ভালোবাসা তুই পর্ব -১৭+১৮

#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১৭
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

আমি ভয়ে দাঁড়িয়ে আছি । কি করবো বুঝতে পারছি না। প্রচন্ড ভয় পাচ্ছি । ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । একটা ছেলে হাসতে হাসতে বলল,

” এবার তোমার কি হবে সুন্দরী ?

একটা ছেলে আমার ওড়নায় হাত দিতে যাবে তখন আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম । কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখার পর যখন কোনো সাড়াশব্দ পেলাম তখন চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শুভ্র ভাই অগ্নি দৃষ্টিতে ছেলেটার হাত ধরে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে । শুভ্র ভাই ছেলেটার হাত মুচরে পেছনের দিকে নিয়ে ছেলেটাকে বলল,

” তোদের সাহস কি করে হলো ওর ওরনায় হাত দেওয়ার?

বাকি ছেলে গুলো হেসে উঠলো। একটা ছেলে হাসতে হাসতে বলল,

” কে রে এটা ? আমাদের সাহসের কথা বলছে । আমাদের সাহসের তো এখন ও কিছু দেখেই নি । চল আমাদের সাহসের কিছু প্রমাণ দেখাই ।

কথাটা বলেই ছেলেটা শুভ্র ভাইয়ের নাকে একটা ঘুষি দিল । ঘুষি খেয়ে শুভ্র ভাই ছেলেটাকে একটা লাথি মারল । তারপর শুরু হলো শুভ্র ভাই আর ছেলে গুলোর মধ্যে ধস্তাধস্তি । ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শুভ্র ভাই ছেলেগুলো কে আধমরা করে ফেলেছে। আমি গিয়ে শুভ্র ভাইয়ের হাত ধরে বললাম,

” শুভ্র ভাই ছেড়ে দিন ওদের আর একটু হলে মরেই যাবে !

শুভ্র ভাই আমার হাতটা ছাড়িয়ে বলল,

” ওদের মরাই উচিত । কোন সাহসে তর গায়ে হাত দিতে গিয়েছিল ? আমি আজকে ওদের একেবারে মেরেই ফেলবো ।

বলেই এবারও মারা শুরু করল । একটা ছেলে শুভ্র ভাইয়ের পা ধরে বলল ,

” প্লিজ ছেড়ে দিন ভাইয়া আর কোনদিন এমন কাজ করবো না ।

তাও শুভ্র ভাই ছেলেটার কথা শুনলো না । একটা ছেলে আমার কাছে এসে বলল,

” আপু প্লিজ বাঁচান আমাদের না হলে উনি মেরেই ফেলবে ।

আমি শুভ্র ভাইকে গিয়ে বললাম,

” শুভ্র ভাই ওরা বলছে তো আর এই রকম কাজ করবে না এবারের মতো ছেড়ে দিন ।

আমার কথা শুনে শুভ্র ভাই একটু শান্ত হলো । ছেলেগুলো কে মারা বন্ধ করল । তারপর ছেলেগুলো কে বলল,

” আমি যদি আর কোনো দিন দেখি তোরা কোনো মেয়েকে বিরক্ত করছিস তাহলে একেবারে মেরে ফেলবো তোদের ।

সব গুলো ছেলে একসাথে বলল,

” আমরা আর কোনো মেয়েকে বিরক্ত করবো না।

” ঠিক আছে। যা এখান থেকে।

ছেলেগুলো ওঠে চলে গেল। শুভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুই একা একা এসেছিস কেন ? কে বলেছে তোকে একা একা আসতে ?

” অনেক দিন ধরে ভার্সিটিতে আসা হয়নি আর আপুও আজকে আসবে না তাই একা একা এলাম ।

” অনেক দিন ধরে আসিস নি আজকে না আসলে কি হতো ? এখন যদি আমি না আসতাম তাহলে কতো বড় বিপদ হতো ভাবতে পারছিস তুই ?

” আমি কি জানতাম নাকি এরকম কিছু হবে ?

” একা একা আর কোনদিন ভার্সিটিতে আসবি না । তৃষা না আসলে আমাকে বলবি । আমি তোকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাব নিয়ে আসবো ।

” আচ্ছা ।

” গাড়িতে ওঠ ।

আমি গিয়ে গাড়িতে বসলাম । শুভ্র ভাই আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিলো । আমি গাড়ি থেকে নেমে শুভ্র ভাইকে বললাম,

” আপনি বাসায় যাবেন না ?

