#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন
পর্ব— ৯
নিলের ওপর সাদা ড্রেসটা পড়ে নিলাম ঝটপট সাথে মুক্তোচুড়ি জোড়া.. হাতে আয়নাওয়ালা রিংটা পড়ে আবার ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম.. ছাদের কাছেই কাকলিআপু আর মেঘলা আপু বসে আছে.. আমাকে দেখে চোখ ছোট করে তাকালো দুজন.. আমি হালকা ইতস্ততভাবে যেই ওদের ক্রস করবো মেঘলা আপু হাতধরে ওদের পাশে বসিয়ে দিল.. আমি হালকা ঢুক গিলে ওদের দিকে তাকালাম.. আজব এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন মনে হচ্ছে আমি কোন গিনিপিগ.. এখনই ওরা আমার ওপর ওদের ইক্সপেরিমেন্ট করবে…
আমার সকল চিন্তার অবসান ঘটিয়ে মেঘলা আপু বলল– তুই কি এইখানে অনুষ্টান এনজয় করতেছিস নাকি ফ্যাশন দেখাচ্ছিস?? এতো ড্রেস কেন তোর পড়া লাগে..
আমি আমাতাআমাতা করে বললাম— আসলে আপু আমি কম্পরটেবল ফিল করছিলাম না তাই..
ও আমার দিকে স্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রইলো.. তখন আচমকা কাকলি আপু বলে ওঠলো— তুৃমি এতোক্ষন কই ছিলা?? সুনান ভাইও ছিল না…
আমি ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে— আপু আমি তো ড্রেস চেন্জ করছিলাম. আর ওনি ছিল কি ছিল না তাতে আমার কি…
তখন কাকলিআপু হঠাৎ আমার হাত ধরে বলল– দেখ রোদেলা.. আমি আমার ভাইয়াকে চিনি.. ও রোজ ক্রাশ খাই আর ফ্লাটিং করে মেয়েদের সাথে.. কিন্তু ও সিরিয়াস না।। এখন তুৃমিও যদি ওর সাথে অবুজ হয়ে যাও.. তো পরবর্তীতে অনেক প্রবলেম দেখা দিবে..আর তুৃমি তো জান তোমার আব্বু আর আমার আব্বু একজন অন্যজনকে সহ্য করতে পারে না.. আর আমি চায়না আম্মু আর আন্টির সম্পর্ক খারাপ হোক..
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম মনে হচ্ছে এতোক্ষন সেমিকোমায় ছিলাম আর এই মাত্র জ্ঞান এসেছে আমার.. সব কথা যেন মাথার ওপর দিয়ে সাইসাই করে ওড়ে গেল..
আমি চরম বিস্ময় নিয়ে আপুর দিকে তাকালাম আর আমার বোন খুবই স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে অনেক আকাশ বাতাশ চিন্তায় ব্যাস্ত. আমি তাকে আর ঘাঁটালাম না আবার এমন কিছু বলবে হয়তো আমার সহ্যের বাইরে হবে.. আমি কাকলি আপুর দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বলল– আপু আপনি কি বলছেন এইসব?? আমি কিছুই বোঝতে পারছি না..
আপু হালকা অবাক হয়ে বলল– তুমি কি বুঝ না নাকি নাটক করছ.. তুমি সুনান ভাইয়ের সাথে প্রেম করছ আর তাকে দেখানোর জন্য এতোবার ড্রেস চেন্জ করছো.. আর এতোখন তার সাথেই কাটিয়ে আসছ.. আর..
হঠাৎ মেঘলা আপু কথা বলে ওঠলো সে গম্ভির ভাবে বলল– ওর সাথে সুনান ভাইয়ের কোন সম্পর্ক নেয়.. আমি আমার বোনকে চিনি.. ওর সাথে অন্য কারো নাম মিলালে হয়তো আমি মেনে ও নিতাম কিন্তু এইটা আমি জিবনেও মানবো না যে সুনান ভাইয়ের সাথে ওর কোন সম্পর্ক আছে..
কাকলি আপু হয়তো কিছুটা অপমান ফিল করলো.. হাজার হোক তার ইতো ভাই.. আার তার একটা খুব বদঅভ্যাস আছে আর তা হলো নিজেকে রাইট প্রমানের জন্য গলাবাজি আর ওল্টাপাল্টা প্রমান.. আর অন্যদিকে মেঘলা আপু হলো প্রচন্ড ঘাড়ত্যাড়া.. সহজে কোন সিদ্ধান্ত নিবে না সে.. কিন্তু যখনই নিবে ওইটা থেকে একচুল ও নড়বে না ও.. কাকলিআপু প্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে বলল– মেঘলা,, তুমি বোঝছ না.. আমি তোমার বোনকে খারাপ বলছি না.. শুধু বলছি বয়সটা ভালো না.. ও করলে ও করতে পারে.. আর আমার ভাইয়াওতো দেখতে খারাপ না.. আপু অবিচল হয়ে বলল– ভালো খারাপ জানি না আমি.. তবে আমি জানি এইটা ও করে না..
