ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ২৩+২৪

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_২৩

বলেই যেই না বাড়ির সদর দরজা খুলতে যাবে ওমনি………………………

মাহমুদ ভিলা,

মাহমুদ ভিলা খুশিতে রমরমা। একমাএ মেয়ের বিয়ে বলে কথা। চারদিকে আলোকসজ্জা এখনোই ছেয়ে গেছে। সবার খুশির মাঝেও খুশি নেই একজনের মনে। সে আর কেউ না বিয়ের কনে তারার মুখে। সে যেন এক যান্ত্রিক রোবটে পরিণত হয়েছে। তার মধ্যে যেন কোনো অনুভূতিই নেই। তাকে দেখে কেউ বলবেই না যে সে বিয়ের কনে।

তারা আর সামিরের বিয়েটা গুনে গুনে আজ থেকে ঠিক সাতদিন পরে ধার্য করা হয়েছে। হ্যা একটু বেশিই তাড়াতাড়ি করা হচ্ছে৷ তার জন্য কারণও আছে। সামিরকে সামনের মাসে আউট অফ কান্ট্রি যেতে হবে। তাও পুরো ৬মাসে জন্য। নাহলে বিয়েটা সামনের মাসেই হতো। আর তাই এত তাড়াতাড়ি।

এদিকে, সামিরের মনে বিশাল খুশির পাহাড়। আর হবে নাই বা কেন? ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার খুশি কার না হয়? ঠিক সামিরেরও তেমন।

হ্যা সামির তাকে ভালোবাসে। গত ছয়মাস তারার সাথে কাটিয়ে সে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সে তারাকে ভালোবাসে। তারার কথা বলা, হাসি, অভিমান, রাগ, চেলাফেরা সবকিছুই তার মনে এক অন্যরকম মুগ্ধতার জন্ম দেয়। যার নাম সে দিয়েছে ভালোবাসা।

গত মাসে সে তার মনের মধ্যে লুকায়িত কথা, অনুভূতিগুলো তারার সামনে ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু তারা তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল তার পক্ষে তাকে গ্রহণ করা সম্ভব না।

অতীত,

সেদিন ছিল তারার ১৯তম জন্মদিন। প্রতিবারের ন্যায় এইবারেও মাহমুদ ভিলা খুশিতে সেজে ওঠে। বিশাল বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মাহমুদ ভিলায় তার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে।(যদিও জন্মদিন পালন করা ইসলামে জায়েজ না। তাও বড়লোকদের বড়সড় কারবার।) দেশের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের তাদের পরিবার সহ আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাথে তারার বন্ধুরা তো আছেই।

তারার এবছর এসব কিছুই ভালো লাগছে না। এবছর তার কাছে এইসব কিছু বিষাদময় লাগছে। যেন তিক্ততায় ভরে আছে সব। অন্যান্য বছর গুলোতে সে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান খুব ভালোভাবে উপভোগ করে। কিন্তু আজ তার কিছুই ভালো লাগছে৷ বিরক্তি যেন ছেয়ে গেছে সব দিকে। তাও বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারছে না। সব নিরবে সয়ে যাচ্ছে। কারণ রাতের থেকেও বেশি ভালো সে তার বাবা মা কে বাসে।

রাত ৮টা বাজে। সবাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত। কিন্তু যার জন্য এই এতো আয়োজন সে এখনো নিচে আসে নি। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে যাকে ঘিরে এতো আয়োজন তাকে দেখার।

সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটা সাদা গরজিয়াছ বল গ্রাউন পড়ে সিড়ি দিয়ে নামছে তারা। তাকে দেখতে একদম সাদা পরীর মতো লাগছে। ফর্সা গায়ের রঙে একদম ফুটে উঠেছে ড্রেসটা। মাথায় সামনে দিয়ে চুলগুলো ফুলিয়ে পিছন দিকে ফ্রান্স বিনুনি করে দিয়েছে। সামনে দিয়ে কাটা চুলগুলো কার্ল করে দিয়েছে। হাতে, গলায় আর কানে ডায়মন্ডের সাদা নরমাল গহনা। এক কথায় অমায়িক সুন্দর লাগছে তাকে। তা ভাষায় প্রকাশ করাও কষ্টসাধ্য।

