ভয়ংকর সে পর্ব -০১+২+৩

“ওরে তোরা কে কোথায় আছিস রে, জলদি বের হ সব্বনাশ হয়ে গেছে।”

কথাটি বলে চিৎকার করতে করতেই ভরা বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের মাঝে দৌড়ে এলেন বৃদ্ধা রত্না বেগম। বাড়ির উঠানের মাঝখানে বসে প্রলাপ বকতে বকতে চিৎকার করে বলতে লাগলেন,

“সব্বনাশ হয়ে গেল গো। সব্বনাশ হয়ে গেল। আমার রতনের মেয়েটার আবারো কপাল পুড়লো। গতবারের মতো এবারও তার আর শশুর ঘরে যাওয়া হলো না গো। সব শেষ হয়ে গেলো।”

ওনাকে এমন প্রলাপ করতে দেখে পুরো অনুষ্ঠানের মানুষগুলো যেন নীরব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মুহূর্তের মাঝে সকল আয়োজন থমকে গিয়ে পরিণত হল বিষন্নতায়। রতন মিঞা দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালেন। কিছুটা ধমকের সুরে বললেন,

“কি হয়েছে কি মা? এভাবে পাগলের মত প্রলাপ করছো কেন? কোথা থেকে দৌড়ে এলে তুমি? আর কি এমন সব্বনাশ হয়েছে শুনি?”

উনার কথার উত্তরে রত্না বেগম আরো বেশি চিৎকার করে উঠোনে মাটির ওপর হাত দিয়ে আঘাত করতে করতে বললেন,

“রতন বাবারে আমার নাতনীর কপালটা আবারও পুড়েছে। বর যাত্রিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তার মাঝখান থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে তারা। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। পই পই করে তোদের নিষেধ করেছিলাম রাত করে বিয়ের অনুষ্ঠান না করতে। দেখলি তো গতবারের মতো এবারও নিজের মেয়ের মুখ পুড়ালি। এখন কি হবে, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে মুখ দেখাবো কি করে আমরা? সবাই তো তোর মেয়েকে অপয়া বলবে।”

ওনার এমন কথায় মুহূর্তেই থমকে গেলেন রতন মিঞা। প্রচন্ড রকমের ঘাবড়ে গেলেন তিনি। তবে কি গতবারের মতো এবারও বরযাত্রী কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? আবারও কি সকালে সূর্য দয়ের পরে কোথাও মিলবে তাদের রক্তশূন্য লাশ!

কথাগুলো ভেবেই যেন ভয়ে শিউরে উঠলেন তিনি। মা মরা মেয়েটার কথা চিন্তা করে বুকে ব্যথা শুরু হলো তার।

সিলেট বিভাগের এক পাহাড়ি অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করেন রতন মিঞা ও তার পরিবার। তার একমাত্র মেয়ে চাঁদনীর যখন সাত বছর বয়স। তখন তার মা হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন থেকে মা মরা মেয়েটিকে অনেক ভালবেসে আদরে বড় করেছেন তিনি। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বিয়েটাও করেন নি। পরিবারে তার মেয়ে চাঁদনী এবং মা রত্না বেগম ছাড়া আর কেউ নেই। এলাকায় রতন মিঞার বেশ ভালো নাম ডাক রয়েছে। সবাই বেশ ভালই জানেন তাকে। পরিবারও অনেক সচ্ছল। রতন মিঞা একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী।

এলাকায় সবকিছু বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কেমন একটা আতঙ্ক চলে এসেছে সবার মাঝে। গত ছয় মাস হল সূর্যাস্তর পর কেউ একা বাইরে বের হলেই পরের দিন তার রক্তশূন্য লাশ পাওয়া যায়। কে বা কারা তাদের এভাবে হত্যা করে সেটা কারো জানা নেই। ছয় মাস আগে যখন প্রথম চাঁদনীর বিয়ে ঠিক হয় শহরের একটি স্বনামধন্য পরিবারে। তখনই ঘটনার প্রথম সূত্রপাত হয়। বিয়ের দিন সব অনুষ্ঠান ভাল ভাবেই চলছিল। হঠাৎ বরযাত্রী মাঝ রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায়। সকলে অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাদের কোথাও খুঁজে পায়না। পরের দিন সকালে ১৭ টা লাশ খুঁজে পাওয়া যায় জঙ্গলের মধ্যে। সকলের শরীর’ই ছিল সাদা ধবধবে। যেন কেউ তাদের রক্ত চুষে নিয়েছে। বরযাত্রীর বাকি যে কজন বেঁচে ফিরে ছিল। তাদের কাউকেই আর ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি। সবাই এতটাই ভয় পেয়েছিল যে এই এলাকায় আর কখনো আসার সাহস করেনি। পরবর্তীতে রতন মিঞা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তারা যখন নিরিবিলি রাস্তা ধরে আসছিলো, তখনই কয়েকটা অদ্ভুত প্রানী তাদের সামনে এসে পরে। আর মুহুর্তের মাঝে তাদের ওপর আক্রমণ করে।

তাদের ভাষ্যমতে প্রাণীগুলো এতটাই দ্রুত গতির ছিল যে ঠিকভাবে তারা বুঝে উঠতে পারেনি সেগুলো আসলে কি ছিল। তবে মারাত্মক রকমের ভয় পেয়েছে তারা। সেদিনের পর থেকেই এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আর প্রতিদিন একটা না একটা দূর্ঘটনা ঘটতে থাকে। কেউ না কেউ স্বীকার হয় সেই প্রাণীগুলোর। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও তাদের কোন সন্ধান খুঁজে পায়নি। বরং প্রানীগুলোর সন্ধান বের করার জন্য রাতে ডিউটি করতে গিয়ে প্রানীগুলোর হাতে প্রাণ গেছে অনেক পুলিশের। সেই থেকে পুলিশও ভয়ে আর কাজ করছে না। এটা নিয়েই বেশ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকার মাঝে। এরই মাঝে চাঁদনীর আবার বিয়ে ঠিক হয়। ঢাকার একটি স্বনামধন্য পরিবারে। তাদেরকে সবকিছু খুলে বলার পরেও তারা এক রকম জেদ ধরে রাতে বিয়ের কথা ঠিক করে। আর তার পরিণাম হল এটা।

