ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -১৯+২০

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৯

মেডিক্যালের মেইন গেইটে সাংবাদিক সহ পুলিশের দল ভীর করে আছে । ভার্সিটির নবীন মেয়েরা ‘মানব বন্ধন ‘
করছে । ওদের মানব বন্ধনের কারন – একটা মেয়ে প্রথমদিন মেডিক্যালে পা রাখতেই সিনিয়র ছেলে মেয়েদের হাতে কোনো কারন ছাড়াই মার খেল । কেন ?? কি অপরাধ ছিল মেয়েটার ??

আর ভরা ক্যাম্পাসে যখন বিনা কারনে মেয়েটাকে মারধর করছিল , কোনো মেয়ে সেই মেয়েটাকে বাঁচাতে না গিয়ে উল্টো সেই মূহুর্ত গুলো ভিডিও করে নেটে পাবলিশড করলো । কেন ?? কি অপরাধ ছিল মেয়েটার ??

ক্যাম্পাসে এরকম কয়েকশত প্রশ্ন নবীনদের । যারা মেয়েটাকে মারল তাদের কাছে প্রশ্ন !!

ওদের এই মানব বন্ধনের কারন জানতে সাংবাদিকদের ভীড় আর ওদের শান্ত করতে পুলিশের ভীড় ।

ফাহিম , তাসিন , আয়মান একে একে সবাইকে কল করতে করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছে ।

খবর জানতে পেরে জিব্রান অফিসের সব কাজ ফেলে বাইক নিয়ে র‌ওনা হয়েছে হসপিটালের দিক ।

ঐদিকে আধিরা আনজুম মিলি রহমান কে নিয়ে হসপিটালের দিকে যাচ্ছে ।

প্রেনা ওর মাকে সাথে নিয়ে হসপিটালের দিকে যাচ্ছে ।

আবরন ও.টি রুমের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে পূর্ণতার অবস্থা জানার জন্য । ওর মাথায় কিছুই কাজ করছে না , কি করে হলো এসব !! আর কেন‌ই বা হলো ??

ওর সামনে অনেকগুলো প্রশ্ন যার কোনোটার উত্তর ওর জানা নেই । এই মূহুর্তে আগে পূর্ণতার অবস্থা জানা জরুরি ।

নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে নিচে পড়ছে । পূর্ণতা কে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে থাকতে দেখতে হবে সেটা আবরন স্বপ্নেও ভাবে নি ।

এর‌ই মধ্যে একে একে সবাই চলে এসেছে হসপিটালে ।
ফাহিম , তাসিন আর আয়মান আবরনকে সামলাচ্ছে আর ওদিকে জিব্রান মিলি রহমান কে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাদছে । মিলি রহমান‌ও কাদছে । আধিরা আনজুম চোখের পানি লুকিয়ে মিলি রহমানকে স্বান্তনা দিতে ব্যস্ত ।

প্রেনাও ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে কেদেই যাচ্ছে ।

এর‌ই মধ্যে ডাক্তার বেরিয়ে এলেন ও.টি রুম থেকে । আবরন চোখের পানি মুছে ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করল ,

– পূর্ণতা ঠিক আছে তো ?? ওর কিছু হয় নি তো ?? বলুন !! চুপ করে আছেন কেন ??

জিব্রান দৌড়ে ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করল ,

– বলুন , আমার বোন কোথায় ?? ওর কি হয়েছে ?? কেমন আছে ও এখন ??

সবাই ডাক্তারের মুখে উত্তর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ।
অবশেষে ডাক্তার জবাব দিলেন ,

– she is now out of danger . কিন্তু মাথা এবং ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছে । আর শরীর থেকে অনেক ব্লাড বেরিয়ে যাওয়াতে ব্লাড দিতে হয়েছে । আর যেখানে যেখানে কেটেছে সেখানে সেলাই পড়েছে । তবে চিন্তার কোনো কারন নেই । নিয়মাবলী মেনে চললে দ্রুত সুস্থ‍্য হয়ে যাবে ।

জিব্রান বলল ,

– আমরা কি ওর সাথে দেখা করতে পারি ??

– এখন তো ওর জ্ঞান নেই । তবে ওকে বেডে দিলে দেখা করতে পারবেন । ফর্মালিটিজ গুলো পূরন করে বেড এর ব্যবস্থা করুন , আমরা ট্রান্সফার এর ব্যবস্থা করছি ।

জিব্রান গেল ফর্ম পূরন করতে ।

আবরন এক রাশ রাগ নিয়ে বলল ,

– আমি পূর্ণতার সামনে ততক্ষন যাবো না যতক্ষন না এই সমস্যার সমাধান করতে পারছি । ফাহিম , তাসিন , আয়মান চল আমার সাথে ।

এই বলে আবরন ওদের নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল ।

……………………………………………..

আবরন প্রথমেই মেডিক্যালে গিয়ে নিজের পার্সোনাল রুমটা তে বসে সিসিটিভি ফুটেজ অন করে পূর্ণতা কে কারা মেরেছে তা দেখে ওদের বায়োডাটা চেক করে ওর দলবলের মাধ্যমে ওদের খুঁজে বের করে ওর রুমে নিয়ে আটকিয়েছে ।

– বল কি কারনে মেরেছিস ওকে ??

মেয়েটা বলল ,

– আমাদের যা বলার আমরা থানায় জানিয়েছি আবরন ভাই । আপনাকে আবার রিপিট করতে বাধ্য ন‌ই ।

আবরন চেচিয়ে বলল ,

– আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাই নি । বলবি নাকি মেডিক্যাল থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করবো ?? আমি চাইলে কি কি করতে পারি তা নিশ্চয়ই জানিস ?? কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজি বল কেন ভরা ক্যাম্পাসে একটা নতুন আগত মেয়েকে মেরে হসপিটালে পাঠালি ?? কেন ওকে নেটে ভাইরাল করলি ?? বল !!!

মেয়েটা আবরনের এই রূপ দেখে কাপতে কাপতে বলল ,

– ঐ মেয়েটা একটা লম্পট , বেহায়া আর ফাজিল । মেডিক্যাল এর অনেক ছেলেদের সাথে ফেইক রিলেশন করে হাজার হাজার টাকা মেরে নিয়ে ব্লক মেরে উধাও হয়ে গিয়েছে । কিন্তু পালিয়ে আর যাবে কোথায় !! মেডিকেল এ যখন ভর্তি হয়েছে একবার হলেও তো আসতে হতো !!

– কি প্রমাণ আছে যে ও ই টাকা মেরেছে ??

মেয়েটা হেসে বলল ,

– যাদের টাকা মেরেছে তাদের ডেকে আনুন না !!