কাকলি আপু অধৈর্য হয়ে বলল– মেঘলা তুমি ছোট থেকেই এমন একঘুরে..
তখন ইমা আপু ওদের মাজখানে এসে দাঁড়ালো তারপর বলল– কে ছোটবেলা থেকে কেমন আমি জানি.. তোদের এখন এইসব নিয়ে চিন্তার দরকার নেই.. আর কে কারসাথে কি করলো সেইটা এই বিয়েবাড়িতে বলার দরকার নেয়.. যে যার মতো কাজ কর।। এইবলে তিনি কাকলিআপুর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল..
আমি ভূতের মতো তাকিয়ে রইলাম সেদিকে.. হঠাৎ মেঘলা আপু কাধে আলতো হাতদিয়ে বলল– হাসনাত ভাইয়ের সাথে কি চলে??
আমি হালকা ঢুক গিলে তাকালাম.. এইজন্যই হয়তো বড় বোনকে মার পরে ধরা হয় কারন তাদের নজর সর্বত্র থাকে.. আমি আমাতাআমাতা করে বললাম— কি চলবে..ঝগড়া ই তো চলে..
ও হালকা হেসে বলল– ছেলে হিসেবে খারাপ না ওনি.. সুনান ভাই থেকে হাজার গুন ভালো.. কাকলি ওর ভাইকে দেখছে কিন্তু আমি হাসনাত ভাইয়ের পাগলামিগুলো দেখছি।। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি হেসে– আরে ওনিতো এমনিতেই পাগল.. ভালো কোনদিন ছিল..
আপু এখনো সেইমলুক দিয়ে আছে.. গলা শুকিয়ে আসছে আমার. ও কোনদিন প্রেম করে নি.. আর আমি এই বয়সে এতো কাহিনি শুনলে নির্ঘাত আছাড় দিবে.. তখনই ইফফাত হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল স্টেজে ওঠার জন্য.. আর আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম…
স্টেজে ওঠে ইষা আপুকে কেক খাওয়াতে খাওয়াতে হঠাৎ ইষা আপু বলল– সুনান ভাই নাকি তোমাকে অনেক ভালোবাসে?? চায়লে ওনার সাথে প্রেম করতে পার.. ওনি অনেক ভালো…
আমার মেজাজ এখন চরম ভাবে বিগড়ে আছে.. ইচ্ছে করছে এই ইষাকে তুলে স্টেজ থেকে ফেলে দি.. তিলকে কিভাবে তাল বানায় এই মেয়ের চেয়ে ভাল যেন কেউ জানে না… একটা কথা কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে সে..
আমি দাত কটমটিয়ে বললাম — নিজের বেশি ভালো লাগলে গলায় ঝুলিয়ে বসে থাক… অন্যকে কেন বল নাকি জিবনভাইয়ের জায়গায় সুনান ভাইরে শাদি মুবারক করবা আর একবার ভেবে দেখ..এখনো সময় আছ.. এই বলে আমি স্টেজ থেকে নেমে এলাম.. মেজাজ অতিরিক্ত খারাপ আমার..
রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে বাইরে চোখ রাখলাম.. জিবনটা রুটির মতো ত্যানাত্যানা হয়ে গেছে.. না হয় যাকে আমি ভালোবাসি সে বোঝেনা.কিছুই. আর অন্যরা অনেককিছু বুঝে যায়.. আজ কেন যেন চোখ ফেটে কান্না আসছে.. হঠাৎ হাসনাত ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়ে হাতে একটা কোক ধরিয়ে নাক টেনে বলল — এতোখন পর শুনছিস.. আমি তো অনেকখন ধরে শুনতেছি..
আমি অধৈর্য হয়ে বললাম— কিন্তু ওকে নিয়ে আমি এইসব কোন চিন্তা করি না….
সে শান্ত কন্ঠে বলল– এইসব বাদ দে..এইবলে সেও তার দৃষ্টি শূন্যে রাখলো.. তারপর হঠাৎ আমার হাত ধরে বলল– প্লিজ ওর সাথে আর কথা বলবি না তুই.. প্লিজ রিকোয়েস্ট টা মানবি তুই কথা দে আমার.. এইসব সহ্য হয়না আমার. আমার তিন বছরের সাধনা এইসব বাচ্চামো করে ধ্বংস করিস না. প্লিজ… আর মাত্র একবছর..
