ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -৪১+৪২

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪১

মেডিক্যালের প্রথম বর্ষের মেডিসিন বিভাগের একটা ক্লাস রুমে বাকি স্টুডেন্টস দের সাথে বসে প্রেনা আর পূর্ণতা ও বরাবরের মতো ক্লাস করছে ।

ক্লাস চলাকালীন সময়ে রুমে একদল স্টুডেন্টস এসে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ক্লাসে উপস্থিত প্রফসরের পার্মিশন চেয়ে ভেতরে প্রবেশ করল । সবার মাঝখান থেকে আবরন সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল ,

– গুড মর্নিং !

সবাই একসাথে বলে উঠল ,

– মর্নিং !

পূর্ণতা আর প্রেনা ভালো করে শুনতে চেষ্টা করছে যে আবরন দলবল নিয়ে কি বলতে হাজির হয়েছে ।

আবরন বলল ,

– তোমাদের তো সামনে একটা এক্সাম আছে তাই না ?

সবাই বলল ,

– হ্যা ।

– তো এক্সামটা হচ্ছে দুটো বিষয়ের উপর । পর পর দুইদিন এক্সামের ডেট সেট করা হয়েছে । সেটা হচ্ছে আগামী মঙ্গল ও বুধবার ।
আজ হচ্ছে বৃহস্পতিবার । অর্থাৎ মাঝে আর ৪ দিন বাকি । আই হোপ সবার প্রিপারেশন ভালো । এবং সবাই খুব ভালো ভাবে এক্সাম দেবে ।
কিন্তু যেটা বলতে এসেছি সেটা হলো এক্সামে যারা 92% মার্কস পাবে তাদের মধ্যে থেকে ১০ জন কে বাছাই করে একটা কুইজ এক্সামে অংশগ্ৰহণের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে । এবং কুইজ এ জেনারেল নলেজের বিষয়ের উপর‌ই প্রশ্ন থাকবে । so , সবাই সেভাবেই প্রিপারেশন নিবে । এক্সামের একদিন পর কুইজ এক্সামের জন্য আলাদাভাবে ১০ জনকে বাছাই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এ নিয়ে যাওয়া হবে । সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০ জন করে উপস্থিত থাকবে । so , গত বছর এই কুইজ প্রতিযোগিতায় আমাদের স্থান ২য় ছিল কিন্তু এবছর ১ম হ‌ওয়া চাই । Understand ?

সবাই একসাথে বলে উঠল ,

– ইয়েস !

– ওকে , so কান্টিনিউ দ্য ক্লাস ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছিল । আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

-মিস . জামান । আপনি কি বুঝতে পেরেছেন ?

পূর্ণতা দাঁড়িয়ে বলল ,

– ইয়েস ।

– আপনার উচিত ফার্স্ট বেঞ্চের মিডেল রো তে বসা , তাহলে আপনি পড়া ভালোভাবে বুঝতে পারবেন ।

পূর্ণতা একবার আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে দেখে তারপর আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– ওকে , I’ll try ..

আবরন সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে পূর্ণতা কে চোখ মেরে ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলল ,

– বায় গাইজ ।

সব মেয়েরা মনে লাড্ডু ফুটাতে ফুটাতে একসাথে বলল ,

– বায়য়য় !!

পূর্ণতা সবার উদ্দেশ্য মনে মনে গালি দিয়ে ক্লাসের দিকে মনোযোগ দিল । প্রেনা দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– ভাইয়া যে কি করে আর কি করে না আমরা আপনজন ছাড়া বোধয় কেউ জানে ই না ।

পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,

– রাখ তোর ভাই ।

ক্লাস শেষ করে করিডোর দিয়ে হেঁটে হেঁটে পূর্ণতা আর প্রেনা লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিল । কারন সাধারণ জ্ঞানের কিছু ব‌ই কালেক্ট করে সেগুলো পড়তে হবে । ১-১০ এর মধ্যে তো থাকতেই হবে আর সেই সাথে কুইজ প্রতিযোগিতায় ও ১ম পুরষ্কার আনতেই হবে ।

করিডোর থেকে বের হয়ে মাঠে পা রাখতেই দেখল ক্যাম্পাসে উপস্থিত বাকি সবাই ওদের বিপরীত দিকে দৌড়ে যাচ্ছে ।

পূর্ণতা আর প্রেনা ভ্রু কুচকে পেছনের দিকে ঘুরতেই দেখল সবাই বটতলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে মেয়েরা সব সেদিকে ভিড় জমাচ্ছে ।

প্রেনা বলল ,

– আয়মানকে কল দিয়ে দেখি তো বিষয়টা কি ?

পূর্ণতা বলল ,

– হুম দেখ । এখান থেকে তো দেখাও যাচ্ছে না ।

প্রেনা আয়মানকে কল করতেই বিষয়টা জেনে পূর্ণতা কে বলল ,

– চল চল । আমরাও যাই ।

পূর্ণতা বলল ,

– কি আশ্চর্য ! কি হয়েছে না বলেই হুট করে নিয়ে যাচ্ছিস ।

– আরে আরে চল । গেলেই দেখবি । ভাগ্যিস এখন শুধু প্রথম বর্ষ আর ২য় বর্ষের বিরতি চলছে । বাকি সবার ক্লাস চলছে নাহলে তো পুরো ক্যাম্পাসেই ভিড় লেগে যেত । চল চল ।

এই বলে প্রেনা পূর্ণতা কে টেনে সেদিকে নিয়ে গেল ।

পূর্ণতা প্রেনাকে কিছু বলেই থামাতে পারলো না , অবশেষে বাধ্য হয়েই ওর সাথে গিয়ে ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল সেখানে ফাহিম , তাসিন , আয়মান আর আবরন । আয়মানের হাতে গিটার । সবাই বটতলায় বসে মূলত গান গাইতে গাইতে আড্ডা দিচ্ছিল কিন্তু ক্যাম্পাসে উপস্থিত মেয়েরা গান শুনতে এখানে এসে ভিড় জমিয়েছে ।

ভিড়ের মাঝে পূর্ণতা কে দেখে আবরন ওর দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে তারপর আয়মানকে বলল ,

– কোনো রোমান্টিক গান গাওয়ার দরকার নেই । দেখ , তোর ব‌উ হাজির ।

আয়মান সামনে তাকিয়ে দেখল ভিড়ের মাঝে প্রেনা ও আছে ।

আয়মান প্রেনার দিকে তাকাতেই প্রেনা ও হাসি দিয়ে আয়মানের দিকে তাকালো । ফাহিম বলল ,

– আয়মান এখন প্রেনার দিকে তাকিয়ে রোমান্টিক গান গাইতে শুরু করবে এর চেয়ে বেটার হবে গানটা বরং তুই ই গা আবরন ।

আবরন হেসে বলল ,

– না , গানটা পূর্ণতা কে গিয়ে গাইতে বল । আমি বললে শুনবে না । তোরা গিয়ে রিকোয়েস্ট করে এদিকে নিয়ে আয় ।

তাসিন বলল ,

– ওকে । তা-ই করি ।

ফাহিম আর তাসিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– সবার এখানে এসে ভিড় করাটা মোটেও ঠিক হয় নি । আমরা জাষ্ট এমনিতেই আড্ডা দিচ্ছিলাম । কিন্তু ভিড় যখন করেই ফেলেছেন তো আপনারা সবাই যদি নিজেরা নিজেরা কথা বলা বন্ধ করে এদিকে কনসেন্ট্র‌ইট করেন তাহলে আমরা বিষয়টা কান্টিনিউ করবো । আর তা নাহলে আমরা চলে যাবো , আপনারা ই থাকবেন এখানে । so , কথা বন্ধ করুন ।

সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল । সবাই নিশ্চুপ হতেই ফাহিম আর তাসিন বলল ,

– আপনাদের মধ্য থেকে এখানে যেকোন একজন বসে গান গাইতে সুযোগ দেয়া হবে । so , কে কে গান গাইতে চান হাত তুলুন , আমরা যেকোনো একজনকে বাছাই করবো ।

পূর্ণতা দেখল কোনো হৈচৈ নেই । সবাই নিশ্চুপ । তারমানে কি কেউ গান গাইতে রাজি না !