প্রতিবারের মত এবারেও পরদিন সকালে পুরো পঁচিশ টা লাশ খুঁজে পাওয়া যায় জঙ্গলের মধ্যে। সকলের শরীর’ই রক্তশূন্য। দেখে মনে হচ্ছে যেন সূক্ষভাবে কেউ তাদের শরীরের সব রক্ত চুষে নিয়েছে। কিন্তু কারো শরীরে কোন আচরের বা কোন কিছুর দাগ নেই। শুধুমাত্র গলায় দুটো গভীর গর্ত ছাড়া। দেখে মনে হয় যেন কোন প্রাণী কামড় দিয়ে রক্ত চুষে নিয়েছে গলা থেকে। ঠিক যেনো সাপের কামড়ের দাগের মত।

গতবার চাঁদনীর বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর সবাই কিছুটা চুপচাপ থাকলেও। এবার আর কেউ চুপ থাকে না। পুরো এলাকাবাসী কানাঘুষা শুরু করে দেয়। যে রতন মিঞার মেয়ে চাঁদনী অপায়া। তার কারণেই এলাকায় এত বেশি মৃত্যু ঘটছে। দুই দুইবার বিয়ে ভেঙে গেল তার। বরযাত্রী ঘরের দোরগোড়ায় এসেও যেনো পৌছে গেলো মৃত্যুর দুয়ারে। বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়ল ঘটনাটা চারিদিকে। রতন মিঞার আড়ালে সবাই বলতে শুরু করল ওদের একঘরে করে দিবে। কোনোভাবেই এই অপয়া পরিবারকে এলাকায় রাখা যাবে না। তাদের জন্যই হয়ত এত মৃত্যু ঘটছে চারিদিকে। যদিও তাদের কথার কোন ভিত্তি নেই। বিষয়টা রতন মিঞার কানে এসে পৌঁছালো। এতে ভীষণ রকম ভেঙে পড়লেন তিনি। নিজের একমাত্র মেয়ের নামে এমন বাজে কথা শোনার জন্য যেন কখনো কল্পনাও করেননি তিনি।

এদিকে চাঁদনীর এসব বিষয় নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। সে তো তার মত বিন্দাস আছে। চাঁদনীর বয়স ২২ বছর। লম্বায় ৫*৫ ইঞ্চি। গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা। চোখগুলো ভিষন মায়াবি। কিন্তু তাকে দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি দুষ্টু ও চনচল প্রকৃতির সে। বয়সে এত বড় হয়ে গেলেও যেন তার মাঝের ছেলেমানুষি এখনো যায়নি। সব সময় হাসিখুশি থাকতে ভালোবাসে সে। সারাক্ষণ পুরো বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখে। চারিদিকের এমন পরিস্থিতিতেও যেন তার মধ্যে কোনরকম ভাবান্তর নেই। সে শুধু একটা কথাই ভেবে যাচ্ছে। কী সে জিনিষ যে কিনা এভাবে সবাইকে হত্যা করছে?

চাঁদনী গল্প পড়তে ভীষন ভালবাসে। বিশেষ করে সে ভূত প্রেত ও ভ্যাম্পায়ার এর গল্প ভীষণ ভালোবাসে। আর এসব কাল্পনিক গল্প পড়ার কারণে তার মনের মাঝে সব সময় বলে এই কাজগুলো নিশ্চয়ই কোন ভূত বা ভ্যাম্পায়ার করছে। তাই তো গল্পের ভ্যাম্পায়ার এর মত মানুষের রক্ত চুষে তাদের মেরে ফেলছে।

চাঁদনী মনে মনে ঠিক করে আজ রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পরবে তখন’ই সে বের হবে নিরিবিলি রাস্তায়। আর খুঁজে বের করবে আসলে কী সে জিনিষ যে এভাবে মানুষদের রক্ত চুষে হত্যা করছে। এটা নিয়ে বেশ উত্তেজনা কাজ করছে তার মাঝে। সে রাতের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। যেভাবেই হোক এ ঘটনার রহস্য বের করতে হবেই তাকে। তার মাঝে কৌতূহলটা ভীষণ রকম কাজ করে। তাই নিজের কৌতুহল টা কে ধরে রাখতে না পেরেই এমন পরিকল্পনা তার।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যখন যে যার রুমে চলে যায়। তখন চাঁদনী প্রস্তুতি নিতে থাকে বাইরে বের হওয়ার জন্য। তখনই দরজায় টোকা পরে তার। বেশ বিরক্তি নিয়েই এগিয়ে যায় দরজার কাছে। দরজা খুলতেই দেখে রতন মিঞা দাঁড়িয়ে আছে। সে চাঁদনীকে দেখে করুন দৃষ্টিতে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর রুমের মাঝে প্রবেশ করে বিছানার উপর বসে। তাকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চাঁদনীর ভিষণ মায়া হয়। সে তার বাবার পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে বাবা! তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”

ওর কথার উত্তরে ওর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায় রতন মিঞা। মাথায় হাত বুলিয়ে করুন গলায় বলে,

“মারে আমাকে ক্ষমা করে দিস। তোর নামে এত বাজে বাজে কথা শুনা সত্ত্বেও আমি কাউকে কিছু বলতে পারছিনা। জানিনা এলাকার মানুষ গুলো হঠাৎ এমন হয়ে গেল কেন। কিন্তু তুই কারো কথায় কান দিয়ে কষ্ট পাবি না বুঝেছিস। আর কেউ জানুক আর না জানুক, আমি জানি। আমার চাঁদনী মা কোন অপয়া নয়। তার মত লক্ষী এবং ভালো একটি মেয়ে এলাকায় দুটি নেই। যে যাই বলুক কখনো মন খারাপ করবি না। আমি তোর জন্য আরো ভালো পাত্র খুঁজে আনবো। তোকে একটি ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলেই আমার শান্তি।”

উনার কথার উত্তরে চাঁদনী বিছানা থেকে নিচে এসে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসলো। তারপর বাবার হাতটা দুইহাতে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,

“তুমি এসব ভেবে কেনো কষ্ট পাচ্ছ বাবা? তুমি কি তোমার চাঁদনী কে চেনো না! আমাকে দেখো। আমাকে দেখে কি একটুও মনে হচ্ছে যে আমি এসব নিয়ে ভাবছি, বা কষ্ট পাচ্ছি? আমি জানি আমি কি। আর তাছাড়া অন্য কারো কথায় আমার কিছু যায় আসে না। আমার শুধু তোমাকে আর দাদিকে চাই। আর কিছু না। তুমি এসব ভেবোনা তো। ঘরে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাও। দেখো আমি একদম বিন্দাস আছি। আমার কোন কিছু হয়নি।”