তারার জীবনটা আগের মতো হলেও তারা এসব খুব ভালো ভাবেই উপভোগ করত। কিন্তু আজ তা সত্যিই তার কাছে অসহনীয় লাগছে। তাও নিজেকে সংযত রেখে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে মা বাবার পাশে এসে দাড়াল সে।

সবাই একে একে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেল। শুধু একজন ছাড়া। আর সে হলো সামির। এখনো তার আগের স্থানে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে তারার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে সবাই যে তারাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছে শুধু সে ছাড়া সে দিকে তার খেয়াল নেই। সে তো একধ্যানে তার সামনে থাকা সাদা পরীটাকে দেখছে।

হুট করেই পাশ থেকে তার বাবার দেওয়া ঝাকোনিতে ধ্যান ফিরে তার।

বাবা- কি হলো মাই সান? এখনো এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? যাও তারাকে উইশ করে এসো যাও। সবার তো উইশ করা শেষ। শুধু তুমিই বাকি। যাও।

সামির বাবার কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখল হ্যা সবার শুভেচ্ছা জানানো শেষ। সবাই এখন যার যার মতো ইঞ্জয় করছে।

বাবা- কি হলো? যাও।

সামির- হ হ্যা। যাচ্ছি।

সামির গিয়ে তারার সামনে দাড়াল। তার দৃষ্টি এখনো তারার রুপে স্থির। একগুচ্ছো গোলাপ আর একটা গিফট বক্স এগিয়ে দিল তারার দিকে।

সামির- শুভ জন্মদিন তারা। সবসময় হাসিখুশি থাকো। আর সবসময় সুখে থাকো। কখনো যেন কোনো দুঃখ তোমাকে স্পর্শ করতে না পারে। শুভ হোক তোমার প্রতিটি সময়। এই কামনাই করি।(মিষ্টি হেসে)

তারা- অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।(মিষ্টি হেসে)

তারার বাবা- যাও বাচ্চারা নিজেদের মতো ইঞ্জয় করো। যাও তারা।

তারা- নো বাপি। আ’ম ওকে হিয়ার।

বাবা- কিন্ত মা এটা তো তোমার জন্য। এখন যদি তুমিই ইঞ্জয় না করো তাহলে কেমন……….

এহসানকে আর বলতে না দিয়ে।

তারা- প্লিজ বাপি।

তানিয়া- এহসান একটু শুনো তো।(ডেকে)

এহসান- ওকে। তাহলে তুমি থাকো। আমি আসছি।(বলেই চলে গেল)

সামির- তারা।

তারা- জি?

সামির- আসলে….

তারা- জি বলুন।

সামির- আসলে আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।

তারা- আচ্ছা। তো বলুন।

সামির- আসলে তারা। তারা……..

তখনি সবার ডাক পড়ল এহসানের দিকে।

এহসান- লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান। মে আই হেভ ইউর এটেনশন প্লিজ। আজ আপনারা সবাই এখানে আমার একমাএ মেয়ের জন্মদিনের জন্য এসেছেন। সবাই অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন সে যেন অনেক বড় হয়। আপনারা সবাই প্রতিবছরই তার জন্মদিনে তাকে দোয়া করার জন্য এখানে আসেন, তাকে দোয়া করেন। এবছরও তার অনিময় হয় নি। আপনারা সবাই তার সাথে পূর্ব পরিচিত। আবার অনেকে অপরিচিত নন। তারা সবাই পরিচিত হয়ে নিবেন। এখন আসি মূল কথায়। এবার কেক কাটা হবে। সবাইকে স্টেজের দিকে আসার অনুরোধ করা হলো।

এহসান- তারা কাম অন দা স্টেজ।

তারা একটা মুচকি হাসি দিয়ে স্টেজে গেল।

সবাই স্টেজের কাছে এসে দাড়াল। তারা তার বাবা মার সাথে কেক কাটল। প্রথমে তার বাবাকে খাওয়ালো। তার বাবাও তাকে খাইয়ে দিল। তারপর তার মাকে খাওয়াল। একে একে সবাইকে কেক খাওয়াল তারা৷ যাদের সে চিনে আর কি।

কেক খাওয়া শেষ সবাই যে যার মতো ইঞ্জয় করছে। তারা তার বন্ধুদের সাথে আছে।

দূর থেকে সামির তারাকে দেখছে। তার মনে একধরনের অসস্তি কাজ করছে। কিন্তু সে করেই হোক মনের কথাটা তারাকে এখনি জানানো প্রয়োজন বলে মনে করছে সে। তাই এগিয়ে গেল তারার দিকে।

সামির- তারা।

তারা- জি?

