ভালোবাসি বলেই তোমাকে প্রয়োজন পর্ব -০৯

#ভালোবাসি_বলেই_তোমাকে_প্রয়োজন
লেখক – এ রহমান
পর্ব ৯

এয়ারকন্ডিশন এর ভনভন আওয়াজ নিরব পরিবেশে ঝঙ্কার তুলেছে। রকিং চেয়ারটা ক্যাচক্যাচ আওয়াজে দুলছে। টেবিলে পড়ে থাকা পেপার ওয়েট টা এদিক সেদিক ঘুরাচ্ছে সীমান্ত। দৃষ্টি তার সামনে স্থির। মাথা ভর্তি দুশ্চিন্তা। ল্যাপটপের স্ক্রিনটা জ্বলছে। সেখানে একটা মেইল ওপেন হয়ে আছে। সেটাই এখন সীমান্তের চিন্তার কারণ। ঢাকায় ফেরা বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে। ঢাকায় ফিরেই সীমান্ত কিছু ব্যাক্তিগত কাজ শেষ করে গত দুইদিন হলো অফিসের কাজে মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু আজ ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যেটা তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সকালে অফিসে এসেই সীমান্ত অরণ্যর একটা মেইল পেয়েছে। যেখানে কিছু ব্যাক্তিগত সমস্যার কারণে রিজাইন করার কথা বলা হয়েছে। আর সেটাতেই সে বড়ো রকমের একটা ধাক্কা খেয়েছে। কারণ তার সীমান্ত প্রোডাকশন হাউজ মূলত অরণ্যর জন্যই চলতো। এখন অরণ্য যদি না থাকে তাহলে সেটা আর কোনভাবেই চলবে না। সীমান্তের জন্য এটা বেশ সমস্যার কারণ। হুট করে এমন অরণ্যর রিজাইন করার কারণটা সে স্পষ্ট করে না বললেও সীমান্ত কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে। সারিয়া এইসব কিছুর মূল কারণ। সারিয়ার প্রতি অরণ্যর দুর্বলতা সীমান্তের চোখ এড়ায় নি। সীমান্ত তাকে নিয়ে কি ভাবে সেটাও অরণ্য জানে। অরণ্যর এই সিদ্ধান্ত সীমান্তকে বিপদে ফেলার কৌশল মাত্র।

— স্যার এখন ঠিক কি করবেন? আমাদের তো অনেক কাজ অর্ধেক পড়ে আছে। আর প্রায় সব ক্লায়েন্ট অরণ্য কে দিয়ে কাজ করাবে বলেই এসেছিল। কিন্তু অরণ্য থাকবে না এটা জানতে পারলে কেউ আর এগুতে চাইবে না।

শিহাবের কথা শুনে সীমান্ত চোখ বন্ধ করে ফেললো। একটু ভেবে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল
— ভাবতে হবে কিছু একটা। তুমি এখন তোমার কাজে যাও। আমি দেখছি।

শিহাব উঠে গেলো। সীমান্তের মাথাটা গরম হয়ে আছে। এখন কিছুই ভাবতে পারছে না সে। তার মাথাটা ঠান্ডা করা দরকার। মুচকি হেসে ফোনটা তুলে নিলো। সারিয়ার নাম্বারে ফোন দিলো। প্রথমবার রিং হয়ে কেটে গেল। একটু ভেবে আবারও ফোন দিলো। কিন্তু দ্বিতীয়বার ফোনটা কেটে দিলো সারিয়া। সীমান্ত রেগে গেলো। সে আবারও ফোন দিতেই দেখলো নাম্বার বন্ধ। রাগটা এবার জেদে পরিণত হয়ে গেলো। শব্দ করে ফোনটা টেবিলে রেখে দাতে দাঁত চেপে বলল
— আমাকে ইগনোর করে ভুল করছো। তুমি আমাকে এখনো ঠিকঠাক চিনে উঠতে পারোনি। আমি যা চাই তা হাসিল করেই ছাড়ি। তুমি খুব ভুল করে ফেলেছো। এতদিন আমার ধৈর্য দেখেছো। এখন আমার অন্যরূপ দেখবে।

