ভিনদেশী পর্ব ২৭+২৮+২৯

#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ২৭

শ্রুতি খাচ্ছে আর জ্যাক তার দিক তার দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি খেয়াল করেছে। তবুও কিছু বলে নি৷ তবে তার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। খাওয়ার সময় একজন যদি তাকিয়ে থাকে সেটা নিঃসন্দেহে একটা অস্বস্তির ব্যপার হবে। শ্রুতির ও তাই হচ্ছে। শ্রুতি এবার সহ্য করতে না পেরে বলেই দিলো,

–জ্যাক ওরকম তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে? আমার খেতে সমস্যা হচ্ছে। তোমার কী ক্ষুধা লেগেছে?

জ্যাক একইভাবে থেকে উত্তর দিলো,

–হুম খুব ক্ষধা লেগেছে।

শ্রুতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক চামচ খাবার মুখে দিতে দিতে বলল,

–ক্ষুধা লেগেছে ভালো কথা। আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? তোমার যা খেতে ইচ্ছা করে তা অর্ডার দেও।

–আমি ওই ক্ষুধার কথা বলি নি৷ অন্য ক্ষুধার কথা বলেছি।

শ্রুতি ভ্রু কুঁচকে জ্যাকের দিকে। ক্ষুধার কোনো প্রকার ভেদ আছে নাকি শ্রুতির জানা নেই। তবে জ্যাক কোনো ক্ষুধার কথা বলছে। মজা পাইছে নাকি তার সাথে ?,, শ্রুতি মনে মনে ভাবলো।

অতঃপর শ্রুতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে বলল,
–তাহলে কোনো ক্ষুধার কথা বলছো?

–যা চাইবো তা দিতে হবে কিন্তু?

শ্রুতির যেনো আরও জানতে ইচ্ছা করল জ্যাক কিসের ক্ষুধা বলছে। কী চাওয়ার কথা বলছে?শ্রুতির জানার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেলো।

–চেষ্টা করবো। কী চাও বলো?

জ্যাক হাসতে লাগলো। শ্রুতি হাসির ঝংকার পেয়ে জ্যাকের দিকে তাকালো। মন খুলে হাসছে জ্যাক। যেনো থামছেই না।শ্রুতি জ্যাকের একটা জিনিস দেখে অবাক হলো। জ্যাক হাসলে যে গালে টোল পরে তাতো কখনো সে দেখিনি। আগেও তো হেসেছে অনেক। আর টোল পরে তো মেয়েদের ছেলেদের তো হাসলে টোল পরে বলে শুনেছি। কিন্তু এই প্রথম দেখলো।
অনেক সুন্দর লাগছে জ্যাককে। এতো সুন্দর করে জ্যাককে হাসতে দেখেনি সে।জ্যাকের এই হাসি যেনো শ্রুতির মন প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছি। শ্রুতি জ্যাকের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সেই হাসিটা দেখতে লাগলো। আগেও কতবার যে এরকম করে তাকিয়েছিল তার ঠিক নেই। তার মনে হচ্ছে এই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে সে সারাজীবন পার করে দিতে পারবে। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর,

–এই শ্রুতি। কথা বলছো না কেন?

হঠাৎ জ্যাকের কথায় শ্রুতি স্বাভাবিকে ফিরে এলো।
শ্রুতি আবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে দিতে বলল,

–বললাম তো তুমি যা চাও বলো। আমি ওয়েটারকে বলছি। এনে দিবে।

–ওয়েটারকে দিয়ে কিছুই হবে না আমার৷যা চাই তাতে তোমাকে লাগবে?

শ্রুতি মাথায় হাত দিলো। এই ছেলে কী রে বাবা?এতো কথা বলে। মাথা খারাপ করে দিচ্ছে৷

–আচ্ছা বলো কী চাও?

জ্যাক ফিসফিস করে শ্রুতির কানে বলল,

–ভালোবাসা চাই৷ I want to love you.

জ্যাকের এমন ঘোর লাগা কথা শুনে, শীতল বাতাস বয়ে গেল শ্রুতির শরীরে ।হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। বুকের ভিতর মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। কিছুক্ষণ মধ্যেই মনে হয় হৃদপিণ্ডটা বেড়িয়ে আসবে।শ্রুতি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল।ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।

জ্যাক শ্রুতির অবস্থা দেখে আলতো হাসলো।মেয়েটা একটুতেই লজ্জা পায়৷ আর লজ্জা পেলে গাল গুলো টমেটোর মতো হয়। যা জ্যাকের খুব ভালো লাগে।

–হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না লজ্জা বতী। তাড়াতাড়ি খাও।

শ্রুতি আর তেমন খেলো।আর অল্প একটু খেয়েই রিসোর্টে চলে গেল।
এলিশা, লুসি,লিও, আরিচ ওরা তখনো বসে ছিল। শ্রুতি গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো।
এলিশা বলল,

–খেয়েছো?