বিষয়টা বুঝতে পূর্ণতা আশেপাশে , পেছনে তাকিয়ে দেখল সবাই ই হাত তুলেছে । এমনকি ওর পাশে দাঁড়িয়ে প্রেনাও হাত তুলেছে অথচ পূর্ণতার কোনো খবর‌ই নেই ।

আবরন পেছন থেকে আস্তে করে ফাহিমকে বলল ,

– কি করছিস তোরা ? সবাই ই তো গান গাইতে চাইছে !

ফাহিম হেসে বলল,

– সবাই ই গান গাইতে চাইছে কিন্তু পূর্ণতা তুমি গান না গাইতে চাওয়ার কারনটা কি ?

পূর্ণতা ফাহিমের প্রশ্ন শুনে ভরকে গেল । ও কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না । তাসিন বলল ,

– ওকে , কুল ! তোমাকে কিছু বলতে হবে না পূর্ণতা ! গানটা বরং তুমি ই গাও ।

সবাই হাত নিচে নামিয়ে নিল কিন্তু নিঃশব্দে ।

পূর্ণতা বলল ,

– ভাইয়া আমি কেন ? আমি তো হাত তুলি নি !

হঠাৎ পেছন থেকে জলের গলা শোনা গেল । জল পূর্ণতা কে বলল ,

– তুমি হাত তুলোনি বলেই তো তোমাকে গান গাইতে বলছে । কারন , কথা ই তো ছিল যেকোনো একজন কে গান গাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে । সবাই হাত তুলেছে । এখন কাকে ফেলে কাকে ডিসাইড করবে তাই তোমাকেই বেছে নিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– কিন্তু !

আয়মান বলল ,

– কোনো কিন্তু না । তুমি এসো !

পূর্ণতা আবরনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল আবরন এদিকেই তাকিয়ে আছে ।

প্রেনা পূর্ণতা কে বলল ,

– আরে যা । সবাই অপেক্ষা করছে তো!

বাধ্য হয়ে পূর্ণতা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে সেখানে বসলো । আয়মান আবরনের দিকে গিটার এগিয়ে দিয়ে বলল ,

– তুই ই বাজা । আমি সব গানের সুর তুলতে পারি না ।

আবরন গিটারটা হাতে নিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,

– কোন গান গাইতে চাও ?

পূর্ণতা বলল ,

– আমি তো বাংলা গান পারি না ।

ফাহিম বলল ,

– আরো বোকা মেয়ে , কোনো ব্যাপার না । আমরাও তো এতক্ষন হিন্দি গান গেয়েছি ।

পূর্ণতা মলিন হাসি দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখল সবাই অপেক্ষা করছে গান শুনবে বলে ।

আবরন বলল ,

– বলো , কোন গান ?

পূর্ণতা একটু ভেবে বলল ,

– teri ban jayungi .

আবরন মুচকি হেসে বলল ,

– নাইস চয়েস । আমার এটার টিউনটা জানা আছে । লেটস স্টার্ট !

আবরন আঙ্গুল দিয়ে ১ , ২ , ৩ ইশারা করতেই পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে আবরনের গিটারের টিউন শুনতে লাগল তারপর টিউনের সাথে মিলিয়ে গাইতে শুরু করল ,

Meri Rahe
Tere Tak Hain,
Tujhpe Hi Toh Mera Hakk Hai,
Ishq Mera Tu Beshak Hai,
Tujhpe Hi Toh Mera Hakk Hai .

Saath Chorungi Naa, Tere Pichhe Aaungi ,
Chheen Lungi Ya Khuda Se Maang Laaungi,
Tere Naal Taqkdeeran Likhvaungi,
Mai
Teri Ban Jaungi,
Mai Teri Ban Jaungi .

Sau Teri Mai Qasam Yahi Khaungi,
Keetay Vaadeyan Nu Umraan Nibhaungi,
Tujhe Har Vaari Apna Banaungi,
Main Teri Ban Jaaungi .

এইটুক গেয়ে থেমে পূর্ণতা চোখ খুলে তাকালো ।

তাকাতেই দেখল সবাই জোরে হাত তালি দিচ্ছে । পাল থেকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান ও হাত তালি দিয়ে বলল ,

– অনেক সুন্দর একটা গান । আর গানের গলা সুন্দর বলেই গান শুনতে ভালো লেগেছে ।

পূর্ণতা ওদের কথা শুনে খুশি হলো ‌ ।

ডান পাশ থেকে আবরন‌ও হাত তালি দিতে দিতে বলল ,

– মিস জামান ! গান ভালোই গাইতে পারেন । আমার মতে গানের পাশাপাশি আপনার এখন কারাতি প্রাকটিস এ যাওয়াটা ও জরুরি । সেলফ ডিফেন্স ইজ ঠু মাচ ইমপরটেন্ট ফর গার্লস ।

আবরনের কথা শুনেই পূর্ণতার মনে পড়ল ,

– আসলেই তো ! কাল আমার কারাতি ক্লাস আছে । অনেক দিন তো নানা সমস্যার কারনে যাই নি । কাল তো যেতে হবে ।

……………………………………………….

আবরন পূর্ণতা কে বাসায় ড্রপ করে দিবে বলে ওকে নিয়ে গাড়িতে করে র‌ওনা হলো আজিমপুরের দিকে ।

আবরন ড্রাইভিং করছে , মুখে একটা টু শব্দ‌ও করছে না । পূর্ণতার এই জন্য ভালো লাগছে না । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– আমি কি উনাকে আমার মনের কথা টা বলে দেব ??
না , থাক । বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করি । হয়তো এ ছাড়া আর কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত ঘটবে । রিস্ক নিয়ে লাভ নেই ।

ভাবনা বাদ দিয়ে পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিয়ে বাহিরে তাকালো ।

আবরন বলল ,

– আমাকে কি আজকে একটু বেশি ড্যাশিং লাগছে ?

হঠাৎ আবরনের এমন প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে আবরনের দিকে তাকালো ।

আবরন ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে বলল ,

– বলো !

পূর্ণতা বলল ,

– আপনাকে আবার কোনদিন দেখতে খারাপ লাগে !

পূর্ণতার কথা শুনে আবরন গাড়িটা হুট করে একসাইডে থামিয়ে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,

– সিরিয়াসলি ? তুমি বলছো এ কথা ? তা ও আমাকে ?

পূর্ণতা বলল ,

– গাড়িতে আপনি আর আমি ছাড়া আর কেউ আছে নাকি ?

আবরন গাড়ির ইঞ্জিনটা অফ করে পূর্ণতার দিকে ফিরে বসে বলল ,

– ঘটনা কি বলো তো ?

পূর্ণতা বলল ,

– ঘটনা কিছুই না , আপনি চলুন ।

আবরন দাঁত কেলিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল ,

– বিয়ের ১৩ দিন আগে আবার ক্রাশ খেয়ে বসলে নাকি আমার উপর ?

পূর্ণতা আবরনের দিকে আবরনের মতোই ঘুরে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আমার কি আপনাকে বাকি সবার মতো ছেচড়া মেয়ে বলে মনে হয় ?

