#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২৪
#তানিশা সুলতানা
জীবনটা বিষাদময় হয়ে উঠেছে মোহনার কাছে। চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেছে। খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে নিজের বলতে শুধু নিজেই আছে। ইদানীং মাও কেমন পর পর বিহেভ করে মোহনার সাথে। সব কিছু মিলিয়ে অভিকে ভীষণ মিস করে মোহনা। কতো ভালো ছিলো দিন গুলো। একসাথে কলেজ যাওয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুসকা খাওয়া পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটা। শপিং মলে গেলে যতদামি জিনিসই মোহনা চুজ করুক না কেনো অভি কিনে দিতো। কতো ভালোবাসতো মোহনাকে৷ এখন মনে হয় মা বাবাও মোহনাকে অতোটা ভালোবাসে নি যতটা ভালো অভি ওকে বাসতো।
কিন্তু এখন অভি কোথায়? মোহনার করা অতিরিক্ত অবহেলা অভিকে অনেক দুরে সরিয়ে দিয়েছে। এতোটাই দুরে সরিয়ে দিয়েছে মোহনার মৃত্যুও আর অভিকে ফেরাতে পারবে না।
বন্ধ ঘরে হাউমাউ করে কাঁদছে মোহনা। মোহনার কান্না শোনার মতো আজ কেউ নেই।
কথায় আছে না “উইপোকার পাখা গজায় মরিবার তরে”
মোহনার অবস্থাটাও সেরকম হয়েছে। বেটার কাউকে খুঁজতে গিয়ে বেস্ট কাউকে হারিয়ে ফেলেছে।
💔💔💔
সকাল হতে না হতেই রাফিদ তানহার জন্য চকলেট কেক আর বিরিয়ানি নিয়ে হাজির হয়েছে৷ বেশ রাত করে ঘুমানোর ফলে ঘুম ভাঙে নি এখনো তানহার।
রাফিদ চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় তানহার। চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় তানহা।
“তানহা জানিস স্মৃতিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গম্ভীর গলায় বলে রাফিদ। এক লাফে উঠে বসে তানহা। স্মৃতিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে?
” কি বলছো তুমি?
“হুমম রে
কেউ নিয়ে গেছে স্মৃতিকে।
হু হু করে কেঁদে ওঠে রাফিদ।
তমা বেগম তানহার রুমে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। রাফিদের কথা শুনে পা দুটো থেমে যায়। শেষবার যখন মেয়েটা এসেছিলো কতোই না কথা শুনিয়েছিলো মেয়েটা। বুকের মধ্যে হা হা করে ওঠে ওনার।
দ্রুত পায়ে তানহার রুমে ঢুকে।
” কি বলছো তুমি? কে নিয়ে গেছে?
উত্তেজিত হয়ে বলেন তিনি।
রাফিদ সবটা খুলে বলেন। তানহা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“হাসপাতালে তো সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে? আমাকে দেখাতে পারবে।
তানহা কান্না থামিয়ে বলে
” হুম পারবো।
ফোন বের করে দেখায় রাফিদ তানহা। আবিরকে দেখে মুচকি হাসে তানহা।
“চিন্তা করো না স্মৃতি ঠিক আছে।
তমা বেগম চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। লজ্জা লাগছে খুব। এই ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছিলে? ছি ছি
দ্রুত চলে যায় রুমে থেকে।
” কি করে বললি ঠিক আছে?
রাফিদ কপালে ভাজ ফেলে বলে।
“ছেলেটা ভীষণ ভালোবাসে স্মৃতিকে। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে দুজনের। ভুল ভাঙাতেই নিয়ে গেছে।
অনমনে বলে তানহা।
” ডিটেলসে পরে বলবি। আগে বিরিয়ানি আরও কয়েকটা খেয়ে নে। আর ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলে নে। পাগল করে দিলো আমায়।
রাফিদ পকেট থেকে ফোন বের করে তানহার হাতে দেয়।
“পরে খেয়ে নেবো।
বলেই তানহা ওয়াশরুমে চলে যায়।
” রাগারাগি ঝগড়াঝাঁটি হবে এদের আর মাঝখান থেকে আমাকে দৌড়াতে হবে। বউটা আমার একা একা আছে।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে রাফিদ।
“শুভ সকাল বাংলাদেশ। আজকে আপনাদের মন খারাপ ঠিক করতে চলে এসেছি আমি আর জে অভি। আজকে আপনাদেকে অন্য কারো গল্প শোনাবো না৷ নিজের পাগলিটার কথা শোনাবো।
তার সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। তবুও সে জেদ ধরে ছিলো আমার সাথে থাকবে। এক্সাম দেবে না৷ তো তাকে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য আমার সাথে রাগ করে কথা বলছে না। তো গাইস সাজেস্ট করেন কি করে দুর থেকে পাগলিটার রাগ ভাঙাবো?
