ভালোবাসি তোমায় পর্ব -১৮+১৯

#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৮

স্তব্ধ নয়নে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে হুর। চোঁখের পলক টাও যেনো পড়ছে না। জীবন টা যেনো হুট করেই এলোমেলো হয়ে গেলো! এই তো কিছুক্ষন আগেও তার পরিচয় ছিলো সে মিস্টার হাসানের মেয়ে। আর এখন তার নামের সাথে জুড়ে গেছে নতুন একটা নাম।

কিছুক্ষন আগেই হুর আর ফাইয়াজ এর বিয়ে সম্পন্ন হলো। সবকিছু এতোটাই দ্রুত ঘটে গেলো যে হুর সঠিক ডিসিশন নেয়ার সময় টা পর্যন্ত পায় নি। সে জানে না তার সাথে যা হলো তা ঠিক না ভুল। তার মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে আর তা হলো সে আজকে এই মুহূর্ত থেকে ফাইয়াজ এর স্ত্রী।

এই তো কিছুক্ষন আগের কথা। হুর শাওয়ার নিয়ে রুমে এসেছে মাত্র ঘুমাবে বলে। কিন্তু হুট করে তার রুমে মিসেস হেনা ও মিস্টার হাসান একত্রে প্রবেশ করলেন। দুইজন কে একত্রে এই অসময়ে নিজের রুমে দেখে অবাক হলো হুর। তারপরও নিজের অবাক ভাব কে প্রকাশ না করে মুখে হাসির রেখা টেনে তাদের কাছে গেলো হুর। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“কি ব্যাপার আম্মু , বাবাই! তোমরা আজ এই অসময়ে আমার রুমে! কোনো বিশেষ কিছু আছে নাকি! কিছু বলবে তোমরা! ”

মিস্টার হাসান ও মিসেস হেনা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন। হয়তো তারা কিছু বলতে চাচ্ছে। কিন্তু বলতে দ্বিধা বোধ করছে। হুর তাদের ইজি করার জন্য মৃদু হেসে বললো,

-“কি হলো বললে না যে হঠাৎ এই সময়ে আমার রুমে আসার কারণ! দেখো তোমরা এতো uneasy ফীল করছো কেনো! যা বলতে চাচ্ছ বলে ফেলো। ”

হুরের বাবা মা এতে যেনো কিছু টা স্বস্তি পেলো। মিস্টার হাসান মিসেস হেনা কে চোঁখে কিছু একটা ইশারা করে হুরের হাত ধরে তাকে বেডে নিয়ে বসালো। হুরের হাত দুটো কে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

-“দেখো আম্মু ; আমি এখন যা বলবো তা মন দিয়ে শুনবে। আমরা যা করবো তোমার ভালোর জন্যই করবো। আমাদের উপর তোমার ভরসা আছে তো আম্মু! ”

হুরের মনে ভয় কাজ করলেও সে বললো,

-“হ্যা বাবাই আমার তোমাদের উপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে। তোমরা যা করবে আমার ভালোর জন্যই করবে। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি তোমরা সবসময় আমার জন্য যা বেস্ট তাই করেছো। তাহলে আজ কেনো বিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে! ”

হুরের বাবা হাসান সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

-“তোমার ফরিদ আঙ্কেল চাচ্ছেন তোমাকে তার পুত্রবধূ করতে। অর্থাৎ তিনি চান ফাইয়াজ এর সাথে তোমার বিয়ে হোক। আর সেটা আজকেই। ফরিদ চাচ্ছে তোমার আর ফাইয়াজ এর কাবিন টা করিয়ে রাখতে। ”

হুর চোখ বড়ো বড়ো করে ফেললো। সে মোটেও এইসব শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। এর মাঝে মিসেস হেনা হুরের কাঁধে হাত রেখে বললো,

-“আজকে ফরিদ ভাই এসেছেন ই এই জন্য। উনি নাকি তোকে প্রথম যেদিন দেখেছিলেন সেদিনই ঠিক করেছিলেন তোকে উনার পুত্রবধূ করবেন। আর আজকে প্রস্তাব টা দিয়েই ফেললেন। উনার মনে নাকি ভয় ঢুকেছে আমরা যদি অন্য কারোর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলি! তাই উনি চাচ্ছেন আজকেই কাবিন টা করিয়ে নিতে। পরবর্তীতে তুই যখন যেতে চাবি তখন বড়ো করে অনুষ্ঠান করে তোকে নিয়ে যাবে। ”