ওর কথার উত্তরে রতন মিঞা কিছু বলে না। মৃদু হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটি চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। উনি চলে যেতেই চাঁদনী দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর আবারো নিজের কাজে লেগে পরে। যেভাবেই হোক আজ রাতে তাকে এ রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে। কারা এভাবে লোকগুলোকে হত্যা করছে প্রতিদিন। সেটা তার জানতেই হবে। এতে তার জীবন গেলে যাবে। তবে যতটা সম্ভব সাবধানতা বজায় রাখবে সে।
,
,
,
রাত প্রায় ১২:৫৬ মিনিট,
চারিদিকে নীরব নিস্তব্ধ তা ছড়িয়ে আছে। গ্রামের সবাই ঘুমে বিভোর। এখন বাড়ি থেকে বের হলে কেউ জানতেও পারবেনা। চাঁদনী ঘরের লাইট অফ করে দিয়ে আস্তে করে দরজা খোলে। তারপর কালো একটি ওড়না মুড়ি দিয়ে হাতে একটি টর্চ লাইট নিয়ে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয় সে। বাইরে থেকে আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। যদিও মনের মাঝে এক অজানা ভয় কাজ করছে তার। তবুও সেটা কে দূরে সরিয়ে নিজের উত্তেজনাকে বজায় রেখে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। প্রায় ১৫ মিনিট হাঁটার পর নিরিবিলি জনশূন্য একটি জায়গায় এসে পৌঁছায় সে। চারিদিকে ঝোপঝাড়ে ভরা। দূর-দূরান্তে শিয়ালের ডাক এবং ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। অসম্ভব ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোন দিকে বিন্দুমাত্র আলোর চিহ্নটুকুও নেই। এবার বেশ ভয় পেতে লাগে চাঁদনী। কিন্তু তবুও সে ফিরে যাওয়ার পাত্রী নয়। এতদূর যখন এসেছে সে দেখেই ছাড়বে কী সে জিনিষ যা এভাবে মানুষকে হত্যা করছে। সে আবারও সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। এবার দু-তিনপা এগিয়ে যেতেই মাথার উপর দিয়ে খুব দ্রুতগতিতে কিছু একটা উড়ে যাওয়ার শব্দ পায় সে। সাথে সাথে চমকে ওঠে হাতে থাকা টর্চ লাইটটা উপরে ধরে। কিন্তু না সেখানে কিছুই নেই। সবকিছুই একদম নিরব নিস্তব্ধ হয়ে আছে। চাঁদনী এবার একটি শুকনো ঢোক গেলে। ভয়ে হাত পা মৃদু ভাবে কাঁপতে থাকে তার।

সে তাড়াতাড়ি টর্চ লাইটের আলো টা বন্ধ করে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে তাকায়। কিন্তু অন্ধকারে কোন কিছুই চোখে পড়ে না তার। তখন তার মনে হয় দূর থেকে কিছু একটা লোভাতুর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী বুঝতে পারে উত্তেজনার বশে এভাবে একা একা এসে কত বড় ভুল করে ফেলেছে সে। এমনটা করা তার মোটেও উচিত হয়নি। সে এবার এদিক ওদিক না তাকিয়ে দ্রুত টর্চ লাইটের আলো সামনে ফেলে দৌড়াতে থাকে বাড়ির উদ্দেশ্যে। তখনই সে অনুভব করে তার পিছনে দ্রুতগতিতে কিছু একটা ছুটে আসছে তাকে ধরতে। চাঁদনী থমকে দাঁড়ায়। পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই অন্যপাশ থেকে কিছু একটা এসে পিছনে থাকা জিনিসটাকে খুব দ্রুতগতিতে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। চাঁদনী লাইট ধরে আর কিছুই দেখতে পায় না। কিন্তু এতটা ভয় পেয়ে যায় যে দুচোখ বেয়ে ঝরঝরিয়ে পানি পড়তে থাকে তার। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে আবারো দৌড়াতে থাকে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেনা। কিছু একটার সাথে পা বেজে মুখ থুবড়ে আছড়ে পড়ে মাটির উপর। হাতে এবং পায়ের হাটুতে বেশ ব্যথা পায় সে। সেই সাথে একটি কুঞ্চীর সাথে আটকে গিয়ে তার জামার হাতার কাছের কিছুটা অংশ ছিড়ে যায়।

চাঁদনী সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে ওড়না ও টর্চ লাইটটা নিচে ফেলেই উঠে দাঁড়িয়ে আবারো দৌড়াতে থাকে বাড়ির উদ্দেশ্যে। তখন’ই তার মনে হয় তাকে চারিদিক থেকে কিছু ঘিরে ধরে রয়েছে। যেন এখনই তার ওপর আক্রমণ করে তার রক্ত চুষে খেয়ে ফেলবে।

সে এবার ভয়ে দুই চোখ বন্ধ করে জোরে একটি চিৎকার দেয় বাবা বলে। তখনই সে অনুভব করে তার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে চোখ খুলে তাকাতেই দেখে একটি লম্বা অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে তার দিকেই তাকিয়ে। অন্ধকারে তার চেহারার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ঘটনার আকস্মিকতায় সে এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। #ভয়ংকর_সে
#M_Sonali
#পর্ব_২_৩
চাঁদনী কে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে না চাওয়া সত্ত্বেও তাকে কোলে তুলে নিল সামনে থাকা অবয়বটা। কোলে নিয়ে যখন’ই পিছন দিকে ঘুরতে যাবে, তখন’ই বুঝতে পারে তার পিছনে অনেকগুলো মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে। এটা দেখে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল অবয়বটা। সে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো একটুও নড়াচড়া করলো না। অবয়বটার গায়ে একটি হুডিওয়ালা জ্যাকেট পরা। হুডি দিয়ে মাথা এবং মুখ ঢেকে আছে সে। চাঁদনীকে কোলে তুলে নিয়ে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রতন মিঞা এবং এলাকার বেশ কয়েকজন লোক এগিয়ে আসলো তার কাছে। সবাই টর্চের আলো ফেললো অবয়বটার মুখে। কিন্তু সে হুডিটা এতটাই নিচে নামিয়ে রেখেছে যে মুখটা স্পষ্ট দেখা গেল না।

