#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১১
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
[ কপি করা নিষেধ ]
আমি রুম থেকে বের হয়ে দেখি শুভ্র ভাই হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আমি যাওয়ার পর আমার হাত ধরে বলল ,
” চল ।
” কোথায় যাব ?
” গেলেই তো দেখতে পারবি । আমি কি তোকে নিয়ে গিয়ে গুম করে রেখে দিবো নাকি ? এত প্রশ্ন কেন করছিস ?
” একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে কি সোজা ভাবে উওর দেওয়া যায় না ? সব সময় এতো ব্যাকা ব্যাকা কথা কেন বলেন ?
” তুই এতো প্রশ্ন কেন করিস ? চুপ করে থাকতে পারিস না ?
আমি আর কথা বাড়ালাম না। উনার সাথে কথা বললেই খালি ত্যাড়া ব্যাকা কথা বলবে আর আমার সাথে ঝগড়া করবে । তার থেকে কথা না বলাই ভালো । উনি আমার হাত ধরে রিসোর্টের বাহিরে নিয়ে এলেন । নীলাচলের চারদিকে অসংখ্য পাহাড় রয়েছে। নীলাচলকে পাহাড়ের রাজা বলা যায় । শুভ্র ভাই আমাকে নিয়ে পাহাড়ের সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে চলেছেন । নীলাচলে পাহাড়ের গায়ে সাজানো সিঁড়ি রয়েছে ।
” শুভ্র ভাই আমরা কি পাহাড়ের চূড়ায় উঠবো ?
” হুম ।
” পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কি করবো ?
” পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আমি তোকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে দিবো ।
আমি দাঁড়িয়ে বললাম ,
” কি বলছেন আপনি ? আমাকে কি সত্যি সত্যি পাহাড় থেকে ফেলে দিবেন ?
শুভ্র ভাই গম্ভীর গলায় বলল ,
” তা না হলে কি মনে হয় তোর ? আমি কি তোর সাথে জোৎস্না বিলাস করতে এসেছি ?
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম ,
” আমি আপনার সাথে যাব না ।
” শুভ্রতা রাগাবি না আমাকে। আমি রেগে গেলে কিন্তু ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেলবো । চুপচাপ আমার সাথে আয় ।
” শুভ্র ভাই প্লিজ যাবো না আমি ।
” তোর এতো সাহস হলো কীভাবে। আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করছিস ।
” আমার এতো তাড়াতাড়ি মরে যাওয়ার শখ নেই । মামনি কোথায় তুমি ? দেখে যাও তোমার ছেলে আমাকে একা পেয়ে মেরে ফেলতে চাইছে ।
” তোর মামনি এখানে নেই । এখন কথা না বলে চল আমার সাথে ।
আমি মুখটা কালো করে উনার সাথে হাঁটতে লাগলাম । উনি কি আমায় সত্যি সত্যি ফেলে দিবে । আমি ভয়ে ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে । শুভ্র ভাই তা বলে তাই করে । আমাকে যদি মেরে ফেলে তাহলে কি করবো আমি। আমার বিয়ে করার , জামাইয়ের সাথে সংসার করার কি হবে। আমি মনে মনে আমার জামাইকে বললাম ,
” হে আমার প্রান প্রিয় স্বামী তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও । তোমার সাথে আমার দেখা হওয়ার আগেই আমার এই শুভ্র ভাই নামক খাটাস টা আমাকে মেরে ফেলতে চলেছে । আমি তোমাকে চিরতরে বিধবা করে চলে যাচ্ছি ।
আমার এই ভাবনার মাঝেই শুভ্র ভাই আমাকে বললেন ,
” তর স্বামী কি নিয়ে এইসব আজগুবি চিন্তা ভাবনা বন্ধ কর ডাফার ।
” আপনি কি করে বুঝলেন আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ভাবছি ?