আয়মান বলল ,

– তাদের তো ডাকবোই । কিন্তু তুই ও এখানে থাকবি । যতক্ষন না সত্য ঘটনা জানতে পারছি কোথ্থাও যেতে পারবি না ।

এর‌ই মধ্যে ফাহিম এসে বলল ,

– আবরন । সবাই তো নেটে অনেক বাজে বাজে ক্যাপশন দিয়ে ঐ ভিডিও টা ভাইরাল করছে । এইভাবে ভিডিও ভাইরাল হতে থাকলে তো সমস্যা ।

আবরন বলল ,

– পূর্ণতার মোবাইলটা হসপিটালে গিয়ে কালেক্ট কর ।

ফাহিম চলে গেল মোবাইল আনতে ।

তাসিন দৌড়ে এসে বলল ,

– আবরন !! পুলিশ তো প্রমান সব পূর্ণতার বিপক্ষে পেয়েছে । ওকে নাকি এরেস্ট এর নোটিশ দিয়েছে ।

– জলদি চল । থানায় যেতে হবে ।

আয়মানকে রেখে আবরন তাসিনকে নিয়ে থানায় গেল ।

থানায় ঢুকতে যেতেই মিডিয়ার এক ঝাক লোক ওর ইনট্রো নিতে ঝাপিয়ে পড়ল ।

– আপনি তো মেডিক্যাল এর ভিপি !! মিসেস পূর্ণতা জামানের সম্পর্কে আপনি কি জানেন !!

– আপনি কি মনে করেন এই ঘটনায় মেডিক্যাল ছাত্রী মিস পূর্ণতা জামান সরসরি জড়িত ??

– স্যার , স্যার । পূর্ণতা ম্যাডাম আপনার কি হয় ?? ভরা ক্যাম্পাসে উনাকে কোলে তুলে হসপিটালে নিয়ে যেতে দেখা যায় আপনাকে !! আপনার কি মতামত ।

– পূর্ণতা নামের মেয়েটা নাকি চরিত্রহীন , লম্পট মেয়ে । আপনার মতামত কি স্যার ??

আবরন রেগে বলল ,

– সড়ুন আপনারা । আপনাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে আমি এখন বাধ্য ন‌ই ।

আবরন ভীড় ঠেলে তাসিনকে নিয়ে থানার ভিতরে ঢুকে সরাসরি ওসির রুমে গিয়ে বলল ,

– আদনান আঙ্কেল । আমি এক্ষুনি সব ঘটনা শুনতে চাই । আপনি আমার বেয়াদবি মাফ করে দয়া করে সমস্ত ঘটনা আমাকে এক্ষুনি খুলে বলুন । পূর্ণতাকে গনপিটুনির পর‌ও কেন আপনারা এরেষ্ট করার চিন্তা করেছেন ?? ওর কি দোষ ??

– আবরন বাবা শান্ত হ‌ও । পানি খাও আগে , মাথা ঠান্ডা করো ।

– আমি সব শুনতে চাই । আপনি বলুন ।

ওসি আদনান ইসলাম বললেন ,

– মিস পূর্ণতা জামানের বিরুদ্ধে সাইবার
অপরাধের মামলা আছে । এবং আমরা সাইবার অফিস থেকে চেকআপ করে জানতে পারি মিস পূর্ণতার ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছেলের সাথে হ‌ওয়া কথোপকথন । উনি বিভিন্ন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে তাদের থেকে টাকা নিয়েছে আর টাকা নিয়েই তাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে । গত এক মাসে উনি প্রায় ২৬ জনের সাথে চ্যাটিং এর মাধ্যমে কথা বলে তাদের বিভিন্ন ভাবে ফাদে ফেলে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । ওরা ২৬ জন‌ই মেডিক্যাল এ পড়ুয়া ছাত্র । সবাই কোনো ভাবে জানতে পারে যে এরকম ঘটনা ওদের সবার সাথেই ঘটেছে তখন বুঝতে পারে মিস পূর্ণতা জামান একজন ধান্দাবাজ যে এক‌ই মেডিক্যাল এ পড়ে । তাই ওরা ক্ষেপে গিয়ে নিজেরা না মেরে ওদের বান্ধবী – বোন – কাজিন দিয়ে ওকে মেরেছে । এসব কিছুই এখন প্রমাণিত মিষ্টার আবরন চৌধুরী । আমাদের উপর থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে মিস পূর্ণতা জামানকে গ্ৰেফতার করার জন্য । আশা করি , আপনি সব বুঝতে পেরেছেন ।

আবরন শক্ত পাথরের মতো বসে সব কথা হজম করছিল । সব শুনে ওর বুঝতে বাকি র‌ইল না আসল ঘটনা কি !!

আবরন বলল ,

– আদনান আঙ্কেল ! আমার জাষ্ট ২৪ ঘন্টা সময় চাই । আমি প্রমাণ করে দেব যে পূর্ণতা নির্দোষ !!

– সেটা তুমি উকিল দিয়ে কোর্টে আপিল করতে পারো । কিন্তু আমাদের কাজ তো আমাদের করতেই হবে । আমাদের হাতে পূর্ণতা জামানকে গ্ৰেফতার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ।

আবরন রক্ত চক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল ,

– আপনারা কি তদন্ত করেছেন যে একদম উঠে পড়ে লেগেছেন ওকে গ্ৰেফতার করার জন্য ?? ওর ফোনটা কালেক্ট করতে পেরেছেন ?? নাকি ঐ দেড় লাখ টাকা ওর কাছে পেয়েছেন ?? ঐ ২৬ জনের একজনের সাথেও কি ও সরাসরি দেখা করেছেন ??
কিভাবে টাকা নিয়েছে সেটা জানেন ?? কোন নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছে সবাই সেই নাম্বারটা কার জানেন ?? সেই নাম্বারটা খোলা নাকি বন্ধ তা জানেন ?? সিমের লোকেশন ট্র‍্যাক করেছেন ??

করেননি তাই না ?? আপনাদের কাজ শুধু সবার মুখের বানী শুনে তাকে গ্ৰেফতার করে জেলে ভর্তি করা নয় । ভালো করে তদন্ত করাটাও উচিত । আপনি সাইবার অফিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে আইডি টা পূর্ণতার । কিন্তু এটা কি হতে পারে না ওর আইডি কেউ হ্যাক করে এসব কাজ করে ওকে ফাসাচ্ছে ??

আপনাদের দিয়ে এসব হবে না ভালোই বুঝতে পারছি । কিন্তু আমি আজ‌ই প্রমাণ করে দিব পূর্ণতা জামান নির্দোষ !! আর আসল অপরাধীকেও আপনাদের সামনে , মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসবো । আর যদি তা আমি না পারি তাহলে আজ যত আঘাত পূর্ণতা পেয়েছে , যতটা অপমানিত হয়েছে ভরা ক্যাম্পাসে তা সুদে আসলে মিটিয়ে নেব আসল অপরাধীর কাছ থেকে ।
ভালো থাকবেন । চল তাসিন ।

আবরন এই বলে বেরিয়ে গেল থানা থেকে ।

তাসিন বলল ,

– ফাহিম ফোন নিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছে ।

– ঠিক আছে ।

ক্যাম্পাসে পৌঁছে ই আবরন ফাহিমের থেকে পূর্ণতার ফোনটা নিয়ে দেখল ফেসবুক লগ আউট করা । আর ম্যাসেঞ্জারে ওপর ১০০+ উঠে আছে । আবরন লগ ইন এ ক্লিক করতেই কোনো পাসওয়ার্ড চাইলো না সরাসরি ফেসবুক এ প্রবেশ করে গেল আর ফেসবুক থেকে মেসেঞ্জারে প্রবেশ করতেই শতাধিক ম্যাসেজ ভেসে উঠলো ।

আবরন সব টাইপিং ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল প্রতিটা টাইপিং হুবহু জলের সাথে মিলে যাচ্ছে ।

আয়মান বলল ,

– জল এত নিচে নেমেছে ?? ছি, ছি ,ছি ।

– এক্ষুনি ও কোথায় আছে আমাকে জানা ফাহিম !!

