ভালোবাসি তোমায় পর্ব -২২+২৩

#ভালোবাসি_তোমায় (হলুদ স্পেশাল 💛💌)
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২২

হুর কে নিজের খুব কাছে টে’নে দাঁড়িয়ে আছে ফাইয়াজ। হুর চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাইয়াজের দিকে। এই মুহূর্তে ফাইয়াজ কে এখানে মোটেও আশা করেনি সে। ফাইয়াজ এক ধ্যানে মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হুরের দিক। যেনো চোঁখের পলক পড়ছে না। হলুদ শাড়ি সাথে বেলি ফুলের গহনায় অসম্ভব রূপবতী লাগছে হুর কে। অতিরিক্ত সাজগোজ পছন্দ না করায় হালকা সাজানো হয়েছে তাকে। কোমরের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ঘন হালকা বাদামী বর্ণের চুলগুলো। কোনোরূপে পরীর চেয়ে কম লাগছে না তাকে। ফাইয়াজের ইচ্ছে করছে হুর কে সামনে বসিয়ে সারাদিন তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু সময় যে কম! হুরের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে ফাইয়াজের এমন দৃষ্টিতে। ছাড়া পাওয়ার জন্য নড়াচড়া করতেই ফাইয়াজ আরেকটু শ’ক্ত করে চে’পে ধরলো হুর কে। বলতে লাগলো,

–এতো লাফালাফি করো কেনো! একটু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো আমি একটু মন ভোরে দেখি।

হুর ফিশফিশ করে বললো,

–আরে আরে এতো জোরে কথা বলছেন কেনো! আস্তে কথা বলুন। কেউ এসে গেলে কে’লে’ঙ্কা’রি হয়ে যাবে। আর আমাকে কি আগে কখনো দেখেন নি নাকি! এভাবে দেখার কি আছে!

ফাইয়াজ এবার হুরের মতো স্লো ভয়েসে বললো,

–কে’লে’ঙ্কা’রি’র কি আছে এখানে! আমার বউ এর কাছে আমি আসতেই পারি তাই না! আর কথা রইলো তোমাকে আগে দেখি নি কিনা! দেখেছি অবশ্যই দেখেছি কিন্তু হলুদের সাজে তো দেখি নি। বিয়ে যেহেতু একবার হবে তাই হলুদ ও একবার হবে। তাই পরবর্তীতে এই সাজে দেখার সুযোগ নাও পেতে পারি। সেজন্য এখনই মনে ভোরে দেখে নিচ্ছি।

হুর ফাইয়াজের বুকে একটা ধা’ক্কা দিয়ে অস্বস্তি ভরা কণ্ঠে বললো,

–আচ্ছা তাহলে একটু ডিসটেন্স মেইনটেইন করে দেখেন। আমার দম ব’ন্ধ হয়ে আসছে।

ফাইয়াজ একটা শ্বাস ফেলে বললো,

–চিন্তা করো না আর মাত্র দুই মিনিট সময় নিবো। যে কাজ টা করতে এসেছি তা শেষ করেই চলে যাবো।

হুর চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ফাইয়াজ কোন কাজ টা করতে এসেছে। এর মাঝেই পিঠে আর কোমরে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে লাফিয়ে উঠলো সে। ফাইয়াজের দিকে তাকাতেই দেখলো তার ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি লেগে আছে। হঠাৎ করে হুরের হাতে একটা ছোটো কাগজ গুঁজে দিয়ে কপালে একটা চু’মু খেয়ে বেরিয়ে গেলো সে। হুর এখনো তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেলো। হুশ ফিরতেই কোমর আর পিঠে হাত ছোঁয়ালো হুর। হাতে হলুদ লাগতেই বুঝতে বাকি রইলো না কেনো এসেছিলো ফাইয়াজ। হুরের ঠোঁটেও হাসি চলে আসলো ফাইয়াজের পা’গ’লা’মী দেখে। কাগজের কথা মাথায় আসতেই জলদি তা খুললো হুর। চোঁখের সামনে ভেসে উঠলো ফাইয়াজের হাতের চমৎকার লেখনী।

