ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -২৬

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২৬
#তানিশা সুলতানা

অভি বেলকনির ফুলের টবের পেছনে লুকিয়ে মশার কামড় খাচ্ছে। বেশ রাগ হচ্ছে তানহার প্রতি। এভাবে প্রতিশোধ নেবে? মানে হয় কোনো? একবার হাতের কাছে যাই হারে হারে বুঝিয়ে দেবো।
খোঁজাখুঁজি পালা শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। তানহা অনেক করে হালিজাকে থাকতে বলে কিন্তু সে থাকবে না। কারণ স্মৃতি অন্য রুমে ঘুমিয়ে আছে ওকে একা রেখে ঘুমতে পারবে না৷ আবার তানহাকে সাথে করে নেবে না ওই রুমে। কারণ রাফিদ কড়া করে নিষেধ করে দিয়েছে।
সবাই চলে যেতেই তানহা দরজাটা টানটান করে খুলে রাখে।
লাইট অফ করে বিছানায় কম্বল মুরি দিয়ে শুয়ে পড়ে। অভিকে বোঝাতে হবে যে ও ঘুমিয়ে আছে।

কারো শব্দ না পেয়ে অভি রুমে আসে। কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দরজাটা বন্ধ করে তানহার পাশে গিয়ে বসে।
পাশে থাকা বোতল থেকে পানি খেতে গিয়ে পরে আরেক বিপদে। বোতলে পানি ছিলো না আখের গুড় দিয়ে শরবত গুলানো ছিলো। অন্ধকারে বুঝতে পারে নি।
সাথে সাথে গা গুলিতে আসে অভির। আখের গুড় একদম সয্য হয় না অভির।
মুখ চেপে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় অভি।
তানহা মুখ চেপে হাসছে৷ ইচ্ছে মতো নাচতানাবোধ করতে পেরেছে অভিকে।

চোখে মুখে পানি দিয়ে অভি ক্লান্ত হয়ে এসে বসে তানহার পাশে। রাগে কপালের রগ টনটন করছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে চর মারতে তানহার দুই গালে। কিন্তু সেটা তো করা যাবে না। নাহলে এক বছর কথা বলবে না। এই টুকু একটা মেয়ে এতো শয়তানি বুদ্ধি পায় কোথা থেকে?
অভি জোরে শ্বাস নেয়।
“আমি জানি তুমি জেগে আছো। উঠে বসো। কথা আছে।
কোনো সারাশব্দ নেই। উল্টে নাক ডাকার শব্দ ভেসে আসে। আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু কুচকে তানহার দিকে তাকায় অভি।
এতো নাটক কি করে করতে পারে মেয়েটা।
” ড্রামাকুইন
অভি বিরবির করে বলে।
এভাবে ডাকাডাকি করে যে তানহাকে ওঠানো যাবে না ভালোই বুঝতে পারছে অভি।
কম্বল টেনে তানহার পাশে শুয়ে পড়ে অভি। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তানহাকে।
তবুও কিছু বলে না তানহা।
“দেখি কথা না বলে থাকো কি করে?
তানহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে অভি৷ ঠোঁটে বাঁকা হাসি।
তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। শ্বাস নিতেও লজ্জা লাগছে।
ধীরে ধীরে অভির ছোঁয়া গুলো বেহায়া হয়ে ওঠে। এক লাফে বিছানা থেকে নেমে যায় তানহা।
বুক টিপটিপ করছে। বুকে হাত গুঁজে অভিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।
অভিও উঠে বসে। মিটমিট করে হাসছে।
” ঘুম ভেঙেছে বেবি?
আদুরী গলায় বলে অভি।
“আপনি তো আগে এমন বেহায়া ছিলেন না। হঠাৎ এতো পরিবর্তন?
রিনরিনিয়ে বলে তানহা।
অভি তানহার হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। তানহার অবাধ্য চুল গুলো হাত খোঁপা করতে থাকে।
” তুমি না মুভি দেখতে বলেছিলে। তো আমি হিন্দি মুভি দেখেছি। তো বেহায়া হওয়ার ট্রেনিং দিচ্ছি।
তানহা একটু হাসে কিন্তু সেটা অভির দৃষ্টিতে আড়ালে।
“তাকাও না আমার দিকে।
তানহার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে অভি। তানহা হাতটা সরিয়ে দেয়।
” কেনো তাকাবো? আপনাকে দেখতে ভালো লাগে না। আপনি একটা বাজে লোক।
তানহা মুখ বাঁকিয়ে বলে।
“ভেবে বলছো তো?
তানহার গলায় আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে অভি।
” ভাবাভাবির কি আছে?
বিরক্তি নিয়ে অভির আঙুল সরিয়ে দিয়ে বলে তানহা।
“আবার চলো যাবো?
অভি তানহাকে ছেড়ে নিয়ে বলে।
তানহা এবার অভির মুখের দিকে তাকায়।
ড্রিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে শ্যম পুরুষের মুখটা। আগের থেকে অনেকটা কালো হয়ে গেছে। চুল গুলো এলোমেলো। চাপ দাঁড়ি অনেকটা বড় আর আগোছালো। আগের মতো সুন্দর করে কাটিং দেওয়া নেই। রোগাও হয়েছে অনেকটা।
বুকের ভেতর ধক করে ওঠে তানহার।
” অন্য মেয়েদের পেছনে ছুঁটতে ছুটতে এমন হাল হয়েছে বুঝি?
মুহুর্তেই চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে তানহার। অভিমানীর কন্ঠে বলে।
“হুমমম
তানহা কিছু না বলে শুয়ে পড়ে।
অভি তানহার মাথাটা নিজের বুকে রাখে। তানহা অভির শার্টটা খামচে ধরে।
” ভীষণ মিস করেছি তোমায়।
কিছু একটা ছিলো অভির কন্ঠে। হাতের লোম জারিয়ে যায় তানহার। সারাশরীরে ভালো লাগা ছেয়ে যায়। আধরে ভেসে ওঠে এক চিলতে হাসি। শার্টটা আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরে তানহা।
“আই প্রমিজ আর কখনো দুরে যাবো না।
তানহার চুলের ভাজে অনেকটা সময় নিয়ে চুমু খায় অভি।
” আপনার এবার যাওয়া উচিৎ।
তানহা অভির বুকের লোম গুলো টানতে টানতে বলে
“এখানেই থাকছি আমি।
অভি সোজাসাপ্টা বলে দেয়।
” কেউ দেখলে?
“কেউ দেখবে না। সকালে সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যাবো
এখন একটু শান্তিতে ঘুমতে দাও।
তানহা মৃদু হাসে৷ ওর যে একটু ঘুমের প্রয়োজন। কেনোনা অভির থেকে চলে আসার পরে আর ভালো করে ঘুমানো হয় নি। সারাদিন নানান কাজে ব্যস্ত থাকলেও রাতে চোখ বন্ধ করার পরে ভীষণ ভাবে আকড়ে ধরতে অভি নামক মানুষটার স্মৃতিগুলো।