তাসিন বলল ,

– আমি শুনেছি ও নাকি হোষ্টেলে ওর মতোই শাকচুন্নি দের সাথে নিয়ে পার্টি করছে ।

আবরন রেগে বলল ,

– চল । করাচ্ছি ওর পার্টি । আর ঐ মেয়েটাকে ছেড়ে দে । ওর আর এখানে থেকে কাজ নেই ।
আর তাসিন তোকে আরেকটা কাজ করতে হবে । ঐ ২৬ জন ছেলে কোন মাধ্যমে টাকা গুলো দিয়েছে আমার সেই ডিটেইলস চাই । বিকাশ নাম্বার হলে সেটা নিয়ে আসবি আর ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার হলেও সেটা নিয়ে আসবি ।

তাসিন বলল ,

– এই জন্য আমাকে যেতে হবে না । ঐ ২৬ জনের ফোন নাম্বার আছে আমার কাছে । আমি তোকে এক্ষুনি ডিটেইলস জেনে বলছি ।

১০ মিনিটের মধ্যে তাসিন সমস্ত ডিটেইলস দিল ।

– বিকাশ নাম্বার‌ও দিল আর কেউ কেউ নগদ নাম্বার‌ও দিল ।

আবরন বলল ,

– কল দে এই নাম্বারে ।

তাসিন কল দিয়ে দেখল ফোনটা সুইচড অফ বলছে ।

আরেকটা নাম্বার এ কল দিয়েও দেখল ঐ নাম্বার ও অফ ।

তাসিন বলল ,

– সুইচড অফ দুই নাম্বার‌ই ।

আবরন বলল ,
– লাষ্ট লোকেশন ট্র‍্যাক কর ।

তাসিন বলল ,

– এটা আমার কাজ না । এই কাজ আমার কাজিন ভালো পারে ।

ফাহিম বলল ,

– আনাস ??

– হা । আনাসকে বলতে হবে ।

আবরন বলল ,

– ওকে বল আমি বলেছি । জলদি লোকেশন ট্র্যাক করে দিতে হবে ।

তাসিন আনাসকে কল করতেই আনাস কিছু ডিটেইলস জেনে লোকেশন ট্র্যাক করে ২০ মিনিটের মধ্যে ম্যাসেজে লোকেশন পাঠিয়ে দিল ।

তাসিন বলল ,

– লোকেশন তো গার্লস হোষ্টেলের দিকেই ।

আবরন বলল ,

– তাহলে আর কি ?? জলদি চল ।

তাসিন , ফাহিম আর আয়মান কে সাথে নিয়ে আবরন গেল মেডিক্যাল এর গার্লস হোস্টেলের দিকে ।

– চাচা , আজ প্রথম আমি গার্লস হোষ্টেলে ঢোকার পার্মিশন চাইছি । তোমার কিছু বলার আছে ??

হানিফ চাচা হেসে বলল ,

– আরে না , আফনের উপরে ভরসা আছে আমার । আফনে নিশ্চয়ই জরুরি ভিত্তিতে আইছেন । আফনে যান কোনো সমস্যা নাই ।

– শুধু আমি না । আমরা সবাই যাবো ।

– আইচ্ছা । যান ।

আবরন সবাইকে নিয়ে জলের রুমের সামনে গিয়ে নক করতেই একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল । ফাহিম পেছন থেকে ক্যামেরা অন করে ডিডিও করছে ।

আবরন মেয়েটাকে বলল ,
– পার্টি করছো ? আমাদের ইনভাইট করো নি তাই নিজেরাই চলে এলাম !

মেয়েটা হেসে বলল ,

– আপনি এসেছেন এটা জানলে তো জল খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে ।

– তাই নাকি ?? কোথায় জল ??

– ঐ তো পার্টি করছে ।

আবরন সোজা ভেতরে ঢুকে গেল । ওর পেছন পেছন তাসিন , আয়মান আর ফাহিম‌ও ভেতরে ঢুকলো ।

জল আবরনকে দেখে নাচা বন্ধ করে বলল ,

– stop the music ..

গান বন্ধ করতেই জল আবরনকে বলল ,

– এখানে কেন এসেছো বেবি ?? আমাকে বললেই পারতে , আমিই চলে যেতাম ।

আবরন বলল ,

– জল আমার কিছু টাকা চাই । আমি একটা বিপদে পড়েছি ।

– কি বিপদ বেবি ?? কত টাকা লাগবে বলো ??

– দেড় লাখ লাগবে । ১ লাখ দিলেও চলবে ।

– ওহ । আমার কাছে তো টাকা একটু আগেও ছিল , মাত্র‌ই ব্যাংকে রেখে এসে পার্টিতে জয়েন হলাম ।

– তোমার কাছে এত টাকা কোথা থেকে এলো ??

– ইয়ে মানে , মামা পাঠিয়েছে ।

– আমার বাবা ??

– হ্যা হ্যা , মামাই তো পাঠালো ।

– বাবা হঠাৎ তোমাকে এতো টাকা কেন পাঠালো ??

– ঐ কিছু ব‌ই লাগতো আর কি ??

– কিছু ব‌ই কিনতে বাবা তোমাকে দেড় লাখ টাকা পাঠালো ??

– তুমি এভাবে কেন বলছো বেবি ??

আবরন কিছু না বলে সরাসরি শাদমান চৌধুরী কে কল দিল ,

– ভালো আছো বাবা ??

– এত দিন পর কি মনে করে ফোন দিলে ??

– তুমি কি জলকে টাকা পাঠিয়েছো ??

– না তো । কেন ?

– না এমনি । পরে কথা বলছি । রাখি ।

ফোনটা কেটে আবরন জলকে বলল ,

– কি ?? বাবা তো বলছে সে কোনো টাকা পাঠায় নি । কে দিল তোমায় এতো টাকা ??

জল থতমত খেয়ে বলল ,

– ইয়ে মানে ……

আবরন রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে জলকে স্বজোরে গালে থাপ্পড় দিল । জল চিৎকার বলল ,

– আবরন !!!

– চুপ । একদম চুপ । তোমার ঐ মুখে আমার নাম তুমি নেবে না ।

তারপর ওর চুলির মুঠি ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল ,

– চলো , থানায় চলো !!

জল ব্যথায় কুকিয়ে বলল ,

– ছাড়ো আমার চুল !! টাকা তো বাবা পাঠিয়েছে !!

তাসিন বলল ,

– তোমার মা বুঝি আরেকটা বিবাহ করে তোমাকে টাকা দেওয়ার জন্য নতুন বাবা বানিয়ে এনেছেন !!

আবরন বলল ,

– আর কত মিথ্যা বলবে । চলো থানায় !!

