ভিনদেশী পর্ব ৩০+৩১+৩২

#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্টঃ৩০

লস অ্যাঞ্জেলস শহর। নাম শুনে নি খুব কম মানুষই আছে। বহু দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সুবাদে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের এক ধরনের গৌরবময় ও চাকচিক্যমণ্ডিত মূর্তি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। মহাসমুদ্রপারের বহু বেলাভূমি ও হলিউডের সব মহাতারকাদের শহর লস অ্যাঞ্জেলেস।

শ্রুতি সহ সবাই সকাল ১০টার দিকে পৌঁছে গেছে লস অ্যাঞ্জেলস এ৷ এখানের রিসোর্ট টা আগের চেয়েও ভারী সুন্দর। রিসোর্টটার এক পাশে রয়েছে সুইমিংপুল। আর এখনকার বাগানটা আগের বাগানের চেয়ে দ্বিগুণ। বাগানের পাশে রান্না করার জায়গা আছে।

রিসোর্টে এসেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো।আজকে থার্টি ফার্স্ট নাইট ।বছরের শেষ দিন৷ এই দিন এখানের নাগরিক রা ছোটে নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে বল -ড্রপ দেখতে। অনেকেই ছুটে যাবে ম্যানহাটানে। আবার কেউ কেউ মেতে উঠবে আতশবাজি ফোটানোর উত্সবে।কিন্তু শ্রুতিরা কোথায় ঘুরতে যাচ্ছে না৷তারা আজকে নিজেরা রান্না করে নৈশভোজ করবে। আজকে আরও একটা আনন্দ আছে ক্যালিফোর্নিয়ার গানের কমপিটিশনে তারা সেকেন্ড হয়েছে। সেই আনন্দ।

জ্যাক, লিও, আরিচসহ আরও দুই তিন ছেলে বাজারে গিয়ে গিয়েছে। আর শ্রুতি, এলিশা, লুসি সহ যারা রিসোর্টে আছে তারা তাঁবু টানাতে ব্যস্ত।পাশেই রয়েছে রান্না করার জায়গাটা। আর এই খানে বসেই রাতে খাবে তারা।শ্রুতির মনে পড়ছে বাংলাদেশের কথা। তারাও এই দিনটায় কত মজা করতো। কত রোমাঞ্চকর মূহুর্ত মিশে আছে এই দিনটায়। কিন্তু সেই নিজের মাতৃভূমি পৃথিবীর উল্টো দিকে।

এই রিসোর্ট তারা আজকের দিনের পর আর একদিন আছে। এই খানে শীতকাল মৃদু, কিন্তু কুয়াশা পরে রাতে। যার কারণে তাবু টানানোর আয়োজন। না হলে খোলা আকাশের নিচে বসাই খেতো।

জ্যাকরা বাজার থেকে আসলো। কী কী আনলো দেখতে লাগল শ্রুতি। মাংস,কিছু শাকসবজি, মাছের মধ্যে আছে লবস্টার, ক্যাটফিস, পমথ্রেট, সকার মাছ,কাকড়া সাথে৷ আরও অনেক কিছুই এনেছে।আলাদাভাবে কিছু ড্রিংকস ও এনেছে। শ্রুতি সব দেখতে পারলো না।

–এই নেও শ্রুতি তুমি যা যা আনতে বলেছিলে তা এনেছি।লিস্ট ও আছে। সব ঠিক আছে নাকি দেখো।

শ্রুতি জ্যাকের হাত থেকে বাজার ব্যাগটা নিল।ও আলাদা ভাবে বাজার করতে দিয়েছিল। কারণ ওরা অনেক মাংস, মাছ এনেছে যা মুসলমানদের খাওয়া হারাম। আর ওরা যেভাবে রান্না শ্রুতি তা খেতে পারবে না। বাংলাদেশিরা মসলা প্রিয় জাতি। কিন্তু এখানে মসলা খুব কম খাওয়া হয়। আর ওরাও শ্রুতির কাছে আবদার করেছিল তারা নাকি বাংলাদেশি খাবার টেস্ট করবে। শ্রুতির পক্ষে এতোজনার খাবার রান্না করা সম্ভব নয়। তবুও না করতে পারি নি। তাই কিছু মাছ, মাংস সবজি আনেছি।দু, তিনটা পদ রান্না করবে।
শ্রুতি ব্যাগ থেকে সব কিছু বের করে দেখল ঠিক আছে নাকি।রান্না বিকালে করবে।এখন ১২টার মতো বেজেছে৷ তাই সবাই সব সরঞ্জাম ঠিক করছে।

এমন সময় কেউ দৌড়ে এসে জ্যাককে জড়িয়ে ধরলো। এতো দ্রুত ঘটনা ঘটল যে সবাই বুঝতে বেগ হলো মানুষটা কে!
পাশ থেকে লিও উচ্ছসিত হয়ে বললো,

–What a surprise Jesika! তুমি এখানে কীভাবে?

শ্রুতি জেসিকার নাম শুনে মাথা তুলে তাকালো।মেয়েটার পড়নে একটা সর্ট স্কার্ট আর উপরে লেডিস হাতওয়ালা শার্ট। জেসিকা শ্রুতিকে খেয়াল। শ্রুতির চোখ পানিতে ভরে ওঠলো। জেসিকা জ্যাককে জড়িয়ে ধরেছে বলে তার কষ্ট হচ্ছে।

জেসিকা জ্যাক কে ছড়ে লিওর দিকে তাকিয়ে বলল,

–তোমরা এখানে পার্টি করছো আমি না এসে পারি!জ্যাক সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?

