ভালোবাসিনী পর্ব ৬

ভালোবাসিনী….
লেখিকা – রুবি আক্তার

পর্ব -৬

যথারীতি যোহরের সময় তার রিমাইন্ডার মেসেজ আসলো। সাথে আর একটা কথাও বলা ছিল।

” আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা থাকার কারণে আপনার সাথে ফ্রিলি কথা বলতে পারি না। আপনি আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করছেন তাই অনেক ধন্যবাদ। আমাকে আপনার নামাজ ঘড়ি ভাবতে পারেন।”

কথাটা পড়ে আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। মেয়েটার এই রিমাইন্ডার মেসেজ যেদিন থেকে দেখেছি সেদিন থেকেই ঘোর লাগিয়েছি নিজের চোখে। আর বদলে গিয়েছি আমি আগের অয়ন। আমার মা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় ছেলের নামাজের প্রতি মনোযোগ দেখে। আমি এই মেয়েটাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছি। আজ পিচ্চির লেখা কথাটা দেখে বুঝতে পারলাম, সত্যি আমি শুকতারা নামক অচেনা এই মেয়েটার প্রেমের পড়েছি। তাই আমি আরো আগ্রহী হলাম কি এমন সমস্যা যার জন্য আমার সাথে ও কথা বলতে পারবে না। আর মেয়েটা কি আমাকে চেনে? যদি “হ্যাঁ” হয় । তাহলে শিওর সে আমাকে খুব কাছ থেকে জানে। আমি তাকে ফিরতি একটা মেসেজ পাঠালাম

-“আপনি কে? আর কথা বলতে কিসের বাঁধা। আপনার সাথে কথা বলার জন্য আমি অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছি। প্লিজ, দয়া করে আমার সাথে একদিন সময় করে আমার সাথে কিছুক্ষণ চ্যাট করতে পারবেন?”

-” আপনি বুঝবেন না। তবে একটা কথা বলি আমি যদি আপনাকে মেসেজ পাঠাতে ভুলে যাই। নামাজ পড়তে ভুলবেন না। ঠিক আছে।” একরকম আদেশ মনে হলো আমার কাছে।

-” কিন্তু আজকে তো আমার মনটা অনেক খারাপ। আপনি কি আমার সাথে একটু কথা বলবেন?”

-” সরি, সময় হবে না।‌ আর নামাজে আল্লাহর সাথে মন দিয়ে কথা বলুন তাতে মন ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। গোসল করে‌ নামাজে যান। আল্লাহ হাফেজ।”
এরপরে যেমন হুট করে এসেছিল তেমনি হুট করেই চলে গেলো আমার আকাশের শুকতারা।

যতটুকু মনে খারাপ ছিল তার দ্বিগুণ হয়ে গেল তার এমন ইগনোর করা কথাগুলোতে। তাই মন খারাপ নিয়েই নামাজে গেলাম। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো নামাজ পড়ার পর আমার মন খারাপ আর রইলো না। বরং আমি একটা সমাধান ও পেয়ে গেলাম। আমি এতোক্ষণ চিন্তা করছিলাম কিভাবে আমি পিচ্চি এর মুখোমুখি হবো। ওর হয়তো লজ্জা নেই কিন্তু আমার তো লজ্জা আছে। তাই একটা ছোট মিথ্যা হলেও এটা একটা উত্তম উপায় হয়ে দাঁড়ালো আমার কাছে। মনে মনে চিন্তা করলাম ও যদি জানতে চায় আমি ওর ফাইল দেখেছি কিনা বলবো ভুলে দেখতে গিয়ে ফাইল ডিলিট হয়ে গেছে।না, না আরেকটা উপায় পেলাম এতে মিথ্যা বলা লাগবে না। ও যখন বলবে ভাইয়া আমার ফাইল দেখেছেন। আমি বলবো “কোন ফাইল?” তারপর ও তার সেফ করা ফাইলে গিয়ে দেখবে ফাইল নেই। এতে আমাকে লজ্জা ও পেতে হবে না। উত্তম বুদ্ধি। এতে ও বুঝতে পারবে না যে আমি ওর লেখা দেখেছি। আর আমি স্বাভাবিক ভাবে ওদের সাথে কথাও বলতে পারবো। উফ্,আমি এতো চালাক কবে থেকে হলাম। আমি চাইনা একটা পিচ্চি মত মেয়ের কাছে আমি নিজের মুখ নিচু করে রাখবো নিজের দোকানেই। অলরেডি অনেক হেনস্তা হতে হয়েছে ওর জন্য আমাকে।

পরেরদিন ঠিক সময়মতো ওরা এলো। আজ আমি পিচ্চির দিকে সরাসরি তাকালাম না। কিন্তু পিচ্চি তার টুলে বসে কেনোই যেন বারবার আমাকে “ভাইয়া ঐটা কেমন?” ভাইয়া এটা কিভাবে করে?” এমন ভাবে আমার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করতে লাগলো। আমি যতটা পারলাম এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না।