থানায় গিয়ে আবরন সমস্ত সাক্ষী দিল যে পূর্ণতার ফোনটা জলের কাছে কিভাবে গিয়েছিল , তারপর পূর্ণতার ফোনটা জল ফেরত দিলেও পূর্ণতার ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে জল নিজের ফোনের মাধ্যমে এসব কাজ করেছে । যে নাম্বার গুলোতে ঐ ২৬ জন টাকা পাঠিয়েছে ঐ নাম্বার গুলোও জলের বান্ধবীদের । আর ঐ টাকা জলের ব্যাংক একাউন্টেই আছে । আর ওকে হাতে নাতে ধরার ভিডিও ফুটেজ ও ফাহিম থানায় দিয়েছে । ২য় বার সাইবার অফিসে এসব তথ্য পাঠিয়ে তারা জানায় যে এসব চক্রান্ত আসলে জলের । পূর্ণতা জামান নির্দোষ ।

আবরন ওসির সাথে কথা বলে শর্ত মোতাবেক জলকে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরার অনুরোধ করলো যেন পূর্ণতার উপর থেকে বরাবরের মতো এই অভিযোগ উঠে যায় ।

জলকে মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে দেখে জলের মা শাকিলা ইয়াসমিন দৌড়ে গিয়েছেন শাদমান চৌধুরীর কাছে ।

শাদমান চৌধুরী শাকিলা ইয়াসমিনকে নিয়ে থানায় এসে আবরনকে বলল ,

– এসব কি হচ্ছে আবরন ??

– কি হচ্ছে বলছো বাবা ?? এত কিছুর পরেও তোমার লজ্জা করলো না থানায় আসতে !! ছি ছি ছি বাবা ।

জল কান্না কাটি করে শাকিলা ইয়াসমিন আর শাদমান চৌধুরী কে বলল ,

– এসব আমাকে ফাসানোর চক্রান্ত মামা !! বিশ্বাস করো !!

এর‌ই মধ‍্যে থানার বাহিরে প্রেনা সহ মেডিক্যাল এর সমস্ত নবীনদের আগমন ঘটল । সেই সাথে মিডিয়াও হাজির ।

প্রেনা মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল ,

– তোমাকে বিশ্বাস করতে বলছো আপু ?? কে করবে তোমাকে বিশ্বাস ?? আমাদের কাছে সমস্ত প্রমাণ আছে তোমার বিরুদ্ধে যে তুমিই এসব কাজ করেছো ।

তুমি সেদিন অনুষ্ঠান শেষে পূর্ণতার ফোন নিয়ে নিয়েছিলে তার ভিডিও রেকর্ড আছে আমাদের কাছে । তুমি পূর্ণতার ফেসবুক ওপেন করে পূর্ণতাকে না জানিয়ে ওর পাসওয়ার্ড বদলেছো তার কপি আছে সাইবার ডিপার্টমেন্ট এর কাছে । তুমি পূর্ণতার আইডি থেকে যা যা কথা বলেছো সব টাইপিং তোমার টাইপিং এর সাথে ম্যাচ করেছে । যে নাম্বার গুলোতে প্রতি নিয়ত টাকা এসে জমা হয়েছে সেই নাম্বার গুলো তোমার‌ই দুই বান্ধবীর । তোমার বান্ধবীদের থেকেই সত্যি জানা গিয়েছে । তোমার ব্যাংকে যে দেড় লাখ টাকা আছে সেটাই সেই ধান্দাবাজির টাকা । সব করলে তুমি আর গণপিটুনি খেয়ে হসপিটালে ভর্তি আমার বান্ধবী পূর্ণতা !!

হ্যা , পূর্ণতা জামানকে না জেনে বুঝে এতটাই বাজে ভাবে মারা হয়েছে যে ওর ঘাড় এবং মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে । শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে গিয়েছে । প্রতিটা কাটা অংশে সেলাই পড়েছে । এতটা রক্তাক্ত করা হয়েছে আমার অবুঝ বান্ধবী কে যে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত ডোনেট করতে হয়েছে । এই অবস্থায়‌ও ওকে পুলিশ গ্ৰেফতার করতে একবার‌ও পিছপা হয় নি ।

আর এখন যখন মিডিয়ার সামনে আসল অপরাধী ধরা পড়ল !! এখন সেই রক্তাক্ত করার মানুষ গুলো ক‌ই ?? এখন কেন আসল অপরাধীকে মারধর করছো না তোমরা ??? এটাই তোমাদের বিচার ??

তোমরা যারা পূর্ণতা কে মেরেছো !! তোমরা শুধু আজকে ওকে ভরা ক্যাম্পাসে মারোই নি ওর লাইফটাও সেই সাথে হেল করে দিয়েছো । ভাইরাল করে দিয়েছো ওকে নেটের মাধ্যমে !! ওকে রাস্তায় দেখলে সবাই ছি ছি করবে !! ওর জীবনটা শেষ করে দিয়েছো তোমরা !! তোমরাও অপরাধী জল আপুর মতো , এক‌ই সমান অপরাধী !! তোমাদের‌ও শাস্তি পেতে হবে তা নাহলে আজ আমরা নবীনরা কথা দিচ্ছি তোমরা সিনিয়র হতে পারো কিন্তু আমাদের হাত থেকে নিস্তার পাবে না ।

প্রেনা ক্যামেরার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল ,

– আমাকে আর কত দেখাবেন , অপরাধীর চেহারাও দেখান । এই ভিডিও আরো বেশি হারে ভাইরাল হ‌ওয়া দরকার তানাহলে আমাদের পূর্ণতা ই সবার চোখে অপরাধী থেকে যাবে ।

আমি জাস্ট আর বলতে পারছি না । এক্সকিউজ মি !!

প্রেনার চোখের পানি আটকাতে না পেরে কাদতে কাদতে বসে পড়ল । সবার চোখে পানি । আয়মান গিয়ে প্রেনাকে টেনে তুলে ওকে স্বান্তনা দিতে লাগল ।

এর‌ই মধ্যে ভিড় ঠেলে জিব্রানকে ভেতরে আসতে দেখল আবরন ।

জিব্রান আবরনকে বলল ,

– খুব তো বলেছিলি আমার বোনকে দেখে রাখবি ?? কিন্তু তুই কি পেরেছিস ওকে দেখে রাখতে ?? আমার ফুলের মতো ফুটফুটে সুন্দর বোনটাকে এভাবে সবাই রক্তাক্ত করলো আবার অপরাধীও বানালো , নেটেও ভাইরাল করতে দেড়ি করে নি !! এখন আমার বোনের ভবিষ্যৎ কি আবরন ??

আর এই মেয়েটাকে তোর উচিত ছিল গণ ধোলাই খাওয়ানো তাহলে না বুঝতো !!

শাকিলা ইয়াসমিন বলল ,

– চুপ বেয়াদব !! আমার মেয়ে কিছুই করে নি । ভাইয়া , তুমি চুপ করে আছো কেন ?? ওদের বলো আমার জলকে মুক্ত করে দিতে !!