সামির- আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে।

তারা- হ্যা বলুন।

সামির- এখানে নয়। একটু বাইরে চল।

তারা- আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন।(বলেই বেড়িয়ে গেল সামিরের সাথে।)

বাগানের দিকে,

তারা- বলুন কি বলবেন?

সামির- তারা আসলে আমি আমি…….

তারা- জি?

সামির চোখ বন্ধ করে করে একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বলল।

সামির- দেখো আমি হেয়ালি করে কথা বলতে পারি না। যা বলার সোজাসুজি বলছি।

তারা- জি।

সামির- আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ দেট আই লাভ ইউ। কবে থেকে আই ডোন্ট নো। বাট ইয়াহ আই লাভ ইউ। এন্ড আই ওয়ান্ট টু মেরি ইউ। উইল ইউ বি মাই বেটারহাফ?(এক নিশ্বাসে)

তারা এতোক্ষণ শুধু সামিরের কথা শুনছিল। সামিরের কথা শুনে কি রিয়েকশন দিবে তা সে বুঝে উঠতে পারছে না। সে কখনো সামিরকে সেই নজরে দেখেই নি। সে শুধু সামিরকে বন্ধু ভেবে এসেছে। যে অসময়ে তার পাশে এসে দাড়িয়েছে। এর বেশি আর কিছুই না।

সামির- কি হলো? কিছু বলছো না কেন তারা?(উৎসুক হয়ে তারার মুখের দিকে তাকিয়ে)

তারা- এসব আপনি কি বলছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আর কি করে বলছেন এসব? আপনি তো সব জানেন। তাহলে?

সামির- আমি সব জানি তাই এসব বলছি তারা। তাছাড়া রাতকে নিয়ে তো তোমার এসব ভাবার কথা নয়৷ রাত তো তোমাকে চিট করেছে তাও কেন রাতকে এতো গুরুত্ব দিবে? রাতকে তো তোমার ভুলে যাওয়া উচিত।

তারা- হ্যা আমি সব মানছি কিন্তু আমি এখনো রাতকে ভালো বাসি তাই আমার পক্ষে আপনাকে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।(বলেই চলে যেতে নেয়।)

সামির- কিন্তু তারা আমি তো বলছি না আমাকে রাতের জায়গা দিতে। আমি বলছি আমাকে আমার একটা জায়গা সৃষ্টি করার সুযোগ দাও তোমার মনে।(তারার হাত ধরে আটকিয়ে)

তারা- প্লিজ লিভ মাই হ্যান্ড।

সামির- প্লিজ তারা লিসেন টু মি।

তারা- আই সেইড লিভ মাই হ্যান্ড ডেম ইট। (বলেই হাত ঝাড়া দিয়ে চলে গেল)

আর সামির ওখানেই দাড়িয়ে থেকে তারার যাওয়ার দিকে এক ব্যর্থ পথিকের ন্যায় তাকিয়ে থাকলো।

তারা ভাবতেই পারছে না সামির এসব কি করে ভাবতে পারে। তার পক্ষে রাতকে ছাড়া কাউকেই ওই জায়গা দেওয়া সম্ভব না। কিছুতেই না। না মানে একদমি না।

তারা রাগে ঘরে ডুকেই দেখল একগুচ্ছ কালো গোলাপ তার বিছানার উপর রাখা। সাথে কয়েক বক্স চকলেট আর ইয়া বড় টেডিবিয়ার। তারা এসব দেখে তো মহাখুশি। মুহূর্তেই সামিরের কথা সে একদম ভুলে গেল। সে সব নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখতে লাগল। তার খুশিতে টেডিবিয়ার টাকে জড়িয়ে ধরল।