জ্যাক জেসিকাকে এখানে দেখে অবাক হয়েছিল। পরবর্তীতে মাথায় রাগ উঠলো। কালকে বলছিল কাজ করতে এসেছে আর আজকেই কিছু না হাজির।জ্যাক শ্রুতির দিকে তাকালো। শ্রুতি জ্যাককে তার দিকে তাকাতে দেখে তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে সবজি কাটায় মনোযোগ দিল। তার চোখ টল মল করছে।
জ্যাকের চোখ এড়ালো না যে শ্রুতির চোখের পানি। সে কঠোর দৃষ্টিতে জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল,

–তোমাকে তো আমি বলেছিলাম আমরা এখানে কাজ আছে। আমরা কোনো ফূর্তি করতে আসে নি। তাও তুমি এসেছো কেন?

জেসিকা মুখটা মলিন হয়ে গেলো। সে ভেবেছিল জ্যাক খুশি হয়েছে। কিন্তু না জ্যাক তার আশায় খুশি হয়নি। জেসিকা ন্যাকা কান্না করে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,

–জ্যাক আমি আসায় তুমি খুশি হওনি তাই না? তুমি আমার সাথে সব সময় এই রকম ই করো৷
জেসিকা নিজের লাগেজ এর হ্যান্ডেল ধরে বলে,
–আমি চলে যাচ্ছি। থাকো তুমি।

জেসিকা চলে যেতে নিলে,
এলিশা জেসিকার সামনে দাড়িয়ে বলল ,

–জেসিকা এসেছো যখন যেয়ো না। তুমি এসেছো বলে আমরা সবাই খুশি হয়েছি৷ কান্না করো না৷
এলিশা জ্যাকের দিকে ঘুরে বলল,
–জ্যাক তুই জেসিকার সাথে এমন বিহেভ করছিস কেনো! মেয়েটাকে আবার চলেও যেতে বলছিস।

জ্যাক বিরক্ত হলো৷ এই মেয়েটাকে তার কেনো জানি সহ্য হচ্ছে না। কথায় কথায় ন্যাকা কান্না করে। কিছু বলতে পারে না ওর বাবাটার জন্য । জ্যাক কোমড়ে হাত দিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,

–আমি ওকে কী যেতে বলেছি। আমি বলেছি ও এসেছে কেন?

লিও বললো,

–হয়েছে থাম তো তোরা। এলিশা ওকে তোমাদের রুমে নিয়ে যাও তো।

এলিশা জেসিকাকে নিয়ে ওদের রুমে চলে গেলো।জ্যাক শ্রুতির দিকে তাকিয়ে কোথায় যেনো গেলো।

শ্রুতি দুপুর বেলা ক্লান্ত হয়ে রুমে ঢুকল যে রুমে তারা থাকে। নিজের ঘাম মুছতে মুছতে দেখলো ঘরে কেউ নেই৷ শ্রতি মনে মনে প্রশ্ন করল,

–এরা সবাই কোথায় গেলো?

শ্রুতি এইসব না ভেবে লাগেজের খুলতে লাগলো। প্রচুর ক্লান্ত সে। শাওয়ার নিতে হবে।
শ্রুতি নিজের লাগেজ থেকে জামা কাপড় বের করে বাথরুমে যাবে তখন শুনতে পেলো, বিছানায় কারো ফোন বাজছে। শ্রুতি এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো স্কিনে” ডেড”লেখা। শ্রুতি ফোনটা এপিট ওপিট করে দেখে বলল,

–এটা কার মোবাইল?এলিশা আর লুসির তো এরকম ফোন না!

হঠাৎ শ্রুতির গালে কেউ ঠাস করে চড় মেরে ফোনটা কেড়ে নিলো।

–এই তুমি ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটা? তুমি এখানে কী করছো? ও বুঝেছি তুমি ওদের সাথে এসেছো। আর এখন রুমে এসে আমার ফোন চুরি করছো।

জেসিকা চেচিয়ে কথা গুলো বলল৷ অতঃপর জোরে জোরে বলল,

–তোমরা দেখে যাও আমি চোর ধরেছি। দেখে যাও।

শ্রুতি চুপচাপ মাথা নিচু করে আছে৷ চোখ টলমল করছে। থাপ্পড় টা অনেক জোরে মেরেছে। জেসিকার সাথে তার কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আর ও এখন কিছু বললেই একটা ঝগড়াটে পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে সব আনন্দ নষ্ট হয়ে যাবে। নিজেকে সংযত না রেখে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তর্কে জড়ানোর মতো লজ্জার আর কিছু নেই ।কেউ যদি তর্কে জিততে চায় তবে তাকে তাই করতে দেওয়া উচিত।তাই চুপচাপ থাকাই শ্রুতি শ্রেয় মনে করছে৷ নাহলে সব আনন্দই মাটি হয়ে যাবে যা শ্রুতি চাই না৷