এবার সবাই তার মুখের উপর থেকে আলো সরিয়ে চাঁদনীর মুখের ওপর টর্চের আলো ফেললো। দেখল চাঁদনী অজ্ঞান হয়ে তার কোলের মাঝে পরে রয়েছে। চাঁদনীর হাতার কাছের জামা অনেকটা ছেড়া। গায়ে কোন ওড়না নেই। তাকে এ অবস্থায় দেখে যার যা বোঝার বুঝে নিল। সবাই ভুল বুঝে একে অপরের সাথে কানাঘুষা করতে লাগল। রতন মিঞা দেরি না করে দ্রুত নিজের গায়ের শার্টটা খুলে চাঁদনীর গায়ে পড়িয়ে দিলো। তারপর চিৎকার করে রাগি গলায় জিজ্ঞেস করল,

“এই ছেলে কে তুমি? আর আমার মেয়েকে এ অবস্থায় এখানে নিয়ে কি করছো? কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ওকে? ওর কি হয়েছে?”

উনার এমন ধমক খেয়েও ছেলেটা কিছুই বলল না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। যেন ভীষণ রকম ভাবনার মাঝে আছে সে। রতন মিঞা এবার দু পা এগিয়ে গেল তার দিকে। তারপর ছেলেটির মুখের উপরের হুডিটা ফেলে দেওয়ার জন্য উদ্যত হল। তখনই ছেলেটি দ্রুত বলে উঠলো,

“দেখুন আপনারা ভুল ভাবছেন। আমি ওনাকে অজ্ঞান অবস্থায় পরে থাকতে দেখে কোলে নিয়েছি। এর বেশি কিছু না।”

রতন মিঞা থেমে গেল। কিছুটা ঝাঝালো গলায় আবারো বলে উঠল,

“ফাজলামি করো আমাদের সাথে? এত রাতে আমার মেয়ে এখানে কেন আসতে যাবে? আর অজ্ঞান’ই বা হবে কেন? সত্যি করে বল কে তুমি, তোমাকে এর আগে এই এলাকায় দেখেছি বলে তো মনে হয় না!”

কথাটি বলেই রতন মিঞা আবারো ছেলেটার হুডি সরানোর জন্য হাত এগিয়ে দিল। সাথে সাথে ছেলেটি দু পা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

“আমি এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে দেখলাম এই মেয়েটি জঙ্গলের মধ্যে একা একা ঘুর ঘুর করছিলো। হয়তো কিছু দেখে ভয় পেয়ে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যায় সে। পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাই তাকে সাহায্যের জন্য আমি এখানে এসেছিলাম। বুঝতে পারিনি এটা নিয়ে আপনারা এত সিন ক্রিয়েট করবেন। আপনারা মেয়েটিকে রাখুন আমি চলে যাচ্ছি।”

কথাটি বলে চাঁদনীকে নিচে শুইয়ে দিতে চাইলে পাশ থেকে একটি লোক দ্রুত দিয়ে ছেলেটির কলার চেপে ধরলো। তারপর রাগি গলায় বললো,

“এই ছেলে কি ভাবো তুমি হ্যা! যা বলবে তাই আমরা বিশ্বাস করে নেবো। আমাদের আর কিছু বোঝা বাকি নেই। নিশ্চয় চাঁদনীর সাথে তোমার কোন সম্পর্ক আছে। আর তোমরা সেজন্য দেখা করতে এসেছিলে। কিন্তু চাঁদনী অজ্ঞান হলো কিভাবে? আর ওর এ অবস্থাই বা কেনো? সত্যি করে বলো কি করেছো তুমি ওর সাথে?”

লোকটির কথার উত্তরে ছেলেটি কিছু বললো না। তবে তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ রেগে গিয়েছে। তার কলার চেপে ধরার জন্য। রাগে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছু বলবে তার আগেই রতন মিঞা সেখানে এগিয়ে গেল। তারপর লোকটিকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

“আচ্ছা তোমরা থামো। যা কথা বলার বাড়িতে গিয়ে বলবে। এত রাতে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মোটেও নিরাপদ নয়। জানো তো এলাকার কী অবস্থা। এই ছেলে ওকে নিয়ে চলো আমাদের সাথে। তোমার সাথে বাড়িতে গিয়ে কথা হবে।”

এবারও ছেলেটি কোন উত্তর দিল না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। তারপর মনে মনে বেশ কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে নিল। কোনরকম কথা না বলে রতন মিঞার সাথে রওনা হলো তার বাড়ির দিকে।
,
,
,
চাঁদনী কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর পাশেই একটি চেয়ারের উপর বসে আছে ছেলেটা। তাকে ঘিরে ধরে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই। বিশেষ করে চাঁদনীর দাদি যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ছেলেটাকে। যদিও ছেলেটা এখনো নিজের হুডি সরায়নি। বেশ কিছুক্ষণ নিরব হয়ে রইলো সবাই। তারপর নিরাবতা কাটিয়ে রতন মিঞা গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

“অনেক হয়েছে আর নয়। এবার সত্যি করে বলো তোমার পরিচয় কি? কোথা থেকে এসেছো তুমি? আর এত রাতে এখানেই বা কি করছিলে? আমার মেয়ে তোমার কাছে কেনো গিয়েছিল? খবরদার কোন মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে না। যা বলার সত্যি করে বলবে। নইলে কাল সকালেই পুলিশের হাতে তুলে দেবো আমি তোমাকে।”

ছেলেটি কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। কোন উত্তর দিল না। তারপর নিজেই নিজের মুখের উপরের হুডিটা সরিয়ে দিলো। ওর চেহারা দেখা মাত্রই সবাই যেন হা করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙের অসম্ভব মিষ্টি চেহারার একটি ছেলে বসে আছে সবার সামনে। হাইট ৬ ফুটেরও বেশি। চোখ দুটো ভিষন মায়াবি। চোখের মনিগুলো গাঢ় বাদামি রঙের। ছেলেটি যেমন উচা লম্বা তেমনি তার চেহারা এবং সৌন্দর্য। চাঁদনীর সৌন্দর্য যেন তার কাছে কিছুই নয়। এর আগে এত সুন্দর কোন ছেলে কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না।

