ভালোবাসা তুই পর্ব -১৩+১৪

#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১৩
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

আমি আর নিশাত ভাইয়া নিচে ছিলাম শুভ্র ভাইয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে ওদের কাছে গেলাম । শুভ্রতাকে এভাবে নিচে পড়ে থাকতে দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না । আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম । আমার হাত পা একেবারে অবশ হয়ে গেছে। আমি এক জায়গায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছি । শুভ্রতার কাছে যেতে পারছি না । কোনো এক অজানা শক্তি যেন আমাকে বেঁধে রেখেছে । নিশাত ভাইয়া শুভ্রতার কাছে গিয়ে শুভ্রতাকে বলল ,

” শুভ্রতা চোখ খুলো । এই শুভ্রতা কথা বলছো না কেনো ?

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” নিশি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? দেখো শুভ্রতা পাহাড় থেকে পড়ে গেছে ।

আমি নিশাত ভাইয়ার কথা গুলো শুনছি কিন্তু কোনো কথা বলতে পারছি না । এক দৃষ্টিতে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আছি । আমাকে কথা বলতে না দেখে নিশাত ভাইয়া আবারও বলল ,

” আরে কথা বলছো না কেন ?

আমি এবার ও চুপ করে রইলাম। নিশাত ভাইয়া শুভ্রতাকে রেখে আমার কাছে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল ,

” নিশি ?

আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । আমি একবার নিশাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে শুভ্রতার কাছে গেলাম।

” শুভ্রতা কথা বল শুভ্রতা । এই শুভ্রতা ।

আমি একাধারে শুভ্রতাকে ডেকে যাচ্ছি কিন্তু শুভ্রতা কোনো কথা বলছে না । সব সময় হাসিখুশি থাকা শুভ্রতাকে এভাবে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে একটু ও ভালো লাগছে না । আমি নিশাত ভাইকে বললাম ,

” দেখুন ভাইয়া শুভ্রতা কথা বলছে না । সব সময় তো আমাদের সাথে কতো কথা বলে এখন কেন চুপ করে আছে ?

নিশাত ভাইয়া কোনো কথা বলল না । চুপ করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে রইলো । শুভ্র ভাই , আপু , তুষার ভাইয়া, রনি ভাইয়া , মিম সবাই নিচে এসে গেছে। শুভ্র ভাই নিচে এসে শুভ্রতার রক্তমাখা মাথাটা শুভ্র ভাইয়ের কোলে নিয়ে বলল ,

” শুভ্রতা আমার দিকে তাকা । চোখ খুল না শুভ্রতা। তোকে এভাবে দেখে যে আমার মা লাগছে না । একবার চোখ খুল ।

আপু রিতিমত কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে । আপু শুভ্রতার পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে তুষার ভাইয়াকে বলল ,

” তুষার শুভ্রতা কথা বলছে না । দেখা আমার বোন চুপ করে শুয়ে আছে ।

রনি ভাইয়া দৌড়ে গাড়ী ঠিক করতে গেলো । শুভ্র ভাই শুভ্রতাকে বলল ,

” শুভ্রতা দেখ আমি তোর সাথে আর ঝগড়া করবো না। তোকে আর জ্বালাবো না । তুই তাকা আমার দিকে একবার কথা বল।

শুভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” নিশি শুভ্রতা কথা বলছে না।

তারপর তৃষা আপুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” এই তৃষা তোর বোনকে বল না আমার সাথে কথা বলতে । একবার শুভ্র ভাই বলে ডাক দিতে বল ।

তখন রনি ভাইয়া দৌড়ে এসে বলল ,

” গাড়ি ঠিক হয়ে গেছে । শুভ্রতাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো ।

শুভ্র ভাই শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো । আমারা সবাই গিয়ে গাড়িতে বসলাম । শুভ্রতাকে একটা হাসপাতালে ভর্তি করা হলো । বাসায় এখনো কাউকে কিছু জানানো হয়নি । আমারা সবাই হাসপাতালের করিডোরের সামনে বসে আছি । নিশাত ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে । শুভ্র ভাই শুভ্রতার কেবিনের সামনে একবার এই দিকে আরেক বার ওই দিকে হাঁটছে আর নিজে নিজে বলছে ,

” শুভ্রতা একবার খালি তুই সুস্থ হয়ে দেখ তোকে বুঝাবো মজা। কতো করে তোকে বললাম চোখ খুলতে একবার আমার সাথে কথা বলতে। তুই শুনিস নি আমার কথা ।

শুভ্র ভাই নিজে নিজে এই রকম অনেক কথা বলছে শুভ্রতাকে কিন্তু শুভ্রতা কোনো কথাই শুনছে না । শুনবে কি করে ? শুভ্রতা তো এখন হসপিটালে অঙ্গান হয়ে আছে । এমন সময় নিশাত ভাইয়া আমার পাশে বসে বলল ,

” দেখছো শুভ্র কেমন করছে শুভ্রতার জন্য ।

” শুভ ভাই অনেক ভালোবাসে শুভ্রতাকে ।

” হুম ।

তখন শুভ্রতার কেবিন থেকে ডক্টর বেরিয়ে এলো। ডক্টরকে দেখে শুভ্র ভাই ডক্টরের কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করল ,

” ডক্টর আমার শুভ্রতা কেমন আছে ?