মাথা নিচু করে বসে আছে হুর। হাসান সাহেব হুরের গালে হাত রেখে বললেন,

-“দেখো আম্মু আমরা কিন্তু তোমাকে এতো জলদি বিয়ে দিতে চাই নি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমরাও মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম তোমার পড়াশোনা শেষ হলে ফাইয়াজ এর সাথে তোমার বিয়ে দেবো। ফাইয়াজ ছেলে টা খুব ভালো। আমি ওর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েই বলছি। আমার ওকে তোমার জন্য সম্পূর্ণ যোগ্য মনে হয়। সেই পারবে তোমাকে আগলে রাখতে আমার বিশ্বাস। তাই তো আমি এবং তোমার আম্মু এই বিয়েতে মত দিয়েছি। এখন সব টা তোমার হাতে আম্মু। আমি চাই তুমি আমার এবং তোমার আম্মুর মতামত কে সম্মান করো। আর বিশ্বাস রাখতে পারো তুমি ঠকবে না ; ফাইয়াজ ছেলে টা তোমাকে ভালো রাখবে। বাকি টা তোমার উপর নির্ভর করছে তুমি ভাবো আম্মু কি করবে। ভেবে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাও। আমার বিশ্বাস আছে আমার মেয়ে আমার সিদ্ধান্তে অমত করবে না কারণ সে জানে তার বাবাই তাকে বেস্ট জিনিসটাই দিবে। ”

হাসান সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

-“ভেবে সিদ্ধান্ত নিস মা। জীবন টা তোর। তোর মত টাই আসল। তবে আমারও মনে হয় ফাইয়াজ তোর জন্য পারফেক্ট। ”

মিসেস হেনা কথাগুলো বলে রুম থেকে চলে গেলেন। হুর স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। সব যেনো তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। এখন সে বুঝতে পারছে কেনো ওই সময় সবাই অদ্ভুত আচরণ করছিলো। হুরের চিন্তার মাঝে কোথা থেকে যেনো লিয়া দৌড়ে এসে হুর কে জড়িয়ে ধরলো। হাপাতে হাঁপাতে বললো,

-“দোস্ত তুই জানিস না আমি কতো টা খুশি হয়েছি তোর আর ফাইয়াজ ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে। তাই তো আম্মুর কাছে শোনা মাত্র তোদের বাসায় চলে আসলাম। আর হৃদের নাচানাচি তো তুই দেখিস নি। দেখলে বলতি পুরাই পা’গল হয়ে গেছে আনন্দে। ”

লিয়া নিজের কথা শেষ করে হুরের দিকে তাকাতেই তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। হুরের চোঁখে জল টলমল করছে যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়বে। লিয়া হুরের গালে হাত ছুঁইয়ে বললো,

-“কি হয়েছে হুর! তুই কাঁদছিস কেনো! ওহ, বুঝতে পেরেছি এখনো তোর মনে ফারান রয়ে গেছে তাই না! আমি জানি জীবনের প্রথম ভালোবাসা, প্রথম অনুভূতি ভোলা সম্ভব নয়। সেটা সারাজীবন মনের মাঝে রয়ে যায়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে ফারান হয়তো তোর ভাগ্যে ছিলো না। ফারান তোকে কখনোই ভালোবাসে নি হয়তো। সে হারিয়ে গেছে তোর জীবন থেকে। যাকে আর কখনো তুই ফিরে পাবি না। সে তোকে ভালোবেসে থাকলে এতদিনে তোর কাছে ফিরে আসতো। তাই এক জায়গায় থেমে না থেকে মুভ অন কর হুর। প্রথম অনুভূতিটাকে নাহয় মনের এক কোণে যত্নে রেখে দিস।”

