মনের গহীনে পর্ব ১৫+১৬

#মনের_গহীনে
১৫তম পর্ব
লেখনীতে :নাদিয়া হোসাইন
খোলা আকাশের নিচে দুজন ভালোবাসার মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। মাথার উপর পূর্ণ চাঁদটা তারা যেদিকে যাচ্ছে, সেদিক দিয়ে সে ও তাদের সাথি হয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীতের মাঝে প্রাচুর্য গায়ে চাঁদর গায়ে ও প্রিয় জ্যাকেট গায়ে পরে হাঁটছে। প্রিয়র খুব ঠান্ডা লাগছে। মন চাইছে বাসায় গিয়ে ঘুমাতে, কিন্তু প্রাচুর্যের খুশির জন্য নিজের ইচ্ছেটুকু দমিয়ে রাখলো। প্রাচুর্য নিজের হাতের মুঠোয় প্রিয়র হাত নিয়ে নিলো। তার এই ইচ্ছেটাও পূরণ হয়ে গেলো। আরো অনেক কিছুই পূরণ হওয়ার আছে।

হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে দুজন রাত তিনটের দিকে বাসায় ফিরে গেলো। বাদল ঘুমাচ্ছিলো, তাই আর কোন ঝামেলা পোহাতে হলো না। ভোরের দিকে প্রিয়র জ্বর, ঠান্ডা উঠে গেলো। প্রিয় এমদমই ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। প্রিয় বুঝে পাচ্ছে না, নির্জন রাস্তার মধ্যে দুজন হাটার মধ্যে কি এমন ভালোবাসা থাকতে পারে। এগুলা প্রাচুর্যের দ্বারাই সম্ভব। প্রাচুর্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস নিয়েও অনেক বেশি কিছু ভেবে ফেলে। সে আর সামায়া থাকলে হয়তো এমন হতো না।এট লিস্ট নিজের ইচ্ছের কিছুটা মূল্য থাকতো। প্রাচুর্যর প্রতি ক্রমশ-ই বিরক্ত বাড়ছে প্রিয়র। সে সব সময়-ই নিজের ইচ্ছেটাকে মূল্য দেয় । হয়তো প্রাচুর্যের যায়গায় সে ঠিকই আছে, কিন্তু তার মনের গহীনে প্রাচুর্যর জন্য ভালোবাসা নেই বলেই হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে। প্রিয় আর সহ্য করতে পারছে না। শরীর অসম্ভব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কোনমতো ফোন হাতে নিয়ে তার মা প্রিতিকে ফোন দিলো। ছেলের এমন অবস্থায় তিনি এসে ছেলের সেবায় লেগে গেলেন।

