#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:৭
তমা আপু আচার মুখে দিয়ে বলেন রাদি মাহিন্নেরে উড়ো চিঠি দিলে কেমন হয়।তমার কথাগুলো রাদিকার কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই সে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো তুমি চিঠি দিবে?
তমা কৃত্রিম ধমক দিয়ে বললে আমি দিব কেনো তুই দিবি।দেখি বেটা চিঠি পেয়ে করেটা কি।
রাদিকা ঢোক গিলে বললে আ,,,,মি ! ভাইয়া জানলে বকা দিবে।
তুই চিন্তা করিস না আমি আছি তো।এটা তো শুধু মজা ছলে আমরা করছি।
আমি নাই আপু,তুমি দাও।
এত কথা বলিস না।যা কলম খাতা নিয়ে আস।
রাদিকা অপারগ হয়ে কলম খাতা এনে তমার সামনে রেখে বললে আপু তুমি লেখো।
আমার লেখা মাহিন বুজে ফেলবে,তার চেয়ে বরং তুই লেখ।
রাদিকা কলম হাতে নিয়ে বললো কি লেখবো বলো।
তমা পুনরায় আচার মুখে দিয়ে বলে ওঠে প্রথমে লেখ প্রিয় মন্টুলাল।রাদিকা তমার কথা শুনে গড়িয়ে হাসতে লাগলো।তমা পুনরায় ধমক দিয়ে বললে শুধু হাসাহাসি করিস কেনো?যা বললি লেখ।রাদিকা হাসতে হাসতে লেখলো প্রিয় মন্টুলাল।
এবার লেখ তোমার আলুর মতো চেহারা দেখে আমি ক্রাশ খায়ছি।হিরো আলমের পরে এই প্রথম তোমাকে ভালো লাগছে।তুমিও হিরো আলমের চেয়ে কম না।তাই তোমাকে আমি হিরো মাহিন্নে বলে ডাকবো।
রাদিকা হাসি কন্টোল করতে পারছে না।হাসতে হাসতে শুয়ে সে পড়ে।তমা আচারের কৌট পাশে রেখে বললো হাসাহাসি বন্ধ করে লেখা শুরু কর।আর শেষে লিখবি ইতি তোমার জান্টুলালি।রাদিকার হাসি থামার নাম গন্ধ নেই।সে পেট চেপে হাসতে লাগলো।বহু কষ্টে হাসি কন্টোল করে চিঠি লেখা শেষ করে।
তমা চিঠি ভাজ করে বললো যা এটা মাহিননের রুমে রেখে আস।
যদি কেউ দেখে পেলে।
কেউ দেখবে না।চিঠি রেখে আমার কাছে আবার আসিস।রাদিকা গুটিগুটি পায়ে মাহিনের রুমে চিঠি রেখে আসে।এই কয় দিনে তমা রাদিকার খুব কাছের একজন হয়ে ওঠেছে। কেউ দেখে বলবে আপন বোন।রাদিকা প্রায় তমার কথা শুনে হাসে।সে কখনো তমার মত হাসি খুশি মেয়ে দেখে নি।নিজেও হাসবে অন্যকেও হাসাবে।রাদিকা স্কুল থেকে ফিরেই তমার কাছে বসে থাকে।তমা ওঠতে বসতে রসিকথা বলে সবাইকে হাসাবে।
তমা পুকুরে পা ঝুঁলিয়ে বললো কিরে চিঠি রাখছিস।রাদিকা আলতো করে মাথা নেড়ে বললো হুম।রাদিকা তমা পাশে বসে বললো মাহিন ভাইয়া চিঠি পড়ার পর চেহার কেমন হবে তা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।
হাসাহাসি বন্ধ কর।শুন কাল শুক্রবার তাই ভাবছি ঘুরতে যাবো।তুই যাবি?
যাবো,কত দিন ধরে ঘুরি নাই।
মিমকে নিব না।ওর ভাব দেখছিস , এমন ভাব নেয় মনে হয় কোটিপতি।আর মাহিন্নেরেও নিব না।তুই আর আমি যাব।
ভাইয়া আবার কি করলো?
মাহিন প্রচুর কৃপন।একটা টাকাও বের করানো যায় না।শুধু শুধু অতিরিক্ত জ্বামেলা নিব কেনো??
রাদিকা ভ্রু কুচকে বললো ভাইয়া অতিরিক্ত জ্বামেলা?