” রুগী মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছে । হাত পা অনেকটা কেটে গিয়েছে । আমরা ব্যান্ডিজ করে দিয়েছে ।

” শুভ্রতার সুস্থ হতে কতোদিন সময় লাগবে ?

” রুগী যেহেতু মাথায় আঘাত পেয়েছে তাই ক্ষত শুকাতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে ।

” আমি কি একবার দেখা করতে পারবো ?

” না । উনাকে এখন ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে । রুগী ঘুমাচ্ছ এখন । ঘুম থেকে উঠলে আপনার দেখা করবেন ।

তারপর ডক্টর চলে গেল । আমরা সবাই শুভ্রতার ঘুম থেকে উঠার আশায় বসে রইলাম । সকল থেকে কেউ কিছু খায়নি । তুষার ভাইয়া আমাদের সবার জন্য খাবার আনলো । শুভ্র ভাইকে গিয়ে বলল ,

” শুভ্র খাবার এনেছি খেয়ে নে ।

” না। আমি খাব না।

” কিছু না খেলে তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি খেয়ে নে।

” বললাম তো খাব না আমি ।

শুভ্র ভাইকে বলার পরও উনি খেলেন না। শুভ্র ভাইয়ের এক কথা শুভ্রতার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত সে খাবে না ।

#চলবে#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১৪
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

আমি চোখ খুলে তাকালাম । মাথাটা ভার হয়ে আছে । হাত পায়ে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছি। কোথায় আছি আমি ? আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি । তারপরও মনে পড়ল আমার পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার কথা । সবাই কোথায় ? আমি যখন এই সব ভাবছি তখন দরজায় শব্দ হলো । আমি তাকিয়ে দেখি ডক্টর এসেছে। ডক্টর আমাকে বলল ,

” এখন কেমন লাগছে ?

” হাত পা একটু ব্যাথা করছে ।

” আমি ওষুধ দিয়ে দিয়েছি। ওষুধ গুলো ঠিক মতো খাবেন তারপর সুস্থ হয়ে যাবেন।

” আমার আপুর, ভাইয়ারা কোথায় ?

” সবাই বাহিরে আছে ।

” একটু ডেকে দিবেন প্লিজ ।

” আচ্ছা। আপনি শুয়ে থাকুন আমি উনাদের ভিতরে আসতে বলছি ।

কথা টা বলেই ডক্টর কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল । তারপর সবাইকে বলল ,

” রোগীর ঘুম ভেঙ্গেছে । আপনাদের খুঁজছে। আপনারা গিয়ে দেখা করে আসুন ।

তারপর আপু , নিশি , মিম , তুষার ভাইয়া, নিশাত ভাইয়া, রনি ভাইয়া সবাই কেবিনে আসলো । আমি সবাই কে দেখে একটা হাসি দিলাম । আমাকে হাসতে দেখে আপু বলল ,

” এখন হাসা হচ্ছে । জানিস কতো চিন্তা করছিলাম। আমাদের চিন্তায় রেখে খুব আনন্দ পাচ্ছিস তাই না।

কথাটা বলেই আপু কেঁদে উঠলো । আপু সব সময় এমন করে আমার কিছু হলেই আপু কেঁদে ফেলে । আমি আপুকে বললাম ,

” আরে আপু কাঁদছো কেন ? আমি তো এখন ঠিকই আছি ।

তখন নিশি বলে উঠলো ,

” কাঁদবে না ? আমাদের কি অবস্থা হয়েছিল সেটা তো আমারা জানি তুই কি বুঝবি ?

নিশির কথায় রনি ভাইয়া বলে উঠলো ,

” এতো লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটার কি ছিল ? ঠিক মতো হাঁটতে পারিস না বেয়াদব মাইয়া ?

তখন তুষার ভাইয়া বলল ,

” আরে তোমরা সবাই শুভ্রতাকে এভাবে বকছো কেন ?

