ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -১১

#ভালোবাসি_প্রিয় (১১)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-” হ্যাভ ইউ গন ম্যাড বৃত্ত?আমি ভাবতে ও পারছি না তুই এতো নিচে নেমে যাবি। তুই কিভাবে পারলি এমন একটা জঘন্য কাজ করতে? ছিঃ নিজেকে তোর ফ্রেন্ড ভাবতে ও ঘৃণা লাগছে আমার।”

-” আমি বুঝতে পারছি না অভি,তোর এতো গায়ে লাগছে কেন?সেই প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্য করেছি ঐ দেড় ফুট মেয়ের জন্য তোর দরদ একেবারে বেয়ে বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।আর আজ শুধু মাত্র ঐ দেড় ফুট মেয়ের জন্য এতো গুলো মানুষের সামনে আমাকে থা”প্প”ড় দিতে পারলি তুই?তোর একটু ও হাত কাঁপলো না অভি?”

-” অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয়ে দুজনেই সমান অপরাধী। তুই অন্যায় করে যে অপরাধ করেছিস, আমি তোকে প্রশয় দিয়ে নিজে ও সমান অধরাধী হতে চাইনা।তাই তোকে থা”প্প”ড় দিয়েছি বেশ করেছি।এই থা”প্প”ড় টা আরো অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল আমার।আমার‌ই ভুল হয়েছে তোকে আমার আপনজন মনে করে‌ আমার ভাইয়ের জায়গায় তোকে বসিয়ে। আমি তোকে বারবার করে বুঝিয়েছি, তুই বুঝিস নি। তবু ও তোর সঙ্গ ছাড়ি নি আমি। ভেবেছিলাম আজ না হলেও কাল তুই তোর ভুল বুঝতে পারবি। তুই ভালো হয়ে যাবি। কিন্তু কথায় আছে কু”কু”রে”র লেজ কখনো সোজা হয় না। তেমনি তুই ও কখনো ভালো হবি না। তুই আজ যা করলি এরপর ও আমি তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব রাখতে পারবো না বৃত্ত। তুই আজ দোয়ায় রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড ছিঁড়ে একটা অমানুষের পরিচয় দিলি। বুঝিয়ে দিলি তোর মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ বলতে কিছু নেয়।আর যায় হোক কোন অমানুষের যোগ্যতা নেয় আমার ফ্রেন্ড হ‌ওয়ার।আজ থেকে আমি ভুলে যাবো বৃত্ত নামে আমার কোন ফ্রেন্ডরুপি ভাই ছিল।ভুলে যাবো তোর সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো। তুই আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলি তোর অবস্থান টা।”

-” বাহ্ অভি বাহ্! সামন্য একটা মেয়ের জন্য আমাদের এতো গুলো বছরের বন্ধুত্ব এক নিমিষেই শেষ করে দিতে পারলি?ঐ মেয়ে তো দেখছি তোকে বশ করে নিয়েছে?কি দেখিয়েছে রে তোকে ঐ দেড় ফুট মেয়েটা?”

-” মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ বৃত্ত।আর একবার যদি বাজে কথা বলেছিস আমি দ্বিতীয় বার তোর গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো। শুধু দোয়া নয়, দোয়ার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকলেও আমি এমনটাই করতাম।”

-” তুই শুধু ঐ দেড় ফুট মেয়েটার কথায় ভাবছিস।আর মেয়েটা আমাকে যে ভার্সিটির সবার সামনে অপমান অপদস্থ করেছিল,সে কথা ভুলে গিয়েছিস?”