” আমি বুঝবো না ? তর মতো ডাফারকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি ।
উনার জন্য মনে মনে কিছু বলেও শান্তি নেই আমার । আমরা প্রায় পাহাড়ের কাছাকাছি চলে এসেছি। উনি যদি আমায় মেরে ফেলে তাহলে কি হবে আমার । আমি চোখ বন্ধ করে হাঁটছি । হাঁটতে হাঁটতে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় চলে এলাম । পাহাড়ের চূড়ায় আসার পর শুভ্র ভাই আমাকে বললেন ,
” চোখ বন্ধ করে আছিস কেন ? চোখ খুল ।
” না আমি চোখ খুলবো না।
উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
” শুভ্রতা চোখ খুলতে বলেছি তোকে ।
আমি উনার হাত শক্ত করে ধরলাম। আমার উনাকে একদম বিশ্বাস নেই । আমাকে একা একা এখানে এনে যদি সত্যি সত্যি আমায় ফেলে দেয় তাহলে আমার সাথে আমিও উনাকে ফেলে দিবো । শুভ্র ভাই আবার ও বলে উঠলো ,
” তোর কি মনে হয় আমি তোকে এখানে মেরে ফেলতে নিয়ে এসেছি ? আসলেই তুই একটা গাঁধী । তোকে মারার ইচ্ছে থাকলে আমার এত কষ্ট করে পাহাড় বেয়ে হেঁটে আসার দরকার নেই । এখন চোখ খুলে তাকা এইদিকে ।
উনার কথা শুনে আমি পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি এখানে এক ঝাঁক জোনাকি । চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। চাঁদের আলোয় পুরো নীলাচল আলোকিত হয়ে আছে । পাহাড়ের চূড়া থেকে চট্টগ্রামের কর্নফূলী নদীর জাহাজ গুলোকে একেকটা গ্রহ – নক্ষএর মতো দেখা যাচ্ছে। মাটি থেকে আকাশের তারা যে রকম দেখা যায় ঠিক একই রকম দেখা যাচ্ছে । প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখে আমার মনে একরাশ ভালোলাগার সৃষ্টি হলো । এতক্ষণ ভয়ে ভীত হওয়া চেহারায় ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি । শুভ্র ভাই আমাকে বললেন ,
” জায়গাটা কেমন ?
আমি মুচকি হেসে বললাম ,
” অপূর্ব ! এই রকম দৃশ্য আমি কখনো দেখিনি ।
” প্রিয়তমা তোমার এই হাসি দেখার জন্য আমি সব করতে পারি । তুমি কি জানো তোমার এই হাসিতে আমার ভয়ানক সর্বনাশ আছে। তোমার এই হাসিতে আমি যে পাগল হয়ে যাই । তোমার এই হাসি দেখার অধিকার শুধু আমার । শুধুই আমার ।
আমি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে এতোই বিভোর ছিলাম যে শুভ্র ভাইয়ের কথাটা শুনতেই পাইনি । নীলাচলকে প্রকৃতি তার অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে তুলেছে । শুভ্র ভাই তার হাতের প্যাকেট আমাকে দিলো ।
” এটা কি ?
” এখানে একটা শাড়ি আছে। কালকে এটা পড়বি ।
আমরা আরো কিছুক্ষণ এখানে থেকে রিসোর্টে ফিরে গেলাম । শুভ্র ভাই উনার রুমে যাওয়ার সময় আমি উনাকে ডেকে বললাম ,
” ধন্যবাদ ।
” কেন ?
” আমাকে এতো সুন্দর একটা পরিবেশ উপহার দেওয়ার জন্য ।
” আরো অনেক কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে প্রিয়তমা ।
কথাটা বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলেন উনি । আমিও রুমে চলে গেলাম ।
#চলবে#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১২
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
[ কপি করা নিষেধ ]
ভোর ৫ টায় আমরা সবাই বের হলাম নীলাচলের সূর্যোদয় দেখার জন্য । সবাই দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের ঢাল , আঁকা বাঁকা রাস্তা পেরিয়ে একটা পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালাম । নীলাচলে পর্যটকরা মূলত এখানের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য আসে । পাহাড় থেকে আকাশের মেঘগুলো অপূর্ব সুন্দর লাগছে । মেঘগুলো যেন আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের গাঁ ছুঁয়ে দিলো হিমঠান্ডা হাওয়ায় । মেঘের কোল ঘেঁষে অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে সূর্যের উদয়। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে দুধ সাদা মেঘের ঢেউ । সবকিছু মিলিয়ে মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠলো । সবাই মনোমুগ্ধকর ভোর দেখায় ব্যাস্ত তখন আমি আনমনেই বলে উঠলাম ,
” মেঘের কোল ঘেঁষে অপরূপ এই সূর্যোদয় আমি কখনোই দেখিনি । মন মাতানো এই সূর্যোদয় আমার আজীবন মনে থাকবে । যদি এই মেঘগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারতাম তাহলে কেমন হতো ?
তখন শুভ্র ভাই বলে উঠলো ,
” তোর সব ইচ্ছে পূরণ করতে পারলেও এই ইচ্ছেটা আমি পূরণ করতে পারবো না ।
আমি একবার উনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম ,
” কিছু ইচ্ছে পূরণ না হওয়াই ভালো । এখন মেঘগুলো যদি ছুঁয়ে দেখতে পারতাম তাহলে এখন মনের মধ্যে মেঘ ছুঁয়ে দেখার যে তীব্র ইচ্ছেটা আছে সেই ইচ্ছে তাও থাকবে না । এই ইচ্ছে তাও মনের মধ্যে এক আলাদা প্রশান্তি দেয় ।
” বাহ ! আমার পিচ্চি শুভ্রতা এতো কিছু কিন্তু আফসোস আমাকে একটু ও বোঝে না । আচ্ছা তুই কি সত্যি আমায় বুঝিস না নাকি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থাকিস ?
