ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ৩

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_৩

তারপর আমরা ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ হতেই আমরা তুমি থেকে তুই তে পৌছে গেলাম। আর সাথে হয়ে গেলাম বেস্টফ্রেন্ডও।

ক্লাসে গিয়ে অনেকজন বন্ধু হলো। ভার্সিটি শেষে বাসায় চলে গেলাম। আসার সময় আর সিনিয়র সিটিজেনদের দেখি নি। হয়ত চলে গেছে। তাতে আমার কি? আমি তো চললাম আমার বাড়ি।

রাতে খেয়েদেয়ে বাবা মার সাথে গল্প করে ঘুমাতে চলে গেলাম। মাএ ক্লাস শুরু বলে খুব একটা পড়া নেই। তাই ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে সবার সাথে নাস্তা করে বেড়িয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আজকেও বাবা আসার সময় গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছিল কিন্তু আমি আনি নি। আমি তো চললাম আমার রিকশা দিয়ে।

ভার্সিটির সামনে নেমে গেট দিয়ে ডুকতেই দেখলাম সিনিয়র সিটিজেনরা দাঁড়িয়ে আছে শুধু তাদের লিডার রাত ছাড়া। তাতে আমার কি? আমি তাদের ইগ্নোর করে চলে গেলাম মাঠের অন্য প্রান্তে। গিয়ে দেখি ওখানে আমার কালকের সব বন্ধুরা বসে।আড্ডা দিচ্ছে।

আমি- হাই এভরিওয়ান। কি করছিস সবাই?

তন্নিমা- হাই। আসে গেছিস। বস।

আমি বসে সবার সাথে আড্ডা দিতে লাগলাম।

আনিকা- জানিস রাত আছেন না। আমি না তাকে প্রথম দেখায় ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি।

অনিক- বাসায় চল। বাবাকে বলব তোকে বিয়ে দিয়ে দিতে। তুই যখন তখন যেখানে সেখানে ক্রাশ খাস।

আসলে আনিকা আর অনিক দুই ভাইবোন। এরা জমজ। ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে। একসাথে স্কুল, কলেজে পড়েছে। ভাগ্যক্রমে একই ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেছে।

আনিকা- বলে দেখ। তো ঠ্যাং ভেঙে দিব।

অনিক- হুহ।

রিমা- তবে আনিকা যা বলেছিস। রাত ক্রাশ খাওয়ার মতোই একটা ছেলে।

আমি- উফ। চুপ করবি তোরা। কি আছে ওই ছেলের উপর ক্রাশ খাওয়ার। আমার তো একটা বদের হাড্ডি লেগেছে।

রবিন- কাকে বদের হাড্ডি লেগেছে?(বসতে বসতে)

তন্নিমা- কিরে তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ?

রবিন- আরে কোথাও ছিলাম না। ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে।

এইভাবে আমাদের আড্ডা জমে উঠেছে। হুট করেই আবার কালকের মতো সেই গাড়ির আওয়াজ আসতে শুরু করেছে। সবাই বুঝতে পারছে কে আসছে। তাই সবাই সব কাজ ফেলে গেটের দিকে তাকায়। মেয়েগুলো নিজেদের সাজসজ্জা ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর ছেলেরা সব ভয়ে কুচুমুচু হয়ে আছে।

তার মধ্যেই কালকের ন্যায় আবার একটা গাড়ি এসে থামে কলেজের গেটে। তবে সেটা কালকের গাড়ি নয়। তবে গাড়ি থেকে কালকের সেই রাতই নেমে আসে। সেই হট, হ্যান্ডসাম, স্মার্ট ছেলে। কিন্তু আমার বিরক্ত লাগছে। তাই চোখে ফিরিয়ে নিলাম।

আনিকা- এই দেখ আমার ক্রাশ এসে গেছে।

রিমা- কি সুন্দর লাগছে রে রোদকে।

তন্নিমা- হ্যা ভাইয়াটাকে অনেক সুন্দর দেখতে।

তন্নিমার কথাটা শুনে রবিনের মুখটা যেন কেমন হয়ে গেল। আমি সে দিকে গুরুত্ব না দিয়ে বললাম।

আমি- উফ চুপ করত। এমন করছিস কেন? মনে হচ্ছে আগে কখনো ছেলে দেখিস নি।

আনিকা- দেখেছি কিন্তু এমন ছেলে দেখিনি।

আমাদের কথার মাঝেই হুট করে একটা মেয়ে এসে রাতকে জড়িয়ে ধরে।

মেয়েটি- ওহ বেবি। কেমন আছো?(জড়িয়ে ধরে)

আকাশ- উফ এই এসেছে চিপকু।(বিরক্ত নিয়ে)

রাত- ভালো এনি। তুমি?( বিরক্তি নিয়ে এনিকে ছাড়িয়ে)

এনি- আমিও ভালো আছি। কি করছিলে তুমি এতক্ষণ? আসতে এত দেরী হলো কেন বেবি?(ন্যাকামি করে)

মেঘ- তোমার বেবি রাতে খায় নি তো তাই সকালে ফিটার খেতে গিয়ে দেরী হয়ে গেল।(বলেই সবাই জুড়ে হেসে দিল।)

রাত- মেঘ।(রেগে)

মেঘ- স্যরি স্যরি।(মুচকি হেসে)

এনি- আহ মেঘ। তুমি কি বাজে কথা বলছো? রাত কি ছোট নাকি যে ও ফিটার খাবে।

এতক্ষণ যাবত তাদের কার্যকলাপ দেখছিলাম।

আনিকা- ইস। এই এসেছে ন্যাকামির গোডাউন। হুহ।(বিরক্তি নিয়ে)

তন্নিমা- কে রে এই মেয়ে? রাত ভাইয়ের সাথে এমন চিপকে আছে?

