মন দিতে চাই পর্ব -০৮

#মন_দিতে_চাই
#৮ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

মুক্তো নাকি সপরিবারে আবার লন্ডনে ফিরে গেছেন। সংবাদটি শুনে আমার মনটা অনেক বেশিই খারাপ হয়ে গেল৷ যাকে এত বেশি করে চাইলাম, তাকে পাবো না এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। সব দোষ মামির। তবে এখন এসব ভেবে কোন লাভ নেই। যা হওয়ার হয়েই গেছে।

আমার জীবন আবার আগের মতো যেতে লাগল। এরমাঝে আমি ইংরেজি শেখা শুরু করলাম। উদ্দ্যেশ্যে ILETS করে বিদেশে চলে যাওয়া। মুক্তোর কাছে যাওয়ার জন্য এর থেকে ভালো উপায় আমার কাছে নেই। তাই আমি দিনরাত এক করে পড়াশোনা করতে লাগলাম। মামা স্নিগ্ধা আপি সবাই আমার পাশে থাকল। মামি এখন নিজের অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করে চলেছে।

আমার এখন জীবনের উদ্দ্যশ্যে হচ্ছে যে কোন মূল্যে মুক্তোর কাছে যাওয়া। তাকে মন দেওয়া যে এখনো বাকি আছে। এই দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর কোনভাবেই মুক্তো বা তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তাই কিছু বলাও হয়নি তাদের।

সময় আপন গতিতে বহিতে লাগল৷ পেরিয়ে গেছে দু দুটো মাস। সময়ে সাথে পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটেছে অনেক বেশি।

স্নিগ্ধা আপির বিয়ে আগামী সপ্তাহে। স্নিগ্ধা আপি একটা ছেলেকে ভালোবাসত। আমাদের কাউকে কখনো বুঝতেই দেয়নি। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম চালিয়ে গেছে। এখন শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বলেছে। কারণ আপির বয়ফ্রেন্ড বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে।

ছেলেটা অনেক ধনী তাই মামি নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেছে। মামা এত সহজে রাজি হয়নি। ছেলের সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে ছেলে ভালো এটা নিশ্চিত হয়ে তবেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে মামা।

এসবের মাঝে আমার মধ্যেও একটু ভালো লাগা কাজ করছিল। স্নিগ্ধা আপিকে আমি অনেক ভালোবাসি। তার ভালো চাই। তাই আমি চাই যার সাথে আপি সুখী হতে পারবে তাকেই যেন আপি বেছে নেয় জীবনসঙ্গী হিসেবে। আপির প্রেমিক হয়তো তার স্বামী হিসেবে সেরা। এমনটাই মনে হয় আমার।

❤️
বিয়ের আমেজে মুখরিত চারিপাশ। আজ থেকে কয়েক মাস আগেই আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। মামির জন্য সেই বিয়ে ভেস্তে গেছিল। আর আজ আবার এই বাড়িতে বিয়ে হতে চলেছে। তাও আবার স্নিগ্ধা আপির। আজ তার গায়ে হলুদ। যার কারণে সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে চারিদিকে।

স্নিগ্ধা আপিকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। তার গায়ে সবাই এক এক করে হলুদ দিতে আছে। সবাইকে দেখে আমিও এগিয়ে গেলাম আপিকে হলুদ মাখাতে। হঠাৎ মামি আমার হাত টেনে ধরল। রাগ দেখিয়ে বলল, একদম আমার মেয়ের পাশে আসবিনা। আমি জানি তুই আমার মেয়ে ভালো চাস না। আমার জন্য তোর বিয়ে হয়নি। তাই এখন তুই চাস আমার মেয়েরও যেন একইরকম পরিস্থিতি হয়।

মামির কথায় খারাপ লাগলেও অবাক হলাম না আমি। যে যেমন তার চিন্তাভাবনাও তো তেমনই হবে। মামি হয়তো আমাকেও তার নিজের মতো ভাবে। কিন্তু আমি মামির মতো নই। আমি স্নিগ্ধা আপির খারাপ চাইনা।

স্নিগ্ধা আপি চিৎকার করে মামিকে বলল, ছেড়ে যাও ঝিনুককে। ও আমাকে হলুদ মাখাবে। আমি অনুমতি দিচ্ছি। সবাই তোমার মতো নিচ নয়।

মামি বোধহয় খুব অবাক হলো স্নিগ্ধা আপির ব্যবহারে। যেই মেয়ে তাকে এত ভয় পায় তার মুখে এমন কথা শুনে অবাক হওয়াই বোধহয় স্বাভাবিক। সবই মামির কর্মফল। নিজের দোষেই এমন হয়েছে তার সাথে।

আমি আর কিছু না ভেবে স্নিগ্ধা আপির গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিলাম। মামি রাগী চোখে দেখলেন সবকিছু। দেখে মনে হচ্ছিল চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে।