সকাল নয়টার দিকে প্রিয়র জ্বর কিছুটা আয়ত্তে এলো। প্রাচুর্য এসবের কিছুই জানতো না। সকালে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে শুনতে পেলো প্রিতি শান্তাকে বলছে,__ জানিস ভোরে প্রিয়র কি জ্বরটাই না এলো। ছেলেটার মুখ পুরো শুকিয়ে গেছে।
কি বলছো আপু? ও তো কাল ঠিকই ছিলো। ইস.. ছেলেটার মুখের দিকে ইদানীং তাকানোই যায় না। এতো লক্ষি ছেলেটা।
প্রাচুর্য প্রিয়র জ্বর শুনে খুব ঘাবড়ে গেলো। কিছু না ভেবেই বলে ফেললো, __কীভাবে জ্বর হলো ভাইয়ার। আর উনি ঠিক আছে তো?
হ্যাঁ আপু তো বললো ঠিকই আছে।
হঠাৎ প্রাচুর্যকে দেখে প্রিতি শান্তার উদ্যেশ্যে বললো, __ জানিস, কাল রাতে আমি পানি নিয়ে রুমে যাচ্ছিলাম। তখন দেখলাম একজন মেয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে বাইরে থেকে আসলো। প্রিয় আবার ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। কি দিন কাল এলো। রাত বিরাতে প্রেমিকাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যায়।
প্রাচুর্য উনার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো।সে মনে মনে আওড়ালো,__ইস, উনি তো সব জেনে গেলেন৷ এখন নিঃশ্চয়-ই আমাকে বকা দিবে। ভয়ে প্রাচুর্যের হাত ঠান্ডা হয়ে এলো। তখন শান্তা বললো, __কি বলছো তুমি। মেয়ে কই থেকে আসলো। প্রিয় কি নতুন কোন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেলো?
প্রিতি হঠাৎ হেসে দিলো। হাসতে হাসতেই প্রাচুর্যের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রাচুর্যের কাধে হাত রেখে বললো, __আমার ছেলের পছন্দ আছে রে শান্তা।কাল আমার দেখা মেয়েটা প্রাচুর্য ছিলো। তোর ভাইঝি তোর সাথে পার্মানেন্ট থাকবে। কেমন হবে বল তো?
কি বলছো তুমি। প্রিয় কি প্রাচুর্যের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে নাকি? আমার তো এবার ভয় লাগছে। ভাইয়া যদি যানে, না জানি আমার মতো হয়।
আরে এতো ভাবিস না তো! সব সময় এক-ই কাহিনি হবে নাকি। সুবহান ভাই মেনে নিবে। আর প্রাচুর্য তুমি ভয় পাচ্ছো কেন। আমি তো মজা নিচ্ছিলাম।
সরি আন্টি! আমার উনাকে নিয়ে যাওয়া ঠিক হয় নি। আমার জন্য-ই উনি অসুস্থ হয়ে পরলো।
ধূর বোকা। এই নাও স্যুপ নুডলসটা প্রিয়কে খাইয়ে আসো। ওর ও ভালো লাগবে। যাও এখানে টেনশন না করে দেখে আসো।
প্রাচুর্য লজ্জা পেয়ে খাবার নিয়ে চলে গেলো। তখন শান্তা বললো,__ ওরা যা করছে, ঠিক করছে তো?না জানি ওদের কপালে কি থাকে৷
আরে চিন্তা করিস না। আমার ছেলে সব হেন্ডেল করে নিবে। একবার সামায়ার জন্য অনেক কষ্ট পাইছে। প্রাচুর্যের চোখে ওর জন্য অনেক ভালোবাসা দেখছি। ও সব সামলে নিবে।

প্রিয় ঘুমিয়ে আছে। প্রাচুর্য প্রিয়র শুকনো মুখটা দেখে কান্না করে দিলো। ও যদি জানতো, তো কখনোই এমনটা করতো না। প্রাচুর্যের কান্নার আওয়াজে প্রিয়র ঘুম ভেঙে যায়।
বাচ্ছাটা তুমি কাদছো কেন। কি হইছে?
প্রাচুর্য প্রিয়র পাশে বসে বললো, আপনি কালকে কেন রাজি হলেন? আমি খুব খারাপ। আপনাকে একদিনেই অসুস্থ করে দিলাম।
তুমি তো জানতা না। যা হইছে হইছে ই। এখন যাও। কেউ এসে পরলে সমস্যা।
নাহ সমস্যা নেই।কাল আমাদের আপনার আম্মু দেখে ফেলছে। উনি কিছু বলেন নি।উলটো আমাকে মেনে নিছে। আপনার জন্য আমার হাতে খাবারও পাঠিয়েছে।
প্রিয় কপালে হাত দিয়ে বললো, হায়রে কপাল। আমার মা টা ও কি ভালো।

প্রাচুর্য প্রিয়কে নুডলসটা খাইয়ে দিলো। তার মনে এক ধরনের তৃপ্তি এলো। নিজেকে প্রিয়র বউ বউ মনে হচ্ছে। সত্যিই প্রিয়কে না পেলে জীবনে অনেক কিছু মিস করে ফেলতো।

এক সপ্তাহ চলে গেলো। প্রিয়দের বাড়িতে প্রাচুর্যের দিন খুব ভালো কাটছে। প্রাচুর্য প্রিয়কে একদম নিজের মতো করে নিচ্ছে। প্রাচুর্য প্রথমে ভেবেছিলো প্রিয় জোর করে নিজেকে তার কাছে সঁপেছিলো সামায়াকে ভুলার জন্য। কিছু এখন তা মনে হচ্ছে না। বরং প্রিয় প্রাচুর্যের সব ইচ্ছে হাসিমুখে মেনে আসছে।