তুষার ভাইয়ার কথায় নিশাত ভাইয়া বলল ,

” আসলেই সবাই এভাবে বকছো কেন ? এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট হলো কোথায় ওর সাথে একটু ভালো ভাবে কথা বলবে তা না করে সবাই বকছে ।

আমি নিশাত ভাইয়ার কথায় মুখটা ফুলিয়ে বলে উঠলাম ,

” কেউ আমাকে একটুও ভালোবাসে না । সবাই খালি বকা দেয় ।

আমার কথায় আপু বলে উঠলো ,

” হয়েছে হয়েছে ! তোকে আর ঢং করতে হবে না । এখন কেউ বকবে না তোকে ।

আপুর কথায় আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম । নিশাত ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করল ,

” এখন কেমন ফিল করছো । শরীর কি বেশি ব্যাথা করছে ?

” আগের থেকে এখন অনেক ভালো লাগছে আর হালকা হালকা ব্যাথা করছে ।

” তুমি তাহলে রেস্ট নেও আমরা এখন যাই ।

” আচ্ছা ‌।

ওরা সবাই কেবিনে থেকে চলে গেল । আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছি সবাই তো দেখতে এলো কিন্তু শুভ্র ভাই তো আসলো না । শুভ্র ভাই এখন কোথায় ? উনি কি আমায় দেখতে আসবেন না । আমি যখন এইসব ভাবছি তখন মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম । আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি শুভ্র ভাই আমার পাশে বসে আছে আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । উনার চোখ মুখ একেবারে শুকিয়ে গেছে । উনি কি সারাদিনে কিছু খায়নি ,? উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি নিজে থেকেই বললাম ,

” শুভ্র ভাই ।

আমি উনাকে ডাক দেওয়াতে মনে হয় উনি রেগে গেলেন । রাগি স্বরে বললেন ,

” তোকে বলেছি আমাকে শুভ্র ভাই বলে ডাক দিতে ? এখন কেন ডাকছিস ?

” ডাক দেওয়াতে কি হয়েছে ?

” তোকে আমি কতোবার বলেছিলাম ” শুভ্রতা চোখ খুল একবার আমার দিকে তাকিয়ে , একটা বার শুভ্র ভাই বলে ডাক দে ” তখন তো তুই আমার কথা শুনিস নি । একবার ডাক ও দিলি না । এখন ডাকছিস কেন ?

” আমি কি তখন আপনার কথা শুনেছি নাকি ?

” সব শুনেছিল তুই । ইচ্ছে করে আমায় কষ্ট দিয়েছিস । এই শুভ্রকে কষ্ট দেওয়া ? তুই একবার সুস্থ হয়ে দেখ আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল তুই পাবি ।

আমার তো এবার সুস্থ হতে ইচ্ছে করছে না যে। আমি কি করলাম উনাকে । আমি কিভাবে কষ্ট দিলাম ? ধুর ভাল্লাগে না ? উনি আমায় বললেন ,

” তুই আমাকে কষ্ট দিয়ে কি আনন্দ পাচ্ছিস বল তো ? কেনো এভাবে পাহাড় থেকে পড়ে গেলি ? তুই হাঁটতে না পারলে আমায় বলতি আমি তোকে কোলে করে নিয়ে আসতাম। কেনো এভাবে পড়ে গেলি ?

” আমি কি ইচ্ছে করে পড়ে গিয়েছি নাকি ?

” তোকে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটতে আমি বলেছিলাম নাকি ? এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে না হাঁটলে তো এক্সিডেন্টা হতো না ।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে কিউট ফেইস করে কানে ধরে বললাম ,

” সরি ! এমন ভুল আর কখনো হবে না ।

উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন। এভাবে কেন চলে গেলো আমি এবার কি করলাম । আমি দরজার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। একটু পরে দেখি শুভ্র ভাই কেবিনে ঢুকছে । হাতের মধ্যে একটা প্লেট । উনি আমার কাছে এসে আমাকে বসিয়ে দিলেন। তারপর মুখের সামনে খাবার এনে আমাকে বললেন,

” হা কর ।

” আমি নিজের হাতে খেতে পারবো তো। আমাকে প্লেটটা দিন আমি খেয়ে নিচ্ছি ।

উনি আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

” তোকে এতো কথা বলতে বলছি ? হা করতে বলেছি হা কর ।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিলাম । খাওয়ার পর আমি উনি আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিল। আমি উনাকে জিঙ্গেস করলাম,

” আপনি খেয়েছেন ?

উনি কিছু বললেন না। আমি আবারও বললাম ,

” আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি কিছু খান নি । প্লিজ কিছু খেয়ে আসেন ।

উনি চলে গেলেন । বেশ কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসলেন। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম ,

” শুভ্র ভাই আমরা বাসায় যাব কোন সময় ?

” আজ রাতেই ।

” আমি যে পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েছি বাসায় সবাই জানে ?

” না । কাউকে এখনো জানানো হয় নি ।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here