-” না আমি ভুলি নি।আর মেয়েটা তো কোন অন্যায় করেছিল না।আর যদি অন্যায় করে ও থাকে ,তুই বারবার তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছিলি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্মানিত করে ,তাকে হাজার চেষ্টা করেও অপদস্থ করা যায় না। এইখানে সবাই আসে পড়াশোনা করে নিজেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারবে এই আশায়।আর তুই একবার ও মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভাবলি না। মেয়েটা রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড ছাড়া কিভাবে পরীক্ষা দিবে বল তো?আর তোর যদি প্রতিশোধ নিতেই হয় সেদিন কেন রতন পাশার হাত থেকে মেয়েটাকে বাঁচিয়েছি?ম”র”তে দিলি না কেন?তাহলে তোর পথের কাঁ”টা শেষ হয়ে যেত। এইভাবে বারবার তাকে অপমান অপদস্থ করার থেকে একেবারে ম”র”তে দিতি।”

-” আমার উদ্দেশ্য ছিল ঐ মেয়েকে এই ভার্সিটি থেকে তাড়ানোর।ঐ দেড় ফুট মেয়েকে মা”রা”র কোন উদ্দেশ্য ছিল না আমার।”

-” হা হা হা।তোর সেই উদ্দেশ্যে কখনো সফল হবে না বৃত্ত। দোয়া এতো সহজে দমে যাওয়ার মেয়ে না। আমি জানি দোয়া ঠিকই পরীক্ষা দিবে। মাঝখান থেকে তুই দোয়া সহ আরো অনেকের চোখে ঘৃণার পাত্র হয়ে গেলি। আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করলি। আসছি আমি।ভালো থাকিস।আর পারলে নিজেকে শুধরে নিস বলে অভি বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গেল।”

-” বৃত্ত অভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই কাজ টা ঠিক করলি না অভি।এর জন্য তোর পস্তাতে হবে। একটা দেড় ফুট মেয়ের জন্য আমার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলি,আমাকে থা”প্প”ড় দিলি‌ আমি ও দেখবো ঐ মেয়ে কিভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।ওর জন্য আমার লাইফ টা হেল হয়ে গেছে।ওকে আমি কিছুতেই এই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করতে দিবো না।হা হা হা।

___________________________________

-” আজ থেকে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে। দোয়া খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করে পড়তে বসে যায়। দোয়ার আগে থেকেই প্রিপারেশন ভালো ছিল ।এখন শুধু মাত্র একবার চোখ বুলিয়ে নিলেই হবে। তবু ও দোয়ার ভেতরে ভেতরে ভয় কাজ করছে ।কি যে হবে? আদৌ কি সে পরীক্ষা দিতে পারবে। পরক্ষণেই দোয়া ভাবলো যা হয় হবে আল্লাহ যা করবেন নিশ্চয় আমার ভালোর জন্যই করবেন।দোয়া পড়া শেষ করে কিচেনে গিয়ে দেখে শাহিনা বেগমের রান্না প্রায় হয়ে এসেছে।দোয়া শাহিনা বেগম কে জিজ্ঞেস করলো,

-” আম্মা আমি কি আপনাকে সাহায্য করবো?”

-” তোর না আজকে থেকে পরীক্ষা? তুই পড়া বাদ দিয়ে আমাকে সাহায্য ‌করতে এসেছিস?যা গিয়ে পড়তে বস।”

-” আমার পড়া শেষ আম্মা।এখন আর পড়তে ভালো লাগছে না। ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে আম্মা।ভয় করছে অনেক ।কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না আম্মা।”

-” এতো চিন্তার কোন কারণ নেয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে কিছু করনীয় আছে ,যা সব শিক্ষার্থীরা ফলো করতে পারে।এতে হয়তো কিছুটা চিন্তামুক্ত হতে পারে।”

-” কি কি করনীয় আম্মা?”

১. পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে সালাতুল হাজত দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করা।

২. আল্লাহর ৯৯ টি নামের মাঝে “ইয়া মুমিনু” পাঠ করতে থাকুন সাথে ❝রাব্বি জিদনি ইলমা ❞ বেশি বেশি পাঠ করা ।

৩. পরীক্ষার হলে বেশি দুশ্চিন্তা হলে এই দোয়া পড়বেন
❝হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়া কিল❞ ।
অর্থঃ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম সাহায্যকারী কার্যসম্পাদনকারী।