শ্রুতি বলল,

–হুম।

কিছুক্ষণ পর জ্যাক এসেই একটা চেয়ার টেনে শ্রুতির পাশে বসতে বসতে বলল,

–শ্রুতি তুমি এটা একদম ঠিক করো নি?

শ্রুতি অবাক হলো।
এই ছেলেটা মাথায় কী সমস্যা আছে?আমি কী করলাম? কিছুই করেছি বলে তো মনে হয় না। এই ছেলে হঠাৎ করে একটা আজগুবি কথা বলে,কোথায় পায় কে জানে! শ্রুতি মনে মনে বলল।

শ্রুতি আশেপাশে সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই জ্যাকের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি তাকিয়ে আছে। শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকালো দেখলো সে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
এরই মধ্যে এলিশা বলে উঠলো,

–শ্রুতি কী ঠিক করে নি?

শ্রুতিও বলল,

–জ্যাক আমি ভুল কিছু করেছি বলে তো মনে হয় না। তাহলে তুমি কিসের কথা বলছো?

জ্যাক মৃদু আসল। শ্রুতির হাতটা নিজের মুঠোর নিয়ে হাতের উলটো পিঠে চুম্বন করলো।
শ্রুতি হাতে জ্যাকের ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ পেতেই চোখ বন্ধ করল।

জ্যাক অভিমানী কন্ঠে বলল,

–তুমি আমাকে ফেলে চলে এসেছো। এটাই ভুল করেছো। আমি তোমাকে কতো কষ্ট করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম। আর তুমি আমাকে ফেলেই চলে এসেছো। এটা তুমি একদম ঠিক করো নি।

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে চোখ খুলল৷ শ্রুতি হাত এখনও জ্যাকের হাতের মুঠোয়।শ্রুতি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি জ্যাকের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে মাথানিচু করে নিলো। এতোগুলো ফ্রেন্ডদের সামনে কিস করেছে, একটা বাঙালি মেয়ের হয়ে শ্রুতির কাছে এটা বেশ লজ্জাজনক ব্যাপার মনে হচ্ছে৷ শ্রুতির ও লজ্জা লাগছে৷
শ্রুতি আর সেখানে না থেকে দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলো।

শ্রুতিকে এরকম চলে যেতে দেখে সবাই অবাক হলো। লিও শ্রুতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনেই জ্যাককে প্রশ্ন করল,

–ও রকম চলে গেলো কেনো?

জ্যাক মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,

–লজ্জা পেয়েছে তাই চলে গিয়েছি।

আরিচ বললো,

–আমি শ্রুতিকে একটুতেই লজ্জা পেতে দেখি।বিশেষ করে জ্যাক কিছু করলে। আরও বেশ কয়েকবার দেখেছিলাম। ও এতো লজ্জা পাই কেন?
লুসিকে তো এতো লজ্জা পেতে দেখি নি।

লিও বলল,

–বাঙালি মেয়েরা একটু লজ্জাবতী হয়।লুসি তো ছোটো বেলা থেকে এইখানেই থাকে। তাই ও আমাদের এইখানের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। শোনো আমার গ্রান্ডফাদার আমাকে বলেছিল বাঙালি মেয়েরা একটুতেই লজ্জা পায়৷ তার তাকে একটা গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো৷ তার ছবিও দেখিয়ে ছিলো আমাকে। তোমরা তো জানো আমি আমার গ্রান্ড ফাদারের সাথে কতো ক্লোজ। একদিন গল্প করতে করতে বলেছিল৷ সেখান থেকেই জেনেছি৷

জ্যাক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,

–এই কারণে আমি শ্রুতিকে এতো পছন্দ করি। আর ওর মনটাও কতো ফ্রেশ। সব দিক থেকে আমার ওকে ভালো লাগে খুব।

আরিচ লুসিকে রাগাতে বলল,

–ইশ,আমার যদি শ্রুতির মতো একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতো?