” না । আজকে যাব না। অন্য দিন যাব । আমি এখানে আছি তুই ভিতরে যা ।

আমি ভিতরে চলে গেলাম । আমার রুমে গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখি শুভ্র ভাই চলে যাচ্ছে । আমি রুমে গিয়ে গোসল করে নিচে আসলাম। সবার সাথে দুপুরে খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

***************

আজকে পনেরো দিন হলো শুভ্রতাদের বাসা থেকে রাজশাহী আসলাম । এখন বা হাতে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে উপন্যাস পড়ছি আর কফি খাচ্ছি । এমন সময় ভাইয়া এসে পাশে বসে বলল ,

” কিরে কি করছিস ?

” দেখতে পারছো না কি করছি ?

” পাচ্ছি তো ।

” তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছো ?

” তর কাছ থেকে এই সব কথা শুনার জন্য ।

আমি একবার ভাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বইয়ের দিকে মন দিলাম । কিছুক্ষণ পর ভাইয়া বলে উঠলো ,

” তুই না বলেছিস মার্কেটে যাবি চলো যাই ।

আমি ভাইয়ার কথায় খুশি হয়ে বই বন্ধ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

” সত্যি যাবে ?

“হুম চল।

” আচ্ছা তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি ।

আমি বলার পর ভাইয়া চলে গেল। এটা আমার একমাত্র ভাইয়া রোহান । আমাকে অনেক জ্বালায় আবার অনেক ভালোবাসে। আমি রেডি হয়ে নিচে গেলাম । নিচে গিয়ে দেখি ভাইয়া সোফায় বসে আছে। আমি গিয়ে বললাম,

” চলো আমি রেডি ।

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এভাবে পেত্নীর মতো সেজেছিস কেন ?

” ভাইয়া এখন তো আমি রাগবো না । শুধু শুধু রাগানোর চেষ্টা না করে চলো তো ।

ভাইয়া আম্মুকে ডাক দিয়ে বলল,

” আম্মু আমি নিশিকে নিয়ে একটু মার্কেটে যাচ্ছি ।

” আচ্ছা যা। তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস ‌।

” ওকে।

বলে ভাইয়া আমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো। তারপর একটা রিকশা করে মার্কেটে গেলাম । ভাইয়া আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আমার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনছি । আমার মার্কেট করা শেষে আমি ভাইয়াকে বললাম,

” ভাইয়া চলো না ফুচকা খাবো ।

” আচ্ছা আয়।

তারপর আমি আর ভাইয়া ফুচকার দোকানে গেলাম। ভাইয়া এক প্লেট ফুচকা অর্ডার করল । ভাইয়া ফুচকা খায় না তাই আমার জন্যই অর্ডার করল। ফুচকা খাওয়া শেষে বাসায় যাওয়ার জন্য হাঁটছি। এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা খেলাম। লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম,

” আপনি এখানে ?

#চলবে#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১৮
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

আমার সামনে এখন নিশাত ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন । আমি এখন এভাবে উনাকে দেখবো এটা কখনোই আশা করিনি । নিশাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন । উনি আমাকে বললেন,

” নিশি তুমি ?

” হ্যাঁ আমি । আপনি এখানে কবে আসলেন ?

” এই তো দুইদিন হলো । কেমন আছো তুমি ?

” ভালো ! আপনি?

” এখন অনেকটাই ভালো আছি ।

” আগে ভালো ছিলেন না বুঝি ?

” ছিলাম কিন্তু এখনের মতো না ‌।

” অহ আচ্ছা ।

এতক্ষণ ভাইয়া একটু দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলছিল । আমাদের কাছে এসে নিশাত ভাইয়া দিকে তাকিয়ে বলল,

” আরে নিশাত ভাইয়া আপনি এখানে ?

” আমি তো আমার মামার বাড়িতে আসছি তুমি এখানে কি করছ ?

” আমাদের বাসা তো রাজশাহীতে ।

আমি ভাইয়া আর নিশাত ভাইয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি । তারপর আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ,

” তোমারা দুজন দুজনকে চিনো ?

” হ্যাঁ। আমি আর নিশাত ভাইয়া তো একই ভার্সিটিতে পড়ি । ভাইয়া আমার সিনিয়র ।

তারপর নিশাত ভাইয়া বিস্ময়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল,

” নিশি রোহান তোমার কি হয় ?