তারা- ওয়াও কি সুন্দর! কিন্তু এসব কে দিয়েছে? আরে ধুর কে আর দিবে মা বাপিই মনে হয় দিয়েছে। কিন্তু মা বাপি তো ওইসময় দিল তাহলে? আরে সারপ্রাইজ দিয়েছে হয়ত। ইইইই কি মজা।(বলেই মজা করতে লাগল।)

তার বহুদূর থেকে একজন সেই মজাওয়ালা ফেসটাকে নিখুঁতভাবে দেখছে। যেন কতদিন দেখে না।

হ্যা রাতই পাঠিয়েছে এসব তারার জন্য। সাথে বার্থডে কার্ড। যা তারা এখনো দেখেনি। সে তো ফুল, চকলেট আর টেডিতেই মত্ত। অন্যকিছু দেখার সময় এখন তার নেই। তার ওইটা তার নজরের বাইরে চলে গেছে।

রাত তারার টেডিতে একটা স্পাইক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে। যার কারণে সে এখন তারার সব মুভমেন্টই দেখতে পারছে। এতোদিন শুধু তার লোকেরা যেসব ছবি দিত আর তার কাছে যেসব ছিল তাই দেখত। কিন্তু এখন সে তারার হাসি, কান্না, কথা বলা সব দেখতেও পাবে, আবার শুনতেও পাবে
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_২৪

রাত তারার টেডিতে একটা স্পাইক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে। যার কারণে সে এখন তারার সব মুভমেন্টই দেখতে পারছে। এতোদিন শুধু তার লোকেরা যেসব ছবি দিত আর তার কাছে যেসব ছিল তাই দেখত। কিন্তু এখন সে তারার হাসি, কান্না, কথা বলা সব দেখতেও পাবে, আবার শুনতেও পাবে।

এভাবেই দিন কাটতে লাগল। দেখতে দেখতে সাতদিন চলে গেল। এই সাতদিন তারা একবারও সামিরের সাথে কথা বলে নি। সাথে সাথে সব যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। সামির অনেক চেষ্টা করেছে তারার সাথে কথা বলতে কিন্তু পারে নি।

হুট করেই একদিন তানিয়া এসে তারাকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের ঘরে কিছু কথা আছে বলে।

তারা- বলো কি বলবে?

এহসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

এহসান- আচ্ছা প্রিন্সেস তোমার কি কিছু হয়েছে? না মানে কোনো সমস্যা ভার্সিটিতে বা অন্য কোথাও?

তারা- না তো বাপি। কিন্তু তুমি হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করছো কেন?

তানিয়া- জিজ্ঞেস করার কারণ আছে। গত কয়েকদিন ধরেই দেখছি তুমি আপসেট। কিছু হলে আমাদের বলো তোমার বাপি সব ঠিক করে দিবেন।

তারা- না মা আমার কিছুই হয় নি। তোমরা শুধু শুধু টেনশন করছো আর ভিপি বাড়াচ্ছো। আমি একদম ঠিক আছি। আসলে কিছুদিন ধরে ভার্সিটিতে এক্সটা ক্লাস হচ্ছে তো তাই একটু টেনশন হয়। আর তাই হয়ত তোমাদের এমন মতো মনে হয়। আর কিছু না।(কৌশলে কথা কাটিয়ে)

তারার কথা শুনে এহসান আর তানিয়ার মনে খটকা লাগল। কারণ তারা তাদের মেয়েকে চিনে। এ মেয়ে ক্লাসের জন্য টেনশন করার মেয়েই নয়। তাও এসব বিষয় নিয়ে আর কথা বাড়াল না। যদিও তানিয়া চাইছিল বাড়াতে কিন্তু এহসান আটকে দিয়েছে।

এহসান- মামুনি তোমার সাথে আরেকটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।

তারা- গুরুত্বপূর্ণ কথা? আমার সাথে? কি বাপি?

এহসান- বলছি। আগে পাশে এসে বসো।

তারা গিয়ে এহসানের পাশে এসে বসল। আরেক পাশে বসল তানিয়া।

এহসান- বলছি কি মামুনি। আমাদের তো বয়স হয়েছে। বেশি দিন বাচব ন…..

