#ভালোবাসার_ভুল
#Writter_Sp_sanjana_(সাগরিকা)
🍁🍁🍁🍁🍁
Part-13+14
কিছুক্ষন গল্প করে নিঝুম আবার সেই আজানা মানুষের কথা ভাবে-
নিঝুম:- আমার কেন যেন মনে হয় এই রাত ই সেই মানুষ যে রোজ চিরকুট পাটায় বিকজ ওই তো ফ্রেশ হতে যায়নি তারপর ই তো এসে চিরকুট পেলাম আমাকে ধরতে হবে তাকে।( মনে মনে ভাবে)
এইভাবে গল্প করতে করতেই ড্রাইভার বলে,এখন তো কুলুতে বিখ্যাত দশেরার মেলা চলছে।আপনারা যাবেন দেখতে অনেক ভালো মেলা হয়।
নিঝুম:- বিখ্যাত কেন বললেন? খুব বড় মেলা নাকি?
রাত:- অতি বৃহৎ। ভারতে যে ক’ টি আন্তর্জাতিক মেলা বসে,তার মধ্যে কুলুর দশেরার মেলা অন্যতম।
এইভাবে ছোটখাট কথাবার্তায় রাত আর নিঝুমের ঝগড়া গুলো কমে বন্ধুত্ব হতে থাকে।
এরপর কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই কুলু পৌঁছে যায়।
কুলুতে নেমে সবার যেন চোখ ধাঁধিয়ে যায়।পাহাড় ঘেরা শহরখানা আলোয় আলোয় ঝলঝল করছে।বড় রাস্তার গায়েই সমতলে বিশাল এক মাঠ, সেখানেই বসেছে মেলা।গিজগিজ করছে মানুষ, মাইক বাজছে , লোকজনের হইহল্লায় চতুর্দিক গমগম।
গাইডরা নেমেই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে –
“মেলার মাঠটার নাম ঢালপুর ময়দান।এটাই কুলুর সেন্ট্রাল প্লেস।ঢালপুর ময়দানের পাশে অসংখ্য হোটেল কিন্ত এখন সব ভর্তি টুরিস্টে।তাই আমরা কিছুটা সামনে কর্টেজে উঠব। কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে গেল কর্টেজে। কিছু রুম বুক করে সবাই কে চাবি দিল তাদের রুমের।সবাই যে যার রুমে উঠে এল।কটেজের ঘর ই যথেষ্ট সুন্দরী।ফায়ারপ্লেস, ইংলিশ খাট দিয়ে সাজানো দিব্যি আরামদায়ক কামরা।দরজা জানালায় লম্বা লম্বা পর্দা,মেঝয় মোটা কার্পেট, এক সেট সোফা, কারুকাজ করা সেন্টার টেবিল,ওয়াড্রোব,ড্রেসিংটেবিল,টিভি,
শাওয়ার গিজার- কমোড বসানো ঝকঝকে বাথরুম, সব মজুত।এমনকি চেয়ার টেবিল ও আছে।দেয়ালে খান দুয়েক পেন্টিংও ঝুলছে। পাহাড়ের দৃশ্য, পাহাড়ি মানুষের মুখ, বিপাশা নদী। আঁকার হাত নেহাৎ মন্দ নয়, তাকিয়ে থাকতে বেশ লাগে। সারাদিন পর এতো জার্নি তে সবাই অনেক টায়ার্ড কেউ বেরনোর নাম করেনি।সবাই যে যার রুমে উষ্ণ উষ্ণ জলে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। এখন সবাই মিলে জড় হয় সামনের খোলা জায়গায় গাইডস রাও আছে।সামনে ক্যাম্পফায়ার জালানো তার চারিদিকে সবাই বসে আছে।তখন গাইডরা এনাউন্স করে-
সৌমি( ট্যুর গাইড):- কিছু বলার আগেই বলে নিচ্ছি আমি সৌমি আর এ হল আমার হাজব্যান্ড স্বময় আমরা দুজন আপনাদের সবার ট্যুর গাইড।আমরা এখন একটা গ্যাম খেলবো।
স্বময়:- যার রুলস কিছুটা এইরকম আপনারা সবাই এখন চোখ বন্ধ করে এই ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে ঘোরবেন।চোখ খোলার পর সামনে যে ব্যাক্তিকে প্রথম দেখতে পাবেন সে হবে আপনার আজকের সন্ধ্যার পার্টনার।
কিছুক্ষন পর শুরু হয় গ্যাম নিঝুমের পার্টনার হয় রাত।অবশ্য এতে একটু চিটিং করে নিঝুম রাতের পার্ফিউম দিয়ে রাতকে খুঁজে নেয়।
সৌমি:- এখন সবাই সবার পার্টনারের সঙ্গে বসে একে অপরের বিষয়ে জানবে পছন্দ অপছন্দ। চাইলে যে কেউ যা কিছু পারফ্রম করতে পারে।
রাত:- আমার বিষয়ে তো তুমি কেন সবাই ই অনেক কিছু জানে তুমি কি তোমার বিষয়ে বলবে?