সবাইকে হা করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ বিরক্ত হয় ছেলেটি। তারপর গম্ভীর গলায় বলে ওঠে,

“দেখুন আপনারা যেটা ভাবছেন তেমন কিছুই নয়। আসলে আমি জঙ্গল এবং পাহাড়ি এলাকা ভীষণ পছন্দ করি। তাই বন্ধুদের সাথে দুদিন আগে ঘুরতে এসেছিলাম এখানে। আজকে আমাদের বাসায় ফেরার কথা ছিল। যাওয়ার পথে হঠাৎ আমার বাথরুম পেলে আমি ওদের পাশেই এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখে বাথরুম করার জন্য জঙ্গলের একটু গভীরে যাই। কিন্তু ফিরে এসে তাদের কাউকেই আর পাইনি। ওদের খুঁজতে খুঁজতেই এত রাত হয়ে গেছে। এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই মেয়েটিকে ওখানে কিছু দেখে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখে তাকে সাহায্য করার জন্য এখানে এসেছি। কিন্তু ভাবতে পারিনি আপনারা এ ব্যাপারটা এতদূর নিয়ে যাবেন।”

একনাগাড়ে এতোটুকু বলে থামল ছেলেটি। এবার সবাই একটু নরম হলো। কিন্তু রতন মিঞা তখন মনে মনে অনেক কিছুই ভেবে ফেলেছেন ছেলেটিকে নিয়ে। তার মনে একটা নতুন আশার আলো দেখা দিল। সে এবার ছেলেটার দিকে দু পা এগিয়ে গেল। মুখোমুখি বসে আদুরে গলায় বলল,

“তোমার নাম কি বাবা? আর তুমি কোথায় থাকো? তোমার বাবা কি করেন?”

একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করে থামল রতন মিঞা। ছেলেটি বেশ বিব্রত হলো। কিন্তু তবুও কিছু একটা ভেবে উত্তর দিতে লাগল,

“আমি রাজা। সবাই আমাকে রাজ বলে ডাকে। পৃথিবীতে আমার আপন বলে কেউ নেই।”

এতোটুকু বলে থামল রাজ। ওকে থামতে দেখে কেউ কিছু বলার আগে এবার চাঁদনীর দাদি তার পাশে গিয়ে বসল। ছেলেটির হাত ধরে বলল,

“কে বলেছে তোমার কেউ নেই? তুমি আমার নাতনিকে বিয়ে করে নাও দাদুভাই। আমার নাতনি কত মিষ্টি দেখেছো। তোমার সাথে অনেক ভালো মানাবে। তুমি চলে গেলে আমার নাতনির বদনাম হবে। এলাকার মানুষ ওকে নানা রকম কথা শোনাবে। কেউ তো আর বুঝবে না তুমি সত্য কথা বলছো। আমার নাতনির জীবনটা নষ্ট হবে। তোমাকে আমাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তুমি আমার নাতনিকে বিয়ে করে নাও। আর সারা জীবন এখানেই থেকে যাও। কোন অসুবিধা হবে না।”

রাজের হাতটা ধরা মাত্রই বুঝতে পারল ওর হাতটা প্রচন্ড রকমের ঠান্ডা। যেন ফ্রিজের মধ্যে থেকে এইমাত্র বের করে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সেদিকে এখন দাদির কোন খেয়াল নেই। সে তো নিজের নাতনির বিয়ে দেবে বলে ব্যস্ত। রাজ দ্রুত উনার হাতের মধ্যে থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল,

“এটা সম্ভব নয়। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি কোন মানুষকে বিয়ে করতে পারবোনা।”

ওর এমন কথা তেও কারো যেন এখনো হুঁশ ফিরল না। এবার রতন মিঞা কিছুটা রাগী গলায় বলে উঠলেন,

“তোমার এসব কথা আমরা শুনতে চাই না। এখন তুমি এখান থেকে চলে গেলে আমার মেয়ের বদনাম হয়ে যাবে। আগে থেকেই আমার মেয়ের কম বদনাম হয়নি এখানে। তোমাকে এখানে থাকতে হবে, আর আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। নইলে এখান থেকে এক পাও বাইরে বের হতে দিব না তোমাকে আমরা। দরকার হলে সকালে পুলিশ নিয়ে এসে তার হাতে তুলে দেবো তোমাকে।”

রাজ এবার চুপ হয়ে গেল। কিছু বললো না। কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রেখে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবল। তারপর মাথা উঁচু করে বলে উঠলো,

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

ওকে রাজী হতে দেখে সকলের মুখে যেন হাসি ফুটে উঠল। রতন মিঞা দ্রুত বলে উঠল,

“বল কি শর্ত আছে তোমার। আমি সব শর্ত মানতে রাজী। শুধু আমার মেয়েটাকে সুখী দেখতে চাই।”

“আমি ওকে বিয়ে করবো ঠিকই। কিন্তু বিয়ে করার পর এক মুহূর্তও এখানে দাঁড়াবো না। রাতেই ওকে নিয়ে চলে যাব নিজ গন্তব্যে।”

ওর কথা শুনে এবার রতন মিঞার মুখটা কালো হয়ে গেল। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে চাঁদনীর দাদি এবার তার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,

“রতন ওর কথা মেনে নে বাবা। নইলে ও চলে গেলে তোর মেয়েটার বদনাম হয়ে যাবে। এ মেয়েকে আর কোথাও বিয়ে দিতে পারবিনা। দেখছিস তো মেয়েটার অবস্থা। আর ছেলেটিকে দেখে মনে হচ্ছে সে কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। আমাদের চাঁদনীকে সে সুখেই রাখবে। আর কিছু ভাবিস না।”

রতন নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। কিছুক্ষণ গম্ভীর মেরে চুপ করে রইলেন। কি করা চায় তা ভাবতে লাগলেন। তখন’ই খেয়াল করলেন পিছনে সবাই কানাঘুষা শুরু করেছে। আর সবাই চাঁদনীকে দোষারোপ করছে। তিনি আর কোন কিছু না ভেবে উত্তর দিলেন,

