ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -১৭

#ভালোবাসার রং বদলায়
লেখক — মাহমুদ
পর্ব — ১৭
.
ডায়েরী হারাবার পর থেকে সারাটারাত নির্ঘুমে কাঁটাল রূপা। এপিঠ-ওপিঠ করেই কাটিয়ে দিল একটি নির্ঘুম রাত। ডায়েরীর প্রতিটা পাতায় ছিল দ্বীপকে নিয়ে লেখা শতশত অস্তিত্ব। এতদিন ধরেই সে ডায়েরী-টা বুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে ছিলো। কিন্তু আজ যখন ডায়েরী-টা তার সাথেই নেই তাহলে বেঁচে থাকবে কাকে আঁকড়ে ধরে?
সারাটা রাত নিরবে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ভাসিয়েছে রূপা। চোখের পানি শুকিয়ে সাদা দাগ হয়ে উঠেছে। রূপা আড়মোড়া ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসল। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল ধ্রুব বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ইশসস! কী নিষ্পাপ দেখতে! রূপা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ধ্রুবের নিষ্পাপ চেহারা দিকে। এটা নতুন কিছুই না। প্রতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ধ্রুবের নিষ্পাপ মুখখানির দিকে চেয়ে থাকে সে। এটা যেন প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়ে তার। মাঝেমাঝে রূপা নিজেকেই বুঝতে উঠতে পারে না। প্রতিক্ষণে, ধ্রুবকে ঘুমরত অবস্থায় দেখতে ইচ্ছে করে তার। এজন্য প্রত্যেকটা দিন সে ধ্রুবের আগে আগে উঠে। লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ধ্রুবের দিকে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। ধ্রুব একটু নড়ে চড়ে উঠতেই ধ্যান ভেঙে যায় রূপার। তড়িঘড়ি করে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল সে। এরপর ওযু করার জন্য পা বাড়াল ওয়াশরুমের দিকে।

নামাজের শেষে রূপা হাত খোপা করতে করতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। কিন্তু আজ কিছুতেই রান্নায়ও মন বসাতে পারছে না সে। ডায়েরী-টা যদি ধ্রুবের হাতে কোনোভাবেই পরে যায়, তাহলে যে সেদিন তার কপালে কী থাকবে সে নিজেও জানে না। বেশ আতংকিত হয়ে উঠল রূপা। ডায়েরী যেভাবেই হোক ওকে খুঁজতেই হবে। কিন্তু কোথায় খুঁজবে? পুরোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুজেছে রূপা। কিন্তু ডায়েরীর ‘ড’ ও খুঁজে পায়নি সে। রূপার কেন জানি মনে হচ্ছে, ডায়েরী-টা আর কেউ নয় ধ্রুবই পেয়েছে। কাল রাতটাই তার সাক্ষী। নিজের উপরই ক্ষোপ জন্মেছে রূপার। কেন যে কাল সে ডায়েরী-টা ছাদে নিয়ে গিয়েছিল?

– ভাবিইইই!

নিলুর ডাকে ভাবনার জগতের বেড়াজাল ছিড়ে বেরিয়ে এল রূপা। থতমত খেয়ে বলল,

– ক-কি হয়েছে? এভাবে ডাকলে কেন? কারো কিছু কি হয়েছে?

বলেই আশেপাশের দিকে চোখ বুলাতে লাগল রূপা। নিলু বলল,

– আরে ভাবি আশেপাশে কি দেখছ? একবার তো নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ… আরেকটু হলেই তো দুধটা পড়ে যেত।

চুলোর উপরের দুধ রাখা হাড়ির দিকে তাকাল রূপা। বলল,

– সত্যিই তো… তুমি না আসলে যে… থ্যাঙ্ক ইউ ননদী।

– ওয়েলকাম ভাবি। আচ্ছা ভাবি শোনো, আজ আমরা একটু বেরুবো। রেডি থেকো।

– কেন?

– পড়েই বুঝতে পারবে।

– এখন বলো না প্লিজজজজ….

– উঁহ…. এখন বলা যাবেনা। যেহেতু তুমি ভুলে গেছ, সেহেতু এখন না জানায় বেটার। সময় হলেই জেনে যাবে। এখন যাই! তাড়াতাড়ি গোসল-টা সেড়ে ফেলি। আর ভাবি তুমিও গোসল করে রেডি হয়ে নাও। তোমার রান্না তো প্রায় শেষের দিকে।

– কিন্তু….

রূপাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে উপরের দিকে চলে গেল নিলু। রূপা অস্ফুট সুরে বলে উঠল,

– যাহ! চলে গেল? কিন্ত এইটা তো মেয়েটা বলে যেতে পারত আমি কী ভুলে গিয়েছি?

রূপাকে একা একা কথা বলতে দেখে ফারাজানা বেগম কিছুক্ষণ আশেপাশের দিকে চোখ বুলালেন। এরপর বললেন,

– এই পাগলী মেয়ে একা একা কার সাথে কথা বলছিস?

– ক-কই কারো সাথে না তো।

– আচ্ছা আয় আমার সাথে।

– এখুনি?

– হ্যা এখুনি যেতে হবে।

– মা, একটু পরে যায়? রান্নাটা হয়ে এলেই….

– রান্না পরে আগে আয় আমার সাথে।

– জ্বি… জ্বি….

রূপা চুলোর আঁচ কমিয়ে ফারজানা বেগমের পিছুপিছু চলে গেল তার ঘরের দিকে। ঘরে ঢুকেই ফারজানা বেগম আলমারি থেকে দুটো গয়নাগাটির বক্স বের করলেন। রূপার সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,

– এই দুইটার মধ্যে তোর যেটা ভালো লাগবে সেটাই নিবি। নে ধর…

– এগুলো কেন দিচ্ছেন মা? আপনাকে তো বলেছিলাম নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিতে। এরপরও…..

– আরে বাবা এগুলো তোকে দেয়ার কারণ হলো কাল….

– মাআআআ!

ফারজানা-রূপা দুজনই দরজার দিকে তাকিয়ে পড়লেন। নিলু এসেছে। নিলু ঘরের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলতে লাগল,

– ওরেব্বাস! আরেকটু হলেই তো ভাবি জেনে যেত। মা তুমিও না…

– ও সরি, আমার মনে ছিলো না।

রূপা দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে অবাক দৃষ্টিতে। দুজনের কথার ঝোকে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। কাল সত্যিই কী?

– মা-নিলু আমাকে একটা সত্যি কথা বলুন তো। কাল কী এমন হবে যা আমি জানি না…

– বলা যাবেনা ভাবি। সিক্রেট….

– প্লিজ আমাকে বলো।

– উঁহু… বললাম তো না।

– মা, আপনি তো অন্তত বলেন।

– সরি রে মা আমিও বলতে পারব না। কিন্তু তুই কিভাবে ভুলে গেলি আমি এটাই বুঝতে পারছি না।

– কী ভুলে গেছি আমি? আমাকে না বললে আমি কিভাবে বুঝবো?

– ও হো ভাবি, কাল কী এটা জেনে কী করবা বলো তো? শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করছ। যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আমার গুছানো প্রায় শেষ। আর হ্যা মা, আমি না গ্রিন কালারের জামাটা খুজে পাচ্ছি না। প্লিজ একটু খুঁজতে হেল্প করে দাও না।

– আচ্ছা চল….

– কিন্তু তোমরা আমার কথা…..

ফারজানা-নিলু চলে গেলেন। পিছনে ফেলে রেখে গেলেন হতম্ভিত রূপাকে। সবকিছুই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। কালকে কী এমন হবে, যা সে জানে না?

গোসল-টা সেড়ে চুলগুলো টাওয়েল দিয়ে পেঁচিয়ে বাথরুম ছেড়ে বেরিয়ে এল রূপা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়েল-টা খুলে কোনরকম চুলটা মুছে নিল সে। চুল বেয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে রূপার। সেদিকে কিছুক্ষণ ধরে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রয়েছে ধ্রুব। আজ সিলভার রঙের শাড়ি পড়েছে রূপা। অর্ধ ভেজা চুলে তাকে দেখতে কোনো অংশে অপ্সরীর থেকেও কম লাগছে না। চুলগুলো আঁচড়িয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই রূপা দেখতে পেল ধ্রুব তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে। রূপার এতক্ষণে মনে পড়ল ধ্রুবের কথা। তার মনেই ছিলনা যে ধ্রুব এই রুমে আছে। বেশ অস্বস্তিতে পড়ল রূপা। আয়নার দিকে এক পলক তাকাতেই দেখতে পেল ধ্রুব এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। রূপা লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে নিলো। এখন কী করবে সে? লজ্জায় যে এখান থেকে নড়তেও পারছে না। রূপা কাঁপা কাঁপা হাতে চিরুনি-টা তুলতেই হাত ফসকে পরে গেল মেঝেতে। সঙ্গে সঙ্গে ধ্যান ভেঙে গেল ধ্রুবের। এরপর চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনে।