নিঝুম:- আমি নিঝুম কলেজ ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ি।আর কিছুই বলার নেই আমার বিষয়ে।আমি এখানে একজনকে খুঁজতে এসেছি।
আচ্ছা গান শুনাবে তো আজ আমাদের কে আমিও কিন্ত তোমার ফ্যান।
রাত:-অবশ্যই কি গান শুনবে সেটাতো বলো।
নিঝুম:- তোমার পছন্দের কোনো গান। আমি এনাউন্স করে দিচ্ছি। Ledis and gentleman আপনারা সবাই জানেন এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছে The great rockstar রাত ব্যানার্জি আজ এনি গেয়ে শুনাবেন তার পছন্দের একটি গান।
রাত:-গিটার নিয়ে গাওয়া শুরু করলাম-
Do lafz ki hai
Baat ek hi hai
Kyun darmiyaan phir ruki ruki
Keh bhi naa paayein
Reh bhi na paayein
Kyun bewajah hai, ye bebasi
Tum mein hum hain
Hum mein tum ho
Tum se hum hain
Hum se tum ho
Kismaton se milte hain do dil yahaan
Har kisi ko nahi milta
Yahan pyar zindagi mein (x2)
Khush-naseeb hain hum
Jinko hai mili
Ye bahaar zindagi mein
Har kisi ko nahi milta
Yahaan pyar zindagi mein
Pyar na ho toh zindagi kya hai
Yaar na ho toh bandagi kya hai (x2)
Tujh se hi har khushi hai
Tere dum se aashiqui hai, jaan le
Mill jaaye hum toh
Sab kuch sahi hai
Phir iss tarah kyun, hain ajnabi
Tum mein hum hain
Hum mein tum ho
Tum se hum hain
Hum se tum ho
Kismaton se milte hain do dil yahaan
Har kisi ko nahi milta
Yahaan pyar zindagi mein (x2)
Haan kisi ko hi hai milta ye zindagi mein
Khushnaseeb hain jo hume mila zindagi mein (x2)
(পুরো গান শুনে নিবেন নিজ দায়িত্বে)
গান টা শেষ করে রাত আবার আবার রাতের জায়গায় এসে বসে। কিছুক্ষন অন্যরা ও পার্ফোম করে আর কফি আর গরম গরম চিকেন পকোরা খায়।এইভাবে রাত হয়ে আসায় সবাই ডিনার শেষে যে যার রুমে চলে যায়।তখন সবার হাতে হাতে ট্যুর প্ল্যান দেওয়া হয় এখানে কতদিন থাকবে কি কি দেখা হবে এইসব।রাতে সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন ভোরে, ঘুম ভাঙ্গার আগে ই নিঝুমের রুমে দরজার নিচ দিয়ে কেউ তাজা সূর্যমুখী ফুল সাথে চিরকুট দিয়ে যায়।
চলবে……..