আবরন বলল ,

– না , তো । একদম‌ই না । তুমি তো ইউনিক ।

– হ্যা , তো আমি অযথা কেন আপনার উপর ক্রাশ খেতে যাবো ?

আবরন মনে মনে ভাবল ,

– উহ এখনো ভালো সাজে । আমার উপর ক্রাশ খেয়ে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে , আমাকে হারাতে হবে ভেবে কান্না কাটি করে অস্থির আর মুখে এখনো বলে কিনা আমার উপর সে কখনো ক্রাশ খায়‌-ই নি !

– ও মিষ্টার , কি ভাবছেন ? চলুন !

আবরন বলল ,

– চলো আইসক্রিম খেতে যাই !

পূর্ণতা বলল ,

– এখন ? এই দুপুরে ?

– কেন কোথাও কি লেখা আছে নাকি যে আইসক্রিম দুপুরে খাওয়া যাবে না ?

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– ঠিক আছে । চলুন তাহলে ।

– থাক , তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে না । তুমি বরং তোমার সায়নের সাথে যেও ।

হঠাৎ নিজেদের মাঝে সায়নের নাম শুনে পূর্ণতার কেন যেন খুব রাগ উঠে গেল ।

– আমার সায়ন মানে ?? উনি কি আমার প্রোপার্টি যে আমার সায়ন বলে চালিয়ে দিচ্ছেন ! আপনি বলেন যে আপনার জল আপুকে নিয়ে আইস ক্রিম খেতে যেতে ইচ্ছে করছে , ভুলে আমাকে বলে ফেলেছেন । দ্যাটস ফাইন , আমি মেনে নিতাম কিন্তু আপনি সায়নকে আমার বলে কেন কথা বললেন !

ধুর , আমি যাবোই না আপনার সাথে । আপনি চলে যান ।

এই বলে পূর্ণতা গাড়ির ডোর খুলে নিচে নেমে রাস্তায় হাঁটা ধরলো ।

আবরন মনে মনে বির বির করল ,

– যাহ বাবা ! এইটুকুতেই মিস জামান এত রেগে গেল ? হায়রে ! একা একা যাচ্ছে । না , আমাকেও যেতে হবে ।

এই বলে আবরন‌ জলদি সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

– আরে , এত রেগে গেলে কেন হঠাৎ ? সায়ন তো তোমার সো কলড হাজবেন্ড । সমস্যা কোথায় ??

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে এবার রাগের জায়গায় অভিমান করে কেদেই দিল ।

আবরন পূর্ণতা কে কাদতে দেখে ওর হাত ধরে টেনে ওকে দাঁড় করিয়ে বলল ,

– আরে আরে ! কাদছো কেন ? রাস্তায় লোকজন কি ভাববে বলো ! চলো চলো । গাড়িতে চলো । তারপর যা করার করো ।

পূর্ণতা কাদতে কাদতে বলল ,

– বিয়ে হলো না এর আগেই পর করে দিলেন ?

আবরন হেসে বলল ,

– আহ , পর করলাম কোথায় ? আই ওয়াজ জাষ্ট কিডিং !

– ওহ , রিয়েলি ? আমি আপনার কে হ‌ই যে আপনি আমার সাথে মজা নিবেন ?

আবরন হাসি বন্ধ করে আস্তে করে বলল ,

– তুমি আমার অভিনয় জগতের নকল ব‌উ ।

“বউ” কথাটা শুনে পূর্ণতার কেমন যেন ফিল হচ্ছে । কিন্তু আবরন তো ওকে নকল ব‌উ বলেছে , তবুও কেন মনে হচ্ছে এই অভিনয়ের পেছনেই একটা বাস্তবতা লুকিয়ে আছে ।

পূর্ণতার ভাবনার মাঝেই আবরন বলল ,

– তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি আমার কোলে করে গাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছা জেগেছে ?

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে ওর দিকে তাকাতেই দেখল আবরন ইচ্ছে করে ওকে চেতাচ্ছে ।

পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,

– আমার দুটো পা আছে , আমি গাড়ি পর্যন্ত হেঁটেই যেতে পারবো ।

আবরন বলল ,

– শুধু গাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবে ? বাকি রাস্তা ??

পূর্ণতা হেঁটে গাড়ির দিকে যাচ্ছে আবার । আবরন‌ও ওর সাথে যেতে যেতে বলল ,

– আর বাকি রাস্তার কি হবে ?

পূর্ণতা বলল ,

– বাকি রাস্তা আপনার কোলে চড়ে যাবো । হয়েছে ! এবার খুশি ?

আবরন হেসে উঠল ।

আবরনকে হাসতে শুনে পূর্ণতা মনে মনে ভাবল ,

– আমি যে সত্যিই বাকিটা জীবনের পথ আপনার কোলে করেই পাড়ি দিতে চাই !

…………………………………………………

বিকেল সাড়ে পাঁচটা ,

পূর্ণতা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল । নেটফ্লিক্স এ ” Five feet apart” মুভির লাষ্ট সিন দেখে কাদতে শুরু করলো হঠাৎ ।

সায়ন ডায়নিং রুমে এসে পানি খাচ্ছিল । হঠাৎ কান্নার শব্দ পেয়ে ড্রয়িং রুমে এগিয়ে গিয়ে দেখল পূর্ণতা কান্না করে ভাসিয়ে দিচ্ছে ।

সায়ন ওর পাশে বসে বলল ,

– একি ! কাদছো কেন ?

পূর্ণতা বলল ,

– কেন আপনি দেখছেন না মুভিটা কত কষ্টের !

সায়ন টিভির দিকে তাকিয়ে বলল ,

– এই মুভি দেখে কাদছো ?? এটাতে কান্নার কি আছে ?

মুভি শেষ হতেই পূর্ণতা বলল ,

– আপনি এটা দেখেছেন ?

– হ্যা । দেখেছি ।

– কাদেন নি ?

– না ।

পূর্ণতা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– কারন আপনি হার্টলেস !

এই বলে রেগে সেখান থেকে চলে গেল ।

সায়ন মনে মনে ভাবছে ,

– হঠাৎ এমন করলো কেন ?

পূর্ণতা রাগে ফুসতে ফুসতে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানির ছিটা দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে ভাবছে ,

– একটা মানুষ এতোটা হার্টলেস কি করে হয় ?? মুভির নায়ক নায়িকা দুজন‌ই cystic fibrosis রোগে আক্রান্ত বলে দুজন দুজনকে ভালোবেসে হাতে হাত পর্যন্ত রাখতে পারছে না । সবসময় ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে । তবুও ভালোবাসার জোরে কেউ কারো কাছাকাছি এসে একজন আরেকজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় নি । অবশেষে নায়কের ট্রিটমেন্টের জন্য ফুসফুস জোগাড় হলেও নায়িকার জন্য ফুসফুস জোগাড় হয় নি । নায়ক নায়িকাকে বাঁচাতে সেই ফুসফুস টা নিজে না নিয়ে নায়িকাকে দিয়ে দিল যেন নায়িকা বাঁচতে পারে , যেখানে নায়ক নায়িকার চেয়ে আরো বেশি অসুস্থ ছিল । ফুসফুস টা ওর নিজের আগের দরকার ছিল । ফুসফুসের ডোনার খোঁজা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার তবুও নিজের জীবন বাজি রেখে নায়িকাকে বাচিয়ে দিয়ে নিজে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ল ।

এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে যে দুজন দুজনকে এত ভালোবেসেও কখনো হাতটা ধরে পর্যন্ত হাঁটতে পারে নি অথচ একজন আরেকজনকে বাচাতে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে ।

সত্যিই এমন ভালোবাসা কি আদৌ দুনিয়াতে আছে !