তারা- এসব তুমি কি বাজে কথা বলছো বাপি? এসব বাজে কথা বলার জন্য আমাকে এখানে বসতে বলেছো?

তানিয়া- দেখ মা এসব তো বাজে কথা নয়। এসব চিরন্তন সত্যি। মানুষ মরণশীল। কেউ আজীবন বেচে থাকবে না। সকলকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তেমন আমাদেরও করতে হবে।

তারা- দেখ মা। একদম বাজে কথা বলবে না। তোমাদের কিছু হবে না কিছু না। (বলেই কেদে দিল।)

এহসান- এই দেখো বোকা মেয়ে কাদে। আরে কাদছো কেন। আচ্ছা আচ্ছা থাক আর বলব না। কেদো না আমার মা। প্লিজ কেদো না। তুমি কাদলে বাপির তো কষ্ট হয় বলো।

তারা- হুম আর বলবে না কিন্তু।(চোখ মুছে)

তানিয়া- আচ্ছা ঠিক আছে। এহসান এখন আসল কথাটা বলো তো। বলো তাড়াতাড়ি।

তারা- কিসের আসল কথা?

এহসান- বলছি। বলছি কি প্রিন্সেস আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।

তারা- ওয়াটটট!(আশ্চর্য হয়ে)

তানিয়া- হ্যা। এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছো বিয়ে তো দিতেই হবে।

তারা- ওয়েট ওয়েট কি যা তা বলছো তোমরা।

এহসান- যা তা নয় প্রিন্সেস। আমি আমার এই ছোট না না এখন তো আর ছোট নেই। আমি আমার এই প্রিন্সেসের জন্য একটা প্রিন্স ঠিক করেছি।

তানিয়া- হ্যা। আমরা তোমার জন্য সামিরকে পছন্দ করেছি। সামির ছেলেটাও ভালো। দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। আচার ব্যবহারও অমায়িক। শিক্ষিতও। বাবা মাও ভালো। সবদিক দিয়েই ভালো লেগেছে আমাদের। এখন শুধু তোমার মতামতের পালা।

তারা বুঝতে পারছে না হচ্ছেটা কি তার সাথে। সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে তার। কিছুদিন আগে রাতের দেয়া ধোকা, তারপর সামিরের ওসব কথা, এখন আবার সামিরের সাথে বিয়ে ভাবতে পারছে না কিছু সে।

এহসান- আমরা তোমার উপর জোর করছি না। তুমি রাজি থাকলেই আমরা এ বিষয়ে ওদের সাথে কথা বলব পরবর্তী ধাপের জন্য। তোমার আপত্তি থাকলে…….

তানিয়া- আপত্তির কি আছে? ছেলেটা ভালো। তাছাড়া তার সাথে তারার আগে থেকেই চিনা জানা। তারা ভালো বন্ধু। আমার মনে হয় না। কোনো আপত্তি থাকার কথা। তাছাড়া আমাদের তারা কখনো আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেই পারবে না। কারণ সে জানে তার বাবা মা তার ভালোটা দেখে সবার আগে।

তারার এসবের কিছুই মাথায় ডুকছে না। সে চুপচাপ উঠে চলে গেল নিজের ঘরে।

এদিকে তানিয়া আর এহসান মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

তানিয়া- না জানি মেয়েটা কি সিদ্ধান্ত নেয়।

এহসান- আমার মামুনির উপর পুরো বিশ্বাস আছে। সে যা সিদ্ধান্তই নেক না কেন বুঝে শুনে ভালো করে ভেবেই নিবে।

তানিয়া- হুম।

এদিকে,

তারা ঘরে এসে দরজা দিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। চোখ দিয়ে তার অশ্রুধারা বিনা বিরতিতে ঝড়ে যাচ্ছে। যেন আজ সব বাধ ভেঙে গেছে। আর তারা মুক্তি পেয়েছে।

তারা ভাবতেই পারছে কি করবে সে? সামিরকে কি করে বিয়ে করবে সে? সামিরকে বিয়ে না করলে বাবা মা কষ্ট পাবে, সাথে অসম্মানিতও হবে। যা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। এদিকে রাতকেও ভুল পারছে না সে। কিছুতেই না। রাত যে তার প্রথম আর সত্যিকারের ভালোবাসা। যা আছে তার পুরো হৃদয় জুড়ে। চাইলেও মুছে ফেলতে পারছে না। যতই মুছতে যাচ্ছে সে ততই আরো কামড়ে ধরছে তাকে। কথায় আছে না- প্রথম প্রেম সহজে ভুলা যায় না।