হুর লিয়ার দিকে অশ্রুশিক্ত চোঁখে অসহায় ভাবে তাকাতেই লিয়া আবার বলতে লাগলো,

-“তোর ভালোবাসার মানুষ টাও যদি তোকে ভালোবাসতো তাহলে আমি কখনোই বলতাম না তোকে এই বিয়ে করতে। বরং তখন হয়তো আমি নিজেই এই বিয়ের বিরোধিতা করতাম। কিন্তু তার মনে তোর জন্য কোনো অনুভূতি নেই হুর। তাই আমি তোকে বলবো এই বিয়ে টা তুই কর । একবার বাইরে গিয়ে দেখ তোর পরিবারের সবাই এই সম্পর্কটা তে কতো টা খুশি। নিজের পরিবারের খুশির জন্যই নাহয় রাজী হয়ে যা। আর আমার বিশ্বাস তুই ফাইয়াজ ভাইয়ার কাছে ভালো থাকবি। ভাইয়া মানুষটাই এমন বিশ্বাসযোগ্য। আমার তো এতদিন মনে হতো ভাইয়াকে যেই মেয়ে নিজের লাইফে পাবে সে অনেক লাকি হবে আর আমি প্রচন্ড খুশি হয়েছি কারণ তুই সেই লাকি মেয়ে হতে যাচ্ছিস। ঠান্ডা মাথায় সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিস হুর। ”

————

রাত আটটা। কাজী কে ডাকানো হয়েছে। বিয়ে পড়ানো হবে এখন।

কিছুক্ষন আগে হুর নিজে থেকে এসে বলেছে সে এই বিয়েতে রাজী আছে। হুরের পরিবারের সবাই এবং ফরিদ সাহেব খুবই খুশি হয়েছেন হুর বিয়েতে মত দেয়ায়। কিন্তু একজন খুশি হতে পারেনি। সে হলো ফাইয়াজ। ফাইয়াজ ভাবতেও পারেনি হুর বিয়েতে মত দিয়ে দিবে। ফাইয়াজ হুরের দিকে কিছু সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এখন তার হাতেও আর কিছু করার নেই। হুর যখন মত দিয়ে দিয়েছে সে এই বিয়ে টা করতে বাধ্য।

হয়ে গেলো বিয়ে। সম্পন্ন হলো কাবিন। আজ থেকে হুর ও ফাইয়াজ একে অপরের জীবন সঙ্গী। নগদ দেনমোহর পরিশোধ করলো ফাইয়াজ। আজ থেকে হুরের উপর তার পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু হাসির ছিটা ফোটাও নেই দুইজনের মুখে ; না আছে দুজনের মুখে কোনো কথা। ফাইয়াজ মাথা নিচু করে বসে আছে। হয়তো কিছু চিন্তা করছে। আর হুর সে তো নিজের জীবনের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। তার মাথায় ঘুরছে এই বিয়ের পরিণতি টা কেমন হবে! এই সম্পর্ক তার জন্য সুখ বয়ে আনবে নাকি তার জীবনে আসতে চলেছে নতুন কোনো ঝড়!
#ভালোবাসি_তোমায় (কিছু প্রশ্নের উত্তর)
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৯

শাড়ি পরে বেডের এক কোণে গুটিশুটি মে’রে বসে আছে হুর। হুরের আম্মু মিসেস হেনা জোর করে হুর কে একটা লাল শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন। যেহেতু আজকেই বিয়ে হলো আর ফাইয়াজ ও এই বাড়িতে থাকবে আজ তাই তিনি মেয়েকে শাড়ি পড়িয়ে হালকা সাজিয়ে দিয়েছেন। নতুন বউ বলে কথা!

ফাইয়াজ আর আর ফরিদ সাহেব আজ এই বাড়িতেই থাকবেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে হুরের বাবা মা তাদের যেতে দেয় নি। মিসেস হেনা ফরিদ সাহেব কে গেস্ট রুম দেখিয়ে দিয়ে এসে দেখলেন ফাইয়াজ এখনো ড্রয়িং রুমেই বসে আছে। তিনি ফাইয়াজ এর সামনে গিয়ে বললেন,

-“তুই এখনো এখানে বসে আছিস কেনো বাবা! ”

ফাইয়াজ দ্বি’ধা ভরা দৃষ্টিতে তাকাতেই মিসেস হেনা বুঝতে পারলেন সমস্যা টা কোথায়! তিনি ফাইয়াজ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