এমন একটা হার্টলেস মানুষ কে আমার বিয়ে করতে হবে ভাবতেই তো আরো কষ্ট লাগছে ! সায়ন ভাইয়া কি পারবেন আমাকে আবরনের মতো করে টেইক কেয়ার করতে ? পারবেন না ! কখনো পারবেন না !

চোখ মুখ মুছে বাহিরে বের হতেই দেখল ফোনটা বিছানার উপর বাজছে ।

ফোনের দিকে এগিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল প্রেনা কল করছে । কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই প্রেনা বলল ,

– কালকে নাকি তোর বিয়ের শপিং করবি ?

পূর্ণতা বলল ,

– তাই নাকি ? আমি তো নিজেই জানি না ।

– যা ই হোক , আমরা কিন্তু সবাই সাথে যাচ্ছি ।

– ওকে ।

– ওকে , টাটা ।

– বায়।

কল কাটতেই পূর্ণতাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠল ।

মিলি রহমান দরজা খুলে দিতেই আবরন মিলি রহমানের সাথে কথা শেষ করে পূর্ণতার রুমের দিকেই এগিয়ে আসছে ।

পূর্ণতা ভাবছে ,

– আজকে উনি এতো জলদি কেন এলেন ?

আবরন ওর সামনে এসে ওকে ভেতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে র‌ইল আবরনের দিকে ।

আবরন দরজা লাগিয়ে ওর দিকে ঘুরতেই পূর্ণতা দেখল ওর হাতে পলিথিন যাতে ঠান্ডা টাইপের কিছু আছে কাগজে মোড়ানো , কারন পলিথিনের বাহিরে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে ।

আবরন পূর্ণতা কে টেনে বিছানায় বসিয়ে নিজেও বিছানায় বসে বলল ,

– দেখো , কি এনেছি ?

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কি এনেছেন ?

আবরন পলিথিন খুলে কাগজের মোড়ানো ভাজ খুলে পূর্ণতা কে একটা কোন আইসক্রিম বের করে দিয়ে বলল ,

– ৬ টা আইসক্রিম এনেছি । ৩টা তোমার , ৩ টা আমার !

– এখন ?

– এখন দেখবো , কে আগে খেতে পারে !

পূর্ণতা বলল ,

– চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড !

আবরন বলল ,

– আমি কিন্তু কোনো চ্যালেঞ্জ দেই নি !

পূর্ণতা আইসক্রিমের কাগজ ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

– আরে কথা না বাড়িয়ে শুরু করুন ।

আবরন আর কোনো উপায় না পেয়ে জলদি জলদি আইসক্রিমের কাগজ ছাড়াতে লাগল ।

দুজন‌ই পাল্লা দিয়ে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে তো খেয়েই যাচ্ছে । শ্বাস নেওয়ার সুযোগ ও নেই ।#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪২

আবরন আর পূর্ণতা নেমেছে আইসক্রিম প্রতিযোগিতায় । দুজন‌ই সমানে কোনো কথা না বলে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে । পূর্ণতা আইসক্রিম খেতে খেতে অবশেষে ৩য় আইসক্রিমটা ধরতেই যাচ্ছিল কিন্তু আবরন ওর হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– উমমম , উমমম , তুমি এখন এটা ধরবে না !

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে দেখল আবরনের ২য় আইসক্রিমটা এখনো আরো অর্ধেক খাওয়া বাকি । আবরন জোর করে আইসক্রিম মুখে ঢোকাচ্ছে তার প্রমাণ হলো খেতে খেতে আবরন নাক মুখ মেখে ফেলেছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– এতক্ষন লাগে একটা আইসক্রিম খেতে ?

আবরন আইসক্রিম খেতে খেতে বলল ,

– আমি তোমার মতো এসব বাহিরের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত না ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– তাই নাকি ? আইসক্রিম কিন্তু আমি আপনাকে আনতে বলিনি , আপনি নিজেই এনেছেন ।

আবরন আইসক্রিম খেতে খেতেই বলল ,

– হ্যা , এনেছি । কিন্তু আমি তো বলি নি প্রতিযোগিতা করবো !

পূর্ণতা বলল ,

– কিন্তু তবুও তো আপনি প্রতিযোগিতা করছেন । আর প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নিজের কি হাল বানিয়েছেন দেখেছেন একবার আয়নায় ?

আবরন হাতের আইসক্রিমটা শেষ করে ৩য় আইসক্রিমটা খুলে খেতে শুরু করে বলল ,

– না , পরে দেখে নেব । কোনো ব্যাপার না ।

আবরনের সাথে কথা বলতে বলতে পূর্ণতার মনেই নেই যে ওর এখনো একটা আইসক্রিম খাওয়া বাকি ।

আবরন ৩য় আইসক্রিমটা খেতে খেতে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি খেয়ে নিয়েছে । আবরন হেসে বলল ,

– আমি বাহিরের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত না , তবুও দেখবে এই প্রতিযোগিতায় আমি ই জিতবো !

আবরনের কথা শুনে পূর্ণতা হেসে জলদি জলদি ৩য় আইসক্রিমটা নিতে গিয়ে দেখল সেখানে শুধু একটা আইসক্রিম ই পড়ে আছে । পূর্ণতা আইসক্রিম নিয়ে ভ্রু কুচকে আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল আবরন দাঁত কেলিয়ে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে ।

পূর্ণতা আইসক্রিমটা খুলে জলদি জলদি খেতে শুরু করে বলল ,

– চিটার একটা !

আবরন হেসে কোনো কথা না বলে আইসক্রিম খেয়েই যাচ্ছে । আবরন কমপক্ষে আর দুইবার খেলেই আইসক্রিমটা শেষ হয়ে যাবে আর ও জিতে যাবে । কিন্তু পূর্ণতার এখনো অর্ধেকটা বাকি ।

আবরন আইসক্রিমে কামড় বসাতেই যাচ্ছিল কিন্তু পূর্ণতা আবরনকে বলল ,

– ওয়েট , ওয়েট , ওয়েট ।

আবরন আইসক্রিমটা খাওয়া বন্ধ করে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা সুযোগ বুঝে আবরনের অপর খালি হাতে নিজের আইসক্রিমটা রেখে আবরন যে হাতে ওর আইসক্রিমটা খাচ্ছিল সে হাতটা পূর্ণতা নিজের দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে আবরনের অপর হাত থেকে নিজের আইসক্রিমটা খেতে লাগল ।

পূর্ণতার এমন কান্ড দেখে আবরন রীতিমতো শকড । এখন ও নিজেই আইসক্রিমের মতো ঠান্ডা হয়ে জমে যাচ্ছে । পূর্ণতা তো হাপুস হুপুস করে আবরনের হাত থেকেই নিজের আইসক্রিমটা খেয়ে যাচ্ছে আর ঐদিকে আবরন যেন আইসক্রিম খেতে না পারে সেজন্য ওর সেই হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে ।

আবরন এখন কি করবে বা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না । ওর এখন মন চাইছে পূর্ণতার গালে নিজের নাকে মুখে লেগে থাকা আইসক্রিমটা ভরিয়ে দিয়ে ওকে চমকে দিতে যেনো পূর্ণতা নিজেও আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে দেয় । তাহলে কেউই জিতবে না আর কেউ হারবেও না । কিন্তু আবরনের ভাবনার মাঝেই পূর্ণতা নিজের আইসক্রিমটা সম্পূর্ন শেষ করে আবরনের হাত ছেড়ে বসা থেকে বিছানায় উঠে দাঁড়িয়ে আইসক্রিমটা গিলে বলল ,

– ইয়েএএএএএ ! আমি জিতে গিয়েছি । ইয়েএএএএএ ! পার্টিইইইইই !