~আমার বউ কে আমিই প্রথম হলুদ ছোঁয়ালাম। এটা আমার অধিকার। চাইলে সবার সামনেই লাগাতে পারতাম কিন্তু আমার বউ টা যেই লজ্জাবতী। তাই সবার সামনে তাকে লজ্জায় ফেললাম না।

ইতি,
তোমার একমাত্র মাসুম জামাই 😜

হুর আরেক দফা হেসে ফেললো চিরকুট টা পড়ে। যত্ন সহকারে ভাজ করে নিজের পার্সের ভিতর রেখে দিলো। বাসায় গিয়ে নিজের পার্সোনাল ডায়েরি তে যত্ন করে রেখে দেবে। নিজের প্রাণ পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম চিরকুট বলে কথা। হুর চিরকুট টা পার্সে রেখে লাজুক লাজুক হাসতে লাগলো। এর মাঝেই কোথা থেকে লিয়া এসে হুরের চুল টান দিয়ে বললো,

–কিরে ভাইয়া কি করতে এসেছিলো রে। রো’মা’ন্স টো’মা’ন্স করেছে নাকি!

চোখ টিপ দিলো লিয়া। হুর লিয়ার দিকে চোখ বড় করে তাকালো। মনে মনে ভাবলো,

–তার মানে এই মেয়ে জানে ফাইয়াজের আসার ব্যাপারে। উফঃ এখন তো সারাদিন এসব বলে পঁ’চা’বে। নাহ এর কথা গায়ে মাখা যাবে না। নাহলে আরও বেশি জ্বা’লা’বে।

হুর বাঁকা চোঁখে তাকিয়ে বললো,

–তুই কিভাবে জানলি!

লিয়া দাঁত কেলিয়ে বললো,

–আমাকেই তোহ পাহারা দেয়ার দায়িত্ব দিলো আর আমি জানবো না হেহে। তবে ফ্রি তে কিছু করি নি বুঝলি!

হুর ফাইয়াজ কে মনে মনে কয়েকটা বকা দিলো লিয়া কে পাহারায় দার করানোর জন্য।

লিয়া একটা ভাব নিয়ে ফের বললো,

–তোর জামাইয়ের অনেক গুলো টাকা হাতিয়েছি কিন্তু। সেটা দিয়ে জম্পেশ পার্টি করবো আমি আর হৃদ মিলে। তুই তো আর থাকবি না তাই ভাগ দেয়া লাগবে না। আহা শান্তি। ভাগ কমে গেলো তাই না রে!

লিয়ার কথায় হুরের মন টা খারাপ হয়ে গেলো। আর মাত্র একটা দিন। তারপর তাকে বাবার বাড়ি ছাড়তে হবে। হয়ে যাবে বাবার বাড়ির মেহমান মাত্র। চাইলেই যখন তখন বাবার গলা জড়িয়ে ধরে কিছু আবদার করতে পারবে না, যখন তখন মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারবে না, প্রতিদিন আর হৃদের পিছনে লাগা হবে না। কথাগুলো ভাবতেই দম ব’ন্ধ হয়ে আসছে তাহলে নিজের বাড়ি, নিজের এতো বছরের সাজানো গোছানো বেডরুম , প্রিয় মানুষ গুলোকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে! হুরের চোখ বেয়ে নোনা পানি গড়াতে লাগলো। সে চেয়েও নিজেকে থামাতে পারছে না।

লিয়ার নজর হুরের দিকে যেতেই বুঝতে পারলো কি বলতে কি বলে ফেলেছে। মেয়েটা অনেক ক’ষ্ট পেয়েছে ইস। লিয়া নিজের মাথায় চা’টি মে’রে হুরকে এক সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–দোস্ত তুই এভাবে কাঁ’দ’ছিস কেনো রে! প্লিজ কাঁ’দিস না আমার ক’ষ্ট হচ্ছে। আমি সরি আমার এসব বলা উচিত হয়নি। আর বিশ্বাস কর তোর ভাগ আমি তোরে পাঠায় দিমু বইন তাও কাঁ’দিস না।