শাদমান চৌধুরী শাকিলা ইয়াসমিনের গালে স্বজোরে চড় মারলেন ।

– চুপ ! আর একটা কথাও বলবি না !! তুই ই খারাপ , তোর জন্য তোর মেয়ে আজ এমন হয়েছে । তোকে লাই দিয়ে মাথায় তোলাটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল । তুই আর তোর মেয়ে এত নিচে নামবি আমার জানা ই ছিল না । এখানে না আসলে হয়তো আমি সবাইকেই ভুল বুঝতাম আর তোদের‌ই সঠিক মনে করতাম । কিন্তু আজ এরা সবাই আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভুল গুলো দেখিয়ে দিল ।

শাকিলা ইয়াসমিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন ।

শাদমান চৌধুরী আবরনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল ,

– তুই যে এতটা বড় হয়ে গিয়েছিস আমি আসলে বুঝতেই পারি নি !! যা বাবা যা , আমার আর নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে যার দায়িত্ব মাথায় নিয়েছিস সেই দায়িত্ব টা আজ পরিপূর্ণ করে ফেল । আমি বলছি তোকে ।

আবরন শাদমান চৌধুরী কে ধরে বলল ,

– কি বলছো তুমি বাবা ??

শাদমান চৌধুরী জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– কি তোমার কোনো আপত্তি নেই তো ?? তোমার বোনের দায়িত্ব আমার ছেলের ঘাড়ে একেবারের মতো দিয়ে দেখো !!

জিব্রান আর আবরন দুইজন‌ই বোকা বনে গেল ।

শাদমান চৌধুরী মিডিয়াকে বলল ,

– এই চলুন আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? চলুন , চলুন, আমার সাথে চলুন ।

শাদমান চৌধুরী আবরন আর জিব্রানকে সাথে নিয়ে হসপিটালের দিকে র‌ওনা হলো । ওদের পেছনে পেছনে একদল মিডিয়ার গাড়িও রওনা হলো ।

আর পুলিশ জলকে গ্ৰেফতার করে নিল সমস্ত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে । #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২০

জ্ঞান ফিরতেই চোখ পিট পিট করে তাকায় পূর্ণতা । চারপাশের পরিবেশ দেখতে মাথা ঘোরাতে চেষ্টা করতেই ব্যথায় “আহ” করে কুকিয়ে উঠল ।

রুমে উপস্থিত নার্স পূর্ণতাকে বলল ,

– এখন কেমন লাগছে তোমার ?

পূর্ণতা নার্সের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আমি হসপিটালে কেন আপু ??

নার্স কি উত্তর দেবে ভেবে না পেয়ে বলল ,

– বাহিরে তোমার পরিবারের লোকজন দাঁড়িয়ে আছে । আমি ডেকে দিচ্ছি ।

এই বলে সে রুমের বাহিরে চলে গেল ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে মনে করতে চেষ্টা করছে কি হয়েছিল ওর সাথে ।

নার্স গিয়ে মিলি রহমান , আধিরা আনজুম আর প্রেনার মা ঈশিতা আলম কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– পেসেন্টের জ্ঞান এসেছে । আপনারা এখন দেখা করতে পারেন ।

মিলি রহমান বসা থেকে উঠে জলদি জলদি ভেতরে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল ,

– পূর্ণ মা !! কেমন আছিস ??

পূর্ণতা ভাবনা থেকে বের হয়ে মায়ের ডাকে সাড়া দিতে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল মিলি রহমান টলটলে চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ।

আধিরা আনজুম মিলি রহমানকে আস্তে করে কানে কানে বলল ,

– চোখের পানি ফেলিস না ওর সামনে , এমনিতেই ওর উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে । নিজের ইমোশন কে কন্ট্রোল কর ।

মিলি রহমান হালকা মাথা ঝাকালেন ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– কেমন আছিস মা ??

পূর্ণতা আস্তে করে বলল ,

– ভালো । তুমিও আছো দেখছি এখানে ?

আধিরা আনজুম পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ,

– আমাকে তুই পর মনে করিস তাই না ?? এইজন্য ভাবতে পারছিস না যে আমি তোর জন্য হসপিটালে আছি ।

পূর্ণতা নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আপু , আমার বেডটা উচু করে দিন না , আমার শুয়ে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ।

নার্স আরো একজন ওয়ার্ডবয়কে ডেকে পূর্ণতার কথা মতো বেডের মুড ঠিক করে দিয়ে ওকে বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে ওকে ধরে বসিয়ে চলে গেল ।

পূর্ণতা ঈশিতা আলম কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল ,

– আন্টি , কাছে আসতে ভয় পাচ্ছো ??

ঈশিতা আলম চোখের পানি মুছে কাছে এগিয়ে এসে বললেন ,

– ধুর , বোকা ! ভয় পাবো কেন ?? তোকে দেখে বুকটা কষ্টে ফেটে যাবে তাই কাছে আসতে পারছিলাম না ।

– তোমার মেয়ে কোথায় ?? আমাকে তো ভুলেই গিয়েছে তাই না ??
আর আম্মু ভাইয়া কোথায় ?? ভাইয়া ও এলো না ??
আর বাকি সবাই কোথায় ?? আমাকে সবাই ভুলে গিয়েছে তাই না ??

এর‌ই মধ্যে হৈ চৈ শোনা গেল । আধিরা আনজুম রুম থেকে বের হয়ে দেখলেন বাহিরে শাদমান চৌধুরী দাঁড়িয়ে । সাথে আবরন আর জিব্রান‌ও আছে । একটু পেছনে ফাহিম , তাসিন , আয়মান আর প্রেণা । আর একদম পেছনে লাইট , ক্যামেরা , মাইক নিয়ে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে ।
আধিরা আনজুমের বুঝতে বাকি র‌ইল না এরা মিডিয়ার লোক ।

আধিরা আনজুম পথ আটকে বললেন ,

– ঐখানেই দাঁড়াও শাদমান !! আর এক পা-ও এগোবে না । এখন মিডিয়া নিয়ে এখানে এসেছো কোন ধান্দায় ??

আবরন এগিয়ে এসে বলল ,

– আম্মু , ব্যাপারটা ওমন না যেমনটা তুমি ভাবছো ।

আধিরা আনজুম রেগে বললেন ,

– তুই চুপ কর । তোর বাবা এদের নিয়ে এখানে কেন এসেছে ?? চলে যেতে বল নাহলে আমি কিন্তু কিছু করে বসবো !!

জিব্রান এগিয়ে এসে বলল ,

– আন্টি , শাদমান আঙ্কেলকে ভুল বুঝবেন না । আঙ্কেল তো নিজের ভুল শুধরাতে মিডিয়া নিয়ে এসেছে ।

আধিরা আনজুম একটু মাথা ঠান্ডা করে বললেন ,

– মানে ??