সবাই জ্যাকের রুমে ছিল৷ জেসিকার চিত্কার, চেচামেচি শুনে সবাই রুমে আসলো৷

সবাই রুমে ঢুকে যা দেখল তাতে অবাক হলো। শ্রুতি মাথা নিচু করে আছে। আর জেসিকা চোর চোর করে আজেবাজে কথা বলছে। জেসিকা গিয়ে জ্যাকের পাশে গিয়ে বলল,

–জ্যাক দেখো আমি তোমাকে এইসব মেয়েদের সাথে চলতে মানা করেছিলাম না৷ তবুও তোমরা এই থার্ড ক্লাস মেয়েকে এইখানে নিয়ে এসেছো। এই মেয়ে কী করেছো জানো, আমার ফোন চুরি করার চেষ্টা করেছে।

জ্যাক জেসিকাকে শান্ত স্বরে বলল,

–জেসিকা থামো৷

জেসিকা আরও জোরে চেচিয়ে বলল,

–আমি থামবো কেন হ্যাঁ? আমি যদি ঠিক সময়ে না আসতাম তাহলে ও তো আমার ফোনটা চুরি করে নিয়ে যেতো। এই থার্ড ক্লাস মেয়ে তুমি জানো এই ফোনের দাম কত? ওহ সরি, গরিব মেয়ে,গরিব দেশ থেকে এসেছো তুমি এসব জানবে কীভাবে!
,শেষের কথা জেসিকা একটু বাঁকা হেসে বলল।

জেসিকার কথা শেষ না হতেই জ্যাক জেসিকার গালে ঠাস করে একটা চড় মারলো। চড়ের শব্দ শুনে শ্রুতি সহ সবাই কেঁপে উঠল।এতক্ষণ জেসিকার কথা শুনে জ্যাকের মাথা গরম হয়ে গেছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও পারলো না যখন দেখলো শ্রুতির গালে আঙ্গুলের দাগ পরে আছে।
জ্যাক তর্জনী আঙ্গুল উঠিয়ে জেসিকাকে বলল,

–জেসিকা মুখের ভাষা সংযত করো। কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে বাজে মন্তব্য করবে না।

জেসিকা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

–জ্যাক তুমি আমাকে ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য মারলা?ওই মেয়েটাই তোমার সব হয়ে গেল। আমি কিছুই না।

জ্যাক থার্ড ক্লাস মেয়ে শুনে নিজের হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো৷ কিন্তু অতক্ষণে জেসিকা রুম থেকে চলে গেছে।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩১

রাত তখন প্রায় ১১.৩০ বাজে। রান্না শেষ হয়ে গেছে।তাঁবুতে নিয়ে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। সবাই এসে উপস্থিত হয়েছে। শ্রুতি খাবার বেড়ে দিতে যাবে তখন আরিচ বললো,

–জেসিকা তো এখনো আসে নি। ও রাগ করে আছে জ্যাকের উপর। জ্যাক তুমি গিয়ে ডেকে আনো।

জ্যাক শ্রুতিকে সাহায্য করছিল। আরিচের কথা শুনে তার দিকে না তাকিয়ে বলল,

–যার ইচ্ছা এসে খেয়ে যাবে৷ আমি কাউকে ডাকতে পারবো না।

–আহ, জ্যাক, এরকম করছো কেন? মেয়েটা কী এখন না খেয়ে থাকবে?আমি ডাকতে গেছিলাম ও আসে নি। তুমি যাও৷

জ্যাক কিছু বলতে নিবে তার আগেই শ্রুতি চোখের ইশারায় জ্যাককে যেতে বলল।যতই শ্রুতিকে এটা ওটা বলুক তবুও শ্রুতির খারাপ লাগছিল যে মেয়েটা ঘুরতে এসে না খেয়ে থাকবে।
শ্রুতি লিওকে খাবার দিতে দিতে বললো,

–জ্যাক যাও তুমি। জেসিকাকে গিয়ে ডেকে আনো। মেয়েটা না খেয়ে থাকবে কেন? যাও।

জ্যাক শ্রুতির দিকে তাকিয়ে করুণ কন্ঠে বলল,

–আমি কেন? ওদের মধ্যে কেউ যাক?

শ্রুতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে বললো,

–তুমিই যাবে। ওরা কেউ যাবে না। যাও বলছি।

জ্যাক বিরক্ত হলো।মনে মনে বলল,

“মেয়েটা শ্রুতিকে চড় মেরেছে, এতো বাজে কথা বললো তাও শ্রুতি জেসিকার জন্য কতো কিছু করছে। আর জেসিকা এমনি এমনি ওকে কতো গুলো কথা শোনানো। ”

–কী হলো এখানে এখনো দাড়িয়ে আছো কেন? যাও৷

প্রায় আধাঘন্টা পর জ্যাক আর জেসিকা আসলো।এতক্ষণ কেউ খাওয়া শুরু করে নি। সবাই ওদের জন্য ওয়েট করেছে। জেসিকা জ্যাকের একহাত জড়িয়ে ধরা। দুজনে এক সাথে বসলো।

শ্রুতি দুজনার হাতের দিকে তাকালো। খারাপ লাগছে তার। বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে।জ্যাক হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও ছাড়ছে না। শ্রুতি নিজের মনে মনে বলল,

–ওরা ফ্রেন্ড ছাড়া আর কিছু না।হাত ধরতেই পারে। ওরা যা মনচায় তাই করুক তাতে তোর কী? শ্রুতি নিজেকে কন্ট্রোল কর।

শ্রুতি জেসিকাকে খাবার দিতে গেলে জেসিকা কঠোর দৃষ্টিতে শ্রুতির দিকে তাকালো। শ্রুতি এরকম তাকানোর মানে বুঝলো না।

–জ্যাক ও খাবার বাড়ছে কেন? আমি ওর হাতের কিছু খাবো না৷নোংরা।
জ্যাক জেসিকাকে থামতে বললেও জেসিকা শ্রুতিকে আরও আজে বাজে কথা বলতে লাগলো।
শ্রুতি কিছুই বললো না।কুকুর কামড় দিলে কী সেও কুকুর কে কামড় দিবে নাকি!