তারা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে দুটানায় ফেসে গেছে। আর খুব বাজে ভাবেই ফেসে গেছে সে। একদিক দিয়ে রাতের ভালোবাসা আরেকদিক দিয়ে রাতের ধোকা। একদিক দিয়ে সামিরের সাথে বন্ধুত্বতা আরেকদিক দিয়ে বাবা মা। কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মাথা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। মাথায় ভেতরে যেন বাজপাখি শা শা করে ডানা ঝাপটাচ্ছে। সাথে অশ্রু তো আছেই।

সারা রাত কান্নাকাটি করে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিল তারা সামিরকে বিয়ে করার। রাত তো তাকে ধোকা দিয়েছে। তাহলে সে কেন রাতের দেয়া কষ্টা তার বাবা মার উপর ভারী করে দিবে। সে তার বাবা মার কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। কিছুতেই না। তাই সে সব দিক ভেবে বিয়েতে রাজি হয়ে গেল।

সকালে,

ড্রাইনিং টেবিলে,

তারা- মা বাপি।

তানিয়া- হুম।

এহসান- বলো প্রিন্সেস।

তারা- আমি এই বিয়েতে রাজি।

তারার মুখে রাজি কথাটা শুনে এহসান আর তানিয়া থমকে গেল। মুহূর্তেই তাদের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। যা তারাকে ভিষণ শান্তি দিচ্ছে। এটাই তো চেয়েছিল সে। আর এর জন্যই তো বিয়েতে রাজি হওয়া।

তানিয়া- সত্যি! তুই বিয়ে তে রাজি?

এহসান- সত্যি বলছো প্রিন্সেস? তুমি রাজি? রাজি তুমি?

তারা- হ্যা মা বাপি।(জোরপূর্বক হেসে)

ব্যাস শুরু হয়ে গেল সব তরজর। এহসান ফোন করে সামিরদের জানিয়ে দিয়েছে। তারা বলেছে কালকে এসে তারাকে আন্টি পড়িয়ে যাবে। যেহেতু তাদের হাতে সময় কম তাই। নাহলে বড় করে গ্রেন্ডপার্টি এরেঞ্জ করা হতো।

পরেরদিন, যথারীতি সামিরের পরিবার এসে আন্টি পড়িয়ে দিয়ে যায়। সামিরের বিজনেসে কিছু কাজ থাকায় সে শহরের বাইরে যাওয়ায় আসতে পারে নি।

আর এই খবরটাই রাতকে জানায় তার লোকেরা। যা শুনে রাগে ফেটে লন্ডন থেকে উড়ে এসেছে রাত।

তারার বিয়ের খবর শুনে সবাই অনেক খুশি। তারার বন্ধুরাও খুব খুশি কারণ সামিরের সাথে বিয়ে হচ্ছে বলে। যদিও তারা প্রথমে রাতের সাথে বিয়ে হবে বলে ভেবেছিল তাই তাদের খুশির মাএা ছিল না। পরে যখন শুনল রাতের সাথে না তখন মনটা একটু খারাপ হলেও পরবর্তীতে সামিরের সাথে হচ্ছে শুনে আবার খুশির রেশ ফুটে উঠে তাদের মুখে। কিন্তু এদিকে রাত গ্যাং এর কেউ এই খবর শুনে খুশি হয়। বরং রাগ আর অভিমান চেপে বসেছে তাদের উপর তারাকে নিয়ে। কারণ তারা ভেবেছিল তারা রাতকে বিয়ে করবে। কিন্তু অগত্যা ভাগ্য বলে মেনে নেয় সবাই।

এদিকে এনির খুশির শেষ নেই। আর এতো খুশি লাগছে এতো খুশি লাগছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না। ফাইনালি তার পথের কাটা সরতে যাচ্ছে। এবার তাহলে রাত তারই হবে।(ভেবেই এক্টা শয়তানি হাসি দেয়।)