পূর্ণতাকে খুশি হতে দেখে আবরন ভাবনা থেকে এতক্ষনে বেরিয়ে এসে দেখল পূর্ণতা সত্যিই জিতে গিয়েছে আর ওর হাতে এখনো আরো দু কামড় আইসক্রিম রয়ে গিয়েছে ।

পূর্ণতা আবারো আবরনের সামনে বসে বলল ,

– তো অবশেষে জিত কিন্তু আমারই হলো । আপনি চিট করেছেন তাই আমিও একটু আধটু চিট করলাম ।
আপনি যদি চিট না করতেন তাহলে আমিও করতাম না ।

যা ই হোক । আমি যে জিতে গিয়েছি এখন আমার গিফট কি ??

পূর্ণতা কথা বলে শেষ করতেই আবরন হেসে নিজের হাতে থাকা আইসক্রিমটা পূর্ণতার নাকে ঠোঁটে মাখিয়ে দিয়ে এক পলকেই ওর সামনে এগিয়ে গিয়ে জিহ্বা বের করে পূর্ণতার নাকের উপর লেগে থাকা আইসক্রিমটা চেটে খেয়ে নিল ।

পূর্ণতা আবরনের এমন হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরনে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল । মনে মনে বলল ,

– কি করলেন উনি এটা ?

আবরন হেসে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে বলল ,

– congratulations !! By the way , your gift has been done 😉

এই বলে চোখ টিপ মেরে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেল মুখ ক্লীন করতে । পূর্ণতা দুষ্টুমি করে আবরনের কাধে পেছন থেকে লাফ দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম সহ আবরনের গালে চেপে ধরে চুমু খেয়ে ওর কাধ ছেড়ে নিচে নেমে দাঁড়িয়ে আবরনের মতোই ওর সামনে গিয়ে চোখ টিপ মেরে বলল ,

– টিট ফর ট্যাট 😉

আবরন হেসে বলল ,

– আগের থেকে অনেক চালাক হয়ে গিয়েছো দেখছি !

পূর্ণতা বলল ,

– কেন ! সব সময়‌ই কি কলুর বলদ থাকবো নাকি ?

আবরন এক গাল হেসে পূর্ণতার হাত টেনে ধরে ওকে কাছে নিয়ে গিয়ে ওর মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম ও পূর্ণতার গালে লাগিয়ে দিল । পূর্ণতা হেসে হেসে বলল ,

– কি করছেন টা কি !! আপনি একটা দুষ্ট লোক ! এতবার কেউ রিভেঞ্জ নেয় ?

আবরন পূর্ণতার দুই হাতের কব্জি ধরে ওকে কাছে টেনে এনে বলল ,

– শাহরিদ আহনাফ আবরনের সাথে পাংগা নেওয়ার আগে ভালো করে ভেবে নেবে ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– এত ভাবাভাবির কি আছে ? আমি কি আপনাকে ভয় পাই নাকি ?

আবরন পূর্ণতার দিকে ঝুকে ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বলল ,

– ভয় পাও না আমাকে ? সত্যি বলছো ?

পূর্ণতা বলল ,

– ভয় পাবো কেন ? আপনি কি ভুত নাকি ?

আবরন পূর্ণতার একদম কাছে এগিয়ে বলল ,

– ভেবে বলছো ?

আবরনকে এভাবে কাছে এগিয়ে আসতে দেখেও পূর্ণতার আজ ভয় করছে না । কারনটা ওর নিজের‌ও জানা নেই । অন্য সময় আবরন এমন করলে তো বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে শুরু করে সাথে ভয়ে কলিজা কাপে । কিন্তু আজকে পূর্ণতা একদম স্বাভাবিক ভাবেই আবরনের দিকে তাকিয়ে আছে । আবরন পূর্ণতার একদম কাছাকাছি এসে ভাবছে ,

– কি ব্যাপার ! আজকে পূর্ণতা ভয় পাচ্ছে না কেন ?

পূর্ণতা ভ্রু নাচিয়ে বলল ,

– কি হলো ! কি ভাবছেন?

– ভাবছি তোমাকে কি করে ভয় দেখানো যায় ?

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– ভেবে নিন । তবুও পারবেন না । গ্যারান্টি দিচ্ছি !

আবরন চোখ ছোট করে পিল পিল করে তাকিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,

– আর ১২ দিন বাদে তোমার বিয়ে । এখন যদি আমি তোমার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসি তাহলে !

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– সেটা আপনি করবেন না আমি জানি !

আবরন পূর্ণতার হাত ছেড়ে ওর কোমড় পেঁচিয়ে ধরে বলল ,

– এত বিশ্বাস !

পূর্ণতার আবরনের এমন আচরনে আজ কোনো অস্বস্তি ফিল হচ্ছে না। ওর মন চাইছে আবরনকে সবসময় এভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকতে । পূর্ণতা আবরনের গলা জড়িয়ে ধরে বলল ,

– হুম , বিশ্বাস করি আপনাকে !

আবরন হেসে বলল ,

– হয়েছে আর মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করে লাভ নেই । ক’দিন বাদে তোমার ও আরেকজনের সাথে বিয়ে আর আমারো আরেকজনের সাথে বিয়ে !

এই আরেকজনের সাথে বিয়ে কথাটা শুনতেই পূর্ণতার মনে ধুক করে উঠল ।

পূর্ণতা আবরনের দিক থেকে চোখ নামিয়ে ভাবতে শুরু করল ,

– তারমানে আপনার সাথে এই মূহুর্ত গুলো আমার ভবিষ্যত জীবনের স্মৃতি হতে যাচ্ছে ।

ভাবতে ভাবতেই চোখ ছল ছল করে উঠল । আবরন দেখেও না দেখার ভান করে বলল ,

– সেই কখন আজান দিয়েছে , এদিকে তুমি আর আমি চিল করে বেড়াচ্ছি । তোমার না পরীক্ষা । চলো চলো , ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসো ।

পূর্ণতা আবরনকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল,

– হুম , ছাড়ুন । আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ।

আবরন পূর্ণতার মুড ঠিক করতে ওকে বলল ,

– আমি তোমাকে ধরেছি কখন যে ছাড়তে বলছো ?

পূর্ণতা বলল ,

– উফফ ! আমার ভালো লাগছে না । ছাড়ুন ।

পূর্ণতা আবরনের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য জোরাজুরি করছে আর আবরন ওকে আরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাসছে ।

এর‌ই মধ্যে হঠাৎ দরজায় জোরে জোরে টোকা পড়ল । বাহির থেকে সায়নের গলা শোনা যাচ্ছে ।

– পূর্ণতা , আর ইউ অল রাইট ??

পূর্ণতা দরজার দিকে তাকিয়ে আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন পূর্ণতা কে চুপ করে থাকতে ইশারা করে ওকে আস্তে করে বলল ,

– তুমি যাও , ফ্রেশ হয়ে নাও ।

আবরন পূর্ণতা কে ছেড়ে দিতেই পূর্ণতা ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়ল ।

আবরন রুমে কোথাও টিস্যু খুঁজে না পেয়ে বারান্দায় টাওয়াল ঝোলানো দেখে সেটা দিয়ে জলদি জলদি নিজের মুখ নাক মুছে নিল ।

এদিকে সায়ন দরজায় বারি মেরে বলছে ,

– কি হচ্ছে টা কি ভেতরে ? দরজা খুলছো না কেন তুমি ?

