#ভিনদেশী
#পার্ট ঃ৩
#আদ্রিয়ানা নিলা (ছদ্মনাম)
সকালের সূর্যের আলো শ্রুতির মুখে পড়তেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিজেকে বেলকনির একটা চেয়ারে আবিষ্কার করে। কালকের রাতের ডিনারের পর এখানেই বসে ছিলো। কখন যে ঘুমিয়েছি টের পায়নি৷ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের ভিতর গেলো, ৭ঃ৩০ বাজে।
ফ্রেস হয়ে নিচে নামল। ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে বাবা পত্রিকা পড়ছে৷ আপু এখনও উঠে নি। শ্রুতি বাবাকে সকাল আর রাতরে ছাড়া পায় না। তিনি একজন উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরিজীবী। শ্রুতি বাবার কাছে গিয়ে বসলো।শ্রুতির দিকে একবার তাকিয়ে পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলল,
–কি ব্যাপার আমার মামনির ঘুম ভেঙ্গেছে?
–হিম। বাবা আপুকে যে দেখছি না। আপু তো আমার আগে উঠে। আপু কোথায়?
–তোর আপু ঘুমাচ্ছে।
–কেন?আজকে কী আপু ভার্সিটিতে যাবে না?
তখন শ্রুতির বাবা উত্তর দিতে যাবে,তার আগেই শ্রুতির মা চা নিয়ে আসতে আসতে বলল,
–আরে বাবা, ভুলে গেলি৷ কালকে সাদাফের এনগেইজমেন্ট। শপিং করতে যাবো একটু পরে। তাই আজকে কোথায় যাবে না তোর আপু।রেডি থাকিস আমরা ১০দিকে বের হবো।
শ্রুতির মুখটা আবার মলিন হয়ে গেল। যাকে সে ভুলতে চায় তার কথাই কেন, সবাই বার বার মনে করিয়ে দেয়? কেউ কী ওর মনের কষ্টটা বোঝে না? শ্রুতি আর ওখানে থাকলো না।সোজা নিজের রুমে চলে গেল। শ্রুতির মা শ্রুতির যাওয়ার পানে একবার তাকিয়ে তারপর শ্রুতির বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
–মেয়েটা এভাবে চলে গলে। চা আনলাম তাও খেল না।
শ্রুতির বাবা বললো,
–তা আমি জানবো কীভাবে? যাও চা দিয়ে আসো।
শ্রুতির মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্রুতির রুমের দিকে গেল ।
এদিকে শ্রুতি রুমে এসে বিছানায় বসল আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,
আমি তো সাদাফ ভাইয়ার সামনে যাবো না। আর সাদাফ ভাইয়ার পাশে অন্য কোনো মেয়েকে দেখে নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারবো না। খুব কষ্ট হবে। তাহলে কী করবো? শপিং করতে যাবো? এনগেজমেন্ট না গেলে শপিং করে লাভ কী? বাবা মা কী মানবে? দুইটার একটায় তো যেতে হবে না হলে সবাই সন্দেহ করবে। একটা কাজ করি, শপিং করতে যাই। কিন্তু কালকে এনগেজমেন্ট যাবো না।
শ্রুতি এইসব ভাবনায় মগ্ন তখন দেখে ওর মা ডাকছে । শ্রুতি মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল,
–আম্মু ডাকছো না?
–তোকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি।কোনো সারাশব্দ নেই।নিচ থেকে হঠাত্ চলে এলি কেন? আর কী এতো ভাবিস? শরীর কী ভালো না?
–না, মা।আমি ঠিক আছি। কী বলবা বলো?
শ্রুতির দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। শ্রুতি মাকে জিজ্ঞাসা করল,
— এই জন্যই আরছো৷
–হিম।
বলেই চলে গেলেন।
শপিংমলে,
শ্রুতির মা বাবা অন্যদিকে গেছে। আর শ্রুতি আর শ্রুতির বোন একসাথে কিনতেছে। শ্রুতির কেনা আরো আগেই হয়ে গেছে। ওর শপিং করতে বেশি ভালো লাগে না। এদিকে ওর আপু পাশে, একবার এটা দেখছে তো ওটা দেখছে। কোনোটাতেই নাকি তাকে ভালো লাগেছে না
শ্রুতি বিরক্ত হয়ে বলল,
–আপু, আর কতো দেখবা। সবগুলোই সুন্দর। সবগুলোতেই তোমাকে ভালো লাগছে।
–না, একটাতেও আমাকে ভালো লাগছে না।তুই একটা পছন্দ করে দে।
শ্রুতির ওর বোনের সাথে কথা বলতে ছিল, তখন দেখলো সাদাফের সাথে একটা মেয়ে শপিংমলে ঢুকছে। মেয়েটা ওয়েস্টার্ন পেশাক পড়া। সাদাফের একটা হাত জড়িয়ে ধরে ভিতরে ঢুকে অন্যদিক চলে গেল। শ্রুতিকে খেয়াল করেনি।শ্রুতি মনে মনে বলল,
–সাদাফ ভাইয়ারা নাকি কালকেই শপিং করছে তাহলে আজকে আবার কী? আর ওই সাথে মেয়েটা বা কে? ওইটাই মনে হয়, সাদাফ ভাইয়ার হবু বউ। তাহলে এখানে থেকে চলে যেতে হবে নাহলে সাদাফ ভাইয়ার মুখোমুখি হতে হবে।
শ্রুতির চোখের কোনে আবার অশ্রু জমা হলো। সবার আড়ালে সেটা মুছে নিয়ে সোহাকে বলল,,
