মনের_গভীরে_তুমি পর্ব ৯

#মনের_গভীরে_তুমি❤
#পর্ব_০৯
#M_Marufa_yasmin

পরেরদিন আরাভ খুব খুশি হয়ে দেশে ফিরছে মনে মনে বলছে।
—“আজ গিয়ে আমি টিপ কে আমার মনের কথা খুলে বলব। হ্যা বলব ।যে আমি ওকে ভালোবাসি।এই কয়দিন ওর থেকে দূরে থেকে বুঝতে পেরেছি আমি সত্যিই টিপ কে ভালোবেসে ফেলেছি।হ্যা আমি টিপ কে ভালোবাসি । i love you tip ।
তোমাকে সারাজীবন নিজের করে রাখতে চাই।
ভালোবেসে তোমাকে আমার বুকে রাখতে চাই।
কিন্তু তুমি কি আমাকে ভালোবাসো টিপ?
সে আমি পরে বুঝে নিবো তার আগে তোমাকে মনের কথাটা বলব।

এদিকে টিপ সারাদিন মন খারাপ করে বসে আছে।বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে ।
—“আমি এত কেনো ভাবছি? মিরা দি স্যার কে সুখি রাখতে পারবে ।আমি পারব না। আর তা ছাড়া মিরা দি আর স্যার একে অপরকে ভালোবাসে ।হ্যা আমি মানছি আমি স্যার কে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু স্যারের জন্য আমি যোগ্য নয়। তা ছাড়া আমার কোনো পরিচয় নেয়।স্যার কোথায় আর আমি কোথায়।স্যার চাইলেও আমি স্যারের লাইফে আর থাকবো না তবে স্যারের জন্য আমার ভালোবাসা সারাজীবন থাকবে। স্যার যদি কারো কাছে ভালো থাকে সেটা হলো মিরা দি।তবে মিরা দি যেনো স্যার কে কষ্ট না দেয় না হলে আমি সহ্য করতে পারবো না আল্লাহ ।
আমি যে খুব ভালোবেসে ফেলেছি স্যার কে অনেক অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।
এই কয়দিন এ স্যার কে ছাড়া থেকে এত কষ্ট পেয়েছি তাহলে সারাজীবন আমি কি ভাবে থাকবো। না আমাকে পারতে হবে স্যারের জন্য আমাকে পারতে হবে ।

সন্ধ্যা হতে না হতেই আরাভ আর তার বাবা চলে এলো। আরাভ তো সেই খুশি। শুধু ছটফট করছে কখন টিপ কে সবটা খুলে বলবে। ইচ্ছে করছে এখন বলে দিতে কিন্তু না এখন সে বলবে না।
টিপের জন্য আলাদা করে একটা সারপ্রাইজ করে তারপর মনের কথাটা বলবে।

টিপ ওপর থেকে নিচে এসে দেখে আরাভ এসেছে সবার সাথে কথা বলছে।টিপের ইচ্ছে করছে আরাভ কে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সব ইচ্ছে পূরণ হয় না।টিপ গিয়ে ওদের পাশে দাঁড়ালো।আরাভ মুখে এক গাদা খুশি নিয়ে টিপ কে জিজ্ঞেস করল …

—“টিপ কেমন আছো?

টিপ ঠোঁটের কোণে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে বলল
—“ভালো আছি আপনি?

—“আমি ও দারুন আছি ।

আরাভ সবার সাথে কথা বলে রুমে গেল ফ্রেশ হতে।টিপ আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিল।তখনই আরাভ এসে ব্যাগ থেকে একটা গিফট বের করে পেছন থেকে আরাভ বলল

—“টিপ এটা তোমার জন্য তাড়াতাড়ি খুলে দেখো। আমি আসছি ।

আরাভ রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।
টিপ গিফট খুলে দেখে একটা লাল শাড়ি আছে।লাল গোলাপ পাঁচটা ।লাল চুরি। লাল একটা কানের।আর গলার। পায়ের নূপুর । সবার বের করার পর একটা চিঠি পেলো।সেটা খুলল টিপ।চিঠিতে লেখা আছে।