আবরন ‘খুলছি’ বলে জলদি জলদি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আবরনকে ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে সায়ন রুমের ভেতরে ঢুকে চারপাশে স্ক‍্যান করে পূর্ণতা কে খুঁজতে শুরু করলো ।

আশেপাশে পূর্ণতা কে না দেখে সায়ন আবরনকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– পূর্ণতা কোথায় ?

আবরন সায়নের দিকে না তাকিয়ে চেয়ার টেনে টেবিলের সামনে বসতে বসতে বলল ,

– ওয়াশরুমে ।

সায়ন বলল ,

– তোমরা এতক্ষন রুমের দরজা আটকে কি করছিলে !

পূর্ণতা ওয়াশরুম থেকে সায়ন আর আবরনের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছে । ফ্রেশ হতে হতে সায়নের মুখে আবরনের জন্য এমন কঠিন প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা জলদি জলদি দরজা খুলে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে সায়নকে বলল ,

– আপনি এখানে কি করছেন ?

সায়ন পূর্ণতা কে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

– আর ইউ অল রাইট ?

পূর্ণতা বলল ,

– হুম । কেন ?

সায়ন বলল ,

– কিছু না ।

পূর্ণতা মনে মনে সায়নকে ১০১ টা গালি দিয়ে মনে মনেই বলল ,

– ম্যানারলেস লোক একটা ! এখনো বিয়ে হয়নি আর বিয়ের আগেই স্পাই গিরি শুরু করেছে । যত্তসব ।

পূর্ণতা বলল ,

– আপনি যান । আমার পরীক্ষা । পড়তে হবে ।

– ঠিক আছে । কিছু লাগলে বলো ।

– কিছু লাগবে না । আ’ম ওকে ।

সায়ন চলে গেল রুম থেকে আর ও চলে যেতেই পূর্ণতা জলদি করে দরজা টা আবারো লাগিয়ে দিল ।

পূর্ণতা এখনো মুখ মুছতে পারে নি । বারান্দায় গিয়ে টাওয়াল টা হাতে নিয়ে মুখ মুছতেই যাচ্ছিল কিন্তু আবরন বলল ,

– ওয়েট ওয়েট ওয়েট ! ওটা দিয়ে মুছো না ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কেন ? এটা তো আমার‌ই টাওয়াল ।

– আরে টাওয়াল যে তোমার তা আমি ও জানি কিন্তু আমি ওটা ইউজ করেছি ।

– তো ?

– তো এটাতে আইসক্রিম আছে , তুমি মুখ মুছলে তো আবারো মুখে আঠা লেগে যাবে ।

পূর্ণতা নাক মুখ ফুলিয়ে বলল ,

– আমার ওয়ার ড্রবের উপরেই তো টিস্যু ছিল । চোখে দেখেন নি !

– তাড়াহুড়ো তে দেখি নি । যাই হোক , তুমি ই বরং টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নাও ।

পূর্ণতা আবরনের হাতে টাওয়াল টা দিয়ে বলল ,

– ধরুন ।

তারপর টিস্যু দিয়েই মুখ মুছে নিল ।

আবরন বলল ,

– টাওয়াল টা !

পূর্ণতা পড়ার টেবিলের সামনে চেয়ারটাতে বসে পড়ে বলল ,

– টাওয়ালটা আপনি সাথে করে নিয়ে যাবেন , তারপর ধুয়ে শুকিয়ে আমাকে ফেরত দেবেন !

আবরন বলল ,

– আবারো রিভেঞ্জ ?

– উহু , এটা শাস্তি ।

– ঠিক আছে , ঠিক আছে । ওয়াশিং মেশিনে একবারে ধুয়ে ফ্রেগরেন্স লাগিয়ে তারপর শুকিয়ে তোমাকে ফেরত দেব ।

– ওকে । এখন পড়া বুঝিয়ে দিন । পরীক্ষা তো !

– তুমি সব বের করো আমি মুখটা ধুয়ে নিই , আঠা লেগে আছে ।

– ওকে ।

…………………………………………………

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা ,

ক্যাম্পাসের রেজাল্ট বোর্ডগুলোর সামনে প্রচুর পরিমাণে ভিড় কারন আজকে ক্লাস টেষ্টের রেজাল্ট বের হয়েছে । পূর্ণতা ও ভিড়ের মধ্যে আছে কিন্তু কোনোভাবেই বোর্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না । মনে মনে ভাবছে ,

– আল্লাহ ই জানে ১-১০ এর মধ্যে আছি কি নেই ! যদি না থাকি তাহলে তো আমি কুইজ এক্সামে এটেন্ড করতে পারবো না ।

ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কেউ পূর্ণতার হাত টেনে ভিড় থেকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে যেতে শুরু করেছে । পূর্ণতা ভিড়ের মাঝে খেয়াল না করলেও ভিড় থেকে বের হতেই দেখল আবরন ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ! আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে দেখতে হবে তো !

আবরন কোনো কথার জবাব না দিয়ে সোজা পূর্ণতা কে নিয়ে লাইব্রেরির একটা বড় গোল টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসিয়ে একস্তুপ আগে থেকে টেবিলে রাখা ব‌ই দেখিয়ে বলল ,

– এগুলো পড়ে শেষ করো ! কাল ১১ টায় কুইজ এক্সাম ।

পূর্ণতা বলল ,

– তা বুঝলাম ! আমার রেজাল্ট এর কি খবর ?

– ৩য় তম । আরো ভালো করা উচিত ছিল । যা হ‌ওয়ার হয়েছে । নেক্সট এক্সামের জন্য ভালোভাবে প্রিপারেশন নাও ।

– হুম । ১ম কে হয়েছে ?

– আমি জানি না । তা জানার তোমার‌ও কোনো দরকার নেই । নিজের পড়ালেখার দিকে ফোকাস করো ।

– আর প্রেনার রেজাল্ট ?

– জানি না ।

– কি আশ্চর্য ! আপনি কি আমার রেজাল্ট ছাড়া আর কারো রেজাল্ট চেক করেন নি ?

আবরন বলল ,

– শাহরিদ আহনাফ আবরনের এত সময় নেই যে সবার রেজাল্ট দেখবে আর তাকে গিয়ে গিয়ে congrats করবে ।

পূর্ণতা বুঝলো যে আবরন শুধু ওকে গুরুত্ব দেয় বলেই ওর রেজাল্ট সম্পর্কে জানে । মনে মনে খুশি হয়ে আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন বলল ,

– পড়া শুরু করো ।

পূর্ণতা বলল ,

– এতগুলো ব‌ই আমি একা কি করে পড়বো ?

আবরন বলল ,

– আমি বাকি ৯ জনকে আসতে বলেছি । ওরা এলেই সব বুঝিয়ে বলবো ।

৫ মিনিটের মধ্যেই বাকি ৯ জন‌ও রুমে হাজির হলো । তার মধ্যে প্রেনা ও আছে । পূর্ণতার বুঝতে বাকি নেই যে প্রেনা ও ১ থেকে ১০ ভেতর আছে । সবাই টেবিলে গোল হয়ে বসতেই আবরন বলতে শুরু করলো ,

– এখানে ১০ টা ব‌ই আছে । সব গুলোই সাধারণ জ্ঞানের উপর । এই ১০ টা ব‌ইয়ের বাহিরে কোনো প্রশ্ন কুইজে থাকবে না । আর ১০ জনকে ১০ টা ব‌ই পড়তে হবে । প্রতিটা ব‌ইয়ের বিষয়বস্তু আলাদা কিন্তু সব বাংলাদেশের বিষয়েই প্রশ্ন থাকবে । ১০ জনকে ১০ টা ব‌ই পড়ে এক সাথে মিলে ১০০ প্রশ্নের উত্তর ৪০ মিনিটে শেষ করতে হবে ।
ধরো তুমি বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কিত বিষয়ের ব‌ইটা পড়লে । কুইজে অবস্থান সম্পর্কিত ১০ টা প্রশ্ন থাকবে যা একমাত্র তোমাকেই দাগাতে হবে । কারন অন্যেরা এই বিষয়ে না পড়ার কারনে সঠিক টা বলতে পারবে না । ঠিক এভাবে ১০ জনের জন্য ১০ রকমের মিলে ১০ টা করে টোটাল ১০০ টা প্রশ্ন উলোটপালোট করে দেয়া থাকবে । তখন তোমাদের ১০ জন কে একসাথে মিলে কাজ করে ১০০ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাগাতে হবে । যদি ভুল হয় কোনোটা তাহলে যেটা হবে সেখান থেকে ২৫% মার্কস কাটা যাবে । so , বি কেয়ার ফুল ।

আর ইউ আন্ডারস্ট‍্যান্ড গাইজ ?