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– আমাকে তুমি মাফ করে দিও আধিরা । শাকিলার কথা শুনে আমি আমাদের পরিবারের মাঝে অনেক ফাটল তৈরি করেছি । আমি বুঝি নি যে ও লাই পেয়ে এতোটা নিচে নামবে । আজ আমার লাই পেয়ে ও যতটুকু না নিচে নেমেছে তার চেয়ে বেশি নিচে নেমেছে ওর মেয়ে জল ।
হ্যাঁ , আধিরা , জল‌ই এই সকল সাইবার অপরাধের মূলে ছিল । ওর‌ জন্যই আজকে একটা নির্দোষ মেয়ে এত বড় শাস্তি পেল । ওর জন্যই আজকে একটা নির্দোষ মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো । ওর জন্য একটা মেয়ের হাজারো স্বপ্ন ভেঙে গেল ।

আমি এমন একটা মেয়েকে আমার ছেলের জীবনসাথী হিসেবে ঘোষণা করেছিলাম ভাবতেই আমার খারাপ লাগছে । আমাকে পারলে তুমি মাফ করে দিও । আসলে পরিবারে তৃতীয় ব্যক্তির কথা শুনে কখনোই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না । আমার আগে এই ব্যাপারে তোমার সাথে এবং আবরনের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল । আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আধিরা । তুমি আমাকে মাফ করে দিয়ে ঘরে ফিরে চলো । প্লিজ ‌।

আর আমি প্রমিজ করছি তোমার ছেলে যার জন্য আজ এত কিছু করলো তার জীবনের সব কালো দাগ আমি তুলে দেব । এই দায়িত্ব আমার । তুমি চিন্তা করবে না ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– কিভাবে তুলবে তুমি পূর্ণতার জীবনের কালো দাগ ??

– হয়তো আমি ওর কষ্ট গুলো মুছতে পারবো না কিন্তু আমি ওর ভবিষ্যত জীবনগুলোতে অন্য কোনো দাগ লাগতে দেব না এই বিষয়ে । কারন ও বরাবর‌ই নির্দোষ । এটা প্রমাণ করতে আমি মিডিয়া সাথে নিয়ে এসেছি । আমাদের সকলের কথা এবং পূর্ণতার সকল কথা ওরা লাইভ ভিডিও তে প্রচার করবে যেন সবাই সঠিকটা জানতে পারে । আর আসল অপরাধীর বিষয়টা ইতোমধ্যে নেটে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে । আর আমি সাইবার ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলে যেসব ওয়েবসাইট থেকে মিথ্যা ভিডিও টা ভাইরাল হয়েছিল সেটা মুছে ফেলতে বলেছি । এর ফলে কেউ পূর্ণতার দিকে আঙ্গুল তুলবে না ।

আর বাকি র‌ইল আমার ছেলে দায়িত্ব কাধে নিয়ে তা পালন করতে না পারার কথা !! সেই দায়িত্ব কি করে পালন করতে হয় তা আমি নিজে শেখাবো আমার ছেলেকে !!

আধিরা আনজুম ভ্রু কুচকে বললেন ,

– কোন দায়িত্বের কথা বলছো ??

– তা সময় হলেই জানবে । এখন আমাদের কি যেতে দেবে ভেতরে ??

জিব্রান বলল ,

– আঙ্কেল ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড !! আমি আর আবরন আগে একটু ওর সাথে একা কথা বলে আসি তারপর নাহয় বাকি কাজ গুলো করবেন !!

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– সিওর , সিওর । যাও তোমরা ।

জিব্রান আর আবরন রুমে প্রবেশ করতেই দেখল পূর্ণতা বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে । মিলি রহমান ওর পাশে বসে আছে আর ঈশিতা আলম পাশে দাঁড়িয়ে আছে ।

পূর্ণতা জিব্রান কে দেখে বলল ,

– এতক্ষন পর আমাকে দেখতে আসতে মন চাইলো ??
জিব্রান ওর মাথায় হাত রেখে হেসে চোখের পানি লুকিয়ে বলল ,

– এখন কেমন আছিস ??

– দেখছোই তো !! সবাই আমার কি অবস্থা করে দিয়েছে !! আমি কি আর কখনো ঘাড় নাড়াতে পারবো না ?? আমাকে এই কলার কতক্ষন পড়ে থাকতে হবে ?? আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে এটা পড়ে থাকতে !!

জিব্রান বলল ,

– অল্প কিছুদিন পড়তে হবে পুচকি !!

আবরন চুপচাপ পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ওর বাচ্চামো দেখছে আর মনে মনে ভাবছে ,

– তোমাকে যে ভালোবাসি সেই খাতিরে আজ আসল অপরাধী ধরতে কত কিছু করলাম !! তোমাকে এই অবস্থায় দেখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । মন চাইছে যারা তোমার এই অবস্থা করেছে তাদেরকেও এমন অবস্থায় নিয়ে আসি । আর পুলিশ যদি ওদের শাস্তি না দেয় আমার হাত থেকে ওদের নিস্তার নেই । আই প্রমিজ ইউ ।

জিব্রান বলল ,

– শোন , তোর সাথে এসব কেন হয়েছে আমি তোকে খুলে বলি । তুই ঠান্ডা মাথায় শুনবি প্রমিজ কর ।

পূর্ণতা মাথা নেড়ে বলল ,

– প্রমিজ ।

জিব্রান ওকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলতেই পূর্ণতা চমকে উঠল , চোখের পানি ওর বাঁধ মানছে না । ও মনে মনে ভাবছে ,

– বাহিরে এতো ঘটনা ঘটে গেল , মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেল আর আমি কিচ্ছু জানি না ??

আর আমি কিছুদিন আগে লক্ষ্য করেছিলাম আমার মেসেঞ্জারে অনেক নটিফিকেশন এসেছে কিন্তু সময়ের অভাবে তা দেখিনি , ঐদিন যদি দেখতাম তাহলে আজকে হয়তো আমার এই অবস্থা হতো না । সত্যিই আমি খুব বোকা ।

ওর ভাবনার মাঝেই আবরন বলল ,

– মিস . পূর্ণতা জামান । মাঝে মাঝে ফোনটা নেড়ে চেড়ে দেখবেন তো নাকি ?? আর যদি সোসাল এপস গুলো ইউজ করতেই না জানেন তাহলে দরকার কি তা রাখার । না রাখলেই তো পারেন !!

পূর্ণতা বলল ,

– আমি ভুল করেছি জানি তো । এক কথা আর আমাকে কতবার বলবেন সবাই মিলে । আমি কিন্তু আর নিতে পারছি না ।

এর‌ মধ্যে প্রেনা , আয়মান , তাসিন , ফাহিম সবাই রুমে প্রবেশ করলো ।

মিলি রহমান বললেন ,

– আমি আর প্রেনার আম্মু বাহিরে যাই । এত মানুষ কেবিনে থাকা ঠিক হবে না ।

এই বলে উনারা দুজন বেরিয়ে গেলেন । প্রেনা পূর্ণতার কাছে এসে বসে বলল ,

– সরি রে !! তোর বিপদের সময়‌ই আমি তোর পাশে থাকতে পারি নি । আমি বান্ধবী নামে কলঙ্ক , সত্যিই কলঙ্ক ।

পূর্ণতা বলল ,

– হ্যা , ঠিক‌ই বলেছিস !! তুই বান্ধবী নামে কলঙ্ক আর ফাহিম ভাইয়া গার্ডিয়ান নামে কলঙ্ক !!