লুসি আরিচের কথা শুনে আরিচের কান ধরে বলল,

–ও কয়টা লাগে তোমার? এখন আর আমাকে ভালো লাগে না?শ্রুতির মতো লাগবে তোমার। দাড়াও দেখাচ্ছি তোমার লাগা।

কথাটা বলতে বলতে আরিচের কান ধরে টেনে নিয়ে গেল। আর ওরা হাসতে হাসতে একে ওপরের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ২৮

ভোরের কেমল ও স্নিগ্ধ সূর্যের আলোয় শ্রুতির ঘুম ভাঙলো। সে কিছুক্ষণ মোরামোরি করে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। পাশে তাকিয়ে দেখল লুসি হা করে ঘুমাচ্ছে। এলিশাও ঘুমে। মনে মনে ভাবলো,

–এখন যদি মুখের ভিতর একটা মশা ডোকে তাহলে কেমন হবে?

শ্রুতি নিজের কথা ভেবে হাসল। বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।

এখন সকাল ৭টা বাজে। কেউ এখনও উঠে নি। শ্রুতি বাগানের দিকে গেল।শিশির বিন্দু ঘাস ও পাতার উপর দেখা যাচ্ছে। মৃদু সূর্যের আলোয় চারপাশের গাছগুলোর পাতা মুক্তার মতো জ্বল জ্বল করছে। সূর্যের আলো বেশিক্ষণ স্হায়ী থাকে না। আকাশ দখল করে নেয় মেঘ, আর দৃষ্টিসীমায় কুয়াশা,আর সূর্য থাকে তার পিছনে লুকিয়ে। আবার মেঘ সরে গিয়ে দেখা মেলে সূর্যের।এক কথায় আকাশে বলতে গেলে হচ্ছে মেঘ আর কুয়াশার খেলা। হালকা বাতাসে শ্রুতির স্কার্ফ টা উড়ছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় অন্য রাজ্যের থেকে শীত কম পড়ার কারণ হলো এখানের সাগর। এখানের শীতের সাথে এক বৈরী সম্পর্ক রয়েছে সাগরে। শীতের হীম শীতল বাতাসকে তাড়িয়ে দেয় সমুদ্র থেকে আসা মেঘ আর উষ্ণ বাতাস।

অবশ্য এটা বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের সাথেও এরকম সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালে কম শীত পরে।

বাগানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর শ্রুতি ঠিক করল, সমুদ্রের দিকে যাবে।সকালের সমুদ্রের সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে প্রবল ইচ্ছা করছে তার। ওদের রিসোর্টটা সমুদ্রের কাছেই।এখনও কেউ উঠেনি যে তাদের সাথে যাবে। তাই শ্রুতি একাই হাঁটা শুরু করল।

কিছুক্ষণ হাঁটার পরই পৌঁছে গেল সমুদ্রের তীরে। এখন খুব কম মানুষ আছে। আর যারা আছে তারা হাঁটাহাঁটি করছে। কেউ সাইকেল চালাচ্ছে, কেউ জগিং করছে, আর কেউ সার্ফিং। শ্রুতির এই দ্বিতীয়বার সমুদ্র দেখতে আসার অভিজ্ঞতা। আগের বার তো ওয়াশিংটনের আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। তবে বেশিক্ষণ থাকা হয়নি।

শ্রুতির প্রবল ইচ্ছা করছে পানিতে পা ভেজাবার। তাই সে তাই পানির দিকে এগিয়ে গেল।
দৈবাৎ কেউ তার সামনে এসে বাধা দিল। শ্রুতি দেখলো কতগুলো লোক তার সামনে দাড়িয়ে হাসাহাসি করছে। শ্রুতি ভয় পেয়ে দুকদম পিছিয়ে গেলো।শ্রুতি একটা ঢোক গিলল। এখন মনে হচ্ছে এইখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। শ্রুতি এদিক ওদিকে তাকাতে লাগলো যদি কারো সাহায্য পাওয়া যায়৷ কিন্তু তার আশেপাশে কোনো মানুষ নেই। যারা আছে তা দূরে দূরে। লোকগুলো তার আর কাছে আসতেই শ্রুতি আরও ভয় পেয়ে গেলো। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো।

–Hey sweetheart, come with us. We will give you a lot of fun.

