মনের মাধুরীতে তুমি পর্ব -২৩ ও শেষ

#মনের_মাধুরিতে_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৩(সমাপ্তি)
,
,
,
,
বিয়ের আসর সেজেছে।বউ সেজে বসে আছে ২ বধূ।কি অপুরুপ তাদের সাজ।লাল ঘোমটাই যেনো সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক শত গুন।আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে সুখ।চোখে তার পানি উহু কষ্টের না সুখের। আজ তার জীবন নতুন মোর নিতে যাচ্ছে আহিয়ান কে একান্তই আপন করে পেতে চলেছে। কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি এই দিনটার জন্য সবাই তো রায়হান আর সুখের বিয়ের তোরজোর শুরু করেই দিয়েছিলো সে মহূর্তে যদি আহিয়ান আর রায়হান না জানাতো নিজের মনের কথা তাহলে হয়তো ৬টা জীবন সুন্দর করে নষ্ট হয়ে যেতো।

কিছুক্ষণের মাঝেই বাহিরে আওয়াজ এলো বর এসেছে।মহূর্তে বৃষ্টি আর সুখের হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেলো।অজানা ভালো লাগাই ছেয়ে গেলো।হঠাৎ এক দমকা হাওয়াই যে এইভাবে তাদের জীবন টাকে সাজিয়ে দিবে তারা কল্পনাও করতে পারেনি।কিছু ক্ষনের মাঝেই বন্যা আর আহিয়ানের কাজিন এলো ওদের নিচে নিয়ে যেতে। সুখ এর চোখ বন্যার দিকে যেতেই সুখের বুকটা ভারি হয়ে এলো।সামান্য আহিয়ানের সাথে তার বিয়ের কথা চলছিলো বলে কতোটাই না কষ্ট হতো সেখানে বন্যা তো সে ছোট বেলা থেকে ভালোবেসে আসছে।তার মনের অবস্থা ঠিক কেমন তা ভাবতেও সুখের নিজেকে দোষী লাগছে কিন্তু কি করবে চাইলেও তো সম্ভব না আহিয়ানের থেকে দূরে যাওয়া বড্ড ভালোবাসে সে তার ডাক্তার কে তাকে ছাড়া যে একেকটা মহূর্ত খুব কষ্টের। কি করে দিয়ে দিবে তাকে।লাগুক নাহয় স্বার্থপর এর ট্যাগ তবুও প্রিয় মানুষ টা অন্যকাউকে দিতে যে প্রস্তুত নই সে।

পাশাপাশি বসানো হয়েছে দুইজোড়া করে।রায়হান তো সেকেন্ড পড় পর চোখ তুলে তাকাছে বৃষ্টির দিকে। আবার লজ্জা পেয়ে নিজেই নামিয়ে নিচ্ছে আখি পল্লব।কিন্তু সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে সবার উপস্থিতি উপেক্ষা করে আহিয়ান এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে সুখের দিকে।সুখ ও কম যায়না লজ্জা সরম বিসর্জন দিয়ে সেও তাকিয়ে রয়েছে আহিয়ানের গভীর দৃষ্টিতে।দুইজনার চোখেই পানি। পূর্ণতার পানি। সুখের পানি সুখ আহিয়ানের এক হওয়ার পানি।।

সব কিছু এক কোণে দাড়িয়ে থেকে দেখছে বন্যা।চোখ বেয়ে অনবরত গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু কোনার ঢেউ।চায়েও পারছেনা নিজেকে সামলাতে।হঠাৎ নিজেকে শক্ত নিরাপদ কারো বাহু বন্ধণে নিজেকে আবিষ্কার করতেই মানুষ টির পাঞ্জাবীর কলার ধরে হাউমাউ করে কেদে দেয়

—আমার সহ্য হচ্ছেনা তাকে।অন্যকারো পাশে দেখতে আমার শ্বাস আটকে আসছে। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা প্লিজ রিহাব

—এই টুকুতেই ভেংগে পড়ছিস একটাবার ভাব তাহলে প্রতিনিয়ত যখন আমি তোর চোখে অন্যকারো জন্য ভালোবাসা জন্মাতে দেখেছি অন্যকারো বউ হওয়ার স্বপ্ন বুনতে দেখেছি ঠিক কতোটা ছোটফোট করেছি

