ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -১০

#ভালোবাসি_প্রিয়‌ (১০)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-“দোয়া ব‌ই নিয়ে এসে দেখে টেবিলের উপর তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড কিছুই নেয়।নিচে রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ডের টুকরো টুকরো অংশ পড়ে রয়েছে দেখেই দোয়া চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। দোয়ার চিৎকার শুনে সিমরান দৌড়ে এসে দোয়া কে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে বলে, কি হয়েছে দোয়া? তুমি হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলে কেন?আর কান্না করছো কেন?কি হয়েছে?”

-” আমার এতো বড় স”র্ব”না”শ কে করলো সিমরান? আমি তো তোমাকে বলে গিয়েছিলাম এইখানে থাকতে, তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে?”

-” আমি তো এইখানেই ছিলাম। হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে একটা কল আসে। অপরিচিত নাম্বার দেখে আমি বারবার রিজেক্ট করেছি, কিন্তু অনবরত কল করে যাচ্ছিল।তাই বাধ্য হয়ে রিসিভ করেছিলাম। কিন্তু রিসিভ করার পর কথা ভালো বুঝতে পারছিলাম না তাই একটু বাইরে গিয়েছিলাম।আর এরই মধ্যে তুমি চিৎকার দিয়ে উঠলে।কি হয়েছে দোয়া একটু ক্লিয়ার করে বলো তো।”

-” নিচে দেখ সিমরান।”

-” হায় আল্লাহ! এটা কিভাবে হলো দোয়া?
দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে তোমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে।যাতে তুমি পরীক্ষা দিতে না পারো। কিন্তু এমন জঘন্য কাজ কে করতে পারে? ইংলিশ আপা নয় তো?”

-“না না সিমরান। তোমার ভুল হচ্ছে। ইংলিশ আপা কিভাবে করবেন?সেই দূর্ঘটনার পর থেকে ইংলিশ আপার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। পুলিশ যখন রতন পাশার মুখ থেকে জানতে পারলো সবকিছুর পিছনে ইংলিশ আপার হাত আছে, ইংলিশ আপা আমাকে মা”রা”র জন্য রতন পাশা কে সুপারি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছে, তখনই পুলিশ ইংলিশ আপার বাসায় যায়। কিন্তু তার বাসায় গিয়ে দেখে গেটে তালা ঝুলছে। স্থানীয় লোকজনের থেকে জানতে পারে তাদেরকে কিছুদিন আগে কোথাও যেতে দেখেছে , কিন্তু আর ফিরতে দেখে নি। তাহলে যেইখানে মানুষটার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না,সে এমন একটা কাজ কিভাবে করবে সিমরান দোয়া কান্না করতে করতে বললো।”

-” তাহলে কি বৃত্ত ভাইয়া করেছে? বৃত্ত ভাইয়া তোমাকে বারবার হু”ম”কি দিয়েছে এই ভার্সিটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। অনেক বার অনেক ভাবে চেষ্টা ও করেছে।এমন ও তো হতে পারে আমাকে আননোন নাম্বার দিয়ে কল করা ব্যক্তি টা আর কেউ নয় স্বয়ং বৃত্ত ভাইয়া।বৃত্ত ভাইয়া আগে থেকেই আমাদের উপর নজর রেখেছে।আর যখন দেখেছে তুমি চলে গেছো ,তখন আমাকে কল করে এইখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।আর যখন‌ই আমি লাইব্রেরী থেকে বেরিয়েছি সেই সুযোগে বৃত্ত ‌ভাইয়া এসে তোমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে।যাতে তুমি পরীক্ষা দিতে না পারো। কিংবা রাগে দুঃখে ‌ব্যথিত হয়ে এই ভার্সিটি ছেড়ে দাও।”

-” এখন আমি কি করবো সিমরান? রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড ছাড়া আমাকে পরীক্ষার হলে যেতে দিবে না।তাহলে কি আমি সত্যিই পরীক্ষা দিতে পারব না? আমার স্বপ্ন এইখানেই শেষ হয়ে যাবে?”

-” তোমাকে কি বলে শান্তনা দিবো আমার জানা নেই। তুমি আমার থেকে অনেক কিছু জানো এবং মেনে ও চলো। ইসলাম সম্পর্কে ধারণা তোমার অনেক বেশি। কিছুদিন আগে তুমিই তো বলেছিলে আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টি এ মহাবিশ্ব কে বানিয়েছেন একটা বিশাল পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে। আল্লাহ তায়ালা কোর‌আনে বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো ভয়, ক্ষুধা, এবং তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে।আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।[সুরা বাকারা, আয়াত -১৫৫]
মুমিনদের জন্য পরীক্ষা আসবেই।যে পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েননি কোন নবী রাসুলগন ও। আল্লাহ তায়ালা হয়তো তোমার ও পরীক্ষা নিচ্ছেন। তুমি ধৈর্য ধরো দোয়া।জানোই তো ধৈর্য্যর ফল সবসময় মিষ্টি হয়।”

-” বাসায় চলো সিমরান। আমার কিছু ভালো লাগছে না।”

-” হুম চলো।”