——————–

অবশেষে লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ওয়াশিংটনে যাওয়ার দিন চলে আসল। সকালেই সবাই বের হবে বলে গুছগাছ শুরু করে দিছে। এই কয়দিন শ্রুতিকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে প্রতি নিয়ত। নিজের দেশ থেকে অন্যের দেশে আসলে বুঝি এতো কথা, এতো কষ্ট সহ্য করতে হয় তা শ্রুতি জানতো না।হয়তো বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পেরেছে জীবনটা কতো কষ্টের। কোনো কিছু অর্জন করতে হলে কতো কষ্ট করতে হয়।
জেসিকা একদিন তাদের সাথে থেকেই শ্রুতির বুকটা চুরমার করে দিয়েছে। শ্রুতিকে সহ্যই করতে পারে না। এর কারণ শ্রুতির জানা নেই। সব কিছুতে আজে বাজে কথা বলে। সব সময় জ্যাকের পিছে পরে থাকে। কোনো কথাও বলতে পারে না শ্রুতি। তাহলেই অপমান৷ জ্যাকের সাথে তার আর কথা হয়নি কালকে থেকে।জেসিকার শ্রুতির প্রতি প্রচন্ড রাগ৷ হয়তো সে ভাবে শ্রুতির কারণেই জ্যাক তাকে চড় মেরেছিল৷
আজকে এই জেসিকার থেকে মুক্তি পাবে।বাবাহ,মেয়েটা এতো ভয়ংকর, আর অহংকারী!, শ্রুতি মনে মনে এইসব কথা ভাবছিল।আর নিজের জ্যাকেট পড়ছিল৷

এমন সময় কে যেন খট করে দরজা খুলল৷ এখন ঘরে কেউ নেই। সবাই সব কিছু নিয়ে বাইরে চলে গেছে।
তাই শ্রুতি কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখার জন্য মুখ তুলে তাকালো৷
মানুষটাকে দেখে শ্রুতি আপনমনেই বলল,

–জেসিকা!

শ্রুতি জেসিকাকে এই সময় রুমে দেখে অবাক হলো।
জেসিকা শ্রুতির সামনে এসে বুকে হাত গুজে বলল,

–শোনো শ্রুতি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তাই এই বিদায়ের সময় আসলাম।

শ্রুতি ভেবেছে হয়তো এখন আবার এসেছে আজেবাজে কথা বলতে, অপমান করতে৷ কিন্তু না জেসিকা তার জন্য আসেনি। তাহলে কী কথা বলতে এসেছে!, কথাটা শ্রুতি মনে মনে ভাবলো৷

–শোনো শ্রুতি আমি জ্যাকের হাবভাব লক্ষ্য করেছি এবং তাকে দেখে বুঝতে পেরেছি। জ্যাক আর আমি ছোট বেলা থেকে বন্ধু। ও কেমন তা আমি ভালো জানি। সে তোমাকে পছন্দ করে। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না তোমার মতো একটা মেয়েকে ও কীভাবে পছন্দ করতে পারে!যাই হোক , জ্যাকের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবা৷ তোমাকে যেন ওর আশেপাশে না দেখি৷

এইটুকু বলে থামলো জেসিকা৷

–আর শোনো আমি জ্যাকের বাগদত্তা। ওর সাথে আমার এনগেজডমেন্ট আরও আগে হয়েছে ।

কথাটা শুনে শ্রুতির মনে হলো পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে৷মস্তিষ্ক কেমন ফাঁকা লাগছে। কী বলবে বুঝতে পারছে!

শ্রুতির এই অবস্থা দেখে জেসিকা বাঁকা হাসলো৷

–তুমি ভাবছো এতে জ্যাকের সম্মতি আছে কীনা? জ্যাক এই বিয়েতে রাজি এবং আংকেল আন্টিও এই বিয়েতে রাজি৷

অতঃপর জেসিকা শ্রুতির দিকে তর্জনী আঙ্গুল উঠিয়ে থ্রেট দিল৷

–জ্যাকের থেকে দূরে থাকবা। কথাটা যেন মনে থাকে।

আর এক মূহুর্ত দেরি না করে জেসিকা দ্রুত প্রস্হান করলো।
জেসিকা চলে যেতেই শ্রুতি ধপ করে বসে পড়ল। মাথায় কিছু কাজ করছে না তার।জ্যাক তো বললো সে নাকি তাকে ভালোবাসে? তাহলে জেসিকা এসব কী বলে গেল! তাহলে কী জ্যাকও তার সাথে নাটক করলো। তার বিশ্বাস আবার ভেঙে গেল। আবার সে ঠকে গেল।