কথাটা শেষ করেই ফোন করলো একটা নাম্বারে। ফোন করেই বলল
— সারিয়ার বাবাকে আমার অফিসে নিয়ে আসো। এখনই। বলবে খুব জরুরী কাজে আমি ডেকেছি।

ফোনটা কেটে হেসে উঠলো। বলল
— এখন তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে আমি কি জিনিস।

————-
থমথমে পরিবেশ। সীমান্ত ঝিম মেরে বসে আছে। কোন কথা বলছে না। সারিয়ার বাবা বেশ কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সীমান্ত কে তিনি আজই প্রথম দেখছেন। এখানে এসেই জানতে পেরেছেন যে সারিয়া আর সীমান্তের পরিচয় কিভাবে হয়েছে। কিন্তু সীমান্তের তাকে এভাবে ডেকে আনার বিষয়টা এখনো স্পষ্ট নয়। আগ বাড়িয়ে বলতেও পারছেন না কিছু। অনেক টা সময় পর সীমান্ত নিরবতা ভেংগে বলল
— আপনার মেয়ে সম্পর্কে কিছু কথা বলতে আপনাকে এখানে ডেকেছি। কথাটা যদিও বা আমি বাসায় গিয়েই বলতে পারতাম। তবুও আমার কাছে মনে হয়েছে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আপনার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা বলে নেয়া দরকার।

সারিয়ার বাবার দৃষ্টি আরো গভীর হলো। তিনি কৌতূহল নিয়ে বললেন
— কি এমন কথা বলবে বাবা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। সারিয়ার কি হয়েছে?

সীমান্ত মৃদু হাসলো। বলল
— আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। তাই আর সময় নষ্ট করতে চাই না। আপনার মেয়ে সারিয়া কে আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনার অনুমতি থাকলে আমি বিয়ে করতে চাই। আমার মনে হয়েছে সবার আগে আপনার সাথে কথা বলা উচিৎ। তাই আপনাকে এখানে আনা। কিছু মনে করেন নি তো আঙ্কেল?

সারিয়ার বাবা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন। সীমান্ত কি বলল সেটা যেনো তিনি বুঝতেই পারেন নি। অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বললেন
— সারিয়া কে বিয়ে করবে?

সীমান্ত লাজুক ভঙ্গিতে হাসলো। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল
— জি। আপনি সম্মতি দিলে তবেই।

সারিয়ার বাবার চোখ ঝলমল করে উঠলো। মনের মাঝে এক অদ্ভুত রকমের আকাঙ্খা তৈরি হলো। এতো বড়ো একজন মানুষ। এতো টাকার মালিক। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করবে বিষয়টা ভাবতেই কেমন যেনো অনুভূতি হলো। লোভটাও সংবরণ করতে পারলেন না তিনি। তাই কোন কিছু না ভেবেই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললো
— কি বলছো বাবা! তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও। এটাই তো আমার জন্য সৌভাগ্য। আমার আবার কি সম্মতি। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না যে তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও।

সীমান্ত হেসে ফেললো। বলল
— এভাবে বলবেন না আঙ্কেল। আপনার মেয়ে যথেষ্ট ভালো। তাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। তাহলে আমি ধরে নিচ্ছি আপনার অনুমতি আছে।

সারিয়ার বাবা হেসে মাথা নাড়লো। বলল
— ধরে নিচ্ছো কি অবশ্যই অনুমতি আছে।

সীমান্ত খুব শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। সে যেনো জানতো সারিয়ার বাবা একবারেই রাজি হয়ে যাবে। তাই খুব সাভাবিক ভাবেই বলল
— আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আমি কাল আপনাদের বাসায় আসবো আমার মাকে নিয়ে। সারিয়া কে আংটি পরিয়ে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলবো। আসলে মা চায় খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা শেষ করতে।