.
ওরেঞ্জ কালারের সালোয়ার-কামিজ পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিলু। আজকে নিলুকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে দেখতে। বেড সাইডের টেবিল থেকে ফোনটা উঠিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিল সে। ফেসবুক লগইন করে ছবিগুলো শরৎ এর আইডিতে সেন্ড করল নিলু। সঙ্গে সঙ্গে ছবিগুলো সিন করে ফোন দিল শরৎ।

– ওয়াও বেবি!! তোমাকে আজ সেই লাগছে দেখতে। আহ!! কতদিন পরে তোমাকে দেখলাম। আচ্ছা বেবি তুমি এমনভাবে রোজ রোজ আমাকে পিক তুলে দিতে পারো না? ভিডিও কলেও তো একবারও কথা বলতে চাও না। তাহলে, দিনে অন্তত একটা হলেও তো পিক দেয়া যায় তাই না? আমার যে খুব মন চাই তোমাকে দেখতে।

– শরৎ, তুমি ভালোভাবেই জানো আমি ছবি তুলতে পছন্দ করিনা। আজ কেন জানি তুলতে মন চাইল। তাই দেরী না করে ঝটপট তুলে ফেললাম। আর তোমার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।

– তবু…. এমন রোজ রোজ দিলে ভালো হয়। আমি যে তোমার বয়ফ্রেন্ড এটা কেন বার বার ভুলে যাও বলো তো? ইদানীং দেখছি আমার কাছে ফোন ম্যাসেজ কিছুই দিচ্ছ না তুমি। আচ্ছা সত্যিই করে বলো তো, তোমার হয়েছে টা কী? একয়দিন ধরে তুমি আমাকে ইগনোর করে চলছ কেন? তোমাকে আমি যে প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে মিস করি। এটা বুঝ না?

– আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। এজন্য…..

– তুমি মিথ্যা বলছ নিলু। রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর থেকে তুমি আমার সাথে কেমন কেমন ভাবে যেন কথা বলছ। বিষয়টি আগে বুঝতে না পারলেও এখন ঠিকই বুঝতে পারছি। আচ্ছা, নিলু তুমিই বলো আমি সেদিন কি এমন ক্রাইম করে ফেলেছিলাম, যার জন্য তুমি এতটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছ? কি হলো বলো চুপ করে আছো কেন?

– দেখ শরৎ, আমি তোমাকে ইগনোর করে চলছি না। এই কয়দিন আমার এক্সাম চলছিল। এজন্য তোমার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারিনি। এই স্বাভাবিক বিষয়টিকে নিয়ে বড় ইস্যু করছো কেন বলো তো?

– সরি বেবি, আমি বুঝতে পারিনি। আচ্ছা এসব পুরনো কথা বাদ দাও।

– পুরনো কথা তুমিই আগে তুলেছিলে।

– সরিইইইইই! জানুউউউউ, আজ এত সাজগুজ করার কারণটা কী? কোথায় যাচ্ছ?

– নতুন করে একটা ছেলেকে পটাবো তো… তাই আর কী সেজেছি।

– হাহাহা! ঠাসা মিথ্যা কথা। তোমার এই কথাটা শুনে আমাদের ঘর কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবতেও পারবে না। আর কোথায় পোটানো…. হাহাহা…..

নিলু গাল চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

– হাঁসি থামাও… হাঁসি থামাও বলছিইইই।

কোনোরকম হাঁসি থামিয়ে শরৎ বলল,

– ও সরি…. সরি। আসলে….

– রাখি বাই।

– এই বউ। রাগ করলে নাকি?

শরৎ এর মুখ থেকে বউ কথাটি শুনে নিলু চমকে উঠল। এতদিন ধরে শরৎ এর মুখ থেকে বউ ডাকটি শোনার জন্য বেঁচেছিল নিলু। এখন মরে গেলেও তার আত্মাটা শান্তি পাবে। নিলু অস্ফুট সুরে বলল,

– কী বললে? আরেকবার বলো….

– বউ….

মুচকি হেঁসে দিল নিলু। ছোট্ট সুরে বলল,

– হু….

– রাগ কমেছে?

– হুম।

– ওহ থ্যাংক গড!! আমি তো ভেবলছিলাম আজ তোমার রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে রাত পেরিয়ে যাবে।

– তারপর?