সে কেনো বোঝে না? সে আমার থেকে দুরে আছে আমার মন থেকে নয়।
সবাই নানা রকমের কমেন্ট করছে। সব থেকে বেশি যে কমেন্টটা ছিলো সেটা হলো পাগলি টার নাম কি?
তানহা দেখছিলো অভির শো টা। রাফিদের কাছ থেকে জেনেছে কাল বিরিয়ানি খেতে বসে তানহার কথা মনে পড়েছিলো। সেই থেকেই তানহার মুখ থেকে হাসি সরছে না। তারপর আবার তানহাকে ডেডিকেট করে এতোকিছু বললো। মুহুর্তেই তানহার রাগ উধাও হয়ে যায়। তবুও ভেবে রেখেছে রিসিভ করবে না অভির কল। এক মাস পরে সামনা সামনি গিয়ে কথা বলবে।
” কাছে আসার জন্য মাঝে মাঝে দুরে যেতে হয়”
এউ দুরত্বটাই হবে অভি তানহার শেষ দুরত্ব। আর কখনোই অভিকে চোখের আড়াল করবে না।
🥀🥀🥀🥀🥀
স্মৃতি বলে দিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যেই স্মৃতিকে বিয়ে করতে হবে। আর সেটা বাড়ির সবাইকে জানিয়ে বড় করে অনুষ্ঠান করে। আবির প্রথমে খুশি হলেও পরে মনটা খারাপ হয়ে যায়৷ কারণ স্মৃতির মনে খুব বড় কিছু চলছে সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে স্মৃতি। কিন্তু এখন স্মৃতির কথা মেনে না নেওয়ার কোনো অপশন নেই। কারণ জোর করে আর যাই হোক এক সাথে থাকা যায় না। পাশের মানুষটার চোখে প্রতিনিয়ত পালানোর ধান্দা ঘৃণা এসব থেকে থাকা যায় না কি?
স্মৃতি বাড়িতে কল করে বলে দিয়েছে আবিরের সাথে বিয়ে দিবে প্রমিজ করলে তবেই বাড়ি ফিরবে। আহাম্মদ চৌধুরী রাজি হয়ে যায়।
জানালা দিয়ে সূর্যমূখী ফুলের বাগান দেখা যাচ্ছে। স্মৃতি পাশ ফিরে শুয়ে সূর্যমুখী বাগানটা দেখছে এক মনে। আবির মার্কার দিয়ে আবিরের পায়ে স্মৃতি +আবির লিখছে।
“সবটা তো ঠিকঠাকই থাকতো যদি প্রথমে আপনি আমাকে না ঠকাতেন। যখন ইচ্ছে হয় চলে আসেন আবার যখন ইচ্ছে হয় চলে যান। আমিও তো মানুষ আবির। আমারও তো ভালো থাকার অধিকার আছে। আমারও তো আত্মসম্মান থাকতে পারে নিজের নিজস্ব কিছু মতামত থাকতে পারে। কেউ এভাবে আমাকে বদ্ধ উম্মাদ করে দিচ্ছেন।
শান্ত গলায় বলে স্মৃতি। প্রতিটি কথায় মিশে আছে আকাশ সমান অভিমান।
আবির স্মৃতির নিষ্পাপ মুখ টার দিকে এক পলক তাকায়। কিছু বলতে যায়।
” থাক আবির। আমি মিথ্যে পছন্দ করি না। আমাকে মানানোর জন্য এক্সকিউজ দিতে হবে না।
যেদিন প্রাণ খুলে সত্যি কথা বলতে পারবেন সেই দিন বইলেন।
আবিরের চোখ জোরা টলমল করে ওঠে।
“দ্বিতীয় বার ঠকে গেলে আমি আর বাঁচতে পারবো না। পরে আমার জন্য আফসোস করিয়েন না।
কন্ঠস্বর কেঁপে ওঠে স্মৃতির।
স্বপ্ন গুলো ভেঙে দিয়ে আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মানুষ এতো স্বার্থপর কি করে হতে পারে? দু দিনের দুনিয়ায় কেনো এতো রং তামাশা দেখায়?
তারা কি জানে না মৃত্যুর পরে সব কিছুর হিসাব দিতে হবে?
🥀🥀🥀
চব্বিশ ঘন্টা তানহার ভয়েসটা শুনে না অভি। রেস্টুরেন্টে বাসন মাজছে আর ভাবছে কেনো তানহা কথা বলছে না?
হঠাৎ অভির ফোনটা বেজে ওঠে। প্যান্টে হাত মুছে ফোনটা রিসিভ করে।
মুহুর্তেি অভির চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে। চোখ বন্ধ করে খুশিটা উপভোগ করে।
“এতোবড় একটা সারপ্রাইজ নিয়ে আমি আসছি তানহা। রেডি থাকো। এবার আমি সেটাই করবো যেটা তুমি চাইছো।
চলবে