ভালোবাসি প্রিয় পর্ব -১৪

#ভালোবাসি_প্রিয়( ১৪)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

আসলে কোলবালিশে ময়লা হয়েছিল তাই ধুয়ে দিয়েছি। কথাটা বলা মাত্রই রাজ হো হো করে হেসে উঠলো। সেই পা*গ*ল করা হাসি।যা একদম আমার বুকে এসে বিধল।যেই হাসি দেখেই আমি যুগ যুগ পার করে দিতে পারব। কিন্তু রাজকে কিছুতেই আমার দূর্বলতা বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই ভাব দেখিয়ে বললাম, আপনি আমার সামনে এমন‌‌ রাজহাঁসের মতো হাসবেন না তো।দেখতে বিশ্রী লাগে।

দেখতে বিশ্রী লাগে তাই তো ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে থাকো ।আর ভালো লাগলে না জানি কি করতে?আর
তুমি একটা ম্যাচিউর মেয়ে ।এতো দিনে বাচ্চার মা ও হয়ে যেতে অথচ এখন ও জানো‌ না কোলবালিশ নয় বালিশের কাভার ধুতে হয়।কোন আক্কেলে এমন কাজ করলে? তোমার বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু বুদ্ধি বাড়ে নি।

ধুয়েছি বেশ করেছি। শুধু শুধু কি দরকার বিছানায় বাড়তি জিনিস রাখার?আর আপনি এমন রিয়েক্ট করছেন যেন আপনার থেকে আপনার ব‌উকে ছিনিয়ে নিয়েছি।

সিঙ্গেলদের জন্য যে কোলবালিশ কি তুমি বুঝবে না কুয়াশা।

আপনি সিঙ্গেল?

তা ন‌ই তো কি? বিবাহিত সিঙ্গেল ।ব‌উ থাকতে ও সিঙ্গেল।

এইরকম ভাব দেখালে সারাজীবন ব‌উ থাকতে ও সিঙ্গেল‌ই থাকতে হবে।

বিড়বিড় করে কি বলছ? জোরে জোরে বল আমি ও একটু শুনি।

কিছু না।

ঠিক আছে। ঘুমিয়ে পড়। গুড নাইট।

ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখনই দেখি বাবার ফোন। ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম। বাবার সাথে অনেক বোঝাপড়া বাকি আছে। আসসালামুয়ালাইকুম বাবা।

ওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছিস মা?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমরা সবাই কেমন আছো?

ইদানিং আমার শরীর টা তেমন ভালো যাচ্ছে না রে মা ।কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না।

এমন ভাবে বলছ কেন বাবা। আমার কষ্ট হয় তো। তুমি আর কখনো এমন কথা বলবে না বাবা।হয়তো রাগে অভিমানে কখনো তোমাকে জ*রি*য়ে ধরে বলতে পারি নি #ভালোবাসি_প্রিয় । তবুও তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।

আমি জানি রে মা তুই আমাকে কতোখানি ভালোবাসি স। তোকে তো উপযুক্ত মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি , এখন শীতল কে নিয়ে টেনশন হয়। শীতলের বয়স যখন সাত বছর তখন রেহেনার হাত ধরে এই বাড়িতে প্রবেশ করে।কোলে পিঠে করে মেয়েটা কে বড় করেছি। এখন যদি ওকে ওর উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দিতে না পারি, তাহলে শীতলের প্রতি বাবার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হব আমি। শাফিনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছি।শাফিন ছেলেটা..

বাবা! আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার একটা ছেলের সাথে পাঁচ বছরের রিলেশন ছিল।

হ্যাঁ।মনে পড়েছে।ছেলেটা বিসিএস ক্যাডার ছিল।

হ্যাঁ বাবা।ছেলেটা আর কেউ নয় ।শীতলের হবু বর শাফিন।

কি বলিস তুই?

আমাকে আগে জানাস নি কেন?

আমি কি জানতাম নাকি শাফিন‌ ই শীতল কে দেখতে আসবে।পরে তোমাদের কে বলতে যাবো তার আগেই দেখি তোমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছ।তাই আর বলা হয় নি।

এখন বুঝতে পারছি তুই কেন ঐভাবে চলে গেছিলি।

হ্যাঁ বাবা।তবে বিশ্বাস করো আমি কষ্ট থেকে না রাগ থেকে চলে আসছিলাম। তবে শাফিনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে এখন। আমার আধুনিকতা ,টিকটক করা শাফিনের পছন্দ হতো না।ও আমাকে অনেক বলেছে এসব থেকে বের হয়ে আসতে। আমি আসি নি এজন্যই ব্রেকআপ করেছে।তবে শাফিন সবসময় শীতলের মতো একজনকেই জীবনসঙ্গী করতে চাইতো।

হ্যাঁ মা। আমি শাফিনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তেমন খারাপ কিছু পেলাম না।ছেলেটা ভালো।প্রবাদে আছে না”সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস ,অসৎ সঙ্গ স*র্ব*না*শ”। দেখ মা তুই ও তো একসময় টিকটক সেলিব্রিটি ছিলি। এখন রাজের সংস্পর্শে গিয়ে তোর কতো পরিবর্তন হয়েছে তুই নিজেই লক্ষ্য করে দেখিস। তেমনি শীতলের সংস্পর্শে এসে ও শাফিনের পরিবর্তন হয়ে যাবে।