সবাই বলল ,

– ইয়েস ।

– ওকে তো সবাই সবার পছন্দ মতো ব‌ই বেছে নিয়ে পড়তে শুরু করো । আমাদেরকে এবছর ১ম স্থান অধিকার করতেই হবে ‌ । এবং আরো একটা বিষয় তোমাদের মধ্যে যার বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে বেশি সঠিক হবে তার জন্য রয়েছে আলাদা পুরস্কার ।
আর কোনো প্রশ্ন আছে কারো ?

সবাই বলল ,
– না ।

– ওকে , সময় নষ্ট না করে পড়া শুরু করো । কেউ কোনো কথা বলবে না । অযথা সময় নষ্ট করবে না । আমি যাচ্ছি । পড়া শেষ হলে চলে যেও । কাল সাড়ে দশটায় ক্যাম্পাসে সবাইকে উপস্থিত চাই ।

এই বলে আবরন বেরিয়ে গেল । আবরন বেরিয়ে যেতেই সবাই পড়ার দিকে মনোযোগ দিল ।

পড়ার শুরুর ২ মিনিটের মাথায় ফোন ভাইব্রেট করে কয়েকটা ম্যাসেজ এলো । পূর্ণতার হাতেই ফোনটা ছিল । স্ক্রিনে আলো জ্বলতে ই খেয়াল করলো আবরন ম্যাসেজ দিচ্ছে । পূর্ণতা ম্যাসেজটা সিন করে দেখল তাতে লেখা ,

– পড়া শেষ হলে আমাকে কল দিও । আমি গিয়ে তোমাকে আর প্রেনাকে সাথে নিয়ে তারপর একসাথে মার্কেটে যাবো । আজ বোধয় সবার জুয়েলারি এন্ড অর্নামেন্টস কিনতে যাবে । বিয়ের মেইন ড্রেস ও কিনা হবে মেইবি ।

পূর্ণতা শুধু ছোট্ট করে লিখল ,

– ওকে ।

তারপর ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে মনে মনে ভাবল ,

– আর মাত্র ৬ দিন বাকি বিয়ের । দিনগুলো কতোটা জলদি জলদি চলে যাচ্ছে ।

…………………………………………………

দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট ,

পূর্ণতার পড়া প্রায় শেষের দিকে । এগুলো আগের থেকেই সব জানা । কারন আগে পড়েছে আবার পূর্ণতা এই ব‌ইটা নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার আগেও একবার রিভাইস করেছে এখন আবার‌ও রিভাইস করছে । সব মুখস্ত , ঠোঁটস্থ । আর ১০ পৃষ্ঠার মতো পড়া বাকি । সাড়ে ১০ টা থেকে ১ টা ৩০ অর্থাৎ সাড়ে ৩ ঘন্টা যাবৎ বসে পড়েই যাচ্ছে সবাই । পড়ার মাঝে পূর্ণতার ফোন ব্যাগের ভেতরেই ভাইব্রেট করতে করতে বেজে উঠল । পূর্ণতা ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে আবরন নামটা দেখেই কলটা রিসিভ করে ফোনটা কানে দিয়ে আস্তে করে বলল ,

– হুম ।

আবরন বলল ,

– পড়া শেষ হয় নি এখনো ? কোথায় তুমি ?

– লাইব্রেরিতেই আছি । পড়া প্রায় শেষের দিকে ।

– আচ্ছা , বাকিদের কি অবস্থা ?

– জানি না । সবাই মুখস্ত করছে ।

– ও , আচ্ছা । তুমি শেষ করো , আমি আসছি ।

– হুম ।

পূর্ণতাদের টেবিলে উপস্থিত একটা মেয়ে হঠাৎ স্বজোরে বলে উঠলো ,

– এখন বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার সময় ?? তুমি নিজে তো পড়ছো না সাথে আমাদেরকেও ডিষ্টার্ব করছো । তোমার মতো মেয়ে crew mate হিসেবে দরকার ছিল না যে পড়াশোনার চেয়ে বেশি বয়ফ্রেন্ড কে প্রায়োরিটি দেয় ।

প্রেনা সহ টেবিলে উপস্থিত বাকি ছেলে মেয়েরা অবাক হয়ে মেয়েটার কথা শুনছে আর পূর্ণতার দিকে তাকাচ্ছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– সরি , আমার উচিত ছিল এখান থেকে সরে কথা বলা । আমি সত্যিই খুব সরি ।

মেয়েটা আরো জোরে বলল ,

– আরে , তুমি যেখানে গিয়েই কথা বলো না কেন ক্ষতি তো তোমার জন্য আমাদের সবার‌ই হবে । কারন তুমিও তো আমাদের crewmate . তোমার পড়া বিষয়ে তো আমরা বাকিরা কেউ উত্তর দিতে পারবো না । তখন তো তোমার জন্য আমরা সবাই ই হেরে যাবো । এত‌ই যখন বয়ফ্রেন্ডের প্রায়োরিটি বেশি তাহলে মেডিক্যাল এ না পড়ে বিয়ে করে নিয়ে ঘর সংসার করলেই তো পারো ।

পূর্ণতা চুপ চাপ কথা শুনে যাচ্ছে । আবরন ফোনের অপর পাশ থেকে সবটা শুনে পূর্ণতা কে বলল ,

– পূর্ণতা ! ওর কথা শুনো না । এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দাও ! আমি আসছি ।

পূর্ণতা কিছু বলছে না । নিঃস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে । পূর্ণতার অবস্থা দেখে প্রেনা বসা থেকে উঠে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে বলল ,

– কিচ্ছু হয় নি । তুই চল ।

মেয়েটা বলল ,

– আরে তুমি ও পড়া ছেড়ে উঠছো কেন ? কি অবস্থা ? এ কাদের সাথে পড়লাম ?

আবরন লাইব্রেরীর দিকে ছুটে যেতে যেতে পূর্ণতা কে বলল ,

– পূর্ণতা ! লিসেন টু মি । সব জায়গাতেই কিছু হেটার্স থাকে । তুমি ওসব কথা ভুলে যাও ।

পূর্ণতা কলটা কেটে ব্যাগে ঢুকিয়ে বলল ,

– আমি দুঃখিত । আমি বুঝতে পারি নি ।

প্রেনা বলল ,

– আরে , তুই চুপ কর । তুই সরি কেন বলছিস ?

– আমার জন্য অনেকটা পড়ার সময় নষ্ট হয়েছে ।

মেয়েটা বলল ,

– আরে ন্যাকামি না করে পড়ো !