রিমা- আর বলিস না এই মেয়েটা সেই রকমের ন্যাকা। বড়লোক বাপের বড়লোক মেয়ে। সারাদিন রাত ভাইয়ের আগে পিছে ঘুরে কিন্তু রাত পাত্তা দেয় না। ওদের সাথেই পড়ে।

আনিকা- রাত তো কাউকেই পাত্তা দেয় না।(মন খারাপ করব)

রবিন- আমাদেরও দেখতে পারিস।(ভাব নিয়ে)

রিমা- হুহ। (মুখ ভেংচি দিয়ে)

এনি মেয়েটাকে দেখে আমারও কেমন যেন রাগ হচ্ছিল। কি করে চিপকে আছে রাতের সাথে। আমার যেন সহ্য হচ্ছে না। কিন্তু কেন তা বুঝতে পারছি না। তাও নিজে সংযত করে বললাম।

আমি- অনেক হয়েছে। চল সবাই ক্লাসে।

বলেই আমি হেটে চললাম সবাইকে রেখে।

আনমনে হাটতে লাগলাম ক্লাসের দিকে। কিন্তু হুট করে কিসের সাথে লেগে যেন পড়ে গেলাম। হুট পড়ে যাওয়ায় পায়ে ব্যথা পেলাম খুব। সামনে তাকিয়ে দেখি নিপা(সিনিয়র দলের একজন) হাসছে। বুঝতে পারছি সেই এমনটা করেছে।
উঠতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। বুঝতে পারছি পা মচকে গেছে। তাও আবার চেষ্টা করলাম উঠতে। কিন্তু পারলাম উল্টো ব্যথায় কেপে উঠলাম।

আমি- আহ।(ব্যথায় কেপে উঠে)

নিপা- আহাহারে। তুমি ব্যথা পেয়েছো জুনিয়র? আহারে।(বলেই হেসে দিল)

তার সাথে সিনিয়র সিটিজেনের সবাই একসাথে হেসে দিল শুধু রাত ছাড়া। তার মুখের অবস্থা স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুতেই তার চোখ দেখা যাচ্ছে না কারণ তার চোখে সানগ্লাস লাগানো। তবে হাত মুঠো করা। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

আকাশ- আহারে এটা কি হলো? কালকে তো আমায় চড় মেরেছিলে আর আজকে নিজেই চিতপটাং হয়ে গেলে আহারে।(ব্যাঙ্গ করে)

আমি আজ তাদের কারো কথার কোনো জবাব দিচ্ছিলাম না। আবার রাগে চুপও থাকতে পারছিলাম না।

আমি আবার উঠতে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। রবিন হয়ত বুঝতে পেরেছে আমার পায়ে সমস্যা হয়েছে তাই উঠতে পারছি না। তাই সে এগিয়ে এসে আমাকে কোলে তুলে নিতে নেয়। কিন্তু তার আগে রাত এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে হাটা দেয়।

আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। রাতের এমন কাজে আমি শকড। রাত কালকে আমার সাথে কথা বললেও খুব একটা বলে নি। আজকে তো বলেই নি। তার উপর তার এমন কাজ। মেনে নিতে আমার একটু কষ্ট হচ্ছে।

হুট করেই নিজের হুশ ফিরল। আমি তাকিয়ে দেখলাম রাত আমাকে কোলে নিয়ে হেটে যাচ্ছে। আশেপাশে কোথাও তার নজর নেই। সে শুধু সামনে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম। সবাই যেন কেমন করে তাকিয়ে আছে। ছেলেদের যেন চোখ বেড়িয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আর মেয়েরা এক একটা রাগে ফুঁসছে। এসব দেখে কেন যেন আমার খুব ভালো লাগছে।

রাত আমাকে কোলে নিয়ে নিয়ে একটা ক্লাসের টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়। আমাদের পিছু পিছু আমার আর রাতের বন্ধুরা আসতে নিলে রাত হাত দিয়ে মানা করে। রাতকে সবাই ভয় পায় তাই আর কেউ আসার সাহস করে নি।

আমিকে বসিয়ে দিয়ে আমার সামনে রাত হাটু গেড়ে বসে পড়ে। তারপর-

রাত- কেমন আছিস কলি?(পায়ে হাতিয়ে)

কলি নামটা শুনে বুকটা ধক করে উঠল। এই নামে তো আমাকে সে ডাকত। তবে কি আমার ধারণায় ঠিক। ভয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেলাম। হুট করেই রাত আমার পা টা শক্ত করে ধরে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়। আমি ব্যথায় চিৎকার করে উঠি। চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

চলবে?

ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন এবং উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here