একজন কথাটা বলেই লোক গুলো বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো। কথাটা শুনে শ্রুতি আত্মা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। শ্রুতি এইখানের মানুষ সম্পর্কে ওতোটাও ধারণা হয়নি এখনোও কী করবে বুঝতে পারছে না। হাত পা কাঁপছে তার। দৌড়াতেও পারছে না।একজন লোক শ্রুতির দিকে এগিয়ে তার হাতটা খপ করে ধরতে নিলেই একজন শ্রুতি পিছন থেকে এসে বুকে লাথি মারল। (😅হিরোর এন্ট্রি হলো)। লোকটা ছিটকে মাটিতে পরে গেল।
শ্রুতি পিছনে ফিরে দেখে জ্যাক।জ্যাকের ফর্সা মুখ রাগে পুরো লাল হয়ে গেছে।শ্রুতি জ্যাকের চোখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল। নীলাভ চোখ গুলো দিয়ে রক্ত জড়ছে।
জ্যাক এগিয়ে গিয়ে লোকটার শার্টের কলার ধরে দাড় করিয়ে হাত দিয়ে পেটে কয়েকটা ঘুষি মারল।আর গুলো লোক ভয়ে দৌড়।
জ্যাক লোকটার নাক বরাবর একটা ঘুষি মারল। ঘুষিটা এতই জোরে মেরেছে যে নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হলো।
শ্রুতি রক্ত দেখে আঁতকে উঠল।রক্ত, মারামারি এইসব সে এমনিতেই ভয় পায়।জ্যাক আবার মারতে নিলে শ্রুতি তাড়াতাড়ি জ্যাকের হাত ধরল।

–জ্যাক চল, আর মারতে হবে না।যা মেরেছো তাতেই যথেষ্ট।

লোকটা জ্যাকের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে কোনো মতে উঠে দিলো দৌড় ৷

জ্যাক নিজের কপালের ঘাম মুছে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ,

–এই সব রেপিস্টদের উপর তোমার দয়া হচ্ছে। এদের তো মেরে ফেলা উচিত।

জ্যাক একটু থেমে শ্রুতির হাত ধরে বললো,

–চল এবার। তোমার ব্যবস্থা করি। বেশি বার বেড়েছো তুমি।

বলেই শ্রুতির হাত ধরে টানতে টানতে রিসোর্টে নিয়ে গেলো। জ্যাক খুব জোরে শ্রুতির হাত ধরেছে। শ্রুতি বারবার ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে।

রিসোর্টে ঢুকে জ্যাক শ্রুতিকে টানতে টানতে রুমে দিকে নিয়ে গেলো। লিও,এলিশা, আরিচ, লুসি রিসোর্টের আশেপাশে ছিলো। হঠাৎ জ্যাককে শ্রুতিকে এরকম নিয়ে আসতে দেখে তারা অবাক হলো। জ্যাকের পিছন পিছন তারাও রুমের দিকে গেলো।

জ্যাক শ্রুতিকে রুমে এনে এক ঝটকায় হাতটা ছেড়ে দিয়ে চেচিয়ে বলল,

–তোমার সাহস কী করে হলো একা একা রিসোর্টের বাহিরে যাওয়া?

–,,,,,,,

–কী হলো কথা বলছো না কেন? এতক্ষণ তো কত সাহসী ছিলা এখন একেবারে বোবা হয়ে গেলা।

এলিশা, লুসি, আরিচ, লিও জ্যাককে শ্রুতির সাথে এরকম কথা বলতে দেখে খুব অবাক হলো।
আরিচ বললো,

–কী হয়েছে জ্যাক? শ্রুতির সাথে এরকম বিহেভ করছো কেন?

জ্যাক শ্রুতির কাছ থেকে সরে এসে বলল,

— ও একা একা সমুদ্রে গেছে৷ আমি ঠিক সময়ে না গেলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতো।
অতঃপর জ্যাক যা যা হলো সব খুলে বললো।

এলিশা বললো,

–আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখি তুই আর শ্রুতি রিসোর্টে নেই।তাই ভাবছি তোরা হয়তো কোথায় গিয়েছো! কিন্তু ও যে একা গিয়েছে তা জানতাম না।

জ্যাক বললো,

–আমি ঘুম থেকে উঠে একটু বাগানে গেয়েছিলাম হাঁটতে। তখন শ্রুতিকেও ওখানে দেখি। আমি শ্রুতির কাছে যাবো তখন দেখি শ্রুতি হেঁটে হেঁটে রিসোর্টের বাহিরের দিকে যাচ্ছে। আমিও শ্রুতিকে ফলো করতে থাকি। তারপরই তো ওইসব ঘটলো।