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম— কি তিন বছর আর একবছর??
সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল– কিছুই না.. তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বলল– আন্কেলের তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে তাইনা.. ভার্সিটি তে পড়বি তুই..
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে.. হাসনাত ভাইকি পাগল হয়ে গেছে কিসের মাঝে কি বলে.. আমি হাসনাত ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে — ভাইয়া কি বলেন বুঝি নাই..
সে হুটকরে বলল– গান শুনবি??
আমাকে যেন কেও কারেন্টের সক দিয়েছে এইভাবে চমকে ওঠলাম আমি.. যেই মানুষকে সারাদিনে একটা গান গায়তে বললে সে গান গায় না.. সে আজকে নিজে নিজে গান গায়বে বলল। আমি গাড় কাত করে বললাম শুনান..
সে হাত ধরে আমাকে সিঁড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিল তারপর আমার পায়ের কাছে বসে পড়লো.. তারপর সে গান ধরলো…
tu tu he wahi jisko he jina, mevi raha tera pass🎵
tu safar mera,, he tu hi mera manjil,, tere bina gojara… a dil he moskil..
le moje ajmaje tere komi,, mere harkami ko he teri lagami.. 🎶
pal pal dil ki pas,, tu rehetiho,,,jibonme miti pias ea kehetiho…
harsame akopar tera acol leherate..har roj dilpar tere barat leherahe…
me cas letiho… tera kosbo atihe.. ea meheka mehekasa atbar atihe… mere dilki darkan ko. tere nam letihe…..
pal pal dil ki pas… tom rehetiho
…
একেক গানের একেক লাইন বলে সে চলে গেল.. আমার আজ কেন যেন ইচ্চে হচ্ছিল তাকে একটু ধরি.. কিন্তু কেন যেন আমার ভিতর জড়তাযুক্ত ফিল আসছে.. আমি সেইখানে বসে রইলাম.. হঠাৎ মুনিরা আমার পাশে বসে বলল– হাসনাত ভাই আজকে কান্না করছে কেন?
আমি অবাক হয়ে তাকালাম তারপর বলললাম— তোর হাসনাত ভাইয়ের চোখের পানি বেড়ে গেছে তো তাই ঝড়ঝরিয়ে পড়ে যাচ্ছে..
মুনিরা আমার চেহারা দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলল না. আমি ঘুমাতে চলে যাব ভেবে যেই রুমে যাব দেখি হাসনাত ভাই হাটুমোড়ে বসে আছে।। আমি তার সামনে বসতেই সে চোখ তুলে তাকালো তারপর বলল– জিবন ভাইয়ার হলুদের ড্রেস ছেলেদের সাদা পান্জাবী আর মেয়েদের মেজেন্ডা ড্রেস যার যেইটা ইচ্ছা.. শাড়ি, গাউন.. আর আমি চায় তুই..
আমি তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম— আমি গাউন পড়বো…
সে আনমনে হেসে দিল.. তাকে কেমন অদ্ভূত দেখাচ্ছে চোখ লাল আর মুখে হাসি.. তারপর বলল– ঠোটে লাল লিপিস্টিক দিস না আবার.. কাকের লাল ঠোটের মতো দেখাই..
আমিও ফিক করে হেসে বলললাম— তোমাকে সাদা পান্জাবীতে ছেলে বিধবার মতো লাগবে..
সে মুখ বাঁকিয়ে বলল– কচু.. আমাকে হিরোদের মতো লাগে.. ইস্পা বলেছে..
মুহুর্তেই আমার ইচ্ছে হলো তার চুলগুলো ছিড়ে উরিয়ে দি.. দাত কটমটিয়ে বললাম— আমি কালকে শাড়ি ই পড়বো তাও নাইকাদের মতো করে.তারপর দেখবো ছেলেরা শুধু আমারেই দেখবে… হু..
সে দাত কটমটিয়ে বলল– তুই শুধু পড়িস.. তোরে ফুফির পুকুরে চুবিয়ে মারবো আমি..
আমি ঠেলে রুম থেকে ধাক্কিয়ে বের করতে করতে বললাম— দেখা যাবে আমার বুঝি হাত নেয়..
এই বলে তাকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলাম.. সে দরজায় পরপর কয়েকটা লাথি দিয়ে চলে গেল.. আমার ইচ্ছে হচ্ছে একে খালামনির পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে দিয়ে দিতে. শালা বজ্জাত ডেভিল
চলবে