-“দেখ বাবা আমি জানি বিয়েটা হুট করে হয়েছে। আমরা নিজেরাও এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু যেভাবেই হোক বিয়ে টা হয়েছে তো! তোর মনে হয়তো এই সম্পর্ক নিয়ে অনেক দ্বি’ধা আছে। তেমনি হুরের মনেও আছে। এই দ্বি’ধা দূর করার জন্য হলেও তোদের দুজনের কাছাকাছি থাকা টা জরুরী। একে অপরের সাথে কথা বলে ফ্রি হওয়াটা জরুরী। যা বাবা রুমে যা। হুরের সাথে কথা বলে ফ্রি হওয়ার চেষ্টা কর। এতে তোদের দ্বি’ধাও দূর হবে আর সম্পর্ক টাও মজবুত হবে।”

——–

দরজা খোলার শব্দে হালকা কেঁ’পে উঠলো হুর। কিন্তু চোখ তুলে তাকালো না। সে জানে ফাইয়াজ এসেছে। তাই চুপচাপ আগের মতো বসে রইলো। তবে মনে ভ’য় কাজ করছে।

ফাইয়াজ রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে পিছনে ঘুরতেই কিছু সময়ের জন্য যেনো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো তার। তার কাছে মনে হলো যেনো কোনো পরি বসে আছে রুমে। কি দারুণ সুন্দরই না লাগছে হুর কে লাল শাড়িতে! ফাইয়াজ চেয়েও চোখ ফেরাতে পারছে না হুরের উপর থেকে। যেনো কোনো ঘোরের মাঝে ডু’বে গেছে সে।

হুর ফাইয়াজ এর কোনো সারাশব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকালো। কিন্তু ফাইয়াজ এর এই অদ্ভুত দৃষ্টিতে বুক কেঁ’পে উঠলো তার। হুর নড়েচড়ে আরেকটু জড়োসড়ো হয়ে বসতেই ফাইয়াজ এর ঘোর ভাঙ’লো। ধীর পায়ে হুরের সামনে এসে গলা খা’কা’রি দিলো। গম্ভীর স্বরে বললো,

-“বেলকনিতে এসো হুর। আমার তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা আছে। ”

নিজের কথা শেষ করে সোজা বেলকনিতে চলে গেলো ফাইয়াজ। হুর বেড থেকে নেমে সাবধানে পা ফেলতে লাগলো। শাড়ি পড়ার অভিজ্ঞতা তার মোটেও নেই। জীবনে মাত্র দুবার শাড়ি পড়েছে। আর দুবারই বা’জে অভিজ্ঞতার শি’কা’র হয়েছে সে। তাই এখন আস্তে ধীরে পা ফেলছে যেনো কোনো অ’ঘট’ন না ঘটে এই মুহূর্তে। কিন্তু কপালের লিখন কি আর খ’ন্ডা’নো যায়! বেলকনির দরজার সামনে আসতেই ঘটে গেলো প্রত্যাশিত অ’ঘ’ট’ন। শাড়ির সামনের অংশে পা বেঁ’ধে গেলো হুরের। প’ড়ে ব্য’থা পাওয়ার ভ’য়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো হুর। কিছু সময় যাওয়ার পরও কোনো ব্য’থা অনুভূত না হওয়ায় ধীরে ধীরে চোখ মেললো সে।

নিজেকে কারোর বাহুবন্ধনে আবদ্ধ পেয়ে হুর বুঝে গেলো এবারও ফাইয়াজ তাকে প’রা’র হাত থেকে বাঁ’চি’য়ে দিয়েছে। মাথা উপরে তুলতেই ফাইয়াজের রা’গে লাল হওয়া চোখ দেখে আঁ’ত’কে উঠলো হুর। ফাইয়াজ চোখ মুখ লাল করে হালকা চেঁ’চি’য়ে বললো,

