ভালোবাসি প্রিয় পর্ব -১৩

#ভালোবাসি_প্রিয় (১৩)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

তাহলে আর দেরি না করে একটা টাইট হাগ দিয়ে বলেই দাও #ভালোবাসি_প্রিয় ।

আমি সত্যি রাজকে ভালোবাসি কি না আমি নিজেই জানি না।তবে এইটা জানি রাজের আশেপাশে থাকতে আমার ভালো লাগে,ওর কথা ভেবে অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠে।ওর সামনে গেলেই বুকের ধুকপুক শুরু হয়ে যায়। ইদানিং ইচ্ছে হয় রাজের জন্য নিজেকে সাজাতে। ইচ্ছে হয় নিজের হাতে ওকে রান্না করে খাওয়াতে।ওর সামন্য ইগনোর ও আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। আম্মা বলেছিল বিয়ে পবিত্র বন্ধন ভালোবাসা আপনা আপনি হয়ে যায়। সেই পবিত্র বন্ধনের জোরেই হয়তো শাফিনের সাথে আমার পাঁচ বছরের রিলেশন, পাঁচ বছরের ভালোবাসা ভুলতে পেরে রাজের প্রতি নতুন করে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। রাজের প্রতি আমার এই অনুভূতির নাম যদি ভালোবাসা হয় তাহলে আমি রাজকে ভালোবাসি। হ্যাঁ আমি এই আনস্মার্ট, অশিক্ষিত, লোকটাকে ভালোবাসি। খুব করে ভালোবাসি।আর সাহেব যেন ন্যাকা । কিছুই বোঝে না। ব্যাটা মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে হিসাববিজ্ঞান বোঝে অথচ আমাকে বোঝে না। ক্যারে তুই পারিস না জোর করে টাইট হাগ দিয়ে বলতে ভালোবাসি_প্রিয়। আমাকেই কেন‌ মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা ‌ বলতে হবে? আমিও মুখ ফুটে কখনো তোকে বলব না ভালোবাসি_প্রিয় । [মনে মনে বললাম]।

কুয়াশা তুমি কি এতো ভাবছো বল তো? আমি তোমাকে এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চলে আসলাম, কিন্তু তুমি ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছ।

আসলে ভাবছিলাম আটাতে তো পানি বেশি হয়ে গিয়েছে। তাহলে এখন লুচি বানাবো কিভাবে?

কোন ব্যাপার না। তোমার এই বিষয়ে ভাবতে হবে না।এর জন্য তো তোমার বর আছে তাই না। আমি দেখছি কি করা যাই।

অতঃপর রাজ সুন্দর করে আটা মেখে লুচি বানালো। আমাকে ও দেখিয়ে দিল কিভাবে লুচি বানাতে হয়। এরপর ছোলার ডাল ভুনা করল। টোনাটুনির সংসারে বেশ ভালোই লাগছে। রান্না শেষ করে দুইজন ‌খেতে‌ বসেছি। অসম্ভব সুন্দর হয়েছে রান্না। আসলেই আপু ঠিকই বলেছিল রাজ একজন অলরাউন্ডার।দুজনেই খাচ্ছি কারো মুখে কোন কথা নেই হঠাৎ করে রাজের ফোনে একটা কল আসল।ঐ পাশ থেকে বলতে শুনলাম,রাজ পরীক্ষার তো বেশি দিন বাকি নেই, তোর প্রিপারেশন কেমন? অবশ্য তুই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তোর কোন টেনশন নাই। পরীক্ষার কথা বলতেই রাজ খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেল। আমি বুঝতে পারলাম না কি এমন কথা বলছে‌ যার জন্য রাজের খাবার রেখে চলে যেতে হলো?

একা একা বসে খাচ্ছিলাম । হঠাৎ রাজের প্লেটের দিকে আমার নজর গেল। তখন আমার রাজের বলা কথা টা মনে পড়ে গেল স্বামী স্ত্রী এক‌ই প্লেটে খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আয়শা (রা)এর সাথে এক‌ই প্লেটে খাবার খেয়েছেন। যখন উম্মুল মু’মিনীন আয়শা (রা) গ্লাসে করে পানি খেতেন, আল্লাহর রাসুল (সা) ঠিক সেই সহধর্মিণীর ঠোঁ*ট লাগা অংশে ঠোঁ*ট লাগিয়ে পানি পান করতেন।যখন আয়শা (রা) গোশত খেতেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সা) আয়শা (রা)‌ হতে গোশতটা টান‌ দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক আয়শা (রা) যেদিকটায় ঠোঁ*ট লাগিয়ে খেয়েছেন, এক‌ই স্থান থেকে তিনি ও খাওয়া শুরু করতেন। আমি ও কিছু না ভেবে রাজের রেখে যাওয়া খাবার টুকু খেয়ে নিলাম। মনে ‌হলো যেন কোন অমৃত খেলাম। খাওয়া শেষ করে প্লেটগুলো ধুয়ে রুমে এসে পড়তে বসলাম।যত দিন যাচ্ছে ততই পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছে।তবে মনে হচ্ছে এইবার ভালো রেজাল্ট করতে পারব ফাস্ট ইয়ারের তুলনায়।সাত টা সাবজেক্টেই মোটামুটি ভালো প্রিপারেশন হয়েছে।তবে অংশীদারি হিসাবে একটু সমস্যা রয়েছে। তাই অংশীদারি হিসাব থেকে কয়েক টা ম্যাথ সলভ করলাম।আরে বাহ্ সম্পদের হিসাব আর দায় ও মালিকানাস্বত্বের হিসাব মিলে গিয়েছে। আহা কি যে ভালো লাগছে। একমাত্র হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রীরা জানে একটা ম্যাথ সঠিক হ‌ওয়া ঠিক কতোটা আনন্দের , কতটা সুখের।অন্য অধ্যায়ের একটা ম্যাথ করতে যাবো তখন ই দেখি জামিয়ার কল। ফোন রিসিভ করতেই জামিয়া বলল,
আই অ্যাম ইন লাভ কুয়াশা!