সারিয়ার বাবা একটু চিন্তিত হয়ে বললেন
— কালই আসবে। কিন্তু প্রস্তুতির একটা ব্যাপার আছে।

সীমান্ত আশ্বাসের সুরে বলল
— কোন প্রস্তুতির দরকার নেই আঙ্কেল। আসলে আমার মা চান না খুব একটা জাকজমক ভাবে অনুষ্ঠান হোক। তবে সারিয়ার মতামত এখনো জানতে পারলাম না। সে আদৌ এই বিয়ে করতে চায় কি না। জানতে পারলে ভালো লাগতো।

সারিয়ার বাবা বেশ উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো
— ওসব নিয়ে তুমি ভেবো না বাবা। আমি আছি তো। আর আমার দুই মেয়ের কেউ আমার কথার অবাধ্য নয়। আমি যা সিদ্ধান্ত নেবো সেটাই তারা মাথা পেতে নেয়। তাহলে তুমি কাল তোমার মাকে নিয়ে চলে আসো। আমি সারিয়ার সাথে রাতেই কথা বলে সব ঠিক করে ফেলবো।

সীমান্ত খুশি হলো। দুজন আরো কিছুক্ষণ কথা বলল। সারিয়ার বাবা বিদায় নিয়ে চলে গেল। তিনি বের হয়ে যেতেই সীমান্ত শব্দ করে হেসে উঠলো। নিজে নিজেই বলল
— আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে তুমি ভুল করেছো অরণ্য। আমি তোমাকে কিভাবে সেটার শাস্তি দেবো এখন তুমি সেটাই দেখবে। আমাকে এতো হালকা ভাবে নেয়া তোমার উচিৎ হয়নি।

—————-
রাতের খাবার শেষ করে বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অরণ্য। তার পেছনে কেউ অনেকক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছে সেটা খেয়াল করে নি। ঘাড়ে স্পর্শ পেয়েই চমকে তাকাল পেছনে। আফিয়া মৃদু হেসে বলল
— এতো বিভোর হয়ে কি ভাবছিলে?

অরণ্য আবারও আকাশের দিকে তাকাল। মৃদু সরে বলল
— সময় কত তাড়াতাড়ি চলে যায় তাই না?

আফিয়া উত্তর না দিয়ে হেসে ফেললো। তার হাসিতে অরণ্য বেশ বিরক্ত হলো। ভ্রু কুচকে বলল
— এভাবে হাসছিস কেনো?

আফিয়া কোন রকমে হাসি থামিয়ে বললো
— এবার বুঝেছি কি ভাবছিলে।

— কি ভাবছিলাম?

অরণ্য হাত গুজে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করতেই আফিয়া বলল
— যাকে সময়ের সাথে ফেলে এসেছো তাকে নিয়েই ভাবছিলে। আর এতো ভেবে কি হবে? অনেক তো হলো। এবার তো কিছু করো।

অরণ্য অন্যমনস্ক হয়েই বললো
— কি করবো?

— বিয়ে করো।

অরণ্য আফিয়ার দিকে তাকাল। সাভাবিক ভাবেই বলল
— যাকে বিয়ে করবো তার মতামত টাও তো প্রয়োজন তাই না?

— মানে কি? তুমি এতদিনেও তার সাথে কথা বলনি?

আফিয়ার কথা শুনে অরণ্য হতাশ শ্বাস ছাড়লো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
— বলিনি। তবে খুব তাড়াতাড়ি বলবো।

আফিয়া মাথায় হাত দিয়ে বলল
— এই তাড়াতাড়ি সময়টা কি আদৌ আসবে ভাইয়া? আমি দুর দূরান্ত পর্যন্ত কোন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।

অরণ্য হাসলো। বলল
— দেখতে পাবি। খুব বেশি দেরি নাই। দুই একদিনের মধ্যেই দেখতে পাবি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here