শ্রুতি দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলো। চোখ মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো৷ কিন্তু কান্না আঁটকাতে পারলো না। চোখের অশ্রু গুলো অবাধ্য হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। শ্রুতি আর পারলো না চিত্কার করে কেঁদে দিলো। কিন্তু শোনার মতো কেউ নেই৷ ভালোবাসায় কাঙাল এই মনটা একটু ভালোবাসা পেয়েই স্বপ্ন সাজাতে শুরু করেছিল।শ্রুতি বুঝতে পারছে না সে কী জ্যাককে ভালোবেসে ফেলেছে।নাহলে জেসিকার সাথে জ্যাককে দেখে তার কষ্ট হবে কেন? জেসিকার কথা শুনে কষ্ট হবে কেন? কেন জ্যাকের প্রতি তার এক ধরণের দুর্বল কাজ করে?

কাউকে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসলে শুধুমাত্র এক ধরণের দুর্বলতা কাজ করে তার প্রতি। নিজেকে তুচ্ছ মনে হয় এবং সামান্য মনে হয়৷ জ্যাকের পাগলামিগুলোই তাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে৷ কিন্তু বাস্তবতা বন্ড কঠিন। বুকের ভেতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালোবাসাও পরিবেশ, পরিস্থিতির কারণে অসহায় হয়ে পড়ে।

–এই শ্রুতি কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি আসো।

শ্রুতি শুনতে পেল কেউ তাকে ডাকতে ডাকতে ঘরের দিকে আসতেছে ৷ যতো কাছে আসছে কন্ঠ আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
আবার শুনতে পেলো,

–এই শ্রুতি কোথায় তুমি?

শ্রুতি তাড়াতাড়ি চোখ মুখে পানি ছিটালো। বাথরুমে থাকা তোয়ালে টা দিয়ে নিজের চোখ, মুখ ভালো করে মুছলো।

জ্যাক ডাকতে ডাকতে একেবারে শ্রুতি রুমে আসলো।এতক্ষণ ধরে বাইরে ওয়েট করছিল। তবুও শ্রুতির কোনো খবর নেই। তাই বাধ্য হয়ে শ্রুতিকে ডাকতে আসল।

কিন্তু রুমের ভেতর ঢুকে অবাক। শ্রুতি কোথাও নেই।শ্রুতিকে রুমের কোথাও না দেখে জ্যাকের বুকটা মোচর দিয়ে উঠল।ভয় হচ্ছে তার। শ্রুতিকে হারানোর ভয়।হঠাৎ বাথরুমের দরজা খোলার শব্দে জ্যাক সেদিকে তাকালো। শ্রুতিকে বের হতে দেখে সে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

–ওহহ, শ্রুতি তুমি এইখানে।আমি তোমাকে,,,

পুরো কথা বলতে পারলো না। শ্রুতির দিকে তাকিয়েই থমকে গেলো৷ কেমন যেনো শ্রুতিকে বিধস্ত দেখাচ্ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।
শ্রুতির এমন অবস্থা দেখে জ্যাক শ্রুতির দিকে এগিয়ে গেলো।জ্যাক কিছু বলতে নিবে তার আগেই শ্রুতি বললো,

–জ্যাক চলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।

কথাটা বলে সে জ্যাকের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। উত্তরের আর অপেক্ষা করল না। জ্যাক শ্রুতির এরকম আচরণে অবাক। হঠাৎ শ্রুতির কী হলো সে বুঝতে পারলো না!

শ্রুতির সাথে কার মিল হবে? কী মনে হয় সকলের?
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩২

আমেরিকায় শীত পেরিয়ে বসন্তে তার আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে।আয়তনে আমেরিকা পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম দেশ আর সেখানে বাংলাদেশ ৯৪ তম। কিন্তু বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য এই দেশকে নিঃসন্দেহে হার মানাবে।

বসন্ত মানেই নতুন এক পৃথিবী৷ গাছপালা ভরে ওঠে নানা রঙের পাতায়। ঝরে যাওয়া গাছের পাতায় আবার কুঁড়ি গজাতে থাকে। ফুল ফুটে, পাখিরা ফেরে। ছোট দিনগুলো আবার লম্বা হয়। চারদিক ভরে যায় ফুলে ফুলে।এইখানে মৌসুমের সাথে সাথে গাছের পাতার রং পাল্টায়। একেক মৌসুমে পাতার একেক রং। সত্যিই অনেক মনোমুগ্ধকর বিষয়টা!

প্রকৃতি শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে নতুন করে সেজে উঠেছে। কিন্তু শ্রুতি সে তো নিজের জীবনটাকে সাজাতে পারছে না। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছে প্রায় ২ মাসের কাছাকাছি হয়ে গেছে। সে এই ২মাসে যতটা সম্ভব জ্যাককে এড়িয়ে চলেছে৷ শুধু জ্যাকের সাথে কেন, সবার কাছ থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।লুসির সাথেও তেমন কথা বলে নয়৷ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়ে দিতে চায়। ২টা প্রাইভেট ও শুরু করেছে৷ কিন্তু রাতে পালাবে কোথায়?মাঝ রজনীতে ঘুম থেকে সে প্রায়ই জেগে উঠে৷ পরে আর ঘুম আসে না। এই সময় কাটিয়ে দেয় কখনো বইয়ের পাতায় আবার কখনো রাতের নিস্তব্ধ আকাশ দেখে৷ নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকার কষ্ট তারাই বোঝে যারা থাকে।একটা মুহূর্ত শ্রুতি ঠিক ভাবে কাটাতে পারে নি। প্রতিমুহূর্ত জ্যাকের সেই হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠেছে চোখের সামনে।দূরত্ব সৃষ্টি হলেও মনের গভীরতা যেন আরও বেড়েছে৷

