ভয়ংকর প্রণয় পর্ব ১৫

#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_15
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain

বাসে উঠতেই স্পর্শের চোখজোড়া আটকে গেল কালো রঙের জামা পরিহিত
নাফিয়াকে দেখে । নাফিয়া জানালার ধারে কাঁচুমাচু হয়ে বসে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে ।

এখন আসার সময় হলো তোর ? কথা হয়েছিল ভোরে রওনা দিব আর এখন বাজে আটটা বিশ আরদিন ডানহাতের ঘড়ি দেখে বলল ।

স্পর্শ আরদিনের কথার কোনো প্রত্যুত্তর করলনা ।সে বাসে থাকা সবার দিকে তাকাল ।তুশি আর ওর হাসবেন্ড ডানদিকের প্রথম সারিতে বসেছে ।তার পেছনের সিটে আশিক আর ওর গার্লফ্রেন্ড ।অরিনকে দেখে সামান্য চোখজোড়া কুঁচকাল স্পর্শ ।তার পেছনের সিটে ইমাম আর অনিল ।তার পেছনের সিটে আরদিন আর আয়ান ।তার পেছনের সিটে আলিফ একাই বসে আছে ।
আর বামদিকের সিটে প্রথম সারিতে হিয়া আর তিথি বসে আছে ।
তার পেছনের সিটে নাফিয়া আর তিন্নি ।তার পেছনের সিটে রিয়া একা বসে আছে ।যেহেতু মেয়েরা কম তাই বামদিকের সিট অনেকগুলো খালি পরে আছে ।

তুশি সিট থেকে দাঁড়িয়ে স্পর্শকে মুচকি হেঁসে বলে , কেমন আছিস দোস্ত ?কতদিন পর দেখা হল তোর সাথে ।

স্পর্শ গম্ভীরভাবে জবাব দিল আললামদুলিল্লাহ ।
তুশির হাসবেন্ড রিহান মুচকি হেঁসে স্পর্শের সাথে হাত মেলাল ।

স্পর্শ ঠোট কামড়ে বলল , তোরা সবাই এলোমেলোভাবে বসছিস কেন ?

অনিল বলল , কই সব ঠিক-ই তো আছে ।

স্পর্শ বলল না ঠিক নেই ।রিয়া একা বসে আছে ।এতক্ষণ রিয়াও হাঁসফাঁস করছিল সারারাস্তা একা যেতে হবে ভেবে ।ভেবেছিল নাফিয়ার পাশে বসবে কিন্তু তিন্নি মেয়েটা অনেক অনুরোধ করে নাফিয়ার পাশে বসে পরল ।

আয়ান চট করে বলে উঠে , আমি বসি ।
সবাই ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকাল ।রিয়া চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে আর নাফিয়া মিটমিট করে হাঁসছে রিয়ার অবস্থা দেখে ।

আয়ান আমতা আমতা করে বলল না মানে মেয়েটা একা বসে যাবে তো তাই আরকি ভাবলাম আমি গিয়ে বসি ।

স্পর্শ কিছুক্ষণ আয়ানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তুশির দিকে তাকিয়ে বলল , তুশি তুই উঠ ।তুই রিয়ার পাশে গিয়ে বোস ।রিহানও স্পর্শের সাথে তাল মিলিয়ে বলল , হ্যাঁ তুশি তুমি রিয়ার পাশে গিয়ে বস ।মেয়েটা একা বসে আছে ।

অগত্যা তুশি চেহারা পানসে করে গিয়ে রিয়ার পাশে বসে পরল ।আর স্পর্শ-ও পেছনের সিটে গিয়ে আলিফের পাশে বসে পরল ।
অরিন পেছনে তাকিয়ে স্পর্শকে বলল

স্পর্শ তোমাকে যা হ্যান্ডসাম লাগছেনা… উফফফ আমি যতবার তোমায় দেখি ততবার-ই ক্রাশ খেয়ে যাই ।
স্পর্শ আশিকের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বোঝাল এই মেয়েকে সাথে করে আনছিস কেন ?আশিক কান্নারত চেহারা বানিয়ে স্পর্শকে বোঝাল ,সে এসবের কিছুই জানেনা ।