ফাহিম বলল ,

– আয়হায় , আমি কি করলাম ??

– কি করেন নি তা বলেন ?? আপনি সাথে থাকা অবস্থায় আমার উপর হামলা হলো আর আপনি আমায় একা ফেলে উধাও হয়ে গেলেন !! ঐ মূহুর্তে তো আপনি‌ই আমার গার্ডিয়ান ছিলেন !!

আবরন বলল ,

– আসলে ভুলটা আমার‌ই । আমি ই যদি তোমাকে আনতে যেতাম তাহলে কারো সাহস ছিল না আমাকে ভেদ করে তোমাকে ছোঁয়ার !!

– অ্যাহ ! এসেছে আমার বডিগার্ড !!

জিব্রান বলল ,

– তুই প্রমিজ করে সেটা রাখতে পারিস নি । তোর সাথে কথা নেই ।

ফাহিম , তাসিন , আয়মান আর প্রেনা‌ও বলল ,

– ঠিক , প্রমিজ ভুলে কাজকে গুরুত্ব দেওয়া মোটেও ঠিক হয় নি ।

আবরন কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

– ভুলের শাস্তি কি এখন ??

প্রেনা বলল ,

– আপনি ৭ দিন পূর্ণতার সামনে আসবেন না , ওকে ডিস্টার্ব করবেন না !!

পূর্ণতা বাদে জিব্রানসহ বাকি সবাই ডেভিল হাসি দিল । আবরন চোখ বড় বড় করে বলল ,

– what ?? Are you serious ??

সবাই দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– We are damn serious ..😁

আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে ,

– আজকে সারাদিন তোমার থেকে দূরে থেকেই আমার অবস্থা টাইট হয়ে গিয়েছে , আর এরা আমাকে শাস্তিস্বরূপ তোমার থেকে ৭ দিন দূরে থাকতে বলছে ।

Impossible !! আমি এক্ষুনি গিয়ে বাবাকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করছি । দেখি তোমরা কেমন পারো আমাকে শাস্তি দিতে !!

এসব মনে মনে ভেবে আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । সেটা পরে দেখা যাবে । এখন বাহিরে যারা আছে তাদের ডেকে কাজ সেড়ে ফেলি , কি বলো জিব্রান ভাইয়া ??

জিব্রান বলল ,

– ঠিক আছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– বাহিরে কারা আছে ভাইয়া ??

– মিডিয়ার লোকজন । ওরা তোর মুখে হামলা হ‌ওয়ার ঘটনা শুনবে আর আমাদের সকলের থেকে সত্য ঘটনার সাক্ষী নেবে ।

আর হ্যা , এসব কিছু আবরনের বাবা শাদমান আঙ্কেল করবেন ।

পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে বলল ,

– মানে ?? উনি এখানে এসেছেন ??

আবরন বললেন ,

– বাবা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে । এখন ভুলের মাসুল দিতে তোমার জীবনে লাগা দাগ কে মুছে তোমাকে আবার আগের পূর্ণতা বানিয়ে দেবে ।

পূর্ণতার নিজের অজান্তেই কেমন যেন স্বস্তি ফিল হচ্ছে আবরনের মুখে এই কথা গুলো শুনে ।

কথা মতো জিব্রান শাদমান চৌধুরী কে ভেতরে ডাকলেন ।

পূর্ণতা শাদমান চৌধুরী কে দেখে সালাম দিল । শাদমান চৌধুরী সালাম নিয়ে পূর্ণতাকে বলল ,

– মা , তুমি সব ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরতে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছো তো ??

পূর্ণতা মাথা নেড়ে “হা” জানালো ।

ডাক্তারের পার্মিশন নিয়ে পূর্ণতার কেবিনে মিডিয়ার লোকজন বিনা শব্দে শুধু মাত্র জরুরি প্রশ্নের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও করে ঘটনা রেফারেন্স হিসেবে পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরল ।

সবাই সঠিক তথ্য সহ লাইভ প্রচার করে জাতিকে জানিয়ে দিল পূর্ণতা জামান নির্দোষ ।

…………………………………………………..

পূর্ণতাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে ঘুমের জন্য । কারন , রাতে ব্যথা তুলনামূলক বেশি হ‌ওয়াতে ওর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে । মিলি রহমান ওকে খাইয়ে দিয়েছে আর নার্সরা প্রয়োজনীয় ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে । ডাক্তার এসে চেকআপ করে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে চলে গিয়েছে ।

রাতে অন্য বেডে মিলি রহমান থেকেছে । আর তাসিন , ফাহিম , আয়মান রাতে চলে গিয়েছে বাসায় । জিব্রান‌ও বাসায় গিয়েছে ফ্রেশ হতে ।
ওদিকে প্রেনার মা আর প্রেনা‌ও চলে গিয়েছে ।

শাদমান চৌধুরী আধিরা আনজুমের মান অভিমান ভেঙে তাকে আবার বাসায় নিয়ে গিয়েছে । আবরন‌ও বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার হসপিটালে গিয়েছে সারারাত পূর্ণতার কাছে থাকবে বলে ।

মিলি রহমান ঘুমুচ্ছিলেন । আর পূর্ণতা তো ঘুমে বেহুশ । আবরন আস্তে আস্তে ধীর পায়ে কেবিনে ঢুকে মিলি রহমানকে ডেকে বলল ,

– আন্টি , ঘুমিয়েছেন ?? একটু শুনবেন প্লিজ ??

মিলি রহমান ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে আবরনকে দেখে বলল ,

– বাবা , তুমি আবার এসেছো ??

– আন্টি , এসেছি । আমি ঐ সোফায় ঘুমালে আপনার কোনো অসুবিধা হবে কি ??

– না না , অসুবিধা কেন হবে ?? তোমার কষ্ট হবে তো বাবা ! তুমি বাসায়‌ই থাকতে । আবার সকালে চলে আসতে ।

– না , আন্টি । বাসায় আমার ঘুম আসতো না । আচ্ছা , আপনি ঘুমান ।

– আচ্ছা । তুমি শুয়ে পড়ো ।

আবরন গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল । কিন্তু ওর ঘুম আসছে না । ও মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো মিলি রহমান ঘুমুচ্ছে ।
তাই আবরন আস্তে করে উঠে পূর্ণতার পাশে বেডে গিয়ে বসল ।

হালকা আলোতে পূর্ণতা ঘুমুচ্ছে তা দেখা যাচ্ছে । আবরন তাকিয়ে দেখল ওর কপালে ব্যান্ডেজ , হাতে অনেক গুলো ব্যান্ডজ । কলার পড়ে ওর অস্বস্তি লাগছে সেটা আবরন ভালোই বুঝতে পারছে । ওকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি এসে জমা হলো ।

আবরন ওর কপালের এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে নিয়ে দিল ।
ওর গালে আস্তে আস্তে স্লাইড করে বলল ,

– সরি মিস পূর্ণতা । আমি তোমাকে দেখে রাখতে পারি নি । আমার ভুলের কারণে তোমাকে আজ এখানে কষ্ট করতে হচ্ছে । আমি কি করে বাসায় এসির নিচে ঘুমাতাম বলো !! তোমার ব্যথা গুলো আমি ফিল না করলেও তুমি যেখানে ঘুমিয়ে কষ্ট করছো অন্তত সেই কষ্টটুকু তো ভাগ নিতে পারি ।

তুমি কি বোঝোনা আমি তোমাকে ভালোবাসি ?? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকো ?? আমি বলি না তোমাকে কারন আমি সময়ের অপেক্ষা করছি ।

আমি তোমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি , এই ভুল আমি আর কখনো করবো না । তোমাকে আর এক মূহুর্ত্তের জন্য চোখের আড়াল করবো না । সেই ব্যবস্থা করছি মিস পূর্ণতা ।

আবরন ঘুমন্ত পূর্ণতার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ওর পাশের জায়গাতেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল ও টের‌ই পেল না ।

…………………………………………………..