শ্রুতি ভার্সিটিতে ঢুকল। লুসি অনেক আগেভাগেই এসেছে। শ্রুতি লেট করে আসে প্রতিদিন। সে চায় না কারো যেন মুখোমুখি না হতে হয়৷ জ্যাকের সামনে পরতে চায় না। তাহলে জ্যাক জিজ্ঞেস করবে, কী হয়েছে? তাকে ইগনোর কেন করে? সে কল দিলে রিসিভ করে না? এরকম হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। শ্রুতি বরাবরই নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে যায়। এতে শ্রুতির নিজের ই কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে ভাবে,বাংলাদেশে থাকতে সাদাফ যে তার সাথে প্রতারণা করেছে তার জন্য তো এই খানে এসে এতো কষ্ট হয়নি।কয় একদিনের মধ্যেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। কিন্তু জ্যাকে কেন ভুলতে পারছে না !তাহলে সে কী সাদাফকে ভালোবাসে নি? নাকি ওটা আবেগ কিংবা মোহ ছিল?
এসব প্রশ্ন শ্রুতি নিজেকে প্রায়শই করে কিন্তু উত্তর পায় না।

ভার্সিটির এক কর্ণারে একটা বেঞ্চে জ্যাক ও তার বন্ধুরা বসে ছিল। সাথে জেসিকাও ছিল৷কোন বিশেষ উপলক্ষে আবার এসেছে তা শ্রুতির জানা নেই। তবে এখন আগের চেয়ে ওয়াশিংটনে বেশি আসে।
শ্রুতি ওদেরকে দেখেই দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটা শুরু করল।ওদের কাটিয়ে বেশ কিছুদূর চলে এলো। কিন্তু সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর কানের পর্দায় এসে ধাক্কা মারল। শ্রুতি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল জ্যাক তার দিকে আসছে। আর হাত জাগিয়ে বলছে,

–এই শ্রুতি দাড়াও।

শ্রুতি দাড়ালো না। আরও দ্রুত হেঁটে নিজের ক্যাম্পাস গেল। অন্যের বাগদত্তার দিকে নজর দিতে চায় না সে।

শ্রুতি ক্লাসে গিয়ে শেষের দিকে একটা বেঞ্চে বসল।ক্লাসে সবাই প্রায়ই এসে গেছে। কেউ কেউ পড়ছে আবার কেউ কেউ হাসাহাসি, গল্প করছে। কয়েক বেঞ্চ সামনেই লিলি, লরি, মার্ক। ওরা টেবিলের উপরে বসে গল্প করছে। তাদের হাসির ঝংকার শ্রুতির কানে এসে বাজছে।

শ্রুতি ওসবে মন না দিয়ে একটা বই বের করে পরা শুরু করল।
সে বইয়ের ভিতরে মুখ গুজে ছিল। কিন্তু একটা কথা শুনে সে থমকে গেল৷ কিন্তু বই থেকে মুখ তুলল না। মনে মনে আওড়াতে লাগলো,

–আজ জ্যাকের বার্থডে।

——

জ্যাক অসহায় হয়ে আবার একই জায়গায় গিয়ে ওদের সাথে বসল। জ্যাক টলমল চোখে মাথা নিচু করে বলল,

–লুসি শ্রুতির কী কিছু হয়েছে? আমার সাথে কথা বলে না কেন?

জ্যাকের কথা শুনে জেসিকার মনে মনে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–মেয়েটার প্রতি এতো দরদ কেন বুঝি না? আমার সাথে কথা বলার জন্য তো এতো উতলা হয় না।

লুসি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

–আমিও জানি না ওর কি হয়েছে? আমার সাথেও বেশি কথা বলে না।

কথাটা শুনে জেসিকা মনে মনে হাসলো,

–বাহ, আমার এক থ্রেট এই এতো কাজ দিবে বুঝি নি।

পরক্ষণেই আবার রাগান্বিত হয়ে মনে মনে বললো,

–কিন্তু জ্যাক ওই থার্ড ক্লাস মেয়ের মধ্যে কী পেয়েছে যা আমাদের মধ্যে নেই। ওই মেয়েকে যদি আমি শেষ না করছি আমার নাম জেসিকা না!
জেসিকা জ্যাকের চোখে শ্রুতিকে খারাপ বানানোর জন্য জ্যাকের সাথে আর একটু ঘেষে বসে বললো,

–জ্যাক দেখেছো শুতি তোমাকে বার্থডে র উইশ টা পর্যন্ত করল না। কী ঢঙ্গি মেয়ে রে বাবা! আর তুমি তাকে নিয়ে এতো ভাবছো!

