ভোরের শিশির পর্ব ৮

#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:৮

তমা আপুর সাথে রাদিকা বাসায় ফিরে আসে।রাস্তায় তিনি রাদিকার সাথে তেমন কথা বলে নি।রুমে ঢুকতেই তার আম্মুর পাশে একজন মহিলাকে দেখে খুব চেনা চেনা লাগছে।রাবেয়া রাদিকাকে দেখে বলে ওঠে রাদিকা এটা তর ছোট চাচি।

এতদিন পর চাচিকে দেখে রাদিকা ওনার জরিয়ে ধরে বললো এতদিন পর বুজি আমাদের কথা মনে হলো।তোমার সাথে কথাই বলবো না।
শেফা রাদিকার থুতনি ধরে বললো আমার সাথে রাগ করিস না।আমি অনেক চেষ্টা করেছি তদের সাথে যোগাযোগ করতে।

মুটেও না,তোমরা আমাকে ভালোবাসোই না।

কে বলেছে তোমাকে আমরা ভালোবাসি না?ভালোবাসি বলেই তোমাকে নিতে এসেছি।

পুরুষালি কন্ঠ পেয়ে রাদিকা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার বড় চাচা।এতদিন পর আপন মানুষগুলো দেখে রাদিকা কেঁদে দেয়।শেফা রাদিকার মাথায় হাত দিয়ে বলে মেয়ের কান্ড দেখেছ,এত বড় হয়ে কাঁদছে।
রমজান রাদিকার চোখের জল মুছে বলেন কান্না করছিস কেনো?আর তকে এখানে রাখব না।আমরা তদের নিতে এসেছি।এতদিন ধরে তরা কোথায় থাকিস তা খুঁজেছি,কিন্তু প্রতিবারেই ব্যর্থ হয়েছি।

রাবেয়া মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে বলেন রাদিকা জামা কাপড় ব্যাগে ঢুকা।আমরা আজকেই চলে যাবো।
রাদিকা তার চোখের জল মুচে উৎফুল্ল হয়ে বলে সত্যিই চলে যাব।আমার কাছে স্বপ্ন লাগছে।কত দিন ধরে কাউকে দেখে নি।

হ্যাঁ , তর জন্যও সবাই অপেক্ষায় আছে।তুই চলে আসার পর সবাই খুব তকে মনে করেছে।

রাদিকা বিলম্ব না করে ব্যাগ গোছাতে চলে যায়।গ্রামের বাড়িতে যাবে সে আনন্দে তার চোখ দিয়ে বারে বারেই জল গড়িয়ে পড়ছে।রাবেয়াও মেয়ের আনন্দ দেখে নিজেকে অপরাধী লাগছে।তিনি যদি শহরে না আসতেন তাহলে এতদিন তার মেয়ে কষ্ট ফেতনা।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাদিকা তমার কাছে আসে।তমাকে দেখে জরিয়ে ধরে বলে আপু চলে যাচ্ছি।তোমাকে খুব মনে পড়বে।

রাদিকার প্রতি রাগ থাকলেও তমা তার চলে যাওয়া শুনে কেঁদে দেয়।রাদিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে আমারও তর কথা মনে পড়বে।রাস্তায় ছেলেটাকে কিছু না বলার জন্য আমাকে মাপ করে দিস।

আপু এই সব কি বলছো।বড় আপুরা কি ছোটদের কাছে ক্ষমা চায়?আমি কিছু মনে করে নি।

তুই সত্যিই অনেক ভালো।

তুমিও আপু।

রাদিকা তমার কাছ থেকে ফিরে এসে মাহিনের রুমে উঁকি দেয়।কিন্তু সেখানে মাহিনকে না পেয়ে যখন চলে আসবে তখন পুনরায় রুমটার দিকে দৃষ্টি দেয়।তার সবার থেকে মাহিনকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।তাকে সর্বদায় যে মাহিনেই সাপোর্ট করতো।তার ইচ্ছা পুরণ করত।তার সমস্যা না বললেও মাহিন কিভাবে জেনে যেত।মাহিনের রুমে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে চলে আসে।তমার কাছে গিয়ে বলে আপু মাহিন ভাইয়াকে একটু ফোন দিবে।সবাইকে বলছি তাকে বলে নি।

তমা মাহিনকে ফোন দিয়ে বলে ধর মাহিন ফোন ধরেছে।রাদিকা ফোন নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।কি বলে বিদায় নিবে সে ভাষা তার নেয়।মাহিন ওপাশ থেকে শুধু হেলো হেলো করেই যাচ্ছে।রাদিকা শিথিল কন্ঠে বললো হেলো।
রাদিকার কন্ঠ শুনে মাহিন স্তব্দ হয়ে যায়।কখনো ভাবেনি রাদিকা তাকে ফোন দিবে।এই মূহুর্তে তার কাছে যেনো লাগছে পৃথিবীটা থেমে গেছে।চারপাশের কোনো শব্দ যেনো মাহিনের কানে আসছে না।শুধু রাদিকার হেলো শব্দটি প্রতিধনি হচ্ছে।
নিজের ঘোর কেটে বললো কিসের জন্য ফোন দিয়েছ?