হুর লিয়াকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁ’দে দিলো। কা’ন্না’য় জড়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে বললো,

–আমি তোদের ছাড়া কিভাবে থাকবো রে! আমার তো ভাবতেই দম ব’ন্ধ হয়ে আসছে।

লিয়া হুরের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

–সব মেয়েদেরই বাবার বাড়ি ছাড়তে হয় হুর। তুই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নে। আর কে বলেছে আমাদের ছাড়া থাকবি হু যখন ইচ্ছা হবে লাফাতে লাফাতে চলে আসবি। আর আমার সাথে তো ভার্সিটি তে দেখা হবেই। এখন কাঁদিস না আর। কালকের জন্যও কিছু বাঁচিয়ে রাখ বইন।

হুর লিয়ার কথায় কিছু টা শান্ত হলো। লিয়া হুর কে বললো,

–দেখি চোখ মোছ। তুই নাহয় বেশি মেকআপ করিস নি কিন্তু আমি তো একটু কিউট করে সাজুগুজু করেছি। এখন তোর সাথে কা’ন্না শুরু করলে আমার সব মেকআপ ছড়িয়ে যাবে। আর আমার না হওয়া জামাই পালিয়ে যাবে আমাকে দেখে।

হুর কান্নার মাঝে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো লিয়ার দিকে। বললো,

–না হওয়া জামাই টা কে!

লিয়া বললো,

–আরে কতো প্ল্যান করে রেখেছি তোর বিয়ের অনুষ্ঠানে ছেলে পটাবো, জামাই বানাবো। এখন যদি আমার মেকআপ ছড়িয়ে যায় তাহলে তো আমাকে পে’ত্নী ভেবে সব ছেলেরা পালিয়ে যাবে।

লিয়ার কথা শুনে হেসে ফেললো হুর। লিয়ার কানে ফিশফিশ করে বললো,

–আমি কিন্তু মাহিম ভাইয়া কে ইনভাইট করেছি।

মাহিমের নাম শুনতেই কেমন যেনো নরম হয়ে গেলো লিয়া। মিনমিন করে বললো,

–উনাকে আবার ডেকেছিস কেনো!

হুর ঠাট্টা করে বললো,

–বাহ্! কি সুন্দর ডাক। উনি আহা।

হুরের কথায় লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়লো লিয়ার গালজুড়ে। ধ্যাৎ বলে দৌড়ে চলে গেলো। হুর হেসে তাকিয়ে রইলো লিয়ার যাওয়ার পানে। সে জানে লিয়াও মাহিম কে পছন্দ করে কিন্তু স্বীকার করতে চায় না।

——

ছাদে নিয়ে আসা হয়েছে হুরকে। কিছুক্ষনের মধ্যে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে সাথে মেহেদিও লাগানো হবে। যেহেতু কালই রিসেপশন। হলুদ আর মেহেদীর সকল আয়োজন ফাইয়াজদের বাড়িতে করা হয়েছে। ফাইয়াজদের বাড়িতে বিশাল স্পেস থাকায় আর ফাইয়াজদের তেমন কোনো আত্মীয় না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া। ফাইয়াজদের সম্পূর্ণ বাড়ি কৃত্রিম আলোয় ঝলমল করছে। ছাদটা অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। স্টেজ করা হয়েছে সেখানে ফাইয়াজ কেও বসানো হলো। চারপাশে ফুলের সমারোহ। ফুলের ঘ্রানে মো মো করছে ছাদটা।

