ভয়ংকর প্রণয় পর্ব ১৬

#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_16
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain

চারদিকে ভোরের আলো স্পষ্ট হয়ে এসেছে ।নাফিয়া সমুদ্রের বালির নরম বিছানায় খালি পায়ে হাঁটছে ।কালকে তারা
প্রায় বারো- তেরো ঘন্টা জার্নির পর সবাই কক্সাবাজার এসে পৌঁছায় ।হোটেলে সবার জন্য রুম বুক করে কোনোমতে রাতের খাবারটা খেয়ে যে যার রুমে শুতে চলে যায় ।দীর্ঘ পথ জার্নি করার ফলে সবাই ক্লান্ত ছিল বিধায় কারো সাথে কারো কথা বলার সু্যোগ হয়নি ।সবাই গভীর ঘুমের কোলে ডলে পরে ।
এখনো সবাই গভীর ঘুমে ।নাফিয়ার অচেনা জায়গায় খুব একটা ঘুম হয়না।তাই ভোর না হতেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে ।তারপর ফ্রেশ হয়ে সমুদ্র তীরে হাটতে চলে আসে।

সামনে বিশাল সমুদ্র ।যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি ।নাফিয়া কান পেতে সমুদ্রের শো শো গর্জনের মনোমুগ্ধকর আওয়াজ শুনছে ।খানিকবাদে বাদে সমুদ্রের শীতল পানি তার পাজোড়াকে ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে ।নাফিয়া মুগ্ধদৃষ্টিতে সমুদ্রের অপরুপ লীলা উপভোগ করছে ।নাফিয়ার মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছা উদয় হল সে হাটুভেঙে বসে নিজের নামের অক্ষরগুলো লিখল ।মুহূর্তেই সমুদ্রের নীল জলরাশি তার নাম মুছে দিয়ে চলে গেল অদূরে ।নাফিয়া ঠোট উল্টে উঠে দাঁড়াল ।ইতিমধ্যে সকালের আলো স্পষ্ট হয়ে গেছে ।লোকজন-ও সমুদ্রের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে চলে আসছে সমুদ্র তীরে ।নাফিয়ার ইচ্ছে করল একটু সামনে গিয়ে সমুদ্রের জলরাশি ছুয়ে দিতে ।যা ভাবা তাই কাজ ।সে গুটিগুটি পায়ে সমুদ্রতীরের কিছুটা সামনে আগাল এতে তার প্লাজোর নিচের অংশটা সামান্য ভিজে গেছে তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সেতো জলরাশিগুলো হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে ব্যস্ত ।মিনিট তিন – চার পর আবার আগের জায়গায় ফিরে এল সে ।আগের জায়গায় ফিরে এসে চার পাঁচটা ঝিনুক কুড়িয়ে নিল ।অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে ।সবাই এতক্ষণে মনে হয় উঠে গেছে আর তাকে না পেয়ে হয়ত চিন্তাও করছে নাফিয়া ভাবে ।সে দ্রুত হোটেলে ফিরে গেল ।হোটেলে ফিরেই দেখতে পেল সবাই রুম থেকে বের হয়ে একজায়গায় জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।সবার চেহারায় চিন্তার রেখা দেখতে পেল নাফিয়া ।তাকে দেখতে পেয়ে স্পর্শ এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে তার দিকে ।তার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়া আপু গলায় হাত ঘুরিয়ে ইশারা করে তাকে বোঝাল আজকে তুই শেষ রে নাফিয়া ।স্পর্শের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক রেগে আছে ।নাফিয়া একটা ঢোক গিলল ।

স্পর্শ কাছে এসে রাগী গলায় বলল ,
কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে যাও মেয়ে ? তোমাকে খোঁজার জন্য কি আলাদা করে পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসা উচিৎ ছিল আমাদের ?যখনি কোথাও তুমি হাওয়া হয়ে যাবে তখনি পুলিশ বাহিনী তোমায় খুঁজতে বেরিয়ে যাবে ।আজব বলা নেই কওয়া নেই ফুরুত ফারুত চলে যায় ।সবাইকে টেনশনে ফালাইতে খুব মজা লাগে তোমার তাইনা ফালতু মেয়ে।স্পর্শ একদমে কথাগুলো ধমকে বলল ।

নাফিয়া টলটল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্পর্শের দিকে ।সে মুখ ফুঁটে স্পর্শকে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু স্পর্শের ধমক খেয়ে সব ভুলে গেছে ।

আরদিন বলল , এত রিয়েক্ট করছিস কেন স্পর্শ ? আর ও কি চার পাঁচ বছরের বাচ্চা নাকি যে হারিয়ে যাবে ? হয়ত ওর ঘুম আসছিলনা তাই একটু বের হয়েছে ।এতে এত রিয়েক্ট করার কি আছে বুজলামনা !