রাতে প্রাচুর্যের ভালো লাগছিলো না। তাই ছাদে চলে গেলো। ছাদের দরজার সামনে দাড়াতেই দেখতে পেলো প্রিয় আর প্রান দাড়িয়ে কথা বলছে। সে ভেবেছিলো হঠাৎ গিয়ে দু’জনকে ভয় পাইয়ে দিবে। সে যখনি আগাচ্ছিলো সামনে তখনি শুনতে পেলো,
আমার আর ভাল লাগছে না প্রান। প্রাচুর্যের ওভার কেয়ারে আমার বিরক্ত লাগছে। কথা নেই বার্তা নেই, এখানে যাবে, সেখানে যাবে। রিলেশনে গেলাম এক সপ্তাহ গেলো না। এখানে চলে এলো, আমাকে মিস করছে বলে। রাতে ঘুমায়ও না দুইটার আগে । আমি জাস্ট এতো পেইন নিতে পারছি না।
ভাই তুমি এগুলা কি বলছো৷ ও অনেক ভালো একটা মেয়ে।সব থেকে বড় কথা , তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তাই ওর সব আবদার তোমার জন্য! আর তুমি -ই তো ওকে নিজের জীবনে যায়গা দিয়েছো। এর কোন মানেই হয় না।
ভুল করছি আমি! জানিস, আমি কখনোই মুভ অন করতাম না। সামায়াকে আমি ভুলতেই পারি নি। প্রাচুর্যকে ভালো একটুও বাসতে পারি নি আমি ম ও আমার সব থেকে বড় বিরক্তের কারন। একদিন সামায়ার সাথে মিট করছিলাম। আমি ভাবছিলাম সামায়ার আমার সাথে দেখা করার কারন, ও আমাকে ভালোবাসতে চায়। বাট আই ওয়াজ রঙ! উলটো ও আমার সাথে মিট করেছিলো , প্রাচুর্য আমাকে তিন বছর ধরে ভালোবাসে। আমি একা লাইফ কাটাতে পারবো না। তাই আমি যেনো প্রাচুর্যকে একটু সুযোগ দেই। আমি দিয়েছিলাম ওর কথা শুনে সুযোগ। আমি জানি ওর মধ্যে কোন ভুল নেই। ও আমাকে ভালোবাসে, মানছি। কিন্তু অতিরিক্ত ভালোবাসা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। আমার জাস্ট দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
চুপ করো ভাই। তোমার মাথা ঠিক নেই। ও মেনে নিতেই পারবে না। তুমি নিজেকে টাইম দাও। একটু ভাব যে, হোয়াট ইয়্যু ওয়ান্ট।
থাক প্রান ভাইয়া, ওর আর ভাবতে হবে না। অনেক দয়া উনি আমাকে দেখিয়েছে। আমি আর চাচ্ছি না কিছু। আজ থেকে আমি উনার কেউ না। আমার ভুল ছিলো, নিজের অনুভূতি সবার কাছে রপ্ত করা। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে আপনার কাছে প্রিয় চৌধুরী। আর আসবো না আপনার জীবনে। কান্নারত স্বরে কথা গুলো প্রাচুর্য বললো। নিজেকে আজ কীট মনে হচ্ছে। গা গুলিয়া আসছে।

দুই ভাই প্রাচুর্যকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।ভাবতে পারে নি এমন হবে। প্রিয়র বুকটা হঠাৎ-ই কেঁপে উঠলো। প্রাচুর্যের কান্না কেনো জানি তার সহ্য হচ্ছে না। হঠাৎ-ই প্রাচুর্য দৌড়ে চলে গেলো। প্রিয় প্রাচুর্যকে থামাতে যাবে, তখন প্রান বললো, এখন তুই কোথাও যাবি না। তোর এখন সেলিব্রেট করার টাইম। আর কোন পিছুটান নেই তোর। অসহ্য লাগার কারণ চলে গেছে। জাস্ট চিল!
চুপ কর প্রান। আমি এমনটা চাই নি। সব-ই সত্যি। বাট ওকে কষ্ট দিতে চাই নি।
প্রান নিঃশব্দে বেড় হয়ে গেলো ছাদ থেকে। সে কিছু বলবে না।প্রিয়র বুঝা উচিৎ সে কি চায়। এভাবে একজনকে মিথ্যা খুশি দিয়ে লাভ নেই। এভাবে থাকলে এক না এক সময় প্রাচুর্য কষ্ট পেতো। সেটা এখন পেলেই ভালো!
#মনের_গহীনে
১৬তম পর্ব
লেখনীতে :নাদিয়া হোসাইন