–আপু আমার তো সব কেনা হয়ে গেছে। আমি বাসায় যাই। তুমি বাবা -মার সাথে এসো।
সোহা শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বললো,
–কেন?তুই কী এখনি যাবি। আমি তো কিছুই কিনলাম না।
–আপু আমার শরীর টা ভালো লাগছে না। আমি বাসায় যাবো।
এই বলে শ্রুতি শপিংপল থেকে যতো দ্রুত সম্ভব বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেল।
___________________________________________
সময়ের কাটা ছুটে চলছে আপন গতিতে। দিনকে দিন পেরিয়ে কয়েক সপ্তাহ চলে গেছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে মাসও শুরু হয়ে যাবে। আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে আর অনেক আগেই। শ্রুতি বেলকনিতে বসে আনমনে বাইরের দিক তাকিয়ে আছে। আকাশটা মেঘে ঢাকা। হয়তো কীছুক্ষণের মধ্যেই তাল কোল ঘেঁষে অবিরাম ধারায় বর্ষণ শুরু হবে। শ্রুতির মনের আকাশটাও অন্ধকারে কালো মেঘে ঢাকা।সাদাফের এনগেজমেন্টের পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এনগেজমেন্ট পার্টিতে শ্রুতি যায়নি। মিথ্যা অজুহাত দেখিয়েছে। বাবা -মা, আপুও কিছু বলে নি। কারণ তারা যানে শ্রুতি অনেক জেদি । তাই জোর করেনি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো বর্ষণ। কয়েকদিন যাবত্ শ্রুতি রুম থেকে বের হয় না। বেশিরভাগ সময়ই নিজেকে ঘর বন্দি করে রাখে। খাওয়া -দাওয়া ব্যতিত আর কোনো কাজে রুম থেকে বের হয় না৷ নিজে কেমন অগোছালো হয়ে গেছে। আগেই সেই চঞ্চল শ্রুতি আর নেই। রুমে শুয়ে, বসে, আনমনে ভাবতে ভাবতে দিন পেরিয়ে যায়। নিজেকে নিয়েই ভাবছে। অন্যকে নিয়ে সে আর ভাববে না। নিজের লাইফ, ক্যারিয়ার কীভাবে গড়বে সেই গুলো নিয়েই ভাবনায় বিভোর থাকে। নিজের লক্ষ্য স্হির করেছে সে। সেই লক্ষ্য পূরণ করে হবে তাকে। তাই সে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সবার থেকে দূরে চলে যাবে। খুব দূরে। যেখানে সাদাফের মতো কারো অস্তিত্ব থাকবে না। মন জুড়ে থাকবে, লক্ষ্য পূরণের মনোবল। সে জানে এটাই তার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে কিন্তুসবাইকে কীভাবে মানাবে, সেটাই একমাত্র টেনশন তার। হঠাৎ মায়ের ডাক পড়তেই শ্রুতি আপন ভাবনা থেকে বের হলো। ঘরে ঢুকে দেখলো খাবারের সময় হয়েছে। শ্রুতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাবার টেবিলে চলে গেল।
টেবিলে এসে দেখে সকলেই বসে আসে। শ্রুতি সকলের দিকে তাকিয়ে একটা স্মিত হেসে নিজের টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করল। খাওয়ার শেষ পর্যায়য়ে শ্রুতির বাবা বললো,
–কিছুকি ভেবোছো শ্রুতি নিজের লাইফ নিয়ে? এসএসসি দিলে একমাস হলো? ভার্সিটিতে টেকার জন্য কোচিং করবে না নাকি?
পাশ থেকে শ্রুতির মা বলে উঠল,
–ওকে তো কয়েক দিন ধরে দেখছি ঘর থেকেই বের হয় না। সারাদিন ঘরে বসে কী করে কে যানে? ও ভালো ছাত্রী। কিন্তু এই রকম বসে আছে কেন? ওর তো আর বেশি চিন্তা করা উচিত।পাশের বাসার সেজোথী তো আগেই মেডিকেলের কোচিং শুরু করছে। ওর মা কালকে বাসায় আরছিল তখন বললো। শ্রুতির কথা জিজ্ঞেস করছিল আমি কিছুই বলেনি। ও পড়ালেখা নিয়ে এতো হেলা করতেছে কেন? পাবলিক ভার্সিটিতে বা মেডিকেলে চান্স না পেলে বেসরকারিতে কিন্তু পড়াতে পারবো না।আগেই বললাম। বড় বোনের আগেই ছোট বোনের বিয়ে দিয়ে দেব।
শ্রুতি ওর মায়ের কথা শুনে সোহার দিকে তাকালো। ও মিটেমিটে হাসতেছে। শ্রুতির বাবা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–তোমরা চুপ থাকো, আর হাসাহসি বন্ধ করো আমাকে কথা বলতে দাও।
তিনি শ্রুতি দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
–কী সিদ্ধান্ত নিয়েছো শ্রুতি নিজের লাইফ নিয়ে? তোমার মায়ের কথায় কিছু মনে করো না। আমি আমার মেয়েকে লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে দেবো না।তাই তোমার কী ইচ্ছা বল।
শ্রুতি বুঝতে পারলো এইটাই আসল সুযোগ তার মনের কথা বলা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলে উঠল,
–বাবা, আমি বিদেশে পড়তে যেতে চাই। বিশেষ করে আমেরিকা।
,,,(চলবে)