লুসি ত্রুর দৃষ্টিতে জেসিকার দিকে তাকালো৷

–তুমি একটু থামো জেসিকা। সব সময় শ্রুতিকে নিয়ে তুমি আজেবাজে কথা বলো।

জেসিকা একটা ভেংচি কেটে বললো,

–আমি মিথ্যা কিছু বলি নি। সত্যিই কথাই বলেছি৷

ওদের কথা শুনে জ্যাকের মাথায় একটা আইডিয়া আসল। সে বাঁকা হেসে বললো,

–লুসি তুমি আজকের বার্থডে পার্টিতে শ্রুতিকে নিয়ে এসে।তখন দেখবো ও পালায় কোথায়!

লুসি জ্যাকের কথা শুনে হেসে বললো,

–ওকে দোস্ত, একটা ভালো আইডিয়া দিছো। অবশ্যই নিয়ে যাবো।

জেসিকা ওদের কথা শুনে রাগে ফুসতেছে৷ মনে মনে বললো,

–আমিও দেখবো, ও আজকে যায় কীভাবে?

বাস্কেটবলের ক্লাব থেকে এসে নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। এক হাতে তার ওয়াটার বোতল, আর একহাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতেছে।
দৈবাৎ শ্রুতি খেয়াল করল করিডোর দিয়ে জেসিকা আসছে তার দিকে।জেসিকা হাতের ইশারায় তাকে থামতে বলল। শ্রুতি দাড়িয়ে গেল। শ্রুতির মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে জেসিকা কী বলবে? সে তো জ্যাকের জীবন থেকে সরে গেছে? তাহলে আবার কী!

ওর ভাবনার মাঝেই জেসিকা ওর সামনে এসে দাড়িয়ে শ্রুতিকে আপাদমস্তক পরীক্ষা করে বলল,

–বাহ, বাস্কেটবল খেলে আসলা বুঝি? গান পারো, বাস্কেটবল খেলতে পারো।বেশ ভালো।

শ্রুতি জেসিকার কথা শুনে অবাক হলো। এই মেয়ে তার প্রশংসা করছে। মানতে কেনো যেন তার কষ্ট হচ্ছে। সে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে জেসিকার দিকে তাকিয়ে বললো,

–কী বলতে এসেছো বলো?

জেসিকা শ্রুতির কথা শুনে হাসলো।

–আমি দিন দিন অবাক হচ্ছি তোমার মতো একটা মেয়ের সাথে আমার কথা বলা লাগছে।যাই হোক আসল কথায় আসি।
শোনো আজকে জ্যাকের বার্থডে,I think you know that, right?

শ্রুতি অবুঝের মতো মাথা নাড়ালো। জেসিকা কী বলতে চাচ্ছে শ্রুতি তা বুঝতে পারছে না।
জেসিকা আবার বললো,

–শোনো আজকে জ্যাকের বাসায় বার্থডে পার্টি আছে৷সেখানে অনেক বিখ্যাত মানুষ থাকবেন। তোমাকে আর লুসিকে ইনভাইট করা হয়েছে।তোমার মতো একটা মেয়ে ওখানে গিয়ে জ্যাকের পরিবারের প্রেস্টিজ নষ্ট করো আমি চাই না৷ আর এমনিতেও আমি তোমাকে দেখতে পারি না৷ সো তোমাকে যেনো ওখানে না দেখে।
আশা করি বুঝতে পেরেছো?

শ্রুতি তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিল৷

–আমার জ্যাকের বার্থডে পার্টিতে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তুমি বললেও কী না বললেও কী আমি এমনিতেও যেতাম না। সো টেনশনের কোনো কারণ নেই।

জেসিকা আর কিছু না বলে চলে গেল। শ্রুতি জেসিকার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে বলল।
একেই হয়তো বলে অহংকার।আমরা মানুষ হলেও সকলের ভিতর মনুষ্যত্ব নেই৷ একই রক্ত দিয়ে গড়া এই পৃথিবীতে মানুষের ভিতরে এতো অহংকার কোথা থেকে আসে!এতো ধর্ম -বর্ণে, ধনী গরিবের বিভেদ কেন!

“মাটি হতে হে মানব তোমার জন্ম,
আগুনের মতো কেন হও হে গরম?
এতো অহংকার তব সমুচিত নয়,
মাটি সম রও ঠান্ডা সকল সময় “-শেখ সাদী

___________

বার্থডে রেসিপশনে যাদের ইনভাইট করা হয়েছে মোটামুটি সবাই প্রায়ই এসেছে। লুসি একা গিয়েছে। শ্রুতির নাকি অসুস্থ বোধ হচ্ছে তাই আসে নি।লুসিও জোর করে নি। হৈ-হুল্লোড়ে মাতোয়ারা পুরো পরিবেশ।
কিন্তু জ্যাকের মনে শান্তি নেই৷ বার বার উকি ঝুকি মারছে৷ হাসফাস করতেছে সেই চিরচেনা মুখটি দেখার জন্য। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না। পাশ থেকে জ্যাকের মা মিসেস এলিজাবেথ পাশ থেকে বললেন,

–জ্যাক তুমি ঠিক আছো? এতো অস্হির হয়ে কী খুঁজছো?