অবশেষে জিগ্গেস করেই ফেললো” ভাইয়া, আমার লেখা ফাইল দেখেছেন?” আমি এবার সরাসরি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম” কোন ফাইল।?”
-“ঐ যে আমি কালকে টাইপ করে ফোল্ডারে সেইফ করে রেখেছিলাম। ”

-“আমি তো খুলে কোনো ফাইল পেলাম না!” আশ্চর্য হওয়ার ভান করলাম। এবার ওর ধাক্কা খাবার পালা। কাল আমাকে প্রায় মেরেই ফেলেছিল মেয়েটা। আজ ও একটু ভুগুক। দেখলাম তাড়াতাড়ি ফাইলটা খুলে চেক করতে। করুক আমার কি? তারপর একরাশ বিস্ময় নিয়ে সে হেনার দিকে তাকালো। “কই গেলো” আপনাআপনি মুখ থেকে বের হয়ে আসলো ওর কথাটা।

দোকানে হঠাৎ শর্মী আসায় পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিলো। আমি তাড়াতাড়ি ওকে বসতে বললাম। আর বললাম” হঠাৎ করে এই অধমের দোকানে?”
ও একটু ঢং করেই বললো” অনেকদিন তোমাকে দেখি না জান, তাই।”

শর্মী আবার এসব ফাজলামি বেশি করে। দেখলাম পিচ্চি বসা থেকে প্রায় লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি হয়তো বুঝতে পারছি কেনো। কিন্তু দোকানের বাকি সবাই হাঁ হয়ে গেল। কারণ ওর ওঠার জোরে টুলটা মাটিতে পড়ে গেল। তারপর পিচ্চি কাউকে কিছু না বলে দোকান থেকে হনহন করে বের হয়ে গেল। কোথায় গেল? কারণ ব্যাগ আর বই নেয় নি। তারমানে আবার আসবে। শর্মী টুলটা উঠিয়ে তাতে বসে পড়লো। তারপর তার কিছু কাগজপত্র বের করলো। আর বললো ছবি থেকে ছবি বের করে দিতে। আমি কাজ করছি আর শর্মীর সাথে কথা বলছি। ও আমার হাতের উপর রেখেই তার কাগজে কি কি করতে হবে তা বুঝিয়ে দিতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর শর্মীর পিছনে আমি কাকে যেন দাঁড়াতে দেখলাম। মুখ উঠিয়ে দেখি পিচ্চি। মুখের অবস্থা থমথমে। বুঝতে পারলাম না কেনো। হঠাৎ করে দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়া তারপর এমন থমথমে মুখে ফিরে আসা। মেয়েটা সত্যি পাগল। কারণ আমাকে ভালোবাসে বলে কি বলেনি আমার কেয়ার করা শুরু করছে।

-“আপু, আপনি কি দয়া করে টুলটা ছাড়বেন? আমি বসবো।” ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো পিচ্চি।
-“তুমি বেঞ্চিতে বসো। আমার একটু কাজ আছে। হলে উঠবো।” শর্মী কাগজ থেকে মুখ না তুলেই বললো।

-” টুলটা আমার। আমি এই টুলের মালিক।” সেই একই কণ্ঠে কিন্তু আরো রাগান্বিত হয়ে বললো।

শর্মী এবার আমার দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললো” কিরে দোকানের মালিকানা কি বদল হইছে?”
আমি বোকার মতো একবার শর্মী আর একবার পিচ্চির দিকে তাকালাম। কি বলছে যে মেয়েটা। এবার সাহস নিয়েই বললাম” ঐ এই টুল কিনছি আমি। তুমি মালিক হও কেমনে?” কথাটা নিজের কানেই বেখাপ্পা লাগছে।
পিচ্চি অবাক করে দিয়ে বললো” কিনলেই মালিকানা হয়না। আমি এই টুলের মালিক। প্রমাণ দেখবেন।” হেনা পিচ্চি কে হাত ধরে টানছে আর বলছে” শিউলি থাক না। তুই এখন বেশি বেশি করছোস। এই টুল তোর কেমনে হয়। ভাইয়ার দোকানের জিনিস তার তোর হয় কেমনে? চল আমরা আজকে যাই।”

-” খালি টুল না টুলের মালিক ও আমার। কালকেই তো আমি লিখে দিছি। কেন দেখে নাই। জিগা। আর টুল আমার না! ..না এইদেখ!” বলেই শর্মীর হাত ধরে টান দিয়ে উঠিয়ে টুলের উপর নির্দেশ করলো।
সেখানে লেখা “এই টুলের এক মাত্র মালিক শিউলি”।
চারদিকে একটা হাসির রোল পড়ে গেল। কিন্তু শিউলি আর আমি হাসছি না। আমি বোবা হয়ে গেছি পরিস্থিতি দেখে। আর শিউলি হয়ে গেছে আগুন।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here