“লাল শাড়িটা পরে নাও ।চুলটা খোপা করো আর তাতে এই পাঁচটা গোলাপ লাগাও।চোখে গাঢ় কাজল পড়বে। চুরি গুলো সব পড়বে ।দুই হাত ভর্তি করে। আর এই নূপুর টা ও পড়বে।আর হ্যা লিপস্টিক পড়বে না তোমার ঠোট এমনি তেই লাল। রেডি হয়ে বাড়ির বাগানে এসো আমি অপেক্ষা করছি।তাড়াতাড়ি।”

টিপ চিঠিটা পরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর আরাভ যে ভাবে বলেছে সে ভাবে সেজে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বাগানে গেলো অন্ধকার হয়ে আছে কেও এসে পেছন থেকে একটা কাপড় নিয়ে ওর চোখটা বেঁধে দিল।টিপ বুঝতে পারল এটা আরাভ তাই চুপচাপ থাকল।কিছুক্ষন পর চোখটা খুলে দিল।তাকিয়ে দেখে চারিদিকে আলোয় ঝলমল করছে।চারিদিকে গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে ।নানারকম আলো।নিচে তাকিয়ে দেখে।
আরাভ হাটু পেতে বসে আছে এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল টিপের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল

—“টিপ আমি জানি না তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না তবে আমার এই মন বলে তুমি আমাকে ভালোবাসো। জানি না কখন কি ভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ।নিজের অজান্তেই এই মন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে টিপ।
তুমি কি আমার এই মনের রাজ্যের রানী হবে?
এই #মনের গভীরে তুমি কিছুতেই সরাতে পারিনি পরে বুঝলাম আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
I love you tip ।

এই মূহুর্তে টিপের খুব ইচ্ছে করছে আরাভ কে বলে দিতে যে সেও তাকে ভালোবাসে।
কিন্তু সে বলবে না।মিরা কে কথা দিয়েছে সে আরাভ কে ফিরিয়ে দেবে সে ।
টিপের মন চাইছে এখন চেঁচিয়ে বলতে
ভালবাসি আপনাকে অনেক অনেক পারবো না আমাকে ছাড়া থাকতে ভালোবাসি আপনাকে।আপনার মনের রাজ্যের রানি হতে চাই ।
কিন্তু আমার যে কোনো উপায় নেই ।

টিপ অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।আরাভ ভাবল।টিপ লজ্জা পেয়েছে তাই পেছন থেকে টিপ কে জড়িয়ে ধরে টিপের গলায় মুখ গুঁজে দেয়।টিপ তাড়াতাড়ি করে আরাভ কে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল ….

—” স্যার আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই ।

—“হুম বলো

—“আমি ডিভোর্স চাই ।

আরাভ কথাটা শুনে এক পা পিছিয়ে গেলো।ভেঙ্গে পড়ে বলল

—“এসব কি বলছ টিপ কেনো বলছ?আমি কি কোনো ভুল করেছি প্লিজ টিপ বলো প্লিজ।আমি তোমাকে ভালবাসি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে ।

—” আমাকে যদি সত্যিই ভালোবাসেন তাহলে কালকে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে মিরা দি কে বিয়ে করবেন।

—“টিপ!!!!!!! তুমি কি আমাকে ভুল বুঝে এসব বলছ।প্লিজ টিপ এমন করো না প্লিজ।ভালোবাসি তোমাকে টিপ ।

—” যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমি যা বললাম তাই করুন ।

আরাভ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকল।
তারপর বলল ….
—“ঠিক আছে তুমি যা বলবে তাই করবো তবে যতদিন বিয়ে হবে ততদিন পর্যন্ত তুমি এই বাড়িতে থাকবে আর বিয়ের সব কাজ তুমি করবে।পারবে তো চোখের সামনে আমাকে অন্য কারো হতে দেখতে? আমি আর কিছু বলব না তুমি নিজে যতক্ষন না বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো ।
আমি চুপ থাকব আমি জানি তুমি পারবে না।
কারন তুমি আমাকে ভালোবাসো ।

টিপ শান্ত ভাবে বলল
—” ঠিক আছে আপনার বিয়ের সব কিছু আমি করব। আমি পারব ।

টিপ চলে যায়।আরাভ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগে।বসে পরে।