জ্যাক একটু থেমে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বললো,

–ওকে দিন দিন সাহস বাড়তেছে। ওকে আজকে রুম থেকে বের হতেই দেবা না।

বলেই নিজের রুমে গিয়ে জ্যাক দরজায় একটা জোরে লাথি মেরে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো।

জ্যাক যাওয়ার পর এলিশা বললো,

–শ্রুতি তুমি একা একা রিসোর্টের বাহিরে গিয়ে একদম ঠিক করোনি। আমাদের কাউকে বললেই সে তোমাকে নিয়ে যেতো৷ জ্যাক কত রাগ করলো দেখছো!ও তোমাকে কতো লাভ করে জানো?কাজটা ঠিক করোনি।

বলে সেও রুম থেকে চলে গেলো। এভাবে একে একে সবাই কিছু না কিছু বলে রুম থেকে চলে গেল৷ শ্রুতি মাথা নিচু করে সবার কথা শুনছিল । সত্যিই সে অনেক বড় ভুল করেছে একা একা গিয়ে।
শ্রুতি ধপ করে বিছানায় বসলো। সবাই তার উপর রাগ করে চলে গেলো। জ্যাকও!
লুসি শ্রুতির সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো। শ্রুতি মুখ তুলে লুসির দিকে তাকিয়ে লুসিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।

–আরে কাঁদছো কেন শ্রুতি? কিছুই হয় নি। কাঁদে না।

শ্রুতি কাঁদতে বললো,

–আমি সত্যিই ভুল করেছি। একা একা বের হয়ে। সবাই আমার উপর রাগ করলো!জ্যাক ও করলো। তোমরা কেউ তখন উঠো নি। তাই আমি একা একা গিয়েছিলাম।
শ্রুতি এইরকম কাঁদতে কাঁদতে আরও অনেক কিছু বললো।
লুসি শ্রুতিকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ঠিক ভাবে বিছানায় বসিয়ে শ্রুতির চোখের পানি মুছে দিলো।

–আর কেঁদো না শ্রুতি। তুমি ভুল করেছো তাই সবাই রাগ করেছে। আর জ্যাক ও তোমার উপর অনেক রেগে আছে। এখন তুমি যদি কাঁদো তাহলে কী হবে? যাও গিয়ে জ্যাকের রাগ ভাঙ্গাও। ছেলেটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

শ্রুতি নাক টানতে টানতে বললো,

–যদি রাগ করে ?

লুসি উঠে শ্রুতির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

–না রাগ করবে কেন?যাও।

শ্রুতি কী করবে বুঝতে পারছে না? জ্যাকের কাছে যেতে এখন তার ভয় লাগছে৷ ওই ছেলের যে কী রাগ!

পরক্ষণেই শ্রুতির মনে হলো না, রাগ ভাঙ্গাতেই হবে। রাগ করে আর কতক্ষণ থাকবে। ভুলটা তো তার নিজের ই। আর আজকে জ্যাক না থাকলে নিজের সর্বস্ব হারাতো৷ শ্রুতি নিজের মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে জ্যাকের রুমের সামনে গেলো। কিন্তু দরজার সামনে আসতেই শ্রুতির সব সাহস উধাও হয়ে গেল। দরজায় নক করতে সাহস হচ্ছে না। কিছুক্ষণ মনের সাথে যুদ্ধ করে সে দরজায় টোকা দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

–জ্যা,ক।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ২৯

প্রথমবার ডাক দিয়ে শ্রুতি কোনো সারাশব্দ পেলো না।সে আবার ডাক দিল,

–জ্যাক। দরজাটা খোল।

এবার ও ভিতর থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসল না। শ্রুতির অজানা একটা ভয় হচ্ছে। সে এবার চেচিয়ে বলল,

–জ্যাক দরজাটা খোল।

কিন্তু এবারও কোনো প্রতিক্রিয়া পেলো।শ্রুতি এবার রেগে গেলো।

–এই ছেলে কী রে বাবা? এতো ডাকলাম তাও খুললো না। ধ্যাত।
শ্রুতি একটা ভেঙচি কেটে বলল,

–আমিও কম না। দেখবো তোমার রাগ কীভাবে না ভেঙে পারে! হুম!