তা নয় তো কি।তর এত মায়া কেনো??
না না মায়া হবে কেনো,এমনেই বলেছিলাম।
সৃর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে দিগন্তের শেষে রক্তিম লালিমাটা দারুন রুপ নিয়েছে।মাগরিবের আজান বহু আগেই থেমে গেছে।সবাই যার যার ব্যস্ততার সমাপ্ত গঠিয়ে গন্তব্যের দিকে পাড়ি দিয়েছে।মাহিন আজ খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে।সারা দিন ক্লান্তিতে তার মুখে ক্লান্তি ও বিরক্তিমাখা রেশ লেগে আছে।বাসায় পৌঁছেই শুয়ে পড়ে।সকাল থেকে তার গায়ে জ্বর তীব্রভাবে আক্রান্ত করছে।নিজের শরীরের প্রতি সে বেখেয়ালি।সকালে বিষয়টা নিয়ে পাত্তা না দেওয়াই এখন তার পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে।কপালে হাতটা রেখে ঘামাক্ত শরীর নিয়ে ঘুমাতে প্রয়াস চালায়।চোখ যখন ঘুমের দেশে হারাতে যাচ্ছে তখন কিছুর আওয়াজে চোখগুলো ঘুম হারায় হয়ে নির্ধারিত জায়গায় ফিরে আসে।
বিরক্ত নিয়ে মাথা উঁচু করে দেখে তার মা বলছে অফিশ থেকে ফিরে শুয়ে পড়লি কেনো??
মাহিন ক্লান্তিময় কন্ঠে বলে ওঠে প্রচন্ড জ্বর ওঠেছে মা,তাই এত ডাকাডাকি না করে ঘুমাতে দাও।
মাহিনের মা মাহিনের কপালে হাত দিয়ে বললেন জ্বরে তো শরীর ফুঁড়ে যাচ্ছে।ওঠে ফ্রেশ হয়।আমি খাবার আর ওষুধ আনছি।
মাহিনের তন্দ্রায় কিছুই বলতে পারছে না।তন্দ্রা সাথে নিদ্রাও হানা দিচ্ছে।মাহিনের মা চলে গিয়ে খাবার আর ওষুধ নিয়ে আসেন।পূর্বের ন্যায় মাহিনকে শুয়ে থাকতে দেখে চটে গিয়ে বললেন এভাবে শুয়ে থাকলে জ্বর কমবে না।ওঠে ফ্রেশ হয়।বড় তো কম হসনি এখন ছোট বেলার স্বভাব যায় নি।
মা জাতি এমন যে সন্তানের কিছু হলে কানের কাছে শুধজ ঘেনর ঘেনর করে।মাহিন নিজের জিদের কাছে ব্যর্থ হয়ে ওঠতে হলো।ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে শুয়ে পড়ে।
মাঝরাতে জ্বর কিছুটা কমে।জ্বর কমলেও ঘুম তার ভেঙ্গে যায়।বিছানার এপাশ ওপাশ করে বিরক্ত নিয়ে ওঠে পড়ে।তার কফি খেতে তীব্রভাবে ইচ্ছা হচ্ছে।আস্তে আস্তে রাদিকার রুমের কাছে এসে দরজায় টুকা দেয়।রাবেয়া সারা দিনের ক্লান্তিতে বেজায় ঘুমানোর কারণে শব্দটা তার কানে যায় নি।কিন্তু রাদিকার কানে ঠিকেই যায়।কে হতে পারে ভাবতে ভাবতে দরজাটা খুলে।মাহিনকে দেখে বললো কিসের জন্য ডাকছেন।
মাহিন প্রত্ত্যতরে বলে কফি বানিয়ে ছাদে নিয়ে আসো।
কথাটা বলে মাহিন স্ব স্হান ত্যাগ করে।রাদিকা কিচেনে কফি বানাতে চলে যায়।
কিছু সময় পর কফি নিয়ে সে ছাদে উপস্হিত হয়।মাহিন কফি নিয়ে এক ঢোক গিলে বললো তোমার মাথায় এসব উদ্ভট চিন্তা কে ঢুকিয়েছে?
রাদিকা আগা থেকে মাথা অব্দি কিছু না বুজায় প্রশ্ন করে বুজলাম না আপনার কথা?