অন্ধকার রুমে নিরবে কেঁদে যাচ্ছে প্রাচুর্য। এই আঘাতটা তার মেনে নেওয়া সম্ভব না! ও তো প্রিয়র বিরক্তির কারন হয়ে তাকে পেতে যায় নি। চেয়েছিলো প্রিয়র সব কিছু জুড়ে তার বিস্তার। প্রাচুর্য কখনো কেউর দয়া বা অনুগ্রহ দেখতে অভ্যস্ত নয়। সে সামায়াকে প্রিয়র মনের কথাগুলো বলেছিলো। কিন্তু প্রিয়কে দয়া করে তার জীবনে একবারো সামায়াকে যেতে বলেনি। আর সামায়া কীভাবে পারলো প্রিয়কে তাকে একটা সুযোগ দেওয়ার কথা বলতে। প্রিয় যদি নিজ থেকে তাকে দয়া করতো তাতে অন্য একটা ব্যাপার ছিলো। সে একটু চেষ্টা করে দেখতো প্রিয়র মন পাওয়ার। কিন্তু প্রিয় তার ভালোবাসার মানুষের পরামর্শে তাকে এভাবে করুণা করেছে। প্রাচুর্যের কি এটা কাম্য ছিলো। একটা ভালোবাসা কখনোই দয়ার উপর চলে না। আজ অনেকটা ভেঙে পরেছে প্রাচুর্য । কান্না যেনো থামার নামই নিচ্ছে না! হঠাৎ-ই তীব্র মাথা ব্যাথা অনুভব হলো প্রাচুর্যের। এক সময় আর ব্যাথাটা সহ্য করতে না পেরে সেন্স লেস হয়ে পরলো।

প্রিয় এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে আজ খুব অপরাধী লাগছে। একটা মন ভাঙার ব্যাথা তার বুকেও অসহ্য ব্যাথা দিচ্ছে। কেনো জানি বার বার প্রাচুর্যের কান্নায় ভেজা চোখ দু’টোই চোখের সামনে ভাসছে। পরক্ষনেই ভাবলো, তার তো কষ্ট পাওয়ার কথা না। প্রাচুর্যকে সে নিজ থেকে এসব কথা কখনো বলতে পারতো না। এখন যখন ও জেনেই গেছে, তো কষ্টটা সাময়িক-ই ভালো। সেদিন খুব বড় একটা ভুল ডিসিশন নেওয়া হয়ে গেছিলো। সামায়ার কথা শুনে প্রাচুর্যকে এহেন ক্ষানিকের ভালোবাসা দেওয়া ঠিক হয়নি। এতোদিন প্রাচুর্যের মনে তার জন্য একটা ভালোবাসা, সম্মান ছিলো। এখন সেটা আর থাকবে না! কিন্তু এটা ভাবতেই মনের মধ্যে একটা ব্যাথা খুব নিখুঁত ভাবে ক্ষতবিক্ষত করে যাচ্ছে। হয়তো এটা প্রাচুর্যের প্রতি মায়া থেকে। প্রাচুর্য এমন একটা মেয়ে, যার প্রতি একটু হলেও মায়া জন্মিয়ে যায়। অন্যসব ছেলে হলে হয়তো ভালোবাসা না থাকলেও প্রাচুর্যের মতো কাউকে হাঁড়াতে চাইতো না। কিন্তু প্রিয় নিজেকে এমন ব্যক্তিসম্পর্ন মনে করে না। প্রাচুর্য তার কাছে একটা নামমাত্র ভালোবাসার দায়িত্ব ছিলো। কিছুই ভালো লাগছে না তার । ইচ্ছে করছে প্রাচুর্য কি করছে দেখতে, কিন্তু সেই অধিকারটা তার নেই।