এবার শ্রুতি দরজা ধাক্কা দিল।এক ধাক্কায় দরজা খুলে গেল। শ্রুতি অবাক হলো। নিজের বডি দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে বলল,

–আমার কী শক্তি বেশি হলো নাকি জ্যাক দরজা ভিতর থেকে লাগায় নি।

শ্রুতি রুমের ভিতর ঢুকে অবাক হলো। সারারুমে চোখ বুলালো। কিন্তু কোথাও জ্যাক কের অস্তিত্ব পেলো না।কিন্তু বিছানার উপর জ্যাকের গেঞ্জি ফেলে রাখা৷
শ্রুতি এগিয়ে গিয়ে গেঞ্জিটা হাতে নিয়ে বলল,

–এই গেঞ্জিটাই তো জ্যাক সকালে পড়েছিল। এটা বিছানায় ফেলে রেখে গেল কোথায়?

হঠাৎ শ্রুতির রুমের বারান্দার দিকে নজর গেল।এটা ও এতক্ষণ খেয়াল করেনি।শ্রুতি জ্যাক কে পাওয়ার আসায় বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল।

শ্রুতি বারান্দায় গিয়ে দেখলো সত্যিই জ্যাক বারান্দায় দাড়িয়ে আছে বুকে হাত গুজে। বাগানের দিকে দৃষ্টি তার। এখান থেকে বাগান খুব ভালো ভাবেই দেখে যায়। ছোট্ট একটু বারান্দা। শ্রুতি জ্যাক কে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিলল। জ্যাক পুরো খালি গায়ে দাড়িয়ে আছে। পড়নে শুধু একটা ট্রাউজার। জ্যাকের দিকে তাকাতে শ্রুতির লজ্জাবোধ করছে। সে মাথা নিচু করে। জ্যাকের পাশে গিয়ে দাড়ালো।

অনেকক্ষণ হলো শ্রুতি দাড়িয়ে আছে জ্যাকের পাশে। কিন্তু জ্যাক এমন ভাব করছে যেন শ্রুতিকে দেখেনি। শ্রুতি এবার মুখ তুলে জ্যাকের দিকে তাকালো। সে এখনো বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে।নড়াচড়াও করছে না৷ একেবারে পম্পেই নগরীর পাথরের মূর্তি গুলোর মতো স্হির হয়ে আছে।শ্রুতি মৃদু স্বরে ডাক দিলো,

–জ্যাক!

কিন্তু জ্যাক কোনো উত্তর দিলো না। সে এখনো ওই একইদিকেই তাকিয়ে আছে। শ্রুতি এবার কেমন যেন সন্দেহ হলো। সন্দেহ দূর করার জন্য সে হাতটা জ্যাক নাকের সামনে নিয়ে দেখলো শ্বাস নিচ্ছে নাকি! বুকের পাশে হাত রেখে দেখলো বুকের হৃৎস্পন্দন ওঠা নামা করছে নাকি!হাতটা নিয়ে দেখলো নাড়ি স্পনন্দন করছে নাকি!
শ্রুতি সব কিছু দেখে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

–ওহ গড! জ্যাক তুমি বেঁচে আছো! আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম!

জ্যাক এতক্ষণ শ্রুতির কান্ড দেখছিল।শ্রুতির শেষের কথা শুনে সে বোকা বনে গেল। সে বেঁচে আছে মানে কী? সে মরে গেলো কখন?

জ্যাক প্রশ্ন করলো,

–কী বোঝাতে চাচ্ছো তুমি? আমি কী মরে গিয়ে আবার বেঁচে উঠেছি?

শ্রুতি দুহাত দিয়ে না না ভঙ্গি করে বলল,

–আমি এটা বলে নি। আমি শুনেছি যে ধ্বংসপ্রাপ্ত পম্পেই নগরী আছে না? ওখানের মানুষ নাকি পাথর হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম তুমিও পাথর হয়ে গেছো,
শ্রুতি ইনোসেন্ট ফেস করে শেষের কথা গুলো বলল।

— তুমি ভাবছো আমি ওইরকম পাথর হয়ে গেছি ?