৪.❝বিসমিল্লাহ ❞ বলে লেখা শুরু করবেন।

৫.বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পাঠ করা।

৬.কোনো প্রশ্নের উত্তর মনে না আসলে এই দোয়া পড়বেন –
❝রব্বিশ রহলি সদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি , ওয়াহলুল উকদাতা মিল্লিসানি , ইয়াফকহু কওলি ।❞
অর্থ- ” হে আমার রব , আমার প্রশস্ত করে দিন । এবং আমার কাজ সহজ করে দিন । আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে । (সূরা ত্বহা , আয়াত ২৫-২৮ ) ।

৭. স্থিরতা অবলম্বন করা অনেকে পরীক্ষার সময় অস্থির হয়ে পড়েন । খুব বেশি তাড়াহুড়া করেন । ফলে অনেক ক্ষেত্রে ভুল উত্তর দিয়ে বসেন । ইসলাম তাড়াহুড়া পছন্দ করে না । কারণ এটি শয়তানের অভ্যাস ।”

-“বুঝতে পারছি আম্মা।”

-“আল্লাহর উপর সবসময় ভরসা রাখবি।”

-“জ্বি আম্মা।”

-“যেহেতু তোর আজ প্রথম পরীক্ষা শুরু হবে। প্রথম দিন একটু তাড়াতাড়ি যাওয়া ভালো।সিট খুঁজতে খুঁজতে অনেক টা সময় পেড়িয়ে যাবে। তুই বরং তোর আব্বা আর ছোঁয়া কে ডেকে এনে খেতে বস। আমি খাবার বেড়ে আনছি।”

-” ঠিক আছে আম্মা।”

-“দোয়া নাস্তা শেষ করে ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রেডি হয়ে দুই রাকাত হাজতের নামাজ পড়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য র‌ওনা হলো।”

-“দোয়া এসে দেখে সিমরান আগে থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। দোয়া কে দেখে সিমরান এগিয়ে এসে বললো, সব ঠিকঠাক আছে তো দোয়া।”

-” হ্যাঁ । সিমরান।চলো যাওয়া যাক। নোটিশ বোর্ডে দেখতে হবে সিট কয় তলায় দিয়েছে।”

-” হুম চলো।”

-” দোয়া , সিমরান নিজেদের সিটে এসে বসে। এমন সময় মিম নামের মেয়েটা এসে বলে, এই দোয়া তুমি এইখানে কেন? তোমার তো রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল।তাহলে তুমি এইখানে কি করছো?তোমাকে এডমিট কার্ড ছাড়া হলে প্রবেশ করতে দিলো কে?এক্ষুনি হল থেকে বেরিয়ে যাও।”

-” দোয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুমে স্যার এসে বললো,কি হচ্ছে এইখানে? বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে।”

-“দোয়া কিছু বলার আগেই মিম বললো, স্যার দেখুন না এই মেয়েটা রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড ছাড়াই পরীক্ষা দিতে এসেছে। আমি ওকে বলেছি বেড়িয়ে যেতে কিন্তু ও যাচ্ছে না। আপনি এক্ষুনি ওকে বের করে দিন স্যার।”

-” আমি কাকে বের করবো কি করবো না সেইটা নিশ্চয় তোমার থেকে জেনে নিবো না। তুমি যাও তোমার সিটে গিয়ে বস। আমি দেখছি ব্যাপার টা।”

-” মিম ভেবেছিল স্যার হয়তো তাকে বাহবা দিবে। কিন্তু বাহবা দেওয়ার বদলে ধমক দেওয়ায় কিছু টা অপমান বোধ করে নিজের সিটে এসে বসলো।দোয়া কে তার মোটেও সহ্য হয় না।‌মিম বসে থাকলো দোয়া কে কখন স্যার রুম থেকে বের করে দিবে এটা দেখার জন্য। কিন্তু স্যার যখন জিজ্ঞেস করলো, এই মেয়ে তুমি রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড ছাড়া পরীক্ষা দিতে এসেছো কোন সাহসে?তখন দোয়া সবাইকে অবাক করে দিয়ে…

চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here