– কোথায় যাচ্ছ আজ?

– ভাবির আর আমি আজ শপিং করতে যাচ্ছি।

– কী উপলক্ষে?

– কাল ভাইয়া-ভাবির রিসিপশন। সেই উপলক্ষেই শপিং এ যাচ্ছি। আচ্ছা তুমি কী আসবে দেখা করতে?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে শরৎ বলল,

– আসতে তো চেয়েছিলাম। কিন্তু আসার কোন লাইন নেই। কারণ আমি আজ ঢাকার বাইরে। রাজশাহীতে আছি এখন। ইশশশ! কাল বললে না কেন? তাহলে আর রাজশাহী তে যেতাম না। তোমার কাছে ছুটে চলে আসতাম….

– ঢং কত…..

– সিরিয়াসলি বলছি।

– হু…. আচ্ছা রাখি দেরী হয়ে যাচ্ছে।

– ওকে। আই মিস ইউ সো মাচ।

মন খারাপ করে নিলু বলল,

– মিস ইউ টু।

.
রূপা-নিলু দুজনি শপিংমলের জন্য রওনা হলো। জ্যামের কারণে ওদের শপিংমলে পৌঁছাতে বেশ দেরী লাগল। গাড়ি থেকে নামার সময় রূপা বলে উঠল,

– নিলু আমাকে এখনও বললে না কাল কী? এছাড়া আমরা শপিংমলে কেন এসেছি সেটাও বলছ না। তোমরা কী লুকাচ্ছ আমার থেকে?

– ও হো ভাবি, প্লিজ এখানেও একদম শুরু হয়ে যেওনা। ভিতরে চলো।

– হুম।

শপিং মলের ভিতরের দিকে প্রবেশ করল ওরা। এত বড় শপিং মল দেখে হতম্ভিত হয়ে গেল রূপা। এর আগে কখনো এই শপিংমলে আসা হয়ে ওঠেনি তার। সবসময় ছোটখাটো শপিং মলে গিয়ে সামান্য কয়েক দামের জামা কিনত তারা। দুই একদিন ব্যবহার করার পরে রং সহ জামা-টা কিছুকিছু জায়গায় ছিড়েও যেত। আর আজ এখানে এসে এক্সক্লুসিভ সব ড্রেস দেখে একটু অবাক হল।

– ভাবি এই শাড়িটা কেমন?

নিলুর কথায় ঘোর কাটল রূপার। বলল,

– তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই নাও।

– না ভাবি তুমিই বলে দাও কোনটা নেব। আচ্ছা তোমার কী কালার প্রিয়?

– উম… ব্লু কালার।

– ব্লু? ওয়াও!! ভাইয়ারও কিন্তু ব্লু কালার প্রিয়। তোমার আর ভাইয়ার মিল যে এক দেখছি।

রূপা প্রতিউত্ত্যুরে মনে মনে বলল,

– ব্লু কালার আমার দ্বীপের কাছে অতি প্রিয় রং ছিল। ওর সাথে যখন যা কিনতে যেতাম তখন ও সবকিছু ব্লু কালারের কিনতে বলতো। তখন আমার ব্লু কালার একদমই পছন্দ ছিল না। ব্লু কালার দেখলেই রাগ উঠত। কিন্তু যেদিন থেকে জানতে পারলাম এটা আমার ভালোবাসার মানুষটির প্রিয় কালার, সেদিন থেকেই এই কালারটা আমার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে।

ব্লু কালারের কয়েকটা জামদানি শাড়ি দোকানদারকে বের করতে বলল নিলু। এর ভিতর থেকে একটা পছন্দ করল দুজনে মিলে। এরপর টাকা চুকিয়ে দিয়ে নিলু চলে যেতে লাগল বাইরের দিকে। রূপা পিছন থেকে ডেকে বলল,

– নিলু বাইরের দিকে যাচ্ছ কেন? তুমি কিছু কিনবে না?

– না ভাবি আমি কিছু কিনব না।

– কেন কিনবে না? আমারটা যখন কিনেছি তখন তোমারটাও কিনতে হবে। এই দেখ এইটা কেমন?

– ভাবি তুমি তো জানো আমার আলমারি ভর্তি জামা। শুধুশুধু কিনে কী লাভ বলো?

– আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।

নিলু মনে মনে বলল,

– ভাবি তোমাকে কিভাবে বুঝায়? এত এক্সক্লুসিভ ড্রেস কেনা যে আমার পক্ষে সম্ভব না। এই টাকাগুলো দিয়ে নিজের জন্যেই যদি ড্রেস কিনি তাহলে শরৎ কে টাকা দেব কিভাবে? মানুষটা যে সেদিন আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। কিন্তু তখন আমার কাছে টাকা ছিলনা বলে ওকে দিতে পারিনি। টাকার চিন্তায় ওর সাথে এই কয়দিন ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছি না। ভাবি তোমাকে কিভাবে বুঝাবো আমি?

– এই নিলু… কি এত ভাবছ? বলো কোনটা নিবে?

– ভাবি…. আসলে আমার কেমন জানি লাগছে। মাথাটা প্রচণ্ড ঘুরছে। প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলো। প্লিজ ভাবি……

– আচ্ছা আচ্ছা…. বেশি খারাপ লাগছে কী? পানি এনে দেব?

– না না, থাক। তুমি এখান থেকে চলো….

– আচ্ছা চলো।

রূপা-নিলু সিড়ি লিফট-এর উপর দাঁড়িয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে নিচে নামতে লাগল ওরা। রূপা বেশ কৌতূহল নিয়ে এদিকওদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। জীবনে প্রথমবার এই বড় মার্কেটে এসেছে সে। চোখ দুটো যেন শপিং মল থেকে সরছেই না। হঠাৎ রূপার সানগ্লাসের দোকানের দিকে চোখ পড়ল। একটা ছেলে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে। রূপা অপ্রস্তুত হয়ে চোখ দুটো সরিয়ে নিল। অন্যদিকে চোখ রাখল সে। কিন্তু তবুও ঘুরেফিরে সানগ্লাসের দোকানের দিকেই চোখ গেল তার। ছেলেটাকে দেখে কেন জানি চেনা চেনা লাগছে রূপার। কোথাও যেন দেখেছে তাকে। দূর থেকে বুঝাও যাচ্ছে না চেহারা-টা। রূপা কৌতূহল বশত নিলুকে সান গ্লাসের পাশের, ব্যাগের দোকানে নিয়ে গেল। নিলু বলল,

– ভাবি আবার এখানে কেন আনলে?

– হুসসসস! ধীরে কথা বলো।

নিলু ফিসফিস করে বলল,

– কেন ভাবি? আস্তে কথা বলব কেন?

– পরে বলছি…

রূপা আড় চোখে ছেলেটার দিকে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে গেল তার কাছে। এটা তো সেদিনের ছেলে…..

দেড় বছর আগে….

সেদিন কলেজ থেকে হেটে হেটে বাসায় ফিরছিল রূপা। রাস্তাটা তখন ফাঁকা ছিল। অবশ্য এই রাস্তায় মানুষের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। খুবই নির্জন একটা রাস্তা। নির্জন হলেও রূপাকে এই রাস্তা দিয়েই রোজ যেতে হয়। কারণ এই রাস্তা-টা শটকাট এবং সহজেই বাড়িতে পৌঁছাতে পারে রূপা। তবে আজ কেন জানি ভয় ভয় লাগছে তার এই রাস্তা দিয়ে যেতে। আকাশে মেঘ ধরেছে। নীল মেঘটা কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে। পুরো রাস্তাটাই অন্ধকারে ছেয়ে গেছে একদম। রূপা ভাবছে এই মুহূর্তে দ্বীপ যদি তার সাথে থাকত, তাহলে ভয়টা কেটে যেত। রূপা ধীর পায়ে সামনের দিকে এগুচ্ছে। কিছুদূর এগুনোর পর, রূপা অনুভাব করল কেউ তার পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রূপা থমকে দাঁড়াল। মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

– দ্বীপ……

কিন্তু পিছন ঘুরে কাউকে দেখতে পেল না সে। নিজের মাথায় চড় বসিয়ে আবারও সামনের দিকে এগুতে লাগল রূপা। টুপটুপ করে বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করেছে। আস্তে আস্তে বৃষ্টির প্রবেগ বাড়তে লাগল। রূপা নির্জন জায়গা পেরিয়ে গলির ভিতরে যখনি ঢুকতে যাবে, পিছন থেকে একদল ছেলে এসে তার মুখটা রুমাল দিয়ে চেপে ধরল। কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে। রূপার যখন জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে চেয়ারের সাথে হাত-পা বাঁধারত অবস্থায় আবিষ্কার করল সে। আশেপাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল পুরো ঘর জুড়ে মোমবাতি জ্বালানো। সে এখন কোথায়? সে তো বাসায় যাচ্ছিল। তাহলে এখানে কিভাবে এল সে? আর তার হাত-পা ও বা কে বেধে রেখেছে? পুরো ব্যাপারটি বুঝতে রূপার বেশ সময় লাগল। তার মানে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কিন্তু কে করল তাকে কিডন্যাপ?