” আমার ভাইয়া ।

ভাইয়া রোহান ভাইয়াকে জিঙ্গেস করল ,

” ভাইয়া রাজশাহীতে যেহেতু এসেছেন আমাদের বাসায় চলুন ।

” আজকে যাব না । আমি এখানে আছি কয়েকদিন কোন একদিন যাব ।

” আচ্ছা । আমরা এখন তাহলে যাই ।

” আচ্ছা যাও ।

তারপর আমি আর ভাইয়া রিকশায় উঠলাম । রিকশায় উঠে আমি রিকশা থেকে একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিশাত ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আর ভাইয়া বাসায় চলে আসলাম । বাসায় এসে আমি আমার রুমে যেতে ছিলাম তখন পিছন থেকে ভাইয়া ডাক দিলো,

” নিশি এইদিকে আয় তো ।

” বলো ।

” তুই নিশাত ভাইয়াকে কিভাবে চিনিস ?

” নিশাত ভাইয়া তো শুভ্র ভাইয়ের ফ্রেন্ড । আমি শুভ্রতাদের বাসায় যাওয়ার পর দেখেছিলাম নিশাত ভাইয়াকে ।

” ওহ আচ্ছা । রুমে যা ।

” হুম ।

বলে আমি রুমে চলে আসলাম । রাতে আমি রুমে বসে পড়ছিলাম । এমন সময় আমার ফোনটা বেজে উঠলো । আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রিমি কল দিয়েছে। রিমি আমার ফ্রেন্ড । আমি কলটা রিসিভ করতেই রিমি বলে উঠলো ,

” কিরে কি করছিস ?

” তুই কি এটা বলার জন্য ফোন দিয়েছিস ?

” রাগিস কেন ?

” কি বলবি বল ।

” কালকে তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আসিস ।

” কেন কালকে ভার্সিটিতে কি ?

” এলেই দেখতে পাবি ।

” আচ্ছা রাখ এখন ।

তারপর রিমি কল কেটে দিলো । আমি পড়ে রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নিলাম । তারপর রুমে এসে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম । রেডি হয়ে নিচে গেলাম তারপর একটা রিকশা করে ভার্সিটিতে পৌঁছালাম। ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি রিমি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে । আমি যাওয়ার পর আমাকে রিমি বলল ,

” দোস্ত আজকে একটা ক্লাস করে আর ক্লাস করবো না। তুই না করিস না ।

” কেন আজকে কি ?

” আজকে ঘুরতে যাব ।

” তাহলে তুই ক্লাস করিস না । আমি করব ।

” আমি না করলে তুই ও করবি না । এখন ক্লাসে চল।

আমি আর রিমি ক্লাসে গেলাম । একটা ক্লাস করার পর রিমি আমাকে বাহিরে নিয়ে এলো । আমরা গেইটের কাছে এসে দেখি নিশাত ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে । আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ,

” আপনি আমাদের ভার্সিটির সামনে ?

**************

আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তখন আম্মু এসে বলল,

” শুভ্রতা ওঠ ।

আমি ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম ,

” আম্মু ঘুমাতে দেও না ।

” অনেক ঘুমিয়েছিস বিকাল হয়ে গেছে এখন ওঠ । তর মামনি ফোন দিয়েছিলো ।

আমি মামনির কথা শুনে ওঠে বসে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম ,

” কি বলেছে মামনি ?

” তোকে যেতে বলেছে ।

” আচ্ছা তুমি যাও।

আম্মু চলে গেল । আমি রেডি হয়ে মামুর বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি মামনি সোফায় বসে টিভি দেখছে। আমি গিয়ে মামনির পাশে বসলাম । মামনিকে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল ,

” এসেছিস তুই ?

” হুম ।

” আচ্ছা বস আমি আসছি ।

তারপর মামনি ওঠে রান্নাঘরে চলে গেল । একটু পরে একটা বাটিতে করে পায়েস এনে আমার সামনে ধরে বলল ,

” নে পায়েস খা ।

” তুমি পায়েস করেছো ?

” হ্যাঁ । তুই তো পায়েস খেতে ভালোবাসিস তাই তোকে আসতে বললাম ।

আমি পায়েস খেলাম । মামনির হাতের তৈরি পায়েস সত্যি অনেক মজার ‌। আমি মামনি কে বললাম,

” মামনি শুভ্র ভাই কোথায় ?

” শুভ্র তো ওর রুমেই।

” আচ্ছা আমি শুভ্র ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি ।

” যা।

আমি শুভ্র ভাইয়ের রুমের সামনে গেলাম । রুমের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই ল্যাপটপ দিয়ে কি জানি করছে । শুভ্র ভাই এইদিকে না তাকিয়ে ও ভিতর থেকে বলে উঠলো,

” বাহিরে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে আয় ।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here