মাহিন চিঠিখানা রাদিকার সামনে দিয়ে বললো এগুলোর মানে কি?আমার সাথে ফাজলামি কোন সাহসে করো।
রাদিকার ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্হা।ভয়ে সে কাঁপতে লাগলো।মাহিনকে দেখেই বুজা যাচ্ছে সে বেশ রেগে আছে।এখান থেকে পালিয়ে গিলে সে বাঁচে।সে সুযোগ খোঁজছে পালানোর জন্য।যখনি দৌড় দিবে তখন মাহিন তার হস্ত বাজ পাখির ন্যায় চতুরতায় খপ করে ধরে ফেলে।
রাগান্বিত হয়ে বললে ওঠে পালাচ্ছো কেনো?স্টুপিডের মত কাজ করছো কেনো।
রাদিকা হাতটা ছাড়ানোর জন্য মুচরাতে লাগলো।মাহিন তাতে আরো শক্ত করে ধরে বললো চুপচাপ দাঁড়িয়ে উত্তর দিবে , না চর খাবে।কিভাবে সাহস হয় তোমার।
ভেবেছ আমি তোমার হস্তলেখা বুজতে পারবো না।
রাদিকা শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে আমি কিছু করি নি।তমা আপু লিখতে বলছে।
তমা বললেই লেখবে।আর আমাকে হিরো আলমের সাথে মিলিয়েছ।তোমার কি আমাকে হিরো আলম লাগে।
রাদিকা ডানে বামে মাথা নেড়ে না বললো।
মাহিন পুনরায় বললে ওঠে এতই যখন হিরো আলমকে পছন্দ তাহলে কাল তার কাছে রেখে আসব।তোমার মত সুন্দরি মেয়ে পেয়ে সে খুব খুশি হবে।তুমিও তো রাজি আছো যেতে।ভাই হিসাবে আমার ওপর কর্তব্য হলো তোমাদের মিলিয়ে দেওয়া।
না না এমনটা করবেন না।আমি এসব লেখতে যাই নি,আপুই জুড় করিয়ে লেখিয়েছে।
তা বললে হবে না।তোমাকেই দিয়ে আসবই।
মাপ করে দেন।জিবনে এমন করবো না,এই আপনাকে ছুঁয়ে বলছি।
ঘুমাতে যাও,কালকে বিষয়টা দেখছি।
শুক্রবার হওয়াই সবার ঘুম থেকে ওঠতে দেরি হচ্ছে।কিন্তু বুয়ারা ঘুমিয়ে নেই,তারা প্রতিদিনের রুটিন মাফিক সকাল সকাল চুলায় আগুন ধরালো।ঘড়িতে ৮ টায় বাজে।এত বেলা হওয়ার পরও বাড়িতে নিরবতা বিরাজ করছে।সেই নিরবতা বেশি সময় ঠিকে নি।মিমের চিৎকারে সবাই জাগ্রত হয়।রাদিকা তার সামনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।রানু চোখ ডলতে ডলতে বললো কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?
মিম তাচ্ছিল্যের সাথে বলে ওঠে বাড়িতে যে দুধ কলা খায়িয়ে চোর পালছো সে দিকে কি তোমাদের হুশ আছে?
রানু রাদিকার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি দিয়ে বললো কে চুরি করছে?