রিহাবের কথায় অশ্রুশিক্ত চোখে তাকায় বন্যা। কান্নার ফলে বন্যার ঠোঁট অনবরত কেপে চলেছে।রিহাব কিছু না ভেবেই বন্যার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়ে নিলো।বন্যার কি হলো সে নিজেও বুঝলোনা সেও সারা দিতে থাকলো রিহাবের স্পর্শতে হয়তো অন্যে কারো স্পর্শ তে আহিয়ান নামক অসুখ দূর করতে চাচ্ছে।সে নাহয় তার ভালোবাসার পূর্নতা দিতে পারলোনা অন্যকেউ নাহয় তাকে পেয়ে তার ভালোবাসা পূর্নতা আনুক।খুব বেশি তো ক্ষতি হবেনা ভালোবাসার মানুষ টার জায়গায় অন্য কারো নাম টা আর এমন কি। খালি দিন রাত ছোটফোট করবে মন তার কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য কিন্তু সে পারবেনা যেতে। কারন তখন পায়ে থাকবে তার মোটা শিকল যার চাবি তার হাতে থাকলেও খোলার অনুমতি দেওয়া হবেনা।

ভালোবাসা সুন্দর যদি তার কষ্ট গুলোও সুন্দর করে আপন করে নেওয়া হয় তার কষ্ট গুলোকে সুখের ন্যায় গ্রহন করা হয়।অশ্রু কোনা গুলাকে যদি মতির ন্যায় সংযত করা হয়।ভালোবাসা আসলেই সুন্দর যখন খোলা আকাশে প্রজাপতির ন্যায় ডানা মেলে উড়ে।
,
,
,
,
কবুল বলতে যাবে ঠিক সেই মহূর্তে রাফির গলায় আহিয়ান থেমে যায়।। পাশে তাকায় দেখে রিসিকার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। আহিয়ান মুচকি হাসে।

—তুলে এনেছি ফটাফট কবুল টা আমাদের বলায় দে তো।কখন বলে এর হিটলার বাপ পুলিশ নিয়ে হাজির হবে

—এহ আমার আব্বু মৌটেও হিটলার না অযথা আমার আব্বুক্র তুই হিটলার বলিস কেন

—হিটলার কে হিটলার কইতাম না

—বেশি কথা বললে আমি চললাম আমার হিটলার আব্বুর কাছে।থাক তুই

—ঠিক আছে যা মেয়ের অভাব নাকি বিয়েতে আর আমি দেখতেও তো আর কম সুন্দর না আমার এক ডাকে মেয়েরা বিয়ের পিড়িতে বসতে বাধ্য

—খুন করে ফেলবো আমি বাদে যদি কোন মেয়ের দিকে তাকানো হয়েছে

—উফফ এই হিংসা টোমেটো র মতো গাল খায়ে ফেলতে চায় আমার মন

সবাই অহম্মক বনে যায় রাফি আর রিসিকার কথায়।আহিয়ান উঠে যায় দুইজনার মাথায় থাপ্পড় মারে।দুইজনার ই৷ হুস ফিরে যে তারা এতোক্ষণ কোথায় কোন পরিবেশ এ দাঁড়িয়ে এগুলো কথা বলছিলো।

দুইজনেই ক্যবলাকান্ত একটা হাসি দেয়।

সুষ্ঠ ভাবে সম্পূর্ণ হয়ে যায় ৩টা বিয়ে।সুন্দর করে সাজানো রুমে বসানো হয় নতুন বধূদের।

———

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত। চোখে তার পানি প্রিয় মানুষ টার থেকে অনেক দূর যাওয়ার কষ্টের।হাতে তার প্লেনের টিকিট কয় ঘন্টা পরেই চেনা শহর চেনা মানুষ জন এর থেকে বহু দূরে পারি জমাবে। হয়তো ফিরে দেখা হবেনা এই মানুষ গুলার মুখ।সে চেনা রাস্তা পুরাতন অনুভূতির মায়াজাল। আর না চেষ্টা করা হবে জোড় করে কারো চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখার।

—চলে যাচ্ছি বহূ দূরে।আর কখনো হয়তো দেখা হবেনা তোর সাথে কিন্তু হ্যা তোকে ভুলে যাবো সেটাও ভাবিস না তোর থেকে দূরে যাওয়ার একটাই কারণ প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া যা এই বাতাসে সম্ভব না। তোর স্পর্শ এর পরে নিজেকে সামলানো অনেক কঠিন হয়ে যাবে রে আমার জন্য তাই তো একেবারে চলে যাচ্ছি তোর সাথে কাটানো মহূর্ত গুলো নিজের বুকের খাচায় আগলে তোকে #মনের মাধুরীতে মিশিয়ে।