টিপ রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পরে।বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগে।সে আজ তার কলিজাটা কে কষ্ট দিয়ে এলো।সে তো চাইনি কষ্ট দিতে।কিন্তু নিয়তি তো তাই চাই সে আরাভ এর থেকে দূরে চলে যাক।

—“আল্লাহ কেনো ওনার প্রতি আমাকে এত দূর্বল করলে আল্লাহ?যখন ওর থেকে দূরেই থাকতে হবে ভাগ্য তে লিখলে তবে কেনো ওর প্রতি আমার মনে ভালোবাসা জাগাতে দিলে আল্লাহ? তার আগেই ওর থেকে আমাকে দূরে করে দিলে না কেনো?
তাহলে তো এত কষ্ট পেতে হতো না ।

পরেরদিন আরাভ বাড়ির সকল কে ডেকে বলল
—“আমি টিপ কে ডিভোর্স দিবো আর মিরা কে বিয়ে করবো।আজ থেকেই সব আয়োজন শুরু করে দাও ।

কথাটা শুনে ইমরান চৌধুরী ঠাসসস করে আরাভ কে চরিয়ে দিলো আরাভ গালে হাত দিয়ে নিচে দিকে মুখ করে আছে। ইমরান চৌধুরী চেঁচিয়ে বলল ….

—” তোর সাহস কি করে হয় এটা করার? আমার বউমা কে তুই ডিভোর্স দিতে চাস? কেনো?

টিপ বলল
—“বাবা আমিই ওনাকে এটা করতে বলেছি।আমি চাই না এই মিথ্যা সম্পর্কটা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে।

—“টিপ তোর থেকে এটা আমি আশা করিনি ।

ইমরান চৌধুরী রাগ করে নিজের রুমে চলে যান।কিছুক্ষন পর উকিল আসে ।

টিপের চোখ দিয়ে পানি পরছে টিপ বারবার চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করছে কিন্তু আরাভের চোখ থেকে আড়াল করতে পারছে না।
টিপ পেপারে সাইন করে দেয়।আরাভ সাইন করার সময় এক ভাবে টিপের দিকে তাকিয়ে ছিল।

কেয়া আর মিরা ইশরাত চৌধুরী তো ভিষন খুশি ইশরাত চৌধুরী বিয়ের সব আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। টিপ দৌড়ে রুমে চলে যায়।একটা সাইন এ সব সম্পর্ক শেষ কেমন জিনিস । একটা সাইন এ সব শেষ হয় না শেষ হয় সমাজের কাছে কিন্তু দুটো সত্যি কারের ভালোবাসার কাছে সব সময়ই সম্পর্ক টা থাকে ডিভোর্স এর পর ও। ডিভোর্স দিলেই কি মন থেকে তার জন্য ভালোবাসা কমে যায় ।যদি সেই ভালোবাসা টা গভীর হয় ।না কমে না।শুধুমাত্র সমাজের কাছে তারা একে অপরের নয় ।কিন্তু দুটি মন তো সব সময়ই একে অপরের ঘরে উকি মেরে যাচ্ছে। দূরে থেকেও কি কেও তার ভালোবাসার মানুষ কে ভুলতে পারে না পারে না দুটি মন সব সময়ই একে অপরের কাছে পরে থাকে ।ভালোবাসা টা এমনি।

সন্ধ্যা বেলা টিপ মিরা কে সাজিয়ে দিচ্ছে নিজে একটা লেহেঙ্গা পড়েছে।পড়ার ইচ্ছে ছিল না তবে আরাভ কে দেখানোর জন্য পড়েছে।
মিরা কে সাজিয়ে নিচে নিয়ে যায় ।আরাভ একটা চেয়ারে বসে আছে।
বেশি লোকজন নানারকমের কথা বলছে।
টিপ মিরার পাশে বসে আছে মিরা শয়তানি করে বলল …

—“টিপ একটা অনুরোধ করবো ?

—“হুম বলো?