তোমাকে জানানোর প্রয়োজন তাই তোমাকে বললাম। এখন তুমি যা ভালো মনে কর ।

ঠিক আছে মা আমি ভেবে দেখি কি করা যায়। তুই ভালো থাকিস । নিজের খেয়াল রাখিস‌।রাজ ছেলেটা কে আমি পরখ করে দেখেছি একেবারে খাঁটি সোনা।ওকে কখনো কষ্ট দিস না মা।

ঠিক আছে বাবা। তুমি ও ভালো থেক বাবা। ঔষধ ঠিক মতো খাবে।

বাবার সাথে কথা বলা শেষ করে এসে শুয়ে পরলাম। কিন্তু হালকা শীত করছে। কিন্তু এখন তো কাঁথা ও বের করে আনতে পারব না। কিছুক্ষণ ভেবে রাজ কে ডাক দিলাম।এই যে শুনছেন। নো রেসপন্স।যা বাব্বা এর‌ই মধ্যে ঘুমিয়ে গেল নাকি। আবারও ডাক দিলাম,ওগো স্বামী শুনছেন।

বল।

বলছি আমার কাঁথা টা ও ধুয়ে দিয়েছি। এখন খুব শীত করছে আমার।

কাঁথা ধুয়েছ কেন?

ময়লা হয়েছিল তাই।

এক‌ই বিছানায় দুইটা কাঁথা থাকতে একটা কাঁথা ময়লা হয় কিভাবে?

এই রে এখন কি বলব। সবসময় নিজের জালে নিজেই ফেঁসে যাই। কিছু না বলে গুটিসুটি মে*রে শুয়ে রইলাম।

দেখ কুয়াশা। আমি সিঙ্গেল তাই আমার কাঁথা ও সিঙ্গেল। আমি বিছানার এই প্রান্তে তুমি অপর প্রান্তে থাকলে তো কাঁথার নাগাল পাবে না।তাই শীত নিবারণের জন্য তোমার দূরুত্ব কমাতে হবে।

ব্যাটা ভাংবে তবু মচকাবে না। আমি ও যাবো না। দরকার নেই আমার শীত নিবারণ করার। আপনি মনে করবেন না যে আমি আপনার সাথে এক কাঁথার নিচে থাকার জন্য আমার কাঁথা ধুয়ে দিয়েছি।

আশ্চর্য আমি কখন বললাম তুমি আমার সাথে এক কাঁথার নিচে থাকতে চাও। কি হলো? কথা বলছো না কেন?কুয়াশা!

বলুন।

কাঁথার মধ্যে এসো।বেশ শীত লাগছে। তোমার শীতে কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি।

হ‌ই হোক ‌।তাতে আপনার কি? আপনার তো আর কিছু যাবে আসবে না। আপনার কাঁথার নিচে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই আমার। আমি আলমারি থেকে অন্য কাঁথা নিয়ে আসছি ,বলে বিছানা থেকে নেমে যেতেই রাজ আমাকে হ্যাঁচকা টানে ওর বু*কে*র উপর ফেলে দিয়ে বলল, তুমি চাইলে এইখানে ও থাকতে পারো। আমি ও কিছু না বলে রাজের বু*কে গুটিসুটি মে*রে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভেঙ্গে গেল ফজরের আযান শুনে। ইদানিং ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস হয়ে গেছে।আযান শুনে আর বিছানায় থাকতে মন চাই না। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আমি এখন ও রাজের বু*কে*ই রয়েছি। মনে হচ্ছে এইটাই আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল, আমার শান্তির জায়গা।রাজের এখন ও ঘুম ভাঙ্গে নি।ওর ঘুমন্ত মুখটা কি মায়াবী লাগছে।ওর এই নিষ্পাপ মুখ দেখে হঠাৎ আমার মনে এক সুপ্ত বাসনা জেগে উঠল। কোন কিছু না ভেবেই ঠাস করে একটা কি*স দিয়ে দিলাম রাজের কপালে। সাথে সাথেই রাজ চোখ খুলে তাকালো। রাজের তাকানো দেখে অনেক টা ঘাবড়ে গেলাম সাথে অনেক লজ্জা ও পেলাম। তার মানে সাহেব এতোক্ষণ ঘুমের ভং ধরে ছিল ভাবতেই এক রাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরল। ভেতরে ভেতরে বিড়াল বিড়াল ফিলিংস হচ্ছে। বিড়ালের বোধহয় মাছ চুরি করে খেয়ে ধরা পড়লে এমন ফিলিংস‌ই হয়।

কি করছিলে তুমি কুয়াশা?

আসলে আমি ,আসলে, আমি কি‌ যে বলব ভেবে পাচ্ছি না। এদিকে রাজ আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।‌ পালিয়ে যাবো তার ও কোন উপায় নেই।

আসলে তুমি কি? আমি তো সেটাই জানতে চাচ্ছি।

আসলে আপনি রাতে বাবুর কথা বললেন না ,তাই আমি স্বপ্ন দেখছিলাম যে , আমি একটা বাবু কে কি*স দিয়েছি। এখন ঘুম ভেঙ্গে দেখি যে আপনি হয়ে গিয়েছেন।হা,হা,হা, ।

চলবে ইনশাআল্লাহ…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here