যথা সময়ে শুরু হলো হলুদ ছোঁয়ানো। হুরের মা মেয়েকে হলুদ ছোয়াতে গিয়ে কেঁ’দে ফেললেন। ফাইয়াজ তাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করলো। হুর নিজের বাবার চোখেও জল দেখেছে। কিন্তু ওই যে পুরুষ মানুষ নিজেকে শ’ক্ত করে রেখেছেন। একে একে সবাই হলুদ দিতে লাগলো। হলুদ দেয়া শেষে মেহেদী দেয়া শুরু করলো সবাই। লিয়া হুরের হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিতে লাগলো। দেয়া শেষে হাতের এক কোণে সুন্দর করে ফাইয়াজের নাম লিখে দিলো কিন্তু এমন ভাবে লিখলো যে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর ফাইয়াজ সে তো হুরকে দেখায় ব্যস্ত।
#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৩

ফ্রেস হয়ে একটু বসেছিল হুর এমন সময় ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। ফোন টা হাতে নিতেই বুঝতে পারলো ফাইয়াজের মেসেজ। হালকা হেসে মেসেজ ওপেন করতেই একটা শুকনো ঢোক গিললো হুর। মেসেজে লেখা ছিলো,

~ আর মাত্র কিছু সময় মাই ডিয়ার মিসেস। তারপর সারাজীবনের জন্য আমার ব’ন্দি’নী হয়ে যাবে। প্রস্তুত থেকো। শুভরাত্রি।

মেসেজ টা পড়ে হুরের মনে আবার ভ’য় জাগলো। মনে মনে ভাবলো,

— কি সাং’ঘা’তি’ক লোক ভাবা যায়। আমার মতো মাসুম বাচ্চা কে ভ’য় দেখাচ্ছে। এমনিতেই মন আমার কেমন কেমন করছে 😒। তারপর আবার ভ’য় দেখায়। ধুর এই লোকের চিন্তা মাথা থেকে আউট করতে হবে।

হুর জানে এই ভ’য় দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো। মায়ের কোলে মাথা রাখলে সকল দু’শ্চি’ন্তা, ভ’য় সব কিছু দূর হয়ে যায়। সারা দুনিয়ার শান্তি ভর করে মস্তিস্কে। কিন্তু তার আম্মু বাবাই ফ্রেস হয়েছে কিনা ভেবে কিছু সময় পর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো হুর। কিছুক্ষন আগেই ফাইয়াজদের বাড়ি থেকে ফিরেছে তারা। সারা বাড়ি আত্মীয় দিয়ে ভরা হুরদের। কিছু গেস্ট কে লিয়াদের বাড়িতেও থাকতে দেয়া হয়েছে। যাতে গাদাগাদি না হয়ে যায়, সবাই আরামে থাকতে পারে।

নিজের রুমের প্রতিটা জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো হুর। এই প্রতিটা জিনিসের সাথে তার হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। প্রতিটা জিনিস খুব শখের। তার পছন্দ অনুযায়ী তার রুমটাকে ডেকোরেট করিয়েছিলো তার বাবাই। নিজের স্টাডি টেবিল টার দিকে চোখ যেতেই চোখ ভর্তি জল নিয়ে হেসে ফেললো হুর। এটা খুব বায়না করে কিনেছিলো। টেবিলে সাজানো কিছু বই খাতা সরিয়ে তার পিছন থেকে নিজের পার্সোনাল ডায়েরি বের করলো হুর। এই ডায়েরিতেই নিজের জীবনের সকল প্রিয় অপ্রিয় মুহূর্ত গুলো লিপিবদ্ধ করে রেখেছে সে। হুর ফাইয়াজের দেয়া চিরকুট টা ব্যাগ থেকে বের করে এনে চেয়ার টেনে বসলো। ডায়েরি তে একটা নতুন পেজ বের করে তাতে লিখতে শুরু করলো,

~ আমার স্বামী নামক মানুষটার দেয়া প্রথম ভালোবাসাময় চিরকুট।

কথাটা লিখে আঠা দিয়ে কাগজ টা ডায়েরির সাথে চি’প’কে দিলো হুর। যাতে কোনোভাবে পরে না যায়। তারপর আরেক পৃষ্ঠা বের করে তাতে লিখতে শুরু করলো,