সকাল ন’টার দিকে প্রাচুর্যের ঙ্গান ফিরে এলো। মাথাটা প্রবলভাবে ঘুরাচ্ছে। চারদিকে একবার তাকাতেই কাল রাতের কথা মনে পরে গেলো। পরক্ষণেই চোখের কোণে শুকিয়ে যাওয়া জ্বলগুলো আবার ঝরতে শুরু হলো। সে ঠিক করলো আর এবাড়িতে থাকবে না। প্রিয়কে ফেইস করার ক্ষমতা তার মধ্যে নেই। এখান থেকে একা চলে গেলে অনেক কথা উঠবে তাই প্রাচুর্য তার বড় ভাই দিহানকে ফোন দিলো এখান থেকে এখনি এসে নিয়ে যেতে। প্রাচুর্যের বড় ভাই তাকে অনেক ভালোবাসে৷ কখনো বোনের কোন ইচ্ছে অপূর্ণ রাখে-নি। তাই কথা না বাড়িয়ে বোনকে আনার জন্য বেড় হলো। প্রাচুর্য দিহানের সাথে কথা বলার সময় নিজের কান্নাটাকে অনেকটা দমিয়ে রাখলো। দিহান আসার আগ পর্যন্ত প্রাচুর্য আর রুম থেকে বেড় হলো না। শান্তা অনেকবার ডেকেছিলো,কিন্তু ঘুমাচ্ছে বলে শান্তাকে আর কোন সুযোগ দেয়-নি। ঘন্টা খানিকের মধ্যে দিহান এলো। প্রাচুর্য ভাই আসায় সব কিছু গুছিয়ে নিলো আর নিচে চলে গেলো। শান্তা কিছুতেই প্রাচুর্যকে যেতে দিচ্ছিলো না। সে বুঝে পাচ্ছিলো না প্রাচুর্যের এখন যাওয়ার কারণ কি। প্রাচুর্য আর দিহান প্রাচুর্যের পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে বলে চলে আসলো।

রাতে প্রিয় ঘুমাতে পারেনি। ঘুম একেবারে আসছিলোই না। বারবারে শুধু প্রাচুর্যের কথা ভাবাচ্ছিলো তাকে। নিজের মধ্যে অপরাধবোধটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো তাকে। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিলো, তাই উঠতে দেরি হয়ে গেলো। আজ প্রিয়র কলেজে কোন ক্লাস ছিলো না, নাই সোজা নিচে চলে গেলো। এতোদিন সকালে উঠে দেখতো প্রাচুর্য তার মা-কাকিমার সাথে গল্প করতো বা যোহরাদের সাথে খেলতো। তাই আজও তাই দেখবে ভেবে রেখেছিলো। কিন্তু প্রাচুর্যকে কোথাও দেখতে পেলো না। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো। হয়তো মেয়েটার মন এখনো ঠিক হয়নি। তাই মিসেস প্রিতিকে বললো,__আম্মু প্রাচুর্য কই?
সে কি জানিস না, প্রাচুর্যকে তো তার বড় ভাই আজ সকালে নিয়ে গেলো। মেয়েটা হঠাৎ করেই চলে গেলো। বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এই তোদের মধ্যে কোন সমস্যা হয়নি তো? দেখ সমস্যা টমস্যা কিছু বুঝি না। তোর পড়া শেষ হবে আর ওকে ঘরে নিয়ে আসবি পার্মানেন্টলি।
প্রিয় তার মায়ের কথার জবাবে কিছু না দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে নিঃশব্দে চলে গেলো।
বুকে তীব্র চাপ অনুভব করলো। তার এক্সপেকটেশনের বাইরে ছিলো, প্রাচুর্য এভাবে চলে যাবে। কেনো এমন লাগছে বুঝছে না। এখন মনে হচ্ছে কাল এসব কথা প্রাচুর্যের না জানা-ই ভালো ছিলো। কিন্তু এখানে তার দোষটাও নেই৷ কেউ তো পারে না একজনকে ভুলে অন্য জনকে এতো তাড়াতাড়ি মনে যায়গা দিতে। প্রিয়র প্রথমেই প্রাচুর্যকে নিয়ে আগানো ঠিক হয়নি। এতোদিন তো প্রাচুর্য নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলো। এখনের আঘাতটা সামলানো কোন মেয়ের পক্ষে-ই সহজ নয়৷ প্রিয়র মনে প্রাচুর্যের জন্য সুপ্ত মায়া থেকেই এখন খারাপ লাগা কাজ করছে।