পূর্ণতা ব‌ইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়তে শুরু করতেই আবরন এসে হাজির হয়ে টেবিলে স্বজোরে বারি মারতেই সবাই কেপে উঠল ।

– what the hell is going on here ?

প্রেনা বলল ,

– ভাইয়া , ঐ মেয়েটা …….

আবরন প্রেনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– I know the girl . Stand up !

মেয়েটা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল ,

– yes .

আবরন বলল ,

– you are the girl who is on the top position in 1st years class test !

– yes

সবাই মেয়েটার দিকে আড় চোখে দেখছে কারন আবরনের ভয়ে সবাই কাপছে । এমনকি প্রেনা ও আবরনকে দেখে ভয় পাচ্ছে । পূর্ণতা চুপ করে আছে ।

আবরন বলল ,

– সমস্যা কি হয়েছে ? বলো !

মেয়েটা বলল ,

– ঐ মেয়েটা পড়া বাদ দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলছিল । আমি উচিত কথা বলতেই ওর সাথের মেয়েটা আমাকে অসম্মান জনক কথা বলতে শুরু করে ।

প্রেনা ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ,

– সমস্যার শুরু নিজে করে এখন ভালো সাজা হচ্ছে । আর ভাইয়ার সামনেই পূর্ণতার বয়ফ্রেন্ড আছে বলে তুই ঠিক করিস নি ! কপালে তোর শনি আছে । আহারে বেচারি । ভাইয়া কি বলে শুনি !

প্রেনা ভাবনা বাদ দিয়ে আবার কথা শোনায় মনোযোগ দিল ।

আবরন বলল ,

– তোমার কাছ থেকে আমাকে জানতে হবে যে মিস পূর্ণতা জামানের বয়ফ্রেন্ড আছে !

– অবশ্যই আছে । টেবিলের সবাই সাক্ষী !

– তোমার সাক্ষী প্রমাণের কোনো প্রয়োজন আমার নেই । আগে তুমি আমাকে বলো যে তুমি কি ভার্সিটির সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলে ?

– না ।

– That means you don’t know the rules !

– Which rules that you’re talking about ?

– আমাদের এই ভার্সিটিতে কোনো অন্যায় চলে না । আর কাউকে না জেনে বুঝে তাকে অপমানিত করা , অসম্মান করা তা তো চলেই না ।

মেয়েটা ভ্রু কুচকে বলল ,

– আমি কোথায় বিনা কারনে কাউকে অসম্মান করলাম ?

– করো নি বলছো ? এইযে একটু আগেই যে তুমি মিস পূর্ণতা জামানকে অকারনে এটা ওটা বললে সেটা অসম্মান ছিল , অপমান‌ও ছিল ।

– কিন্তু আমি তো বিনা কারনে এসব বলি নি !

– কারনটা এই যে ও বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিল ?

– অবশ্যই !

– তুমি ওপাশ থেকে ওর কথা না শুনেই কি করে বুঝলে যে ও বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিল ?

– ভাব দেখলেই তো বোঝা যায় ।

– তারমানে তুমি ওর কোনো কথা ই শুনো নি । তাহলে তো তোমার ডিষ্টার্ব ফিল করার প্রশ্ন ই উঠে না ।

– কিন্তু আমি দেখেছি , ও পড়া ছেড়ে কথা বলছিল ।

– কেন দেখবে ? তুমি নিজের পড়াতে কনসেন্ট্র‌ইট না করে অন্যে কি করলো না করলো তা দেখতে ব্যস্ত ছিলে নাকি ? তাহলে তো তোমার ও উচিত ছিল মেডিক্যাল এ ভর্তি না হয়ে সিনেমায় গিয়ে সারাদিন ড্রামা দেখা !

– কিন্তু !

– শাট আপ ! আমার কথা এখনো শেষ হয় নি ! তুমি না জেনে বুঝে আজ ওকে অপমান করার সাহস পেয়েছো কারনটা হচ্ছে তুমি আজকের টপার । কিন্তু টপ করলেই কিন্তু একটা মেয়ে পারফেক্ট হতে পারে না । পারফেক্টেশনের দিকটা দেখতে গেলে তুমি মিস পূর্ণতা জামানের পায়ের আঙ্গুলের নখের যোগ্যতাও রাখো না । তোমার মধ্যে যে অহংকার ছাড়া কিছু নেই তা তুমি নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছো । তুমি নিজেই নিজের অযোগ্য দিকটা সবাইকে দেখিয়ে দিলে । আরে ক্লাসে টপ করলেই টপার হ‌ওয়া যায় না , পারফেক্ট হ‌ওয়া যায় না এর জন্য সব দিক থেকেই পারফেক্ট হতে লাগে । আর মিস পূর্ণতা জামানের কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই । ওর ফোনের অপজিটে আমি ছিলাম । তোমাদের পড়া কার কতটুকু সে বষয়েই জিজ্ঞেস করছিলাম ।

মেয়েটা আবরনের কথা শুনে মাথা নিচু করে আছে ।

আবরন বলল ,

– পূর্ণতার জায়গায় তুমি থাকলে নিশ্চিত এতক্ষনে সত্যিটা বলে এর পাল্টা জবাব দিয়ে আরো ঝগড়ার সৃষ্টি করতে কিন্তু ওর কাছ থেকে শেখো । সব জায়গাতে উচিত কথার দাম নেই । এতে অশান্তি কমে না বরং বারে । জীবনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কথা না বলাই ভালো । চুপ করে শোনা ভালো । আর কথা লোকে তোমাকে তখন‌ই শোনাবে যখন তারা দেখবে তুমি তাদের ছাড়িয়ে উপরে উঠে যাচ্ছো । কিন্তু নিচে তাকিয়ে তাদের কথার জবাব দিতে গিয়ে উল্টে পড়ে যেও না যেন । আই হোপ , সবাই আমার কথা বুঝতে পেরেছো । আর তুমি ! তোমাকে চাইলে আমি শাস্তি দিতে পারতাম কিন্তু দিলাম না । লাষ্ট ওয়ার্নিং ফর ইউ , ভালো হয়ে যাও ।

প্রেনা মনে মনে খুশি হয়ে বলল ,

– ভালো হয়ে যাও মাসুদ 😁

আবরন সবার সামনে থেকে পূর্ণতা আর প্রেনাকে সেখান থেকে সাথে করে নিয়ে গেল ।

…………………………………………………

বসুন্ধরা সিটি সেন্টারের লেভেল ৪ এ সবাই ঢুকেছে সবাই শাড়ি আর লেহেঙ্গা কিনবে বলে । আধিরা আনজুম আর মিলি রহমান পূর্ণতার বিয়ের দিনের জন্য লেহেঙ্গা দেখছে ।

হলুদের শপিং অলরেডি শেষ । বর – কনের এক‌ই ডিজাইনের ম্যাচিং হলুদ পাঞ্জাবি এবং শাড়ি কেনা হয়েছে । এবং উপস্থিত বাকি মেয়েরা সবাই সেইম শাড়ি এবং সব ছেলেরা সেইম পাঞ্জাবি পড়বে ।

সায়ন পূর্ণতার পাশে বসে ওকে শাড়ি পছন্দ করে দিচ্ছে কিন্তু পূর্ণতার কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে না । ও কোনো ভাবেই এ বিষয়ে মন বসাতে পারছে না ‌ । ওর মাথায় শুধু একটা চিন্তা ই ঘুরপাক খাচ্ছে ,

– উনি কি সত্যি ই পারবেন সায়ন ভাইয়ার সাথে আমার বিয়েটা ক্যান্সেল করতে নাকি উনি জল আপুকে বিয়ে করে আমাকে সায়ন ভাইয়ার সাথে বিয়ে করতে দেখে খুশি হবেন ??

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here