সিরিয়াসলি জামিয়া?যেই জামিয়ার পেছনে হাজার ছেলের লাইন লেগে থাকে অথচ কোন ছেলেকে পাত্তা দেয় না, সেই জামিয়া কি না অনার্স লাইফে এসে প্রেমে পড়েছে ,ভাবা যায় এগুলো?

ভালোবাসা কখনো বয়স দেখে আসে না কুয়াশা। হুট করে হয়ে যায়। তেমনি আমিও শত বারণ থাকার পরেও প্রেমে পড়েছি এক নিসিদ্ধ মানবের। বিশ্বাস কর দোস্ত আমি তার প্রেমে পড়তে চাই নি সে বাধ্য করছে প্রেমে পড়তে তার কথা, ব্যবহার আচরন দ্বারা। তুই তো রাজকে ভালোবাসিস না , যখন ভালোবাসতে শুরু করবি তখন দেখবি রাজের আশেপাশে থাকতে তোর ভালো লাগছে,তার একটু ছোঁয়া পেতে তুই উতলা থাকবি ,দিন শেষে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে হবে‌ #ভালোবাসি_প্রিয়।

জামিয়া তুই কি কোন ভাবে শায়ান ভাইয়ার প্রেমে পড়েছিস?

বাহ কুয়াশা!তোকে না বলতেই তুই আমার মনের কথা বুঝে গিয়েছিস। এজন্যই তো তোকে এতগুলো ভালোবাসি। ইস্ তোর মতো করে যদি শায়ান ভাইয়াও আমাকে একটু বুঝতে পারতো।

আমার না বোঝার কোন উপায় আছে বল?এই এক মাসে তোর মুখে শায়ান ভাইয়ার কথা শুনতে শুনতে আমার কান পচে গেছে। কিন্তু নিসিদ্ধ মানব মানে কি?

ভাইয়া তো কোন মেয়েকেই পাত্তা দেয় না। কিছু দিন আগে একটা মেয়ে ভাইয়া কে প্রপোজ করেছিল। ভাইয়ার সে কি রাগ। মেয়েটাকে তো প্রাইভেট থেকে বাদ দিতেই চেয়েছিল।পরে ভাইয়া বলল যে, আমি এক নারী তে আসক্ত। পরনারীর প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।

তার মানে ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে?

শুধু গার্লফ্রেন্ড না যদি ওনার স্ত্রী ও থাকে তবুও আমার কোন সমস্যা নেই। আমি ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী হতেও রাজি আছি। ওনার মতো মানুষের জীবনসঙ্গী হতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। তুই আমার একটু হেল্প করে দিবি কুয়াশা। আমার হয়ে শায়ান ভাইয়াকে একটু বলে দিবি?

আরে ইয়ার!এতো তাড়াহুড়ো করার কি দরকার? কিছু দিন পরে বলিস।

নারে । ভালোবাসা প্রকাশ করার জিনিস, লুকিয়ে রাখার নয়। এমন ও তো হতে পারে আজ বলব ,কাল বলব, করতে করতে আর বলাই হলো না।

ঠিক আছে আমি তোর হয়ে শায়ান ভাইয়া কে বলে দিব।তবে এখন নয়। আমাদের পরীক্ষা শেষ হোক তারপর।না হয় যদি তোকে প্রাইভেট থেকে বাদ দিয়ে দেয় , তাহলে তো তোর রেজাল্ট খারাপ হবে।

এইটা অবশ্য তুই ঠিক বলেছিস।

আচ্ছা দোস্ত রাখছি রে বাই।ভালো থাকিস।

আমি অনেক ভালো আছি দোস্ত বিশ্বাস কর। জীবনের প্রথম প্রেমে পড়েছি। আশেপাশের সবকিছু ভালো লাগছে। সেদিন ভাইয়ার কথা ভেবে একা একা হাসছিলাম আম্মা এসে বলল,কিরে জামিয়া তোকে আবার দুষ্টু জ্বিনে আঁচড় করল নাকি? একা একা গাগলের মতো হাসছিস কেন?

তোমার জামাইয়ের দেখা পেয়েছি আম্মা।তার কথা ভেবেই হাসছিলাম। পরক্ষণেই মনে হলো‌ আল্লাহ! কাকে কি বলে দিলাম। প্রেমে পড়ে নির্লজ্জ , বেহায়া হয়ে গেছি। ভাইয়া যখন ম্যাথ বুঝায় তখন বেহায়ার মত তার দিকে তাকিয়ে থাকি।

জামিয়া ফোন রাখবি তুই। আমার মাথা ব্যথা হয়ে গেছে তোর একতরফা প্রেমের কাহিনী শুনতে শুনতে।

ঠিক আছে দোস্ত বাই।

জামিয়ার বকবক শুনে এখন আর পড়ার টেবিলে মন বসছে না। ভাবলাম এখন শুয়ে পরি সকাল সকাল উঠে পড়তে বসব। কিন্তু বিছানায় এসে মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসল। আমি মাঝখানের কোলবালিশ আর একটা কাঁথা আলমারিতে তুলে রেখে আসলাম।এর‌ই মধ্যে রাজের আগমন ঘটল।

একি কুয়াশা! মাঝখানের কোলবালিশ ক‌ই?

আসলে কোলবালিশে ময়লা হয়েছিল তাই ধুয়ে দিয়েছি।

চলবে ইনশাআল্লাহ….
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here