~ মেয়েদের জীবন বড়োই অদ্ভুত তাই না! এইতো পাঁচ দিন আগে আমি শুধুমাত্র কারোর মেয়ে ছিলাম। কিন্তু হুট করে হয়ে গেলাম কারোর স্ত্রী, কারোর বাড়ির বউ। জীবন টা হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে গেলো। আজ এই বাড়িতে আমার শেষ দিন। এই বাড়িতে আর আসবো না তা নয় কিন্তু এরপর আসবো মেহমান হয়ে। এসব ভাবলে যে আমার দম ব’ন্ধ হয়ে আসছে। কিভাবে থাকবো আমার পরিবার কে ছেড়ে! হে আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য্য দাও। আমি যেই উদ্দেশ্যে ফাইয়াজদের বাড়িতে যাছি সেই উদ্দেশ্য পূরণে সাহায্য করিও।

ডায়েরি বন্ধ করে অঝোর ধারায় কাঁ’দ’তে লাগলো হুর। যেখানে একটা দিন বাবা মা ভাই কে ছাড়া থাকে নি সেখানে পার্মানেন্টলি কিভাবে তাদের ছাড়া থাকবে!

কারোর আসার শব্দ পেয়ে দ্রুত চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করলো হুর। দরজার দিকে তাকাতে দেখলো তার বাবাই, আম্মু আর ছোটো ভাই একসাথে এসেছে। হুর তাদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু হুরের মুখ দেখেই হাসান সাহেব আর মিসেস হেনা উ’ত্তে’জি’ত হয়ে গেলেন। স্পষ্ট বুঝতে পারলেন মেয়ে অনেক কেঁ’দে’ছে। ফর্সা নাক মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হাসান সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

— কি হয়েছে আমার আম্মুটার! আমার আম্মুটা কেঁ’দে’ছে কেনো! সে কি জানে না তার কা’ন্না দেখলে তার বাবাইয়ের অনেক ক’ষ্ট হয়!

হুর তার বাবাইয়ের বুকে লেপ্টে থেকে জড়ানো কণ্ঠে বললো,

— তোমাদের ছাড়া কিভাবে থাকবো বাবাই! আমার অনেক ক’ষ্ট হবে। আমি তো এই বাড়ির মেহমান হয়ে যাবো তাই না বাবাই!

হুরের বাবা হালকা হেসে বললেন,

— দেখলে হেনা তোমার পা’গ’ল মেয়ে কিসব উল্টোপাল্টা কথা বলছে! ও নাকি এই বাড়ির মেহমান হয়ে যাবে! শোনো আমার পা’গ’লী’টা’র কথা। আম্মু এই বাড়িটা তোমার ছিলো তোমার আছে আর সবসময় তোমার থাকবে বুঝেছো। আর কে বলেছে আমাদের ছাড়া থাকবে! আমরা নিয়মিত তোমার সাথে দেখা করতে যাবো, তুমি যখন ইচ্ছা হবে চলে আসবে। এখন এতো মন খারাপ করো না তো। নাহলে আমরা সবাই কিন্তু এখন কা’ন্না শুরু করে দিবো তখন আমাদের সামলিও তুমি হুম।

হুর তার বাবার বাচ্চামো কথায় হেসে দিলো। হুরের হাসি দেখে সবাই আলতো হাসলো। হুরের বাবাই বললো,

— হুরের আম্মু যাও তো খাবার নিয়ে আসো। আজকে তোমাদের সবাই কে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিবো। বেশি করে নিয়ে আসবে কেমন!