শ্রুতি মাথা নাড়ালো৷

জ্যাক মাথায় হাত দিয়ে বললো,

–ওহ গড! কী থেকে কী ভেবেছো তুমি! ওরা এমনি এমনি পাথর হয়ে যায়নি। পম্পেই ছিল প্রাচীন রোম নগরী৷ ওই পম্পেই এর কাছে একটা আগ্নেয়গিরি ছিল। যার নাম ছিল মাউন্ট ভিসুভিয়াস। ৭৯খ্রিষ্টাব্দে এই আগ্নেয়গিরি থেকে হঠাৎ আগুনের লাভা বেড়িয়ে আসে।ওই খানের বাসিন্দারা পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু তার আগেই আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে পুরো নগরীতে ছড়িয়ে পরে। ফলে ওই এলাকাটা এতো গরম হয়ে যায় যে যার কারণে মানুষের রক্ত ফুটন্ত হয়ে পড়ে এবং মাথার ঘিলু ফেটে যায়। এই অগ্নুৎপাতে ওইশহরের বাসিন্দাদের ভয়াবহ মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তাপমাত্রা কমে গেলে ওই লাভা শক্ত হয়ে যায়। যার কারণে মানুষের শরীর জমে পাথর হয়ে যায়৷
আর তুমি ওটার সাথে আমার তুলনা করেছো!ইস্টুপিট,
জ্যাক বিরক্তসূচক ভঙ্গিতে শেষের কথা গুলো বলে শ্রুতির পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল। এই ঘটনা সে জানতো না। শুধু শুনেছিল মানুষ পাথর হয়ে গেছে৷ এটা ওকে সোহা বলেছিল। এটা নাকি আল্লাহর গজব ছিল৷ এটা শুনেই শ্রুতি ভয় পেয়েছিল। যার কারণে সোহা পুরোটা বলতে পারেনি।

শ্রুতি নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে বলল,

–তুই আসলেই ইস্টুপিট শ্রুতি! না জেনেই জ্যাককে কী বলে ফেললি। বেচারা আরও রাগ করছে।এখন কী করবি!
শ্রুতি রুমে গিয়ে জ্যাকের সামনে দাড়ালো৷জ্যাক শ্রুতির দিকে তাকালোই না।

–জ্যাক,,

জ্যাক উত্তর দিলো না। ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল৷
শ্রুতি জ্যাকের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে হাত পিছনে রাখলো।

জ্যাক শান্ত ভঙ্গিতে বলল,

–শ্রুতি ফোনটা দাও।

–দিবো না। তুমি আগে আমার কথা শুনবে তার পর।

শ্রুতি একটু থেমে ঠোঁটটা ভিজিয়ে বলল,

–জ্যাক সরি। ওরকম আর কখনো করবো না।ফরগিভ মি।
জ্যাক চোখ তুলে শ্রুতির দিকে তাকালো। শ্রুতির কথা শুনে জ্যাকের চোখে মুখে চঞ্চলতা খেলা করছে। এতক্ষণ মনে হয় এটাই শুনতে চেয়েছিল।

জ্যাক হেসে বলল,

–শুধু সরি বললে আমি ক্ষমা করবো না।

শ্রুতি ভ্রু উঠিয়ে বলল,

–তাহলে?

জ্যাক শ্রুতির দিকে নিজের গাল এগিয়ে দিয়ে দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলল,

–কিস করতে হবে।

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে তেজী কন্ঠে বলল বলল ,

–জ্যাক এসব কোন ধরণের ক্ষমা ? আমি এসব করতে
পারবো না।

–ওকে সমস্যা নেই তার বিকল্প ব্যবস্থা আমার কাছে আছে৷
বলেই শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরল৷
শ্রুতি জ্যাকের এই রকম আচরণে ভড়কে গেল। পরক্ষণেই জ্যাকের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য জ্যাককে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিল। কিন্তু হলো উল্টো৷পাশেই ছিল বিছানা৷ দুইজনেই বিছানায় পড়ে গেল৷

জ্যাকের উদাম বুকে শ্রুতির মাথা। জ্যাকের হৃদস্পনন্দনের শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। এই বুকে থাকতে কেন যেন তার ভালো লাগছে৷ অনেক শান্তি লাগছে। সে পরম আবেশে নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নিল। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে সে ।
আর জ্যাক ও শ্রুতিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল।

কিন্তু তাদের এই সুন্দর মুহূর্তের ব্যাঘাত ঘটালো একটা কল ।
কলের শব্দ শুনে শ্রুতির হুশ ফিরল । সে চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করল ফর্সা উদাম বুকে যেখানে সে এতক্ষণ মাথা রেখে ছিল। শ্রুতি মনে পরলো একটু আগে কী হয়েছে? আর সে এতক্ষণ কোথায় ছিলো?রাজ্যে সব লজ্জা এসে তাকে আঁকড়ে ধরল। সে নড়াচড়া করতেই বুঝতে পারলো একজোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে আঁকড়ে ধরে আছে। ফোনটা এখনও বাজছে। শ্রুতি মৃদু স্বরে জ্যাককে বলল,