আমি ভ্রু কুঁচকে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম ,
” এখানে আপনাকে বুঝার কথা আসলো কিভাবে ?
উনি আশাহত ব্যাক্তির মতো মুখ করে বললেন ,
” বুঝবি না তুই বাদ দে ।
” হুম ।
আমি আবারও মেঘের খেলা দেখতে শুরু করলাম । মেঘের রাজ্যে নীলাচল । আজকে সত্যি এক অভাবনীয়, অকল্পনীয় সূর্যোদয়ের সাক্ষী হলাম । জীবনে অনেক ভোর দেখেছি কিন্তু নীলাচলের মতো ভোর কখনো দেখা হয়নি ।
**************
” এইযে প্রকৃতি প্রেমী মেঘগুলো কেমন ?
নিশাত ভাইয়ার কথায় আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ,
” জাস্ট ওয়াও ! মেঘগুলো অনেক সুন্দর ।
” হুম। নীলাচলে না আসলে জানতেই পারতাম না মেঘ এতো কাছ থেকে দেখা যায় ।
” সত্যি এই অসম্ভব সৌন্দর্যের সূর্যোদয় পাহাড়ের বুকে মেঘের অদ্ভুত খেলা অসাধারণ ।
” হুম । সূর্যোদয় দেখা তো শেষ চলো আমরা অন্যদিক থেকে ঘুরে আসি ।
” আচ্ছা চলুন ।
আমরা পাহাড়ের চূড়া থেকে নামতে যাচ্ছি তখন রনি ভাইয়া বলে উঠলো ,
” এই নিশি তোরা কোথায় যাচ্ছিস ?
” আমারা নিচে যাচ্ছি ভাইয়া । সূর্যোদয় তো দেখলাম । তাই নিচে গিয়ে অন্য জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি । তুমি আমাদের সাথে যাবে ?
” না তোরা যা। আমারা সবাই আর কিছুক্ষণ পরে যাব ।
” আচ্ছা ।
আমি আর নিশাত ভাইয়া পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে নেমে এলাম । কালকের কথা মনে পড়ল । তাই নিশাত ভাইয়ার সাথে কথা বলতে সংকোচবোধ করছি । আর অনেক লজ্জা ও করছে । নিশাত ভাইয়া আমাকে বলল ,
” কি এতো ভাবছো ?
” তেমন কিছু না ।
” তুমি কি কোনো কারনে লজ্জা পাচ্ছো ?
” না তো আমি কেন লজ্জা পেতে যাবো ?
” সত্যি লজ্জা পাচ্ছো না ?
” আরে না ।
নিশাত ভাইয়া দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন ,
” ওহ আচ্ছা । তোমার ক্রাশ কোন নিশাত জানতে পারি?
আমি এখন কি বলবো ? এমনিতেই কালকের জন্য লজ্জা পাচ্ছি তার মধ্যে আবার উনি এইসব জিজ্ঞেস করছে । উনি তো বুঝতে পারছেন আমি লজ্জা পাচ্ছি । তাহলে কেন জেনে শুনে ইচ্ছে করে আমাকে এভাবে লজ্জায় ফেলছেন । উনি আমায় চুপ থাকতে দেখে আবার ও বললেন,
” এতো লজ্জা কেন পাচ্ছো ? তোমার লজ্জা মিশ্রিত মুখ যে কাউকে উন্মাদ করে তুলে ।
” আপনি তো দেখছেন আমি লজ্জা পাচ্ছি তাও ইচ্ছে করে কেন লজ্জায় ফেলছেন আমায় ?
” হা হা হা ! তোমায় তো আমি লজ্জায় ফেলছি না । তুমিই লজ্জা পাচ্ছো ।
আমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললাম ,
” আমরা কি আজকেই ঢাকায় চলে যাব ?
” হুম। নীলাচলের সূর্যাস্ত দেখে আজ রাতেই ঢাকায় ব্যাক করবো ।
” ওহ আচ্ছা ।
*************
তুষার ভাইয়া আমাদের বলল ,
” অনেক মেঘ দেখেছো । এখন চলো সবাই নিচে তাই । নিশি আর নিশাত অনেকক্ষণ আগেই নিচে চলে গেছে । এবার আমাদের ও যাওয়া দরকার ।
” হ্যাঁ চলো সবাই ।
আমি সবার আগে হেঁটে যাচ্ছি । আমার পিছনে শুভ্র ভাই, তুষার ভাইয়া , আপু , রনি ভাইয়া আর মিম । পাহাড় থেকে নামার সময় হঠাৎ করে পা পিছলে গেল । সাথে সাথে আমি চিৎকার দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেলাম । আমি নিচে পড়ার সময় শুভ্র ভাইয়ের একটা চিৎকার শুনলাম ,
” শুভ্রততততা ।
তারপর আমার আর কিছু মনে নেই ।
#চলবে