হঠাৎ খরট করে দরজার খোলার আওয়াজ শুনতে পেল রূপা। চেচিয়ে বলতে লাগল,

– কে ওখানে? শুনছেন…. আমাকে কেন এখানে এনেছেন? দড়ি খুলে দেন বলছি…

কিন্তু প্রতিউত্ত্যুরে কারো কেউ কিছু বলল না। রূপা বরাবরই ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। এখান থেকে কী পালাবার কোনো উপায় নেই?

অন্ধকারের মিশ্রণে মোমবাতির মৃদ্যু আলোয় একটা লোক-কে দেখতে পেল রূপা। ভয়ে পা জমে গিয়েছে তার। কোনো রকম নিজেকে সামলে নিল রূপা। সে কিছু বলার আগেই লোকটা বলে উঠল,

– দ্যাহেন ম্যাডাম, আপনেরে এহানে চিল্লাবার লাইগা আনা হয় নাই। চুপ কইরা বইসা থাহেন। বেশি ঠ্যাস ঠ্যাস করলে আপনের জবান বন্ধ করতে আমাগো টাইম লাগবো না।

লোকটার কথাগুলো শুনে ভয়ে পুরো শরীর বরফে জমে যেতে লাগল রূপার। এ কোন পরিক্ষায় ফেলেছেন, আল্লাহ তাকে?

রূপা তবু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

– ক-কে আপনি? আমাকে এখানে বেধে রেখেছেন কেন?

– বুঝছি, সোজা কথায় কাম হইবো না।

বলেই লোকটা রূপার মুখ বেধে দিল। নড়েচড়ে উঠল রূপা। লোকটা আর কিছু না বলে দরজাটা লাগিয়ে চলে গেল। নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে রূপা। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে ওর। আবার তার উপর দিয়ে পুরো ড্রেস বৃষ্টির পানিতে ভিজে সপসপে হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আবারও দরজার শব্দ শোনা গেল। আবার কে এসেছে? রূপা কৌতূহল নিয়ে দরজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তৎখানিক দেখতে পেল কেউ একজন মোমবাতি হাতে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভুত-টুত আসছে না তো এভাবে? ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গিয়েছে রূপার। এই মুহূর্তে পানি না খেলে বোধয় মরে যাবে সে। অবশ্য মরে গেলেই ভালো। এই নিঃসৃত পৃথিবীতে বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়াই শ্রেয়।

হঠাৎ হালকা কাশির শব্দে চমকে গেল রূপা। সামনের দিকে চোখ রাখতেই একটা উচু লম্বা টাইপের ছেলেকে দেখতে পেল সে। মোমবাতির মৃদু আলোয় চিনতে অসুবিধা হলো না রূপার। লোকটা মুখ খুলে দিতেই রূপা বলে উঠল,

– আ-আপনি……

– হু আমি… বাহ! এত তাড়াতাড়ি আমাকে চিনে ফেলেছ দেখছি।

– তার মানে আপনিই আমাকে এখানে কিডন্যাপ করেছেন? কেন এনেছেন আমাকে?

– একদম ঠিক ভেবেছ। আমিই কিডন্যাপ করেছি তোমাকে।

– কেন করেছেন? আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে কিডন্যাপ করার? কে সাহস দিয়েছে আপনাকে?

লোকটা ফিক করে হেঁসে দিল। বলল,

– আরে দাড়াও দাড়াও এত তাড়া কিসের? আর আমার সাহসের কথা বলছ? আমি যে তোমার সাথে কী কী করতে পারি তার কোনো ধারণা নেই তোমার।

– আমি যেটা বলেছি তার উত্তর দিন।

– দেব… তবে তুমি আমাকে একটা কথা বলো.. সেদিন তুমি সবার সামনে আমাকে চড় মেরেছিলে কেন? আমি কী তোমাকে কম ভালোবেসেছিলাম? নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি তোমাকে। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের প্রতি আমার ফিলিংস জন্মেনি। কিন্তু যেদিন তোমাকে প্রথম বার দেখেছিলাম, সেদিন তোমার প্রতি আমার মনে অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছিল।