জ্যাক নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,

–মম, নাথিং। আমার এক ফ্রেন্ড এর আসার কথা ছিল তাকে খুঁজছিলাম।

–ওকে মাই সান, পরে খুঁজো ।এখন চল কেক কাটার সময় হয়েছে।

জ্যাক তাড়াতাড়ি কেকটা কাটা শেষ করে নিজের মম, ডেড কে খাইয়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। জেসিকা জ্যাকের এই ব্যবহারে অবাক। সেই সাথে থাকা জ্যাকের মম,ড্যাড, জেসিকার মম৷নিজের বাগদত্তার সাথে এরকম বিহেভ জেসিকার মা ভালো নজরে দেখলেন না।
তবুও তিনি কিছুই বললেন না।

জ্যাক ভিড়ের মধ্যে লুসিকে খুঁজে বের করলো। লুসি একপাশে বসে কিছু মেয়েদের সাথে গল্প করছিল৷ জ্যাক কে আসতে দেখে সে উঠে দাড়ালো।জ্যাক অস্হির কন্ঠে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল,

–লুসি, শ্রুতি কোথায়? ওকে যে দেখছি না? ওকি আসে নি?

জ্যাকের কথা শুনে লুসির মুখটা মলিন হয়ে গেল।তার খারাপ লাগছে জ্যাকের জন্য। কত আশা নিয়ে ভেবেছিল শ্রুতি আসবে। শ্রুতি জ্যাকের ভালোবাসাটা বুঝলো না!

–না জ্যাক শ্রুতি আসেনি। ও একটু অসুস্থ।

জ্যাক অসুস্থ কথা শুনে দ্বিগুণ অস্হির হয়ে গেল। সে আরো একধাপ লুসির দিকে এগিয়ে বলল,

–শ্রুতির কী হয়েছে? আর ও অসুস্থ তুমি আমাকে এখন বলছো? আগে বলোনি কেন?

–এতো হাইপার হয়ো না জ্যাক।আমি যখন সন্ধ্যায় ওর রুমে ওকে ডাকতে গিয়েছিলাম তখন ও বলেছে ওর শরীরটা খারাপ লাগছে। ও যাবে না। এর আগে বলে নি।

লুসির কথা শুনে জ্যাক আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।

শ্রুতি নিজের রুমে বসে পড়ছে। কিন্তু পড়ায় তার মন বসছে না। জ্যাককে নিয়ে ভাবনায় বিভোর সে। যতোবারই চায় ওকে নিয়ে ভাববে না। ততো বারই যেন আরও ওর মস্তিষ্ক তার কথা স্মরণ করে দেয়।

হঠাৎ বেলকনিতে কিছু পড়ার শব্দে সে চমকে উঠল। নিজের চেয়ার থেকে উঠে সামনের দিকে এগোতে এগোতে বলল,

–কে, কে ওখানে?

কিন্তু কোনো সারাশব্দ পেল না। সে এগিয়ে গেল বেলকনির দিকে। দরজার কাছে গিয়েই সে বেলকনির আবছা অন্ধকারে একটা ছায়া দেখতে পেয়ে সে চিত্কার দিয়ে উঠলো,

–ভূত ভূত।

কিন্তু সহসা এক দমকা হওয়ার মতো কে যেন এসে তার মুখ চেপে ধরলো।
এমনভাবে মুখ চেপে ধরেছে যে শ্রুতির শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। শ্রুতি মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। মানুষ টা তার পিছন থেকে মুখ চেপে ধরেছে। শ্রুতি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য,

–উম, উম

করতে লাগলো। সহসা কানের কাছে এসে মুখ চেপে ধরা ব্যক্তিটি বললো,

–হুসসসস,এতো ভয় পাচ্ছো কেন? আমি কোনো ভূত না। আমি তোমার জ্যাক।

কথাটা শুনে শ্রুতি চমকে উঠল। গলা শুকিয়ে কাট হয়ে গেল৷ সে চিন্তা করতে লাগলো,

–জ্যাকের তো এখন পার্টিতে থাকার কথা, তাহলে আমার রুমে কী করছে?

জ্যাক শ্রুতিকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে নিজে শ্রুতির পায়ের কাছে হাঁটু মুড়িয়ে বসলো। শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকালো। সেই সুদর্শন ছেলেটার মুখ এই কয়দিন শুকিয়ে গেছে।গায়ে নীল রঙের পড়া সুট টা কেমন এদিক ওদিক হয়ে আছে। মাথার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। শ্রুতির ইচ্ছা করলো মাথার চুল গুলোকে নিজের হাত দিয়ে ঠিক করে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের হাত সরিয়ে নিল। মানুষের সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। কিছু কিছু ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়।

(পড়ার জন্য অনুরোধ রইল ঃ

গল্পটা একটু বড় হবে৷অতোও বড় না। বলতে পারেন ৪৫
পার্ট এর বেশি হবে। এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। যেসব পাঠক পাঠিকারা চায় গল্পটা বড় হলেও গুজিয়ে হোক যেন, তাদের বলছি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকতে হবে। কিন্তু যদি পাঠকপাঠিকারা আছে যারা বড় গল্প পছন্দ করেন না। মনে করেন গল্প না তা স্টার জলসার নাটক। যদি পাঠক পাঠিকারা গল্প চায় যে তাড়াতাড়ি শেষ হোক তাহলে গল্পটা পরিপূর্ণ রুপ পাবে না। তাই আপনারা কী চান তা আপনারা জানাবেন ?আর কেমন লাগছে গল্পটা তাও জানাবে? )
,(,চলবে)
,(,,চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here