__________________________________

-“অভি আজ খুব খুশি।ফাইনালি আজ তার মনের কথা বলতে পারবে।এতো দিনের জমিয়ে রাখা আবেগ , অপ্রকাশিত ভালোবাসার প্রকাশ করতে পারবে।অভি ভাবছে,বাসা থেকে যেহেতু বিয়ের চাপ দিচ্ছে দোয়া কে সরাসরি আমি বিয়ের প্রস্তাব দিবো।যদি দোয়ার আপত্তি না থাকে তাহলে বাবা,মা কে পাঠাবো দোয়ার বাসায়। তারপর দুই পরিবার যদি রাজি থাকে তাহলে আকদ করে রাখবো।তাছাড়া যেহেতু রাজ ভাইয়া ও দেশে ফিরে আসছে, ভাইয়া দেশে ফিরলেই আম্মু ধরে বেঁধে ভাইয়া কে বিয়ে দিবে।তখন আমার রাস্তা ক্লিয়ার।তখন আমার মনের রানী কে আমার ঘরের রানী করে আনতে পারবো। ইশ্ ভাবতেই কেমন সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে।অভি রেডি হচ্ছে এমন সময় অবনী এসে বললো‌

-” কোথাও যাচ্ছো ভাইয়া?”

-” হ্যাঁ। একটু ভার্সিটি তে ‌যাবো।”

-” ভার্সিটি তে কেন?আমার জানা মতে এখন তো তোমার কোন ক্লাস নেয়।তাহলে এতো পরিপাটি হয়ে ভার্সিটি তে কেন যাচ্ছো?কোথাও যেন সামথিং সামথিং গন্ধ পাচ্ছি। ”

-” অভি অবনীর কথায় মাথা চুলকাতে চুলকাতে ধমকের সুরে বললো, ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবি। বড়দের ব্যাপারে নাক গলাবি না।”

-” নাক যেহেতু আছে গলাতে তো হবেই। তাছাড়া ভাবি টা আমার তোমার তো না।তাই আমার যথেষ্ট অধিকার আছে নাক গলানোর। তবে একটা কথা না বললেই নয়।তোমার জন্য যে মেয়েটা দেখেছিলাম, আসলেই সুন্দর ছিল।যেন কোন জান্নাতি হুর।আমি শিওর তুমি যদি একবার দেখতে তুমি কিছুতেই না করতে পারতে না।এমন ও হতে পারে ভবিষ্যতে তোমার ঐ মেয়েটার জন্য আফসোস করতে হলো।”

-” বাব্বা মেয়েটাকে এতো ভালো লাগছে তোর?তাহলে এক কাজ কর রাজ ভাইয়ার জন্য দেখে রাখ। ভাইয়া দেশে ফিরলে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিবো।”

-” আর একবার ঐ বাড়িতে সমন্ধ নিয়ে যাও , একদম ঝা”টা পি”টা দিয়ে তাড়িয়ে দিবে। তাদের মেয়ের জন্য ছেলের অভাব হবে না যে রিজেক্ট হ‌ওয়া ছেলের বড় ভাইয়ের সাথে তারা মেয়ের বিয়ে দিবে।”

-“হয়েছে মেয়েটার গুনগান করা? হলে এবার দয়া করে আমার রুম থেকে বের হয়ে যা ।”

-” হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি। তোমার রুমে থাকতে আসি নি। এজন্যই ভালো কথা বলতে হয় না।ভালো কথা বললে খালাজি বেজার হয়।”

-” অবনী বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই অভি সম্পূর্ণ রেডি বাইকের চাবি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য র‌ওনা হলো।”

-“অভি ভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশ করবে এমন সময় দেখে দোয়া আর সিমরান ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সিমরানের চোখ ভিজে আছে ,মনে হচ্ছে অনেক কান্নাকাটি করেছে।দোয়া কে দেখে ও শান্ত, স্থবির লাগছে।যা দেখে অভির বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে গেল। পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করা গেলেও চোখের সামনে নিজের ‌ভালোবাসার মানুষ কে কষ্ট পেতে দেখা যায় না।অভির ক্ষেত্রে ও তার ব্যতিক্রম হয় নি। যদিও তার ভালোবাসা একপাক্ষিক। অভি ভাবছে সিমরান কে ডেকে দোয়ার কথা জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু অভি পিছনে ফিরে দেখে দোয়া আর সিমরান চলে গিয়েছে। মূহুর্তের মধ্যেই অভির মনেবিষাদের কালো আঁধার নেমে আসে।তার ভালোবাসা অপ্রকাশিত থেকে যায়। অভি ব্যর্থ হয় তার প্রকাশ ঘটাতে।অভি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দেখে বৃত্ত কে অনেক খুশি খুশি লাগছে। বৃত্ত কে এতো খুশি দেখে অভি জিজ্ঞেস করে,

-” হোয়াট হ্যাপেন্ড ব্রো? ইউ লুক সো হ্যাপি টু ডে।বাট হুয়াই?”

-” এরপর বৃত্তের কথা শুনে অভি ঠাস ঠাস করে বৃত্তের দুই গালে থা”প্প”ড় মে”রে দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here