—“প্লিজ একটা গান করো ।

—” না গো আমি পারবো না ।

—” প্লিজ টিপ আমার এই অনুরোধ টা রাখো ।
আরাভ পেছন থেকে এসে বলল

—” মিরা তো ঠিকই বলেছে একটা গান করো ।
টিপ আরাভের কথা শুনে গান করতে গেলো ।

🎶তুমি যাকে ভালোবাসো🎶
🎶স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো🎶
🎶তার জীবনে ঝড় 🎶

আরাভের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে

🎶তুমি যাকে ভালোবাসো🎶
🎶স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো🎶
🎶তার জীবনে ঝড় 🎶

🎶তোমার কথার শব্দদূষণ, তোমার গলার স্বর,🎶
🎶আমার দরজায় খিল দিয়েছি🎶
🎶আমার দারুন জ্বর🎶

🎶তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর🎶
🎶তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর🎶

আরাভের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে

🎶তোমার নৌকোর মুখোমুখি আমার সৈন্যদল
বাঁচার লড়াই🎶
🎶আমার মন্ত্রী খোয়া গেছে, একটা চালের ভুল
কোথায় দাঁড়াই🎶

🎶কথার ওপর কেবল কথা🎶
🎶সিলিং ছুঁতে চায়🎶
🎶নিজের মুখের আয়না আদল🎶
লাগছে অসহায়🎶

🎶তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান🎶
🎶তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান🎶

আরাভ ও কেঁদে দেয় কিন্তু তাড়াতাড়ি করে পানিটা মুছে নিল ।

🎶বুকের ভেতর ফুটছে যেন মাছের কানকোর লাল এত নরম🎶
🎶শাড়ির সুতো বুনছে যেন সেই লালের কঙ্কাল
বিপদ বড়🎶

🎶কথার ওপর কেবল কথা🎶
🎶সিলিং ছুতে চায়🎶
🎶নিজের মুখের আয়না আদল🎶
🎶লাগছে অসহায়🎶

🎶তুমি অন্য কারোর গল্পে নায়ক🎶
🎶তুমি অন্য কারোর গল্পে নায়ক🎶

🎶তুমি যাকে ভালোবাসো🎶
🎶স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো🎶
🎶তার জীবনে ঝড় 🎶

🎶তুমি যাকে ভালোবাসো🎶
🎶স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো🎶
🎶তার জীবনে ঝড় 🎶

🎶তোমার কথার শব্দদূষণ, তোমার গলার স্বর,🎶
🎶আমার দরজায় খিল দিয়েছি,🎶
🎶আমার দারুন জ্বর!🎶
🎶তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর..🎶

দুজনের চোখে পানি টিপ তাড়াতাড়ি করে চোখ থেকে পানি মুছে পেছন ফিরলো আরাভ বাড়ির বাইরে চলে যায়।কারন এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না খুব কান্না পাচ্ছে তার।
সবাই হাত তালি দিতে লাগল।

আরাভ বাগানে গিয়ে কাঁদতে লাগল।টিপের যে কষ্ট হচ্ছে সেটা আরাভ ও টের পেয়েছে।কিন্তু ও তো চাই আরাভের থেকে দূরে যেতে।গানটার সাথে যে অনেক মিল তাদের জীবনের।

এত কষ্ট ও কি ভাবে সহ্য করবে ।এটা যে কি কষ্ট সেটা এক মাত্র দুটো ভালোবাসার মানুষই বুঝতে পারবে। একে অপর কে ছেড়ে থাকার কষ্টটা যে কি সেটা সবাই বোঝে না বিশেষ করে আমাদের এই সমাজ তো নাই ।

এক মাত্র দুটো মন জানে এটার কষ্ট।

আরাভ মুখে হাত চাপা দিয়ে দেওয়াল গেসে বসে পড়ে চেঁচিয়ে কাঁদতে পারছে না।
কিছুক্ষন পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ।

আরাভ গাড়ি নিয়ে হুগলি ব্রিজ এ যায়।
সে খানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পুরো কলকাতা শহর টা দেখা যাচ্ছে।আলোতে ঝলমল করছে কলকাতা। ভিক্টোরিয়ার টা আরো সুন্দর লাগছে রাতের বেলা অসম্ভব সুন্দর লাগে আমাদের কলকাতা কে।

আরাভ ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগে ।

*
*
*
*
*
বাকি

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here