-“ঠিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারো না তুমি! নাকি পায়ে সমস্যা আছে! নাহলে সবসময় তুমি এভাবে পড়ে যাওয়ার অবস্থায় পড়ো কেনো! এখন আমি না থাকলে কি হতো হ্যা! ডিরেক্ট নিচে পড়ে হাত পা ভা’ঙ’তে। আশ্চর্য মেয়ে তো তুমি ! সবসময় বি’প’দ কে সেধে নিজের কাছে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাও। এখন এখানে চুপটি করে দাড়াও। আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে। ”

ফাইয়াজ হুর কে বেলকনির রেলিং এর সাথে দার করিয়ে নিজেও কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো। দুইজনই নিশ্চুপ। পিনপিনে নীরবতা বিরাজ করছে দুজনের মাঝে। উভয়ের দৃষ্টি আ’ট’কে আছে আকাশের দিকে। আকাশ আজ ঝকঝকে পরিষ্কার। থালার ন্যায় চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। মৃদু বাতাস বইছে। হুরের বেলকনি ফুলের ঘ্রানে মো মো করছে। অসম্ভব সুন্দর একটা পরিবেশ। এক কথায় উপভোগযোগ্য বলা যায় !

নীরবতা ভে’ঙে ফাইয়াজ নরম কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলে কেনো হুর! ”

হুর ফাইয়াজ এর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,

-“আমার পরিবারের জন্য। ”

ফাইয়াজের দৃষ্টি এতক্ষন সামনে স্থির ছিলো। হুরের জবাবে হুরের দিকে তাকাতে বাধ্য হলো সে। হুর ও ফাইয়াজের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। দৃষ্টির বিনিময় ঘটলো কিছু সময়ের জন্য। ফাইয়াজ আবার বলে উঠলো,

-” আমাকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে পারবে তো! ”

হুর উদাস দৃষ্টিতে আকাশের পানে তাকিয়ে বললো,

-“জানা নেই আমার এই বিষয়ে আমি কতোটা সফল হবো। ”

ফাইয়াজ শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো,

-“আচ্ছা তোমার লাইফে কি কেউ ছিলো! কাউকে ভালোবেসেছো কখনো!? ”

হুর কিছুটা সময় নিয়ে ফাইয়াজের চোঁখের দিকে গভীর দৃষ্টি ফেলে বললো,,

-“হুম। কেউ একজন ছিলো আমার জীবনে। যাকে আমি মন উ’জা’ড় করে ভালোবাসতাম। যার জন্য পুরো পৃথিবীর বিরু’দ্ধে যাওয়ার মতো মনোভাব রাখতাম আমি। আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ ছিলো সে। উহুম চেহারা দেখে বলছি না! সত্যি বলতে তাকে দেখার সৌভাগ্য তো আমার কখনো হয় নি। আমি তার চ’রি’ত্র কে ভালোবেসেছিলাম। তার গ’ম্ভী’র’তা কে ভালোবেসেছিলাম। ”

অ’শ্রু’শি’ক্ত হলো হুরের চোখ জোড়া। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে পুনরায় বলে উঠলো হুর,

-“কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে নি জানেন! সে আমাকে ধোঁ’কা দিয়েছে। হঠাৎ করে একদিন হারিয়ে গিয়েছে আমার জীবন থেকে। অবশ্য তারই বা দো’ষ দিয়ে কি লাভ বলুন ! আমার ভালোবাসা, আমার অনুভূতি সব তো একপাক্ষিক ছিলো ; যা আমাকে কঠিন য’ন্ত্র’না দিয়ে আসছে এতগুলো দিন ধরে। ভিতরে কুঁ’ড়ে কুঁ’ড়ে খাচ্ছে আমায়। ”

নিজের কথা শেষ করে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো হুর। ফাইয়াজের মুখ পানে চেয়ে দেখলো মুখটায় গম্ভীরতা ছেয়ে আছে। চোখ অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে। হঠাৎ করে ফাইয়াজ কোনোরকম কোনো কথা না বলে সোজা রুমের বাইরে চলে গেলো।

হুর দেয়ালের সাথে ঘেঁ’ষে নিচে বসে পড়লো। আকাশের দিকে তাকিয়ে অভি’যোগের সুরে বললো,