———-

এক হাত ঘোমটা টেনে থাকবে বউ এই ভেবে রুমে প্রবেশ করতেই টাস্কি খাই রাফি কারন তার বউ এক হাত ঘোমটা তো দূর বিয়ের সাজ টাও রাখেনি বরং লেগেন্স আর গেঞ্জি পরে ঘুমাই আছে।রাফি হাসবে না কান্না করবে বুঝতে পারছেনা। সে রিসিকার কাছে এসে তাকে ভালো করে শুয়ায় দিয়ে তার শরীর টা লেপ দিয়ে জড়ায় দেয় এসি বন্ধ করে দেয়

—ভাবি নি তোকে একান্তই নিজের করে পাবো কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝলাম না কিভাবে তুই নিজ থেকে আমার কাছে এসে বললি

“আমাকে এই মহূর্তে বিয়ে না করলে তোর একটা দাত ও আমি আসতো রাখবোনা এই ছাগল কবে বিয়ে করবে জানিনা কিন্তু এখন আমার বিয়ে পাচ্ছে আমি বিয়ে করতে চায় ব্যাস কথা শেষ “”

এইটুকু বলেই সবার সামনে হাত ধরে নিয়ে কিছু না।বলে হাটা ধরে রাফি কতোক্ষন হ্যাং হয়ে ছিলো হিসেব নেই।

—ভালোবাসি মায়াবিনী তোর মায়ায় প্রতিনিয়ত ডুবা এই সাতার না।জানা ব্যাক্তিটাকে বাচিয়ে নে।আমার মনের মাধুরিতে মিশে আমাকেই শেষ করে দিয়েছিস রে।

রাফি রিসিকার কপালে চুমু খাইতেই রিসিকার চোখ বেয়ে এক ফোটা অশ্রু গরিয়ে পরে।রাফি দেখে কিন্তু কিছু বলেনা মুচকি হেসে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রিসিকাকে জড়ায় ধরে ঘুমাই পরে।

———

রায়হান রুমে।প্রবেশ করতেই বৃষ্টি নিচে নেমে তার পায়ে ধরে সালাম করতে নিলেই রায়হান বাধা দেয় বৃষ্টি অবাক হয়ে তাকায়

—পায়ে হাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই এইসব আমার পছন্দ না মুখেও সালাম দেওয়া যায় এই জন্য পায়ে হাত দেওয়া লাগেনা বোকা

বলেই বৃষ্টি কে জড়ায় ধরে নিজের সাথে।বৃষ্টিও প্রিয় মানুষ টির বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে নেই ।কতো বার যে সে এই স্বপ্ন দেখেছে আর কতোবার নিজ হাতে তা টুকরা টুকরা করেছে সেটার ইয়োত্তা নেই কিন্তু দিন শেষ এ মানুষ টা তার একান্তই তার ব্যাক্তিগত তার। তার মনের মাধুরিতে মিশে থাকা মানুষ টির মনের মাধুরিতে সে রয়েছে।এর চেয়ে সুখের অনুভূতি আর কি হতে পারে।।।।

———–

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে সুখ। আহিয়ান জায়নামাজ গুছাচ্ছে।সেদিকে এক পলকে চেয়ে আছে সুখ।সাদা পাঞ্জাবীতে থাকা স্নিগ্ধ পুরুষ টি তার ভাবতেই এক শীতল স্রোত বেয়ে গেলো তার সারা শরীর জুরে।আহিয়ান জায়নামাজ থুয়ে সুখের কাছে এসে তার বন্ধ চোখ জোড়ায় চুমু খেলো গভীর ভাবে কেপে উঠলো সুখ

—আজ সব বাধা শেষ আজ একান্তই তুমি আমার। আর সম্পূর্ন্য রুপে এখন তোমাকে আমার বানাবো তোমার মনের সাথে আজ তোমার সারা শরীর জুড়ে আমার বিচরণ থাকবে আর ইউ রেডি সুখ পাখি

সুখ কিছু না বলে আহিয়ান কে জড়ায় ধরে।আহিয়ান তার জবাব পেয়ে সুখকে কোলে তুলে নেই,,,,,,,

সমাপ্ত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here