“ঠিক আছে আমি তোমার শর্তে রাজী। কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে, তুমি আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিবে না। তাকে সব সময় আগলে রাখবে। সুখে রাখবে। তোমাকে আমি চিনিনা জানিনা এমন অচেনা একটি ছেলের হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দিতে একজন বাবা হিসেবে প্রচুর কষ্ট হবে আমার। তবুও তোমার চেহারা দেখে তোমাকে বিশ্বাস করে আমার মেয়েটিকে তুলে দিব। আশা করি তুমি সে বিশ্বাসের অমর্যাদা করবে না বাবা।”

রাজ কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসল। তারপর শান্ত গলায় উত্তর দিলো,

“আপনার মেয়ের কোন ক্ষতি হবে না। সে সুখে থাকবে কথা দিচ্ছি। এখন সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের ব্যবস্থা করুন। আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। ওকে নিয়ে রাতেই চলে যাব।”

রতন মিঞা আর দেরি না করে দ্রুত পাশের বাড়ি থেকে একজন ইমামকে ডেকে এনে বিয়ের ব্যবস্থা করতে লাগলেন। এদিকে চাঁদনীর জ্ঞান ফেরানো হলো। চারিদিকে সবার বিয়ের আয়োজন দেখে সে কিছুই বুঝতে পারলো না। রাজ অন্য রুমে চলে যাওয়ায় রাজকে সে এখনো দেখেনি। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা তার। সবাই তাকে সাজাতে ব্যস্ত। একঘন্টা সময় এর মাঝে সবকিছু কমপ্লিট হয়ে গেল। রাতেই দুজনের বিয়ে পড়ানো হলো। চাঁদনী না চাওয়া সত্ত্বেও বিয়ে করতে বাধ্য হল। যদিও সে জানেনা কার সাথে বিয়ে হল তার। আর হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল সে কোন কিছু বলার সুযোগ টাও পেল না। কেউ তাঁকে কিছু জিজ্ঞেসও করল না।

বিয়ে পড়ানো শেষে যখন দুজনকে একসাথে করা হল। তখন রাজের দিকে ফিরে তাকাল চাঁদনী। নিজের স্বামীকে দেখে যেন এক নজরে প্রেমে পড়ে গেলো তার। এত সুন্দর কোন ছেলেকে যেন সে এর আগে কখনো দেখেনি। বেশরমের মতন এক নজরে তাকিয়ে রইল তার দিকে। রাজ একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর বলে উঠল,

“মধ্য রাত পার হয়ে যাচ্ছে। আমি আর দেরি করতে পারব না। এখন আমাদের বিদায় দিন। ওকে নিয়ে চলে যেতে চাই।”

“না জামাই বাবা। এমনটা বলো না। এত রাতে আমি কোনভাবেই তোমাদের যেতে দিতে পারি না। আর তাছাড়া এই এলাকার খবর তুমি জানো না। এখানে সন্ধ্যার পর কেউ বাইরে বের হলেই তাকে আর জীবিত পাওয়া যায় না। পরের দিন তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। তোমরা বের হলে যদি তোমাদের তেমন কিছু হয়। তুমি বরং কাল সকালে চলে যেও।”

কথাটা বলেই থামলেন রতন মিঞা। এবার রাজ কিছুটা রাগি গলায় বলে উঠল,

“দেখুন আমি আপনাদের আগেই বলেছি। আমি রাতেই চলে যাব। আর চিন্তা করবেন না ওর বা আমার কিছুই হবে না।”

এভাবে বলার পরেও সবাই জোর করতে লাগল রাজকে। এবার রাজের মুখটা যেন রাগে লাল হয়ে গেল। সে সকলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

“ওকে আপনারা রাখুন আমি চলে যাচ্ছি। এখানে সকাল অব্দি থাকা পসিবল নয় আমার।”

কথাটি বলেই বাইরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো রাজ। সাথে সাথে চাঁদনী গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো। তারপর বললো,

“দাঁড়ান কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আমি আপনার সাথে যাব। জানিনা আপনি কে, আর কি থেকে কি হয়ে গেল। সে বিষয়েও আমার কিছু জানা নেই। কিন্তু যেহেতু আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। সেজন্য আমি আর এখানে থাকতে চাই না। বাবা দাদি তোমরা আমাকে বিদায় দাও। আমি ওনার সাথে চলে যাবো। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।”

এবার চাঁদনীর কথায় সবাই চুপ মেরে গেল। বেশ কিছুক্ষণ একে অপরের সাথে কথা বলে সবকিছু মিটমাট হল। তারপর চাঁদনীর হাত ধরে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল রাজ। রতন মিয়া পিছু পিছু যেতে চাইলে তাকে বাধা দিয়ে রাজ বলল,

“আপনারা কেউ জঙ্গলে আসবেন না। সবাই ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিন। এই জঙ্গলটা ভালো নয়। তবে আমাদের জন্য চিন্তা করবেন না আমাদের কিছু হবেনা। আমি বাসায় পৌছেই আপনাদের খবর দিয়ে দিব।”

কথাটা বলে চাঁদনীর হাত ধরে দ্রুত পায়ে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেল রাজ। সবকিছু এত দ্রুত হয়ে গেল যে কারো আর কিছু বোঝার উপায় থাকল না। সবাই যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো সব কিছুতেই রাজি হতে বাধ্য হল।

চাঁদনী কে নিয়ে অন্ধকারে কিছুদুর গিয়েই রাজ আশেপাশে তাকিয়ে ওর মাথায় হাত রাখল। চাঁদনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘুমে ঢুলে পরলো রাজের ওপর। রাজ তাকে কোলে তুলে নিয়ে হাওয়ার বেগে কোথাও একটা ছুটে চলল।
,
,
,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

লেখার পর রি-চেক করা হয়নি। বানানে ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৩
#M_Sonali

(অনেক পাঠক পাঠিকার অনুরোধে এই পর্ব থেকে নায়ক এর নামটা চেঞ্জ করে রাজ থেকে শ্রাবণ নামটা দেওয়া হল।)

ঘুম ভাঙতেই নিজেকে একটি অন্ধকার রুমে বিছানার ওপর আবিষ্কার করে চাঁদনী। সে কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থেকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে ঠিক কোথায় আছে। তখন’ই রাতের কথাগুলো মনে পড়ে যায় তার। মনে পড়ে তার বিয়ে হয়ে গেছে। একজন অচেনা ছেলের সাথে। হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে গেছে তার। কথাগুলো মনে পড়তেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে চাঁদনী। চারিদিকে তাকিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখতে পেয়ে ভীষণ রকম ভয় পেয়ে যায় সে। বুকের মাঝে অজানা ভয় বাসা বাঁধে তার।