– (নিশ্চুপ)

– তবে তুমি আমাকে সবার সামনে মেরে ভুল করেছিলে। বড্ড বড় ভুল করেছিলে।

– (নিশ্চুপ)

– সেদিন মনের ভেতরে তোমার জন্য ভালোবাসা পুষে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, তোমাকে প্রপোজ করব এক গোছা গোলাপ ফুল দিয়ে। তাই-ই করেছিলাম। ফুল নিয়ে তোমার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে প্রপোজ করেছিলাম। তার বিনিময়ে তুমি কী করেছিলে? সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলে। সেদিন আশেপাশের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলাম সবাই আমাকে নিয়ে হাঁসি তামাশা করছে। লজ্জায় তখন সবার সামনে মাথা নিচু করতে হয়েছিল আমাকে। রাস্তাঘাট যেখানেই যেতাম আমার বন্ধুরা আমাকে অপমান করত। এসবে আমি একদম অতিষ্ঠ হয়ে যায়। মনের ভিতর তখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। কিসের আগুন জানো? প্রতিশোধের আগুন। আর তোমাকে এখানে কেন এনেছি জানো?

রূপা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল। লোকটা সয়তানি ভঙ্গিতে হেসে বলল,

– নিজের করে পাওয়ার জন্য। আজ দেখ এখানে তুমি বা আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই।

– দেখুন মি. ….

– সৈকত।

– হ্যা… মি. সৈকত, আপনারর সাহস দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছি। আপনি কী ভেবেছেন, আমাকে
এসব হাবি-জুবি কথা বলবেন আর আমি ভয়ে আপনার হাত পা ধরবো? এতোই সোজা? কখনোই না।

– হাহাহাহা! বেশ তো! এখন বোঝা যাবে কার সাহস এবং জোর বেশি? তবে একটা কথা শুনে রাখ এসব কথা যদি লিকড হয়, আর তুমি আমাকে কোনভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করো তাহলে কী হবে জানো? এই যে ম্যাডাম উপরের দিকে একটু তাকান….

সৈকত এর কথা মত রূপা উপরের দিকে তাকাতেই সিসি ক্যামেরা দেখতে পেল। আৎকে উঠল রূপা। সৈকত বলল,

– আই হোপ বুঝতে পেরেছ, তখন কী হবে তোমার সাথে?

বলেই সয়তানি ভঙ্গিতে হাসল সে। রূপার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিল সৈকত। হেচকা টানে রূপাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল সে। বিশ্রিভাবে রূপার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় হাত দিচ্ছে সৈকত। চোখ ফেটে পানি পড়ছে রূপার। এর থেকে কী বাঁচার কোনো উপায় নেই?

রূপা আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল সৈকত এর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াবার জন্য। কিন্তু ওর জোরের সাথে একদমই পেরে উঠল না। মনে মনে প্রবল আল্লাহ্‌ কে ডাকতে লাগল রূপা।