বর্তমান,

আহমেদ ভিলা,

রায়হান দরজা খুলেই নিজের ছেলেকে সামনে দেখে চমকে যায়। সে ভাবতেও পারছে না রাত এসেছে। তাও কাউকে না জানিয়ে সারপ্রাইজ হিসেবে। রাতকে দেখে খুশিতে রায়হানের চোখ ভরে আসে। গত ছয়মাস ছেলেটাকে এক নজরের জন্যও দেখতে পারে নি সে। চোখ যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে তার।

রাত বাবাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে। রায়হানও রাতকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।

রায়হান- রাত। মাই সন। ইউ আর ব্যাক? রিয়েলি ইউ আর ব্যাক? আই কান্ট বিলিভ দিস। দাড়া তোর মাকে ডাকি। দেখ তোকে দেখে কি করে?

রাত- ইয়াহ বাবা আই এম ব্যাক। আর হ্যা একেবারের জন্যই চলে এসেছি। আর যাবো না। আর মাকে তুমি ডাকবে না। আমি গিয়ে সারপ্রাইজ দিব।

রায়হান- আচ্ছা তাড়াতাড়ি যা।

রাত- হুম।

রাত গুটিগুটি পায়ে এসে অনিমার পিছনে দাড়ায়। অনিমা তখন ড্রাইনিং টেবিল থেকে খাবার সড়াচ্ছিল। রাত টুপ করে তার হাত দুটো দিয়ে অনিমার দুচোখ চেপে ধরে।

হুট করেই এমন চোখ চেপে ধরায় অনিমা ঘাবড়ে যায়। হাত দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে নেয় হাত। আর বলতে থাকে।

অনিমা- কে কে? কে আমার চোখ চেপে ধরে……(আর বলতে পারল না। কারণ হাতটা তার চেনা লাগছে খুব চেনে।)

তার মুখ দিয়ে অটোমেটিক বেড়িয়ে এলো।

অনিমা- রাতততত।(আটকে)

অনিমা এবার হাত ছাড়াতে সক্ষম হয়। হাতটা ছাড়িয়েই পিছনে ঘুরে দাড়ায়। আর সামনে তাকিয়ে দেখে তার সাত রাজার ধন এক মানিক দাড়িয়ে আছে। আর নাড়ি ছেড়া ধন। যাকে সে গত ছয়মাসে চোখের দেখাও দেখে নি। শুধু ছবি দেখে চোখের জল ফেলেছে। অনিমা শক্ত করে রাতকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ছেলের চোখে মুখে অজস্র চুমুতে ভড়িয়ে দিতে থাকে।

অনিমা- আমার বাবা। আমার বাবা এসেছে। আমার বাবা।(কান্না করে)

রাত- রিলেক্স মা। কান্না করছো কেন? দেখো আমি তো এসে গেছি। আর তোমাকে ছেড়ে যাবো না। কান্না অফ করো।(চোখ মুছে)

অনিমা- এমন কেন করিস? কি করে পারলি মাকে না দেখে থাকতে? কি করে পারলি এভাবে চলে যেতে? আমার বুঝি কষ্ট হয় না?(অভিমান মিশ্রিত কান্না করে)

রাত- আর যাবো না তো। দেখো একেবারের জন্য চলে এসেছি। আর যাবো না। কক্ষনো যাবো না। প্রমিস।

দূর থেকে দাড়িয়ে এতোক্ষণ মা ছেলের ভালোবাসা দেখছিলেন রায়হান। তার এখন মনে হচ্ছে তাদের একটা মেয়ে থাকলে ভালো হতো। যে তার বাবার সাইড নিবে সবসময়। যেভাবে রাত নেয় তার মায়ের।

অনিমা- সত্যি আর যাবি না তো আমাকে ছেড়ে?

