি তো মরেই যাবো। আমার তখন মনে হয়েছিলো এতোবড় কষ্ট সহ্য করার থেকে এখনি একটু সহ্য করে নেই। তাই বিয়ের কথা বলেছিলাম। আমি জানি আমার তখন তোমাকে বলা উচিত হয়নি,আমার তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসা উচিত ছিলো,আমি তো ভালোবাসতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার যে কি হলো আমি তোমাকে সায়ন ভাইয়ের কথা বলে ফেললাম! তারপর…””

রাত সন্ধ্যাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো। নরম সুরে বললো,,

“” সন্ধ্যা,তুই এখন এখান থেকে যা।””

সন্ধ্যা রাতের দিকে দুকদম এগিয়ে এসে অধিকারি সুরে বললো,,

“” আমি কোথাও যাবোনা। এখানেই থাকবো। আমি বাসর করবো। তুমি তো কথা দিয়েছিলে,আমাকে বিয়ে করার পর আমাকে ছয় কাপড় খুলতে দিবে..””
“” সন্ধ্যা,প্লিজ! এখান থেকে যা।””
“” কেন যাবো?? বলছিনা যাবো?? বিয়ে করবে আর বাসর করবেনা?? তাহলে বিয়ে করলে কেন? তোমার থেকে তো সায়ন ভাইয়াই ভালো ছিলো। উনার সাথে বিয়ে হলে এতক্ষণে বাসর হয়ে আমার পেটে বাববব…””

সন্ধ্যার কথা গলাতে আটকে রেখেই রাত ওর কন্ঠনালী চেপে ধরলো। রক্তরাঙা চোখদুটো কাঁপছে,ঠোঁটদুটোও কেঁপে উঠছে,কপালপার্শ্বে বেগুনি শিরা ভেসে উঠেছে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here