– হে আল্লাহ আমায় রক্ষা করুন। আমায় রক্ষা করুন মাবুদ।

সৈকত ধীরে ধীর রূপাকে বিছানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন কী করবে সে? কিভাবে লোকটার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে রূপা? কাল বাবা যখন জানতে পারবেন তার মেয়ে কারো সাথে রাত কাঁটিয়েছে তখন কী বাবা তাকে অবিশ্বাস করবেন? সব দোষ কী বাবা তার উপরই চাপিয়ে দেবেন? অবশ্য তাকে বিশ্বাস না করারই কথা। এই নিঃসৃত পৃথিবীতে মেয়েদের যে কোনো মূল্য নেই। তারা যা বলে সেটাই মিথ্যা। আর যদি একটা ছেলে বলে তাহলে সেটা সত্য। রূপার এই পৃথিবীতে আর বাঁচতে ইচ্ছে করেনা। আচ্ছা সবার মত কী দ্বীপও তাকে অবিশ্বাস করবে? রূপা মনে প্রাণে দ্বীপকে স্মরণ করতে লাগল। দ্বীপ…. দ্বীপের কথা মনে আসতেই কো’থেকে যেন শক্তি পেল রূপা। সৈকতকে স্বজোরে একটা ধাক্কা দিল সে। বেশখানিকটা দূরেই গিয়েই ছিটকে পড়ল সৈকত। কিন্তু কিছুই হলো না ওর। আবারও সে তার দিকে হামলে পড়তে চাইল। রূপা আশেপাশের দিকে চোখ বুলিয়ে বেডসাইডের টেবিলে উপর থেকে একটা ফুলদানি তুলে নিল। সৈকত তার কাছাকাছি আসতেই গায়ের জোড়ে মাথা বরাবর আঘাত করল রূপা। সঙ্গে সঙ্গে সৈকতের মাথা ছেদ করে রক্ত পড়তে লাগল। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ না। দরজাটা খুলে কাউকে দেখতে পেল না রূপা। হয়তো সৈকত ওর চ্যালাদেরকে চলে যেতে বলেছে। রূপা আর দেরী না করে মেইন দরজা অতিক্রম করেই রোডে উঠে গেল। রাত ১১ টা বাজে তখন। রূপা দেরী না করে একটা রাস্তা ধরে দৌড়াতে লাগল। কোথায় যাচ্ছে, কোথায় থাকবে কিছুই জানে না রূপা। সে আজ পালাতে ব্যস্ত। কিছুদূর এগুতেই একটা ট্রাক দেখতে পেল রূপা। ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে দুইহাত দুইদিকে উঠিয়ে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি একদম নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থামল। গাড়ি থেকে একটা মহিলা চেচাতে লাগল। সম্ভবত মহিলাটা ট্রাক ড্রাইভারের স্ত্রী।

– এই মেয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? আর এত রাতে এই জঙ্গল রাস্তায়ও বা কী করছ?

রূপা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,

– আমাকে একটু সাহায্য করুন…. আপনার কাছে পানি হবে?

বলতে বলতেই রাস্তায় নেতিয়ে পড়ল রূপা। মহিলা তৎখানিক গাড়ি থেকে চটজলদি নেমে পানির বোতল এগিয়ে দিলেন রূপার দিকে। বললেন,

– এই নাও মা….

ঢকঢক করে খেয়ে পুরোটা পানি শেষ করে ফেলল নিলু। বলল,

– ধন্যবাদ আন্টি।

– এত রাতে এখানে কি করো মা? জায়গাটা বেশি সুবিধার না। এখানে বেশিক্ষণ থাকাটা বিপদ জনক।

– আন্টি আমি এখন বাড়ি যেতে চাই। আপনি যদি একটু…

– অবশ্যই পৌঁছে দেব। আসো আমার সাথে…

– জ্বি।

গাড়িতে উঠল রূপা। সেদিন উনারা যদি না আসতেন তাহলে হয়তো রূপাকে ওখানে থেকে পচে পচে মরতে হত। ফেরেশতা হয়ে সেদিন এসেছিলেন উনারা সাহায্যের হাত বাড়াতে।

– ভাবিইইই…..

নিলুর ডাকে চিন্তারাজ্যে ছেড়ে বেরিয়ে এল সে। বলল,

– হ্যা হ্যা বলো।

– সানগ্লাসের দোকানের দিকে তাকিয়ে কী এত ভাবছিলে শুনি? কতক্ষণ ধরে যে ডাকছি বোধয় শুনতেও পাওনি।

– হু…. সরি আসলে….

– আচ্ছা সমস্যা নেই। তুমি যেন কী বলবে বলছিলে?

– আচ্ছা নিলু, একটু আগে এখানে একটা উচু লম্বা শ্যামলা টাইপের ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল তুমি কী তাকে দেখেছ?

– না, ভাবি আমি আসলে খেয়াল করিনি।

– ও।

– কি হয়েছে ভাবি?

– কিছুনা।

– প্লিজ বলো না ভাবি। প্লিজজজজজজজ…

– আচ্ছা যেতে যেতে বলি?

– ওকে।

রূপা একেএকে সবকিছু নিলুকে খুলে বলল। সবটা শুনে নিলু বলল,

– ভাবি তুমি একেবারে উচিত কাজ করেছ, জানোয়ারটার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে। আরো দুই তিনটা ঘা দেয়া উচিত ছিল তোমার। এসব নর-পশুদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আর তুমি ওর সাথে রিলেশনে না জড়িয়ে একেবারে ঠিক করেছ ভাবি। তোমার জায়গায় আমি হলেও ঠিক একই কাজ করতাম। ওর মুখে চুন কালি মাখিয়ে দেয়া উচিত ছিল ভাবি। কখনও কোনো মেয়ের সাথে অসভ্যতা করতে গেলে একবারও হলেও ভেবে দেখত।

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here