রাত- না আর যাবো না।

অনিমা- আচ্ছা ঠিক আছে। যা আগে ফ্রেস হয়ে আয়। আমি আজ নিজে হাতে তোর সব পছন্দের খাবার রান্না করব। যা ফ্রেস হয়ে আয় দেখি।

রায়হান- আমি এসে তোমার সাথে কথা বলব মাই সন। এখন বাই।(বলেই বেড়িয়ে গেল)

রাত আচ্ছা বলে চলে এলো নিজের ঘরে। আজ পুরো ছয়মাস পর পা দিয়েছে নিজের ঘরে। ঘরে ঢুকে সে তো অবাক। একদম আগের মতোই আছে। কোথাও কোনো ময়লা নেই। যে কিছুক্ষণ আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। রাত খুব ভালো করেই জানে এটা কার কাজ। এটা তার মায়ের কাজ। তাই সে সবকিছু রেখে চলে গেল ওয়াসরুমে।

ফ্রেস হয়ে এসে কিছু খেয়ে দেয়ে আবার চলে আসল নিজের ঘরে। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল।

রাত- আমি এসে গেছি তারা বেবি। আমি এসে গেছি। খুব উড়েছো এই ক মাস। আর না। পাখিকে বেশি উড়তে দিতে নেই। তাহলে সে আর খাচায় ফিরে আসতে চায় না। আমিও তোমাকে অনেক উড়তে দিয়েছি। এখন সময় পাখা ছেটে দেওয়ার। যাতে তুমি আর উড়তেই না পারো। খুব শখ না বিয়ে করার? তাও আবার ওই সামিরকে? করাচ্ছি বিয়ে।(বলেই পাগলের মতো হাসতে লাগল।)

আজ তারা আর সামিরের মেহন্দি। মেহন্দির আয়োজন তারাদের বাড়িতেই করা হয়েছে। যাতে নাচ গান সবাই একসাথেই করতে পারতে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সামিররা চলে এলো। সামিরকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে তার উপর গোলাপি কটি। হাতে দামী ঘড়ি। পায়ে দামী জুতা। চুল গুলো সুন্দর করে সেট করা। একদম পারফেক্ট লাগছে তাকে। যেও কেউ যে কোনো সময় ক্রাশ খেয়ে উল্টে পড়তে পারে। সামিরকে এনে বসানো হলো তার জায়গায়। আর সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল হবু জামাইয়ের খাতির।

এদিকে, চার ঘণ্টা হয়ে গেছে তারাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো আসার নাম গন্ধ নেই। এদিকে বরের বাড়ির লোক মেয়েকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। একটু পর পর একজন একজন এসে মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য বলে যাচ্ছে।

এহসান বারবার তারার বান্ধবী আর তারার সাথে যাওয়া তারার ভাবিদের ফোন করছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে। এহসানের মাথা কাজ করছে কি হয়েছে কেউ ফোন কেন তুলছে না ভেবে।

আবার চেষ্টা করতেই একজন ফোন তুলে। কিন্তু ওপাশ থেকে যা বলল তা শুনে এহসানের হার্ট অ্যাটাক করার উপক্রম। এহসান পড়ে যেতে নিলেই সামির আর তারা মা এসে ধরে ফেলে।

কিছুক্ষণ পর,

এহসান পুলিশ কমিশনারকে ফোন করছে। আর সামির তারাকে লাগাতার ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু তারার ফোন বারবার বন্ধ আসছে।

কিছুক্ষণ আগে, এহসানকে পানি টানি আর টেবলেট দিয়ে স্বাভাবিক করা হয়।

তানিয়া- কি হলো তোমার এমন করছিলে কেন? কি হয়েছে? আর ফোনেই কে কি বলল?

এহসান কিছু বলছে না চুপ করে আছে।

সামির- কি হলো আংকেল বলুন কি হয়েছে?

এহসান- আমার তারা কিডন্যাপ হয়েছে। কেউ কিডন্যাপ করেছে আমার তারাকে।

তানিয়া নায়ায়ায়ায়ায়া বলেই দিল এক চিতকার। সাথে সাথে ধপ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে জুড়ে দিল মরা কান্না।

এদিকে এহসান সহ সামিরের পুরো পরিবার তারাকে খুজার জন্য নিজেদের নিজেদের ফোর্স সহ পুলিশ লাগিয়ে দিয়েছে।

একটা অন্ধকার ঘরে হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে তারা। আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরছে তার। চোখ খুলে সবকিছু অন্ধকার দেখে ঘাবড়ে যায় সে। হুট করেই অজ্ঞান হওয়ার আগের কথা মনে পড়ে তার।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here