🥀🥀🥀🥀
খুব সকালে স্মৃতি বেলকনিতে আসে। উদ্দেশ্য আবিরের মুখটা দেখে দিনটা শুরু করার। কিন্তু আদোও জানে না আবিরের দেখা পাবে কি না?
আবার পেতেও পারে। কারণ আবির তো নামাজ পড়প আর ঘুমতে যায় না।
পা টিপে টিপে বেলকনিতে প্রবেশ করে স্মৃতি।
কিন্তু বেলকানিতে পা রাখতেই চমকে ওঠে। কেনোনা আবির স্মৃতির সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। দুই বেলকনির দুরুত্ব দুই হাতের মতো। তো আবির আসলো কি করে?
আবির পকেটে হাত গুঁজে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। স্মৃতি মাথা নিচু করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
” এতো সকালে এখানে কেনো তুমি?
আবির প্রশ্ন করে বসে। কিন্তু প্রশ্নটা স্মৃতির করার কথা।
স্মৃতি ওড়নার এক আংশ হাতে গিট্টু দিচ্ছে।
“জানি প্রশ্নটা তোমার করা কথা। কিন্তু তুমি তো কথা বলতে ভুলে গেছো তাই প্রশ্নটা আমিই করে ফেললাম।
মুচকি হেসে বলে আবির।
স্মৃতি ঠোঁট বাঁ কায়।
” আমার মুখ দেখে দিনটা শুরু করতে চাও। তো এখন তাকাচ্ছো না কেনো?
স্মৃতির থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বলে আবির।
স্মৃতি ঝাড়া দিয়ে হাতটা সরিয়ে দেয়।
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রুমে চলে আসতে নেয়। আবির হাতটা ধরে নেয়। স্মৃতি কপালে ভাজ ফেলে আবিরের দিকে তাকায়। বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় আবির।
“তোমার মনের সব কথা বুঝতে পারি। কেনো জানো? ভালোবাসি তাই❤️
স্মৃতির কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে আবির। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে স্মৃতি। দুই হাতে ওড়না খামচে ধরে।
আবির হুট করে আরও একটা কাজ করে বসে। স্মৃতির কপালে চুমু খায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় স্মৃতি। ততখনে আবির রেলিংএর কাছে চলে যায়। স্মৃতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই পরে যায় আবির।

” আআআআআআআআআআবিরররররর
দুই কানে হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে স্মৃতি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here