স্পর্শ সিটে বসলে আরদিন বলল অলরেডি সাড়ে আটটা বেজে গেছে ।এখন আল্লাহর নাম নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করা যাক ।

বাস চলছে নিজ গতিতে ।সবাই তার পাশের জনের সাথে কথা বলছে ।স্পর্শ ফোনে ঢুবে আছে ।আর নাফিয়া তন্ময় হয়ে স্পর্শের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।এবার স্পর্শ ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সরাসরি নাফিয়ার দিকে তাকাল ।এতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল ।স্পর্শ ঠোট কামড়ে ভ্রুজোড়া নাচাল ।নাফিয়া হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্পর্শের দিকে ।নাফিয়া ভাবতে পারেনি এভাবে স্পর্শের কাছে ধরা পরে যাবে ।সে দ্রুত স্পর্শের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি দিল ।স্পর্শ ঠোট কামড়ে হেঁসে আবার ফোনে মনোযোগ দিল ।

তুই কি স্পর্শ ভাইকে ভালোবাসিস নাফিয়া ?

তিন্নির কথায় নাফিয়া জানালার বাহির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তিন্নির দিকে তাকাল ।

তিন্নি দুষ্টু হাঁসি দিয়ে বলল , না মানে যেভাবে তাকিয়ে ছিলি স্পর্শ ভাইয়ের দিকে বাপরে মনে হয় একদম চোখে হারাস স্পর্শ ভাইকে ।

যাহ এসব কি বলিস ? হ্ঠাৎ তার দিকে চোখ পরে গেল তাই আরকি নাফিয়া আর বলতে পারলনা ।এসব বিষয় নিয়ে তার কথা বলতে ইচ্ছে করেনা ।কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে ।

তিন্নি নাফিয়ার লজ্জামাখা চেহারা দেখে ফিঁক করে হেঁসে দিল ।আর হাঁসতে হাঁসতে বলল , সখীর মনে বসন্তের বাতাস বইছে….আহা… ।নাফিয়া চোখ গরম করে তাকাল তিন্নির দিকে ।

তিন্নি হাঁসি থামিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল , অতিত সব ভুলে গিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে শিখ ।কম অত্যাচার তো হয়নি তোর উপর ।এবার শুধু নিজের কথা ভাববি , নিজের মত চলবি ।মুক্ত পাখির মত আকাশে ডানা মেলে উড়বি ।

নাফিয়া তপ্ত শ্বাস ছেড়ে জানালার বাহিরে তাকাল ।মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব ।মুহূর্তেই বুকটা ভারী হয়ে গেল ।চোখজোড়া থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পরল ।

তুই কাঁদছিস নাফিয়া ?তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম তাইনা ? রিয়া উদাসকন্ঠে বলল ।

নাফিয়া চোখ মুছে বলল উহহহ না ।মায়ের কথা মনে পরছিল ।

তিন্নি নাফিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বান্ধবীকে আশ্বস্ত করল ।

যোহরের আজানের সময় হয়ে এসেছে প্রায় ।বাস অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে ।কেউ কেউ সিটে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে আবার কেউ কেউ ফোন স্ক্রল করছে ।
নাফিয়া এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বাসে উঠেছে তাও আবার লংজার্নি ।এই ফার্স্ট টাইম সে বাসে লংজার্নি করছে ।তার মাথাটা কেমন ঘুরাচ্ছে ।তার ভেতর থেকে সব উগড়ে আসতে চাইছে ।ভেতরটা অনেক খারাপ লাগছে তার ।তার পাশে বসে থাকা তিন্নি নাক টেনে ঘুমোচ্ছে ।নাফিয়ার ইচ্ছে করলনা ওকে জাগাতে ।নাফিয়া পেছনে তাকাল রিয়াকে বলবে বলে কিন্তু রিয়া আপু আর তুশি আপুও ঘুমে ।
সামনের সিটে মেয়েদুটোকে নাফিয়া চিনেনা ।একজন ঘুমোচ্ছে আর একজন ফোন স্ক্রল করছে ।