সে শুকনো ঢোক গেলে। তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চিৎকার করে বলে,

“শুনছেন, কেউ আছেন এখানে? প্লিজ কেউ থাকলে কথা বলুন। আমার ভীষণ ভয় করছে। আমি এখানে কিভাবে এলাম। এটা কোন জায়গা।”

তখনই রুমের মাঝে আলো জ্বলে ওঠে। চারিদিকে হঠাৎ করে আলো জ্বলে ওঠায় দ্রুত চোখ বন্ধ করে নেয় চাঁদনী। তারপর টিপটিপ করে ধীরে ধীরে চারি দিকে তাকায় সে। তাকিয়ে যেন ভীষণ রকম অবাক হয়ে যায়। বিশাল বড় একটি রুমের মাঝে পালঙ্কের উপর শুয়ে আছে সে। রুমটা দেখে মনে হচ্ছে যেন কোন রাজার রুম। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো গোছানো এবং পরিপাটি। প্রতিটা জিনিসে লেগে আছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। চারিদিকে একবার ভালো করে দেখে নেয় সে। তার পরেই তার চোখ পড়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির দিকে। যে কিনা দুই হাত পকেটে গুঁজে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

চাঁদনী লজ্জা পেয়ে দ্রুত নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের দিকে লক্ষ করে দেখে। তার গায়ে কোন ওড়না নেই। এলোমেলো ভাবে বিছানায় শুয়ে ছিল সে। ব্যাপারটা খেয়াল হতেই দ্রুত এদিক ওদিক তাকিয়ে পাশে পরে থাকা ওড়নাটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়। তারপর আমতা আমতা করে বলে,

“আমি এটা কোথায়? এটা কোন জায়গা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

ওর কথার উত্তরে ছেলেটি এবার পকেটের মধ্যে থেকে হাত বের করে ধীর পায়ে হেটে হেটে ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভাল করে তীক্ষ্ণ নজরে দেখে নেয় ওকে। চাঁদনী একবার মাথা তুলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে নতুন করে প্রেমে পড়ে যায়। গতকাল রাতে যেমন দেখেছিল তার চাইতেও যেন আরো বেশী সুন্দর লাগছে দেখতে এখন তাকে। মাথায় কোনো হুডি নেই। গায়ে সিম্পল একটা কালো রঙের টি-শার্ট পরা। অনেক বেশি কিউট লাগছে দেখতে। ধবধবে সাদা গায়ের রঙের সাথে কালো রঙের টি-শার্ট টা যেন আরো বেশি ফুটে উঠেছে। ওকে এভাবে হা করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় বলে,

“এটা আমার বাড়ি। এখানে শুধু আমি থাকি। আর আজ থেকে তুমিও এখানেই থাকবে আমার সাথে। আমাকে ভুলে যাওনি নিশ্চই? গতকাল রাতে আমার সাথে বিয়ে হয়েছে তোমার। সে হিসেবে আমি তোমার স্বামী।”

চাঁদনী মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে বলে ওঠে,

“জ্বি আমার মনে আছে। কিন্তু আপনি আসলে কে? আর বাবা কেন হঠাৎ করে আপনার সাথে এভাবে বিয়ে দিল আমায়? আমিতো এর আগে আপনাকে কখনো দেখিনি।”

“প্রথমত আমি যাই হই না কেন, এখন আমি তোমার বর। আর তুমি আমার বউ। তাই এ পরিচয়টুকু যথেষ্ট। আর যদি আমার নাম জানতে চাও। তাহলে শোনো, আমার নাম শ্রাবণ। পৃথিবীতে আমার আপন বলে কেউ নেই। আজ থেকে শুধু তুমি আছো। গতকাল রাতে তুমি যখন ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। তোমাকে বাঁচিয়ে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তুলে নেওয়ার সাথে সাথে এলাকাবাসী এসে পরে। আর তোমাকে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ভুল বুঝে। যে কারণে বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হয়েছে তোমাকে আমার।”

এতোটুকু বলে থামল শ্রাবণ। ওকে থামাতে দেখে চাঁদনী এবার ওর দিকে মুখ তুলে করুন চোখে তাকাল। তারপর মৃদু গলায় বলল,

“তাহলে কি আপনি আমাকে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেননি? জোর করে বাবা আপনার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছে বলে আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন?”

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ জানালার কাছে যেতে যেতে বলল,

“আমাকে জোর করে কিছু করানোর মতো ক্ষমতা পৃথিবীতে কারো নেই। তোমার বাবা তো সাধারণ একজন মানুষ। আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে বিয়ে করেছি। এখন কথা না বাড়িয়ে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।”

চাঁদনী ওর কথার উত্তরে আর কিছু বলে না। মাথা নিচু করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে ওয়াশরুম কোনদিকে। তখনই শ্রাবণ জানালার ঐ দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠে,

“হাতের বাম পাশে যে দরজাটা দেখতে পাচ্ছ! সেই দরজার ওপাশেই ওয়াশরুম। ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি এখানেই আছি।”

চাঁদনী আর কথা না বাড়িয়ে ওয়াশ রুমের দিকে হাঁটা দেয়। দরজার কাছে গিয়ে আবার পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,

“শুনছেন, আমি ফ্রেশ হয়ে কি পরবো? আমার তো আর কোন জামাকাপড় আনা হয়নি। শুধু এটা ছাড়া।”

” কিছু পড়ার কি দরকার? না পড়েও তো থাকতে পারবে। এখানে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই।”

জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দেয় শ্রাবণ। ওর মুখে এমন উত্তর শুনে বেশ ইতস্ততায় পড়ে যায় চাঁদনী। থতমত খেয়ে বলে,

“মা মানে কি বলছেন আপনি এসব?”