ভাইয়া আমরা চলে যাচ্ছি।কাকা ও কাকি আমাদের নিতে এসেছে।

মাহিন কখনো ভাবেনি রাদিকা ফোন করে এমন কথা বলবে।তার কষ্ট হচ্ছে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।এই বিচ্ছেদের দিনে কি সে তার পুষ্প পরিকে বিদায় দিতে পারবে।তার রাদিকার বিদায়ের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।
নিজের কন্ঠ স্বাভাবিক করে বললো মিথ্যা বলছো আমার সাথে।

না ভাইয়া,আচ্ছা তাহলে রাখি।সময় হয়ে যাচ্ছে।

মাহিন কিছু বলতে চায়লে দেখে ফোনটা কেটে গেছে।পুনরায় ফোন দিলে তমা ধরে।তমাকে সত্যটা জিঙ্গাসা করলে সে বলে সত্যিই রাদিকা চলে যাচ্ছে।কেনো যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার প্রিয়সীর বিচ্ছেদ।এই বিচ্ছেদের দিনে কি তাকে এক পলকের জন্য দেখতে পাবে না।তার পুষ্প পরি কি ভোরের শিশির মত তার কাছে ক্ষণিকের জন্য এসেছে?ভোরের শিশির মত এক পলক দৃষ্টিগোচর হয়ে হারিয়ে যাবে।তার কি আবার ভোরের অপেক্ষা করতে হবে?কিন্তু সে কোনো অপেক্ষা করতে চায় না।এই অপেক্ষা যে কত লোককে প্রতি মূহুর্তে কষ্ট দিয়েছে তা বলায় বাহুল্য।মাহিন বিলম্ব না করে ছুটে চলে রেলট্রেশনের দিকে।

রাদিকা ট্রেনের জানালার কাছে বসে তার দৃষ্টি বাহিরে দেয়।যদি এত মানুষের ভিরের ভিতরে মাহিনকে দেখতে পায়।চড়ুঁই পাখির মত রাদিকার বুক ক্ষর্ণে ক্ষর্ণে কেঁপে ওঠছে।শুধু এক পলক যদি মাহিনকে দেখতে পারতো।এটা কি মায়া না ভালোবাসা সেটা রাদিকার কিশোরী মন বুজতে পারছে না।সে এতটুকুই বুজতে পারছে তার কষ্ট হচ্ছে।মাহিনকে ছেড়ে যেতে তার মন ভেঙ্গে যাচ্ছে।তার আঁখিতে জল এসে যাচ্ছে।যখন শুনলো ট্রেন ছাড়তে পাঁচ মিনিট বাকি।সে পুনরায় বাহিরে দৃষ্টি দেয়।এই শহরে যেন তার মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছে।সেটা কি রাদিকা সেটা জানে না।শুধু মনে হচ্ছে কিছু একটা ফেলে এসেছে।রাদিকা তার মাকে প্রশ্ন করলো আম্মা সব নিয়েছো??

তার মা ছোট করে উত্তর দিলো হু সব নিছি।
রাদিকা মায়ের এতটুকু উত্তরে সন্তুষ্ট হয় নি।তার মনে হচ্ছে কি যেন নেওয়া হয়নি।

মাহিন ট্রেশনে এসে উদ্ভান্তের ন্যায় রাদিকাকে খুঁজতে লাগলো।কোথাও তার কাঙ্কিত মানুষটিকে সে পাচ্ছে না।কষ্টে তার আঁখি দিয়ে ক’ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল।তার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে।ট্রেনের এক জানালার দিকে দৃষ্টি দিতে তার চোখ স্তব্দ হয়ে গেলো।এই তো তার কাঙ্কিত মানুষ।এই তো সেই পুষ্প পরি যে কোনো এক বিকালে তার বাগানে ফুটে ছিলো।এই তো সেই ঘুমন্ত পরি , যার ঘুমন্ত মুখ দেখে সে রাত পার করেছে।আজ কি তার বাগান পরি শূন্য হয়ে যাবে।বিচ্ছেদের দিন রাদিকার গায়ে কালো কাপড় মাহিনকে আরো ব্যথিত করছে।কালো কাপড় যে বিষাদের চিহ্ন।আজ রাতটা যে কালো নবযৌবনার কাকের পালকের ন্যায়।সবাই মাহিনের প্রিয়সীর বিচ্ছেদে শোক পালন করছে।