স্নিগ্ধা আপির গায়ে হলুদ সম্পন্ন হলো। হই হুল্লোড়ের মধ্যে বাকি সব আয়োজন চলতে লাগল। মামা এখন দেশেই নিজের জমানো টাকা দিয়ে একটি খামার দিয়েছে তাছাড়া ব্যবসাও শুরু করেছে। তাই আমাদের অবস্থা এখন খুব একটা খারাপ না।

রাতে মেহেদি অনুষ্ঠান হলো। সবমিলিয়ে খুব সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবেই সবকিছু হয়ে যাচ্ছে। যেটা খুবই ভালো লাগছে আমাদের।

আজ স্নিগ্ধা আপির বিয়ে। স্নিগ্ধা আপিকে আজ অনেক বেশিই খুশি লাগছে। তবে একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করেছি মামি কেন জানি গতকাল থেকে বেশ চুপচাপ আছেন। তবে তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল তিনি গভীর কোন ভাবনায় ডুবে আছেন। তিনি কি ভাবছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে খুব ভালো কিছু ভাবছেন না এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসতে লাগল। মেকআপ আর্টিস্ট এসে স্নিগ্ধা আপিকে সাজিয়ে দিয়ে গেল। স্নিগ্ধা আপিকে লাল বেনারসি শাড়িতে বধূ সেজে অনেক সুন্দর লাগছে।

আমি স্নিগ্ধা আপির রুমেই ছিলাম। কিছু একটা কাজে বেরিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর রুমে এসে দেখি স্নিগ্ধা আপি নেই। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। বাথরুম চেক করে দেখি সেখানেও আপি নেই। আমার নিজের সাথে ঘটা ঘটনাগুলো মনে পড়ে। গোপন ভয় আমার মনে তাণ্ডব চালাচ্ছে। আমি হন্যে হয়ে স্নিগ্ধা আপিকে এদিকে ওদিকে খুঁজতে থাকি। এভাবেই মামির রুমের সামন দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পাই মামি বলছিল, একটা বাইরের মেয়ের জন্য নিজের মাকে অপমান করার ফল তোকে পেতে হবে স্নিগ্ধা। দেখ তোর বিয়েটাই আমি হতে দেবো না।

মামির এই ধরনের কথা আসতেই আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লাম। একজন মা হয়ে কি করে নিজের মেয়ের সাথে কেউ এমন করতে পারে আমার মাথায় আসছিল না। আমি দৌড়ে মামির রুমের মধ্যে গেলাম। মামির সামনে গিয়ে বললাম, কেন এমন করছ তুমি মামি? আমি নাহয় তোমার পর ছিলাম, তাই আমার বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলে। নিজের মেয়ের সাথেও কি একই কাজ করবে?

হ্যাঁ করব। দরকার হলে তাই করব। যেই মেয়ে আমাকে অপমান করবে তার সাথে এমনই করব।

ছি শাহানাজ বেগম তোমাকে মামি বলতেও আমার লজ্জা করছে। যে নিজের মেয়ের সাথে এমন করে তাকে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

মামি বিকট হেসে বলল, আমি এমনই নিজের স্বার্থে সব করতে পারি। এখন তুই শোন, যদি তুই চাস তোর স্নিগ্ধা আপির বিয়ে হোক তাহলে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। তাহলে আমি স্নিগ্ধাকে বের করে আনব। আর নাহলে তোর মতো একই পরিণতি হবে।

কেন করছ তুমি এমন? আমার সাথে কিসের শত্রুতা তোমার?

তুই জানিস না? আজ তোর জন্য আমাকে কলুর বলদের মতো খাটতে হয় সারাদিন। তাই এই শাস্তি তো তুই পাওয়ারই যোগ্য।

আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। এরমাঝে শুনতে পেলাম বর এসে গেছে। হাতে আর বেশি সময় নেই। মামিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রতিশোধ স্পৃহায় অন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমি বললাম, ঠিক আছে আমি চলে যাব এখান থেকে। এই বাড়ি থেকে, এমনকি সিলেট শহর থেকেও চলে যাব। তুমি শুধু স্নিগ্ধা আপিকে বের করে আন। তাকে এই বিয়েটা করতে দাও।

ঠিক আছে। তুই আগে বাড়ি থেকে বের হ। আর নিজের মরা মায়ের নামে কসম করে বল, আর এই বাড়িতে ফিরবি না।

আমি তাই করলাম। কসম করে বললাম, আর বাড়িতে ফিরব না।

মামি রাজি হলো। আমি আর কিছু না ভেবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। স্নিগ্ধা আপিকে অনেক ভালোবাসি যে। তার ক্ষতি হবে এমন কিছু করার কথা ভাবতেও পারি না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here