(আজ কেমন অগোছালো লিখেছি কি লিখেছি নিজেও জানি না আসলে লিখতে মন চাইছিল না তোমরা অপেক্ষা করবে তাই দিলাম)
Part-14
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিঝুম নিজের রুমের জানলার পর্দা সরাল অমনি সামনে সবুজ পাহাড়।পাইন আর দেবদারুতে চাওয়া।নীচে শ্যামল উপত্যকা,মধ্যিখান দিয়ে বয়ে চলেছে রূপালী আঁকাবাঁকা নদী।তাকিয়ে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। তারপর রুমের দরজা খুলেই পায় তাজা সূর্যমুখী ফুল আর দিয়ে যাওয়া চিরকুট।যাতে লেখা-
ওহে বৃষ্টি বিলাসী আজ কি শুধু ই আমার জন্য সাজা যায়? তোমায় দেখতে চাই কালো শাড়িতে।নিঝুম দেখল সাথেই একটা প্যাকেট আছে। প্যাকেটা হাতে রুমে ঢুকে প্যাকেট খুলতেই অবাক হয় সুন্দর একটা কালো শাড়ির সাথে একটা ডায়মন্ডের প্যানডেন্ট আর ব্ল্যাক একগুচ্ছ চুড়ি। ফ্রেশ হয়ে সেগুলো পড়ে তৈরি হয়ে নেয়। সকালের জলখাবার খেয়ে রেডি হয়ে রাতের রুম পাশেই ছিল ওর রুমে নক করলাম।দেখি খোলাই আছে ভিতরে যেতেই শুনতে পেলাম রাত বাথরুমে শাওযায় চালিয়ে গান গাইছে। আমি চলে আসছিলাম রুম ছেড়ে হঠাৎ চোখ গেল টেবিলে রাখা একটা ডায়েরির উপর। যা উপর লেখা আমার “বৃষ্টিবিলাসি”।চোখ পড়তে ডায়েরিটা তুলে নিলাম অন্যের ডায়েরি পড়া ন্যায় সংগত না হলে আমার জানার কৌতুহলতা তা করতে বাধ্য করল।আমি ডায়েরি টা নিজের রুমে নিয়ে এলাম।এখন পড়ার সময় না থাকায় লাগেজে ঢুকিয়ে রেখে দিলাম কেউ দেখলে সমস্যায় পড়তে হবে তাই।তারপর রিসেপশনে যায় ঐখান থেকেই সবাই আজ কুলু ঘুরতে বের হবে।এরমাঝে রাত ও চলে আসে আজ সে পড়েছে কালো জ্যাকেট কালো জিন্স আর টিশার্ট, পায়ে স্নিকার।সবাই বাসে করে বেরিয়ে পড়ে আজ ইচ্ছে করেই নিঝুম রাতের সাথেই বসেছে। কিছুটা সময় পর ই গাড়ি গিয়ে থামলো বিপাশার তীরে।মাএ বিশ -তিরিশ ফিট নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা বিপাশা ঝুমঝুম শব্দ বাজিয়ে। এবড়োখেবড়ো ভাল বেয়ে সেদিক পানে নামছিল নিঝুম।পিছন পিছন রাত আর অন্যরাও সতর্ক পায়ে।গাইডরা সবাইকে সাবধানে নামতে বললেও নিঝুম ছটফট করে নামতে গিয়ে পা পিছলে যায়।কিছু রাত ঠিকই তার নিঝুমকে সামলে নেয় আর নদীতে পরে যাওয়া থেকে বাঁচায় কোলে তুলে নেয় আর এগিয়ে নেমে একটি বড়সড় প্রস্তরখন্ডের উপর ব্যালেন্স করে দাঁড় করায়।নিঝুম ঝুঁকে ধারাকে ধরতে যায়।তখন রাত বলে- ধীরে পানি অনেক ঠান্ডা।ডাইরেক্ট বরফ গলা জল রোটাংয়ের হিমবাহ থেকে রওনা দিয়ে কতটুকুই বা এসেছে।
নিঝুম:- জল কতটা স্বচ্ছ।কাঁচের মতো।তলার নুড়িপাথর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।
রাত:- নদী যতক্ষন পাহাড়ের কোলে,ততক্ষন সে এরকমই।নোংরা তো হয় সমতলে গিয়ে।
সৌমি:-এখন আমরা যাব বৈষ্ণোদেবীর মন্দির।এখান থেকে কিছুদূর গিয়ে রোড থেকে তিন চার কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে।so you all ready?