রাদিকা ছাড়া কে হবে।গ্রামের মেয়ে কোনো কিছু দেখলে লোভ সামলাতে পারে না।এজন্যে আমি আগে থেকেই বলেছি তাদের কে বাড়ি থেকে বের করো।কিন্তু কেউ আমার কথা শুনে নি।এবার বুজ মজা।
তর সাহস তো কম না।এই বাড়িতে থেকে এই বাড়ির জিনিস চুরি করিস।
তাদের মা মেয়ের চিৎকারে সবাই জরো হয়।মাহিন বুকে হাত বেঁধে পুরো কাহিনী বুজার চেষ্টা করছে।
রাবেয়া রাদিকার গালে থাপ্পর দিয়ে বললো তুই এসব কার কাছ থেকে শিখছিস?নিজে তো আমাকে আগে সুখে থাকতে দিলি না এখন নতুন করে আরেক অশান্তি সৃষ্টি করেছিস।
রাদিকার কান্না যেন থামার নাম নেই।সে কান্না কন্ঠে বলে ওঠে বিশ্বাস করো আম্মা আমি চুরি করি নাই।আর কি চুরি হয়ছে তা জানিই না।
মিম তাচ্ছিল্যের সাথে বললো বাহ বাহ চুরি করে এখন বলছ জানি না কি চুরি হয়েছে।
মাহিন তাদের কথার মাঝে ঢুকে বললো আগে বল কি চুরি হয়ছে?অকারণে কাউকে না দোষে প্রমাণ দেখা।
মিম পেন উঁচু করে দেখিয়ে বললো এই পেন রাদিকা চুরি করছে।আমি বহু খোঁজে যখন পাচ্ছি না তখন রাদিকার রুমে এসে পাই।আমার সাথে রোহানও ছিলো।
মাহিন সামান্য বিষয়ে এত চেচামেচিতে অনেক বিরক্ত হয়।এটা নিয়ে কেউ বুজি চিল্লাপাল্লা করে।সকাল সকাল সামান্য বিষয়ে ঘুম জাগ্রত হওয়াই মাহিন রাগান্বিত হয়ে বললো সামান্য বিষয়ের জন্য এত চেচানোর কি আছে।
সামান্য বিষয়ে পাত্তা না দিলে দেখবে একদিন ঘরের সব নিয়ে মা মেয়ে পালিয়েছে।
মিমের কথায় রাদিকা প্রত্ত্যতরে বলে আমরা গরীব হলেও চোর না।আমার রুমে পেয়েছ তার মানে এই না আমি চোর।আমি তোমার কলম এই প্রথম দেখছি।
রানু রাদিকাকে ধমক দিয়ে বললো চুরি করে অস্বীকার করছিস।মাপ চায় বলছি।
তমা সম্পূণ ঘটনা দেখে এতক্ষন বুজতে পেরে বললো এই পেন নিয়ে এত জ্বামেলা করার কি দরকার।আমি পেনটা দিয়ে লেখেছিলাম।ফোনে কথা বলতে বলতে রাদিকার রুমে আসায় ভুলে সেখানে রেখে আসি।
মাহিন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললো রাদিকাকে বিনা অপরাধে দোষী সাবস্ত্য করার জন্য মা মেয়ে দুজনেই মাপ চাও।
রানু ভেংছি কেটে বললো খেয়ে কাজ নেই ওর কাছে ক্ষমা চাবো।
তমা মিমের কাছে এসে বললো তুই তো ভালোই বুজিস।তাহলে শুধু শুধু রাদিকাকে চোর বানালি কেনো?
দেখো আপু ভুলটা এখানে আমার না।হারানো জিনিস যার কাছে পাওয়া যায় তাকে চোর বলাটা স্বাভাবিক।
মিম এতটুকু বলে রাগে ফুলতে ফুলতে স্ব স্হান পরিত্যাগ করে।কত দিন পর সে রাদিকাকে চোর বানানোর প্রমাণ পেয়েছে।কিন্তু শেষে এসে এলোমেলো হয়ে গেলো।
পড়ন্ত বিকালে সূর্যের তেজ কমায় রাদিকা আর তমা মার্কেটে যায়।রাদিকা সারা দিন মনমরা হয়ে থাকায় তমার বিষয়টা ভালো লাগে নি।তাই আনন্দো দেওয়ার জন্য শপিং করতে বের হয়।রিক্সশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে তাকাতেই আবিবকে তাদের সামনে আবিষ্কার করে।আবিবকে দেখে রাদিকা তমার হাত শক্ত করে ধরে বললো আপু দেখো এই ছেলেটা কিছু দিন ধরে আমায় ডিস্টার্ব করছে।তমা আবিবকে দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়।আবিব তমাকে দেখে সেও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।তমা রাদিকার হাত ছাড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়।রাদিকা দৌড়ে তমার কাছে এসে বললো আমাকে কেনো রেখে আসছো?
তমা কখনও ভাবে নি তার সুখ রাদিকার জন্য চলে গেছে।এই মূহুর্তে সে রাদিকাকে দেখে তার শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে।রাদিকা কিছুই বুজতে না পেরে বললো আপু ছেলেটাকে কিছু বলো। আমার দিকে এখনো কিভাবে তাকিয়ে আছে।
তমা রাগ কন্টোল করার প্রয়াস চালাচ্ছে।কিন্তু তা যেন আরো তিব্র হচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে বড় তো কম হসনি এখন নিজের বিষয় নিজেই সামলাতে শিখ।
রাদিকা অকস্মাৎ তমার রাগের কারণ বুজতে পায় নি।
চলবে,,,,,,,,,