মাহিন এক দুই পা করে বাড়িয়ে রাদিকার কাছে যায়।তার পা যেনো আজ চলছে না।রাদিকাও মাহিনকে দেখে যতটা খুশি হয়েছিল মূহুর্তে তা যেনো দুঃখে পরিণত হলো।সে এতক্ষনে বুজতে পারলো তার মূল্যবান জিনিসেই মাহিন।তার বড্ড ইচ্ছা করছে মাহিনকে জরিয়ে ধরে বলতে আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু তা কি সম্ভব।তা যেনো কোনো অদৃশ্য দেওয়াল তা বাধা দিচ্ছে।সে দেওয়াল কি রাদিকা ভাঙ্গতে পারবে?দমকা বাতাসে রাদিকার কেশগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।রাদিকা মাহিনের স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে বিহ্বল হয়ে গেলো।মাহিনের দৃষ্টি যেনো তার মনের গহীনে করাঘাত করছে।

মাহিন কৃত্রিম মৃদ হেসে বললো এই বিচ্ছেদ সংঘটিত হওয়ার দিন কালো পোশাক পরে নির্বাক লজ্জাশীলের মতো আঙ্গুল কামড়াচ্ছো কেনো?

রাদিকা তড়িগড়ি করে আঙ্গুলটা মুখ থেকে বের করলো।তার হুশ ছিলো না এই ব্যাপারে।রাদিকার আঁখি থেকে জল গড়িয়ে পড়লো।

মাহিন রাদিকার কাছে এসে বললো নার্গিস ফুল থেকে মুক্তা বর্ষণ করছো কেনো?গোলাপ ফুলকে ভেজাচ্ছ কেনো?কুলের উপর শিলাদানা দ্বারা কামড় বসাচ্ছ কেনো?তুমি কি জানো তোমার এই সব আমাকে আরও উম্মাদ প্রেমিক বানাচ্ছে।

রাবেয়া মাহিনকে দেখে বললো মাহিন তুমি?

মাহিন মৃদ হেসে বললো জি আন্টি,আপনারা চলে যাচ্ছেন তাই দেখা করতে এলাম।

মাহিন একদিন সময় হলে গ্রামে আসিও।

জি আন্টি,আপনিও আবার আসবেন।

তখনেই ট্রেনটা ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো।মাহিনের অনেক কথা ছিলো রাদিকাকে বলার,কিন্তু তা হলো না।সময় যে প্রতারক।সময় তা সুযোগ মত তার প্রতিশোধ নিয়ে নেয়।কিন্তু সময় মাহিনের সাথে প্রতিশোধ নেয় নি বরং বিচ্ছেদের দিনকে আরও কষ্টদায়ক করে তুলছে।রাদিকা কোমল কন্ঠে বললো নিজের খেয়াল রাখবেন।

________

রাদিকার চাচাতো বোন ময়না কলা ভর্তা করে রাদিকার সামনে দিয়ে বলে খেয়ে দেখতো কেমন হয়ছে?

রাদিকা অল্প একটু মুখে দিয়ে বলে বহু দিন পর কলা ভর্তা খাচ্ছি।কাচা কলা লঙ্কা দিয়ে খাওয়ার মজায় আলাদা।
ময়না হেসে বলে নদীর পারে যাবি।ইমন ভাই এর নতুন বউ নদীতে বিকালে পানি নিতে আসে।বউটা অনেক সুন্দর।

হু যাবো,বউটার সাথে ভাব জমাতে হবে।

ঠিকেই বলছস,ইমন ভাই এর মা খুব জ্বালায়।বলে যৌতুক না দিলে ইমনকে বলে তরে বাপের বাড়িতে পাঠাবো।

এই দাজ্জাল মহিলাকে দেখলে আমার ছোট বেলায় হেব্বি ভয় করতো।এখন দেখছস কিভাবে আমাকে আদর করে।

আরে এটা বুজলি না,তরে ইশাতের বউ বানানোর মতলব।

বললেই হলো।এই ইশাতকে দেখলে আমার রাগ হয়।ঢাকা থেকে আসার পর থেকে আমার পিছু নিছে।

হুম,আচ্ছা চল গোসল করে আসে।

রাদিকা তার আপনমনে চাঁদনি রাতে একা একা উঠুনে বসে আছে।মাহিনের কথা মনে হতেই তার কান্না আসে।কতদিন গত হয়েছে সে মাহিনকে দেখে নি।ট্রেশনে মাহিনের বিষণমাখা মুখ শুধু চোখের সামনে ভেসে ওঠে।রাদিকা বাড়ির প্রবেশদ্বারে দৃষ্টি দিয়ে দেখে কোনো পুরুষের অবয়ব।তার কলিজা কেঁপে ওঠে।এত রাতে কে ?এলাকার খারাপ ছেলে না তো?ময়নার কাছে সে শুনেছে অনেক দিন ধরে কিছু ছেলে বাড়িতে ঢুকে মেয়েদের সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করতে চায়।রাদিকা আসার পর থেকে এই সব ছেলেদের নজর এখন তার দিকে পড়েছে।এই পুরুষের অবয়বটা ধীরে ধীরে তার দিকে আসতে থাকে।রাদিকা ভয়ে হাত পা কাঁপছে।তার পা যেনো চলছে না।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here