এদিকে এক্ষুনি তার ভেতর থেকে সব বের হওয়ার অবস্থা প্রায় । খুব কান্না পাচ্ছে ।কাকে ডাকবে বুঝতে পারছেনা ।বাসে বমি করে দিলে একটা লজ্জাজনক অবস্থা হবে আবার পরিহিত নতুন জামাটাও নষ্ট হয়ে যাবে ।কি হবে এখন ? অনেক কষ্টে বমিটা আটকে রাখছে সে ।
চোখের সামনে পলিন দেখে নাফিয়া স্পর্শের দিকে তাকাল ।স্পর্শ তার সামনে পলিথিন ধরে রেখেছে ।স্পর্শ বলল

কি হল মেয়ে পলিথিনটা নাও ।এখন কি আমি তোমার মুখের সামনে পলিথিন ধরে রাখব ?তারপর তুমি বমিটিং করবে ?ইয়াক !বলেই নাক ছিটকাল স্পর্শ ।

নাফিয়া তড়িৎগতিতে পলিথিনটা হাতে নিল ।কিন্তু লজ্জা লাগছে পলিথিনের ভেতর বমি করতে ।কিন্তু বমিটাও আর আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না ।উফফফ কি যে করবে এখন ? ভাবতে না ভাবতেই ওয়াক করে ভেতরের সব উগড়ে দিল পলিনের ভেতর ।বমিটিং করে নাফিয়া পলিথিনটা বাসের জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল ।তারপর কুলি করে মুখ ধুয়ে নিল ।নাফিয়া সবার দিকে তাকাল ।নাহ সবাই যার যার মত আছে , তার দিকে কেউ তাকায়নি আর স্পর্শ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে মেবি ।

যোহরের আজান অনেকক্ষন আগেই পড়েছে ।স্পর্শ ঘুমিয়ে থাকা সকলকে জাগিয়ে বলল, বাসটা কোথাও থামিয়ে রেস্তোরা থেকে দুপুরের লাঞ্চটা সেড়ে আবার যাত্রা শুরু করতে ।স্পর্শের কথায় সবাই সাঁয় দিল ।তারা সবাই নেমে পড়ল বাস থেকে ।সবাই বাস থেকে নেমে সামনের এক রেস্তোরায় এল ।সবাই যে যার মত খাচ্ছে ।কিন্তু নাফিয়া বেশি একটা খেতে পারেনি ।সে কিছুটা খেয়ে রেস্তোরাঁর পাশেই নিরিবিলি জায়গায় এল ।রাস্তার দুইপাশে সারি সারি গাছ ।প্রচন্ড বাতাস বইছে ।শান্তি লাগছে নাফিয়ার ।বমি করার কারনে শরীরটা খুব দুর্বল লাগছিল এতক্ষণ ।কিন্তু এই জায়গাটায় এসে সব খারাপলাগা দূরে চলে গেছে ।

স্পর্শদের সবার খাওয়াদাওয়া শেষ ।এখন বাসে উঠবে সবাই ।কিন্তু নাফিয়াকে কেউ কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা ।আরদিন চিন্তাগ্রস্ত চেহারা বানিয়ে বলল

মেয়েটা গেল কই ?

রিয়া বলল , ভাইয়া ওর নাকি খুব খারাপ লাগছিল তাই সামনেই গেছে একটু বাতাস খাইতে আরকি।যাই আমি ডাক দিয়ে নিয়ে আসি ওকে ।

স্পর্শ রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল
তোরা সবাই বাসে গিয়ে বোস ।আমি ওকে নিয়ে আসছি ।

নাফিয়া রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়েছিল ।নিজের পেছনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পেছনে ফিরে তাকাল ।স্পর্শ পকেটে দুইহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে ।তাকে পেছন ফিরে তাকাতে দেখে ব্যঙ্গ করে বলল

হাওয়া খাওয়া শেষ হলে এখন যাত্রা শুরু করা যাক তবে ?

নাফিয়া কিছু বললনা ।চুপচাপ স্পর্শের সাথে হেঁটে বাসে উঠল ।আবার তাদের যাত্রা শুরু হল কক্সবাজারের উদ্দেশ্য ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here