সকাল ৭ টা ,

তখন‌ও মিলি রহমানের ঘুম ভাঙে নি । এমনকি পূর্ণতা আর আবরন‌ও নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে ।

জিব্রান আস্তে করে বিনা শব্দে রুমে ঢুকে আবরনকে দেখে মুচকি হেসে ওদের একসাথে কয়েকটা ছবি তুলে নিল । তারপর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে চোখে মুখে মিথ্যা রাগ নিয়ে আবরনের কান টেনে আস্তে আস্তে কানের সামনে বলল ,

– শালা , বিয়ের আগেই তুই আমার বোনের পাশে ঘুমুচ্ছিস ?? হবু শাশুড়ি যে এই রুমে তার কোনো খবর আছে ??

আবরন চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল ও পূর্ণতার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিল । জিব্রানের কথা শুনে জলদি জলদি উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– সরি , সরি , সরি । আসলে ভাইয়া কখন যে ওর সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম !!

জিব্রান ওর কাধে বারি মেরে বলল ,

– আস্তে কথা বল । আম্মু শুনলে সর্বণাশ হয়ে যাবে ।

আর কি যেন বলছিলি তুই পূর্ণতার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়েছিস ??

আমাকে তোর বলদ মনে হয় ?? ও তো তখন ঘুমিয়ে ছিল , তুই কি করে কথা বললি ??

আবরন থতমত খেয়ে বলল ,

– ইয়েমানে ভাইয়া !! ঘুমের মধ্যেই একা একা কথা বলছিলাম ।

– পাগলামি বাদ দিয়ে ওকে নিজের ঘরের ব‌উ করে নিয়ে গিয়ে ওর সাথে সারারাত জেগে কথা বলিস !!

আবরন কিছু বলবে এর আগেই মিলি রহমানের গলা শোনা গেল ।

– জিব্রান এসেছিস ??

– হ্যা , আম্মু ।

– তুই থাকবি একটু । আমি একটু বাসায় যেতাম !!

– তুমি যাও । আমি আর আবরন ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখি ওকে রিলিজ করে বাসায় নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা !!

– আচ্ছা । দেখ । আমি বাসায় যাই । একটু কাজ আছে । আমাকে ফোন করে জানাস ।

– তুমি চিন্তা করো না যাও ।

মিলি রহমান বাসায় চলে যাওয়ার আধ ঘন্টা পরেই আয়মান , প্রেনা , ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা এসে উপস্থিত হলো ।

সবার সাথে ভাব বিনিময় করে জিব্রান বলল ,

– তোরা জানিস আমি হসপিটালে সকালে এসে কি দেখেছি ??

আবরন জিব্রানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে আস্তে করে বলল ,

– ভাইয়া , এই কথা ওরা জানলে আমার মান-ইজ্জত প্লাস্টিক !!

জিব্রান হেসে বলল ,

– ওকে যা প্রমিজ করলাম । মুখ দিয়ে কিছু বলবো না ।

আবরন জিব্রানের কথায় স্বস্তির নিংশশ্বাস ফেলল ।

আয়মান বলল ,

– ভাইয়া , কি দেখেছো বলো তো ??

জিব্রান পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা বের করে ফোনের স্ক্রিনটা সবার দিকে ঘুরিয়ে দেখাতেই সবাই তা দেখে ৪৪০ ভোল্টের শক খেল ।

আবরন জিব্রানের পাশ থেকে উঠে বাকিদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখল স্ক্রিনে জিব্রান ওর আর পূর্ণতার একসাথে ঘুমানোর ছবি তুলেছে ।

ছবিটা কিছুটা এমন যে আবরন আর পূর্ণতা এক‌ই বালিশে উপর নিচ করে শুয়েছে। পূর্ণতা একটু উপরে আর আবরন একটু নিচে । পূর্ণতা ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমুচ্ছে আর আবরন মনের শান্তিতে মাথার নিচে হাত রেখে পূর্ণতার কলারের সাথে লেগে ঘুমুচ্ছে ।

সবাই ছবিটা দেখে মুচকি হাসছে আবরনের দিকে তাকিয়ে । আবরন ছবির থেকে চোখ তুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে কেমন কেমন করে যেন হাসছে ।

এর‌ই মধ্যে পূর্ণতার গলা শোনা গেল ।

– এই , তোমরা সবাই হাসছো কেন ??

জিব্রান ফোনটা পকেটে ভরে বলল ,

– এমনি । দেখ তোর সাথে দেখা করতে সাত সকালে সবাই চলে এসেছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– নার্সকে বলো আমার বেডে বসার মুড করে দিতে ।

আবরন বলল ,

– এটা করতে নার্সকে লাগে ?? আমি আর ফাহিম‌ই পারবো ।

– তো করে দিন ।

ফাহিম আর আবরন বেডে বসার মুড সেট করে দিল । আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– আমি ধরে তুললে সমস্যা আছে কি আপনার ??

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– আমাকে সেদিন কিস করার আগে তো জিজ্ঞেস করেন নি যে “পূর্ণ , ক্যান আই কিস ইউ ?? ” আর এখন সবাই সামনে আছে বলে দেখাচ্ছেন যে আপনি খুব ভালো !! হুহ্ !!

পূর্ণতা আবরন কে বলল ,

– তাকিয়ে দেখছেন কি ? তুলুন আমায় ??

আবরন ওকে ধরে বসাতে বসাতে আস্তে করে বলল ,

– এমন ভাবে বলছেন যেন আপনি আমার ব‌উ লাগেন ??

পূর্ণতা রেগে আস্তে করে জবাব দিল ,

– এই আপনি আমাকে তখন থেকে “আপনি” করে বলছেন কেন ??

– আমার ইচ্ছা তাই ।

আবরন ওকে বসিয়ে দিয়ে জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– ভাইয়া চলো , ডাক্তার এর সাথে আলাপ করে দেখি রিলিজের বিষয়টা নিয়ে ।

– ঠিক আছে চল । নাস্তাও আনতে হবে ।
তোরা সবাই খালি পেটে এসেছিস না ?

সবাই হা সূচক মাথা নাড়ল ।

পূর্ণতা কে খেয়াল রাখতে বলে আবরন আর জিব্রান চলে গেল ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ।

আর সবাই পূর্ণতার সাথে গল্প করতে শুরু করলো ।

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here