স্বময়:- Let’s go guys.
সবাই বাসে উঠে কিছুদূর গিয়ে যেন রাস্তায় নেমে হেটে পৌছায় বৈষ্ণোদেবীর মন্দির।ঐ পথটা ও অনেক সুন্দর ছিল দু’ পাশে পাহাড়ের গায়ে অজস্র নাম না জানা ফুল,কত যে তাদের রঙের বাহার। এইভাবে এই মন্দির দেখে সবাই যায় বিজলেশ্বর মন্দির।এই মন্দিরের বিষয়ে বলা আছে-“প্রতি বছর নাকি বাজ পড়ে শিবলিঙ্গ টি চুরমার হয়ে যায় ।আর পুরোহিত নাকি ছাতুর সঙ্গে মাখন মিশিয়ে সেটিকে আবার জুড়ে দেন।
অন্যদিকে প্রহর তার চেলাদের নিয়ে নিঝুমের খোঁজ করতে করতে কর্টেজে এসে উঠে। কিন্তু তারা ঘুরতে বের হওয়ায় কর্টেজে ই রুম বুক করে অপেক্ষা করে।
এতসব ঘুরে এখন বিকালের দিকে সবাই এসে উপস্থিত হয়।মেলাখানা সত্যি ই তারিফের যোগ্য।হরেক জিনিসের পসরা সাজিয়েছে পাহাড়ি মানুষরা। মুখোশ,টুপি, লাল, শাড়ি, সোয়েটার, জ্যাকেট, আর গয়না তো আছেই , সঙ্গে হাতে বানানো আরও কতরকম যে সামগ্রী। বেশ কিছু তাঁবু পড়েছে মেলার মাঠে।একটি তো রীতিমতো জমকালো। মাথায় অনেক পতাকা উড়ছে। ওই তাঁবু নাকি কুলু রাজার। একজায়গায় সিমেন্টের গ্যালারিতে চলছে নাচগান। কোথাও নানান ঠাকুর দেবতার মূর্তি।
মূর্তি গুলোর সামনে এসতেই গাইড স্বময় বলল- গোটা উপত্যকার নানান গ্রাম থেকে এখানে দেবদেবীদের আনা হয় দশমীর দিন।টানা দশ দিন দেবদেবীরা এখানেই থাকেন।এখানেও রাবণবধ হয় তবে দশমীতে নয়, মেলার শেষ দিন।স্টাইলটাও আলাদা রকম।রাবণের কোনোও পুত্তলিকা পোড়ানো হয় না।তার বদলে রাবণের সিম্বল হিসাবে ঘাসের স্তূপে আগুন ধরানো হয় বিপাশার পারে। আর সেদিন বসে দেবতাদের দরবার। লোকাল লোকজন যে যার পছন্দমতো দেবতার কাছে মনস্কামনা জানায়। সেদিন নাকি মহা ধুমধাম।
এখন সবাই যে যার মতো ঘুরে দেখতে পারো। নিঝুম রাত ঘুরতে ঘুরতে একটা স্টোলের সামনে যায় নিঝুম মুগ্ধ হয়ে একজোড়া নুপর দেখছিল।হঠাৎ গ্রুপের অন্য একটা মেয়ে এসে ডাকায় তার সাথে যায়। কিছুক্ষন পর এসে ঐ নুপুর গুলো পায় না তাই নিঝুমের মন অনেক খারাপ হয়। কিছুক্ষন মেলা ঘুরে সবাই চলে আসে কর্টেজে ফ্রেশ হয়ে রোমে এসে নিঝুম দেখে একটা পার্সেল সাথে চিরকুট-
“নুপুরের ছন্দে এসো তুমি মোর জীবনে;
রাঙিয়ে দিয় ভুবন তুমি ভালোবেসে গোপনে।”
চলবে……
( তোমাদের কি মনে হয় এটা কে পাঠিয়েছে নিঝুমকে? আজ একটু দেরি হয়ে গেল দিতে তার জন্য দুঃখিত।)