–জ্যাক ছাড়ো তোমার ফোন বাজছে।রিসিভ করো।

জ্যাক শ্রুতিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

–ফোন ধরার সুযোগ অনেক পাবো। তোমাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ খুব কম পাবো। তাই চুপচাপ মোমেন্টটাকে ফিল করো।
কিছুক্ষণ পর আবার কল আসল। শ্রুতি আবারও জ্যাক কে কলটা রিসিভ করতে বলল। কিন্তু জ্যাক এবার ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিল।এভাবে আরও কিছুক্ষণ কেটে গেল।

“আমি কিছু দেখে নি। আমি কিছু দেখি নি বাবা। ”

কারো কথা শুনে জ্যাক আর শ্রুতি দুইজনে শুনে একে অপরের থেকে ছিটকে গেল৷ শ্রুতি নিজেকে জ্যাকের কাছ থেকে ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালো।সামনে তাকিয়ে দেখে এলিশা চোখে হাত দিয়ে পিছনে ঘুরে আছে। শ্রুতি লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেই পারছে না। মনে মনে জ্যাক শ’খানিক গালি দিল৷ এই সব ওর কারণেই হয়েছে। শ্রুতি এক প্রকার দৌড়ে রুমে থেকে চলে গেল।

এদিকে জ্যাক নিজের গেঞ্জি টা পড়তে পড়তে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

–আসার আর সময় পেলা না এলিশা। তোমাদের জন্যই মেয়েটাকে বার বার লজ্জায় পরতে হয়। নক করতে পারো নি?

এলিশা সামনে ঘুরে বলল,

–আমার একদম দোষ দিবা না জ্যাক। রোমান্সের সময় দরজা খোলা কী আমি রাখতে বলেছি?দরজা খোলা রেখে রোমান্স করবা আর দোষ দিবা আমাকে তা হবে না!

জ্যাক এলটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

–যা হওয়ার হয়েছে। কিসের জন্য এসেছো তা বলো?

–আমাকে জেসিকা কল দিয়েছিল। তুমি নাকি ওর কল রিসিভ করছো না।ওকে কল দেও।

বলে এলিশা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জ্যাক বিরক্ত হয়ে ফোনটা খুললো।মনে মনে বললো,

–এই মেয়েটার জন্য শ্রুতি একবার রাগ করেছে। আর আজকেও কল দিয়ে ডিস্টার্ব করলো। জেসিকা ফ্রেন্ডের থেকেও একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে।

জ্যাক জেসিকাকে কল দিল৷ কিছুক্ষণ পরই জেসিকা কল রিসিভ করে হন্তদন্ত হয়ে বলল ,

–জ্যাক আমি এতো বার কল দিলাম তুমি রিসিভ করছিলে না কেন?

জ্যাক একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

–একটু বিজি ছিলাম।

জেসিকা আহ্লাদী স্বরে বলল,

–আমার থেকে তোমার কাজই বড় হয়ে গেল। তারপর নাকি তোমরা সব ফ্রেন্ড মিলে ঘুরতে গিয়েছো?আমিও তোমাদের সাথে যেতাম। কিন্তু আমাকে তো বলার প্রয়োজন বোধ ও করলা না? আমি তোমার আর বেস্ট ফ্রেন্ড না, তাই না জ্যাক?

জেসিকার কথা শুনে জ্যাক প্রচুর বিরক্ত হলো।জেসিকার জন্য কী কোনো জায়গায় গিয়ে শান্তি পাবে না। ওকে ও ফ্রেন্ড ছাড়া আর বেশি কিছু ভাবে না। কিন্তু এখন দেখছে জেসিকা একটু বেশি বাড়তেছে। সেদিন বাসায় গিয়েও শ্রুতির নামে কতগুলো বাজে কথা বলেছে মম, ডেড এর সামনে। সেদিন জ্যাকের ইচ্ছা করছিল মেয়েটাকে মেরে ফেলতে। এরকম অহংকারী মেয়ে তার পছন্দ না।

–আরে না জেসিকা, তুমি যা ভাবছো তা না। আমাদের এখানে একটা গানের কমপিটিশন আছে তাই এইখানে আসা। আর কিছু না।

আর কিছুক্ষণ জেসিকাকে এটা ওটা বুঝিয়ে জ্যাক কলটা কেটে দিয়ে জ্যাক মন ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো।

,(,চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here