——–

সকাল থেকে ভিড় লেগে আছে হুরের রুমে। কেউ এসে বউ দেখে যাচ্ছে তো কেউ পার্লারের লোকেরা ঠিকভাবে সাজাচ্ছে কিনা তা তদারকি করছে। লিয়া হুরের পাশেই বসে আছে। হুর না চাওয়া শর্তেও আজ তাকে ভারী মেকআপ নিতে হচ্ছে। রিসেপশন বলে কথা। বউ কে বেস্ট লাগতে হবে। ফাইয়াজদের বাড়ি থেকে সবকিছু পাঠানো হয়েছে। ফাইয়াজ নিজেই পছন্দ করে কিনেছে সব। হুর আর লিয়ার ফ্যামিলির সবাইকেই কিছু না কিছু উপহার দিয়েছে সে। ফাইয়াজের পছন্দ নিঃসন্দেহে মা’রা’ত্ম’ক সুন্দর। প্রত্যেকটা জিনিস এতটাই পছন্দ হয়েছে সবার যে কেউ কোনো খুঁত ধরতে পারে নি। সবকিছুই বেস্ট।

মেরুন রঙের লেহেঙ্গা, হীরের অলংকারে সজ্জিত হুর কে চোখ ধাঁধানো সুন্দরী লাগছে। লিয়া তো বারবার হুর কে খোঁ’চা দিয়ে বলছে,

— আজ ফাইয়াজ ভাইয়া তোকে দেখে জ্ঞান হারাবে। ইস আমি কেন যে ছেলে হলাম না 🥺। নাহলে তুই আমারই বউ হতি শিওর। জোর করে হলেও তোকে বিয়ে করতাম।

লিয়ার কথা শুনে হুরের গালজুরে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়লো। লিয়াকে ধা’ক্কা দিয়ে বললো চুপ করতে। কিন্তু লিয়া কি আর চুপ থাকে! হুরকে আরও বেশি লজ্জা দিতে লাগলো সে।

——–

কনের গাড়ি সেন্টারের সামনে এসে থামতেই ফাইয়াজ সবাইকে রিসিভ করতে বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে। অবশ্য তার মূল উদ্দেশ্য তো নিজের বৌটা কে দেখা। তাকেও আজ কোনো অংশে রাজপুত্রের চেয়ে কম লাগছে না। শ্যাম বর্ণের সুঠাম দেহে মেরুন শেরওয়ানি টা ফুটে উঠেছে।

গাড়ির কাছাকাছি আসতেই পা জোড়া থেমে গেলো ফাইয়াজের। বুক অসম্ভব হারে কাঁ’প’তে লাগলো। এ কাকে দেখছে সে! এই মেয়েটা কি তাকে নিজের রূপে ডু’বি’য়ে মা’র’তে চায় নাকি! ফাইয়াজ সম্মহোনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো হুরের দিকে। চোঁখের পাতাও যেনো ফেলতে ভুলে গেছে।

ফাইয়াজের এমন দৃষ্টি দেখে সবার মাঝে হাসির রোল পরে গেলো। লিয়া হুরকে ধা’ক্কা দিলো সামনে দেখার জন্য।

হুর মাথা তুলতেই ফাইয়াজের চোঁখে চোখ পড়লো তার। দৃষ্টি বিনিময় হলো। ফাইয়াজের থমকানো দৃষ্টি দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো হুর। মনে মনে বললো,

— এই লোক সবার সামনে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো ! পরে যে সবাই আমায় লজ্জা দিবে! দৃষ্টি দিয়েই মে’রে ফেলবে নাকি!

হুর আরেকবার আড়চোখে তাকালো ফাইয়াজের দিকে। সবার উচ্চস্বরের হাসাহাসিতে হুশ ফিরলো ফাইয়াজের। বেচারা একটু লজ্জা পেলো বটে। দ্রুত নেমে এসে হুরের হাতটা কোমল ভাবে স্পর্শ করে তাকে হাঁটতে হেল্প করতে লাগলো। এই নিয়েও সবাই এক দফা হাসি ঠাট্টা করে ফেললো।

——–

অনুষ্ঠান শুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হলেও বিদায় বেলায় এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো ফাইয়াজ।

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here