স্পর্শ চট করে বলে ফেলল , তুই জানিস না…আমার ভেতর থেকে জানটা বের হয়েগিয়েছিল ওকে না দেখতে পেয়ে ।কথাটা বলে স্পর্শ নিজেই থতমত খেয়ে গেল ।

সবাই ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে । আবার কেউ কেউ মিটমিট করে হাঁসছে যারা বিষয়টা বুঝতে পেরেছে ।আর নাফিয়া ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্পর্শের দিকে ।

স্পর্শ আমতা আমতা করে বলল, আব্ না মানে আমি খুব চিন্তিত ছিলাম ।

নাফিয়া বাদে আরদিনসহ সবাই মুচকি হেঁসে উচ্চস্বরে ওওওওও…… বলে চিৎকার দিয়ে উঠল ।

স্পর্শ এবার ঠোটের মুচকি হাঁসিটা সরিয়ে গম্ভীর রুপ ধারন করল ।সে গম্ভীরগলায় বলল আমার ক্ষুদা লেগেছে খুব ।তোরা কি আসবি নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি ?

তারা সবাই এবার নিচে নেমে হোটেলের সন্নিকটে এক রেস্তোরাঁয় ঢুকল ।এই রেস্তোরাঁটায় ভীর কম ।তাই সবাই এই রেস্তোরাঁটায় এল ।সবাই নিজ নিজ আসনে বসে নাস্তা খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পরল ।সবাই খুব ক্ষুধার্ত ।কালকে রাতে ঘুমের কারনে কেউ-ই ভালোভাবে ডিনার করতে পারেনি ।

কালকে সারাদিনে তেমন খাওয়া হয়নি রাতেও ঘুমের কারনে খেতে পারেনি নাফিয়া বেশ ক্ষুধার্ত কিন্তু নাফিয়ার গলা দিয়ে খাবার নামছেনা স্পর্শের বকা খেয়ে ।নিচু হয়ে খাবার শুধু নাড়ছে চাড়ছে কিন্তু কিছুই মুখে দিচ্ছেনা ।এমন সময় নিজের পায়ের উপর কারো পায়ের স্পর্শ পেয়ে সে শিউরে উঠল ।চট করে সে উপরে তাকাল ।তার মুখোমুখি বসা স্পর্শ তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।নাফিয়া বুজল এটা স্পর্শের-ই কাজ ।সে দ্রুত পা সরাতে গিয়েও পারলনা স্পর্শ নিজের দুপা এর মাঝে তার দুপা আবদ্ধ করে রেখেছে ।স্পর্শ তাকে ইশারা করে বোঝাল খারারটা খেতে নাহলে পা সড়াবেনা ।নাফিয়া মলিনমুখে কিছুটা নানরুটি ছিড়ে মুখে দিল ।নাফিয়া খাবার মুখে দিলেই স্পর্শ নিজের পাজোড়া সড়িয়ে নিল ।
নাফিয়ার ভালোই লাগছে বিফ পায়া খেতে সাথে আছে নানরুটি।খুব সুস্বাদু লাগছে খেতে।একবার তার চাচী এই খাবারটা রান্না করছিল তখন খাবারটা খেতে ভালো লাগেনি । ক্ষুধার্ত বলেই
হয়ত এখন খাবারটা খেতে ভালো লাগছে ।

সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে এবার সবাই সমুদ্রতীরে চলে এল ।
কেউ কেউ পিক তুলছে আবার কেউ কেউ একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে ।রিয়া , তিন্নির খুব ভাব হয়ে গেছে ।তারা দুজন একসাথে পিক তুলছে আবার সবার পিক তুলে দিচ্ছে ।গ্রুপের সবাইকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে শুধু নাফিয়া বাদে ।সে থম মেরে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে ।যেন তার কোনো অনুভূতি নেই , আনন্দ নেই ।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিশাল সমুদ্রের দিকে ।আর এদিকে স্পর্শ নাফিয়াসহ সবার গতিবিধি লক্ষ্য করছে ।সবাই এখন মজামাস্তিতে ব্যস্ত ।এটাই সুযোগ নাফিয়াকে সবার থেকে আড়াল করার ।এই সুযোগে নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে হবে নাফিয়ার কাছে ।নাফিয়াকে বোঝাতে হবে সে নাফিয়াকে ভালোবাসে ।এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবেনা ।সে খুব সন্তর্পনে নাফিয়ার পাশে এসে দাঁড়াল ।নাফিয়া কিছু বুজে উঠার আগেই নাফিয়ার হাতের আঙ্গুলগুলোর মাঝে নিজের আঙ্গুলগুলো ঢুকিয়ে আলতো টেনে নিয়ে যেতে লাগল কোথাও ।নাফিয়া হতভম্ব হয়ে স্পর্শের দিকে একবার তাকিয়ে ঢোক গিলে এদিক সেদিক চোখ বুলাতে লাগল ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

(বাড়িতে মেহমান আসছে তাই পর্বটা ছোট করে দিলাম তবে এতোটাও ছোট না কিন্তু ।আর কালকে চেষ্টা করব গল্প দিতে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here