শ্রাবণ ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় বলে,

“কিছু না, মজা করছিলাম। তুমি ওয়াশরুমে যাও আমি তোমার পোশাকের ব্যবস্থা করছি।”

চাঁদনী আর কথা বারিয়ে চুপচাপ ওয়াশ রুমের মধ্যে ঢুকে পরে। দরজা লাগাতে যেতেই হঠাৎ দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ পায়। সে দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ হাতে একটি পোশাক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও বেশ অবাক হয়। বড় বড় করে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

“আপনি এত তাড়াতাড়ি এটা কোথা থেকে নিয়ে আসলেন? ৩০ সেকেন্ডও তো হয়নি। এত টুকু সময়ের মাঝে আপ,,,!”

এতোটুকু বলতেই ওকে থামিয়ে দিয়ে শ্রাবন বলে উঠলো,

“আমি অলসতার কাজ একদম পছন্দ করি না। সবকিছু তাড়াতাড়ি করা চাই। তাই কথা না বাড়িয়ে কাপড়টা নাও আর ফ্রেশ হয়ে এটা পড়ে বেরিয়ে আসো। বেশি সময় নেই। আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে।”

চাঁদনী আর কথা বাড়ায় না। ছো মেরে ওর হাত থেকে কাপড় টা নিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। ওয়াশরুমটা অনেক বড়। অনেক সুন্দর করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ও পরিপাটি করে সাজানো। চাঁদনী চোখ বুলিয়ে পুরো ওয়াশরুম টা একবার দেখে নেয়। সত্যিই ও জীবনে কল্পনাও করেনি এত সুন্দর একটি বাড়িতে থাকবে। সবকিছু যেন স্বপ্নের মত লাগছে। যেন রাজকীয় কোন পরিবেশে চলে এসেছে সে। মনের মাঝে বাকবাকুম পায়রা উড়তে শুরু করেছে তার। একে তো নিজের স্বামীকে দেখে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছে সে। এতো সুন্দর পুরুষ জীবনে আর কখনো দেখেনি সে। তার ওপর বাড়ির প্রতিটা জিনিস দেখে যেন আরও আনন্দে মেতে উঠছে তার মনটা।

সে এবার তাড়াতাড়ি গোসল করে জামা কাপড় ছাড়ে। তারপর শ্রাবনের দেওয়া জামাটা পরতে নেয়। তখনই দেখে জামাটা একদমই ছোট। আর জামার গলাটা বেশ বড়। লম্বায় হাটু পর্যন্ত হবে হয়তো। কালো কুচকুচে রঙের একটি সফট কাপড়ের জামা। এটা পড়ার পর চাঁদনীর মনেই হচ্ছে না সে কিছু পড়েছে।

চাঁদনী ভেবে পাচ্ছেনা সে এটা পড়ে কিভাবে বের হবে। ভীষণরকম অস্বস্তি লাগছে তার। জামাটা এদিক ওদিক থেকে টানতে শুরু করেছে সে। তখন এই দরজায় টোকা পড়ে। ও পাশ থেকে শ্রাবন বলে ওঠে,

“কি হলো আর কতক্ষণ লাগাবে? জলদি এসো আমাকে যেতে হবে।”

চাঁদনী কোন উপায় না পেয়ে আগের জামার সাথে রেখে দেওয়া ওড়নাটা কোনমতে নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়। তারপর দরজা খুলে কাপড় এদিক-ওদিক টানতে টানতে বাইরে বেরিয়ে আসে। ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয় শ্রাবণ। তারপর আচমকা ওড়নাটা ধরে এক ঝটকা মারে। সাথে সাথে ঘুরতে ঘুরতে পড়ে যেতে নিলে চাঁদনী। তখনই ওর হাত ধরে ফেলে শ্রাবন। তারপর গম্ভীর গলায় বলে,

“আমার সামনে এভাবে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি ভেবো না এটা পরে আমার সামনে আসলে আমি ভুলভাল কিছু করে বসবো। তুমি ততটাও সুন্দর নও। আমার কাছে এর চাইতে ভাল কোন পোশাক নেই। তাই এটাই পড়ে থাকতে হবে তোমায়। এখন চুপচাপ আমার কথা শোনো। আমি বাইরে যাচ্ছি। ভুল করেও এই বাড়ি থেকে বাইরে বের হবেনা। আমার আসতে হয়তো কিছুক্ষণ সময় লাগবে। বাসা থেকে কোনমতেই বাইরে বের হবে না। যে কেউ এসে ডাকুক না কেন।”

কথাগুলো বলেই চলে যেতে নেয় শ্রাবন। তারপর কিছু একটা ভেবে আবারো ফিরে আসে। পকেট থেকে একটা কিছু বের করে সেটা চাঁদনীর হাত ধরে ওর হাতে বেঁধে দিতে দিতে বলে,

“এটা তোমার হাতে সব সময় বেঁধে রাখবে। এক মিনিটের জন্যও এটি খুলবেনা। ধরে নাও তোমার বরের দেওয়া প্রথম গিফট এটা।”

চাঁদনী ভ্রু কুঁচকে হাতের দিকে তাকায়। দেখে সেখানে একটি পালক বেঁধে দেওয়া। পালক টা দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না এটা কিসের পালক। তবে পালক টা একদম কুচকুচে কালো রঙের। যেন শাইন করছে সেটা। চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাসা থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায় শ্রাবণ। চোখের পলকে যেন উধাও হয়ে যায় সে। এতে চাঁদনী ভীষণ অবাক হয়। সাথে রাগও হয় প্রচুর।

“সে কিভাবে বলল চাঁদনী ততো টাও সুন্দর নয়। নিজের রূপের বড্ড বেশি অহংকার লোকটার। এতই যখন অহংকার তাহলে ওকে বিয়ে করতে বলেছিল কে?”

কথাগুলো ভেবে মনে মনে ভীষণ অভিমান হয় তার। কিন্তু সে অভিমানকে দূরে রেখে খাবার খুঁজতে থাকে। সে বুঝতে পারে তার ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে। এদিকে শ্রাবণ চলে গেছে কি খাবে কিছুই বুঝতে পারে না। তাই ধীরে পায়ে নিজের রুম থেকে বাইরে বের হয়। দেখে বাইরে বিশাল বড় আর একটি রুম। সেখানে একটি বিশাল ডাইনিং টেবিল রাখা। সেই টেবিলের ওপর অনেকগুলো বাসনের মাঝে শুধু নানা রকমের ফল রাখা। তা ছাড়া অন্য কোন খাবার নেই।
,
,
,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here