-“কেন আমাকে ধোঁ’কা দিলেন ফারান! কেন প্র’তা’রণা করলেন আমার সাথে! কেনো খেললেন আমার অনুভূতি নিয়ে! কেনো এতো ক”ষ্ট দিলেন আমায়! কেনো কেনো?! কি ভেবেছিলেন নিজের পরিচয় পরিবর্তন করলে আমি আপনাকে চিনবো না! যাকে এতো টা ভালোবেসেছি তাকে আমি চিনবো না এও কি সম্ভব! জানেন আজকের এই দিনটার জন্য আমি গত দুই মাস ধরে কতো অপেক্ষা করেছি! উহু জানবেন কিভাবে! ”

হুরের নিজের চোঁখের জল মুছে বাঁকা হেসে বললো,

-“তবে এখন থেকে বুঝবেন প্রিয়জনের কাছ থেকে অব’হেলা পাওয়ার য’ন্ত্র’না কেমন হয়। যেই ক’ষ্ট আমি পেয়েছি তা আপনাকেও পেতে হবে। আমার সাথে কেনো এমন করলেন তা তো আমি জেনেই ছাড়বো। তবে আমার সাথে প্রতা’রণা করার শা’স্তি তো আপনাকে পেতেই হবে মিস্টার ফারান উরফে মিস্টার ফাইয়াজ। ”

——-

ছাদের রেলিং শ’ক্ত করে মুঠোয় ভোরে দাঁড়িয়ে আছে ফাইয়াজ। যতো রা’গ আছে সব যেনো রেলিং এর উপর প্রকাশ করতে চাচ্ছে। রেলিং ছেড়ে নিজের মাথার চুল শ’ক্ত করে টেনে ধরলো ফাইয়াজ। ভা’ঙা স্বরে আওড়াতে লাগলো,

-“I’m so sorry Hur….. বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনোই ক’ষ্ট দিতে চাই নি। কিন্তু আমি বাধ্য ছিলাম। কিছুই করার ছিলো না আমার। অনেক বেশি ক’ষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায় তাই না জান! তবে আজ থেকে এখন থেকে তোমার সকল ক’ষ্ট ভোলানোর দায়িত্ব আমার। এতো এতো ভালোবাসা দিবো যে সকল ক’ষ্ট ভুলে যাবে। আর কেনো আমি এমন করেছি তাও তুমি জানবে জান। আমি নিজে তোমাকে সবটা জানাবো। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি। ”

কিন্তু ফাইয়াজের মনে একটা ভ’য় রয়েই গেলো সব সত্যি জানার পর হুর যদি তাকে ছেড়ে চলে যায়! কিন্তু কোনোরকমে নিজের মন কে বুঝ দিলো ফাইয়াজ। সে কখনোই হুর কে নিজের কাছ থেকে দূরে যেতে দিবে না।

—–

রুমে প্রবেশ করে হুর কে কোথাও না দেখে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো ফাইয়াজ। বেলকনি তে আসতেই হুরের উপর দৃষ্টি স্থির হলো ফাইয়াজের। এলোমেলো শাড়িতে ফ্লোরে বসে দেয়ালে মাথা ঠে’কি’য়ে ঘুমাচ্ছে হুর মৃদু বাতাসে চুলগুলো উড়ে মুখের উপর প’ড়ে কিছু অংশ ঢেকে দিয়েছে। চাঁদের আলো মুখে প’ড়া’য় অসম্ভব মায়াবতী লাগছে হুর কে। ফাইয়াজ বিনা শব্দে হুরের সামনে গিয়ে আলতো হাতে কোলে তুলে নিলো তাকে। বেডে শুইয়ে দিয়ে মুখের উপর প’ড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। হুরের কপালে গভীর একটা চু’মু খেয়ে হালকা আওয়াজে বললো,

-“তোমার সকল দুঃ’খ আমি দূর করে দিবো মায়াবতী। তুমি জানো না তোমাকে ক’ষ্ট দিয়ে আমি নিজে দ্বিগুন ক’ষ্ট পেয়েছি। তোমার অ’শ্রু’শি’ক্ত চোখ প্রতিবার আমার হৃদয়ে ছু’রি’কা’ঘা’ত করে। আজ থেকে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা হলো। নতুন সম্পর্কের শুরু হলো যা শুধু ভালোবাসাময় হবে। ”

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here