বাসায় এসে প্রাচুর্যকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো। সুবহান সালেহ প্রাচুর্যকে অনেক করে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। এক পর্যায়ে প্রাচুর্য কান্না করে দিলো। কান্না করতে করতেই বাসার সবাইকে বুঝালো, সবাইকে মিস করেছে তাই এসেছে। কথাটা মিথ্যে ছিলো না, কিন্তু কান্নাটায় এক ফোটাও মিথ্যে ছিলো না। প্রাচুর্য বাসার সবারই অনেক আদরের, তাই ওর কান্না কেউর-ই ভালো লাগছে না। ওদেরকে বুঝাতে ও শান্ত করতে প্রাচুর্য কান্নাটা থামিয়ে রুমে চলে এলো।

মাথার মধ্যে শুধু প্রিয়-ই ঘুরছে। প্রিয়!প্রাচুর্যের লাইফে এই ছেলেটা এমন এক নাম ও মানুষ, যাকে সে কখনো ভুলতে পারবে না। প্রিয়কে এতোটা-ই ভালোবাসে, যে ভালোবাসায় প্রাচুর্যের কোন চাহিদা-ই ছিলো না। নিঃস্বার্থ ভাবে তাকে ভালোবেসে এসেছে প্রিয়। প্রিয়কে একদম-ই ঘৃণা করতে পারবে না প্রাচুর্য। মনের গহীনে শুধুই ভালোবাসা থেকে যাবে তার নামে৷ কিন্তু প্রিয়র এই সিদ্ধান্তও ঠিক হয়-নি।প্রাচুর্য তো প্রিয়র দয়া চায় নি। সে কেনো সামায়ার কথা শুনে তাকে সুযোগ দিতে গেলো।প্রাচুর্য তো চাইতো প্রিয় যেনো খুশি থাকে। প্রিয়র বিরক্তির কারণ তো সে হতে চায় নি। পরক্ষনেই সব রাগ গিয়ে উঠলো সামায়ার উপর। তৎক্ষনাৎ সে সামায়াকে ফোন দিলো৷ কিছু কথা না শুনালে তার মনে একদম-ই শান্তি লাগবে না।
সামায়া তখন খাচ্ছিলো। প্রাচুর্যের ফোন পেয়ে খুব এক্সাইটেড হয়ে রিসিভ করলো। তার হ্যালো বলতে দেরি হলো, কিন্তু প্রাচুর্য তাকে কিছু না বলতে দিয়েই বললো, ছি.. তুই এমনটা না করলেও পারতি। তোকে আমাকে দয়া করতে কে বলছে। হতে পারে প্রিয় তোকে ভালোবাসে, তাই ও তোর কথা শুনবে। কিন্তু আমি তো চাই-নি তার মনে একজন থাকবে আর সাথে অন্য জন। জানিস, আজ আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার বিরক্তির কারন। আমি জানি, তুই আমার ভালোর জন্যই এসব করেছিস। আসলে, তুই তোর বোনকে ছোট করেছিস। তুই সত্যি-ই লাকি। কিন্তু এমনটা না করলেও পারতি। ওকে ছাড়া এখন আমি কীভাবে থাকবো বল। দূরে থেকে ভালোবাসাই ভালো ছিলো আমার। কিন্তু এখন আমি হেল্পলেস।
প্রাচুর্য কান্না করতে থাকলো শেষের কথা গুলো বলে। এখন কান্না আসলে মন হালকা লাগছে।
সামায়া সব শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো। কিছুই বুঝতে পারছে না। সে প্রাচুর্যর কান্না শুনেই ” হ্যালো প্রাচু.. ” বলতেই ফোন কেটে দিলো প্রাচুর্য। আরো কয়েকবার ফোন দিলো প্রাচুর্যকে। কিন্তু ফোন বন্ধ পেলো। প্রাচুর্য ফোনে কেটে ফোনটা নিচে ছুড়ে মারলো। সামায়ার সব-ই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বুঝে গেছে মারাত্মক কিছু হয়ে গেছে। সে আর উপায়ন্ত না পেয়ে প্রিয়কে কল দিলো।

চলবে,

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here